Skip to content

সঙ্গতি বিহিন জীবন-রমেন মজুমদার

সঙ্গতি বিহীন জীবন
——–
(ছোটগল্প)
কলমে:- রমেন মজুমদার
তারিখ:- ২৯/০৫/২০২৩
—( বাস্তব জীবনের প্রেক্ষাপটে নির্মিত গল্পে নাম পরিবর্তন করে, কিছু ভাষা মার্জিত রূপান্তর করা হ’ল) ।
——-
ঢ্যবনা বিয়া করছস ক্যান? প্যাডে দুগ্গাভাত দ্যাওনের মুরোদ নাই,রাইত ওইলে হুরহুর কইরা রাঙা পানি গিল্লা হেইয়ার পর মোর ধারে আহস,ঘিনপিত নাই? আইয়া বুহের পিন্ধনের কাপুর খুলস, হেইডাতেও আডু ভাইঙ্গা আহে ক্যান বেইন্যার পুত ??
হেইয়ার পর মোর প্যাড বাইজাইয়া অহন কস প্যাডের পোলা যারজ !!!!
আই কী ইচ্ছা হইরা আইছি তরধারে ? তুই আরে ফুসলাইয়া আনছস,আর কুল খোওয়াইয়া তর কুলে আনছোচ। আইজ পোলাডার বয়স দশ বছর অইল , না দিছোস আরে একখান পিন্ধনের কাপুর,না দিছোস পোলারে কিচু। তর মত সোয়ামী থাহার থিনা না থাহাই ভালা।।
——-
মধুপুর গ্রামের ছোট্ট বালিকা সুহানা প্রতিদিন স্কুলে যায় ভ্যানে,পায়ে হেঁটে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার পথ।
স্কুলটি বাংলাদেশের দক্ষিণ অঞ্চল বরিশাল জেলার শেষপ্রান্তে অবস্থিত মাদারীপুর জেলার অন্তর্গত দক্ষিণে কালকিনি উপজেলার খ্যাতনামা কোন স্কুলে মেয়েটি লেখাপড়া করে।
বালিকা সুহানা জাতিতে ব্রাহ্মণ। বাবার আদরের একমাত্র কন্যাসন্তান সুহানার দেখভাল ও যত্নের কোন ত্রুটি হলে মনেপ্রাণে কষ্ট পেতেন বাবা অমীয় ব্যানার্জি।
একদিন সুহানা যে স্কুল থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে উর্তীন্ন হয়, সেই স্কুলেই সে বছর দ্বিতীয় শ্রেণীতে পাস করে সম গোত্রিয় ব্রজেস কুমার।
তারপর ওরা কালকিনি কলেজে ভর্তি হয় আই.এ শ্রেণীতে। দুজনেই আর্চ গ্রুপের ছাত্র-ছাত্রী। দুজনের মধ্যে অনেক টানাপোড়েনের মধ্যে প্রেম হয়।
সুহানা কুলশ্রেষ্ঠ হলেও ব্রজেসের পিরাপীড়িতে প্রেমের সম্পর্ক তৈরী হলেও বাদসাধে দুই পরিবার।
একই ধর্মের উচ্চবংশের দুই পরিবার হলেও গোত্র আলাদা। আর সে জন্যই এই প্রেমের স্বীকৃতি কোন পরিবার দেয়নি।
( পাঠককুলকে জানিয়ে রাখি,যত গোঁড়ামি এই সনাতনপন্থী হিন্দুদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ) বলেই কোন পরিবার প্রেমকে মেনে নেয়নি।
শেষে ওরা পালিয়ে দুজন বিয়ে করে মন্দির স্বাক্ষী রেখে।
——-
সুহানা -ব্রজেসের ঔরসে ফুটফুটে একটি পুত্রসন্তান জন্মনেয়। তার নাম রাখা হয় সৌভিক।
সৌভিক এখন দশবছরে পা দিয়েছে। ছেলেটি বাবার রূঢ় আচরণে মায়ের অনুগত সর্বদা।
সংসারে এটাই নিয়ম।
সকল সন্তান বাবার চাইতে গর্ভধারিণী মায়েদের অনুগত একটু বেশিই হয়ে থাকে।
পুরুষ শাসিত সমাজে নারীরা শিক্ষিত যতই হোক, তাদেরকে হেয় ভেবে দাবিয়ে রাখার প্রবনতা দেখাযায় অনেক ক্ষেত্রেই।
তেমনি সুহানা যতই পাকপবিত্র থাকার চেষ্টা কারুক,অথর্ব স্বামীদের পাল্লায় পরে
লক্ষ লক্ষ নারীরা স্বামী নামক পুরুষের অত্যাচার নীরবে সহ্যকরে নেয়।
এর একটাই কারণ যে, নারী লজ্জাবতি বলেই স্বামীদের অপকর্মের কথা সহজে মুখফুটে বলতে চায়না। তেমনি সুহানা একজন আদৰ্শ স্ত্রী হয়ে স্বামীর বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ কোথায় প্রকাশ করেনি।
—–
একদা বহু কাঠখড় পুড়িয়ে,থানা পুলিশ,দেনদরবার শেষে এই বিবাহ মেনে নেন দুই পরিবার।
সুহানার স্থান হলো ব্রজেসের পরিবারে।
স্বামী,শশুর-শাশুড়ি,ভাসুর,জা নিয়ে যৌথ পরিবারে সুহানা তার সন্তানকে নিয়ে জীবন শুরু করলেন নতুন করে।
কিন্তু অপদার্থ স্বামী ব্রজেস সংসারে কোন টাকা পয়সা দেয়না। সাইবার ক্যাফে প্রতিমাসে অর্ধলক্ষাধিক টাকা ইনকাম করলেও একটি কানাকড়িও দেয়না ব্রজেস।
সুহানা তার ছেলেটিকে মানুষ করার জন্য একটি চাকরির সন্ধান করতে থাকে অফিসের দ্বারে দ্বারে।
শেষ পর্যন্ত বাড়ির নিকটেই একটি প্রাকটিসনার হিসাবে হসপিটাল ল্যাবে সামান্য বেতনে চাকরি পায়।
যৎসামান্য বেতনের উপার্জিত অর্থে ছেলেটিকে মানুষ করতে থাকে।
কিন্তু কথায় আছে,চোরায় না শুনে ধর্মের কাহিনী।তদ্রুপ ব্রজেস এতো টাকা ইনকাম করা সত্বেও সংসারে কোনো টাকাপয়সা না দিয়ে বাজে পথে অর্থ ব্যয় থাকে থাকে।
সে প্রতিদিন মদ,গাঁজা,ভাঙ,ইয়াবা ট্যাবলেট(নেশার ট্যাবলেট ) খেয়ে বাড়ি ফিরে স্ত্রীর প্রতি অত্যাচার,নির্যাতন চালাতে থাকে। এমনকি তিনচার রাত পর পর বাড়িতে না ফিরে বেশ্যালয়ে পরে থাকে।
এমতবস্থায় কোন নারী স্বামীর এমন আচরণ স্বাভাবিকভাবে মেনেনেয় ?
সুহানা সেটা মানতে পারেনি বলেই দীর্ঘ অত্যাচার চলে দিনরাত।
একদিন সুহানাকে প্রচন্ড প্রহার ও মারধর করে,এবং চরিত্রহিনী আখ্যা দিয়ে ঘর থেকে বের করে দেয়।
এই হলো আমাদের পুরুষ ও পৌরুষ শাসিত নগ্নসমাজের চালচিত্র।
অতপঃর শেষ আশ্রয় হলো তার বাবার বাড়ি।
—–
শব্দশংখ্যা-536
——-

মন্তব্য করুন