Skip to content

স্বাধীনতা দিবসের স্বপ্ন – প্রসূন গোস্বামী

কে বলেছে নক্ষত্রের আলো পুরোনো হয়?
এই রাত্রে ঢাকার আকাশে তারাগুলো কাঁদে,
মাঝে মাঝে উল্কা ঝাপটা দেয়,
যেন জাতির হৃদয়ের দগ্ধ জ্বালা উঠে আসে।
কী জানি, এত বছর পরেও কেন?
স্বাধীনতার সোনালি সূর্য এলিয়েছিল বলে কি,
আমাদের সংগ্রামের শেষ হয়েছে?
এখনও কি শান্তি নেই নদীর স্রোতে?
এখনও কি দেশের মাটি কাঁপে না শিশুর কান্নায়?
কী জানি, হয়তো স্বাধীনতা একটা স্বপ্ন,
যা বুকের মধ্যে জ্বলে, চোখে ঝিলিকিয়ে থাকে,
কিন্তু কখনো হাতের মুঠোয় আসে না।
আমরা কি স্বাধীন হয়েছি, না কি স্বাধীনতার ছায়ায় আশ্রয় নিয়েছি?

সেই স্বাধীনতা কোথায়, যেখানে মানুষের মনটা স্বাধীন?
যেখানে শিক্ষা আর জ্ঞানের আলোয় সবার গলি আলোকিত,
যেখানে দারিদ্র্যের কালো ছায়া বিলীন হয়ে যায়?
সেখানে কি আছে শুধু নির্বাচনের উৎসব আর বক্তৃতার ঝড়?
স্বাধীনতার মন্ত্র জপতে জপতে কি আমরা ভুলে গেছি,
কেন আমরা রক্ত দিয়ে এই স্বাধীনতা কিনেছিলাম?
এই মাটি, এই মানুষ, এই ভাষা –
এদের মুক্তি ছিল না কি স্বপ্নের সীমানা?
আজও কি সেই স্বপ্ন অধরা, অসমাপ্ত?

তবে থেমে যাবো না, হার মানবো না।
এই স্বাধীনতা, এখনো অপূর্ণ,
একে নিয়েই চলতে হবে, একেই পূর্ণতা দিতে হবে।
শহীদদের রক্তের ঋণ শোধ করতে হবে,
মায়ের মুখের হাসি ফিরিয়ে আনতে হবে।
কীভাবে? জানি না, কিন্তু চেষ্টা করতে হবে।
একতা আর সহিষ্ণুতা নিয়ে,
নতুন করে গড়তে হবে এই সোনার বাংলা।
প্রতিটি মানুষের মধ্যে জাগিয়ে দিতে হবে জাতীয়তার সূর্য।
শিক্ষা আর বিজ্ঞানের আলোয় দূর করতে হবে অজ্ঞতার অন্ধকার।
শোষণ আর বৈষম্যের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে।
এইবারের স্বাধীনতা দিনের স্বপ্ন নতুন,
এইবারের লড়াই নিজের সাথে, নিজের ভেতরের অন্ধকারের সাথে।
এই স্বাধীনতা সংগ্রামের শেষ নেই,
প্রতিটি প্রজন্মের জন্যে, প্রতিটি সকালের সূর্যোদয়ের সাথে।

…কিন্তু আশা আছে,
নিরাশার অন্ধকারেও এক টুকরো আলোর মতো।
দেখো –
সেই শিশু, যে আঙুল দিয়ে আকাশের তারা গোনে,
সে স্বপ্ন দেখে নতুন বাংলার,
যেখানে নদী, মাঠ, আর গ্রামগুলো হবে অকলঙ্ক,
যেখানে মানুষ মানুষের জন্য হবে মানুষ।
সে স্বপ্নের হাত ধরেই, এগিয়ে যেতে হবে আমাদের।
এই স্বাধীনতা দিবসের শপথ –
নিজেদের মুক্তি, আর নতুন বাংলা গড়ার অবিরাম চেষ্টা।

এমনি চলতে থাকবে এই স্বাধীনতার জিজ্ঞাসা,
প্রতি জন্মে, প্রতি প্রজন্মে।
কখনো থামবে না প্রশ্নের ঝড়,
কেন আমরা স্বাধীন? কীভাবে স্বাধীনতা রক্ষা করব?
এই প্রশ্নগুলোই জাগিয়ে রাখবে আমাদের মনের জ্যোতি।
স্বাধীনতা কোনো গন্তব্য নয়, এটা একটা সফর।
এই সফরে থাকবে বাঁক, থাকবে খাঁড়ি, থাকবে ঝড়ঝঞ্ঝা।
কিন্তু পথ চলতে হবে, এগিয়ে যেতে হবে।
নিজের মধ্যে, দেশের মাঝে, মানুষের মধ্যে।
এই স্বাধীনতা দিবসের স্বপ্ন –
শুধু নিজের মুক্তি নয়,
সারা বিশ্বের মুক্তির সঙ্গী হওয়া।

…কিন্তু এই স্বপ্নের পথে সাবধান থাকতে হবে সবসময়।
বিশ্বের ইতিহাস সাক্ষী,
কিভাবে স্বাধীনতার নামে দেশ ভাগ হয়েছে,
কিভাবে অবিচারের নতুন রূপ এসেছে।
আমাদের স্বাধীনতা হতে হবে সবার জন্য,
ধর্ম, জাতি, বর্ণের বেড়াজাল ছাড়িয়ে।
এই দেশের মাটিতে যারা বাস করে,
তারাই হবে এই স্বাধীনতার অংশীদার।
এই স্বাধীনতা দিনের স্বপ্ন অন্তহীন,
এই লড়াই চলবে চলবে, প্রজন্মের পর প্রজন্ম।
কিন্তু আশা আছে, এই স্বপ্নের আকাশে একদিন
সূর্য উঠবে উজ্জ্বল,
আমাদের স্বাধীনতা হবে সত্যিকারের স্বাধীনতা।

এমনি করেই, ঢাকার আকাশে তারারা আর কাঁদে না,
বরং গর্ব করে জ্বলে উঠবে।
এই স্বাধীনতা দিবসের শপথ রেখে,
আমরা, এই সোনার বাংলার সন্তানরা,
এগিয়ে যাবো,
নতুন সূর্যের আলোয়,
নতুন স্বপ্নের দিকে।

মন্তব্য করুন