Skip to content

রহস্যের আড়ালে – কল্লোল সরকার

সালটা ২০১০ মুর্শিদাবাদের চৌধুরী পাড়াতে বাস করতেন অর্নিশ বাবু তিনি একজন ইলেকট্রনিক্স কম্পানির মালিক অর্নিশ বাবু, তার স্ত্রী অম্বিকা দেবী এবং তার একমাত্র সন্তান অনিরূদ্ধ কে নিয়ে তার বেশ সুখের সংসার।
অনিরূদ্ধ অবশ্য পড়াশোনা শেষ করে অর্নিশ বাবুর চৌধুরী ইলেকট্রনিক্স প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানিতে কাজ করে শুধু অনিরূদ্ধ নয়,
অনেক পুরুষ ও মহিলারাও সেখানে কাজ করে।
এভাবেই বেশ চলছিলো অনিরূদ্ধ অবশ্য সবার সঙ্গে মিলে মিশে চলতো দেখে মনেই হতো না সে এই কম্পানির মালিক।
আসলে তার কাছে এই কম্পানিটা ছিলো একটা পরিবারের মতো।
মার্চ মাস সারা বছরের আয় এবং ব্যায়ের হিসাবের জন্য সবাই খুব ব্যাস্ত সরকারী অধিকারীরা আসবেন ভিজিট করতে সেই মোতাবেক কাজ চলছে জোরকদমে।
সেদিন ছিলো শনিবার কাজ করতে করতে অনেকটা রাত হয়ে যায় ।
অবশ্য কম্পানিতে যারা কাজ করতেন তাদের বেশিরভাগই আশে পাশে থাকতেন।
কিন্তু তাদের মধ্যে একজন মহিলা ছিলেন সারদা দেবী, তিনি অনেকটা দূরে থাকতেন প্রায় এক ঘন্টার রাস্তা।
অনিরূদ্ধ অফিস থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে বাড়ীর উদ্দেশ্যে হঠাৎ তার চোখে পড়ে সারদা দেবী তার কেবিন থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে।
অনিরূদ্ধ দাঁড়িয়ে তাঁকে ডাকলেন সারদা তুমি এখনো যাওনি?
সারদা না স্যার আসলে কিছু কাজ ছিলো সেগুলো করতেই একটু দেরি হয়ে গেল।
অনিরূদ্ধ অবাক হয়ে গেল তার কথা শুনে কারণ সে অনেকটা পথ যাবে ।
এমনিতেই মহিলা মানুষ তার উপরে একা একা এতোটা পথ।
অনিরূদ্ধ তাঁকে বললেন সারদা দেবী আপনি তো অনেকটা পথ যাবেন তার উপরে একা আপনি আমার সঙ্গে চলুন আমি আপনাকে এগিয়ে দিয়ে আসি।
সারদা দেবী বললেন না স্যার ঠিক আছে আমি চলে যেতে পারবো অসুবিধা হবে না।
অনিরূদ্ধ খুব ভালো করেই জানতেন সারদা দেবী যখন একবার না বলেছেন তিনি একাই যাবেন।
এবার অনিরূদ্ধ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন আচ্ছা বেশ আপনি একাই যাবেন কিন্তু আমার ড্রাইভার কে বলে দিচ্ছি ওই গাড়িতে আপনি চলে যাবেন।
এবার সারদা দেবী তার বসের মুখের উপর না করতে পারলেন না তিনি মাথা নিচু করে শুধু একটি কথাই বললেন ওকে স্যার।
সেই মোতাবেক দুজনের বেরিয়ে যায় অনিরূদ্ধ একটা রিক্সা নিয়ে চললেন বাড়ির দিকে অনেকটা দেরি হয়ে গেছে ঘড়িতে সময় দেখে একাই বলতে লাগলেন ওহ্ অনেকটা রাত হলো আজ কাল এতোকাজ কি করে কি হবে এসব ভাবতে ভাবতেই সে ততক্ষণে বাড়ির সামনে পৌঁছে গেছে।
অন‌্যদিকে সারদা সারদা দেবী তার বসের গাড়িতে চললেন বাড়ির উদ্দেশ্যে কিন্তু মাঝ রাস্তা যাওয়ার পর একটা ফাঁকা জায়গায় গাড়ির স্টার্ট বন্ধ হয়ে যায়।
ড্রাইভার মিজান কে সারদা দেবী জিঞ্জেস করলেন দাদাভাই কি হয়েছে?
ড্রাইভার মিজান উত্তর দিলো বুঝতে পারছি না ম্যাম গাড়িটা স্টার্ট নিচ্ছে না আপনি চিন্তা করবেন না আমি নেমে দেখছি।
সারদা দেবী উত্তর দিলেন আচ্ছা।
ড্রাইভার মিজান গাড়ি থেকে নেমে অনেক চেষ্টা করেও কিছু করতে পারলো না। এদিকে রাত অনেক হয়েছে সারদা দেবীকে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে হবে পরের দিন অফিসে অনেক কাজ।
সারদা দেবী ড্রাইভার মিজান কে জিজ্ঞেস করে কি হলো?
উত্তর আসে বুঝতে পারছি না ম্যাম মনে হচ্ছে আমার দ্বারা হবে না।
সারদা দেবী বললেন ঠিক আছে আমি তাহলে হেঁটেই চলে যাচ্ছি।
ড্রাইভার মিজান বলে কিন্তু ম্যাম এই অন্ধকার রাতে আপনি একা এই ফাঁকা রাস্তা দিয়ে কিভাবে যাবেন।
সারদা দেবী হেসে বললেন আমি চলে পারবো এই রাস্তা আমার চেনা কোন অসুবিধা হবে না।
মিজান কোন উত্তর না দিয়ে ঘাড় নেড়ে সম্মতি দিতেই সারদা দেবী হেঁটে এগিয়ে চললেন বাড়ির উদ্দেশ্যে।
কিছুদূরে যেতেই তিন চারজন ঘিরে ঘরে সারদা দেবীকে আচমকা তাকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যেতে থাকে পাশের একটা বাগানের দিকে।
তখন সারদা দেবী কিছু না বুঝেই চিৎকার করে ওঠে কে আছো?
বাঁচাও…
বাঁচাও আমাকে….
আওয়াজটা অনেকটা জোরেই ছিলো আর রাত হবার কারনে অনেক দূর পর্যন্ত যায়।
কিন্তু অতো রাতে আর ফাঁকা রাস্তায় কে আসবে তাকে বাঁচাতে?
তারপরে আরকি শেষ রক্ষা হলো না সেদিন রাতে ধর্ষণ হয় ওই চারজন লম্পটের হাতে সারদা দেবী অনেক চেষ্টা করেও নিজেকে বাঁচাতে পারলেন না।
তাকে ধর্ষণ করার পর তাঁকে ফেলেই তারা পালিয়ে যায়।
সারদা দেবী ব্যাথায় কাতরাচ্ছে ছটফট করছে আর একটাই শব্দ মুখ থেকে বাঁচাও আমাকে…..
বাঁচাও….
এদিকে মিজান চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে গড়িটাকে স্টার্ট করার কারণ তাকেও বাড়ি ফিরতে হবে ।
অবশেষে দীর্ঘ চেষ্টার পর গাড়িটা স্টার্ট হয়েছে মিজান ওই রাস্তা দিয়ে এগিয়ে চললেন।
গাড়ির আওয়াজটা শুনেই সারদা দেবী বুঝতে পারলেন কেউ হয়তো আসছে ।
তিনি তাকে ডাকার চেস্টা করলেন কিন্তু সেই শক্তি তার আর নেই ।
তার গলা দিয়ে আওয়াজ বেরোচ্ছে না।
তবুও তিনি প্রাণে বাঁচার জন্য একটা জোরে চিৎকার করলেন ।
কে আছো বাঁচাও…..
এই বলেই তিনি ঞ্জান সরালেন।
আওয়াজটা অনেক জোরে ছিলো এতোটাই জোরে ছিলো যে আওয়াজটা শুনেই ড্রাইভার মিজান গাড়ি থামালেন।
তিনি স্পষ্ট শুনেছে একটা মহিলার আওয়াজ ।
সে গাড়ি থেকে নেমে চারিদিকে লাইট মারতে শুরু করে কিন্তু কাউকে দেখতে পাচ্ছে না অনেকক্ষণ এদিকে ওদিকে লাইট দিয়ে দেখতেই তার চোখে পড়ে সারদা দেবী লুটিয়ে পড়ে আছেন।
অনেকটা দূর থেকে দেখছেন মিজান ঠিক বুঝতে পারলেন না সে দৌড়ে কাছে গিয়ে দ্যাখে যে মাটিতে লুটিয়ে আছে সে আর কেউ না তার ম্যাম।
তার গায়ের যে চুড়িদার সেটা ছেঁড়া ফাটা বিশ্রী অবস্থায়।
ড্রাইভার মিজান তার গায়ের জামাটা দিয়ে তাকে ঢেঁকে দেই।
মিজান ডাকতে থাকে,
ম্যাম….ম্যাম….
ম্যাম উঠুন।
কে করেছে এসব ?
কোন উত্তর নেই !
কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে মিজান কোনরকমে তাকে তুলে গাড়িতে শোয়াই।
সে জোরে গাড়িটা চালিয়ে এগিয়ে চলে হাসপালের দিকে এবং তার ঈশ্বর আল্লাহ কে ডাকতে থাকে হে খোদা তুমি কি করলে এসব।
অবশেষে হাসপাতালে পৌঁছে গেছে মিজান ।
সে হাসপাতালের ইমারজেন্সী বিভাগে গিয়ে হাঁফাতে হাঁফাতে বললেন ডাক্তার বাবু বাঁচান আমার ম‌্যাম কে।
ডাক্তার বাবু জিঞ্জেস করলেন কি হয়েছে তোমাদের ম্যামের?
মিজান কিছুক্ষণ চুপ থেকে…
আপনি দেখুন দেখলেই বুঝতে পারবেন।
ডাক্তার উঠে গিয়ে তাকিয়ে দ্যাখে একটা মেয়ে শুয়ে আছে তার গায়ের পোশাক ছেঁড়া ফাটা ।
ডাক্তার বাবু ততক্ষণে বুঝে গেছে মিজান যাকে ম্যাম সম্বোধন করছে কি হয়েছে তার সঙ্গে।
সে চুপচাপ নিজের চেম্বারে এসে টেলিফোন টা হাতে তুলেছেন পুলিশ কে জানাবেন বলে।
মিজান বলে উঠলো ডাক্তার বাবু কিহলো আপনি কোথায় ফোন করছেন?
বাঁচান আমার ম্যামকে।
ডাক্তার বাবু চুপচাপ ফোনের নাম্বার ডায়াল করে চলেছে।
মিজান আবারো…
কি হলো ডাক্তার বাবু?
বাঁচান…
এবার ডাক্তার বিরক্ত হয়ে রেগে গিয়ে বললেন চুপ রাস্কেল।
পুলিশকে ফোন করছি দু ঘা পড়লেই ভালোমানুষ সাজা বেরিয়ে যাবে।
মিজান ডাক্তারের কথা শুনে অবাক।
সে কিছু বুঝার আগেই…..
ডাক্তার বাবু পুলিশ কে ফোন করে ফেলেছে ।
মিজান হতবাক হয়ে যায় অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সে যেন ডাক্তার বাবুর কথা শুনে বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছে।
এদিকে রাত তখন ১২-৩০মিনিট পুলিশের গাড়ি এসে পৌঁছায়।
কি হয়েছে ডাক্তার বাবু?
কোথায় আসামী?
ডাক্তার বাবু উঠে ওহ্ আপনারা এসে গেছেন?
এই যে ইনিই মিজান কে দেখিয়ে বলে ।
একজন কনস্টেবল ততক্ষণে মিজানকে শক্ত করে হাতটা চেপে ধরে।
এবার ডাক্তার বাবু চিয়ার থেকে উঠে বলে ওঠে আসুন অফিসার।
গাড়ির দিকে নিয়ে গিয়ে সারদা দেবী কে দেখিয়ে বলে এই যে মহিলা।
অফিসার দেখে বলে এতো খুব খারাপ অবস্থা।
আপনি চিকিৎসা শুরু করুন আমরা ওই ড্রাইভার কে নিয়ে যাচ্ছি কাল সকালে আবার আসছি।
পুলিশ ড্রাইভার মিজান কে নিয়ে চলে গেলো তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
এদিকে সারদা দেবীর চিকিৎসা চলছে সে রিতিমত মৃত্যুর সাথে লড়াই করে চলেছে।
এভাবেই সকাল হয়ে যায় পুলিশ মিজান কে জিজ্ঞাসাবাদ করে কিছুই জানতে পারে না, আর জানবেই কি করে মিজান তো নিজেই কিছু জানে না।
পুলিশ ডাক্তার বাবুর চেম্বারে ঢুকে শুভ সকালের শুভেচ্ছা জানিয়ে জানতে চাইলেন কি খবর মেয়েটার?
ডাক্তারবাবু উত্তর দিলেন আগের থেকে অনেকটা ভালো তবে এখনো ঞ্জান ফেরেনি স্যালাইন চলছে ২৪ ঘন্টা না গেলে এখনো কিছু বলা যাচ্ছে না।
তারপরে ডাক্তারবাবু পুলিশ অফিসারের কাছে জানতে চাই ,
আচ্ছা অফিসার মেয়েটার পরিচয় কিছু জানা গেছে?
আর কাল যে লোকটা ওনাকে এই অবস্থায় এনেছিলো তার কাছে থেকে জানা গেলো?
পুলিশ অফিসার বললেন হ্যাঁ ডক্টর মেয়েটার নাম সারদা দাস আর কাল যাকে আমরা থানায় নিয়ে গিয়েছি তার নাম মিজান মেয়েটি চৌধুরী ইলেকট্রনিক্স প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানিতে কাজ করে এবং ওই লোকটি মিজান হলো ওই কম্পানির ড্রাইভার তবে ড্রাইভারের কাছে কিছুই জানা যায় নি ।
এইবলে অফিসার ডাক্তারকে নির্দেশ দেয় আপনি চিকিৎসা চালিয়ে যান আর আমাকে জানাতে থাকবেন আমরা দেখছি ব্যাপারটা এইবলে অফিসার বেরিয়ে যায়।
অন্যদিকে যে লম্পট গুলো সারদা দেবী কে ধর্ষণ করেছিলো তারা রিতিমত ভয় পেয়ে একদম দেশ ছাড়া।
অনিরূদ্ধ এবং অর্নিশ বাবু দুজনেই সকলে খুব ব্যাস্ত কারণ, তাদের অফিসে আজকে অডিট হবে সেই মোতাবেক তারা দুজনেই সকাল বেলা তাড়াতাড়ি স্নান সেরে সকালে টিফিন খেতে যাবে।
হঠাৎ অনিরূদ্ধর ফোনটা বেজে উঠলো।
ভেতর থেকে অনিরূদ্ধর মা আম্বিকা দেবী ডাকলেন অনি এই অনি তোর ফোনটা বাজছে।
অনিরুদ্ধ উত্তর দিলো যায় মা ততক্ষণে ফোনটা কেটে গেছে।
আবারো ফোনটা বেজে ওঠে অনিরুদ্ধ ফোনটা হাতে নিয়ে দ্যাখে একটা অচেনা ল্যন্ড ফোন নাম্বার।
সে কিছু না বুঝেই ফোনটা রিসিভ করে হ্যালো…
ফোনের ওপাশ থেকে একটা গম্ভীর গলায় উত্তর আসে আপনি কি অনিরুদ্ধ চৌধুরী?
অনিরুদ্ধ একটু অবাক হয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় উত্তর দিলো হ্যাঁ আপনি কে বলছেন?
ফোনের ওপাশ থেকে উত্তর আসে আমি মুর্শিদাবাদ থানা থেকে বলছি আপনাকে এখুনি একটু থানায় আসতে হবে।
অনিরুদ্ধ উত্তর দেয় কি ব্যাপার স্যার?
অফিসার কিছুক্ষণ চুপ থেকে উত্তর দেই সেটা থানায় এলেই বুঝতে পারবেন শুধু এইটুকু জেনে রাখুন ব্যাপারটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
অনিরুদ্ধ অফিসার কে বলে আসলে আজ আমার অফিসে অডিট আছে…
অফিসার অনিরুদ্ধ কে থামিয়ে দিয়ে বললেন দেখুন কোন অজুহাত শুনতে চাই না আর মনে রাখবেন ব্যপারটা খুব সিরিয়াস আপনি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব থানায় দেখা করুন এই বলে তিনি ফোনটা কেটে দেয়।
অনিরুদ্ধ একটু ভয় পেয়ে কাঁপা গলায় মিজান গড়ি বের করো আমি বেরোবো।
অনিরুদ্ধ কিছুই জানে না কাল রাতের ঘটনা সে জানে না মিজান কে থানায় আটকে রেখেছে সন্দেহর বসে আর তার জানার কথাও নয় ।
সে তাড়াতাড়ি খাবার টেবিলে গিয়ে, তার মা আম্বিকা দেবীকে বলে উঠলো মা তাড়াতাড়ি খাবার দাও… আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে ।
সে কাউকে থানা থেকে ফোন আসার ব্যাপারে কিছু জানালো না ।
তার মা আম্বিকা দেবি তাড়াতাড়ি তাকে খাবার দিলো রুটি এবং সঙ্গে সব্জী দিয়েই সে আবার নিজের কাজে চলে গেলেন।
অনিরুদ্ধ দুএকবার মুখে দিয়ে উঠে গেলো সে খেতেই পারলো না।
সে আবারো মিজান গাড়ি তৈরি তো?
বাইরে থেকে কোন উত্তর নেই।
অনিরুদ্ধ তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে বেরিয়ে যায় অন্যদিন তার মা আম্বিকা দেবীকে বলে যায় কিন্তু আজ সেটা হলো না।
তাড়াতাড়ি বেরিয়ে যায় দ্যাখে তার অফিস যাবার গড়িটা নেই এবং ড্রাইভার মিজান ও নেই ।
অনিরুদ্ধ কিছুটা অবাক হলো আবার ভয়ও পেলো ।
সে নিজে নিজেই ভাবতে লাগলো তাহলে কি কাল…
নানা এসব আমি কি ভাবছি এসব হতেপারে না নিজেই বিড়বিড় করতে করতে, একটা রিক্সা ডেকে তাতে চেপে বসে বলে চলো থানায়।
অনিরুদ্ধ কিছুতেই ভেবে পাচ্ছে না হিসেব যেন কিছুতেই মেলাতে পারছে না।
এসব ভাবতে ভাবতেই ততক্ষণে সে থানার সামনে এসে পৌঁছায়।
সে এতটাই চিন্তিত যে রিক্সার রিক্সার ভাড়া না দিয়েই এগিয়ে চলছে থানার দিকে।
রিক্সার চালক পেছন থেকে ডাকলেন স্যার…
স্যার… আমার ভাড়াটা!
অনিরুদ্ধ থমকে দাঁড়িয়ে পড়ল পেছন দিকে তাকিয়ে বলল ও sorry আসলে আমি ভুল করে চলে এসেছি।
রিক্সার চালক মাথা নিচু করে বললো ঠিক আছে স্যার কোন ব্যাপার না এই বলে সে চলে গেল।
অনিরুদ্ধ ততক্ষণে থানায় ঢুকে গিয়েছে অফিসারের রুমে কাঁপা গলায় একটু ভিতু কন্ঠস্বরে বলে স্যার আমাকে ফোন করা হয়েছিলো।
অফিসার তার দিকে তাকিয়ে পা থেকে মাথা পর্যন্ত একঝলক দেখে বললেন ও আপনি অনিরুদ্ধ?
অনিরুদ্ধ উত্তর দেয় হ্যাঁ স্যার আমি অনিরুদ্ধ।
অফিসার তখন নিজের চেয়ার ছেড়ে উঠে অনিরুদ্ধ কে বললেন আসুন আমার সঙ্গে।
তাকে নিয়ে পুলিশ লকাপের সামনে গিয়ে পৌঁছেছে।
অনিরুদ্ধ এবার হতবাক কি দেখছে সে…
অনিরুদ্ধ বলে ওঠে স্যার এতো মিজান আমাদের গাড়ির ড্রাইভার।
কি হয়েছে?
অনিরুদ্ধ ড্রাইভার মিজান কে জিজ্ঞেস করে মিজান কি হয়েছে ?
কি করেছো তুমি?
অফিসার বলে ওঠে আসুন আপনি বলে তাকে নিয়ে গিয়ে বসায় তার কেবিনে।
তার পরে বলে আপনি ঠিক আছেন তো?
অনিরুদ্ধ উত্তর দেয় হ্যাঁ স্যার কিন্তু কি হয়েছে?
অফিসার কিছুক্ষণ চুপ করে উত্তর দেয় আপনাদের ড্রাইভার কাল একটি মেয়েকে ধর্ষণ করে পরে হাসপাতালে নিয়ে এসেছে।
মেয়েটি হাসপাতালে ভর্তি চিকিৎসা চলছে খুব খারাপ অবস্থা।
অনিরুদ্ধ একটু অবাক হয়ে বলে ওঠে স্যার আর যার হোক মিজান এই কাজ করতে পারে না সে আমাদের এখানে বহুদিন কাজ করছে।
এবার থানায় ফোনটা বেজে উঠলো অফিসার অনিরুদ্ধ কে থামিয়ে ফোনটা রিসিভ করে।
হ্যালো…
ফোনের ওপাশ থেকে উত্তর আছে অফিসার মেয়েটির ঞ্জান ফিরেছে।
অফিসার উত্তর দেয় আচ্ছা আমি আসছি।
আচ্ছা ডক্টর ওনাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা যাবে তো?
ডাক্তারবাবু উত্তর দেয় হ্যাঁ করবেন তবে খুব সাবধানে।
আসলে এতো একটা ঘটনা সে তিনি প্রচন্ড ঘাবড়ে আছে।
অফিসার উত্তর দেয় ওকে ডক্টর আমরা দেখছি ব্যাপারটা আপনি অপেক্ষা করুন আমরা আসছি বলেই ফোনটা রেখে দেন।
অফিসার অনিরুদ্ধ কে নিয়ে চললেন হাসপাতালের দিকে।
এদিকে অনিরুদ্ধর বারে বারে ফোন আসছে অডিট অফিসাররা ইতিমধ্যেই এসে পৌঁছেছে কিন্তু সে এসব দেখে কিছুতেই বুঝতে পারছে না সে কি করবে।
গাড়িটা হাসপাতালে এসে পৌঁছেছে অনিরুদ্ধ এবং অফিসার সাথে কিছু কনস্টেবল এগিয়ে চললেন ডাক্তারের চেম্বারে।
চেম্বারে ঢুকতেই…
ডাক্তারবাবু ও আপনারা চলে এসেছেন?
চলুন আমার সঙ্গে বলেই তাদের নিয়ে এগিয়ে চললেন মেয়েটির বেডের দিকে।
এবার অনিরুদ্ধ হতবাক…!
কি দেখছে সে?
এতো সারদা দেবী।
অনিরুদ্ধ অফিসার কে বলে স্যার এতো সারদা দেবী আমাদের অফিসের ইঞ্জিনিয়ার।
তাহলে আপনি যার কথা বলছিলেন….
অফিসার বলে হ্যাঁ এনার কথাই আমি আপনাকে বলছিলাম।
অফিসার সারদা দেবী কে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করলেন সারদা দেবীও সব খুলে বলে অফিসার কে।
অফিসার তাকে আস্বস্ত করে যে বা যারা তার সঙ্গে এই জঘন্যতম কাজটা করেছে তাদের খুঁজে বের করবেন।
ততক্ষণে অফিসারের বুঝতে বাকি নেই কাল রাতে যাকে সন্দেহের বশে থানায় নিয়ে গিয়েছে অপরাধী সে নয়।
অফিসার এবার অনিরুদ্ধ কে নির্দেশ দেয় আপনি এবার যেতে পারেন তবে প্রয়োজন হলে তাকে আবার ডাকবেন।
অনিরুদ্ধ উত্তর দেয় নিশ্চয় স্যার বলে সে মিজান কে নিয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় ততক্ষণে অনেকটা দেরি হয়ে গেছে তার অফিসে পৌঁছাতে।
সে দ্যাখে অডিট অফিসাররা তাদের কাজ শুরু করে দিয়েছে কিন্তু অনিরুদ্ধর মাথা তখনো কাজ করছে না এসব ভাবতে ভাবতে বিকেল হয়ে গেছে অডিট অফিসাররা তাদের কাজ শেষ করে বেরিয়ে গেছে বলতে গেলে অফিসের সবাই চলে গেছে।
এবার ড্রাইভার মিজান অনিরুদ্ধর কেবিনে ঢুকে ডাকদিলো স্যার….
স্যার বাড়ি যাবেন না?
অনিরুদ্ধ হকচকিয়ে উঠে বলে ওঠে ও মিজান!
হ্যাঁ বাড়িতে যাবো সবাই চলে গেছে?
মিজান উত্তর দেয় হ্যাঁ স্যার সবাই চলে গেছে আমি আর আপনি বাদে।
অনিরুদ্ধ এবারে উঠে দাঁড়িয়ে বলে চলো বলেই সে গাড়িতে গিয়ে বসে তার মাথায় যেন কাজ করছে না কিছুই বুঝতে পারছে না অনিরুদ্ধ।
সে মিজান কেও কিছু জিজ্ঞেস করতে পারছে না সে বুঝেই উঠতে পারছে না কি করবে বা তার কি করা উচিৎ।
তবুও তাকে জানতেই হবে গতকাল রাতের ঘটনা সে যেন একটা ধোঁয়াশার মধ্যে রয়েছে অনিরুদ্ধ মিজান কে জিজ্ঞেস করতে যাবে ঠিক এমন সময় মিজান অনিরুদ্ধ কে বলে ওঠে স্যার কি ভাবছেন?
কাল রাতের ঘটনা?
অনিরুদ্ধ একটু চুপচাপ থেকে বলে ওঠে কাল কি হয়েছিলো মিজান?
মিজান পুরো ঘটনা তার মনিব অনিরুদ্ধ কে খুলে বলে।
এবার অনিরুদ্ধ যেন সস্তি বোঝ করছে।
আবার নিজের উপর রাগও হচ্ছে সে বারে বারে ভাবছে কেন সে কাল সারদা দেবীকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে এলো না।
এবার অনিরুদ্ধ ড্রাইভার মিজান কে নির্দেশ দেই সে বলে ওঠে মিজান গাড়ি ঘোরাও।
মিজান জিজ্ঞেস করে স্যার গাড়ি ঘুরিয়ে কোথায় যাবো?
অনিরুদ্ধ উত্তর দেয় হাসপাতালে নিয়ে চলো আমাকে আমি একবার সারদা দেবীর সাথে দেখা করতে চাই ।
বলেই সে আরো বলে আসলে ভুলটা আমার আমি যদি কাল ওনাকে পৌঁছে দিয়ে আসতাম তাহলে এসব কিছুই হতো না।
অনিরুদ্ধর গাড়িটা হাসপাতালে গিয়ে পৌঁছেছে অনিরুদ্ধ গাড়ি থেকে নেমে সারদা দেবীর কেবিনের দিকে হেঁটে এগিয়ে চললেন দ্যাখে ডাক্তারবাবু তাকে পরিক্ষা করছেন ।
অনিরুদ্ধ ডাক্তার বাবু কে ঠেকে জিজ্ঞেস করে ডক্টর উনি এখন কেমন আছেন?
ডাক্তারবাবু উত্তর দেয় আগের থেকে অনেক টা ভালো দুই একদিনের মধ্যেই তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে ।
অনিরুদ্ধ সারাদা দেবীর সাথে কথা বলে এবং তাকে শান্তনা দিয়ে বাড়ি ফিরে আসে।
এসব ভাবতে ভাবতেই দুদিন চলে গেলো অনিরুদ্ধ যথারিতি সেদিন হাসপাতালে গিয়ে পৌঁছেছে সারাদা দেবীকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে বাড়িতে পৌঁছে দেয় এবং তাকে আবারো শান্তনা দিয়ে বলে আপনি তাড়াতাড়ি অফিসে জয়েন্ট করুন ভালো লাগবে।
এদিকে পুলিশ অফিসার অপরাধী গুলোকে হন্যে হয়ে খুঁজে চলেছে কিন্তু কোন খোঁজ পাই না অবশেষে কেসটা চাপা পড়ে যায় আর সারদা দেবীও এসব নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করতে চাইনি।
কিছু দিন পর সারদা দেবী যথারীতি অফিসে জয়েন করে কিন্তু এতোবড় একটা ঘটনা কেউ কিছু জানতেই পারলো না ।
সবকিছু বেশ ভালোই চলছিলো এদিকে সারদা দেবীও সব ভুলে নিজের কাজে বেশ মনোযোগী কিন্তু আবার ঘটলো বিপত্তি।
কিছু দিন পরে সারদা দেবী হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন অনিরুদ্ধ ডাক্তার ডাকেন অনেক পরিক্ষা নিরিক্ষা করে জানাযায় সারদা দেবী তিন মাসের প্রেগন্যান্ট।
সারদা দেবীর আর কিছু বুঝতে বাকি থাকলো না সে বুঝতে পারে সেদিনের ঘটনার পরেই সে…..
এবার ব্যাপারটা খুব চিন্তার সারদা দেবী ভাবতে থাকেন এই মুখ তিনি কি করে লোক সমাজে দেখাবেন?
যে সমাজে তার এতো সম্মান কেউ তার দিকে কোনদিন আঙ্গুল তুলে কথা বলেনি এবার কিনা তাকে….!
অন্যদিকে অনিরুদ্ধও অনুসূচনার আগুনে জ্বলছে।
অবশেষে অনিরুদ্ধ সিদ্ধান্ত নেই সে সারদা দেবী কে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করবেন এবং তার গর্ভের সন্তান কে এই পৃথিবীর আলো দেখাবেন এবং তাকে নিজের পরিচয়ে মানুষ করবেন।
অনিরুদ্ধ পরের দিন খুব সকালে সারদা দেবীর বাড়িতে চলে যায়।
সারদা দেবী তখন সবে সকালের কাজ করছে তিনি আচমকা তার অফিসের বস অনিরুদ্ধ কে দেখে হতবাক হয়।
সারদা দেবী থতমত খেয়ে বললেন স্যার আপনি?
এতো সকালে কি ব্যাপার সব ঠিক আছে তো?
অনিরুদ্ধ উত্তর দেয় হ্যাঁ সব ঠিক আছে আমি একটা বিশেষ দরকারি কিছু কথা বলার জন্য এসেছি।
সারদা দেবী কিছু বুঝতে পারছে না সে অনিরুদ্ধ কে ঘরে বসতে দিয়ে বলে স্যার আপনি বসুন আমি আপনার জন্য চা করে নিয়ে আসছি।
অনিরুদ্ধ সারদা দেবীর হাতটা চেপে ধরে বললো চা করতে হবে না এখানে বসো বললাম না জরুরি কিছু কথা বলতে এসেছি।
সারদা দেবী কিছু বুঝতে পারছে না কি বলতে এসেছেন বস?
লজ্জায় মাথাটা নিচু করে অনিরুদ্ধর হাতটা ছাড়িয়ে তার পাশে বসলেন।
অনিরুদ্ধ বুঝতে পারছে না সে কথাটা কিভাবে বলবে সারদা দেবী কে কিছুক্ষণ চুপ থেকে অনিরুদ্ধ সারদা দেবী কে বললো দ্যাখো সারদা তুমি আমার অফিসের সবথেকে ভালো কর্মী কিন্তু একটা অনুসুচনা বোধ কাজ করছে আমার মধ্যে এই তিনমাস ধরে।
সারদা দেবী কিছু বুঝতে পারছে না সে বলে ওঠে স্যার আমার কি কোন ভুল হয়েছে?
অনিরুদ্ধ এবার বলে ওঠে ভুলটা তোমার নয় ভুল করেছি আমি ।
সেদিন যদি আমি তোমাকে একা না ছাড়তাম….
সারদা দেবীর এবার বুঝতে বাকি রইলো না তার বস কোন কথা বলতে চলেছেন সারদা দেবী চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে আছে তার মুখে কোন শব্দ নেই।
অনিরুদ্ধ নিজেকে সামলে সারদা দেবী কে বলে সারদা কাল রাতে অনেক ভেবে আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি আর আমার অনুরোধ তুমি আমার এই কথাটা রাখবে।
সারদা দেবী মাথা নেড়ে সম্মতি দেন।
অনিরুদ্ধ বলে ওঠে দ্যাখো যাকিছু হয়ে তার কিছুটা দোষ আমার নিজেও আছে তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি তোমাকে বিয়ে করে সেটার প্রাশ্চ্য়চিত্ত করবো আর তোমার গর্ভর সন্তান কে পৃথিবীর আলো দেখাবো।
সারদা দেবী এবার আর চুপ থাকতে পারলেন না তিনি বলে ওঠেন না না এটা হয় না কোনো মতেই এটা হয় না আর আমি নিজেও জানিনা আমার গর্ভের সন্তানের বাবা কে।
কারণ সেদিন চার চারজন মিলে……..
এই বলে কেঁদে ওঠেন।
অনিরুদ্ধ তাকে শান্তনা দিয়ে বলে এটাই হবে আর আমি হব এই সন্তানের বাবা।
এই বলে সে বেরিয়ে চলে আসে এবং রিতিমত প্রতিদিনের মতো অফিসে বেরিয়ে যায়।
সেদিন সারদা দেবী আর অফিসে আসেননি।
অনেকবার সে সারদা দেবীর খোঁজ নেয় যে সারদা দেবী অফিসে এসেছে কিনা।
অন্যদিকে অফিসের অন্যান্য কর্মীরা তাদের বসের এই রকম আচরণ দেখে একটু অবাক হয় তারা কোন দিন তাদের বসকে এমন ব্যাবহার করতে দ্যাখেনি।
অনিরুদ্ধ সেদিন ঠিক দুপুর দুটো নাগাদ অফিস থেকে বেরিয়ে যায় আজ আর সে ড্রাইভার মিজান কে গাড়ি বের করতে বলেননি সে একাই গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেলেন সারদা দেবীর উদ্দেশ্যে।
গিয়ে দ্যাখেন সারদা দেবী বালিশে মুখ গুঁজে পড়ে আছেন এই অবস্থায় দেখে তিনি খুব ব্যাস্ত হয়ে যায় আর্তস্বরে বলে ওঠে সারদা কি হয়েছে তোমার?
সার হকচকিয়ে উঠে বসে সে তার বস কে এভাবে দ্যাখেনি কখনো।
অনিরুদ্ধ সারদা দেবী কে জড়িয়ে ধরে আর শুধু একটাই কথা বলতে থাকে তুমি ঠিক আছো তো?
এবার সারদা দেবীর আর কিছু বুঝতে বাকি থাকলো না সে কিছুটা লজ্জাও পাচ্ছে কিন্তু সে এবার লজ্জা কাটিয়ে বলে ওঠে হ্যাঁ স্যার আমি ঠিক আছি ।
অনিরুদ্ধ সারদা দেবী কে ছেড়ে দিয়ে বলে আজ থেকে কোন স্যার না আমাকে নাম ধরেই ডাকবে আর আমরা সামনে মাসে বিয়ে করবো।
সারদা দেবী লজ্জায় মাথা নিচু করে বলে ওঠেন কিন্তু….
অনিরুদ্ধ সারদা দেবীকে থামিয়ে থামিয়ে দিয়ে বলে কোন কিন্তু না আর তোমাকে আর অফিসে যেতে হবে না আমি প্রতিদিন দু’বেলা তোমাকে দেখে যাবো প্রয়োজনীয় সামগ্রী এনে দেবো।
সারদা দেবী মাথা নেড়ে সম্মতি দেন।
অনিরুদ্ধ বাড়িতে ফিরে আসে ফ্রেস হয়ে হবে বসেছে তার মা আম্বিকা দেবী তার পাশে এসে বসে এবং তাকে জিজ্ঞেস করে অনি একটা কথা কদিন ধরে জিজ্ঞেস করবো করবো করে করা হচ্ছে না।
অনিরুদ্ধ বলে কি কথা?
বলো…
আম্বিকা দেবী বলে কিছুদিন ধরে তোর ব্যাবহার আমার ঠিক লাগে না কি হয়েছে?
অনিরুদ্ধ উত্তর দেয় না মা তেমন কিছু না আমি তো ঠিক আছি এসব তোমার মনের ভুল।
আম্বিকা দেবী কোন কথা না বলে হবে হয়তো ঠিক আছে তুই রেস্ট কর আমি চা পাঠিয়ে দিচ্ছি।
এভাবেই দেখতে দেখতে কেটে গেল বেশ কিছুদিন কেটে যায় অনিরুদ্ধ সারদা দেবীর যথেষ্ট খেয়াল রাখে সে দুবেলা সারদা দেবী কে দেখতে রায় এবং তার প্রয়োজনীয় সমস্ত ঔষধ ফলমুল ইত্যাদি কিনে দিয়ে আসে।
তারও কদিন পরে তারা একটা দিন দেখে একটা মন্দির থেকে বিয়ে করে নেয়।
বিয়ের পর তারা যথারিতি বাড়িতে আসে অম্বিকা দেবী কিছুটা অবাক হলেও বেশ খুশি হয়েছেন কিন্তু তার বাবা অর্নিশ বাবু মোটেও খুশি হননি।
তার অনেক স্বপ্ন ছিল তার একমাত্র ছেলের অনেক ধূমধাম করে বিয়ে দেবেন শেষে কিনা…
যাইহোক তবুও ব্যাপারটা মেনে নিয়েছে সবাই বেশ ভালোই চলছিলো সব কিছু কিন্তু তার কিছু দিন পরে যখন সবাই জানতে পারে তাদের বৌমা অর্থাৎ সারদা দেবী প্রেগন্যান্ট তখন সবাই একটু বেশ চিন্তিত।
অর্নিশ বাবু এবং অম্বিকা দেবী দুজনেই আলোচনা থাকেন তাহলে কি আমাদের খোকার সঙ্গে সারদার আগেই সম্পর্ক ছিলো? কিছুই বুঝতে পারছেনা তারা।
সবকিছু ঠিকঠাক চলছিলো যখন অনিরুদ্ধ সমস্ত ব্যাপারটা খুলে বলে বাড়িতে তখন সবাই যেন আকাশ থেকে পড়লো।
কিন্তু অম্বিকা দেবী মনে মনে একটু গর্ববোধ করতে লাগলো তার সন্তান মানবিকতার পরিচয় দিয়েছে।
অবশেষে সারদা দেবী একটা ফুটফুটে কন্য সন্তানের জন্ম দেন অনিরুদ্ধও বেশ খুব খুশী সব কিছু ঠিকঠাক ছিলো কিন্তু অনিরুদ্ধর বাবা অর্নিশ বাবু ব্যাপারটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না ।
দেখতে দেখতে অনিরুদ্ধ আর সারদা দেবীর কন‌্যা সন্তান বেশ বড়ো হয়ে উঠছে তারা ভালোবেসে তার নাম রেখেছে অনুষ্কা।
অনুষ্কা অনিরুদ্ধর বেশ আদরের সবাই তাকে খুব ভালো বাসে এতোদিনে তার দাদু অর্নিশ বাবুও ব্যাপারটা মেনে নিয়েছে কিন্তু সবটাই ছিলো লোক দেখানো।
এখন সারদা দেবী আর অফিসে যায়না বাড়ির কাজেই খুব ব্যাস্ত সে তার শাশুড়ি অম্বিকা দেবীকে কোন কাজ করতে দেয় না।
বেশ সুখের সংসার তাদের এখন অনিরুদ্ধ মেয়ের করা ভেবে দ্বিতীয় কোন সন্তান নেয়নি।
অনুষ্কা বেশ বড়ো হয়ে গেছে সে এবার উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করছে ভালো রেজাল্ট করে।
অনিরুদ্ধর ইচ্ছা তাকে ডাক্তারি পড়ানোর।
এরমধ্যে হঠাৎ করেই অনিরুদ্ধ অসুস্থ হয় অনেক পরিক্ষা নিরিক্ষা করে জানা যায় সে একজন ব্লাড ক্যান্সার পেশেন্ট একদম শেষ প্রান্তে এসে পৌঁছেছে অনুষ্কা পড়াশোনার পাশাপাশি তার বাবার খুব খেয়াল রাখে কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না সেদিন ছিলো শনিবার রাতের খাবার শেষ করে যে যার ঘরে ঘুমাতে চলে যায় অনুষ্কা অবশ্য তার ঠাম্মা ও দাদুর সাথে ঘুমাই ।
পরেরদিন সকালে সারদা দেবী ভোরবেলা উঠেছে ঘরের কাজ করতে শুরু করে সমস্ত কাজ শেষ করে সে অর্নিশ বাবু এবং অম্বিকা দেবী কে চা দিয়ে আসে এবং নিজের জন্য ও অনিরুদ্ধ জন্য চা নিয়ে ঘরে যায়।
সারদা দেবী অনিরুদ্ধ কে ডাকতে থাকে সে তাকে ভালোবেসে অনি বলে ডাকতো ।
সে ডাকতে থাকে অনি…
অনি ওঠো চা নিয়ে এসেছি কোন সাড়া শব্দ নেই তাকে গায়ে হাত দিতেই সারদা দেবী দ্যাখে অনিরুদ্ধর শরীর বরফের মতো ঠান্ডা চিৎকার করে ওঠে সারদা দেবী।
সারদার চিৎকার শুনে সবাই ছুটে আসে সারদা দেবী কে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে ?
সারদা দেবী বলে অনির শরীর বরফের মতো ঠান্ডা সবাই দ্যাখে সত্যিই তাই অর্নিশ বাবু ডাক দেয় ড্রাইভার মিজান কে এবং সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তার ডেকে আনার জন্য বলে ।
মিজান একটুও দেরি না করে ডাক্তার ডেকে আনে।
ডাক্তারবাবু অনিরুদ্ধর পালস্ চেক করে মাথা নিচু করে বলে অনেক আগেই অনিরুদ্ধ মারা গেছে সে মিজান কে সাথে নিয়ে গিয়ে death certificate লিখে দেয়।
বাড়িতে কান্নার রোল পড়ে যায় অম্বিকা দেবী এই শোক মেনে নিতে পারেন না তিনিও বাকরুদ্ধ হয়ে যায় এবং ঠিক একমাস পর তারও মৃত্যু হয়।
চৌধুরী পরিবারে যেন কালো ছায়া নেমে এলো।
এদিকে অর্নিশ বাবুর ইলেকট্রনিক্স কম্পানি লসে রান করতে থাকে তাদের কম্পানি নিলাম হয় এককথায় তাদের সর্বস্ব শেষ হয়ে যায়।
সারদা দেবী কোন রকমে টিউশনি করে তাদের পেট চালাই এবং তার মেয়েকে নিয়ে অনিরুদ্ধ যে স্বপ্ন দেখতো যে তাকে ডাক্তার বানানোর সেটাও প্রায় ডুবতে বসেছে।
যেখানে তিনবেলা ঠিকমতো খাবার জোটে না সেখানে কিনা ডাক্তারি পড়ানো?
এদিকে অর্নিশ বাবু মুখে কিছু না বললেও এসবের জন্য সারদা দেবীকেই দায়ী করে রেখেছেন সে মনে মনে সারদা দেবী এবং তার মেয়েকে ঘৃণা করতে শুরু করে কিন্তু তারা একটুও বুঝতে পারে না।
অনুষ্কা নিজেও কিছু টিউশনি করে নিজের পড়াশোনার চালিয়ে যাচ্ছে এরমধ্যে তার একটা ছেলে বন্ধু হয়েছে তার নাম অলোকেশ মিত্র।
অলকেশ অনুষ্কার খুব ভালো বন্ধু ছিলো আস্তে আস্তে তাদের এই বন্ধুত্ব ভালোবাসায় পরিণত হয় তারা একে অপরকে ভালোবাসতে শুরু করে।
অলকেশের ব্যাপারে অনুষ্কা তার মা আম্বিকা দেবীকে জানাই তাদের ভালোবাসা আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে।
কলেজ শেষ করে অলকেশ এবার ডাক্তারি ভর্তি হয়েছে অনুষ্কা খুব খুশী হয়েছে সে একপ্রকার বলেও ফেললো আজ আমার বাবা বেঁচে থাকলে আমিও…..
অনুষ্কা নিজেকে সামলে অলকেশ কে বলে তুমি ডাক্তারি পড়ো তাতেই আমি খুশি।
অনুষ্কা টাকার অভাবে আর পড়াশোনা করতে পারলো না সে সংসারের কাজের ফাঁকে কিছু বাচ্চাকে পড়াই ওদিকে তার মা আম্বিকা দেবীও কিছু বাচ্চাকে পড়াই তাতেই যা অর্থ আসে সেই দিয়ে তাদের তিনজনের পেট চলে।
অলকেশ মাঝে মাঝে অনুষ্কার সাথে দেখা করে এভাবেই চলতে থাকে বেশ কয়েক বছর।
তারপরে হঠাৎ করেই অলকেশ-এর আর কোন খবর পাই না অনুষ্কা সে মন থেকে অনেকটা ভেঙ্গে পড়ে ভাবতে থাকে বিপদের বন্ধু কেউ হয় না অনুষ্কা নিজেকে কিছুটা সামলে নেই এগুলো এখন তার কিছু মনে হয় না কারণ পেট তো আর এসব কথা মানবে না।
অন্যদিকে অলকেশ ডাক্তারি পরিক্ষা দিয়েছে এবং ভালো রেজাল্ট করার সে সরকারি একটা হাসপাতালে চাকরি পেয়েছে কিন্তু সেও ভেতর থেকে ছটফট করতে থাকে কখন কবে তার ভালোবাসার মানুষটির সঙ্গে দেখা করবে।
যেমন ভাবা তেমন কাজ অলকেশ ছুটি পেয়েছে সে চাকরি পাওয়ার কিছু দিন পরে একটা গাড়িও কিনেছে সে সোজা চললো তার দেশের বাড়িতে বাড়িতে ঢুকেই সে চললো তার ভালোবাসার মানুষটির সঙ্গে দেখা করতে।
অনুষ্কা সেদিন বাড়িতেই আছে বাড়ির কাজকর্ম করছে হঠাৎ দ্যাখে একটা লাল রঙের গাড়ি এসে তাদের বাড়ির সামনে দাঁড়াই ।
অনুষ্কা অতোটা কেয়ার না করে আপন মনে নিজের কাজ করে চলেছে এবার অলকেশ গাড়ির থেকে নেমে অনুষ্কার সামানে এসে দাঁড়ায় এবং অনুষ্কা কে জিজ্ঞেস করে কেমন আছো অনুষ্কা?
অনুষ্কা অবাক দৃষ্টিতে অলকেশ কে দেখতে থাকে।
অলকেশ আবারো প্রশ্ন করে কি হলো চিনতে পারছো না আমাকে?
অনুষ্কা কিছু বলতে যাবার আগেই….!
অলকেশ বলে ওঠে কি মনে করেছো আমি তোমাকে ভুলে গেছি?
আসলে তোমাকে বলার সুযোগ হয়নি আমি ডাক্তার হয়ে গেছি তাই শহরে যেতে হয়েছিল আর সুযোগ হচ্ছিল না যে তোমাকে সঙ্গে দেখা করবো।
অনুষ্কা অলকেশ কে ঘরে বসতে দেয় অনেক কথা হয় অলকেশ যাবার আগে অনুষ্কা কে বলে যায় এর পরে যখন আসবে তখন তার মা সারদা দেবীকে তাদের বিয়ের কথাটা বলবে।
এই কথা শুনে অনুষ্কার মুখটা লজ্জায় লাল হয়ে যায়।
অলকেশ বিদায় নেয়।
অনুষ্কা ভাবতে থাকে তার বাবা যদি আজ বেঁচে থাকতো তাহলে সেও হয়তো আজ….
সে নিজেকে সামলে আবার কাজে মন দেয় কারণ আর একটু পরেই দাদাভাই চলে আসবে মানে অনুষ্কা অর্নিশ বাবুকে দাদাভাই বলে ডাকতো।
অনুষ্কা রাতে তার মা সারদা দেবীকে সব খুলে বলে সারদা দেবীও খুব খুশী হয় এসব শুনে আর বলে ওঠে তোর বিয়েটা দিতে পারলে আমরা একটু সস্তি পেতাম মা অনুষ্কা তার মা কে বলে তোমাকে আর দাদাভাই কে ছেড়ে আমি কোথাও যাবো না।
সারদা দেবী পাগলী মেয়ে আমার এবার ঘুমিয়ে পড়ো কাল অনেক সকালে উঠতে হবে আরো দুটো নতুন ছাত্র নিয়েছি তাই খুব চাপ।
এসবের ঠিক একমাস পর অলকেশ আবার এসেছে অনুষ্কাদের বাড়িতে অবশ্য এবার সে একা নয় তার মামাকে নিয়ে এসেছে তাদের বিয়ের কথা বলতে।
অলকেশের মা, বাবা নেই একটা গাড়ি অ্যাকসিডেন্টে দুজনেই মারা যায় তারপর থেকে সে তার মামার কাছেই মানুষ।
তার মামাও অলকেশের কথা ভেবে আর বিয়ে করেননি অলকেশ কেই নিজের সন্তানের মতো মানুষ করে।
অনুষ্কা অলকেশ এবং তার মামাকে বসতে দেয় ঘরে এবং তার দাদাভাই এবং মা সারদা দেবীকে ডেকে দেয়।
অলকেশের সাথে অনুষ্কার বিয়ে ঠিক হয়ে যায় মাঘ মাসের এক তারিখে তাদের বিয়ে তারিখ ফাইনাল।
দীর্ঘ অপেক্ষার পর এলো তাদের বিয়ের দিন দুই বাড়িতেই বেশ খুশির মুহুর্ত।
এদিকে অনুষ্কা সাজানোর জন্য কাউকে না পেয়ে একাই বেরিয়ে পড়ে একটা বিউটি পার্লারে কনে সাজার উদ্দেশ্যে তখন ঘড়িতে ৫টা বাজে তাদের বিয়ের লগ্ন রাত্রির ৮টায়।
রাস্তা খারাপ থাকায় বরের গড়ি মানে অলকেশ ৬টা ৩০এর মধ্যে চলে আসে ।
খুব হৈ হুল্লোর চলছে অলকেশ কে একটা ঘরে বসানো হয়েছে ।
অন‌্যদিকে অর্নিশ বাবু মনের মধ্যে তার সেই রাগটা পুষেই রেখেছে তিনি সুযোগ বুঝে অলকেশ কে সাইডে ডেকে আনে এবং অলকেশ কে পুরনো সমস্ত ঘটনা গুলো জানাই যে অনুষ্কা একজন ধর্ষিতার মেয়ে তার কোন পিতৃ পরিচয় নেই এমনকি তার মা সারদা দেবীও বলতে পারবে না যে অনুষ্কা কার ঔরূষে জন্ম।
অলকেশ এসব শুনে আকাশ থেকে পড়লো তার খুব রাগ হতে লাগলো সে অনুষ্কা কে একটা ফোন করলো হ্যালো…
হ্যালো… তুমি কোথায়?
ফোনের ওপাশ থেকে অনুষ্কা বলে ওঠে আমি পার্লারে আছি কিছুক্ষনের মধ্যেই আসছি।
অর্নিশ বাবু অলকেশ কে বলে তুমি সব জেনেও ওই বেজন্মাটাকে বিয়ে করবে?
অলকেশ কোন উত্তর না দিয়ে ফোনের নাম্বার ডায়াল করে চলেছে ।
আবারো অলকেশ কাউকে ফোন করলো হ্যালো…
হ্যালো শুনতে পাচ্ছো?
ফোনের ওপাশ থেকে উত্তর আসে হ্যাঁ স্যার বলুন।
অলকেশ কোন একজন কে বলছে শোন একটা কাজ করতে হবে।
উত্তর আসে হ্যাঁ স্যার বলুন কি করতে হবে।
অলকেশ বলে তোমরা আগে আমার বাড়িতে যাও আমার চেম্বারে ড্রয়ারে দেখবে একটা শিশি আছে ওটা নিয়ে আমার ফোনের অপেক্ষা করো।
অলকেশ আবারো অনুষ্কা কে ফোন করে এবং তার কাছে জানতে চাই সে কোথায় আছে এবং কোন রাস্তা দিয়ে আসবে ও কিসে করে আসবে।
এবার অর্নিশ বাবু কিছু বুঝতে পারছে না যে অলকেশ কি করতে চলেছে।
অলকেশ আবারো ফোন করে হ্যালো….
ফোনের ওপাশ থেকে আবারো উত্তর আসে হ্যাঁ স্যার বলুন আমরা শিশিটা পেয়ে গেছি এখন কি করতে হবে।
অলকেশ তাদের বলে এবার যেটা বলছি মন দিয়ে শোন।
ওপাশ থেকে উত্তর আসে হ্যাঁ স্যার বলুন শুনছি।
অলকেশ তাদের নির্দেশ দিচ্ছে চৌধুরী পাড়াতে ঢোকার আগে যে ফাঁকা জায়গা আছে ওই রাস্তা ধরে রিক্সা করে অনুষ্কা আসবে আর তারা যেন তার পথ আটকায় এবং তাদের কাছে যে শিশিটা আছে তারা যেন সেই শিশিটা খুলে তার ভেতরে থাকা তরলটা অনুষ্কার মুখে ঢেলে দেয় এবং তাকে গলায় কলসি বেঁধে গঙ্গায় ফেলে দেয়।
ফোনের ওপাশে থাকা দুজন বলে ওঠে কিন্তু স্যার….
অলকেশ তাদের মুখের কথা কেড়ে নিয়ে উত্তেজিত হয়ে বলে ওঠে কোন কথা না যেটা বললাম করো তোমরা উপযুক্ত পারিশ্রমিক পাবে এবং পরে সব জানতে পারবে।
অর্নিশ বাবু বুঝতে আর কিছু বাকি থাকলো না এবার।
তিনি বুঝতে পারলেন অলকেশ কি করতে চলেছে তার বিন্দুমাত্র অনুশোচনা হচ্ছে না বরং তিনি যেন একটু স্বস্তি বোধ করছেন।
তিনি মনে মনে ভাবছেন এতোদিনে তার মনের আশা পূরণ হবে ওই বেজন্মাটার মুখ তাকে আর দেখতে হবে না।
অর্নিশ বাবু মনে করতেন ওই সারদা দেবী তাদের সংসারে আসার পর থেকেই …..
অলকেশ কিছুক্ষণের জন্য চুপ সে মাথায় হাত দিয়ে হবে আছে।
অর্নিশ বাবু তার পাশে দাঁড়িয়ে দুজনেই একদম চুপচাপ।
অনেক্ষণ পর অর্নিশ বাবু অলকেশ কে বলে বলে এতো কি ভাবছো দাদুভাই?
অলকেশ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে শুধু একটি কথাই বললো আমার ভাবতেও অবাক লাগছে আমি যাকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করতে যাচ্ছি তার কিনা জন্মের ঠিক নেই?
ওদিকে অনুষ্কা কনের সাজে সজ্জিত হয়ে পার্লার থেকে বেরিয়ে রিক্সাওয়ালা ভাইকে বলে ওঠে ভাই তাড়াতাড়ি চলো অনেক দেরি হয়ে গেছে ওদিকে সবাই অপেক্ষা করছে।
কিছুদুর যেতেই কয়েক জন একটা গাড়ি নিয়ে তাদের পথ আটকায় হঠাৎ একজন গাড়ি থেকে নেমে অনুষ্কার সামানে এসে বলে ম্যাম আপনার দেরি হচ্ছে জন্য অলকেশ স্যার আমাদের পাঠিয়েছেন।
অনুষ্কা বুঝতেও পারলো না যে ওই গাড়িতেই তার মৃত্যু অপেক্ষা করছে।
অনুষ্কা সরল বিশ্বাসে হাসতে হাসতে বললো তোমাদের স্যারও না……
বলেই সে গাড়িতে গিয়ে বসে।
গাড়ি চলছে ওই ফাঁকা জায়গায় যেতেই গাড়িটা থেমে গেল সামনের দিকে যে বসেছিলো সে নেমে গাড়ির পেছনের ডিকিটা খুলে দেয় এবং সেখানে লুকিয়ে থাকা আরো দুজন কে বের করে ।
অনুষ্কা ড্রাইভার কে জিজ্ঞেস করে দাদা কি হয়েছে গাড়িটা থামালেন কেন?
ড্রাইভার একদম চুপ কোন কথা বলছে না।
অনুষ্কা আবারো জিজ্ঞেস করতে যাবার আগেই একজন লোক গাড়ির দরজাটা খুলে বলে ওঠে নামুন।
অনুষ্কা তখনও কিছু বুঝতে পারছে না সে জিজ্ঞেস করলো কেন?
এখানে কেন নামবো?
তাদের দলের একজন জোর করে অনুষ্কা কে গাড়ি থেকে টেনে নামায় অনুষ্কা চিল্লাচিল্লি করতে যাবার আগেই আরো একজন তার মুখটা চেপে ধরে এবং টানতে টানতে পাশের নির্জন জায়গায় নিয়ে যায়।
হঠাৎ ড্রাইভারের ফোনটা বেজে ওঠে সে ফোনটা পকেটে থেকে বের করে আরেকজন জিজ্ঞেস করে কার ফোন ড্রাইভার বলে বসের ফোন বলেই সে ফোনটা রিসিভ করে।
ফোনের ওপাশ থেকে কেউ একজন বলে ওঠে কিরে কাজটা হয়েছে?
ড্রাইভার বলে ওঠে স্যার আর পাঁচ মিনিটের মধ্যে হয়ে যাবে বলেই সে ফোনটা রেখে দেয়।
অনুষ্কা গলাটা পরিস্কার শুনতে পাই তার যেন গল্পটা খুব চেনা চেনা লাগছে কিন্তু অনুষ্কা বুঝতে পারছে না।
বিয়ে বাড়িতে খুব ধুমধাম চলছে অনুষ্কার মা সারদা দেবী খুব ব্যাস্ত কিন্তু তিনি মেয়ের এতো দেরি দেখে খুব চিন্তিত।
সে তার শশুর মশাই অর্নিশ বাবুকে ডেকে বলেন বাবা আপনার নাতনি তো এখনো এলো না,
এইকথা শুনে অর্নিশ বাবু এমন একটা ভাব করলেন যেন তিনি কিছুই জানেন না তিনি সারদা দেবীর উপর রাগ দেখিয়ে বললো মেয়েটা কখন গিয়েছে এখনো আসেনি তাকে কেন জানানো হয় নি।
এই কথা বলেই অর্নিশ বাবু হন্তদন্ত হয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় অনুষ্কা কে খোঁজার উদ্দেশ্যে কিন্তু সে কিছুটা দূরে গিয়ে বসে থাকে।
ওদিকে অনুষ্কা কে ততক্ষণে মুখের মধ্যে ওই তরলটা ঢেলে দিয়েছে ।
অনুষ্কা বুঝতে পারলো তাকে বিষ খায়ানো হলো সে মুখ থেকে ফেলে দেয়।
এবার আবারো ফোনটা বেজে উঠলো ড্রাইভার ফোনটা রিসিভ করে হ্যালো…
ফোনের অপর প্রান্ত থেকে কাজটা হয়েছে ।
হ্যাঁ স্যার কিন্তু মেয়েটা বিষটা মুখ থেকে ফেলে দিয়েছে ।
ফোনের ওপাশ থেকে উত্তর আসে অসুবিধা নেই এটা খুব মারাত্মক একটা বিষ এক ফোঁটাই যথেষ্ট বলে ফোনটা রেখে দেয়।
অনুষ্কা তখনও চোখ খুলে আছে সে তাদের সমস্ত কথোপকোথন শুনতে পাচ্ছে ফোনের ওপাশ থেকে যে আওয়াজটা আসছে তার খুব চেনা কিন্তু সে কিছুতেই বুঝতে পারছে না।
সে কিছুতেই বুঝতে পারছে না কে তার এতো বড়ো সর্বনাশ করলো।
সে বুঝতে পারছে না কে তাকে এতোটা ঘৃণা করে যে তাকে পৃথিবীর বুক থেকে সরিয়ে দিতে চাই।
অনুষ্কার খুব কষ্ট হচ্ছে তার চোখ বন্ধ হয়ে আসছে হাত পা অবশ হয়ে আসছে এবার, কিন্তু সে নিজেও জানে সে একবার চোখ বন্ধ করলেই…..
ওই চার অনুষ্কাকে ঘাড়ে করে নিয়ে গিয়ে গঙ্গার জলে ফেলে দেয় কিন্তু তারা বুঝতেও পারে না অনুষ্কা তখনো বেঁচে আছে।
অনুষ্কা তখনও চোখ মেলে তাকিয়ে আছে সে ভাবছে একজন মানুষ কতটা নিষ্ঠুর হতে পারে তার খুব জানতে ইচ্ছে করে কে তার এতো বড়ো সর্বনাশ করলো এসব ভাবতে ভাবতেই সে আস্তে আস্তে তলিয়ে যায় গভীর জলে।
ওই চার জন তাদের বসকে ফোন করে বিয়ে বাড়িতে অলকেশ সবার মধ্যে বসে ফোনটা রিসিভ করে শুধু একটা কথাই আসে ফোনের ওপাশ থেকে স্যার কাজটা হয়ে গেছে অলকেশ ফোনটা রেখে দেয়।
সারদা দেবী খুব ব্যাস্ত হয়ে পড়ে কারণ পুরোহিত মশাই বারবার তাড়া দিচ্ছেন তিনি শুধু বলছেন কনে কে নিয়ে আসুন কারণ বিয়ের শুভ কৃষ্ণ আর বেশি সময় নেই ।
সারদা দেবী কোন কথা না বলে প্রতিবেশী যারা ছিলেন তাদের ঘটনাটা খুলে বলে সবাই অনুষ্কা কে খুঁজতে লাগে কিন্তু কোথাও তাকে খুঁজে পাওয়া যায় না ।
এভাবেই কয়েক ঘন্টা কেটে যায় রাত্রি তখন ১০টা বিয়েবাড়ি ফাঁকা হতে শুরু করেছে বর বেশে অলকেশ চুপচাপ বসে আছে যেন সে কিছুই জানে না সে বারবার কাউকে ফোন করছে কিন্তু ফোনটা সে রিসিভ করছে না।
কিছুসময় পর সারদা দেবী অলকেশ কে জানাই বাবা অনুষ্কা কে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না ।
অলকেশ জানাই সেও বারবার তাকে ফোন করে কিন্তু তার ফোন সুইচ অফ আসছে তখন সবাই বুঝতে পারলো অলকেশ তারমানে এতোক্ষণ ধরে অনুষ্কা-কেই ফোন করে চলেছে লোক দেখানোর জন্য।
ততক্ষণে বিয়েবাড়ি ফাঁকা হয়ে গেছে পুরোপুরি বাড়ি ফিরে গেলেন অনুষ্কা যাকে দাদাভাই বলে ডাকতো সেই অর্নিশ বাবু এক কোণে মণ খারাপ করে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে।
অলকেশ ও তার আত্মীয় স্বজন তাদের বিদায় জানিয়ে ফিরে যায় ।
সারদা দেবী জানতেও পারলো না তার শশুর মশাই ও তার হবু জামাই অনুষ্কা কে ….
পরেরদিন সকাল হলো প্রতিবেশী কয়েকজন ও সারদা দেবী এবং তার শশুর মশাই অর্নিশ বাবু চললেন থানায় একটা নিখোঁজ ডায়রি করা হয়।
অর্নিশ বাবু সব জেনেও এখনো এমন ভাব করছেন যেন তিনি কিছুই জানেন না।
সারদা দেবী শুধু কান্নাকাটি করতে থাকেন ঠিক মতো খায়না আসলে অনুষ্কা ছিলো সারদা দেবীর চোখের মনি কারণ অনিরুদ্ধ মারা যাওয়ার আগে সারদা দেবীকে বলে গিয়েছিলেন তিনি যেন তার মেয়েকে কখনোই অবহেলা অযত্ন না করে।
ওদিকে পুলিশ তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে ইতিমধ্যে তিনদিন হয়ে গেছে এখনো অনুষ্কার কোন খোঁজ খবর পাওয়া যায়নি সারদা দেবীও প্রতিদিন একবার থানায় যায় অনুষ্কার কোন খোঁজ পেয়েছে কিনা সেটা জানার জন্য।
তিনি কেমন যেন একটা পাগলের মত হয়ে পড়েন ঠিক মতো খাবার খান না টিউশনিও করেন না।
ওদিকে অলকেশ প্রমোশন পেয়ে শিলিগুড়ি হাসপাতালে কর্মরত প্রথম কয়েকদিন সে সারদা দেবীর কাছে আসতেন খোঁজ খবর নিতে আস্তে আস্তে সবকিছু সময়ের সাথে হারিয়ে যায়।
এভাবেই কাটে দীর্ঘ আট টা বছর অনুষ্কার কোন খোঁজ পায়নি পুলিশ।
আর চৌধুরী পরিবারের সারদা দেবী সে একই রকম ভাবে টিউশানি করে সংসার চালাচ্ছেন অর্নিশ বাবু এখন আর ঘুরে বেড়ায় না সে একদা মুদির দোকান দিয়েছে বাজারে এখন বেশ ভালোই আছে তারা কিন্তু সারাদা দেবী একটা দিন নেই যে চোখের জল ফেলে না।
তিনি কেমন যেন একটা হয়ে গেলেন ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করেন না নিজেই বিড়বিড় করে সবসময় কিছু বলে এমন আরকি।
অলকেশ শিলিগুড়ি হাসপাতালে বেশ ভালোই আছে সেখানে সে একটা বাড়ি কিনেছে সেই বাড়িতে সে একাই থাকে।
অলকেশ আবারো প্রেমের সম্পর্কে জড়ায় অবশ্য এবার সে যাকে ভালোবাসে সে তার হাসপাতালেই কর্মরত তার নাম তৃষা।
তৃষার বাড়ি কোলকাতা সে কর্মসূত্রে শিলিগুড়িতে একটা বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকে তার বাবা আর্মিতে ছিলেন তবে এখন রিটায়ার্ড করেছেন।
অলকেশ আর তৃষা দীর্ঘ ছয়মাস প্রেমের পরে তাদের বিয়ে ঠিক হয়।
তৃষা এবং অলকেশের সম্পর্কটা মেনে নেন তৃষার বাড়ির সবাই দেখতে দেখতে তাদের বিয়েও হয়ে যায়।
অলকেশ তৃষা কে খুব ভালোবাসতো বলা যেতেই পারে একে অপরের একদম পরিপূরক।
এভাবেই কাটে যায় আরো কয়েকটা মাস তৃষা এবং অলকেশ বেশ সুখেই আছে।
সেদিন ছিলো শনিবার তৃষার রাতে ডিউটি পড়েছে হাসপাতালে সে যথারীতি সন্ধার মধ্যে ঘরের সমস্ত কাজ গুছিয়ে রাতের খাবার বানিয়ে নিজের টিফিন নিয়ে বেরিয়ে যায় ডিউটির উদ্দেশ্যে।
অলকেশ টিভিতে খবর দেখছে যাবার সময় সে অলকেশ কে বলে যায় ফ্রিজে খাবার রাখা থাকলো সে যেন সময় মতো খেয়ে নেয়।
অলকেশ ঘাড় নেড়ে তৃষা কে বলে সাবধানে যেও আর সময় মতো তুমিও খেয়ে নিও।
তৃষা ডিউটি করছে রাত তখন ১০টা হবে একটা গাড়ি এসে দাঁড়ায় হাসপাতালের ইমারজেন্সী বিভাগের সামনে কয়েকজন লোক একটা মেয়েকে নামিয়ে ট্রেচারে করে নিয়ে এলো তৃষার কেবিনের সামনে।
তাদের দলের একজন তৃষার সামনে এসে…
ম্যাম একটু দেখুন না মনে হয় অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে রাস্তার ধারে পড়েছিলো আমরা দেখে তুলে নিয়ে এলাম।
তৃষা হন্তদন্ত হয়ে হ্যাঁ চলুন বলেই বেরিয়ে আসে এবং মেয়েটিকে চেকআপ করতে থাকে।
ছেলেগুলো তৃষা কে জানাই ম্যাম আমরা অনেকটা দূরে যাবো আমরা কি যেতে পারি?
তৃষা তাদের বলে হ্যাঁ ঠিক আছে আপনারা যান তবে খুব ভালো একটা কাজ করেছেন অসংখ্য ধন্যবাদ বলেই নার্স দের নির্দেশ দেয় মেয়েটি কে অপারেশন রুমে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
চিকিৎসা চালিয়ে গেলেও মেয়েটিকে বাঁচানো গেলো না সাদা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা হলো পরেরদিন সন্ধ্যায় পোস্টমর্টেম করে তবেই মর্গে পাঠানো হবে।
পরেরদিন ভোরে একটা নার্স ছুটতে ছুটতে এলো তৃষার কেবিনে রিতিমত সে ভয় পেয়েছে তৃষার টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে সে হাঁফাচ্ছে।
তৃষা তাকে জিজ্ঞেস করে আরে আস্তে আস্তে কি হয়েছে তুমি এভাবে ছুটতে ছুটতে আসছো কেন?
নার্স তার ম্যাম তৃষা কে বলে ম্যাম কাল যে মেয়েটিকে আপনি মৃত ঘোষণা করলেন …
তৃষা তার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে হ্যাঁ কি হয়েছে তার?
নার্স বলে ওঠে ম্যাম মেয়েটির মাসিক হচ্ছে।
তৃষা বলে ওঠে কি বলছো তুমি এসব?
মাথা ঠিক আছে তোমার?
মরা মানুষের মাসিক কি কিরে হয়?
নার্স বলে হ্যা ম্যাম আমি নিজের চোখে দেখেছি বিশ্বাস না হলে আপনি চলুন।
তৃষা নার্সকে সঙ্গে নিয়ে গিয়ে দ্যাখে যে হ্যাঁ সে ঠিক বলছে।
তৃষা অবাক হলো কারণ ডাক্তারি science এ এমন ঘটনা সে কোনদিন দ্যাখেনি।
তৃষা অনেক পরিক্ষা নিরিক্ষা করে দ্যাখে না মেয়েটি মৃত সে ভাবতে থাকে হয়তো রক্ত জমা হয়ে ছিল তাই হয়তো…
বেলা বাড়তে লাগলো অলকেশ তৃষা কে ফোন করতে শুরু করে কারণ তার ডিউটি অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে কিন্তু তৃষা এখনো বাড়ি ফেরেনি।
অনেকবার তৃষা কে ফোন করার পর তৃষা ফোন ধরে এবং সমস্ত ঘটনা খুলে বলে অলকেশ গায়নো ডাক্তার সেও কিছুটা অবাক হয় এবং ছুটতে ছুটতে হাসপাতালে চলে আসে এবং ব্যাপারটা লক্ষ্য করে।
দুজনেই হাসপাতালে ব্যাপারটা দেখতেই হচ্ছে তৃষা বলে ওঠে পোস্টমর্টেম রিপোর্ট দেখলে সব পরিষ্কার হয়ে যাবে।
তৃষা আর বড়িতে না গিয়ে হাসপাতালেই রেস্ট নিয়ে নেয়।
বেলা তখন ১২টা মেয়েটির পোস্টমর্টেম শুরু হয়েছে তৃষা এবং অলকেশ দুজনেই দাঁড়িয়ে দেখছে।
মেয়েটির মুখের উপর থেকে কাপড়টা সরাতেই অলকেশ হতবাক হয়ে গেল সে বলে উঠলো এতো….
তৃষা তাকে জিজ্ঞেস করে অলকেশ তুমি চেনো মেয়েটিকে?
অলকেশ বলে ওঠে না না আমি কি করে চিনবো?
অলকেশ মেয়েটিকে চিনতে পেরেছে কারণ সেই মেয়েটি আর কেউ না আজ থেকে দশবছর আগে যার সঙ্গে অলকেশের বিয়ে হবার কথা ছিল অনুষ্কা এটা তার লাশ।
অলকেশ ভাবতে থাকে কি কিরে সম্ভব সে তো অনুষ্কা কে দশ বছর আগে লোক দিয়ে মেরে ফেলেছে।
সে আরো ভাবতে থাকে মানুষের মতো মানুষ হতে পারে তাই বলে এতোটা মিল?
শুরু হয় পোস্টমর্টেম তৃষা অলকেশ দাঁড়িয়ে মনযোগ দিয়ে দেখছে কিছুক্ষণ পরে যে ডাক্তার বাবু পোস্টমর্টেম করছে সে হঠাৎ বলে ওঠে স্যার ম্যাম এদিকে আসুন তৃষা অলকেশ এগিয়ে যায় বলে কি হয়েছে আপনি এমন কেন করছেন?
ডাক্তারবাবু বলেন দেখুন লাশের রক্ত এখনো গরম ।
তারা অবাক হয়ে যায় এটা কি হচ্ছে তারা বলেন আপনি আপনার কাজ করুন আমরা আছি তো।
ডাক্তরবাবু আরো কিছুক্ষন পরে চিৎকার করে ওঠে স্যার ম্যাম আমি পোস্টমর্টেম করতে পারবো না ।
তৃষা অলকেশ উদ্বেগের স্বরে বলল আবার কি হলো?
আপনি এতো ভয় পাচ্ছেন কেন?
ডাক্তারবাবু বলেন দেখুন লাশের পেটের ভেতরে বিষের শিশি ।
তৃষা অলকেশ বলে এতে এতো টেনশন করার কি আছে হয়তো সে বিষ সহ শিশিটা মুখে খেয়ে নিয়েছে।
ডাক্তারবাবু বলেন অবশ্যই হতে পারে কিন্তু যে শিশিটা পাওয়া গেছে এবং যে বিষ তাতে রয়েছে সেটা আমাদের মেডিক্যাল ল্যাবে ব্যাবহার করা হয়।
অলকেশ অনেকটা ঘাবড়ে যায় সে এবার বলতে থাকে এটা হতে পারে না কখনোই হতে পারে না বলে সে বেরিয়ে যায়।
ডাক্তারবাবু পোস্টমর্টেম রিপোর্ট দেন বিষক্রিয়ার কারনে মেয়েটির মৃত্যু হয়।
তৃষা গভীর ভাবে একটা জিনিষ দেখতে থাকে মেয়েটা ততক্ষণে তাকিয়ে আছে মনে হচ্ছে সে যেন কিছু বলতে চাই ডাঃ তৃষা কে।
দুজনেই বেরিয়ে যায় তৃষা খুব ক্লান্ত কারণ আগের দিন সে সারারাত ডিউটি করছে সে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
মেয়েটির কাটা ছেঁড়া লাশটি পড়ে থাকে লাশকাটা ঘরেই।
অলকেশ ডিউটি করে বাড়ি ফিরেছে এবং সে এখনো ভাবছে কিন্তু সে কাউকে কিছু বলতে পারছে না ।
পরেরদিন তৃষা ইমারজেন্সী বিভাগে ডিউটি করছে হঠাৎ সে একটা চিৎকার এবং কথাকাটাকাটির আওয়াজ পায় সে ভ্রক্ষেপ না করে রুগি দেখে চলেছে।
হঠাৎ করে সেই কথাকাটাকাটি বাড়তে থাকে তৃষা হাসপাতালের সিকিউরিটি গার্ডকে ডেকে জানতে চাই কি হয়েছে ?
এতো চিৎকার কেন?
গার্ড জানাই একজন ভদ্রমহিলা লাইন ছাড়া ভেতরে ঢোকার জন্য চিৎকার চেচামেচি করছে।
তৃষার জানতে চাই সে কেন এমন করছে ?
গার্ড জানাই ম্যাম সে বলছে তার ব্যাপারটা খুব জরুরী।
তৃষা গার্ডকে জানাই ঠিক আছে ওনাকে আসতে দাও হতেপারে ওনার ব্যাপারটা সিরিয়াস।
গার্ড ঘাড় নেড়ে বাইরে বেরিয়ে মেয়েটিকে বলে আপনি ভেতরে যান।
মেয়েটি ভেতরে ঢোকে তৃষার কেবিনের সামনে এসে দাঁড়ায় তৃষা মেয়েটিকে বসতে বলে এবং মেয়েটিও বসে।
তৃষা মেয়েটির কাছে জানতে চাই বলুন কি সমস্যা আপনার?
মেয়েটির মুখ ঢাকা সে চুপচাপ বসে আছে।
তৃষা আবারো তাকে বলে আপনার মুখ থেকে কাপড়টা সরান আর বলুন কি হয়েছে আপনার।
মেয়েটি তখনো চুপচাপ বসে আছে কোন কথাই বলছেনা ।
তৃষা আবারো তাকে বলে কিহলো বলুন দেখুন বাইরে অনেক লোক দাঁড়িয়ে আছে আপনি এভাবে সময় নষ্ট করবেন না।
মেয়েটি তখন বলে ওঠে আমার মাসিক হচ্ছে তিন চারদিন ধরে সবসময় ব্লিডিং হয়েই যাচ্ছে।
তৃষা ঔষধ প্রেসক্রাইব করে তার মুখের দিকে তাকিয়ে হতবাক।
তৃষা কাঁপা কাঁপা গলায় বলে ওঠে আআআপনি এখানে?
মেয়েটি বলে কেন ম্যাম?
আপনি কি আমাকে চেনেন?
তৃষা বলেনা ঠিক আছে হয়তো আমারি ভুল।
মেয়েটি বেরিয়ে যায় তৃষা অবাক চোখে তাকিয়ে দেখতে থাকে আর ভাবছে সে কি দেখলো এটা?
এটা কি করে সম্ভব?
যাকে কাল পোস্টমর্টেম করতে দেখেছে নিজের চোখে আজ সে …..
তৃষা তাড়াতাড়ি তার কেবিন ছেড়ে ছুটে চলেছে লাশকাটা ঘরের দিকে সে দেখতে যাচ্ছে মেয়েটির কাটা ছেঁড়া লাশ ওখানে আছে কিনা।
তৃষা আস্তে আস্তে ঢুকলো চারিদিকে অন্ধকার একটা লাইট জ্বলছে লাশকাটা ঘরে তৃষা ওদিকে তাকাতেই আবার চমকে উঠলো সে দেখছে টেবিলে মেয়েটির কাটা ছেঁড়া লাশটি নেই ।
সে বুঝতে পারছে না কি হচ্ছে তার সঙ্গে এটা সে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না।
সে ওখান থেকে বেরিয়ে নিজের ডিউটি শেষ করে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয় সে এখনো ওগুলোই ভাবছে।
সবকিছু ঠিকঠাক ছিলো আরো অবাক হলো সে বাড়িতে পৌঁছে।
তৃষা বাড়িতে পৌঁছে বেল বাজাতে থাকে কেউ গেট খুললো না তৃষা বুঝতে পারে অলকেশ বেরিয়েছে বাইরে অবশ্য এটা নতুন কিছু নয় সে প্রতিদিন এইসময় বাইরে যায়।
তৃষা গেটটা খুলে ভেতরে ঢোকে ঘরের লাইট জ্বালাতেই সে দ্যাখে কিছু একটা পড়ে আছে ঘরের মেঝেতে।
তখনো সব ঠিক ছিলো অবাক হলো কাগজটা তুলতেই।
সে তাকিয়ে দ্যাখে সেটা একটা ছবি সেই ছবির দিকে তাকিয়ে সে অবাক এতো সেই মেয়েটার ছবি যাকে গতরাতে পোস্টমর্টেম করা হয়েছে এবং যাকে আজ সে নিজের চোখে দেখেছে।
সে ভাবতে থাকে কি হচ্ছে তার সঙ্গে এসব আর তার ছবি তাদের বাড়িতে কি করে এলো?
এবার ব্যাপারটা তৃষা কে চিন্তাতে ফেলে দেয় এবার তৃষা সিদ্ধান্ত নেই তাকে এই রহস্যের উৎঘাটন করতেই হবে।
ইতিমধ্যে অলকেশ এসে পৌঁছেছে তৃষা আজকের ঘটনা অলকেশ কে কিছু জানাই না সে যথারীতি রাতের খাবার শেষ করে।
অলকেশ জিজ্ঞেস করে ওই লাশটির কি হলো?
কোন খোঁজ হয়েছে?
তৃষা কিছুক্ষণ চুপ থেকে উত্তর দেয় না।
পরেরদিন দুজনেই একসাথে হাসপাতালে ডিউটি করতে বেরিয়ে যায় তৃষা দ্যাখে অলকেশ লাশকাটা ঘরের দিকে যাচ্ছে ব্যাপারটা তৃষা কে ভাবাই ।
তৃষা ভাবতে থাকে অলকেশের ইদানিং ব্যাবহারটা কেমন যেন লাগছে তার উপরে কাল ওই মেয়েটি সম্পর্কে জানতে চাওয়া সেটা হয়তো ঠিক ছিলো কিন্তু আজ হাসপাতালে ঢুকে লাশকাটা ঘরের দিকে যাওয়ার ব্যাপারটা তৃষা কে বেশ চিন্তিত করেছে।
তৃষা ভাবতে থাকে তাহলে অলকেশ কি মেয়েটিকে আগে থেকেই চিনতো?
সে যেন কিছুতেই হিসাবে মেলাতে পারছে না তৃষা সন্দেহ করতে থাকে অলকেশ কে আবার এটাও ভাবছে সেটা কি করে সম্ভব।
দুজনেই ডিউটি শেষ করে বাড়ি ফেরে রাতের ডিনার শেষ করে দুজনেই বেডরুমে।
অলকেশ ঘুমিয়ে পড়ার পরে তৃষা উঠে অলকেশের যেখানে পুরোনো জিনিসপত্র থাকতো সেখানে খুঁজতে থাকে।
কি খুঁজছে সে নিজেও জানে না অনেক খোঁজাখুঁজির পরে সেখানে সে একটা পুরোনো খাম খুঁজে পাই সেখানে একটা ঠিকানা লেখা আছে সেই খাম খুলতেই সে আরো হতবাক হয়ে পড়ে খামের ভেতরে সেই মেয়েটির কিছু ছবি এবং একটা চিঠি ।
সে চিঠিটা খুলে পড়ে চিঠিটা অলকেশ কে লেখা সেখানে তৃষা ওই মেয়েটির নাম জানতে পারে অনুষ্কা।
সে চিঠিটা এবং খামের ঠিকানাটা নিজের কাছে রেখে দেয় সে তখনো বিশ্বাস করতে পারছে না তবে তৃষা এখন অলকেশ কে সন্দেহের চোখে দেখছে কিন্তু সে অলকেশ কে কিছু বুঝতে দিলো না।
পরের দিন তৃষা হাসপাতালে গিয়ে আগে লাশকাটা ঘরে ঢোকে এবার লাশটাকে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে সে দ‌্যাখে এতোদিন ঠান্ডা ঘরে থাকার ফলে লাশটার কোন পরিবর্তন নেই মনেই হচ্ছে না যে ওটা মৃত মানুষ।
এভাবেই সপ্তাহ কেটে যায় এলো রবিবার সেদিন তৃষা অলকেশ কে বলে আমার কিছু জরুরী কাজ আছে আমি একটু শহরের বাইরে যাচ্ছি বলেই সে বেরিয়ে পড়ে খামের উপর লেখা ঠিকানার উদ্দেশ্যে।
অনেক্ষণ গাড়ি চালিয়ে তৃষা মুর্শিদাবাদে এসে পৌঁছেছে কিন্তু এতো বছর আগের ঘটনা কেউকি কিছু বলতে পারবে?
তৃষা ইতিমধ্যে অনেকের কাছে জিজ্ঞেস করেছে কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারছে না সেও হাল ছাড়ার পাত্রী নয় অনেকক্ষণ পরে একজন ভদ্রলোক কে তৃষা ওই ঠিকানা দেখায় তার কাছে জানতে চাই সে অনুষ্কা চৌধুরী নামে কাউকে চেনেন কিনা ।
ভদ্রলোক অনেক ভেবে চিন্তে উত্তর দেয় এই নামে সে কাউকে চেনেন না।
তিনি হাত দিয়ে দেখায় তৃষা কে দেখান এবং বলে ওই যে বাড়িটা দেখছো ওটা চৌধুরী বাড়ি ওখানে জিঞ্জেস করতে পারো হতে পারে ওনাদের কোন আত্মীয়।
তৃষা ভদ্রলোক কে ধন্যবাদ জানিয়ে ওই বাড়ির দিকে এগিয়ে যায় বাড়ির অবস্থা খুব খারাপ বলা যায় ভগ্নপ্রায়।
তৃষা দরজাতে কড়া নাড়ে অনেকবার কড়া নেড়ে একজন বয়স্ক ভদ্রলোক দরজা খোলেন।
তিনি তৃষা কে জিজ্ঞেস করে কাকে চাই মা?
তৃষা বলে ভেতরে আসতে পারি ?
বৃদ্ধ তৃষা কে ভেতরে নিয়ে আসেন তৃষা তাকে জিজ্ঞেস করে আপনি অনুষ্কা নামে কাউকে চেনেন?
অনুষ্কা নামটা শুনেই বৃদ্ধ চোখ বড়ো বড়ো করে ফেললেন তিনি নিজেকে সামলে নিয়ে বলেন অনুষ্কা আমার নাতনি আজ থেকে বেশ কয়েক বছর আগে তার মৃত্যু হয়।
অন্যদিকে থেকে অনুষ্কার মা সারদা দেবী অনুষ্কা নামটা শুনেই ছুটে আসে।
তৃষা অনুষ্কার দাদাভাই অর্নিশ বাবুকে জিজ্ঞেস করে আচ্ছা কাকাবাবু অনুষ্কা কিভাবে মারা গেছে?
সারদা দেবী ততক্ষণে বলতে লাগলেন সে অনেক কথা মা বলেই সমস্ত ঘটনা খুলে বলে।
বলেই সে বলে ওঠে রাতটা ছিলো অভিশপ্ত রাত চৌধুরী পরিবারের জন্য।
অর্নিশ বাবু এককোনে বসে বলতে থাকে আমাদের সোনার সংসারটা একেবারে নষ্ট হয়ে গেল।
তৃষা আবারো জানতে চাইলো আচ্ছা ওর কোথায় বিয়ে হচ্ছিল?
সারদা দেবী এবং অর্নিশ বাবু ততক্ষণে তৃষা কে বললেন আচ্ছা তুমি অনুষ্কার ব্যাপারে এতো কিছু কেন জানতে চাইছো?
তুমি কি অনুষ্কার বান্ধবী?
তৃষা বলে ওঠে না আমি ওর বান্ধবী না আসলে…
বলেই সে চুপ করে যায় সে বুঝতে পারছে না কথাগুলো কিভাবে বলবে তাদের ।
সারদা দেবী বলে ওঠে কি আসলে ?
তৃষা বলে ওঠে আসলে মাসীমা আপনারা আমাকে ভুল বুঝবেন না আমি অনুষ্কা কে দেখেছি ।
অর্নিশ বাবু এবার খেপে যায় তিনি বলেন আমার দিদিভাই প্রায় দশ বছর আগে মারা গেছে আর আপনি আমাদের সঙ্গে ঠাট্টা করছেন?
আপনার কি একটুও বিবেককে বাধা দিলো না?
তৃষা তাদের কাছে হাতজোড় করে বলে আমি ঠাট্টা করছি না বিশ্বাস করুন।
তার আগে বলুন অনুষ্কার কোথায় বিয়ে হচ্ছিল?
কি করে ছেলে?
অর্নিশ বাবু বলে ছেলে ডাক্তার তার নাম ছিলো অলকেশ।
তৃষা যে ভয়টা পাচ্ছিল সেটাই হলো সে ততক্ষণে মাথা ঘুরে পড়ে যায় ।
সারদা দেবী তৃষার চোখে মুখে জল ছিটিয়ে সুস্থ করে অর্নিশ বাবু বলেন তুমি ঠিক আছো তো?
তৃষা বলে হ্যাঁ হঠাৎ করে মাথাটা ঘুরে গিয়েছিল।
অর্নিশ বাবু বলে ওঠে এবারে বলুন আমাদের মেয়েকে আপনি কোথায় দেখেছেন?
তৃষা তখন বলে আপনারা শান্ত হয়ে বসুন আমি সব বলবো বলেই সমস্ত ঘটনা খুলে বলে তারা কিছুতেই বিশ্বাস করে না।
আর বিশ্বাস করার কথাও নয় কারন দীর্ঘ কয়েক বছর আগে সত্যিই তো তৃষা মারা গেছে।
সারদা দেবী ও অর্নিশ বাবু দুজনেই একদম চুপচাপ তারা এখনো তৃষার কথা বিশ্বাস করতে পারছে না।
তৃষা এবারে বলে ওঠে আপনারা চলুন আমার সঙ্গে ওর লাশ আমাদের লাশকাটা ঘরে এখনো আছে প্লিজ চলুন আমার সঙ্গে গাড়ি আছে আপনাদের কোন অসুবিধা হবে না।
অনেক্ষণ অনুরোধ করার পরে তারা রাজি হয় সেই রাতে তাড়া রওনা দেয় শিলিগুড়ির উদ্দেশ্যে।
তৃষা তার ফোন বন্ধ করে রেখেছে নাহলে এতোক্ষণে ফোন করে তৃষার মাথা খারাপ করে দিতো।
ভোর ৩টের সময় তৃষা এবং অনুষ্কার মা এবং দাদাভাই অর্নিশ বাবু শিলিগুড়ি হাসপাতালে এসে পৌঁছেছে তৃষা তাদেরকে লাশকাটা ঘরের দিকে নিয়ে যাচ্ছে সেখানে ঢুকেই সারদা দেবী বলে ওঠে এ তুমি আমাদের কোথায় নিয়ে এলে?
তৃষা বলে ওঠে একটু অপেক্ষা করুন আমি আপনাদের সঙ্গে আছি তো কোন ভয় নেই আপনাদের।
এবার তৃষা অনুষ্কার লাশ বের করে আনে সেটা দেখে সারদা দেবী চিৎকার করে ওঠে।
তৃষা সারদা দেবী কে বোঝায় মাসীমা একটু সামলান নিজেকে আমি অনেক রিস্ক নিয়ে আপনাদের এখানে নিয়ে এসেছি।
অবাক করা ঘটনা হলো যে অনুষ্কা কে পোস্টমর্টেম করা হয়েছিলো কিন্তু তার শরীরে বিন্দুমাত্র চিহ্ন পর্যন্ত নেই কাটা ছেঁড়ার।
অনুষ্কার লাশ দেখে যেন মনে হচ্ছে সে ঘুমাচ্ছে তারা ওখান থেকে বেরিয়ে যায় তৃষা এবারে তার ফোন সুইচ অন করে সঙ্গে সঙ্গে অলকেশের ফোন।
তৃষা ফোন রিসিভ করে হ্যালো…
অপর প্রান্ত থেকে অলকেশ কি ব্যাপার তোমার ফোন কেন বন্ধ ছিলো?
আর সারারাত ধরে তুমি কোথায় ছিলে?
তৃষার যেন ইচ্ছে করছে না অলকেশের সাথে কথা বলতে সে একটা কথায় উত্তর দেয় যে একটা জরুরী কাজে সে একটু শহরের বাইরে গিয়েছিলো।
অলকেশ তাকে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে আসতে বলে ফোন রেখে দেয়।
তৃষা সারদা দেবী এবং অর্নিশ বাবুকে বিদায় জানিয়ে ফিরে আসে বাড়িতে সে খুব ক্লান্ত রাতে সেইভাবে খাওয়াও হয়নি।
তৃষা দ্যাখে অলকেশ ল্যাপটপ নিয়ে কিছু একটা করছে তাকে দেখেই সে কাজটা বন্ধ করে দেয় ।
তৃষা তখনো ভাবতে পারছে না যে অলকেশ কে সে এতো ভালোবাসে সে কিনা….
অলকেশ অনুষ্কা কে চিনতো কিন্তু সে তৃষা কে কেন কিছু বললো না ?
কেন সে গোপন করলো এসব ভাবতে ভাবতে তৃষা কখন ঘুমিয়ে পড়েছে সে নিজেই জানে না।
রাত তখন ১০টা অলকেশ নিজের হাতে রান্না করে তৃষা কে বাক দেয় ।
তৃষা যেন খেতেই পারবে না এই রহস্যের সমাধান না হওয়া পর্যন্ত সে অলকেশ কে জানাই তার খিদে নেই সে খেয়েই এসেছে।
কোন রকমে সেই রাতটা পার হলো অলকেশের সকালে ডিউটি আছে ।
তৃষা যথারীতি অন্যদিনের মতো খাবার তৈরি করছে অলকেশ সকালে ডিউটি যাবে কিন্তু তৃষার যেন সেই ভালোবাসা আর দেখা যাচ্ছে না।
তৃষার মাথায় শুধু একটা চিন্তা সে যাকে এতোটা ভালোবাসে সেই অলকেশ তার কাছে অনুষ্কার বিষয়টা গোপন কেন করলো!
তার মাথায় কিছুই যেন কাজ করছে না ।
ইতিমধ্যে অলকেশ খাবার খেয়ে ডিউটি চলে যায় সে নিত্য দিনের মতো এদিকে তৃষা অলকেশের স্টোর রুমে কিছু একটা খুঁজছে কি খুঁজছে সে নিজেও জানে না অনেক খোঁজাখুঁজির পর সে অলকেশ এবং অনুষ্কার কিছু ছবি খুঁজে পাই অন্তরঙ্গ মুহূর্তের বেশ কিছু ছবি এগুলো দেখার পর তৃষার আর বুঝতে কিছু বাকি থাকে না।
এসব করতে করতেই সন্ধ্যা হয়ে আসে এবার অলকেশের বাড়ি ফেরার সময় আর তৃষা ডিউটি যাবে।
অলকেশ অন্যদিনের মতো বাড়ি ফিরে আসে আর তৃষা ডিউটিতে বেরিয়ে যায় সে ডিউটি করেছে কিন্তু তার কিছুতেই মন বসছে না।
রাত তখন প্রায় ১১টা তৃষা হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যায় কিন্তু কোথায় যাচ্ছে নিজেও জানে না তৃষা।
গাড়িতে বসে সে কিছুদুর যেতেই সে গাড়ির পেছনে কারো উপস্থিতি বুঝতে পারে সে গাড়িটা দাঁড় করিয়ে পেছনে তাকাতেই তৃষার চক্ষু চড়কগাছ!
এ…কি দেখছে সে?
এতো অনুষ্কা!
কিন্তু অনুষ্কা এখানে কি করে?
তৃষা প্রশ্ন করে তুমি…
তুমি এখানে কি করে?
সে কোন কথা বলছে না ।
অনুষ্কা এবার ভয় পেতে শুরু করেছে এতোটা ভয় পেয়েছে যে সে ঘামতে শুরু করেছে।
এবার ঘটলো আরো ভয় পাওয়ার মত ঘটনা তৃষার গাড়িটা হঠাৎ স্টার্ট হয়ে একা একাই চলতে শুরু করেছে ।
তৃষা কাঁপা কাঁপা গলায় বলতে থাকে দাঁড়াও….
দাঁড়াও বলছি !
আমি তোমার কি ক্ষতি করেছি ?
তুমি কোথায় নিয়ে যাচ্ছো আমাকে?
পেছনে বসে থাকা অনুষ্কা কোন কথাই বলছে না ।
তৃষা এবার নিজেকে শান্ত করে চুপচাপ বসে আছে সে দেখছে গাড়িটা ছুটেই চলেছে শহরের বাইরের দিকে।
তৃষা দেখছে আর ভাবছে এটাতো সেই রাস্তা যেটা কিনা অনুষ্কার বাড়ির দিকে গেছে তৃষা আবারো জিজ্ঞেস করলো তুমি কোথায় নিয়ে যাচ্ছো?
কোন উত্তর নেই।
গাড়িটা একটা নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে তৃষা গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ায় তৃষা অনুষ্কা কে জিজ্ঞেস করতে থাকে এটা তুমি আমাকে কোথায় নিয়ে এলে?
অনেক্ষণ জিজ্ঞেস করার পর অনুষ্কা বলে ওঠে ভয় পেওনা আমি তোমার কোন ক্ষতি করবো না।
আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই ।
তৃষা আবারো প্রশ্ন করে এতো লোক থাকতে আমাকেই কেন?
আর তুমি তো আজ থেকে বেশ কয়েক বছর আগে….
তৃষার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে অনুষ্কা বলে ওঠে হ্যাঁ তোমার সব প্রশ্নের উত্তর দেবো একটু শান্ত হও।
তৃষা এবার বুঝতে পারছে অনুষ্কা আর যাইহোক তৃষার কোন ক্ষতি করবে না সে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।
অনুষ্কা তখন শুরু করে আজ থেকে বেশ কয়েক বছর আগে এখানেই আমাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করা হয় কিন্তু আমি মন থেকে মরতে পারিনি।
মরতে পারিনি এই ভেবেই যে কে আমার এতো বড়ো সর্বনাশ করলো।
তৃষা জিজ্ঞেস করে কি হয়েছিলো সেদিন বলো বলো আমাকে ।
অনুষ্কা সেদিনের সমস্ত ঘটনা খুলে বলে তৃষা কে তৃষার দুচোখ দিয়ে অঝোরে জল গড়িয়ে পড়ছে সে জিজ্ঞেস করে তুমি কি কারো গলার আওয়াজ শুনতে পেয়েছো?
অনুষ্কা বলে হ্যাঁ আমি শুনতে পেয়েছিলাম এবং সেই আওয়াজটা আমার খুব চেনা কিন্তু বুঝতে পারিনি কে ছিলো সেদিন যে আমার এতো বড়ো….
তৃষা এবার আবার জিজ্ঞেস করে তুমি কি চাও আমার কাছে? আর আমাকেই কেন?
অনুষ্কা বলে যেদিন তুমি আমার বাড়ি খুঁজে বের করলে সেদিন আমি বুঝতে পেরেছিলাম।
আমি বুঝেছিলাম তুমি আমার…
তৃষা এবার বলে ওঠে আমি কি করবো এবার?
অনুষ্কা তৃষা কে বলে তুমি এবার সবাইকে জানিয়ে দাও আমার কথা ।
তৃষা বলে ওঠে তাতে কি হবে ?
অনুষ্কা তৃষা কে বলে যা বললাম করো পরে আবার সব বলবো বলেই সে বলো চলো আর একটু পরেই সকাল হয়ে যাবে আমি গাড়িতে গিয়ে বসছি আমাকে হাসপাতালে নিয়ে চলো।
তৃষা গাড়ি নিয়ে চলেছে খুব জোরে হাসপাতালের দিকে ভোর হবার আগেই তাকে শহরে ঢুকতে হবে সে ঠিক ৩টে নাগাদ পৌঁছে যায়।
হঠাৎ তৃষার ফোনটা বেজে উঠলো সে দ্যাখে অলকেশ ফোন করেছে সে ফোনটা ধরলো না দ্বিতীয় বার আবার বেজে উঠলো তৃষা বিরক্ত হয়ে বলল ডিউটি করছি তো বলেই ফোনটা রেখে দেয়।
সকাল হতেই তৃষা ডিউটি শেষ করে বাড়িতে ফিরে আসে তৃষা দ্যাখে অলকেশ বাজার নিয়ে এসেছে অলকেশ একটা মিষ্টি হাসি হেসে বলল আজকে আর ডিউটি যাবো না আজকের সমস্ত রান্না আমি করবো।
তৃষা একটু অবাক হলো পরে সেও একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে ঘাড় নেড়ে ভেতরে চলে যায় ফ্রেস হয়ে একটু বিশ্রাম নিয়ে সে অনুষ্কার কথামতো চারিদিকে জানিয়ে দেয় অনুষ্কা ফিরে এসেছে।
এই ঘটনা পৌঁছে যায় অর্নিশ বাবুর কানে এবং সে একটু ভয় পাই।
সেদিন রবিবার তৃষার ফোনে হঠাৎ একটা ফোন আসে তৃষা ফোনটা রিসিভ করে হ্যালো…
ওপর প্রান্ত থেকে আওয়াজ আসে ম্যাম আজ হাসপাতালে সেইভাবে ডাক্তার না থাকায় আপনার ডিউটি পড়েছে।
তৃষা বলে ওঠে ওকে আমি আসছি বলেই সে বেরিয়ে পড়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে।
সে ডিউটি করছে রাত তখন প্রায় ১টা বাজে ডিউটি শেষ করে তৃষা নিজের কেবিনের দিকে আসতেই সে তার পেছনে কারো উপস্থিতি বুঝতে পারে হঠাৎ সে পেছনে তাকিয়ে কাউকে দেখতে পাই না সে লাশকাটা ঘরের দিকে ছুটলো সে দেখতে চাইছে অনুষ্কার লাশটা আছে কিনা।
তৃষা দেখলো লাশটা তথা স্থানে রয়েছে সে এবার ভয় পেতে শুরু করেছে তাড়াতাড়ি নিজের কেবিনের দিকে চলেছে হঠাৎই তার মাথায় একটা সজোরে আঘাত তার পরে তৃষার আর কিছু মনে নেই।
পরেরদিন তৃষার ঞ্জান ফিরতেই সে তার পাশে একজন ডাক্তার কে দেখতে পাই কিন্তু তৃষা তাকে চেনে না।
তৃষার ঞ্জান ফিরতেই সে বলে ওঠে এখন কেমন আছেন ম্যাম?
তৃষা আস্তে আস্তে বলে ওঠে ভালো আছি কিন্তু…
তৃষার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে সে বলে ওঠে ম্যাম আমি নিলয়! নিলয় মিত্র কালকেই জয়েন করেছি বলেই সে বলে ওঠে আমি স্যারকে ফোন করেছি উনি এখুনি এসে পড়বেন।
বলতে বলতেই অলকেশ ঢুকলো তৃষা এখন কেমন আছো ?
কি করে হলো এসব?
অনেক প্রশ্ন তার তৃষার কাছে।
নিলয় এবার বলে ওঠে স্যার আপনি চিন্তা করবেন না ম্যাম এখন ঠিক আছে আসলে কাল রাতে আমি যখন ডিউটি করে ফিরছি তখন দেখি ম্যাম মাটিতে লুটিয়ে পড়ে আছে আর কেউ একজন মুখোশ পরা আমাকে দেখে পালিয়ে যায়।
তৃষা এবার মনে মনে ভাবছে কে তার সঙ্গে এমন করতে পারে অলকেশ নাতো?
এমন অনেক চিন্তা ভাবনা তার মাথায় ঘুরছে কিন্তু সে কিছুতেই যেন হিসাব মেলাতে পারছে না।
অলকেশ তৃষা কে বাড়িতে নিয়ে যায় বেশ কয়েক দিন লাগলো তৃষার সুস্থ হতে।
তৃষা সুস্থ হতেই ডিউটি জয়েন করে সেদিন নাইট ডিউটি করছে আবার তৃষার একটু ভয় ভয় করছে সে নিলয় কে ডেকে নেয় ইতিমধ্যে নিলয় তৃষার বেশ ভালো বন্ধু হয়ে উঠেছে তৃষা সমস্ত ঘটনা খুলে বলে নিলয় কে নিলয় সমস্ত কিছু শুনে একটা কথাই বলে তাহলে কি madical science mittha?
তারা দুজনেই চুপচাপ।
তৃষা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে নিলয় শনিবার আমার সঙ্গে একটু যাবে?
নিলয় বলে ওঠে কোথায় ম্যাম?
নিশ্চয় যাবো।
তৃষা শনিবার ঠিক সকালে বেরিয়ে যায় অনুষ্কার বাড়ির উদ্দেশ্যে তাদের কিছু জানার আছে অনুষ্কার সম্পর্কে।
তারা ঠিক সন্ধ্যার সময় গিয়ে পৌঁছেছে অনুষ্কার বাড়ির সামনে হঠাৎ তারা একটা কথা কাটাকাটির শব্দ শুনে থমকে দাঁড়িয়ে পড়ল।
তৃষার কাছে গলা খুব চেনা অনেক সময় পরে সে বুঝতে পারে এটাতো অনুষ্কার মায়ের গলা!
কিন্তু সে কার সঙ্গে কথা কাটাকাটি করছেন?
তৃষা শুরু শুনতে পাই ও আপনি তাহলে ডাক্তার দিদির উপর হামলা করেছেন?
কিন্তু কেন?
এরপরে সবাই চুপ তৃষার আর কিছু বুঝতে বাকি নেই কিন্তু সে কিছুতেই বুঝতে পারছে না কে হামলা করেছে।
তৃষা এবার দরজার কড়া নাড়লো অনেকক্ষণ পরে দরজা খুলে দিল অনুষ্কার দাদাভাই অর্নিশ বাবু কিন্তু তিনি তৃষা কে দেখে মোটেও খুশি হননি।
অর্নিশ বাবু তৃষা কে ভেতরে যেতেও বললেন না।
তৃষা নিজের থেকেই ভেতরে প্রবেশ করে দ্যাখে অনুষ্কার মা সারদা দেবী দাঁড়িয়ে আছে তৃষা জানতে চাইলো মাসীমা আপনি কার সঙ্গে ঝগড়া করছিলেন?
সারদা দেবী চুপচাপ হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
হয়তো সে ভাবছে তার মেয়ের কথা বা হয়তো সে ভাবছে তার পুরোনো দিনের ঘটনা।
অনেক্ষণ পর সারদা দেবী চিৎকার করে ওঠে তৃষা পেছনে তাকিয়ে দ্যাখে অর্নিশ বাবু তৃষা কে আক্রমণ করতে আসছে ।
তৃষা ভেবেই পাচ্ছে না সে কি করবে।
আচমকাই নিলয় আগে পিছে না ভেবে তার মাথায় সজোরে আঘাত করে।
মাটিতে লুটিয়ে পড়েন অর্নিশ বাবু তৃষা নিলয় কে বলে এটা কি করলে?
ওনাকে শাস্তি দেবে পুলিশ কিন্তু তুমি…
নিলয় বলে ওঠে ম্যাম উনি আপনার উপর হামলা চালাতে গিয়েছিলো তাই আমি…
তৃষা এবার অর্নিশ বাবু কে জিজ্ঞেস করে কেন?
কেন আপনি আমার উপর হামলা করেছিলেন?
অর্নিশ বাবু এতোদিন যে রাগটা নিজের ভেতর চেপে রেখেছিলেন সেটা বলতে শুরু করলেন।
তিনি খুব রেগেই বললেন হামলা করেছি বেশ করেছি ওই বেজন্মার জন্য আমার সোনার সংসার নষ্ট হয়ে গেছে আমার অতো বড়ো কম্পানি নষ্ট হয়ে গেলো আমার সন্তান, স্ত্রী কে হারিয়ে ফেললাম আর আপনি আবার ওই বেজন্মার জন্য এসেছেন! তাই আমি এই কাজ করেছি ।
তৃষা এবং নিলয় চুপচাপ এবং ভাবছে একটা মানুষ কতোটা নিষ্ঠুর হলে এইরকম করতে পারে।
তৃষা আবারো প্রশ্ন করে আপনার সঙ্গে আর কে কে আছে?
অর্নিশ বাবু এবার বলে ওঠে তার নাম শুনলে তুমি ঠিক থাকতে পারবে তো?
তৃষা এবার ভয় পেতে শুরু করেছে তৃষা ভাবছে সে যেটা সন্দেহ করেছিলো সেটা নাতো?
অর্নিশ বাবু চিৎকার করে বলে এই ষড়যন্ত্রের পেছনে তোমার স্বামী অলকেশ ও আছে।
আর আমি যদি আগে জানতাম তুমি অলকেশের স্ত্রী তাহলে কিছুতেই অনুষ্কার বিষয়ে প্রথম দিন কিছু বলতাম না।
তৃষা যেটা ভয় পাচ্ছিল সেটাই হলো সে পেছনের সোফাতে বসে পড়ে তার মাথা কাজ করছে না।
ইতিমধ্যে তৃষার মোবাইলে একটা মেসেজ আসে সে মোবাইল হাতে নিয়ে দ্যাখে অলকেশের মেসেজ তাতে‌ শুধু লেখা আছে I am sorry Trisha
তৃষার এবার আর কিছু বুঝতে বাকি থাকলো না সে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয় ততক্ষণে সবকিছু শেষ অলকেশ নিজেই নিজেকে স্যুট করে নিয়েছে।
অর্নিশ বাবুকে খুনের ষড়যন্ত্র করার জন্য আটক করা হয়।
তৃষা অনুষ্কার মা সারদা দেবী কে তার নিজের কাছে নিয়ে এসেছে এখন থেকে সে তৃষার কাছেই থাকবে তারা হাসপাতালের লাশকাটা ঘর থেকে অনুষ্কার লাশ নিয়ে তার সতকার করে।
তৃষা এবং নিলয় দুজনেই বুঝতে পারে যে অনুষ্কার আত্মা শান্তি না পেয়ে এভাবেই…
সারদা দেবী এখন তৃষার কাছে থাকে তৃষা তাকে মায়ের মতোই দ্যাখে।
সেদিন বৃহস্পতিবার বার তৃষা এবং নিলয় দুজনেই হাসপাতালে ডিউটি করছে তৃষা হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে পড়ে নিলয় তার চিকিৎসা চালিয়ে সুস্থ করে তৃষা মা হতে চলেছে কারণ অলকেশ সুইসাইড করার সময় তৃষা তিন মাসের প্রেগন্যান্ট ছিলো।
তৃষার এইসময় দেখাশোনা নিলয় করে নিলয় ছিলো গায়নো ডাক্তার তৃষার একটা ছেলে হয়েছে তার নাম অর্নিবান রাখা হয়েছে খুব আদরের নিলয় তাকে খুব ভালোও বাসে কারণ নিলয়ের হাতেই তো তার…
ইতিমধ্যে তৃষা নিলয়কে মনে মনে ভালোবাসতে শুরু করেছে কারণ নিলয় তার অসুস্থতার সময় যা করে সেটা স্বামীর থেকে কিছু কম না।
তৃষা এখন সুস্থ তাকে আজকেই হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়া হবে নিলয় তৃষা কে খবরটা জানাতে আসে যে জানায় ম্যাম আজ আপনার ছুটি হয়ে যাবে।
এইকথা বলেই সে চলে যাবে এই সময় তৃষা আচমকাই নিলয়ের হাতটা চেপে ধরে এবং বলে ওঠে অর্নিবানের বাবা হবে?
নিলয় মুচকি হেসে ঘাড় নেড়ে তৃষার ছুটির কাগজ রেডি করে তৃষা কে বাড়িতে নিয়ে যায় এবং সারদা দেবী একটা ভালো দিন দেখে তৃষার সাথে নিলয়ের শুভ বিবাহ সম্পন্ন করে।

মন্তব্য করুন