Skip to content

বয়কটের বিশ্বকোষ: ভারত থেকে চীন পর্যন্ত – প্রসূন গোস্বামী

দেশপ্রেম উগলাচ্ছে! বয়কটের আঁচ জ্বলে উঠেছে!
ভারতীয় পণ্য, সিনেমা, ধারাবাহিক – সব বয়কটের লিস্টে ঠিকই আছে।
কিন্তু দেশপ্রেমের এই ঝড়ে আর কী কী বয়কট করা যায়,
সেটা কি কখনো ভাবিনি? চলুন, একটু চিন্তা করা যাক!

ভারতের দূষিত বাতাস আমাদের দেশে ঢুকে পড়ে পরিবেশ দূষিত করছে।
শ্বাস নিতেও ভার! এই বাতাস আমরা আর কেন শ্বাসে ফেলি?
বয়কট! শুধু বাতাস না, মেঘ বাতাসে ভাসতে ভাসতে এসে বৃষ্টি দেয়।
এই বৃষ্টির পানিও বয়কট! বাড়িতে বসে থাকব,
মৃত্যুঝাপটা দেওয়া রোদের মধ্যে!

পৃথিবী ঘুরে যখন দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে ঘোরে,
তখন তো ভারতের উপর দিয়েই যায়। এই অবিচার!
এই পৃথিবীর গতিপথ আমরা আর সহ্য করব না!
বিজ্ঞানীরা একটা উল্টোদিকে ঘোরা পৃথিবী আবিষ্কার করুন,
না হলে পৃথিবীকেই বয়কট!

রাতের আকাশে ঝলমলে চাঁদ ও তারা – কী মায়াবি দৃশ্য!
কিন্তু সবার জানা উচিত, এই চাঁদ ও তারা ভারতের উপরেও ঝলমলে!
এই অপমান আর সহ্য করা যায় না। রাতে ঘুমিয়ে থাকব,
আকাশের দিকে তাকাব না!

দেশপ্রেমের জোরে ভারতকে বয়কট করছি, কিন্তু চীন,
যারা আমাদের দেশকে ডাস্টবিন মনে করে, তাদেরকে?
না, চীনা পণ্য বয়কটের কথা এখন উঠলো কেন?
বয়কটের বিশ্বকোষ তো লিখতে হবে! আমরাও তাদের জিন্স, পাওয়ারব্যাংক,
স্মার্টফোন – সব বয়কট করব। কাপড় জড়িয়ে, স্টিক লাইট জ্বালিয়ে,
পাথর দিয়ে ফোন করে যোগাযোগ করব। অসুবিধা হবে ঠিকই,
কিন্তু চীনের ঋণের বোঝা আর থাকবে না!

একটা দেশের লোকজন কতটা বুদ্ধিমান হলে এমন জিনিস ভাবতে পারে
এবং এমন আচরণ করতে পারে! এদের তো বুদ্ধির জন্য নোবেল পুরস্কার দেওয়া উচিত।
তবে মনে হচ্ছে, এই পুরস্কারের জন্য তাদের আর অপেক্ষা করতে হবে না,
কারণ গ্রামের এক বুড়ো বিজ্ঞানী তাদের জন্য একটি বিশেষ ‘বুদ্ধিমত্তা ক্রাউন’ তৈরি করেছেন,
যা পরলে মাথার উপর থেকে বুদ্ধির বাতি জ্বলে উঠবে!
এবং যখন তারা এই ক্রাউন পরবে, তখন তাদের বুদ্ধিমত্তা এতটাই বেড়ে যাবে যে,
তারা নিজেদের নোবেল পুরস্কার নিজেরাই তৈরি করে নেবে!

বয়কটের এই খেলা কতদিন চলবে?
কে জানে, হয়তো একদিন আমরা নিজেদেরকেই বয়কট করতে শুরু করব।
নিজের মধ্যে থাকা ভারতীয় কিছু, চীনা কিছু – সব খুঁজে বের করে বয়কট!
হয়তো রক্তের একটা বড় পরীক্ষা করিয়ে দেখতে হবে,
কোনো ড্রপে ভারতীয় উপাদান আছে, কোনোটাতে চীনা!
এমনকি নিজের চিন্তাধারা পর্যন্ত বয়কট করতে হবে,
যদি মনে হয় এটা কোনো ভারতীয় বা চীনা দার্শনিকের প্রভাবে এসেছে।
এই যে আমরা বাঙালি – ভারতীও পণ্য, গর্বটা কি বাদ দেওয়া যাবে না? সেটাও বয়কট!

বিশ্ব মানব হিসেবে, চলুন, সারা পৃথিবীকেই বয়কট করি।
এই পৃথিবীতে কোনো মনুষ্যত্ব আছে? নেই!
তাহলে পৃথিবী থাকুক, আমরা থাকব না। মঙ্গলে যাব, বুধে যাব –
কিন্তু এই পৃথিবীতে আর থাকব না!

কিন্তু মঙ্গলে যাওয়ার টাকা কোথায়?
আর মঙ্গলেও যদি বা ভারতীয় কোনো গাছ থাকে,
চীনা কোনো পাথর থাকে, তাহলে?

এ জীবনে বুঝি আর কোনো বয়কট করা হলো না!

কিন্তু তাহলে কি আমরা থাকব?
এই বয়কটের বিশ্বকোষের শেষ পাতা কোথায়?
কবে শেষ হবে এই অজ্ঞতার রাজত্ব?

এই বয়কটের ঝড়ে হারিয়ে যাচ্ছে মানুষ হওয়ার ম…ম…মায়া।
আমরা কি আর নিজেদের কাছেই মানুষ নই?

দেশপ্রেম ভালো, বয়কটও ভালো। কিন্তু ভালোবাসাটা কোথায়?
বিশ্বকে ভালোবাসা, প্রকৃতিকে ভালোবাসা, নিজেকে ভালোবাসা –
এই ভালোবাসাগুলো কোথায় হারিয়ে ফেলছি?

হয়তো বয়কটের বিশ্বকোষের শেষ পাতায় লেখা থাকবে –

“শেষ পর্যন্ত, বাকি রইলো –

শুধু

মানুষ

হওয়ার

চেষ্টা।”

মন্তব্য করুন