আমাদের স্কুলে 5 সেপ্টেম্বরে অন্য বছরের মতো এবারও বেশ ঘটা করে
শিক্ষক দিবস পালন করা হবে। আমাদের স্কুলের নাম বালতি উচ্চতর মাধ্যমিক
বিদ্যালয়। আমি দ্বীপ রায়, ক্লাস টুয়েলভে পড়ি । সোমবার , মানে 4ঠা সেপ্টেম্বর সকালে টিউশনি পড়ে যখন বাড়ি ফিরছি তখন হঠাৎ শুভম এর সাথে দেখা। ও বাজারে এসেছিল কোনো এক দরকারে, তারপর দুজনের কিছু কথা বার্তা বললাম , তখন আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম কাল স্কুলের অনুষ্ঠান কেমন হবে বলে তুই আশা করছিস ? ও উওরে বললো আর অনুষ্ঠান ! আমি আবার বললাম কেন তুই এমন বলছিস ? দ্বীপ তুই একটা বিষয় বুঝতে পারছিস না। কোন বিষয় টা ? তবে বলি শোন…
তুই তো ভালো করেই জানিস যে আমাদের স্কুলের একটা রীতি আছে, যে শিক্ষক দিবসের দিন এলেভেন ও টুয়েলভ এর ছাত্রছাত্রীরা
দুটো বা তিনটে করে ক্লাস নেয় । হ্যা তা তো জানি, আর তারপর আমাদের সোনাই মুক্ত মঞ্চে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শিকক্ষ দিবস পালন করা হয় ডা সর্বপল্লি রাধাকৃষ্ণন এর জন্মদিন উপলক্ষে। নদীর জল যেমন স্রোতের মাধ্যমে তীরে এসে আছরে পড়ে ঠিক তেমন
ওর কপালে কয়েকটি ভাঁজের মাধ্যমে অব্যক্ত কিছু কথা ওর মুখ থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে। আমি বললাম শুভম তুই আর কিছু বলবি? আমি ফেলফেলিয় তাকিয়ে রইলাম হঠাৎ ওযেন এক দীর্ঘশ্বাস ফেললো দ্বীপ, সত্যিই এখনো সমাজের সংস্কার প্রয়োজন ।
তা কি রকম সংস্কার?
এই ধর আমাদের স্কুলে কাল শিক্ষক দিবস পালন করা হবে । সমস্ত শিক্ষক শিক্ষিকাদের,
শিক্ষানুরাগী ও শিক্ষাকর্মীদের মঞ্চে সম্মান শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। আমি বললাম শুভম তা ঠিকই বলেছিস, তখন ও আবার একই ভাবে দীর্ঘশ্বাস ফেললো। ও বললো তবে এটাই কি যথার্ত ?
ও আবার বলতে শুরু করল বছরের ৩৬৫ দিনের মধ্যে এক দিন সম্মান শ্রদ্ধা সরূপ গোলাপ,কলম, মিষ্টি কিংবা ফেসবুক ,হটাস অ্যাপে পোস্ট বা দিয়ে প্রনাম নিবেদন করলেই কি তাদের সঠিক শ্রদ্ধা প্রদান করা হয়? আমি বললাম তবে কি করা উচিত বলে তুই মনে করিস? শুধু আমাদের বালতি উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নয় দেশের সমস্ত শিক্ষক শিক্ষিকাদের প্রতিদিন প্রতিক্ষনে
শ্রদ্ধা সম্মান করা উচিত কারন তারা তাদের
শিক্ষার আলোয় জ্বালিয়েছেন ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যতের পথে।
আমরা আজ যেটুকু শিখেছি, এটা তো তাদের অনস্বীকার্য অবদান।
সত্যিই দ্বীপ আমি অনেক ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হয়েছি যেমন ধর কোনো শিক্ষকে
নাম ধরে ডাকা তারপর কোনো কোনো শিক্ষিকার শারীরিক গঠন নিয়ে বাজে ভাষায় মন্তব্য করা, কোনো শিক্ষকের গায়ে থুথু ফেলা, হুমকি, ক্লাস না করা তো আছেই এরকম বহু অমানবিক ছাত্রছাত্রীরা তাদের নিন্মরুচির কাজকর্মে লিপ্ত। আবার এই সমস্ত ছাত্রছাত্রীরা যখন মঞ্চে শিক্ষক শিক্ষিকাদের সম্মান নিবেদন করবে তখন সেই সম্মানের কোন মূল্য থাকে না বলে আমি মনে করি।
আমি বললাম শুভম তোর সাথে আমি সহমত ,যে দিন এই সমস্ত ছাত্রছাত্রীরা তাদের অমানবিক কাজকর্ম বন্ধ করবে সে দিন গুরূ শিষ্যের মধুর সম্পর্ক আবার সঠিক ভাবে গড়ে উঠবে। তারপর থেকেই সমস্ত স্কুলে শিক্ষক দিবস পালন করা সার্থক হবে। আমি দেখলাম শুভম এর চোখ জলে ভরে গেছে আমি বললাম তোর এই কথাবার্তা যদি বাস্তবায়িত হয় তবে শিক্ষক শিক্ষিকাদের সাথে সাথে ছাত্রছাত্রীরা সত্যিই নিজেদের গর্বিত বলে মনে করবে। তুই কি বলিস দ্বীপ? হ্যা নিশ্চই ।
চল এবার বাড়ির দিকে যাওয়া যাক। এরপর দুজন যে যার বাড়ির দিকে রওনা দিলাম ।