Skip to content

তুমি আছো-ভিতরে উপরে আছে দেয়াল – শক্তি চট্টোপাধ্যায়

আমার হাতের উপর ভারি হ’য়ে বসেছে প্রেত
. ফুটপাতে শব্দ হয় ক্রমাগত
বৃষ্টির মুখ-ঝোঁকা মেঘ দূরে সরিয়ে দিলো হাওয়া
আমরা বিকেলবেলা চাঁদ দেখেছিলাম
তরমুজের লাল কাটা ফলার মতন ধরণী-সবুজ চাঁদ

পৃথিবীতে যতো কঠিন সমস্যা ছিলো সব চাঁদের নিচে জড়ো হ’য়ে ততো
. কঠিন ছিলো না আর
চাঁদের মতন কোমল, পাংশু ছিলো জীবন আমাদের—জীবনাকাঙ্ক্ষা
পৃথিবীতে বদ্ না-গাড়ু পরিস্কার ছিলো সোনার মতন
সোনার মতন মুসলমান নেমে গিয়েছিলো ওজু করতে
. ওদের আল্লা করাতে খান্ খান্ হয়ে গিয়েছে কাল
তার কাশফুল উড়ছিলো হাওয়ায়—তার কানের পৈতা হয়েছিলো
. নির্ঘাত কুটি কুটি

কুশাসনে বসতে আমার ভালো লাগে না
ভালো লাগে না আমার ইন্দ্রজাল—মোহরের গল্প
আলিবাবা ভালো লাগে না আমার
. ভালো লাগে না আমার সাধারণতন্ত্র – দেহ-বিক্রি
আমেরিকার কোনো কিছুই ভালো লাগে না আমার—
. কেনেডির মৃত্যুই আমার ভালো লেগেছিল |

আকাশমণির মাথায় হাওয়া লাগছে
ফুল-বেলপাতা সমস্ত আমার হাত থেকে পড়ে গেলো
ডাকছে তক্ষক—শিবের ধিঙ্গি লিঙ্গ করছে খাঁ খাঁ
মাঠ ভেঙে রোদ্দুর এসে পড়ছে গায়ে তার
. দেবতা সবই আছে—ছাতা নেই—নেই ওয়াটার-প্রুফ
. বৃষ্টির বিরুদ্ধে, ঝোড়ো হাওয়ায়
দেবতাদের দেশে ইংরেজি নেই—হিন্দী নেই
. নেই ভাষা কোনো আর
ইংগিতে ইংগিতে বাংলাদেশের মতন কথা আছে তার
. আছে যোগাযোগ – আছে কলংকের কাল—
. আছে চলাফেরা

দেবতাদের দেশে ইংরেজি নেই—হিন্দী নেই
. আছে লরির আওয়াজ, মুক্তি-যুদ্ধ
. আছে গড়নির্ণয় দেয়াল-ঘড়ি
আছে সবই যাকে তোমরা বলো ‘অ্যাসেট্’ !

মৃত্যুর অনেক আগে জন্মেছি আমরা—
. জন্ম আগে—মৃত্যুর কাছে যেতে হলে পথ,
পথের পরে পথ ফেলে যেতে হবে আমাদের
সেখানে মাইল-পোস্ট নেই— নেই টেলিফোন-তার
মৃত্যুর কাছে যেতে হলে পথ—
. পথের পরে পথ ফেলে যেতে হবে আমাদের
তুমি আছো—ভিতরে উপরে আছে দেয়াল
আছে কুলুঙ্গি, দেয়ালগিরি
আছে আসবাব উপঢৌকন মেহগনি-ঘাট পাশবালিশ
আছে পিকদানি পানের বরজ কাবুলী কলাগাছ
আছে ঘেটো রুই হাতছানি শ্যাওলা দাম
আছে প্রকৃত পিছিয়ে-যাওয়া শিশু ভোলানাথ শ্মশানের ছাই

তুমি না দিলে, আমার নয় কিছুই
কেননা, তোমায় আমি বিবাহ করেছি—
তোমার খেয়েছি লালা, কেটেছি পকেট—বগলের খাঁজে
উপুর ক’রে দিয়েছি পাউডার-কৌটো
তোমাকে ভালোবেসেছি ভালোবেসেছি
যেমন ক’রে কুকুর ভালোবাসে যেমন ক’রে মশারির গর্তে গর্তে মশা বসে যায়
. মৌমাছির মতন মাংসাশী
পৃথিবীতে বাঁচার কোনো প্রয়োজন ছিলো না—
বৈতরণী পার হ’য়ে তারাপীঠ যেতে হয়
আমাদের এঞ্জিন আমাদের লাল-হলুদে-মেশা বগিগুলো ফেলে গিয়েছিলো
. পথেই !

শান্তিতে কিছুদিন বিদেশে থাকা চলে—দেশের অদ্ভুত
গোলযোগ বিড়ম্বনা ভালো লাগে আমাদের চিরদিনই
গাধা ভালো লাগে, ভালো লাগে ব়্যাঁদার উপর কাঠ-বরফের কুঁচি
পরিপ্রাণহীন খাটা পায়খানা ভালো লাগে আমাদেরও—
আমাদেরও দেশের যা কিছু আছে – পেঁপে গাছ
ভালো লাগে আমাদের — আমরা সুখী !

[A]

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।