Skip to content

৪৩- চড়াই-উৎরাই : সুপ্রিয় ঘোষ

আজও সেই দেরি! এখন প্রায় রাত এগারোটা। সারা ঘরে পায়চারি করে চলছে বাপন। সম্ভ্রান্ত ব্রাহ্মণ পরিবারের ছেলে, যে পরিবারে রক্ষণশীলতা একমাত্র চারিত্রিক কাঠামো। তবে এ ধুয়ে জল খেয়ে আর লাভ নেই এখন।
এই আর্থসামাজিক যুগ সে কথা মানেনা। অস্তিত্ব লড়াইয়ের যুদ্ধে সকলেই সৈনিক। ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র সব মিলেমিশে একাকার। এখন যাপনের একটাই সংজ্ঞা, জীবন সৈনিক। সে যুদ্ধে যে যত পারদর্শী সে ততটাই এগিয়ে। অর্থ,যশ, প্রতিপত্তি, ক্ষমতা- তার কাছে পদানত দাস। যাবতীয় ইচ্ছাশক্তির মালিক, কিম্বা মালকিন।
আর এখানেই যত সমস্যা। অন্ততঃ বাপনের কাছে তো বটেই। ওর আর বর্ণালীর বিয়ের বয়স মাত্র পাঁচ বছর পেরিয়েছে। এর মধ্যেই মাঝের সেতুটা নড়বড়ে হয়ে উঠেছে। কারণ ? সেই উচ্চাভিলাষী যুদ্ধ !
অথচ বাপনই চেয়েছিল, বর্ণালী এগিয়ে চলুক তার লক্ষ্যে। আজ ফ্যাসান ডিজাইনিং জগতে বর্ণালী রায়কে চেনেনা এমন লোক খুব কমই আছে। ওর যশ, প্রতিপত্তি, সম্মান, কদর এখন বাপন, মানে যশস্বী চাটার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট, শ্রীযুক্ত কৃষ্ণকান্ত রায়-এর থেকে অনেক ওপরে, তাই ব্যস্ততা তো থাকবেই।
প্রথম প্রথম বেশ ভালো লাগত। কিন্তু বাপনের একান্ত প্রয়োজনে যখন বর্ণালী অনুপস্থিত, তখনই ওর অভাবটা তীব্র যন্ত্রণা দিত। এভাবেই যন্ত্রণার কম্পনে সেতুটার বাঁধন আলগা হতে শুরু করে।
সেই মনভাঙা, অতৃপ্তির অনুশীলন ও উপলব্ধির বৈরিতায় একেবারেই ভেঙে যায় সেতুটা একদিন, ভেঙে পড়ে সমূহ আদান-প্রদানের কথকতা । কারণ বিশ্লেষণের অবকাশ তখন ওদের কারো কাছেই ছিলনা তখন। একজন সোপানের নেশাতে ব্যস্ত, আর একজন সান্নিধ্যের অতৃপ্ত আত্মা নিয়ে খুঁজে চলেছে তার সঙ্গীনীর সঙ্গ।
বাসনার বঞ্চনায় সমান্তরালে চলা পথ, দু’দিকে দু’ভাগ হয়ে গেল এভাবেই।
কিন্তু সময় তো কেবল তারই কথা বলে, দর্শন বলে জীবনের কথা। ছুটতে ছুটতে শরীরের মতো মনও একটু বিশ্রাম চাইবেই। আর তখনই চোখ পড়ে যায় – আশেপাশে, পিছনের দিকে।
ঘরে ঢুকেই বর্ণালীর চোখে পড়ে সেই হলুদ পাঞ্জাবিটা অবহেলায় ঝুলছে। ঘরের চারিদিকে শুধু তার স্মৃতি, মানুষটা নেই। ঘরের ধুলো আর মনের ধুলোতে একাকার, অবিন্যস্ত সেই ছোট্ট পৃথিবীটা। আজ অন্তর ও বহিরঙ্গে কেবলই ধূসরিত শূন্যতা।
বর্ণালীর মন বলে ওঠে, তোর আর কি চাই ? অর্থ, যশ, প্রতিপত্তি – সবই তো করায়ত্ত, আর কাকে চাই ?
সেই ফাঁকা ঘরে দাঁড়িয়ে বর্ণালী চিৎকার করে ওঠে, আমি আর কিছুই চাইনা, শুধু ওকে চাই। বাপন, তুমি কোথায়, ফিরে এস বাপন, ফিরে এস।
পাগলের মত কাঁদতে থাকে বর্ণালী।
এ ভালবাসা সত্যিই যদি নদীর জলের মত হ’ত, তাহলে হয়তো- ‘জলের থেকেও ছিঁড়ে গিয়েও জল’ জোড়া লেগে যেত কোন এক নিবিড়তায়, জলে মিশে। হয়নি, দেয়নি সময় সে জোড়ার সঙ্গত যোগাতে।
*****************************************
@সু

মন্তব্য করুন