Skip to content

বাংলাটা ঠিক আসে না! – ভবানীপ্রসাদ মজুমদার

ছেলে আমার খুব ‘সিরিয়াস’ কথায়-কথায় হাসে না
জানেন দাদা, আমার ছেলের, বাংলাটা ঠিক আসেনা।
ইংলিশে ও ‘রাইমস’ বলে
‘ডিবেট’ করে, পড়াও চলে
আমার ছেলে খুব ‘পজেটিভ’ অলীক স্বপ্নে ভাসে না
জানেন দাদা, আমার ছেলের, বাংলাটা ঠিক আসে না।

‘ইংলিশ’ ওর গুলে খাওয়া, ওটাই ‘ফাস্ট’ ল্যাঙ্গুয়েজ
হিন্দি সেকেন্ড, সত্যি বলছি, হিন্দিতে ওর দারুণ তেজ।
কী লাভ বলুন বাংলা প’ড়ে?
বিমান ছেড়ে ঠেলায় চড়ে?
বেঙ্গলি ‘থার্ড ল্যাঙ্গুয়েজ’ তাই, তেমন ভালোবাসে না
জানে দাদা, আমার ছেলের, বাংলাটা ঠিক আসে না।

বাংলা আবার ভাষা নাকি, নেই কোনও ‘চার্ম’ বেঙ্গলিতে
সহজ-সরল এই কথাটা লজ্জা কীসের মেনে নিতে?
ইংলিশ ভেরি ফ্যান্টাসটিক
হিন্দি সুইট সায়েন্টিফিক
বেঙ্গলি ইজ গ্ল্যামারলেস, ওর ‘প্লেস’ এদের পাশে না
জানেন দাদা, আমার ছেলের, বাংলাটা ঠিক আসে না।

বাংলা যেন কেমন-কেমন, খুউব দুর্বল প্যানপ্যানে
শুনলে বেশি গা জ্ব’লে যায়, একঘেয়ে আর ঘ্যানঘ্যানে।
কীসের গরব? কীসের আশা?
আর চলে না বাংলা ভাষা
কবে যেন হয় ‘বেঙ্গলি ডে’, ফেব্রুয়ারি মাসে না?
জানেন দাদা, আমার ছেলের, বাংলাটা ঠিক আসে না।

ইংলিশ বেশ বোমবাস্টিং শব্দে ঠাসা দারুণ ভাষা
বেঙ্গলি ইজ ডিসগাস্টিং, ডিসগাস্টিং সর্বনাশা।
এই ভাষাতে দিবানিশি
হয় শুধু ভাই ‘পি.এন.পি.সি’
এই ভাষা তাই হলেও দিশি, সবাই ভালোবাসে না
জানেন দাদা, আমার ছেলের, বাংলাটা ঠিক আসেনা।

বাংলা ভাষা নিয়েই নাকি এংলা-প্যাংলা সবাই মুগ্ধ
বাংলা যাদের মাতৃভাষা, বাংলা যাদের মাতৃদুগ্ধ
মায়ের দুধের বড়ই অভাব
কৌটোর দুধ খাওয়াই স্বভাব
ওই দুধে তেজ-তাকত হয় না, বাংলাও তাই হাসে না
জানেন দাদা, আমার ছেলের, বাংলাটা ঠিক আসেনা।

বিদেশে কী বাংলা চলে? কেউ বোঝে না বাংলা কথা
বাংলা নিয়ে বড়াই করার চেয়েও ভালো নিরবতা।
আজ ইংলিশ বিশ্বভাষা
বাংলা ফিনিশ, নিঃস্ব আশা
বাংলা নিয়ে আজকাল কেউ সুখের স্বর্গে ভাসে না
জানেন দাদা, আমার ছেলের, বাংলাটা ঠিক আসেনা।

শেক্সপীয়র, ওয়ার্ডসওয়ার্থ, শেলী বা কীটস বা বায়রন
ভাষা ওদের কী বলিষ্ঠ, শক্ত-সবল যেন আয়রন
কাজী নজরুল- রবীন্দ্রনাথ
ওদের কাছে তুচ্ছ নেহাত
মাইকেল হেরে বাংলায় ফেরে, আবেগে-উচছ্বাসে না
জানেন দাদা, আমার ছেলের বাংলাটা ঠিক আসেনা।

[A]

16 thoughts on “বাংলাটা ঠিক আসে না! – ভবানীপ্রসাদ মজুমদার”

  1. “চন্দ্রবিন্দু অঢেল ব্যবহার করে উচ্চারণ আমার আসেই না৷ হ্রষ্ব-ই, দীর্ঘ-ঈ-র ব্যবহার স্থানিক স্বরভেধে না হয়ে প্রমিত ব্যবহারকে জোর করে আইন করে দেওয়ায় অ-প্রমিতদের ভাষা নিয়ে প্রমিত কুলীনরা হাসি ঠাট্টা করে না হয় ভাবখানা ব্যুৎপত্তিগত দিক বিচার করে বাংলা-শব্দে বানান ও উচ্চারণ ঠিক করা হয়নি; যেমনটা সংস্কৃতে হয়েছে-যা পৃথিবীর শ্রেষ্ট ব্যাকরণ সম্পুষ্ট ভাষা৷ ইংরেজী মহাসাগরেরমত পৃথিবী ধৌত ভাল মন্দ নিকৃষ্ট আবর্জনা গিলে নেয়৷ যেমন ঘেরাও রাজনীতির সংস্কৃতি বঙ্গদেশে সৃষ্ট হওয়ার সাথে সাথে ইংলিস ডিক্সনারীতে তুলে নিয়েছে৷ আমার নাম “নীলমণি” শব্দকে ইংরেজরা “নীলম্যাণি” উচ্চারণ করে এমন উচ্চারণে অনেক সময় হাস্যাষ্পদ হতে হয়, আইনগত সংকটও সৃষ্টি হতে পারে৷ইংরেজদের উচ্চারণশৈলীকে মান্যতা দিয়ে অদ্যবধি চলছে। “অ”-কারান্ত শব্দকে ইংরেজীর প্রথম এলফাবেট দিয়ে চালিয়ে নিচ্ছি৷ বঙ্গদেশের প্রমিতদের অধিকাংশের মধ্যে রায়- চৌধুরী, রায়বাহাদুর টাইটেল পাওয়ার জন্য তোষামোদির মানসিকতা ব্যাপক ছিল এবং দন্ডমুন্ডের অধিকারী ছিল যারা অর্থ হোক আর ভাষা সবকিছু নিয়ণ্ত্রণ করেছে যার মধ্যে তাদের কুৎসিত উন্নাসিকতা থেকেছে আবআর সামন্তবাদী গোলামীও থেকেছে৷ জগৎশেঠ, উমিচা্‌ দেব, মল্লিকরা এই সম্প্রদায়ের লোক৷ আমরা আজও এদের মান্যতা দিয়ে আসছি অমুক বাড়ির ৩০০ বছরের পূজা ইত্যাদি৷ বঙ্গদেশ নদীমাতৃক হওয়ায় মধ্য দরিয়া থেকে মাঝি লম্বা সুরে ডাকার মধ্যে তাঁর মনে ১০ সেকেন্ড লম্বা সুরের মধ্যে প্রেম, ক্ষুধা, মৃত্যুভয়ের অভিঘাৎ এক বিচিত মনোগ্রাহী সুরের সৃষ্টি করেছে৷ এই ভাটিগাঙ্গের গানকে চার পাঁচ দশক আগেও সর্বসাধারণের মধ্যে “গাইয়া বা গেঁয়ো” দের গান হিসাবে গন্য করা হতো৷ এক্ষেত্রে ব্যতীক্রমও ছিল৷ যেমন রবিঠাকুর লালনের গায়নরীতিকে ধরে রাখার ঐকান্তিক প্রয়াসী ছিলেন এবং উনার বৈষ্ণবপদাশ্রিত ও কির্তনছন্দে অনেক গীতি উপহার আজ বহুল সমাদৃত৷ অতচঃ বিশ্বকবিকে গত শতাব্দীর দেড়দু দশক পর্যন্ত অপাংক্তেয় করে রাখা হয়েছিল৷ কথায় আসা যাক এই লম্ব উচ্চারণের গানে দীর্ঘ-ঈ থাকা বাঞ্ছনীয়৷ উচ্চারণ অনুযায়ী বানান না হয়ে প্রমিতরা নিজ অহমিকাকে প্রয়োগ করেছেন৷ প্রাত্যহিক কথাবার্থায় আমরা অ-প্রমিতরা কথায় কথায় হোচট খাচ্ছি৷ তাহলে পেক থাকি পানি ভালা নয় কী?

  2. অনেক কঠিন লাগছিলো পড়তে। তবে শিক্ষণীয় ছিলো। কারণ, আমার দেখা অনেক বাচ্চা ছেলে মেয়ে মোবাইল দেখে ইংরেজি শিখে পেলছে, কিন্তু বাংলা বলতেই পারে না। এখন তাদের মা-বাবা বিপদে পড়ছে! কারণ তারাও ভালো ভাবে বুঝতে পারছে না। সুতরাং আগে বাংলা সুদ্ধ করে বলতে শিখার পর বাচ্চাদেরকে ইংরেজি শেখাতে হবে।

  3. আপনাকে অনেক ধন্যবাদ এতো সুন্দর কবিতা লিখার জন্য। এই কবিতাটা অনেক, অনেক, অনেক, সুন্দর হয়েছে।কবিতা সম্পর্কে যা কিছু লিখব তাই কম হবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।