Skip to content

ভিড় বাসের সেই লোকটা – শুভদীপ চক্রবর্তী

ভিড়ে ঠাসা বাসে অর্পিতা কোনওমতে দাঁড়িয়ে ছিল। পরনে
তার হাল্কা নীল রঙের সুতির শাড়ি ও এয়ার হোস্টেজ ব্লাউজ।
আজ সে ফাইনাল টিচিং এক্সাম দিতে যাচ্ছে। এক হাতে তার
একটি ব্যাগ আছে যাতে রয়েছে টিচিং সরঞ্জাম এবং অন্য হাত
দিয়ে সে বাসের হাতল কষ্ট করে কোনমতে ধরে আছে।

হটাৎ একটা জোরে ঝাঁকুনি। একজন মাঝবয়েসি ভদ্রলোক
নিজেকে সামলাতে না পেরে হুমড়ি খেয়ে পড়লেন। অর্পিতার
পিঠে লোকটির হাত স্পর্শ করে।আকষ্মিক এই ঘটনায়
লোকটি খুব অপ্রস্তুত হয়ে পড়লেন।
অর্পিতা চেঁচিয়ে ওঠে, ’অসভ্য লোক! ঠিক মত দাঁড়াতে পারেন
না।‘
ভদ্রলোক মুখটা কাঁচুমাচু করে বললেন,’সরি ম্যাডাম।আমি
বুঝতে পারিনি।‘
অর্পিতা গলার ঝাঁঝ আরও বাড়িয়ে বলল, ‘বুঝতে পারিনি
মানে? আপনাদের মতো লোকদের আমার চেনা আছে। মেয়ে
দেখলেই আপনারা এমন করেন।‘

এতক্ষণ চুপ করে ছিল অর্পিতার বান্ধবী দীপা। সে এবার
বলল,’তুই থাম না। দেখলি তো বাসটা
জোরে ব্রেক কষল । তাইতো এমনটা হল। ওনার হয়তো
কোন দোষ নেই।‘

অর্পিতা চুপ করে যায়। আর কথা বাড়ায় না।

(২)
বাস এসে থামল কৃষ্ণপুর হাই স্কুলের সামনে। অর্পিতা ও তার
বান্ধবী দীপা নেমে পড়ল। অর্পিতাকে ক্লাস সেভেনে যেতে
হবে।আজ সে ভৌত বিজ্ঞান পড়াবে ।

ক্লাস সেভেনের ঘরের সামনে আসতেই সে দেখল, বান্ধবী
প্রিয়া দাঁড়িয়ে আছে। অর্পিতাকে দেখেই প্রিয়া চেঁচিয়ে ওঠে
,’তাড়াতাড়ি কর। একটু পরেই পরীক্ষা শুরু হবে।এক্সটারনাল
স্যারকে নিয়ে প্রিন্সিপাল স্যার আসছেন।’

বিলম্ব না করে অর্পিতা ক্লাসে ঢুকে পড়ানো শুরু করে
দেয়।এমন সময় এক্সটারনাল স্যার প্রবেশ করলেন।তাঁকে
দেখেই চমকে উঠে সে।সর্বনাশ! উনি তো বাসের সেই ভদ্রলোক!ওনার সাথে কিছু সময় আগেই তার বিবাদ হয়েছে।অর্পিতার চোখদুটি সহসা ঝাপসা হয়ে আসে! মাথা যেন বোঁ বোঁ করে ঘুরতে থাকে!

অর্পিতাকে কিংকর্তব্যবিমুঢ় অবস্থায় থাকতে দেখে
এক্সটারনাল স্যার কঠিন স্বরে জিজ্ঞাসা করলেন,’চুপ করে
দাঁড়িয়ে আছেন কেন? আপনি পড়াতে থাকুন।‘

সমস্ত সঙ্কোচ ও জড়তা কাটিয়ে ওঠার মরিয়া চেষ্টা করল
অর্পিতা। সে ভাবলো ,… যা হবার হয়ে গেছে, এবার তাকে যে
সেরা পারফরমেন্সটা দিতেই হবে।
…………..

মন্তব্য করুন