Skip to content

ময়নার ইতিকথা –রমেন মজুমদার

ময়নার ইতিকথা
—-ছোটগল্প
রমেন মজুমদার,
09/07/23 শব্দ সংখ্যা-৮৫৮

—-
পোয়াতি বউডারে অম্বালে মারিস না, পেডের পোলাডার খেতি ঐতে পারে।

রাসুন্দর দাসের সাথে শ্যামপুরের ময়নার বিয়ে হয় যখন,তখন দেশশুদ্ধ চলছে মন্বন্তর! চারদিকে হাভাত হাভাত একটা হাহাকার !! নুন,ফেন জোগাড়তো দূরের কথা,কাজ কর্মের হালও খারাপ! কেউ কাউকে দিয়ে যে কাজ করাবে,তার পরিশ্রমের পারিশ্রমিক দেবার মানুষের অভাব।
তিনগ্রামের মধ্যে হাতে গোনা দু’একজন হয়তো পাওয়া যাবে সংসারে ছেলেপুলে নিয়ে দুমুঠো ভাত শান্তিতে খেতে পারছে।
কিন্তু, দেশের যে অবস্থা; তাতে মুখে ভাত তুললেও নিরন্ন বস্ত্রহীনদের করুণ মুখগুলির কথা মনে এলে গলাদিয়ে ভাত নামে না ময়নার।
বাবা রাজমোহন গুহর মেয়ে ময়না বড্ড আদরের ছোট বেলা থেকেই….
পিসির কাছেই বড় হয়েছে।
রাজমোহন কিছুটা আর্থিক সচ্ছল হলেও সে বছর অতিখরায় অনেক জমির বোনাফসল চারা অবস্থায় পুড়ে খাক হয়ে গেছে। জমির আলে বসে রাজমোহন ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। শুকনো পোড়া ফসলের উপরে দুএকটা শস্য ফড়িং উড়ে উড়ে বসতে গিয়ে বসতে পারছে না। ওদের খাবারের অভাব দেখা দিয়েছে। কাঁচা ফসলের উপর বসে রস খেয়ে ওরা বেঁচে থাকত। এখন সে আশাটুকু মাটি হয়েছে ওদের।
রাজমোহন ক্ষুধার্ত ফড়িংয়ের কষ্টের কথা অনুভব করে করে কয়েক ফোঁটা চোখের জল ফেললো জমিরআলে বসে।
আর ভাবল, এ বছর দুর্ভিক্ষ আর আকাল যা পড়েছে,তাতে ময়নার বিয়ে দেয়া যাবেনা। মেয়রটার বয়স হয়ে গিয়েছে। কোথাও পাত্র জুটছে না। সেটাও তার বড় চিন্তার কারণ।

রাজমোহনের বিধবা বোন শেফালির কাছে ময়না মানুষ হলেও তাঁর চিন্তা আরও বেশি। পাঁচ মাসের মা মরা মেয়েটারে এতদিন দেখভাল করে বড় করেছে। ময়নার বয়স হয়ে গিয়েছে। কোথাও ছেলের সন্ধান পায় না।
গোত্র,বংশ মিল না হলে তখনকার দিনে মেয়েরা আইবুড়ো হয়ে যেত। যৌবন শুঁকিয়ে যেত ঢলে যাওয়া পাতার মত।তাই পিসি শেফালির চিন্তা বেশি।
সে একজন মেয়ে মানুষ। তাই মেয়ে মানুষের মনের গুপ্ত কষ্ট ও তার ভাবাবেগের কথা সে বুঝতে পারত।
এবার শেফালির বয়স প্রায় ত্রিশের কাছে চলে এসেছে।
সে যুগে বাল্য বিবাহ হলেও বংশ ,গোত্রের মিল না হলে মেয়েরা ঘরে বসেই চুলে পাক ধরত।
একদিন শেফালী রাজমোহনকে ডেকে বলল, শোন ভাই;
একটা যুক্তি তোকে দেই। যুক্তিটা হল, এই মন্বন্তরে যারা যারা ভিক্ষে করতে আসবে,তাদের সবাইকেই জিজ্ঞাসা করবি; তোমরা কোন বংশের ।
বংশ গোত্রের কিছুটা মিল পেলে তাকে একটু যত্নআদি বেশি করবি। দরকার হলে
তার সংসারে পুরুষ ছেলে আছে কিনা অবিবাহিত সেটাও জিগ্গেস করবি।
রাজমোহন বলল, দিদি তুমিই সেই দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে খোঁজ খবর নিও।
আচ্ছা আচ্ছা সে দেখা যাবে। মেয়ের জন্য আমারই চিন্তা বেশি।

পরদিন থেকে বিধবা শেফালী ভিক্ষুক সামলানোর দায়িত্ব নিজেই নিলেন।
কেউ কেউ ছেঁড়া-ময়লা গামছা পরে,শাড়ি পড়ে পুরুষ মহিলা একটু ভাতের ফেন,কেউ একটু নুন,কেউ একমুষ্টি চালের জন্য মানুষ দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে বেড়ায়। এমনি করে সবাইকে কিছু না কিছু ভিক্ষাদেয় শেফালী।
সে জনে জনে জিজ্ঞেস করে, হ্যাগো, তোমরা মানুষ কয়জন? বংশে কি ? ঘরে জোয়ান অবিবাহিত ছেলে আছে কিনা ? ইত্যাদি ইত্যাদি।
এমনি করে এক সপ্তাহ চলে গেল। কারও মাধ্যমেই গুপ্ত বংশের মিল হতে পারে তেমন জোয়ান পোলার সন্ধান পেলোনা শেফালী।

বৈশেখ মাসের শেষে একদিন প্রচণ্ড ঝড় ওঠল আকাশে। সেই সাথে প্রচণ্ড বৃষ্টি।
এ’বছর এতো খরা গেছে যে, মানুষ এখন স্বস্তির মুখ দেখল। মাঠে ফসল হবে ভালো। তবুও বৃষ্টিতো হলো।
সে ভাবনাই ভাবছিল রাজমোহন।
বৃষ্টি আর ঝড়ের দুর্বার গতি চলল মধ্য রাত পর্যন্ত।
ভিক্ষা করা আসা মানুষের মধ্যে এক বুড়িমা আর যেতে পারেনি বাড়িতে। সে ঝড়ের মধ্যে আশ্রয় নিয়েছে রাজমোহনের গোয়াল ঘরে। শখের একটি গাভী আছে রাজমোহনের। প্রতি বছর বেশ ভালোই দুধ দেয় গাভিটি। এবারও দিচ্ছে,তবে কাঁচা ঘাসের অভাবে দুধ একটু কম দেয়।
ঝড়ের পরে রাজমোহন গেল গোয়াল ঘরে।
সেখানে গিয়ে দেখতে পায়,এক বয়স্ক মহিলা ময়লা আধছেঁড়া কাপড়ে ভিক্ষার থালা পাশে রেখে গোয়াল ঘরেই শুয়ে আছে।
—-
রাজমোহন ঘরে এসে দিদিকে ডাকল। দিদি শেফালী গিয়ে তারই বয়সী এক মহিলাকে দেখতে পেয়ে ডেকে তুলল।
হ্যাগো,তুমি কে গো ?
দিদিরে ভাত আছে ? প্যাডে বড্ড ক্ষুধা !
–কি নাম তোমার ?
— আরতি,
— পুরা নাম কও দিদি।
— আরতি দাস। স্বামী মারা গেছে তিনবছর। ঘরে জোয়ান পোলা আছে । কাম নাই,খাইতে পাইনা ঠিক মত।তাই আমি এই দুর্ভিক্ষের দিনে মাইসের বাড়ি বাড়ি কাম করি আর খাই।
অহন কামও নাই ।তাই ভিক্ষা করা ছাড়া উপায় নাই।
–তোমরা বংশে উচা ? –হ’
–কাইল কোন সময় আইছ ?
–অইছি মতন ঝড় শুরু অইছে বাড়িতে যাইতে পারি নাই।
— আস আমার সাথে।
শেফালী আরতি দেবীরে ভিতরে নিয়ে এলো। ময়নারে কইল, মা ; ওনার কিছু খাবার দে।
রাতে খাবার শেষে কিছু ভাত ছিল হাঁড়িতে,তাই দিল খাইতে আরতি দেবীকে।
—-
সকালে আরতি দেবী ফেরার সময় কিছু চাল দিয়ে দিল শেফালী।
রাজমোহনকে কাছে ডেকে বলল, ভাই এরা আমাগো জাতি।
ওনার একটা ছেলে আছে। ভগবান মনে হয় মিলাইছে।
তখন রাজমোহন যোগাযোগ করে আরতিদেবীর বংশ,গোত্রের খবর নিয়ে তারই ছেলে রামসুন্দর দাসের সাথে নিজের মেয়ে ময়নার বিয়ে দিয়ে হাফ ছাড়ল। রামসুন্দরের বয়সও প্রায় ত্রিশ পার হয়ে গেছে।

বিয়ের এক বছর যেতে না যেতেই ময়না পোয়াতি হল। সকলেরই মনে তখন একটা আনন্দের জোয়ার বইতে লাগল।
রামসুন্দর কিছুটা লোভী।
সে প্রায়ই চাপ সৃষ্টি করে বাবার বাড়ি থেকে কিছু কিছু নগদ আদায় করার চেষ্টা করে।
প্রথম প্রথম ময়না বাবার নিকট থেকে কিছু কিছু নগদ চেয়ে আনত এটা সেটা বলে।
সে মনে মনে ভাবল,আর কতদিন এভাবে বাবার কাছ থেকে চেয়ে আনবে ?
তখন ময়না পরিষ্কার বলেদিল, আমি আর পারবনা টাকা চাইতে।
গতর খেটে উপার্জন করো। তাতে সম্মান বাড়বে নিজের।

ময়নার না বাক্য শুনলেই রামসুন্দরের মাথায় আগুন ধরে যেত। হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে ময়নাকে পিটাতে থাকত এক নাগাড়ে।
তখন,মা এসে বলতো,
পোয়াতি বউডারে অম্বালে মারিস না, পেডের পোলাডার খেতি ঐতে পারে। আমগইত বংশের অইব এই পোলা।
তখন রামসুন্দর মায়ের কথা শুনে থেমে যেত।
কিছুদিন পরে ময়না একটি মৃত্সন্তান জন্মদিতে গিয়ে নিজেও ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়ে।
শেষে ডাক্তার হসপিটাল করে আর ময়নাকে বাঁচানো গেল না।
—-

ময়নার ইতিকথা
—-ছোটগল্প
রমেন মজুমদার,
09/07/23 শব্দ সংখ্যা-৮৫৮

—-
পোয়াতি বউডারে অম্বালে মারিস না, পেডের পোলাডার খেতি ঐতে পারে।

রাসুন্দর দাসের সাথে শ্যামপুরের ময়নার বিয়ে হয় যখন,তখন দেশশুদ্ধ চলছে মন্বন্তর! চারদিকে হাভাত হাভাত একটা হাহাকার !! নুন,ফেন জোগাড়তো দূরের কথা,কাজ কর্মের হালও খারাপ! কেউ কাউকে দিয়ে যে কাজ করাবে,তার পরিশ্রমের পারিশ্রমিক দেবার মানুষের অভাব।
তিনগ্রামের মধ্যে হাতে গোনা দু’একজন হয়তো পাওয়া যাবে সংসারে ছেলেপুলে নিয়ে দুমুঠো ভাত শান্তিতে খেতে পারছে।
কিন্তু, দেশের যে অবস্থা; তাতে মুখে ভাত তুললেও নিরন্ন বস্ত্রহীনদের করুণ মুখগুলির কথা মনে এলে গলাদিয়ে ভাত নামে না ময়নার।
বাবা রাজমোহন গুহর মেয়ে ময়না বড্ড আদরের ছোট বেলা থেকেই….
পিসির কাছেই বড় হয়েছে।
রাজমোহন কিছুটা আর্থিক সচ্ছল হলেও সে বছর অতিখরায় অনেক জমির বোনাফসল চারা অবস্থায় পুড়ে খাক হয়ে গেছে। জমির আলে বসে রাজমোহন ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। শুকনো পোড়া ফসলের উপরে দুএকটা শস্য ফড়িং উড়ে উড়ে বসতে গিয়ে বসতে পারছে না। ওদের খাবারের অভাব দেখা দিয়েছে। কাঁচা ফসলের উপর বসে রস খেয়ে ওরা বেঁচে থাকত। এখন সে আশাটুকু মাটি হয়েছে ওদের।
রাজমোহন ক্ষুধার্ত ফড়িংয়ের কষ্টের কথা অনুভব করে করে কয়েক ফোঁটা চোখের জল ফেললো জমিরআলে বসে।
আর ভাবল, এ বছর দুর্ভিক্ষ আর আকাল যা পড়েছে,তাতে ময়নার বিয়ে দেয়া যাবেনা। মেয়রটার বয়স হয়ে গিয়েছে। কোথাও পাত্র জুটছে না। সেটাও তার বড় চিন্তার কারণ।

রাজমোহনের বিধবা বোন শেফালির কাছে ময়না মানুষ হলেও তাঁর চিন্তা আরও বেশি। পাঁচ মাসের মা মরা মেয়েটারে এতদিন দেখভাল করে বড় করেছে। ময়নার বয়স হয়ে গিয়েছে। কোথাও ছেলের সন্ধান পায় না।
গোত্র,বংশ মিল না হলে তখনকার দিনে মেয়েরা আইবুড়ো হয়ে যেত। যৌবন শুঁকিয়ে যেত ঢলে যাওয়া পাতার মত।তাই পিসি শেফালির চিন্তা বেশি।
সে একজন মেয়ে মানুষ। তাই মেয়ে মানুষের মনের গুপ্ত কষ্ট ও তার ভাবাবেগের কথা সে বুঝতে পারত।
এবার শেফালির বয়স প্রায় ত্রিশের কাছে চলে এসেছে।
সে যুগে বাল্য বিবাহ হলেও বংশ ,গোত্রের মিল না হলে মেয়েরা ঘরে বসেই চুলে পাক ধরত।
একদিন শেফালী রাজমোহনকে ডেকে বলল, শোন ভাই;
একটা যুক্তি তোকে দেই। যুক্তিটা হল, এই মন্বন্তরে যারা যারা ভিক্ষে করতে আসবে,তাদের সবাইকেই জিজ্ঞাসা করবি; তোমরা কোন বংশের ।
বংশ গোত্রের কিছুটা মিল পেলে তাকে একটু যত্নআদি বেশি করবি। দরকার হলে
তার সংসারে পুরুষ ছেলে আছে কিনা অবিবাহিত সেটাও জিগ্গেস করবি।
রাজমোহন বলল, দিদি তুমিই সেই দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে খোঁজ খবর নিও।
আচ্ছা আচ্ছা সে দেখা যাবে। মেয়ের জন্য আমারই চিন্তা বেশি।

পরদিন থেকে বিধবা শেফালী ভিক্ষুক সামলানোর দায়িত্ব নিজেই নিলেন।
কেউ কেউ ছেঁড়া-ময়লা গামছা পরে,শাড়ি পড়ে পুরুষ মহিলা একটু ভাতের ফেন,কেউ একটু নুন,কেউ একমুষ্টি চালের জন্য মানুষ দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে বেড়ায়। এমনি করে সবাইকে কিছু না কিছু ভিক্ষাদেয় শেফালী।
সে জনে জনে জিজ্ঞেস করে, হ্যাগো, তোমরা মানুষ কয়জন? বংশে কি ? ঘরে জোয়ান অবিবাহিত ছেলে আছে কিনা ? ইত্যাদি ইত্যাদি।
এমনি করে এক সপ্তাহ চলে গেল। কারও মাধ্যমেই গুপ্ত বংশের মিল হতে পারে তেমন জোয়ান পোলার সন্ধান পেলোনা শেফালী।

বৈশেখ মাসের শেষে একদিন প্রচণ্ড ঝড় ওঠল আকাশে। সেই সাথে প্রচণ্ড বৃষ্টি।
এ’বছর এতো খরা গেছে যে, মানুষ এখন স্বস্তির মুখ দেখল। মাঠে ফসল হবে ভালো। তবুও বৃষ্টিতো হলো।
সে ভাবনাই ভাবছিল রাজমোহন।
বৃষ্টি আর ঝড়ের দুর্বার গতি চলল মধ্য রাত পর্যন্ত।
ভিক্ষা করা আসা মানুষের মধ্যে এক বুড়িমা আর যেতে পারেনি বাড়িতে। সে ঝড়ের মধ্যে আশ্রয় নিয়েছে রাজমোহনের গোয়াল ঘরে। শখের একটি গাভী আছে রাজমোহনের। প্রতি বছর বেশ ভালোই দুধ দেয় গাভিটি। এবারও দিচ্ছে,তবে কাঁচা ঘাসের অভাবে দুধ একটু কম দেয়।
ঝড়ের পরে রাজমোহন গেল গোয়াল ঘরে।
সেখানে গিয়ে দেখতে পায়,এক বয়স্ক মহিলা ময়লা আধছেঁড়া কাপড়ে ভিক্ষার থালা পাশে রেখে গোয়াল ঘরেই শুয়ে আছে।
—-
রাজমোহন ঘরে এসে দিদিকে ডাকল। দিদি শেফালী গিয়ে তারই বয়সী এক মহিলাকে দেখতে পেয়ে ডেকে তুলল।
হ্যাগো,তুমি কে গো ?
দিদিরে ভাত আছে ? প্যাডে বড্ড ক্ষুধা !
–কি নাম তোমার ?
— আরতি,
— পুরা নাম কও দিদি।
— আরতি দাস। স্বামী মারা গেছে তিনবছর। ঘরে জোয়ান পোলা আছে । কাম নাই,খাইতে পাইনা ঠিক মত।তাই আমি এই দুর্ভিক্ষের দিনে মাইসের বাড়ি বাড়ি কাম করি আর খাই।
অহন কামও নাই ।তাই ভিক্ষা করা ছাড়া উপায় নাই।
–তোমরা বংশে উচা ? –হ’
–কাইল কোন সময় আইছ ?
–অইছি মতন ঝড় শুরু অইছে বাড়িতে যাইতে পারি নাই।
— আস আমার সাথে।
শেফালী আরতি দেবীরে ভিতরে নিয়ে এলো। ময়নারে কইল, মা ; ওনার কিছু খাবার দে।
রাতে খাবার শেষে কিছু ভাত ছিল হাঁড়িতে,তাই দিল খাইতে আরতি দেবীকে।
—-
সকালে আরতি দেবী ফেরার সময় কিছু চাল দিয়ে দিল শেফালী।
রাজমোহনকে কাছে ডেকে বলল, ভাই এরা আমাগো জাতি।
ওনার একটা ছেলে আছে। ভগবান মনে হয় মিলাইছে।
তখন রাজমোহন যোগাযোগ করে আরতিদেবীর বংশ,গোত্রের খবর নিয়ে তারই ছেলে রামসুন্দর দাসের সাথে নিজের মেয়ে ময়নার বিয়ে দিয়ে হাফ ছাড়ল। রামসুন্দরের বয়সও প্রায় ত্রিশ পার হয়ে গেছে।

বিয়ের এক বছর যেতে না যেতেই ময়না পোয়াতি হল। সকলেরই মনে তখন একটা আনন্দের জোয়ার বইতে লাগল।
রামসুন্দর কিছুটা লোভী।
সে প্রায়ই চাপ সৃষ্টি করে বাবার বাড়ি থেকে কিছু কিছু নগদ আদায় করার চেষ্টা করে।
প্রথম প্রথম ময়না বাবার নিকট থেকে কিছু কিছু নগদ চেয়ে আনত এটা সেটা বলে।
সে মনে মনে ভাবল,আর কতদিন এভাবে বাবার কাছ থেকে চেয়ে আনবে ?
তখন ময়না পরিষ্কার বলেদিল, আমি আর পারবনা টাকা চাইতে।
গতর খেটে উপার্জন করো। তাতে সম্মান বাড়বে নিজের।

ময়নার না বাক্য শুনলেই রামসুন্দরের মাথায় আগুন ধরে যেত। হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে ময়নাকে পিটাতে থাকত এক নাগাড়ে।
তখন,মা এসে বলতো,
পোয়াতি বউডারে অম্বালে মারিস না, পেডের পোলাডার খেতি ঐতে পারে। আমগইত বংশের অইব এই পোলা।
তখন রামসুন্দর মায়ের কথা শুনে থেমে যেত।
কিছুদিন পরে ময়না একটি মৃত্সন্তান জন্মদিতে গিয়ে নিজেও ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়ে।
শেষে ডাক্তার হসপিটাল করে আর ময়নাকে বাঁচানো গেল না।
—-

মন্তব্য করুন