Skip to content

২ রা মার্চ ১৯৭১ স্মরণে // তাপস ঠাকুর

হাজার বছরের রক্তক্ষয়ী ইতিহাসের পর-
একটি স্বাধীন জাতি রাষ্ট্র গঠন হবে।
একটি মানচিত্র খন্ডিত পতাকা উত্তেলিত হবে।
বঙ্গোপসাগরে তখন উত্তাল ঢেউ,
পদ্মা মেঘনা যমুনার তীরে রচিত হবে ভবিষ্যৎ।
২রা মার্চ ১৯৭১,
ঢাকা শহরে কারফিউ,
চারিদিকে থমথমে পরিবেশ,
রাস্তার মোড়ে মোড়ে ট্যাংক,
হেলিকপ্টারে মহড়া।
তবু খসরু মন্টুদের সাথে একদল যুবক,
নীল ক্ষেত পাড় হয়ে কলা ভবনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে,
সেখানে আরো অসংখ্য যুবক,
কারফিউ ভেঙে ওরা জোড়ো হয়েছে,
কলাভবনের সামনে।
কারো মাথায় লাল কাপড় বাধা,
কারো হাতে প্লে কার্ড,
কেউবা উদৃপ্ত বুকে,
কারফিউ ভেঙে ওরা জোড়ো হয়েছে-
একটি স্বাধীন জাতি রাষ্ট্র গঠন হবে বলে।
মানচিত্র খন্ডিত একটি পতাকা,
উত্তেলিত হবে বলে।
লাইব্রেরিতে বই ছেড়ে যে ত্বরুন-
কখনো আড্ডায় যায়নি কোনদিন,
সেও এসেছে আজ,
কারফিউ ভেঙে,
কেননা, আজ ২ রা মার্চ।
প্রেয়সীর হাত ছেড়ে যে ত্বরুন-
কখনো সিগারেট স্পর্শ করেনি,
সেও হাতে নিয়েছে আজ প্লে কার্ড।
যে নারী পুরুষতান্ত্রিক সমাজে,
পুতুল হয়ে ঘরে বন্দী থেকেছে যুগের পর যুগ।
সেও এসেছে আজ কারফিউ ভেঙে,
কলা ভবনের সামনে।
মাখন, শাজাহান এগিয়ে এলো ছাত্রজনতার মঞ্চে,
শোষণের পতাকা পুড়িয়ে ফেলা হলো,
আকাশে হেলিকপ্টার,
নিচে সাজোয়া ট্যাংক, রাইফেল,
তবুও হাজার হাজার ত্বরুন,
কারফিউ ভেঙে জড়ো হয়েছে এই কলাভবনে।
হঠাৎ ডাকসুর ভিপি রব,
তার লাঠির মাথায় বাধা এক খন্ড কাপড়,
কালচে সবুজ গায়ে তাজা খুনের মত লাল বৃত্ত,
লিপিস্টিকের লাল রঙ নয়, খুনী লাল বৃত্ত।
তার মাঝে সোনালী রঙের একটি মানচিত্র।
বঙ্গোপসাগরে তখন উত্তাল ঢেউ,
পদ্মা মেঘনা যমুনার তীরে নতুন ভবিষ্যৎ।
একটি স্বাধীন জাতি রাষ্ট্র গঠন হলো।
একটি মানচিত্র খন্ডিত পতাকা উত্তেলিত হলো।
তারপর ৫০ বছর যারা ক্ষমতায় থাকলো,
সবাই যার যার মত ইতিহাস লিখে চললো,
ইতিহাস কে পালটে দেবার চেষ্টা করা হলো।
২রা মার্চ, ৩ রা মার্চের ইশতেহারে ধুলো জমে গেলো।
জনতার হাত কে রাষ্টযন্ত্রের বুটের লাথিতে,
থেতলে ফেলা হলো।
যে হাত হাজার বছর ধরে,
এই জমিনে ফসল ফলিয়েছে,
যে হাত কারখানায় শ্রম দিয়েছে,
যে ছুইয়েছে তার কোমল শিশু-
প্রেয়সীর চিবুক,
সে হাত উপনৈবেশিক ধাচের বুটের লাথিতে,
থেতলে ফেলা হলো।
রাষ্ট্র যন্ত্র,
আমলাতন্ত্র দলীয় দাস,
ভুলে যেও না ইতিহাস।
বঙ্গোপসাগরের গর্জনে আর
পদ্মা মেঘনার যমুনার স্রোতে আছে,
আন্দোলনের নির্দেশ।

তাপস ঠাকুর।

মন্তব্য করুন