Skip to content

মুক্তধারা – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

বাউলের প্রবেশ

গান

ও তো আর ফিরবে না রে, ফিরবে না আর, ফিরবে না রে।
ঝড়ের মুখে ভাসল তরী,
কূলে আর ভিড়বে না রে।
কোন্‌ পাগলে নিল ডেকে,
কাঁদন গেল পিছে রেখে,
ওকে তোর বাহুর বাঁধন ঘিরবে না রে।

[ প্রস্থান ]

ফুলওয়ালীর প্রবেশ

ফুলওয়ালী। বাবা, উত্তরকূটের বিভূতি মানুষটি কে?
সঞ্জয়। কেন, তাকে তোমার কী প্রয়োজন?
ফুলওয়ালী। আমি বিদেশী, দেওতলি থেকে আসছি। শুনেছি উত্তরকূটের সবাই তাঁর পথে পথে পুষ্পবৃষ্টি করছে। সাধুপুরুষ বুঝি? বাবার দর্শন করব বলে নিজের মালঞ্চের ফুল এনেছি।
সঞ্জয়। সাধুপুরুষ না হ’ক, বুদ্ধিমান পুরুষ বটে।
ফুলওয়ালী। কী কাজ করেছেন তিনি?
সঞ্জয়। আমাদের ঝরনাটাকে বেঁধেছেন।
ফুলওয়ালী। তাই পুজো? বাঁধে কি দেবতার কাজ হবে?
সঞ্জয়। না, দেবতার হাতে বেড়ি পড়বে।
ফুলওয়ালী। তাই পুষ্পবৃষ্টি? বুঝলুম না।
সঞ্জয়। না বোঝাই ভাল। দেবতার ফুল অপাত্রে নষ্ট ক’রো না, ফিরে যাও। শোনো, শোনো, আমাকে তোমার ওই শ্বেতপদ্মটি বেচবে?
ফুলওয়ালী। সাধুকে দেব মনন করে যে ফুল এনেছিলুম সে তো বেচতে পারব না।
সঞ্জয়। আমি যে-সাধুকে সব চেয়ে ভক্তি করি তাঁকেই দেব।
ফুলওয়ালী। তবে এই নাও। না, মূল্য নেব না। বাবাকে আমার প্রণাম জানিয়ো। ব’লো আমি দেওতলির দুখনী ফুলওয়ালী।

[ প্রস্থান ]

বিজয়পালের প্রবেশ

সঞ্জয়। দাদা কোথায়?
বিজয়পাল। শিবিরে তিনি বন্দী।
সঞ্জয়। যুবরাজ বন্দী! এ কী স্পর্ধা!
বিজয়পাল। এই দেখো মহারাজের আদেশপত্র।
সঞ্জয়। এ কার ষড়যন্ত্র? তাঁর কাছে আমাকে একবার যেতে দাও।
বিজয়পাল। ক্ষমা করবেন।
সঞ্জয়। আমাকে বন্দী করো, আমি বিদ্রোহী।
বিজয়পাল। আদেশ নেই।
সঞ্জয়। আচ্ছা, আদেশ নিতে এখনই চল্লুম। (কিছু দূরে গিয়া ফিরিয়া আসিয়া) বিজয়পাল, এই পদ্মটি আমার নাম করে দাদাকে দিয়ো।

[ উভয়ের প্রস্থান ]

শিবতরাইয়ের বৈরাগী ধনঞ্জয়ের প্রবেশ

গান

আমি মারের সাগর পাড়ি দেব
বিষম ঝড়ের বায়ে
আমার ভয়- ভাঙা এই নায়ে।
মাভৈঃ বাণীর ভরসা নিয়ে
ছেঁড়াপালে বুক ফুলিয়ে
তোমার ওই পারেতেই যাবে তরী
ছায়াবটের ছায়ে।
পথ আমারে সেই দেখাবে
যে আমারে চায়–
আমি অভয়মনে ছাড়ব তরী
এই শুধু মোর দায়।
দিন ফুরোলে জানি জানি
পৌঁছে ঘাটে দেব আনি
আমার দুঃখদিনের রক্তকমল
তোমার করুণ পায়ে।

এই নাটকের পাত্র ধনঞ্জয় ও তাহার কথোপকথনের অনেকটা অংশ “প্রায়শ্চিত্ত” নামক আমার একটি নাটক হইতে লওয়া। সেই নাটক এখন হইতে পনেরো বছরেরও পূর্বে লিখিত।

শিবতরাইয়ের একদল প্রজার প্রবেশ

ধনঞ্জয়। একেবারে মুখ চুন যে! কেন রে, কি হয়েছে?
১। প্রভু, রাজশ্যালক চণ্ডপালের মার তো সহ্য হয় না। সে আমাদের যুবরাজকেই মানে না, সেইটেতেই আরও অসহ্য হয়।
ধনঞ্জয়। ওরে আজও মারকে জিততে পারলি নে? আজও লাগে?
২। রাজার দেউড়িতে ধরে নিয়ে মার! বড়ো অপমান!
ধনঞ্জয়। তোদের মানকে নিজের কাছে রাখিস নে; ভিতরে য়ে ঠাকুরটি আছেন তাঁরই পায়ের কাছে রেখে আয়, সেখানে অপমান পৌঁছোবে না।

গণেশ সর্দারের প্রবেশ

গণেশ। আর সহ্য হয় না, হাত দুটো নিশ পিশ করছে।
ধনঞ্জয়। তাহলে হাত দুটো বেহাত হয়েছে বল্‌।
গণেশ। ঠাকুর, একবার হুকুম করো ওই ষণ্ডামার্কা চণ্ডপালের দণ্ডটা খসিয়ে নিয়ে মার কাকে বলে একবার দেখিয়ে দিই।
ধনঞ্জয়। মার কাকে না বলে তা দেখাতে পারিস নে? জোর বেশি লাগে বুঝি? ঢেউকে বাড়ি মারলে ঢেউ থামে না, হালটাকে স্থির করে রাখলে ঢেউ জয় করা যায়।
৪। তাহলে কী করতে বল
ধনঞ্জয়। মার জিনিসটাকেই একেবারে গোড়া ঘেঁষে কোপ লাগাও।
৩। সেটা কী করে হবে প্রভু?
ধনঞ্জয়। মাথা তুলে যেমনি বলতে পারবি লাগছে না,অমনি মারের শিকড় যাবে কাটা।
২। লাগছে না বলা যে শক্ত।
ধনঞ্জয়। আসল মানুষটি যে, তার লাগে না, সে যে আলোর শিখা। লাগে জন্তুটার, সে যে মাংস,মার খেয়ে কেঁই কেঁই করে মরে। হাঁ করে রইলি যে? কথাটা বুঝলি নে?
২। তোমাকেই আমরা বুঝি, কথা তোমার নাই বা বুঝলুম।
ধনঞ্জয়। তাহলেই সর্বনাশ হয়েছে।
গণেশ। কথা বুঝতে সময় লাগে, সে তর সয় না; তোমাকে বুঝে নিয়েছি, তাতেই সকাল-সকাল তরে যাব।
ধনঞ্জয়। তার পরে বিকেল যখন হবে। তখন দেখবি কূলের কাছে তরী এসে ডুবেছে। যে কথাটা পাকা, সেটাকে ভিতর থেকে পাকা করে না যদি বুঝিস তো মজবি।
গণেশ। ও কথা ব’লো না, ঠাকুর। তোমার চরণাশ্রয় যখন পেয়েছি তখন যে করে হ’ক বুঝেছি।
ধনঞ্জয়। বুঝিস নি যে তা আর বুঝতে বাকি নেই। তোদের চোখ রয়েছে রাঙিয়ে, তোদের গলা দিয়ে সুর বেরোল না। একটু সুর ধরিয়ে দেব?

গান

আরো, আরো, প্রভু,আরো,আরো।
এমনি করেই মারো, মারো।

ওরে ভীতু, মার এড়াবার জন্যেই তোরা হয় মরতে নয় পালাতে থাকিস, দুটো একই কথা। দুটোতেই পশুর দলে ভেড়ায়, পশুপতির দেখা মেলে না।

লুকিয়ে থাকি আমি পালিয়ে বেড়াই,
ভয়ে ভয়ে কেবল তোমায় এড়াই ;
যা-কিছু আছে সব কাড়ো কাড়ো।

দেখ বাবা, আমি মৃত্যুঞ্জয়ের সঙ্গে বোঝা-পড়া করতে চলেছি। বলতে চাই,”মার আমায় বাজে কি না তুমি নিজে বাজিয়ে নাও।’ যে ডরে কিম্বা ডর দেখায় তার বোঝা ঘাড়ে নিয়ে এগোতে পারব না।

এবার যা করবার তা সারো, সারো–,
আমিই হারি, কিম্বা তুমিই হার।,
হাটে ঘাটে বাটে করি খেলা,
কেবল হেসে খেলে গেছে বেলা,
দেখি কেমনে কাঁদাতে পার।

সকলে। শাবাশ, ঠাকুর,তাই সই। দেখি কেমনে কাঁদাতে পার।
২। কিন্তু তুমি কোথায় চলেছ, বলো তো?
ধনঞ্জয়। রাজার উৎসবে।
৩। ঠাকুর, রাজার পক্ষে যেটা উৎসব তোমার পক্ষে সেটা কী দাঁড়ায় বলা যায় কি? সেখানে কী করতে যাবে?
ধনঞ্জয়। রাজসভায় নাম রেখে আসব।
৪। রাজা তোমাকে একবার হাতের কাছে পেলে– না, না, সে হবে না।
ধনঞ্জয়। হবে না কী রে? খুব হবে, পেট ভরে হবে।
১। রাজাকে ভয় কর না তুমি, কিন্তু আমাদের ভয় লাগে।
ধনঞ্জয়। তোরা যে মনে মনে মারতে চাস তাই ভয় করিস, আমি মারতে চাই নে তাই ভয় করি নে। যার হিংসা আছে ভয় তাকে কামড়ে লেগে থাকে।
২। আচ্ছা, আমরাও তোমার সঙ্গে যাব।
৩। রাজার কাছে দররার করব।
ধনঞ্জয়। কী চাইবি রে?
৩। চাইবার তো আছে ঢের, দেয় তবে তো?
ধনঞ্জয়। রাজত্ব চাইবি নে?
৩। ঠাট্টা করছ, ঠাকুর?
ধনঞ্জয়। ঠাট্টা কেন করব? এক পায়ে চলার মতো কি দুঃখ আছে? রাজত্ব একলা যদি রাজারই হয়, প্রজার না হয়, তাহলে সেই খোঁড়া রাজত্বের লাফানি দেখে তোরা চমকে উঠতে পারিস কিন্তু দেবতার চোখে জল আসে। ওরে রাজার খাতিরেই রাজত্ব দাবি করতে হবে।
২। যখন তাড়া লাগবে?
ধনঞ্জয়। রাজদরবারের উপরতলার মানুষ যখন নালিশ মঞ্জুর করেন তখন রাজার তাড়া রাজাকেই তেড়ে আসে।

গান

ভুলে যাই থেকে থেকে
তোমার আসন-‘পরে বসাতে চাও
নাম আমাদের হেঁকে হেঁকে।

সত্যি কথা বলব, বাবা? যতক্ষণ তাঁরই আসন বলে না চিনবি ততক্ষণ সিংহাসনে দাবি খাটবে না, রাজারও নয়, প্রজারও না। ও তো বুক-ফুলিয়ে বসবার জায়গা নয়, হাত জোড় করে বসা চাই।

দ্বারী মোদের চেনে না যে,
বাধা দেয় পথের মাঝে,
বাহিরে দাঁড়িয়ে আছি,
লও ভিতরে ডেকে ডেকে।

দ্বারী কি সাধে চেনে না? ধুলোয় ধুলোয় কপালের রাজটিকা যে মিলিয়ে এসেছে। ভিতরে বশ মানল না, বাইরে রাজত্ব করতে ছুটবি? রাজা হলেই রাজাসনে বসে ;রাজাসনে বসলেই রাজা হয় না।

মোদের প্রাণ দিয়েছ আপন হাতে
মান দিয়েছ তারি সাথে।
থেকেও সে মান থাকে না যে
লোভে আর ভয়ে লাজে,
ম্লান হয় দিনে দিনে,
যায় ধুলোতে ঢেকে ঢেকে।

১। যাই বল,রাজদুয়ারে কেন যে চলেছ বুঝতে পারলুম না।
ধনঞ্জয়। কেন, বলব? মনে বড়ো ধোঁকা লেগেছে।
১। সে কী কথা?
ধনঞ্জয়। তোরা আমাকে যত জড়িয়ে ধরছিস তোদের সাঁতার শেখা ততই পিছিয়ে যাচ্ছে। আমারও পার হওয়া দায় হল। তাই ছুটি নেবার জন্যে চলেছি সেইখানে, যেখানে আমাকে কেউ মানে না।
১। কিন্তু রাজা তোমাকে তো সহজে ছাড়বে না
ধনঞ্জয়। ছাড়বে কেন রে। যদি আমাকে বাঁধতে পারে তাহলে আর ভাবনা রইল কী?

গান

আমাকে যে বাঁধবে ধরে এই হবে যার সাধন,
সে কি অমনি হবে?
আমার কাছে পড়লে বাঁধা সেই হবে মোর বাঁধন,
সে কি অমনি হবে?
কে আমারে ভরসা করে আনতে আপন বশে?
সে কি অমনি হবে?
আপনাকে সে করুক না বশ, মজুক প্রেমের রসে,
সে কি অমনি হবে?
আমাকে যে কাঁদাবে তার ভাগ্যে আছে কাঁদন
সে কি অমনি হবে?

২। কিন্তু বাবাঠাকুর, তোমার গায়ে য়দি হাত তোলে সইতে পারব না।
ধনঞ্জয়। আমার এই গা বিকিয়েছি যাঁর পায়ে তিনি যদি সন, তবে তোদেরও সইবে।
১। আচ্ছা, চলো ঠাকুর, শুনে আসি, শুনিয়ে আসি, তার পরে কপালে যা থাকে।
ধনঞ্জয়। তবে তোরা এইখানে ব’স, এ জায়গায় কখনো আসি নি, পথঘাটের খবরটা নিয়ে আসি।

[ প্রস্থান ]

১। দেখেছিস ভাই, কী চেহারা ওই উত্তরকূটের মানুষগুলোর? যেন একতাল মাংস নিয়ে বিধাতা গড়তে শুরু করেছিলেন শেষ করে উঠতে ফুরসৎ পান নি।
২। আর দেখেছিস ওদের মালকোঁচা মেরে কাপড় পরবার ধরনটা?
৩। যেন নিজেকেই বস্তায় বেঁধেছে, একটুখানি পাছে লোকসান হয়।
১। ওরা মজুরি করবার জন্যেই জন্ম নিয়েছে, কেবল সাত ঘাটের জল পেরিয়ে সাত হাটেই ঘুরে বেড়ায়।
২। ওদের যে শিক্ষাই নেই, ওদের যা শাস্তর তার মধ্যে আছে কী?
১। কিচ্ছু না, কিচ্ছু না, দেখিস নি তার অক্ষরগুলো উইপোকার মতো।
২। উইপোকাই তো বটে। ওদের বিদ্যা যেখানে লাগে সেখানে কেটে টুকরো টুকরো করে।
৩। আর গড়ে তোলে মাটির ঢিবি।
২। ওদের অস্তর দিয়ে মারে প্রাণটাকে, আর শাস্তর দিয়ে মারে মনটাকে।
২। পাপ, পাপ। আমাদের গুরু বলে ওদের ছায়া মাড়ানো নৈব নৈবচ। কেন জানিস?
৩। কেন বল তো?
২। তা জানিস নে? সমুদ্রমন্থনের পর দেবতার ভাঁড় থেকে অমৃত গড়িয়ে যে মাটিতে পড়েছিল আমাদের শিবতরাইয়ের পূর্বপুরুষ সেই মাটি দিয়ে গড়া। আর দৈত্যরা যখন দেবতার উচ্ছিষ্ট ভাঁড় চেটে চেটে নর্দমায় ফেলে দিলে তখন সেই ভাঁড়ভাঙা পোড়া-মাটি দিয়ে উত্তরকূটের মানুষকে গড়া হয়। তাই ওরা শক্ত, কিন্তু থুঃ– অপবিত্র।
৩। এ তুই কোথায় পেলি?
২। স্বয়ং গুরু বলে দিয়েছেন।
৩। (উদ্দেশে প্রণাম করিয়া) গুরু, তুমিই সত্য।

উত্তরকূটের একদল নাগরিকের প্রবেশ

উ ১। আর সব হল ভালো,কিন্তু কামারের ছেলে বিভূতিকে রাজা একেবারে ক্ষত্রিয় করে নিলে সেটা তো–
উ ২। ওসব হল ঘরের কথা, সে আমাদের গাঁয়ে ফিরে গিয়ে বুঝে পড়ে নেব। এখন বল্‌, জয় যন্ত্ররাজ বিভূতির জয়।
উ ৩। ক্ষত্রিয়ের অস্ত্রে বৈশ্যের যন্ত্রে যে মিলিয়েছে, জয় সেই যন্ত্ররাজ বিভূতির জয়।
উ ১। ও ভাই, ওই যে দেখি শিবতরাইয়ের মানুষ।
উ ২। কী করে বুঝলি?
উ ১। কান-ঢাকা টুপি দেখছিস নে? কীরকম অদ্ভুত দেখতে? যেন উপর থেকে থাবড়া মেরে হঠাৎ কে ওদের বাড় বন্ধ করে দিয়েছে।
উ ২। আচ্ছা, এত দেশ থাকতে ওরা কান-ঢাকা টুপি পরে কেন? ওরা কি ভাবে কানটা বিধাতার মতিভ্রম?
উ ১। কানের উপর বাঁধ বেঁধেছে বুদ্ধি পাছে বেড়িয়ে যায়। (সকলের হাস্য)
উ ৩। তাই? না, ভুলক্রমে বুদ্ধি পাছে ভিতরে ঢুকে পড়ে। (হাস্য)
উ ১। পাছে উত্তরকূটের কানমলার ভূত ওদের কানদুটোকে পেয়ে বসে। (হাস্য) ওরে শিবতরাইয়ের অজবুগের দল, সাড়া নেই, শব্দ নেই, হয়েছে কী রে?
উ ৩। জানিস নে আজ আমাদের বড়ো দিন। বল্‌ যন্ত্ররাজ বিভূতির জয়!
উ ১। চুপ করে রইলি যে? গলা বুজে গেছে? টুঁটি চেপে না ধরলে আওয়াজ বেরোবে না বুঝি? বল্‌ যন্ত্ররাজ বিভূতির জয়!
গণেশ। কেন বিভূতির জয়? কী করেছে সে?
উ ১। বলে কী? কী করেছে? এত বড়ো খবরটা এখনও পৌঁছয় নি? কান-ঢাকা টুপির গুণ দেখলি তো?
উ ৩। তোদের পিপাসার জল যে তার হাতে; সে দয়া না করলে অনাবৃষ্টির ব্যাঙগুলোর মতো শুকিয়ে মরে যাবি।
শি ২। পিপাসার জল বিভূতির হাতে? হঠাৎ সে দেবতা হয়ে উঠল নাকি?
উ ২। দেবতাকে ছুটি দিয়ে দেবতার কাজ নিজেই চালিয়ে নেবে।
শি ১। দেবতার কাজ! তার একটা নমুনা দেখি তো।
উ ১। ওই যে মুক্তধারার বাঁধ। [ শিবতরাইয়ের সকলের উচ্চহাস্য
উ ১। এটা কি তোরা ঠাট্টা ঠাউরেছিস?
গণেশ। ঠাট্টা নয়? মুক্তধারা বাঁধবে? ভৈরব স্বহস্তে যা দিয়েছেন, তোমাদের কামারের ছেলে তাই কাড়বে?
উ ১। স্বচক্ষে দেখ্‌ না ওই আকাশে।
শি ১। বাপ রে! ওটা কী রে?
শি ২। যেন মস্ত একটা লোহার ফড়িং,আকাশে লাফ মারতে যাচ্ছে ।
উ ১। ওই ফড়িঙের ঠ্যাং দিয়ে তোমাদের জল আটকেছে।
গণেশ। রেখে দাও সব বাজে কথা। কোন্‌ দিন বলবে ওই ফড়িঙের ডানায় বসে তোমাদের কামারের পো চাঁদ ধরতে বেরিয়েছে।
উ ১। ওই দেখ কান ঢাকার গুণ! ওরা শুনেও শুনবে না তাই তো মরে।
শি ১। আমরা মরেও মরব না পণ করেছি।
উ ৩। বেশ করেছ, বাঁচাবে কে?
গণেশ। আমাদের দেবতাকে দেখ নি? প্রত্যক্ষ দেবতা? আমাদের ধনঞ্জয় ঠাকুর? তার একটা দেহ মন্দিরে, একটা দেহ বাইরে।
উ ৩। কানঢাকারা বলে কী? ওদের মরণ কেউ ঠেকাতে পারবে না।

[ উত্তরকূটের দলের প্রস্থান ]

পরবর্তী অংশ পড়ুন 

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।