Skip to content

মাজুনি – পলা ভৌমিক

আজও মাঝে মাঝে সেই সবুজ মাঠকে স্বপ্নে দেখি,
ডুমুর গাছের ডালে বাসা করেছে স্বাধীন কিছু পাখি।
পাশের নদীতে পাকা পাকা ডুমুর পড়তো টুপটাপ,
কোনো কোনো মাছ সেগুলো খেয়ে নিতো গুপগাপ।
সেই মাঠের চারপাশে কোনো বেড়া ছিলোনা বলে,
আসতো সেথায় বাঁশি হাতে একটা সাঁওতাল ছেলে।
সবুজ ঘাসের ওপর নির্দ্বিধায় মেলে দিতো ওর শরীর,
বাঁ পায়ের ওপর ডান পা তুলে বাঁশীতে তুলতো সুর।
পরণে তার থাকতো নীল রঙের হাঁটু ঢাকা এক ধুতি,
মেদহীন খালি গায়ে ছিলোনা কোনো ফতুয়া বা কুর্তি।
অথচ সেজন্যে তাকে একটুও অসভ্য মনে হতো না,
শহুরে অনেক ছেলে প্রচুর পোষাক পড়েও যা পায়না,
সেই সরলতা টুকু সেঁটে ছিলো ঐ অশিক্ষিত মুখে।
বাঁশীর সুর শুনে আর সরল মুখের ঋজু শরীর দেখে,
আমিও ছিলাম ওর চোখের আড়ালে, অনেক সুখে।
একটা পলো নিয়ে যখন ছেলেটা মাছ ধরতে যেতো,
জানালায় দেখে ভাবতাম, সত্যি কি ও ইঁদুর খেতো ?
হঠাৎ কখনো বসে থাকা আমাকে কদমফুল দিতো,
চার পাঁচটা ফুল আর দুই একটা পাতা সহ সেই ডাল,
সেই কদম ফুলের গন্ধ আমাকে যে কি সুখ দিতো !
বর্ষা এলে আজো কি করে যেন সেই গন্ধটা কদমের,
দূর থেকে ভেসে এসে, কাছে চলে আসে হৃদয়ের।
মজার কথা হলো আমাদের কোনোদিন কথা হয়নি,
আমি যে বাঁশীর সুর ভালোবাসি, কথাটা বলা হয়নি।
আমাকে ওর কেমন লাগে সেটাও তাই জানা হয়নি,
তবে ওর ঐ অতিরিক্ত সাদা সেই দাঁতগুলোর হাসি,
কেন জানিনা আজো আমি কিছুতেই ভুলতে পারিনি।
কোলগেট বা বিনাকা ফ্লোরাইড ওদের ছিলনা, জানি,
মটকিলা অথবা নিমের ডালই ছিলো ওদের মাজুনি।

মন্তব্য করুন