Skip to content

আমার শহরঃ বর্ষবরণ – প্রদীপ বালা

উড়ছে দেখো শহর এবার স্কচের বোতল খোলো
আঠেরো নয় ঊনিশও নয় আজকে সবাই ষোলো

###

মেয়ে বলেই সব কথা তার মানবো নাকি আমি
পাঁচ হাজারের বেশি তো আজ কোনোমতেই নয়
যা চাইছে তাই-ই তো দিচ্ছি সবচে যেটা দামী

আমারও আজ খরচা আছে নতুন বছর বলে
এক শরীরে কদ্দিন আর টেস্ট বদলানো চাই
নতুন নতুন কচি শরীর না হলে কি চলে?

আমারও তো ইচ্ছে করে যন্তর আমারও
সবাইতো করছে এমন আমিই কেন বাকি
দশ বিশ লাগে দেব সবই আনতে যদি পারো

কলিগ বলে, ‘চাপ নিস না তোরও আজ হবে
নতুন নতুন ছুঁড়ি গুলোর রস জমেছে ভারি
বয়সও কম কমবেশি ষোলো সতেরো সবে’

শুনেই মনে ফুর্তি জাগে ঝুলে আসে জিভ
এমন কলিগ সবার যেন যুগে যুগে হয়
এবার তবে ফাটিয়ে দেব নিউ ইয়ারের ইভ

ড্রইং রুমে বউ বসেছে রবীন্দ্রনাথ নিয়ে
আদিখ্যেতা দেখলে রাগে শরীর জ্বলে যায়
কি করে বল সংসারী হই এমন মাল নিয়ে

না জানে সে ছলাকলা না আছে তার শরীর
তার ওপরে কথায় কথায় বঙ্গ সংস্কৃতি
তাই নিয়ে রোজ শুতে হবে কি যে আমি করি

মেয়ে আমার এমন তো নয় এই ভাল কপালে
মায়ের থেকে সে থাকে রোজ শত যোজন দূরে
বন্ধু-বান্ধব নাইট পার্টি একেই মডার্ণ বলে

‘সুইট হার্ট আজ ফিরতে দেরী হতে পারে’
দাঁত কেলিয়ে বলি, ‘তোমার আবার পার্টিতে বারণ…’
বেরিয়ে এলাম বুক ভরে শ্বাস হার্টবিট যাচ্ছে বেড়ে

বর্ষবরণ বর্ষবরণ বর্ষবরণ!!

###

নিজের বেলায় ষোলো আনা ফুর্তিতে নেই ছাড়
পাঁচ হাজারে হবে না আজ দশ হাজার তো চাইই
আমার বেলায় যত কিছু মা ভবানীর ভাঁড়

বন্ধুরা সব মিলে মিশে ডিস্কো থেক-এ যাব
পাঁচ হাজারতো চলেই যাবে এন্ট্রি নিতে সেথা
বাকী টাকা এখন আমি কার কাছে যে পাবো!

বান্ধবীদের সে কি হাসি শুনে এমন কথা!
‘আমরা কি সব ফুর্তি করি বাপের পকেট কেটে
টাকা এখন কিচ্ছুটি নয় শরীর আছে যেথা

ঘন্টা দুয়েক সময় দিলেই ব্যস কেল্লা ফতে
এবার তবে ফুর্তি কর আবার কী দরকার
লাগলে পরে বলিস তবে পার্টি আছে হাতে’

ভাবনা এসে জুড়ে বসে শরীর ছিঁড়ে খায়
বাবা যে আজ না করবে বুঝতে সময় লাগে
পাঁচ হাজারে টান পড়ে যায় কী আছে উপায়

মায়ের সাথে কথাটি নেই সেদিনের পর থেকে
কলেজ ফেরত আধভেজা ঘর দরজা খুলে দেখি
আমার প্রেমিক শুয়ে আছে মায়ের সাথে খাটে

সারা ঘরে ছড়িয়ে আছে রবীন্দ্রনাথ কবি
এখন শুনে ঘেন্না করে সংস্কৃতির বুলি
সাহিত্য বেশি মারায় যারা তারাই বেশি ভোগী

বাইরে আসি বুক ভরে শ্বাস তাওকি চাইলে মেলে
ফোন তুলে নিই, কনফার্ম কর উচ্ছন্নেতে যাই
বর্ষবরণ, আদর করো ককটেলে ককটেলে

নষ্ট করো নষ্ট করো চেঁচিয়ে বলেছিলাম
নষ্ট হতে কলজে লাগে সেটা কোথায় পাই
বর্ষবরণ, চল তবে আজ নষ্ট হয়ে যাই

###

বর্ষবরণ, ফাঁকা ফ্ল্যাটের ব্যালকনিতে বসি
সময় ছিল যখন আমার কয়েক যুগের আগে
বুকের ভেতর চুম্বনে দাগ ঠোঁটের কোণে হাসি

সেবারো আমার রবীন্দ্রনাথ ইস্কুলেরই মাঠে
তখন আমি মেয়ের মতন ওর বয়সীই হবো
সে এসে সেই ছুঁয়ে দিল সূয্যি গেল পাটে

তারপরে সেই কয়েক বছর আঁধার আঁধার খেলা
কবিতা আর শরীর শরীর বর্ষবরণ দিনে
কোন ফাঁকে যে মেঘ ঘুরল পড়ে এল বেলা

তারপরে তো আরেক জীবন নতুন এ সংসারে
চাকরী বাকরি বাড়ি গাড়ি সব কিছুই তো আছে
বুঝতে পারি প্রথম রাতেই আদর ব্যবহারে

কাম দিলে তার কানায় কানায় প্রেম দিলে না মনে
এমন তরো ছলাকলা তোমাকেই তো মানায়
দ্বিচারিতা তোমার প্রভু কজনেই বা জানে!

তারও পরে বর্ষবরণ গতবারের রাতে
‘বন্ধু হয়’ মেয়ে এসে বলেছিল আমায়
মেয়ের সাথে প্রথম সেদিন দেখেছিলাম তাকে

দু-এক কথায় মরুভুমি প্রাণ পেল হঠাৎ
ভালবাসার বয়স তো নেই তোমার কাছেই শেখা
কাছাকাছি এনে দিল আবার রবীন্দ্রনাথ

বয়সের প্রেম, প্রেম থাকে না শরীর শরীর খেলা
সে খেলাতে ভেসেই চলো কিছুই করার নেই
মানুষ সবই বুঝতে পারে পড়ে এলে বেলা

বর্ষবরণ, আমাকে নাও নিংড়ে নিও তবে
আঁচড়ে আঁচড়ে আমার শুধু রক্ত ঝরাও আরো
আজও ফের ভুল করব ডাকবো আবার তাকে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।