Skip to content

২৫- অনুপম – সুপ্রিয় ঘোষ

দুপুরের পর থেকেই আকাশে কালো মেঘের ঘনঘটা। পঞ্চায়েত অফিসে তখনো রোগীর ভীঁড়। আজ যেন কিছুটা উপচেই পড়ছে। ডাক্তার অক্লান্ত পরিশ্রম করে তাঁদেরকে চেক আপ করছেন।
ডাঃ সান্যাল। সুদর্শন, সৌম্য, নমনীয় আচরণ যা সবাইকে স্বস্তি যোগায়, যেন মানুষের আস্থা-ভরসার প্রতিরূপ। প্রতিটি পার্থিব বস্তু এবং প্রাণীর স্বরূপের একটি বিশেষ গুরুত্ব থাকে। সেই গুরুত্বের ভিত্তিই তার গ্রহণযোগ্যতার মাপকাঠি হয়।সান্যাল ডাক্তার ভবানিপুরের একটি অভিজাত সম্ভ্রান্ত পরিবারের সদস্য। অবিবাহিত।
ডাক্তার হওয়ার পর, অ্যাসইনমেন্টে গ্রামকেই স্বেচ্ছায় বেছে নিয়েছিল। থাকেন বনগাঁর বেনেপোলের কাছে একটি সুন্দর গোছানো একতলা বাড়িতে, একাই। বাড়িটি দাদুভাইয়ের। একটি বয়স্ক বিধবা তার সব বাড়ীর কাজের কর্ত্রী। অভিভাবিকাও বটে।
অঝোর ধারায় বৃষ্টি শুরু হল। দেখতে দেখতে সন্ধ্যাও হয়ে গেল। এখন কোনো রোগীই নেই। হঠাৎই মনে পড়ে গেল মালতীর কথা।
সেদিনও ছিল এমন বৃষ্টিমুখর দিন। তার ওপর ঘন ঘন বজ্রপাত। তখন এই গাড়ীটাও ছিল না। সাইকেলে যাতায়াত করতো।
অভিজাত পরিবার তাকে শিখিয়েছিল মানুষের গুরুত্ব। সেই শিক্ষাতে মায়ের মতোই গুরুত্ব দিত মাসীকে। সে চিন্তা করবে ভেবে ঐ অবস্থাতেই একহাতে ছাতা আর একহাতে সাইকেল নিয়ে বেড়িয়ে পড়ল।
খুবই কষ্ট হচ্ছিল সাইকেলে যেতে। চারিদিক সুনসান। হঠাৎই প্রচন্ড ভাবে বিদ্যুতের ঝলকানি ও তারপর বজ্রপাতে সাইকেল থেকে প্রায় পড়েই গিয়েছিল। খুব কাছাকাছি কোথাও হয়তো বাজটা পড়েছিল। এই দুর্যোগের জন্য বিদ্যুৎও বন্দ্ধ রাখা হয়েছিল। চারিদিক ঘুটঘুটে অন্ধকার।
একটুখানি এগোতেই চোখে পড়ল একটা শরীর উপুড় হয়ে পড়ে আছে। কাছে গিয়ে পালসটা পরীক্ষা করল ডাক্তার সান্যাল । প্রাণের সারা আছে।
শরীরটা সোজা করতেই বুঝতে পারল নারী শরীর। একটুখানি থমকে গিয়েছিলো অপূর্ব সান্যাল।
মন তাকে যেন চিৎকার করে বলল, ‘ডাক্তার, তোমার কর্তব্যের কথা ভুলে যেওনা।’
অবলীলায় শিব যেন পার্বতীকে কাঁধে তুলে নিল। নারী শরীরের স্পর্শে আলোড়িত হয়ে উঠল পুরুষত্ব । রামকৃষ্ণ বিদ্যাপীঠ শিখিয়েছিল, কখন-কীভাবে সংযমী হতে হয়। তখন সে শুধুমাত্র একটি অসহায় মানুষ।
অসহায়তার কোনো লিঙ্গ বিচার হয়না। থাকে না কোনো যৌন উন্মাদনার মাদকতার বাতাবরণ।
খুব কষ্টই হয়েছিলে ঘরে আনতে। মাসী ঘুমিয়ে পড়েছিল ভেবে আর ডাকেনি। ডুপ্লিকেট চাবি খুলে ঢুকে নিজের খাটে সন্তর্পণে শুইয়ে দিল।
একজন সুন্দরী বলতে যা বোঝায় মালতী ছিল তাইই। অচেতন অবস্থায় মহিলার সারা শরীর ভিজে গেছে। সংযত মন আর কোনো দ্বিধা করেনি। পরতে পরতে শরীর থেকে সব কাপড় মাতৃসুলভ আচরণে সরিয়ে নিজের পাঞ্জাবি ও পায়জামা পরিয়ে নিল। তারপর, নিজের চাদরটা ভালোভাবে চাপা দিয়ে শুশ্রুষা করল।
যখন তার মনে হল বিপদ কেটে গেছে, নিজের শরীরও ক্লান্ত, বাইরের বারান্দায় কাঠের আরামকেদারায় গা এলিয়ে দিল।
পরদিন ভোরে মাসীকে সব কথা বলতে, মাসী বলল, ‘আমি সব জানিরে। সবই দেখেছি। দেখেছি একটা জ্যান্ত শিবকে। তুই তো সত্যিই অপূর্ব রে। তুই এখন বাজার থেকে কিছু জামা কাপড় কিনে আন দেখি। বাকিটা আমি দেখছি।’
হঠাৎ বাজ পড়ার আওয়াজে সম্বিত ফিরল অপূর্বর। এখন ঘরে ফেরার সময় হয়েগেছে।
@সু

মন্তব্য করুন