Skip to content

শিরোনাম -ভাগ-শারমিন নাহার ঝর্ণা পাংশা রাজবাড়ী

উঠোন জুড়ে আজ রৌদ পরেছে,আধমরা ঝিঙে গাছে দুটো ফুল ফুটেছে,মনটা বিষন্নতায় ছেয়ে আছে রাহেলা বেগমের।
বারবার মনে পড়ে যাচ্ছে ফেলে আসা দিনগুলোর কথা,কত স্বপ্ন এঁকেছিলাম দুচোখে, দুই ছেলেকে নিয়ে এক ছাদের তলায় বসবাস করবো বলে।

_স্বপ্নগুলো আজ চোখের জল হয়ে টপটপ করে গাল বেয়ে পরছে বুকের ভিতরে কিসের যেন শূন্যতা। এই সংসারের জন্য খেয়ে না খেয়ে জীবনে কত কষ্টই না করেছি দুজনে মিলে, অন্তিম বয়সে একসাথে এক ছাদের তলায় সন্তানদের নিয়ে সুখে দিন কাটাবো বলে।

_আজ স্বপ্নগুলো চোরাবালির মতো, কখনো ভাবিনি যে আমরা সন্তানের বোঝা হয়ে যাব, এত ভারী বোঝা যে ওরা আমাদের দুজনকে ভাগ করে নেবে,
আমরা দুজনে আজ দুই প্রান্তে চলে যাব।

_ছোট ছেলে মাসুদ ঢাকায় চাকরি করে ওর ভাগে আমি রাহেলা বেগম, যে কিনা পুরো সংসারটাকে একা কাঁধে নিয়ে ত্রিশটি বছর কাটিয়ে দিলাম।

_ বড় ছেলে শিমুল গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় চাকরি করে, বাবাকে নিজের ভাগে রেখে দিয়েছে, আমাদের দুজনের হাসিখুশি, সুখ দুঃখ, ব্যথা বেদনা, বোঝার ক্ষমতা আজ ওরা হারিয়ে ফেলেছে।

_এতোটুকু ওদের বোঝার ক্ষমতা নেই যে বাবা-মা এতদিন আমাদের জন্য তাদের সুখ বিসর্জন দিয়ে তিল তিল করে সোনার সংসার গড়ে তুলেছে, সন্তান যাতে সুখে থাকে আর সেই সন্তানের কাছে আজ আমাদের দুজনার ভাগাভাগি।

ভাবতে ভাবতে আঁচলে চোখের জল মোছেন রাহেলা বেগম।
সকালেই ছোট ছেলে মাসুদের সঙ্গে তাকে ঢাকাতে চলে যেতে হবে, দুজনকে একসাথে খাওয়াতে পারবে না বড় ছেলে শিমুল।

_পাথরের মূর্তির মত বসে আছেন সোহেল বিশ্বাস।
_ ওগো শুনছো, শিমুলের বাবা তোমার ছোট ছেলে কি বলছে,এই বয়সে তোমায় ছেড়ে আমি এক মুহূর্ত থাকতে পারবো না।

_রাহেলা বেগম কেঁদে কেঁদে বলতে লাগলো একদিন আমায় শান্তনা দিয়ে বলেছিলে কষ্টকরো শিমুলের মা একদিন সুখী হবে, এ কেমন সুখ শিমুলের বাবা তুমি বলতে পারো?

_যে সুখ তোমায় আমায় বিচ্ছেদ করে সেই সুখ আমি কখনো চাইনা শিমুলের বাবা, তুমি মাসুদ কে আটকাও আমি ঢাকা গিয়ে থাকতে পারবো না।

_ সংসার জীবনে অনেক কষ্ট করেছি তবুও সেই কষ্ট ভুলে গেছি তোমার মুখপানে চেয়ে, আজ এই শেষ বয়সে তোমায় ছেড়ে এক মুহূর্ত আমি থাকতে পারবো না বলেই কাঁদতে লাগলো রাহেলা বেগম।

_ শিমুলের মা তুমি অমন করে কেঁদোনা আজ যে আমি নিরুপায়, হাটতে পারি না উইল চেয়ারে বসে থাকি আমার কি শক্তি আছে বলো?তোমায় বেঁধে রাখবো??

বৃদ্ধ বয়সে নিজেদের সব সাধ আহ্লাদ বিসর্জন দিতে হয় গো শিমুলের মা বিসর্জন দিতে হয় বলেই কাঁদতে লাগল শিমুলের বাবা।

ছোট ছেলে মাসুদ এসে বলল মা এত কাঁন্নার কি আছে বলতো
ঢাকায় কত সুন্দর ফ্ল্যাট নিয়েছি সেখানে তুমি সুখে শান্তিতে থাকতে পারবা, কোন কষ্ট হবে না তোমার।
আর বাবার জন্য ভাইয়া তো আছে,মাঝে মাঝে এসে দেখা করে যাব।
_কাঁদবো কেন আনন্দে চোখে পানি আসলো, কত বড় ফ্ল্যাটে থাকবো কত কি দেখবো
শুধু তোর বাবাকে,,,,,,,,,,,,,বলেই রুমে চলে গেলেন রাহেলা বেগম।

_ভোর হলেই সূর্য উঠবে আকাশে,সকাল দশটায় গাড়ি,আমার মনের আকাশটায় সূর্য উঠবে না ঘন কালো মেঘে ঢেকে রেখেছে।
এই ঘন কালো মেঘে হয়তো কখনো উঠবে তুমুল ঝড়,হয়তো আবার কখনো পরবে বৃষ্টি এভাবেই ঝড় বৃষ্টিতে হৃদয়টা ভিজে থাকবে একটি সূর্যতাপের আশায়।

_ওগো শুনছো শিমূলের বাবা,রাত তো অনেক হলো একটু ঘুমাবে না?
দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন না গো ঘুম আসছে না আজকে,
তুমি ঘুমিয়ে পর ভোরে তোমায় আবার উঠতে হবে।গাড়ি কয়টায় ছাড়বে?
সকাল নয়টায় ছাড়বে,তুমি নিজের যত্ন নিও,ঠিক মত খাওয়া দাওয়া করো,যখন যা লাগবে বৌমাকে বলবে।

_রাহেলা মানুষের জীবন কেন এমন হয় বলতে পার?
কখন মানুষের জীবনে কি ঘটে নিয়তি কখন কোথায় নিয়ে দাঁড় করায় কেউ বলতে পারেনা।
আমরা কি ভেবেছিলাম এই বৃদ্ধ বয়সে আমাদের দুজনকে দুই প্রান্তে থাকতে হবে।শেষ বয়সে দুজনের ব্যথা দুজনের সুখ দুঃখ বহিঃপ্রকাশ করার সুযোগ হলো না।
দুঃখ করো না শিমুলের মা তুমি আর আমি নদীর এপার ওপার হয়ে,জনমভর থাকবো দুজন চেয়ে।

নদীর এই যে দুকুল চেয়ে থাকে মুখোমুখি মিলবে না কভু তারা তবু ও যে কত সুখী,দূর আকাশে তাকিয়ে দুজন দুজনাকে খুঁজে পাবো সন্ধ্যাতারাদের আলাপনে।

2 thoughts on “শিরোনাম -ভাগ-শারমিন নাহার ঝর্ণা পাংশা রাজবাড়ী”

  1. রমেন মজুমদার

    গল্পটি পড়লাম ভীষণ ভাল লাগল।
    জীবনের এক চরম ক্রান্তিলগ্নে এমনইহয়
    পাল্টে গেছে বোধ ও মননের হিসাব।
    দুর্দান্ত।।।
    ** দুটিস্থানে বানানের ত্রুটি আছে।

মন্তব্য করুন