Skip to content

স্বাধীনতার মূল্য – নজরুল ইসলাম খান

স্বাধীনতার মূল্য (ছোট গল্প)
————————————
——নজরুল ইসলাম খান

মেহরিন প্রতিদিনই যত্ন নেয় পাখি দুটোর । প্রতিদিন খাবার দেওয়া, পানি দেওয়া, খাঁচা পরিস্কার করা ইত্যাদি কাজগুলি খুবই আন্তরিকতার সাথেই করে থাকে।
কিন্তু পাখি দুটো মোটেই স্থির নয়। সারাক্ষণ নখ দিয়ে আঁচড়াতে থাকে এবং ঠোঁট দিয়ে ঠোকরাতে থাকে খাঁচার ছিকগুলো। ডানা ঝাপটিয়ে ওড়ার কৌশল রপ্ত করে ।

পাখি দুটো আকৃতিতে বেশ ছোট। খাঁচার ছিক গুলোও তুলনামূলক ফাঁকা। পাখি দুটো হয়ত প্রতিদিনই তাই দুই ছিকের মাঝের ফাঁকের সাথে নিজেদের দেহের মাফ নেয়। যদি বের হওয়া যায় কোনোভাবে ।
কিন্তু, ফাঁক গুলো দেহের তুলনায় একটু ছোট। দেহের আকৃতি যদি সামান্য কমানো যেত তবে নিশ্চয় বের হওয়া যেত।

খাঁচার মধ্যে আর আটকা থাকতে মন চায় না তাদের। খাবার হয়ত ভালোই পাওয়া যায়। কষ্ট করে খাবার খুঁজতে হয় না।
কিন্তু , খাবারই তো সব নয় । স্বাধীনতার একটা বিষয়ও আছে । অন্য পাখিগুলো কী সুন্দর উড়ে বেড়ায় স্বাধীনভাবে , ডালে ডালে নেচে বেড়ায়। যখন খুশি ছুট দেয় এদিক সেদিক ।
ছোট পাখি দুটো খাঁচার মধ্যে বসে এসব দেখে আর মন খারাপ করে। ভাবে তারাও যদি ওভাবে উড়তে পারত, যখন খুশি যেখানে খুশি যেতে পারত, তবে কতই না ভালো হত।
কেন যে এরা পাখিদের খাঁচায় আটকে রাখে?

ইদানিং আরও একটা উৎপাত শুরু হয়েছে। এ বাড়ির পোষা বিড়ালটি আড়ে আড়ে তাকায় তাদের দিকে। বিনা কাজে আশে পাশে ঘুরঘুর করে। কী জানি কখন আবার হানা দেয়।
বলাতো যায় না, জীবনটাও চলে যেতে পারে। তাই আজকাল নিশ্চিন্তে ঘুম হয় না পাখি দুটোর । বুঝার পর থেকেই নিজেদেরকে এই ছোট্ট খাঁচার মধ্যে বন্দী দেখছে। কখন কীভাবে খাঁচার মধ্যে এলো ঠিকমত বলতে পারে না।
তাদের কি মা বাবা আদৌ ছিল কি না, থাকলেও কোথায় আছে বুঝতে পারে না।

তারা চিন্তা করতে থাকল কীভাবে এই খাঁচা থেকে বের হওয়া যায়। খাঁচার ছিক গুলো এতই শক্ত যে তা কাটা বা ভাঙা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়।
হঠাৎ মেয়ে পাখিটার মাথায় একটা বুদ্ধি এলো। সে এমনিতেই পুরুষ পাখিটার তুলনায় একটু ছোট ছিল। দেহটাকে যদি আর একটু ছোট করা যেত, তবে অনায়াসে ছিকের ফাঁক গলে বের হয়ে যেতে পারত।

সে তার সঙ্গীর সাথে বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করে । সঙ্গীরও বিষয়টা মনে ধরল। কিন্তু সমস্যা হলো দেহটাকে ছোট করবে কীভাবে?
ভাবতে ভাবতে মেয়ে পাখিটার মাথায় আবারও একটা বুদ্ধি এলো। সে ভাবলো যদি খাবার না খাওয়া হয় তবে নিশ্চয় দেহ ছোট হবে । তখন অনায়াসে খাঁচার মধ্য থেকে তারা বের হতে পারবে।
যেই ভাবা সেই কাজ। তারা পরের দিন থেকে খাবার খাওয়া বন্ধ করে দিল। প্রথমে খিদের যন্ত্রণা সহ্য করতে পারছিল না। কিন্তু প্রচন্ড ইচ্ছে শক্তি মনে ধারণ করল। যত কষ্টই হোক কিছুতেই খাবার খাওয়া যাবে না। এই বন্দী দশা থেকে মুক্ত হতেই হবে, স্বাধীনতার সাধ পেতে হবে।
কয়েকদিনের মধ্যে পাখি দুটো না খেতে খেতে দুর্বল হয়ে পড়ল। শেষে খাবার ইচ্ছে থাকলে আর উঠে খাবার খাওয়ার শক্তি থাকল না।
পরিশেষে যা হবার তাই হলো। একদিন সকালে দেখা গেল পাখি দুটোর নিথর হাড্ডিসার দেহ খাঁচার মধ্যে পড়ে আছে ।
মেহরিনও মনে খুব দুঃখ পেল। সে বুঝতেই পারল না কী ঘটনা ঘটে গেছে। প্রাণহীন পাখি দুটোকে সে শূন্যে ছুঁড়ে দিল।
অবুঝ পাখি দুটো খাঁচার বন্দী দশা থেকে স্বাধীন হল। কিন্তু, মূল্য হিসেবে দিতে হলো তাদের দুটি নিষ্পাপ জীবনকে ।

০২/০৮/২০২৩
টুটপাড়া, খুলনা

মন্তব্য করুন