ধনঞ্জয়ের প্রবেশ |
|
গান |
|
আগুন, আমার ভাই, আমি তোমারি জয় গাই। তোমার শিকল-ভাঙা এমন রাঙা মূর্তি দেখি নাই। দু-হাত তুলে আকাশ পানে মেতেছ আজ কিসের গানে? এ কী আনন্দময় নৃত্য অভয় বলিহারি যাই। যেদিন ভবের মেয়াদ ফুরোবে, ভাই, আগল যাবে সবে সেদিন হাতের দড়ি পায়ের দড়ি দিবি রে ছাই করে। সেদিন আমার অঙ্গ তোমার অঙ্গে ঐ নাচনে নাচবে রঙ্গে, সকল দাহ মিটবে দাহে, ঘুচবে সব বালাই। |
|
বটুর প্রবেশ |
|
বটু। | ঠাকুর, দিন তো গেল, অন্ধকার হয়ে এল। |
ধনঞ্জয়। | বাবা, বাইরের আলোর উপর ভরসা রাখাই অভ্যাস, তাই অন্ধকার হলেই একেবারে অন্ধকার দেখি। |
বটু। | ভেবেছিলুম,ভৈরবের নৃত্য আজই আরম্ভ হবে, কিন্তু যন্ত্ররাজ কি তাঁরও হাত পা যন্ত্র দিয়ে বেঁধে দিলে? |
ধনঞ্জয়। | ভৈরবের নৃত্য যখন সবে আরম্ভ হয় তখন চোখে পড়ে না। যখন শেষ হবার পালা আসে তখন প্রকাশ হয়ে পড়ে। |
বটু। | ভরসা দাও, প্রভু, বড়ো ভয় ধরিয়েছে। জাগো, ভৈরব, জাগো। আলো নিবেছে, পথ ডুবেছে, সাড়া পাই নে মৃত্যুঞ্জয়! ভয়কে মারো ভয় লাগিয়ে। জাগো, ভৈরব, জাগো! |
[ প্রস্থান ] |
|
উত্তরকূটের নাগরিকদলের প্রবেশ |
|
১। | মিথ্যে কথা। রাজধানীর গারদে সে নেই। ওকে লুকিয়ে রেখেছে। |
২। | দেখব, কোথায় লুকিয়ে রাখে। |
ধনঞ্জয়। | না, বাবা, কোথাও পারবে না লুকিয়ে রাখতে। পড়বে দেয়াল, ভাঙবে দরজা, আলো ছুটে বের হয়ে আসবে– সমস্ত প্রকাশ হয়ে পড়বে। |
১। | এ আবার কে রে? বুকের ভিতরটায় হঠাৎ চমকিয়ে দিলে। |
৩। | তা বেশ হয়েছে। একজন কাউকে চাই। তা, এই বৈরাগীটাকেই ধর। ওকে বাঁধ। |
ধনঞ্জয়। | যে মানুষ ধরা দিয়ে বসে আছে তাকে ধরবে কী করে? |
১। | সাধুগিরি রাখো, আমরা ও সব মানি নে। |
ধনঞ্জয়। | না মানাই তো ভালো। প্রভু স্বয়ং হাতে ধরে তোমাদের মানিয়ে নেবেন। তোমরা ভাগ্যবান। আমি যে-সব অভাগাদের জানি তারা কেবল মেনে মেনেই গুরুকে খোয়ালে। আমাকে সুদ্ধ তারা মানার তাড়ায় দেশছাড়া করেছে। |
১। | তাদের গুরু কে? |
ধনঞ্জয়। | যার হাতে তারা মার খায়। |
১। | তা হলে তোমার উপর গুরুগিরি আমরাই শুরু করি না কেন? |
ধনঞ্জয়। | রাজি আছি, বাবা। দেখে নিই ঠিকমত পাঠ দিতে পারি কি না। পরীক্ষা হ’ক। |
২। | সন্দেহ হচ্ছে তুমিই আমাদের যুবরাজকে নিয়ে কিছু চালাকি করেছ। |
ধনঞ্জয়। | তোমাদের যুবরাজ আমার চেয়েও চালাক, তাঁর চালাকি আমাকে নিয়ে। |
২। | দেখলি তো, কথাটার মানে আছে। দুজনে একটা কী ফন্দি চলছে। |
১। | নইলে এত রাত্রে এখানে ঘুরে বেড়ায় কেন? যুবরাজকে শিবতরাইয়ে সরাবার চেষ্টা। এইখানেই ওকে বেঁধে রেখে যাই। তার পরে যুবরাজের সন্ধান পেলে ওর সঙ্গে বোঝা-পড়া করব। ওহে, কুন্দন, বাঁধোনা। দড়িগাছটা তো তোমার কাছেই আছে। |
কুন্দন। | এই নাওনা দড়ি, তুমিই বাঁধোনা। |
২। | ওরে, তোরা কি উত্তরকূটের মানুষ? দে, আমাকে দে। (বাঁধিতে বাঁধিতে) কেমন হে, গুরু কী বলছেন? |
ধনঞ্জয়। | কষে চেপে ধরেছেন, সহজে ছাড়ছেন না। |
ভৈরবপন্থীর প্রবেশ |
|
গান |
|
তিমির-হৃদ্বিদারণ জ্বলদগ্নি-নিদারুণ, মরুশ্মশান-সঞ্চর, শংকর শংকর। বজ্রঘোষ-বাণী রুদ্র, শূলপাণি, মৃত্যু-সিন্ধু-সন্তর, শংকর শংকর। |
|
[ প্রস্থান ] |
|
কুন্দন। | ওই দেখো চেয়ে। গোধূলির আলো যতই নিবে আসছে আমাদের যন্ত্রের চূড়াটা ততই কালো হয়ে উঠছে। |
১। | দিনের বেলায় ও সুর্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এসেছে, অন্ধকারে ও রাত্রিবেলাকার কালোর সঙ্গে টক্কর দিতে লেগেছে। ওকে ভূতের মতো দেখাচ্ছে। |
কুন্দন। | বিভূতি তার কীর্তিটাকে এমন করে গড়ল কেন ভাই? উত্তরকূটের যে দিকেই ফিরি ওর দিকে না তাকিয়ে থাকবার জো নেই, ও যেন একটা বিকট চীৎকারের মতো। |
চতুর্থ নাগরিকের প্রবেশ |
|
৪। | খবর পাওয়া গেল– ওই আমবাগানের পিছনে রাজার শিবির পড়েছে, সেখানে যুবরাজকে রেখে দিয়েছে। |
২। | এতক্ষণে বোঝা গেল। তাই বটে বৈরাগী এই পথেই ঘুরছে। ও থাক্ এইখানেই বাঁধা পড়ে। ততক্ষণ দেখে আসি। |
[ নাগরিকদের প্রস্থান ] |