Skip to content

হাসির ফেরিওয়ালা – প্রসূন গোস্বামী

শহরের বুকে, অন্ধকারের আঁধারে,
বাতাসে লেগে আছে হতাশার গন্ধ।
ঝলমলে অট্টালিকা, দামি গাড়ি,
সবকিছু নিঃশব্দ, যেন শোকাহত।

মানুষের মুখে হাসি নেই, চোখে
জ্বলজ্বলে স্বপ্নগুলো মলিন।
আমি হাঁকি, “হাসি নেবেন?
আমি আপনাদের শহরের হাসির ফেরিওয়ালা।”

কিন্তু কেউ সাড়া দেয় না। যেন আমার
কথাগুলো হারিয়ে যায় ধোঁয়ায়, ধুলায়,
শহরের বিষণ্ণতায়।

এই শহর কি হাসি ভুলে গেছে?
না কি হাসি আর কেউ কিনতে চায় না?

আমার ঝুলি ভর্তি হরেক রঙের হাসি।
লাল হাসি, সবুজ হাসি, নীল হাসি,
হলুদ হাসি।

প্রতিটি হাসি আলাদা, প্রতিটি হাসি
গল্প বলে। সুখের গল্প, দুঃখের গল্প,
ভালোবাসার গল্প, হারিয়ে যাওয়ার গল্প।

আমি হাঁকি, “এই নিন, হাসি নিন।
আপনার মনের রঙের হাসি।”

কিন্তু কেউ এগিয়ে আসে না। হয়তো
তারা ভাবে হাসি কেনা যায় না,
হাসি তো মনের ভেতর থেকে আসে।

কিন্তু আমি জানি, হাসি হারিয়ে যায়,
চুরি হয়ে যায়, মরে যায়।
ঠিক যেমন এই শহরের হাসি।

আমি হাঁকি, “আপনাদের হাসি ফিরিয়ে দিন।
আমার ঝুলিতে নতুন হাসি নিন।”

কিন্তু কেউ ফিরে তাকায় না। যেন
আমি অদৃশ্য, আমার হাসিগুলো অশ্রাব্য।

এই শহর কি নিজের হাসি খুঁজে পাবে না?
না কি হাসি আর ফিরে আসবে না?

আমি হাঁকি, “হাসি নেবেন?
আমি আপনাদের শেষ হাসির ফেরিওয়ালা।”

কিন্তু শুধু বাতাসের শিস, রাস্তার
কুকুরের ডাক, আর নিঃশব্দে চলাচল।

এই শহর কি চিরকাল হাসিহীন থাকবে?
না কি হাসি আবার ফুটে উঠবে কোনো
অলঙ্ঘনীয় সকালে?

আমি চলে যাই, ঝুলি ভর্তি রঙবেরঙের
হাসি নিয়ে। হারিয়ে যাই অন্ধকারের
গলিঘুঁজিতে, শহরের অবসন্নতার ভেতরে।

কিন্তু আমার হাসিগুলো মরে যায় না।
তারা অপেক্ষা করে, হয়তো কোনো একদিন
কেউ তাদের কিনে নেবে, কেউ তাদের ফিরিয়ে
দেবে এই শহরকে।

আমি হাসির ফেরিওয়ালা, শেষ হাসির
ফেরিওয়ালা। হাসিহীন শহরে, হাসির
স্বপ্ন নিয়ে।

মন্তব্য করুন