Skip to content

মুক্তধারা – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

ধনঞ্জয়।

গান

শুধু কি তার বেঁধেই তোর কাজ ফুরাবে,
গুণী মোর, ও গুণী?
বাঁধাবীণা রইবে পড়ে এমনি ভাবে,
গুণী মোর, ও গুণী?
তা হলে হার হল যে হার হল
শুধু বাঁধাবাঁধিই সার হল
গুণী মোর, ও গুণী!
বাঁধনে যদি তোমার হাত লাগে,
তা হলেই সুর জাগে
গুণী মোর, ও গুণী!
না হলে ধুলায় পড়ে লাজ কুড়াবে।

নাগরিকদের পুনঃপ্রবেশ

১। এ কী কাণ্ড?
২। খুড়ো মহারাজ যুবরাজকে সমস্ত প্রহরীসুদ্ধ মোহনগড়ে নিয়ে গেলেন। এর মানে কী হল?
কুন্দন। উত্তরকূটের রক্ত তো ওঁর শিরায় আছে। পাছে এখানে যুবরাজের উচিত বিচার না হয় সেইজন্যে তাঁকে জোর করে বন্দী করে নিয়ে গেছেন।
১। ভারি অন্যায়। একে অত্যাচার বলে। আমাদের যুবরাজকে আমরা শাস্তি দিতে পারব না?
২। এর উচিত বিধান হচ্ছে– বুঝলে, দাদা–
১। হাঁ, হাঁ, ওঁদের সেই সোনার খনিটা–
কুন্দন। আর জানিস তো, ভাই, ওঁর গোষ্ঠে কিছু না হবে তো পঁচিশ হাজার গোরু আছে।
১। তার সব কটি গুনে নিয়ে তবে– কী অন্যায়। অসহ্য অন্যায়।
৩। আর ওঁদের সেই জাফরানের খেত, তার থেকে অন্তত পক্ষে বৎসরে–
২। হাঁ, হাঁ, সেটা দিতে হবে ওঁকে দণ্ড। কিন্তু এখন এই বৈরাগীকে নিয়ে কী করা যায়?
১। ওইখানেই থাক্‌ না পড়ে।

[ নাগরিকদের প্রস্থান ]

ধনঞ্জয়।

গান

ফেলে রাখলেই কি পড়ে রবে? (ও অবোধ)
যে তার দাম জানে সে কুড়িয়ে লবে। (ও অবোধ)
ওযে কোন্‌ রতন তা দেখ্‌ না ভাবি,
ওর ‘পরে কি ধুলোর দাবি?
ও হারিয়ে গেলে তাঁরি গলার
হার গাঁথা যে ব্যর্থ হবে।
ওর খোঁজ পড়েছে জানিস নে তো?
তাই দূত বেরোল হেথা সেথা।
যারে করলি হেলা সবাই মিলি,
আদর যে তার বাড়িয়ে দিলি,
যারে দরদ দিলি, তার ব্যথা কি
সেই দরদির প্রাণে স’বে?

কুন্দনের পুনঃপ্রবেশ

কুন্দন। ঠাকুর, তোমার বাঁধনটা খুলে দি, অপরাধ নিয়ো না। তুমি এখনই বাড়ি পালাও। কী জানি আজ রাত্রে–
ধনঞ্জয়। কী জানি আজ রাত্রে যদি ডাক পড়ে সেইজন্যেই তো বাড়ি পালাবার জো নাই।
কুন্দন। এখানে তোমার ডাক কোথায়?
ধনঞ্জয়। উৎসবের শেষ পালাটায়।
কুন্দন। তুমি শিবতরাইয়ের মানুষ হয়ে উত্তরকূটের–
ধনঞ্জয়। ভৈরবের উৎসবে এখন শিবতরাইয়ের আরতিই কেবল বাকি আছে।
নেপথ্যে। জাগো, ভৈরব, জাগো!
কুন্দন। আমার ভালো বোধ হচ্ছে না, চললেম!

[ উভয়ের প্রস্থান ]

উত্তরকূটের দুইজন রাজদূতের প্রবেশ

১। এখন কোন্‌ দিকে যাই? নওসানুতে যারা ছাগল চরায় তারা তো বললে, তারা দেখেছে যুবরাজ একলা এই পথ দিয়ে পশ্চিমের দিকে গেছেন।
২। আজ রাত্রে তাঁকে খুজে বের করতেই হবে মহারাজের হুকুম।
১। মোহনগড়ে তাঁকে নিয়ে গেছে বলে কথা উঠেছে। কিন্তু অম্বা পাগলীর কথা শুনে স্পষ্ট বোধ হচ্ছে সে যাকে দেখেছে সে আমাদের যুবরাজ– আর তিনি এই পথ দিয়েই উঠেছেন।
২। কিন্তু এই অন্ধকারে তিনি একলা কোথায় যে যাবেন বোঝা যাচ্ছে না।
১। আলো না হলে আমরা তো এক পা এগোতে পারব না। কোটপালের কাছ থেকে আলো সংগ্রহ করে আনি গে।

[ উভয়ের প্রস্থান ]

পরবর্তী অংশ পড়ুন 

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।