Skip to content

‘‘ বিজয়ের সূর্য ’’ – অথই মিষ্টি

‘ আয়ারিকা ! ও আয়ারিকা !’ (আমার মুখ ঢাকা চাদরটা হালকা করে টেনে )
‘ উফ্ আম্মু ! আর কিছুক্ষন ঘুমতে দেও তো !’ ( পূনরায় চাদর মাথা পর্যন্ত টেনে উঠিয়ে ।)
‘ ওরে আম্মু নয়, আম্মু নয় , আমি তোর নানুমনি ।’
‘ নানু !’ (অবাক হয়ে )
চাদর সরিয়ে লাফদিয়ে উঠে দেখি হ্যাঁ সত্যি সত্যিই নানুমনি এসেছে বাসায় ।আনন্দে আত্বহারা হয়ে জড়িয়ে ধোরলাম প্রিয় নানুকে ।আর বলে উঠলাম,
‘ নানুমনি ! কখন এসেছো তুমি?’
‘এক্ষন আসলাম , মাত্র । এসেই নানুমনির কাছে দৌড় দিয়েছি। কতদিন দেখিনা নানুকে ।’
‘ হুম ভালো করেছো । কিন্তু নানু এবার আর আমি তোমাকে এক মাসের আগে বাড়িতে ফিরতে দিব না , হুম ।’
‘ আচ্ছা , আচ্ছা ।’ ( মুচকি হেসে )
‘ আর হ্যাঁ , এর আগের বার তুমি অসম্পূর্ন গল্প বলে চলে গেছ। আমার খুব মন খারাপ হয়েছিলো । এবার কিন্তু আমি তা হতে দিব না বলে দিলাম ।এবার নতুন গল্প সম্পূর্ন বলতে হবে ।’ ( কিছুটা অভিমানী হয়ে )
‘ ওরে আমার নানুমনি মন খারাপ করতে নেই । যথা আগ্গা , ছোট্ট মনি ! তোমার আদেশ এবার অক্ষরে অক্ষরে পালন করবো ইনশাআাল্লাহ্ ।’ ( বুকে জড়িয়ে )
‘ সত্যি তো ?’
‘ সত্যি সত্যি । এবার চলো উঠে পর । সকাল আটটা বেজে গেলো বোধ হয় !’
ঠিক তখনি আম্মু এসে ঘরে প্রবেশ করলো । আর মুচকি হেসে বলে উঠলো ,
‘ নানুদের খুনশুটি কি শেষ হলো ! আয়ারিকা তারা তারি উঠে বাতরুমে যাও স্কুলের দেরি হয়ে যাবে তো । আর মা , তুমি এসো নাস্তা করবে ।’
আমি তখন নানুমনির গলা ছেড়ে দিয়ে মাথা নেড়ে আম্মুর কথায় সায় দিয়ে দৌড় দিলাম বাতরুমের দিকে ।আর আম্মু ও নানু চলে গেলো নাস্তা করতে ।
আমি সবার সাথে নাস্তা করবো এ উদ্দেশ্যে তারাতারি করে ব্রাশ করে হাত-মুখ ধুয়ে দুই মিনিটে নাস্তার টেবিলে হাজির ।ওমা ! সে কি এখনো কেউ নাস্তা করা শুরুই করেনি ।যাই হোক আমি তো মহা খুশি
। তারপর গিয়ে নানুমনির পাশে নির্ধারিত আমার চেয়ারটিতে বসে পড়লাম ।নানুমনির দিকে তাকিয়ে আমি খিলখিলিয়ে হেসে উঠলাম । কারন নানু হা করে অবাক হয়ে এমন ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছে দেখতে কিছুটা র্কাটুনের মতোই লাগতেছিলো ।যেনো আমি ভিম গ্রহ থেকে আসলাম এই মাত্র ।অবশ্যে নানু যে আমার সাথে মজা করেই এমন ভঙ্গিমা করেছে তা বুঝতে আমার আর বাকি রইলো না ।আর আমার হাসি দেখে নানু বলে উঠলো ,
‘ এই মাত্র না তুমি বাতরুমে গেলে!’ ( চোখ বড় বড় করে অবাক ভঙ্গিমায় )
‘ হুম ! শেষে বাতরুমের কাজ ।’ ( হেসে হেসে )
‘ এতো তারা তারি !’
‘ হুম! দেখতে হবে আমি কে!’
‘ও ! তো শুনি কে তুমি?কোন প্রাশাদের মহারানি? কোন রানির উত্তরসুরী ? ’
‘ ক্ষমা করবেন ! এখন বলার সময় নেই ।অন্য দিন বলব ।’ (ডুক গিলে)
‘ আচ্ছা ! তবে এই কথা !তো ঠিক আছে মহারানীর কাছ থেকে নাহয় অন্য দিনই শুনবো ।এখন নাস্তা করেন ।’
ততক্ষনে আম্মু নাস্তা দিয়েছে ।তারপর নাস্তা খেয়ে নিলাম ।নানু মনি আসায় মনেই ছিলো না আব্বুর কথা । নাস্তা শেষ করে আম্মুকে জিজ্ঞাসা করলাম ,
‘ আচ্ছা, আব্বু কোথায়?’
‘ এতক্ষনে মনে পরলো আব্বু কথা!’
‘ আ, আ, আমর মনে ছিলো কিন্তু ভুলেই গেছিলাম!’
আমার কথা শুনে নানু আর আম্মু এক গাল হেসে উঠলো ।আর আম্মু জবাবে বলল ,
‘ কাল রাতে অফিস থেকে ফিরতে দেরি করেছে, তাই নিজের ঘুম পূর্ন করতেছে ।’
‘ ও!তবে রে দ্বারাও দেখাচ্ছি মজা…
বলতে বলতে দৌড় দিলাম আব্বুর কাছে এমন সময় আম্মু
‘ আয়ারিকা ! দ্বারাও দ্বারাও ।’
আমি দ্বারিয়ে পরলাম আর আম্মুর দিকে ঘুরে দ্বারালাম ।আম্মু বলল ,
‘ থাক ডাকিসনে মা! অনেক রাত করে ঘুমিয়েছে ।’
‘ আচ্ছা, ঠিক আছে ।কিন্তু আজ আমাকে স্কুলে নিয়ে যাবে কে?’
‘ কেন আমি নিয়ে যাব ।’
‘ তুমি! তবে কি নানুও যাবে ?’
‘ হুম ’
‘ ইয়ে কি মজা কি মজা ।’
‘ চলো তবে এখন তোমায় প্রস্তুত করে দেই ।’
‘ হুম ’
তারপর আম্মু আমাকে স্কুল ড্রেস পরিয়ে দিতেছে আর বলতেছে,
‘ তোমাকে স্কুলে নামিয়ে দিয়ে তোমার নানুমনিকে নিয়ে ডাক্টারের কাছে …
‘ ডাক্টারের কাছে কেন আম্মু?’
‘ তোমার নানুমনি কিছুটা অসুস্থ …
‘ কি হয়েছে?’
‘ আরে বাবা ! আমি বলতেছি তো কথাটা অন্তত্য শেষ করতে দেও!’
‘ আচ্ছা বলো!’
‘ নানুমনি অসুস্থ । তাই নানুমনিকে একদম বিরক্ত করবে না ।তোমাকে স্কুলে নামিয়ে দিয়ে নানুমনিকে নিয়ে ডাক্টারের কাছে যাব ।সেখান থেকে সোজা বাসায় ফিরবো ।’
‘ তাহলে আমি কি ভাবে আসবো?’
‘ তোমার আব্বু নিতে আসবে তোমাকে ।’
‘ আচ্ছা ঠিক আছে ।’
ততক্ষনে আমি প্রস্তুত ।আর নানুমনি তো আগ থেকেই প্রস্তুত । তাই এবার আম্মু প্রস্তুত হচ্ছে ।আমি তখন চুপিসারে নানুর কাছে গিয়ে ধীরে ধীরে করে নানুকে বললাম ,
‘ নানু ! তুমি কি খুব বেশি অসুস্থু?’
‘ আরে নাহ্ , কে বলল আমি খুব বেশি অসুস্থ? একটু খানি অসুস্থ ।’
‘ আম্মু বলেছে তুমি অসুস্থ আর তোমাকে না বিরক্ত করতে । আচ্ছা , নানু আমি কি তোমাকে কখনো বিরক্ত করি বলো?’
‘ না না এ কথা তো মেনে নেওয়া যায় না , এত্ত বড় মিথ্যে অপবাদ আমার প্রিয় নানুমনির উপর । দ্বারাও তোমার আম্মুকে আমি এখনই বকা দিতেছি ।’
‘ আরে না , নানু তুমি ভুলেও এ কাজ করোনা ।তা না হলে উল্ট আমাকেই বকা খেতে হবে । কারন আমাকে বারণ করেছে আম্মু ।’
‘ আচ্ছা ঠিক আছে বলবনা ।’
‘ নানুমনি তুমি কি আজই চলে যাবে?’
‘ সেটাই তো ঠিক করেছি ।’
‘ আচ্ছা চলে যেও , কিন্তু আজকে অন্তত্য থেকে যাও !’
‘ তোমার কথা রাখলাম, কিন্তু…
‘ আবার কিন্তু কেন?’
‘ তবে কালকে আমাকে খুব তারাতারি চলে যেতে হবে ।তোমার ছোট মামা কালকে সকাল সকাল ঢাকার উদ্দেশ্যে রহনা দিবে ।’
‘ ঠিক আছে ।’
বলে আমি খুশিতে নানুমনিকে জড়িয়ে ধরে একটু আদর করে দিলাম ।ঠিক তখই আম্মু এসে বলল ,
‘ তবে চলো যাওয়া যাক ।’
তারপর বাসা থেকে বের হয়ে একটা রিকশায় উঠলাম , কিছুক্ষনের মধ্যে স্কুলে পৌচ্ছে গেলাম ।আমাকে আমার স্কুলের দরজায় নামিয়ে দিয়ে চলে গেলো আম্মু আর নানুমনি ।
ঠিক বারোটায় আমার স্কুল ছুটি দিলো । আমি প্রতি দিনের ন্যায় স্কুলের দরজায় দ্বারিয়ে অপেক্ষা করছি আব্বুর জন্য ।অন্য অন্য দিন স্কুল শেষে আমার ভিষণ ক্লান্ত লাগে কিন্তু আজ তা যেনো আনন্দের উত্তেজনায় পরিনত হয়েছে ।বার বার শুধু মনে হচ্ছে কখন আসবে আব্বু আর কখন আমি নানুর কাছে পৌচ্ছবো ?
বেশ কিছুক্ষন পর আব্বু আসলো আর আব্বুর সাথে আমি সোজা বাসায় আসলাম । বাসায় এসেই নানুর কাছে দৌড়ে গেলাম ।আমাকে দেখে নানু বলে উঠলো ,
‘ আমার নানুমনিটা এসে পরেছে!’
‘ হুম । নানু এখন আমাকে গল্প শুনাও ’
‘ শুনাবো তো গল্প কিন্তু তুমি তো মাত্র আসলে আগে গোসল সেরে আসো । তারপর খাওয়া করো ।তারপর তোমকে নতুন গল্প শুনাবো ।’
‘ আচ্ছা ঠিক আছে , আমি গোসল করতে গেলাম ।’
তারপর গোসল করে সাবাই মিলে একসাথে দুপুরের খাওয়া করলাম ।খাওয়া শেষ করেই আমি সোজা নানুর কাছে গিয়ে সুন্দর করে বসে গল্প শোনার জন্য প্রস্তুত হয়ে বললাম ,
‘ তো নানুমনি এখন শুরু করো ’
‘ হুম , শোন এক ছিলো রাজা , তার ছিলো…
‘ হেত নানু ! এই রাজা রানীর গল্প অনেক শুনেছি নতুন কিছু বলো ’
‘ তবে কি শিয়াল পন্ডিতের গল্প শুনাবো?’
‘ না , তাও শুনবো না । তুমি বরং সত্যিকারের গল্প বলো ’
‘ তবে শোন , এই বাংলাদেশের সেই ঐতিহাসিক প্রানের কথা রক্তে মিশে থাকা সেই কাহিনী যা বাংলার জন্মের ঘটনা ।’
‘ হুম বলো ।’
‘ বিশাল এক ভুখন্ড ছিলো , ছিলো না তখন বাংলাদেশ, পাকিস্তান কিংবা ভারত ।এ তিন দেশের সমন্বয়ে ছিলো বিশাল ভারতবর্ষ ।যেখানে ছিলো মুসলমান, হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ সহ অনেক জাতি সবাই ছিলো মিলে মিশে এক সাথে । কিন্তু হঠাৎ করে একজন বলে ঊঠলো হিন্দু মুসলিমকে আলাদা করে দেওয়া হোক ।’
‘ নানু কে তিনি যে , একথা বলেছেন?’
‘ তিনি ছিলেন পাকিস্তানের মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ্ ।’
‘ ও ( লম্বা করে ) তারপর?’
‘ তারপর মুসলমানদের বিভক্ত করে পাকিস্তান এবং হিন্দুদের ভারত এই দুটি দেশে ভাগ করা হলো ।কিন্তু পাকিস্তান ছিলো দুটি অংশে বিভক্ত ।পূর্ব পাকিস্তান যা এখনকার বাংলাদেশ এবং পশ্চিম পাকিস্তান অর্থাৎ এখনকার পাকিস্তান ।’
‘ নানু তবে বাংলাদেশ কোথায় ছিলো?’
‘ আরে বাবা বলতেছি তো ’
‘ হুম বলো ’
‘ তখন পশ্চিম পাকিস্তানীরা বিভিন্ন ভাবে পূর্ব পাকিস্তানীদের উপড় অন্যায়, অত্যাচার, অবহেলা ও শোষন করতে আরাম্ভ করে ।বিশেষ করে অসহায় বাঙালিদের উপড় চাপিয়ে দেয় ওদের উর্দু ভাষাকে ।’
‘ কেন! বাঙালিরা তার প্রতিবাদ করে ওদের ধরে ধরে মারতে পারেনি?’
‘ তাও করেছে বাঙালিরা ।’
‘ কখন?’
‘ সেটা তো এখন বলব না কি ’
‘ হুম বলো ’
‘ তারপর বাঙালিরা ধীরে ধীরে উত্তেজিত হয়ে ওঠে , এবং প্রতিবাদ করা শুরু করে পশ্চিম পাকিস্থানীদের উপড় ।প্রথমে তাঁরা প্রান প্রিয় মাতৃ ভাষা জন্য আন্দোলন শুরু করে ।সে আন্দোলনে ওরা গুলি ছোড়ে এতে বেশ কয়েকজন বাঙালি ছাত্র শহিদ হয় ।যার কারনে অর্জিত হয় আমাদের বাংলা ভাষা ।তার পর শুরু হয় দেশের জন্য লড়াই । পশ্চিম পাকিস্তানের দোষরেরা র্নিরবিচারে এই পূর্ব পাকিস্তানীদের উপড় অত্যাচার শুরু করে ।প্রান কেড়ে নিতে থাকে নারী, শিশু, বৃদ্ধ সহ সকলের ।এ দেশের মানুষ তখন দলে দলে মুক্তি বাহিনীতে যোগ দেয় ।এবং সে সময়ের বাঙালি নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুরের নেতৃত্বে বাঙালিরা যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে যুদ্ধ করা আরাম্ভ করে দেয় ।১৯৭১ সালে সু-দীর্ঘ ৯ মাস ধরে চলে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ ।পরিশেষে ত্রিশলক্ষ্ প্রানের বিনিময়ে অর্জিত হয় আমাদের বিজয় ।’
‘ কবে?’
‘ ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বরে উদয় হয় বাঙালিদের চিরউজ্জল বিজয়ের সূর্য ।যা বিশ্বের ইতিহাসে চিরদিন থাকবে উজ্জল হয়ে বাংলাদেশকে আলোকিত করে । ’
চোখ বড় বড় করে অবাক দৃষ্টিতে শুধু তাঁকিয়ে রইলাম, যেনো সেই বিজয়ের সূর্য আমার সমূখে …

মন্তব্য করুন