Skip to content

শিউলি – জয়ন্ত সেন

রোজইতো লোক আসে, ঘন্টায় ঘন্টায়, ঘর অন্ধকার করে খেলা চালায় নিজের মতো করে, দাম দিয়ে চলে যায় | তবে এই মানুষ-টাকে চেনা ঠেকছে, একদম যতিনদার মতো দেখতে | বন্যার ত্রানে সেই বাপ্-মা, পানের বোরোজ, টিপমি নামের বাছুর সব হারিয়ে মামার কাছে ছিলাম কদিন | ইঁটের ভাটায় কাজ করেছিলাম কদিন, মামা সব রুজি কেড়ে নিয়ে টলতে টলতে রাতে চিলেকোঠার ঘরটিতে ঢুকতো | এখন জানি ওরম মদ খেলে হয় | একদিন হটাৎ ফেরার পথে যতিনদা পেছন থেকে ডাক দিলো ‘ওই মেয়ে কোথায় যাস ?’
এতখানি পথ হেঁটে জাবি নাকি ! বোস বোস সাইকেলে বোস, ছেরে দি, সাঁঝ এলো বলে |
এই মানুষটাকেও-তো একইরকম দেখতে | রোগা, প্যাংলা, উস্কো-খুস্কো চুল, টিকালো নাক | যতিনদা তুমি কি আমায় চিনতে পারছো ? সেদিন মেলা থেকে আসার পর মামা আমায় নিয়ে শহরে আসছিলো | ট্রেনে প্রচন্ড ঘুম আসছিলো, কখন যে চোখ বুঝে এসেছে ! যখন চোখ খুল্লাম দেখি কেউ কোথাও নেই, মামাও নেই, সেই ট্রেনটাই বা গেলো কোথায় ? আমার গায়ে একটা সুতোয় জড়ানো নেই, এরা কারা ? দেখি আমার দিকে কি বীভৎস ভাবে তাকিয়ে আছে | আমার খুব লজ্জা করছিলো, হাঁটু বুক একসাথে জড়িয়ে বসেছিলাম, শুধুই আমি নই আরো অনেকে | আমারই বয়সী হবে, চোদ্দো পনেরো ষোলো | আসলে তখন বয়সের হিসেবটা ঠিক বুঝে উঠিনি |
ইঁটের ভাটায় মাটি পোড়াতে পোড়াতে বুক পাছার প্রতি দুর্নজর থেকে যে যত্নশীল হতে হয় খেয়ালই হয়নি | কতোকরে বল্লাম, কাকুতি মিনতি করলাম, আমায় ছেড়ে দাও, প্রচন্ড ব্যাথা করছে, আমায় ছেড়ে দাও | চোখের জল শুকিয়ে দাগ হয়ে গেলো | কিন্তু নাড়ী-ভুরি না পচা অব্দি ছাড়লোই না |
যতিনদা, ও যতিনদা তুমি আমায় চিনতে পারছো ? আমি তোমার সেই শিউলি-গো ! আমায় আবার নিয়ে যাবে সেই মেলায়? সবুজ নীল চুরি কিনে দেবে ? নাগরদোলায় ভয় পেলে জাপটে ধরে বলবেতো “ভয় কিসের বোকা মেয়ে, আমি আছিতো !” নদীর ধারে শিউলি ফুল খোপায় দিয়ে বলবে আরেকবার “এই দ্যাখ, শিউলির জন্য শিউলি এনেছি “| আমায় ফিরিয়ে নিয়ে চলো | তোমার জন্য সব সিনথেটিক ফেলে দেবো, আমার ওই শিউলি ফুলটাই চাই | যতটুকু বাকি আছে সবটুকু দেবো তোমায় | শুধু তোমায় |
বালিশের তলায় দাম গুঁজে লোকটা দরজার দিকে হাঁটা দিলো | না ! এতো সে নয় | ভারী অস্বস্তি হচ্ছে, খুব অস্বস্তি হচ্ছে |

মন্তব্য করুন