Skip to content

মায়ের পরিণতি=প্রভাত মণ্ডল

  • by

বাবার শ্রাদ্ধ শান্তি মিটে যাবার পর মেয়ে জানায় মা ভাইকে নিয়ে একা কি করে থাকবে। তাছাড়া ব‌্যাঙ্ক ও পোস্ট অফিসের কাজগুলো তোমার পক্ষে দেখাশুনা করা অসম্ভব। তাই তোমার জামাই বলছিল ওর তো মা নেই, তুমি আমাদের কাছে থাকলে ওর ভালো লাগবে। অগত‌্যা ভবতোষ মুখার্জ্জীর বিধবা স্ত্রী পাগল ছেলেকে নিয়ে জামাই এর বাড়ীতে গিয়ে উঠল।
ভবতোষবাবু ছিলেন Ex emplloye steel plant durgapur, মারা যাবার সময় রেখে গিয়েছিলেন বিধবা স্ত্রী, একটি পাগল ছেলে, মেয়ে, জামাই ওআট বছরের একটি নাতনী। সম্পত্তিও ভালোই ছিল পৈত্তিক বিষয় আশয় নিয়ে ২ কোটি টাকার মত।
মেয়ের বাড়িতে এসে মায়ের দু=তিন মাস ভালই কাটল। একদিন মেয়ে এসে মাকে বলল, মা তোমার জামাই বলছিল মায়ের তো বয়স হয়েছে তাই আমাকে তোমার সাথে জয়েন্ট অ‌্যাকাউন্ট করে নিতে। তবে তোমার যদি আপত্তি না থাকে। মা বললেন দেখ অপু, তুই আর পাপাই আমার সব, আমার কিছু হলে তুই শুধু পাপাইকে দেখিস। ওর যে তুই ছাড়া আর কেউ থাকবে না। আমার অ‌্যাকাউন্টের টাকা, তোর ও জামাইয়ের অ‌্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করে নে। মেয়েখুশী হয়ে চলে গেল, এবং যথারীতি মায়ের সব টাকা অপু ওতার জামায়ের অ‌্যাকাউন্টে টান্সফার হয়ে গেল।
কিছুদিন পর জামাই বাবা এসে শাশুড়ীকে বলেন মা, দিনকাল যা পড়েছে দেশের বাড়ির জমি=জমা, ঘর বাড়ি দেখাশুনা করলে বেহাত হয়ে যেতে পারে, তার থেকে সব বিক্রি করে ওসবের পাঠ চুকিয়ে দেওয়ায় ভালো। শাশুড়ী বললেন তুমি যেটা ভালো বোঝ সেটাই কর যথারীতি সব বিক্রি হয়ে গেল এবং সব টাকা মেয়ে জামাই এর অ‌্যাকাউন্টে চলে গেল।
সব সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়ার পর ইদানীং মা লক্ষ‌্য করছে অপু কেমন যেন বদলে গেছে পাপাই ঠিক হবে না বলে ওর চিকিৎসা বন্ধ করে দিয়েছে, পাপাইকে যেন সহ‌্য করতে পারছে না। কিছুদিন যেতে না যেতেই মেয়ে মাকে এসে বলল, মা কাজের মেয়েটার এত তেজ এইটুকু কাজের জন‌্য ১০০০/টাকা চাইছে। আমি ওকে কাল হতে আসতে বারন করে দিলাম। মা, আমি না হয় তোমার নাতনীকে নিয়ে ব‌্যস্ত থাকি। তুমি তো মা ফ্রি আছো। মায়ের বুঝতে বাকী থাকল না। মা বললেন, সে এমন কি কাজ আমি করে নেব ক্ষণ। তোকে ভাবতে হবে না আমি মরে গেলে শুধু পাপাইকে দেখিস। মেয়ে ঝাঁপিয়ে উঠল শুধু পাপাই আর পাপাই। মা মেয়ের রূপ দেখে সন্ত্রস্ত হল, মনে মনে ভাবল, উনি কি ভুলটায় না করেছেন।
এখন কয়েকদিন হল অপু, মা ও ভাইয়ের জন‌্য বাইরের ঘরেই খাবার পাঠিয়ে দেয়। ভাইটা মাছ যে এত ভালো বাসে তাও সে দেয় না। হঠাৎ একদিন সকালে উঠে ননীবালাদেবী দেখেন যে, তার অপু নিজে ভোর বেলায় উঠে বাড়ির সব কাজ করতে শুরু করেছে। মা তার হাত থেকে কাজ ছাড়াতে গেলে সে বলে কাল তোমার জামাই আমাকে খুব বকেছেন, বলেছেন তুমি কি পাষাণ, বৃদ্ধ মাকে এত খাটাচ্ছো।
ননীবালা দেবীর মন আনন্দে ভরে উঠল, যখন দেখে পাপাইয়ের জন‌্য সকালে দুধ ডিম আর দুপুরে মাছ ভাত।
কিন্তু সন্ধ‌্যেতেই চোখের সামনে সব পরিষ্কার হয়ে গেল। মা খাটে বসে আছে মেয়ে এসে মায়ের পায়ে হাত বোলাতে বোলাতে বলল, তোমার যে এত গয়না ছিল সেগুলো কোথায়? মা বুদ্ধি করে বলেন সেগুলো তো লকারে মা। ওই ডকুমেন্টস গুলো কোথায় রেখেছো দাও না। মা বলেন আজ তোর বাবার মৃত‌্যু বাৎসরিক, হয়তো তুই ভুলে গেচ্ছি, মেয়ে ফুসে উঠল।মা বললেন উনার জন‌্যে মনটা খুব খারাপ কাল দেব।
তারপর সকালের আলো না উঠতেই ভোরের অন্ধকারে পাপাইকে ও একটা ব‌্যাগ সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন। যেই ব‌্যাগে তার শেষ সম্বল ২৫=৩০ ভরি গয়না ও লাখ পাঁচেক কিষান বিকাশে স‌্যাটিফিকেট।
সকাল বেলায় ঘুম থেকে উঠে অপু দেখে সদর দরজা হাট করে খোলা। সে মাকে ডাকে, পাপাইকে ডাকে কিন্তু কোনো সাড়া পায় না। রিয়া তখন দিদার জন‌্য কান্নাকাটি শুরু করলে অপু মেয়ের গালে একটা চড় মেরে বলে আপদ গেছে। কিন্তু মাথা ঘুরতে থাকে মায়ের অত সোনার গয়না কোথায় গেল।
এদিকে ননীবালা দেবী একটি আশ্রমে পাপাইকে নিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে থাকেন। আর মরণ কালে আশ্রমে ২০ লক্ষ টাকা দান করে পাপাইকে দেখাশুনার জন‌্য অঙ্গীকার বদ্ধ করিয়ে নেন। পাপাই ও এখন ভালো আছে আশ্রমে

মন্তব্য করুন