Skip to content

৩২- অস্তিত্বের ঘূর্ণাবর্ত- সুপ্রিয় ঘোষ

সময়ের রূঢ় আঘাতে ভেঙে গেছে সেই মূর্তিটি , আজও চোখ বন্ধ করলে, যার অস্তিত্ব টের পায় অমল। যার সান্নিধ্য অমলের মনে এক বিরল আবেগে খনন শুরু করেছিল একদিন, সেই সব অনুভূতিগুলো যেন কেবলই এক প্রত্নতাত্ত্বিক স্মৃতি হয়ে আছে। গাছের পুরনো বাকলের মত মনের কিছুটা অংশে লেগে আছে আজও। তার রুক্ষ ঘর্ষণে যখন জ্বালা করে, অস্থির হয়ে ওঠে মন।
তাইতো, এই বিশেষ দিনটিতে এই নদীপাড়ই তার ঠিকানা হয়ে দাঁড়ায়। ঐ মাতলার নাব্যতার চেয়ে, উদ্দামতাই তার কাছে যে বেশি আকর্ষণীয়।
সেও তো এই নৈসর্গের পান্থরূপিনী স্নাত, সিক্ত, ভুবনমোহনী ছিল। ঋতু, কবে যে একাত্ম হয়ে গেল অমলের জীবনে, বুঝতে পারেনি কেউই।
আর্ট কলেজ থেকে পরিচয়। দুজনেই ফাইন আর্টসের। সেকেণ্ড ইয়ার থেকেই ঘনিষ্ঠতা। সেইদিন যেন সোনার মতো জ্বলজ্বল করে আজও, যেদিন থেকে দুজনের অজান্তেই রচিত হয়ে গিয়েছিল, একসাথে চলার অধ্যায়টি।
আউটডোর প্রজেক্ট। প্রাকৃতিক দৃশ্যের উপর বিষয় সমৃদ্ধ সৃষ্টির নির্দেশ ছিল। শীতের সময়। ওরা সিদ্ধান্ত নিল, দক্ষিনবঙ্গের উপকূলবর্তী কোন এলাকা। ছুঁয়ে ফেলল, মাতলার পাড়। দুরের তন্বী – তমাল, তাল, সুন্দরী, গড়ানের বন – জড়িয়ে ধরল ওদের আশ্চর্য মননকে।
আর, প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় ওরা জড়িয়ে ধরল দু’জনা দু’জনকে, অনভিজ্ঞতার কারণে, অপর্যাপ্ত শীত বস্ত্র না-থাকায়। সে রাত্রি, উন্মোচন করে দিল অনুভূতির প্রতিটি পর্যায়কে, পরতে পরতে। শারীরিক অগ্নি সংযোগে, প্রচণ্ড উত্তাপে, গলতে থাকলো মোহময় মোমের অলংকার।
প্রচণ্ড সাইক্লোনে ভেঙে গেল সব আগল। তারপর, অশান্ত ঝড়ের প্রভাব শান্ত হলে, কখন যে ঘুম তার কোলে টেনে নিয়েছিল, ওরা কেউ জানেনা।
ভোরের পাখিরা ডাক দিয়ে পরিচয় সেরে নিল সেই আদম আর ইভের। আর ওরাও শপথের বাণীর পৃষ্ঠাটায় অলখের স্বাক্ষর সেরে নিল, সানন্দে। কারণ, ওরা দুজনেই তো মনের খোঁজের সাথে বয়সকেও পেয়ে গেছে হাতের মুঠোয়। ঐ একটা রাত, ওদের বাৎসায়নের পাঠ দিতে পেরেছে সফলভাবে।
তারপর, তাদের সেখানে যাওয়ার উদ্দিষ্ট বিষয় বদলে গেল। শিল্পকৃতির বিবর্তনরেখায় তখন আর ছিলনা প্রকৃতির নৈসর্গিক প্রাসঙ্গিকতা, ছিল বিক্ষিপ্ত ফেনিল উদ্দামতার রসায়ন। নর ও নারীর আবহমান অপরাজেয় সঙ্গতের ইঙ্গিত।
ভেসে গেল সময়, ভেসে চলল জীবন। একসময়, জীবনই সময়ের হাত ধরে বুঝাতে লাগল – ক্ষণস্থায়ী আবেগের বন্দনা, কী যন্ত্রণার দাবানল সৃষ্টি করতে পারে ! সে দাবানলের দহনশক্তির প্রাবল্য কতোটা।
বাঁচেনি ওরা কেউই। বয়স ওদের চরম দণ্ডে দণ্ডিত করতে পারেনি ঠিকই, কিন্তু সেই নীল পতাকাটাকে লুণ্ঠিত করে, পরিবারের অভিব্যক্তি সেই সেতুটাকে দুমড়ে মুচড়ে ফেলে দিয়েছিল, মাতলার জলেই।
ঋতু, পরিবর্তিত হ’ল অন্য ঘরানায়। আর অমলের ঘরানায় সেই বিষাদের আলাপিত একই সুর, বেজেই চলেছে। মাতলার মাতাল করা সৌন্দর্যের সুরাপান অমল এখন একরৈখিক মাত্রায়, একলাই করে চলে।
বিশেষ করে, মিলন ও বিচ্ছেদের দিনটিতে।
卐卐卐卐卐卐卐卐卐卐卐卐卐卐卐卐卐卐卐卐

@সু

মন্তব্য করুন