Skip to content

এই যে তুমি মস্ত মুমিন মুসলমানের ছেলে – আখতারুজ্জামান আজাদ

এই যে তুমি মস্ত মুমিন, মুসলমানের ছেলে;
বক্ষ ভাসাও, ফিলিস্তিনে খুনের খবর পেলে।
রোহিঙ্গাদের দুঃখে তুমি এমন কাঁদা কাঁদো;
ভাসাও পুরো আকাশ-পাতাল, ভাসাও তুমি চাঁদও!
অশ্রু তোমার তৈরি থাকে— স্বচ্ছ এবং তাজা;
হ্যাশের পরে লিখছ তুমি— বাঁচাও, বাঁচাও গাজা।
কোথায় থাকে অশ্রু তোমার— শুধোই নরম স্বরে,
তোমার-আমার বাংলাদেশে হিন্দু যখন মরে?
মালেক-খালেক মরলে পরে শক্ত তোমার চোয়াল;
যখন মরে নরেশ-পরেশ, শূন্য তোমার ওয়াল!
তখন তোমার ওয়ালজুড়ে পুষ্প এবং পাখি,
কেমন করে পারছ এমন— প্রশ্ন গেলাম রাখি।

তোমরা যারা দত্ত-কুমার, মৎস্য ঢাকো শাকে;
কবির লেখা পক্ষে গেলেই ভজন করো তাকে।
মুসলমানের নিন্দে করে লিখলে কোথাও কিছু;
তালির পরে দিচ্ছ তালি, নিচ্ছ কবির পিছু।
কিন্তু তোমার অশ্রু, আহা, কেবল তখন ঝরে;
বাংলাদেশের কোথাও কেবল হিন্দু যখন মরে!
পুড়লে তোমার মামার বাড়ি, জীবন গেলে কাকুর;
তখন তোমার কান্না শুনি— রক্ষে করো, ঠাকুর!
কালীর ডেরায় লাগলে আগুন তখন কেবল ডাকো,
রহিম-করিম মরলে তখন কোথায় তুমি থাকো?
বাংলাদেশে সুশীল তুমি, ভারতজুড়ে যম;
মুসলমানের মূল্য তখন গরুর চেয়ে কম!

বাংলাদেশের কস্তা-গোমেজ— যিশুর দলের লোক;
বোমায় ওড়ে গির্জা যখন, তখন কেবল শোক।
বস্তাভরা শোকের রঙে কস্তা তখন রাঙে,
যিশুর নামে মারলে মানুষ নিদ্রা কি আর ভাঙে!
মরণ হলে মুসলমানের, হয় না কাঁদার ইশু;
গভীর ঘুমে থাকেন তখন বাংলাদেশের যিশু!
খেলার ওপর চলছে খেলা— টমের সাথে জেরি;
বঙ্গদেশের সন্তানেরা এমন কেন, মেরি?
তোমরা যারা কস্তা-গোমেজ কিংবা রোজারিও;
মুখের ওপর মুখোশ খুলে জবাব এবার দিয়ো।

রোহিঙ্গাদের রক্তে যখন বার্মা মরণ-কূপ;
বাংলাদেশের বৌদ্ধ যারা, মড়ার মতোন চুপ!
ভিক্ষু যখন বলছে হেঁকে— রোহিঙ্গাদের কাটো;
তখন কেন, হে বড়ুয়া, ওষ্ঠে কুলুপ আঁটো?
এমন করেই মরছে মানুষ ধর্ম নামের ছলে;
বাংলাদেশের বৌদ্ধ কাঁদে, বুদ্ধ যখন জ্বলে।
যখন জ্বলে বৌদ্ধবিহার, যখন রামুর পাহাড়;
সব বড়ুয়ার জবানজুড়ে শান্তিবাণীর বাহার!
শান্তিবাণীর এমন বাহার তখন কোথায় থাকে,
রোহিঙ্গারা যখন মরে নাফের জলের বাঁকে?

পাগড়ি দেখি, পৈতা দেখি, আকাশজুড়ে ফানুশ;
চতুর্দিকে চতুষ্পদী, হচ্ছি কজন মানুষ!
জগৎজুড়ে সৈয়দ কত, কত্ত গোমেজ-বসু;
খতম কজন করতে পারি মনের মাঝের পশু!
মরণখেলায় হারছে কে বা, জিতছে আবার কে রে;
মরছে মানুষ, দিনের শেষে যাচ্ছে মানুষ হেরে।
হারার-জেতার কষতে হিশেব মগজ খানিক লাগে,
একটুখানি মানুষ হোয়ো কফিন হওয়ার আগে।
রক্তখেলা অনেক হলো, সময় এবার থামার;
বিভেদ ভুলে বলুক সবে— সকল মানুষ আমার।

বন্ধ ঘরের দরজা ভাঙো, অন্ধ দু-চোখ খোলো;
মরছে কেন আমার মানুষ— আওয়াজ এবার তোলো।

[A]

8 thoughts on “এই যে তুমি মস্ত মুমিন মুসলমানের ছেলে – আখতারুজ্জামান আজাদ”

  1. আপনার কবিতা ভীষণ ভালো লাগলোl অত্যন্ত বলিষ্ঠ কিন্তু সাবলীল কবিতা lএরকম কবিতা লেখার সাহস সব কবিদের হয়নাl খুব ভালো লাগলো আপনার এ প্রচেষ্টা যেন থেমে না থাকে l আমি ব্যক্তিগতভাবে বাংলাদেশের কবিদের কবিতা অত্যন্ত ভালবাসি lসব সময় নতুন কবিতার সন্ধান চালিয়ে যায়l ভবিষ্যতে আপনার কাছ থেকে এরকম নিয়ম ভাঙ্গা কবিতা আরো পেতে চাইl আমার ইমেইল আইডি দিলাম যোগাযোগ করলে খুশি হব ভালো থাকবেন

  2. দেবাশীষ সেনগুপ্ত

    সোনার লেখনী ।
    কিন্তু বড়ো আঁধার চারদিকে। আঁধারে আলোর এই রেখা তমিস্রাকে চিরে আমাদের পথ দেখাক এই শুধু প্রার্থনা।

  3. চোরায় না শোনে ধর্মের কাহিনী।

    দূর্ণীতিবাজ ও সাম্প্রদায়িকেরা যেহেতু চোর সম্প্রদায় সেহেতু তারা শুনবে না।

  4. শক্তিশালী কবিতা। নজরুল আর সুনীলের কবিতা পড়েছিলাম, একই থিমে। তাদের কথা মনে করিয়ে দিলো এই কবিতা। অনেক অনেক শুভকামনা প্রিয় আজাদ।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।