Skip to content

প্রেমের নিরঞ্জনা – মোঃ ইব্রাহিম হোসেন রাজশাহী

প্রেমের নিরঞ্জনা ( চতুর্থ একক কাব্যগ্রন্থ)
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

১।
কবিতা আমার প্রাণ
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

কবিতা আমার আত্মা কলিজা
কবিতা আমার প্রাণ,
দুঃখ ভুলায় কষ্ট ভুলায়
গাই কবিতার গান।

মনের ভেতর জমানো ব্যথায়
ডুকরে ডুকরে কাঁদি,
কাব্য কথায় মনকে শুধাই
কাব্যতে মন বাঁধি।

সঙ্গিবিহীন একলা প্রহর
বুকের মধ্যে জ্বালা,
ছন্দে ছন্দে মন বিষাদের
কাব্যে গাথন মালা।

কবিতা আমার পদ্মা নদীর
উথাল পাথাল ঢেউ,
কবিতায় বুঝে মনের বচন
নাহি বুঝে হায় কেউ!

কবিতা আমার বিদ্রোহী সুর
সাম্যবাদের ভাষা,
মানবাধিকার উন্নয়নের
সকল প্রাণের আশা।

২।
পাগলামি
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

কোত্থেকে যে আসলো ধেয়ে
শাপলা নামের এক ছুঁড়ি,
দিন দুপুরে হায় কী হলো
করলো মনের ঘর চুরি!

ধকধক করে বুকটা আমার
আমার পাশেই ভাই দাদু ,
চতুর চালাক সেই মেয়েটি
কয় ইশারায় আয় যাদু।

আমি তো হায় বেসামালে
টসটস পড়ে জিভের রস,
ডাণ্ডা হাতে কয় দাদু ভাই
আয় পাশে আয় একটু বস।

সেই ছুঁড়িটি দূর থেকে হায়
মারলো কষে একটি ঢিল,
পড়লো দাদুর গায়ের উপর
মারলো আমায় জোরসে কিল।

পাগলামি আর করবি কত
ঠোকনা মেরে গালের ‘পর,
ছেমড়ি বলে ছাড় দাদুরে
আমারে তুই চাপটে ধর।

৩।
খেলা থেকে প্রেম
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

ছোট্ট বেলা খেলাধুলা অস্তমিত রবি,
দু’চোখের পাতে ভাসে সেই স্মৃতি ছবি।
দৌড়াদৌড়ি হাসাহাসি খেলা হলে শেষ,
সাঁঝের বেলাতে ফের ছোটখাটো রেষ।

কানামাছি হাডুডুর যত কলরব,
ডাঙগুলি লাফালাফি আরো কত সব!
দৌড়াদৌড়ি পিঠে পড়ে আঘাতের দাগ,
এত জোরে থাবা দিলে কেউ করে রাগ।

খেলিবো না তোর সাথে তুই বড় বদ,
লেগেছে গায়েতে মোর ব্যথা করে কদ।
আগামীতে জোট বেঁধে খেলিবো পুতুল,
নতুনে নতুন দল গঙ্গার’ই কূল।

ছেলেমেয়ে একসাথে তুলিতাম ফুল,
পুষ্পমালা দিয়ে হত দুই কানে দুল।
ধুলোবালু দ্বারা গড়া খেলনার ঘর,
মিছামিছি বউ সাজা মিছামিছি বর।

মা ও বাবা দাদা-দাদি দেখিত যখন,
সকলের মন ডরে কাঁপিত তখন।
দুই হাতে খেলাঘর ভেঙে দিয়ে দৌড়,
লুকায় গোয়াল ঘরে ঠিক যেনো চৌর।

কী বলিবো সেই কথা সেই থেকে প্রেম,
হৃদে আঁকা দু’জনার জোড়া ছবি ফ্রেম।
লাগিলো ভ্রমর হায় তার পিছে সেই,
নিয়ে গেলো বধূ করে আজ সেই নেই।

খেলা থেকে প্রেম হয় প্রেম থেকে জ্বালা,
সেই জ্বালা হয়ে গেলো এ গলার মালা।
আজো কাঁদে নিশিরাতে আঁখি তার তর,
ধড়ফড় করে বুক বেদনার ঝড়।

৪।
বুঝবে সেদিন
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

বুঝবে সেদিন বুঝবে তুমি
বুঝবে আমায় প্রিয়া,
যেদিন আমি চলে যাবো
চিরবিদায় নিয়া।

আর কখনো আসবো না যে
করতে প্রেমের দাবি,
কেমন তোমার কাটবে সেদিন
নিত্য আমি ভাবি?

আর যাবো না ফুল বাগানে
গাঁথতে প্রেমের মালা,
বুকের মাঝে করবো দাফন
তোমার দেওয়া জ্বালা।

ডাক দেবো না প্রিয়া বলে
কেমন তুমি আছো?
এইটুকু যাই দোয়া করে
চিরসুখে বাঁচো।

ভুল করে’ও পড়ে যদি
আমায় কভু মনে,
ছিলো না মোর প্রতারণা
ভেবো তোমার সনে।

আমার তরে তোমার কভু
ঝরে যদি আঁখি,
ভেবে নিও ছিলাম আমি
তোমার প্রাণের পাখি।

কেউবা যদি নাই বা ডাকে
প্রিয়া নামটি ধরে,
বুঝবে আমার এ প্রেম ছিলো
শুধুই তোমার তরে।

হয়তো তুমি কাঁদবে সেদিন
থাকবো নাকো আমি,
প্রেমের জ্বালা বুঝবে তখন
প্রেম যে কত দামি?

চোখের জলে বুক ভাসাবে
ভিজবে বালিশ খানি,
একলা জেগে চাঁদনি রাতে
মুছবে চোখের পানি।

সেদিন তুমি বুঝবে আমায়
বুঝবে আমার বাণী,
আমার প্রেমের রাজ-মহলে 
তুমিই ছিলে রানি।

৫।

প্রাণো বধূ
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

তোমার প্রেমে পাগল এ মন পাগলপারা আমি
নভোমণ্ডল নভস্থলে নাই কিছু আর দামি
ভাল্লাগে না তোমায় ছাড়া
তুমি বিনে সর্বহারা
উতলা মন দিশেহারা
ডাকছি বধূ দাও না সাড়া
ধন্য করো নজর দিয়ে ব্যাকুল তোমার স্বামী।

মান-অভিমান আর করো না, আর থেকো না দূরে
কোকিল কণ্ঠে ডাক দিয়ে যাও মিষ্টি মধুর সুরে
ধন্য আমি তোমায় পেয়ে
তাই বারেবার দেখি চেয়ে
মান করো না লক্ষ্মী মেয়ে
ঘুরবো প্রেমের তরী বেয়ে
পঙ্খিরাজে উড়বো দু’জন দেখবো ভুবন ঘুরে।

তোমার সাথে চাই মিতালি চিরদিনের তরে
প্রেমাদরে বুকের মাঝে নিত্য রেখো ধরে
তুমি আমার জীবন মরণ
অনন্তকাল থাকবে স্মরণ
এই করে পণ করছি বরণ
করেছো মন আমার হরণ
থাকলে পাশে বাঁচবে জীবন নইলে যাবে মরে।

৬।

আমরা দু’জন
মো: ইব্রাহিম হোসেন

এক আর একে দুই -মনের মধ্যে থুই,
ইব্রাহিমের নূর – নূরমহলের সুর।
দুই তনু এক মন – আমরা তো দুই জন,
মহান রবের দান – দুই দুইয়েরি প্রাণ।

ছিলাম একাই একা – একটা দিনের দেখা,
মুক্তা ঝরানো হাসি – পরালো প্রেমের ফাঁসি।
নয়ন তারাতে ভাসে – স্বপ্নতে এসে হাসে,
হাত বাড়ালে তো নাই – কেমনে তাহাকে পাই?

এ মনের অঙ্গনে – মসজিদ প্রাঙ্গণে,
কেঁদে কেঁদে একা তায় – কতদিন সাধানায়!
মনে প্রাণে চেয়েছি যে – প্রিয় বধূ তুমি যে সে,
বন্ধনে হয় মিল – উল্লাসে রয় দিল।

সেই থেকে এ অবধি – দিবা’যামী নিরবধি,
ছুটে ছুটে পাশে আসি – এখনো তো ভালোবাসি!
দুুই যুগের’ও বেশি – বৌ স্বামীর এ খেশি,
সুখ মোহনার কূল – ফুটুক প্রেমের ফুল।

প্রার্থনা নিরালায় – মগ্নতে দু’জনায়,
মিনতি এ তব দ্বার – হে মালিক পরোয়ার!
জান্নাতে দিও ঠাঁই – দু’জন দু’জনে চাই,
নাই আর কিছু চাওয়া – এই হোক শেষ পাওয়া।

৭। 
চন্দ্রালোকের প্রেম
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

রাত এলে চোখ মেলে দেখি ওই আকাশে,
আকাশের নীল নাই সব লাগে ফ্যাকাশে।
জেগে থাকা চাঁদ মামা একা চুপ নিরালা,
আলো ছড়ে আলোকিত এ ভুবন উজালা।

তার থেকে বহুদূরে মিটিমিটি তারারা,
ঘুরেফিরে জ্বলে নিভে চাঁদ দেয় পাহারা।
চারিদিক নিশ্চুপ সুন্দরী এ কারা?
লাল পরী নীল পরী কী দারুণ চেহারা!

গভীর রজনী ক্ষণে পালকির বেহারা,
কাঁধে বহে পরী রানি দেখিয়া দিক হারা।
মন চায় সাথে তাই যাই আমি ছুটিয়া,
ফুল পরীদের সাথে করি প্রেম চুটিয়া।

বিভোর আমার প্রেমে থাকে তারা তাকিয়া,
কিশোরী তরুণী শিস দেয় ঠোঁট বাঁকিয়া।
হাসি আর গানে ভরা উল্লাসে আসর,
পরিণয় সাজে এক প্রেমের এ বাসর।

৮৷
প্রণয়িনীর ডাক
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

ফুটেছে ফুল হয় কত ভুল
ভ্রমর অলি কই ?
তার আশাতে পুষ্প হাতে
নিঃসঙ্গতায় রই।

উতলা মন কয় সদা ক্ষণ
নাগর প্রেমিক আয়,
প্রেমিকা তোর প্রেমেতে ঘোর
তোকেই শুধু চায়।

মন মানে না ভাল্লাগে না
তোর করি তাই খোঁজ !
সূর্য পাটে নদীর ঘাটে
ফুল নিয়ে যাই রোজ।

বিকেল বেলা প্রেমের মেলা
জোড়ায় জোড়ায় রয়,
দখিন বায়ে ডিঙি নায়ে
মধুর কথা কয়।

ভালোবাসা হয় নিরাশা
তুই পাশে নাই তাই,
আয় না কাছে প্রাণ না বাঁচে
চিত্তে দেবো ঠাঁই।

একলা আমি পাইতে কামী
তোর প্রেমেরই সাধ,
বন্ধে আঁখি বিভোর থাকি
নাই প্রেমে মোর খাদ।

৯।

জীবন নদে খরা
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

তব প্রেমের ব্যর্থতারই শিকার প্রেমিক আমি,
ঝলসে গেছে অন্তরাত্মা জীবন গেছে থামি।
কেউ জানে না মনের ব্যথা নরক অনল জ্বলে,
ধিকিধিকি প্রেম দহনে দেহটা যায় গলে।

দোষ ছিলো না একটা তো দোষ তোমায় ভালেবাসি,
এই অপরাধ আর অপবাদ দিলে গলায় ফাঁসি।
তোমার বাবা চাকরিজীবী আমার বাবা কৃষক,
তাই হলো প্রেম প্রাণের বৈরী রইলো না আর বিশোক। 

আজকে যদি ধনী হতাম, হতাম ধনীর ছেলে,
সকল বাধা ছিন্ন করে আসতে ডানা মেলে।
ঠাঁই দিতে ওই বুকের ঘরে ধরতে বাহু ডোরে,
ভালোবাসায় ভরিয়ে দিতে আসক্ত প্রেম ঘোরে।

এই তো কসুর প্রেমের অসুর বক্ষতে তির মেরে,
ঘর ও বাড়ি গ্রাম ছাড়া আজ করলো আমায় তেড়ে।
তবুও কভু যায়নি ভোলা সেই গ্রামেরই স্মৃতি,
যেথায় ছিলো তোমার আমার প্রেম নিবেদন প্রীতি।

তাকিয়ে দেখো রঙিন ভুবন হাজার রঙে রাঙে,
বিষাদী এই জীবন আমার মন বেদনায় ভাঙে!
বাল্যকালের প্রেমের জালে বন্দি আমি ধরা,
তোমার প্রেমের নাগাল বিহীন জীবন নদে খরা।

১০।
সঙ্গিবিহীন
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

সাথী আয় তোকে চাই আনচান মন,
এই বুকে দ্যাখ চেয়ে কতটা দহন!
যন্ত্রণা দুখ জ্বালা পেতেছে আসন,
ভুলে যাবো ভাবি মন মানে না শাসন।

পিরিতের জ্বালাতন যায় না সহন,
ব্যথার সাগরে ডুবি পাহাড় বহন।
নাই কেউ শুনিবার ধিক্কার পাই ,
আকাশ ভাঙিয়া পড়ে চিৎকারে তাই।

ফাটে বুক আসে চুপ মৃত্যুর যম,
হয় না মরণ তবু যায় নাকো দম।
পৃথিবীতে নাই কেহ এমন স্বজন,
বুঝিবে মনের ব্যথা আছে বা ক’জন?

প্রেমপ্রীতি আছে বলে পৃথিবী সচল,
বুঝেও বুঝে না সব বিবেক অচল।
দু’টি তন একি মন দু’জনে দু’জন,
মিলেমিশে একাকার পাখির কূজন।

বুঝলি না ভালোবাসা ভুলিবার নয়,
কুরে কুরে খায় দেহ তিলেতিলে ক্ষয়!
নীড় হারা পাখি আমি এই ধরাধাম ,
তোকে বিনে এতটুকু নাই কোনো দাম!

আসবি না ফিরে আর বুঝে গেছি তুই,
ভুলিনি তবুও বুকে যতনেতে থুই।
দোয়া করি সুখে থাক, থাক চিরদিন,
রয়ে যাবো ব্যথা নিয়ে সঙ্গিবিহীন।

১১।

আলতো ভালোবাসা
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

প্রিয়া আমায় প্রশ্ন করে
একলা কিবা করছো,
চক্ষু বুজে নদীর তীরে
কিবা পুঁথি পড়ছো?

উত্তরে কই একলা বসে
তোমার কথাই ভাবছি,
তটিনীর ওই শান্ত জলের
কাছে প্রশ্ন রাখছি।

আসবে কখন? প্রিয়া আমার
মন ইশারায় ডাকছি,
মনের ঘরের ফুলদানিতে
রংতুলিতে আঁকছি।

আমার প্রশ্নের জবাব দিতে
জোরসে বাতাসে হাঁকছে,
নদীরই জল নদীর বুকে
ঢেউয়ের তালে নাচছে।

বলছে আমায় ওহে নাগর!
ওই দিকে চাও আসছে,
লাল দোপাট্টা উড়ছে বায়ে
মিষ্টি করে হাসছে।

পিছন পানে চেয়ে দেখি
সত্যি তুমি আসছো,
আমার গলা জড়িয়ে ধরে
আলতো ভালো বাসছো।

১২।
তুমিই প্রেরণা
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

বাস্তবে স্বপ্নতে তুমি প্রেরণা
তোমার কারণে কবি করি রচনা
যত দূরে থাকো তুমি নেই বেদনা
তোমাকে না পেয়ে দুখী এই ভেবনা।

তোমার প্রেমের ঘাতে রচি পদ্য
মাঝে মাঝে সূচনায় হয় গদ্য
অনুভবে কাঁকনের তব শব্দ
পাইনি পেয়েছি তবু প্রেম লব্ধ।

ভালো থেকো সুখে থেকো এই কামনা
থাক না হৃদয়ে মোর জমা যাতনা
তুমি প্রেম তুমি আশা তোমাকে বিনা
শূন্য জগৎ যেন ফুল ফোটে না।

আমাকে মনেতে রেখো করিওনা পর
কোরবান এ জীবন তোমারই তর
আসে যদি ধেয়ে কভু পাষাণী ঝড়
জান বাজি রেখে যাবো পুষিওনা ডর।

তোমার কাছেই ঋণী জগতে আমি
রব দ্বারে মিনতিতে করুণা-কামী
পৃথিবীর সেরা নারী সবচে দামি
তব তরে প্রার্থনা দিবা ও যামী।

১৩।

বিষাদময় প্রেম
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

প্রেম জান প্রেম প্রাণ প্রেমেই মরণ!
খাঁটি প্রেমে হাসা কাঁদা ব্যথার কারণ।
প্রেমে সুখ প্রেমে দুখ প্রেমেই নরক,
বিরহ ও বেদনার স্মৃতির স্মারক।

হায় হায় প্রেম হায় কাতর ব্যথায়!
বারবার মন যায় অতীতে সেথায়।
দুই যুগ পার হলো কেঁদে কেঁদে চোখ,
শোনে না বারণ মন তবু করে খোঁজ।

ওগো মোর প্রিয়তমা প্রিয় জান পাখি!
ভুলিনি ভুলিনি আজো লোনা জলে আঁখি।
গত রাতে স্বপ্নতে দেখি যে তোমায়,
বিবাহের বন্ধনে জড়ালে আমায়।

মৃদু মৃদু হাসি আর উল্লাসে মন,
তব ছোঁয়া পেতে মন চায় সদা ক্ষণ।
অধরের কাঁপুনিতে কাঁপে এই বুক,
বুকের মধ্যখানে করে ধুকধুক!

বাড়ির উঠানে করো শুধু ঘুরঘুর,
সাঁঝের বেলায় যাও দূর বহুদূর।
একদা বিকেল বেলা সন্ধা লগন,
যাও চলে বেজে উঠে হাতের কাঁকন।

সামনে দাঁড়িয়ে বলি যাবে গো কোথায়?
সারারাত পার হোক কথায় কথায়।
দেবো নাকো যেতে আর কখনও কভু,
কত ভালোবাসি শুধু জানে ওই প্রভু !

মুচকি ঠোঁটের হাসি চাঁদ মাখা মুখ,
যত দেখি তত লাগে সুখ আর সুখ।
অপলকে চেয়ে থাকি বারবার তাই,
তুমি ছাড়া প্রিয়জন আর কেহ নাই।

কিছু-ক্ষণ পরে মোর ঘুম ভেঙে যায়,
হঠাৎ জেগেই দেখি নাই তুমি হায়!
দু’চোখের পানি ঝরে সাগরে মিলায়,
নরক দহন বুকে একা নিরালায়।

কাঁদিয়া কাঁদিয়া বলি চিৎকারে ওই,
দয়াময় ওগো প্রভু থাকো তুমি কই?
কেনো তুমি প্রেম দিলে হৃদয় জখম,
মনের ময়ূরী কভু মেলে না পেখম।

বিনয় করি যে আজ তব দ্বারে রব!
দিও না প্রেমের ব্যথা নিও তবু সব।
এই প্রেমে পোড়ে মন, পুড়ে ছাই তন,
নরকের জ্বালাতন যায় না সহন!

বুঝে না মনের জ্বালা কখনো মানুষ,
ব্যথার সাগরে ডুবে প্রেমিক বেহুঁশ!
অভাগা আমার মত কেউ যেন আর,
বহন না করো কভু যাতনার ভার!

১৪।

পরাবো প্রেমের তাজ
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

ওগো মোর প্রিয়তমা!
             আমার ঘরের রমা,
আঁধারের আলো তুমি
             যতনে যতনে চুমি।

সংসার ঘরণীর
               হাসি গান অবনীর,
জীবনের চাওয়া পাওয়া
             তব পথ-পানে ধাওয়া।

তুমিই আশার আলো
            আঁধারের দীপ জ্বালো,
আমার নয়নে নূর
               কোকিল কণ্ঠে সুর।

প্রেমো বাগানের ফুল
                  জীবন তরীর কূল,
পৃথিবীর যত সুখ
                 পাই দেখে তব মুখ।

তুমি নীলে চাঁদ ওই
              অপলকে চেয়ে রই,
লক্ষ কোটি তারারা
                দেখে রূপ দিশেহারা।

পাগল প্রেমিক আমি
            তোমার-ই প্রিয় স্বামী,
হাতে হাত রাখো আজ
           পরাবো প্রেমের তাজ।

১৫।

আমার ভালোবাসা
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

আমার মনের ফুলদানিতে
রাখবো সজাই তোরে,
সারাজীবন ভালোবেসে
রাখিস বাহু-ডোরে।

তুই যে আমার মনের রানি
ওই আকাশের চন্দ্র,
দেহের মাঝে অঙ্গ প্রতির
শিরায় শিরায় রন্ধ্র।

স্বর্গপুরের সুখ ঠিকানা
ফুল-বাগানের গোলাপ,
আহ্ কী দারুণ! মিষ্টি হাসি
কোমল ঠোঁটের প্রলাপ।

তুই যে ঘরের আঁধারে নূর
দুই চোখে মোর জ্যোতি,
প্রেম নগরের রাজ্যে আমার
স্বর্ণ হীরা মোতি।

এই ভুবনে জন্ম আমার
শুধুই যে তোর কারণ,
দুঃখ সুখের মধ্যখানে
যত্নে করি ধারণ।

তুই যে আমার বাঁচন মরণ
এই জীবনের আশা,
আলাদিনের চেরাগ যে তুই
আমার ভালোবাসা।

১৬।
মাগো তুমি সুখের ঘর
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন
===============

মাগো মা মা তোমার মত
আর কেহ যে নাই ,
তোমার পায়ের নিচে আমি
একটু জায়গা চাই।

তুমি ছাড়া আঁধার ভুবন
শূন্য জীবনটাই ,
তোমার পায়ের নিচে মাগো
একটু দিও ঠাঁই ।

তুমি থাকলে খুশি আমার
আল্লাহ রাসূল খোশ ,
আমার ভুলে মাগো তুমি
রেখো না মন রোষ।

কষ্ট সয়ে দুঃখ সয়ে
করলে বড় তাই,
এই ঋণ তো শোধ হবেনা
বলেন মালিক সাঁই।

স্বর্গ আমার জানি মাগো
তোমার পায়ের তল,
আমার তরে ঝরায়োনা
একটু চোখের জল।

আমার তরে মাগো তোমার
ঝরলে আঁখির নীর,
জাহান্নামে রইবো আমি
জ্বলবে আমার শির।

জীবন চলার পথে মাগো
যত আছে ভুল , 
ক্ষমা করে না দিলে মা
হারিয়ে যাবে কূল।

তুমি আমার স্বর্গ মাগো
তুমি ঘরের নূর,
আমায় রেখে কখনো মা
যেও নাকো দূর।

ভুলের তরে মারো আমায়
করো না মা পর,
মাগো তুমি জান্নাত আমার
তুমি সুখের ঘর।

১৭।
আমার পরান পাখি
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

শ্যামলা বরণ চেহারাটা
দীঘল কালো আঁখি,
কে জানিত?  সেই যে হবে
আমার পরান পাখি!

মেঘের বরণ চুলগুলো তার
চিরল দাঁতের হাসি,
মনের মাঝে উঠলো বেজে
প্রেমের মোহন বাঁশি।

তুলতুলে গাল হই বেসামাল
পড়ে না হায় পলক,
হাসির মাঝে মুক্তা ঝরে
দারুণ রূপের ঝলক!

কোমল ঠোঁটের মিষ্টি ভাষা
রূপ নগরের রানি,
চোখের তারায় নিত্য ভাসে
প্রিয় বদন’খানি।

ক’দিন পরে আসলো ঘরে
লাল শাড়ি তার অঙ্গে,
বিনি সুতোর মালা দিয়ে
বাঁধলো আমায় সঙ্গে।

সেই মেয়েটি কেউ ছিলো না
আমারই প্রাণ বধূ,
আমার মনের প্রেম নগরের
ফুল বাগানের মধু।

১৮।

কাগজের ফুল
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

চব্বিশ বছর পার হলো তোমার প্রতীক্ষায়!
আজও আছি বসে শুধু তোমারই  আশায়,
মন পিপাসায়, একা নিরালায়!
পাখিরা উড়ে শূন্য আকাশে, গেয়ে যায় গান হরষে ,
চেয়ে চেয়ে দেখি গাছের শাখায় পাতা নড়ে,
ঝরে পড়ে বাতাসে, আমি প্রেম তৃষ্ণার্ত এক অভাগা প্রেমিক, দেহ মন তন অবশে!

কত কষ্টে কাটে নিভৃতে নিরালাতে কষ্টের সে  প্রহর!
কত জনে পাঠালাম এ মনের বার্তাখানি “কেমন আছো তুমি”? 
হায়রে কপাল! তবু এলো না কোনো  খবর,
অশ্রু চোখে কাঁপে জঠর!
আমি জানি, এ পথ দিয়েই যাবে তুমি,
ধন্য হবে তোমার পদধূলির ছোঁয়ায় এ চারণভূমি।

আমি জানি, আসবে ফিরে এই নৌ-পথে
মাঝি হয়ে দঁড়িয়েছি তাই, নোঙ্গর ফেলেছি সাগর পাড়ে;
কত দিন কেটে গেলো, কত রাত ভোর হলো!
না পেলো দেখা তব এই চক্ষু যুগল, অবিরত বুক ভেসে যায় দু-চোখের লোনাপানির ভারে।

আর কত ঝরালে আঁখিদ্বয় !
দেবে প্রিয়া, দেবে তুমি ভালোবেসে হাতছানি।
আর কত হলে হৃদয়ে রক্ত ক্ষরণ!
কাছে এসে বলবে ভালোবাসি প্রিয়!
কেঁদো না, আর কেঁদো না, ভুলিনি এইতো আছি আমি।

জীবন যৌবন সবই গেলো, আরও গেলো মান-সম্মান, জাতিকুল,
জানি না, ভালোবেসে করেছি আমি এ কী ভুল! দেবো আর কত মাশুল!
জেনে গেছি, আজ আমি জেনে গেছি,
আসবে না ফিরে আর কোনদিন, ফুটবে না, ফুটবে না বাগে ফুল!
তোমাকে ভালোবেসে হারালাম জীবনের দুই দু’টি কূল।
আজ আমি ঝরে পড়া গন্ধবিহীন কাগজের এক ফুল!

১৯।
কবিতার জীবন
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

কবিতা মোদের শক্তি সাহস
কবিতা মোদের বল,
কবিতায় হয় জয় মানবতা
ভিত্তির গড়ে তল।

কবিতায় ঝরে দু’চোখের পানি
বিদ্রোহী ডাক তাল,
রণাঙ্গনের শত্রুসেনার
বিরুদ্ধে এক ঢাল।

অন্যায় আর অবিচার যত
নির্মূলে তার হাঁক,
শোষণ পীড়ন অপরাধীদের
বন্ধ মুখের বাক।

সমাজ চেতন সচেতনতায়
শক্তিশালীর কর,
বীর সেনাদের উজ্জীবিত’র
প্রবল গতির ঝড়।

কবিতায় প্রেম কবিতায় হেম
মানব জাতির তর,
দুঃখ বিষাদ খোশ উল্লাসে
সুখ বেদনার ঘর।

২০।
দুস্থ কবির অবস্থা
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

একটা কবিতা সৃষ্টি করতে লাগে সময়,
ব্রেইন, মেধা, খাতা, কলমের কত অপচয়! 
খরচ করতে হয় মোবাইলের এমবি ;
তবুও কারো লেখা পায় না কোনো গ্রন্থে আশ্রয়,
দেয় না কেহ চিত্তে প্রশ্রয়,
কষ্টের বিনিময় লেখক পায় মিথ্যা আশ্বাস চমৎকার,
আন্দাজে ফুলঝুরি মন্তব্যের ঝংকার,
এ তো বুঝি প্রশংসা নয়, ভর্ৎসনা তম্বি!

কষ্টের ফলাফল উলুবনে বৃথা যায়,
হায়রে হায়!  লেখক এ কী অসহায়!
তাদের লেখা নিয়ে গড়ছে কেহ টাকার পাহাড়;
নিষ্ঠুর পৃথিবীর নিষ্ঠুর আচরণ!
অসাড়ের ন্যায় ঘুরা কবিদের বিচরণ।
নাই দানাপানি হায় নাই তার আহার!

এ যুগের কবিদের মূল্য কোথায়?
অর্থ যদি থাকে তবে উঠে পাহাড় চূড়ায়,
উল্লাসে  হারায় সে সাগরের নীলিমায়;
টাকা নাই মান নাই কীসের সে কবি?
সমাজে আবর্জনা মিশে যায় মাটির কাদায়!

লজ্জায় মুখ ঢাকে গোপনে কাঁদে 
মান যায় লাজা নাই তবুও কাব্য বাঁধে,
মজনুর মত যেন প্রেমিক সে জন,
ফরাদের মত শিরির প্রেমে ;
প্রতিদিন কাব্যের  লিখে সে লাইন,
এ যেন মনের জোর লেখনী আইন 
সে তো বিদ্রোহী!
কভু হাসে, কভু রাগে, কভু কান্দে।

২১.

প্রেমের আকুতি
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

সবার থাকে চাওয়া পাওয়া
চাওয়া পাওয়ার শেষ তো নাই,
আমার আছে একটা চাওয়া
হে রব করি আরজি তাই!

কষ্ট জ্বালা যন্ত্রণারা
বুকের মাঝে রয় যে ঠায়,
তার মাঝে রব তোমার দয়ায়
এক নারী ঠাঁই চিত্তে পায়।

সেই নারী তো আর কেহ নয়
কবুল করা আমার বৌ,
চাই নাকো আর এই ভুবনে
অন্য বাগের পুষ্প মৌ।

চাই না আমি রূপ সুন্দরী
জান্নাতেরই সত্তর হুর,
আমার ঘরের লক্ষ্মী বধূই
ত্রিভুবনের দীপ্ত নূর।

স্বর্গ মাঝেও দিও তাকে
তাইলে হবে সব পাওয়া,
ওগো মালিক সৃষ্টিকারী!
তোমার কাছে এই চাওয়া।

২২।
বেদনার ঝড়
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

জীবনে চলার পথে করেছি যে ভুল,
আপন তোমায় ভেবে দিয়েছি মাশুল।
ভাবিনি কখনো হবে ডুমুরের ফুল,
হাল ভেঙে নাও ডুবে হারাবে দু’কূল।

বাঁধিবো প্রেমের বাসা জ্বলিবে যে নূর,
কত মনে আশা ছিলো সব হলো চূর!
সুখের খোঁজেই তুমি আজ বহুদূর,
হৃদয়ের মণিকোঠে বেদনা বিধুর।

তুমি ছাড়া কোনো কিছু বুঝিনি তো কভু,
প্রাণ দিয়ে ভালোবেসে পাই জ্বালা তবু।
কত হাসি কত গান মুখে ছিলো মধু,
স্বপনের  রং-তুলি প্রিয় রাঙা বধূ।

মিছা আশা ভালোবাসা এই প্রেম প্রীতি,
নেই তুমি হয়ে গেলো আজ সব স্মৃতি।
হায় হায় প্রাণ যায় এ প্রেমের ইতি!
বলনা তোমার প্রিয়া এ কেমন নীতি?

ধুমধাম আয়োজনে বিবাহ আসর,
আমাকে ভুলিয়া তুমি বাঁধিলে বাসর।
দোয়া করি সুখে থেকো বাঁধো সুখে ঘর,
ভাঙুক আমার মন বেদনার ঝড়।

২৩।

মায়ের স্নেহ
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

মা’র সাথে খুব ছোট নাবালক শিশু,
করে এক শো-রুমেতে মল ত্যাগ হিসু।
ছড়িয়ে যায় গন্ধটা চারিদিকে ভাই,
আশেপাশে যারা ছিলো কেউ দেখি নাই।

দৌড় দিয়ে কেহ কেহ দ্রুত হয় বের,
নাক ধরে মুখে টিস্যু দেয় কেহ ফের।
মা জননী দেখি তার তড়িঘড়ি করে,
কাগজের টিস্যু নেয় মুছিবার তরে।

কাগজের এক ব্যাগ বাম হাতে নিয়ে,
সেই মল মুছে তার ডান হাত দিয়ে।
নাই কোনো অবহেলা নাই কোনো রোষ,
হাসিমুখে দেখা যায় মনে তার খোশ।

মুছে দিলো ধুয়ে দিলো শো-রুমের ফ্লোর,
আদরে আদরে নিলো শিশু বাহুডোর।
দু-হাতে জড়ায় ধরে দিলো গালে চুম,
শিশুটাকে সাথে নিয়ে ছাড়িলো শো-রুম।

নহে কষ্ট নহে রুষ্ট জননীর মন,
এভাবে পালন করে মায়ে সারাক্ষণ।
না আছে মা যার ঘরে আঁধার ভুবন,
নয়নের জলে ভেসে সাগরে ডুবন।

২৪।

প্রেমের ইঙ্গিত
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

এক রূপসী  মন সরসী
দুই কানে তার দুল,
নূপুর পায়ে পল্লি গাঁয়ে
যায় সে উড়ায় চুল।

রেশমি চুড়ি পুষ্প ঝুড়ি
ফুলবাগানের ফুল,
যতোই দেখি হলো এ কী
নাই কোনো তার তুল!

চিরল দাঁতে ফাঁকে ফাঁকে
মৃগনাভির বাস,
কোমল ঠোঁটে একটু ফোটে
মিষ্টি মধুর হাস।

কাজল কালো আঁধার আলো
দুই নয়নে তার,
আলোক রশ্মি অংক কষি
ভাবনাতে বার’বার।

সেই মেয়েটি একটি চিঠি
ছুঁড়লো আমার দিক,
হঠাৎ চমক ঠমক ঠমক
আড় চোখে ফিক-ফিক।

২৫।

পল্লীবালা সাইকেলে যায়
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

গাঁয়ের মেঠো পথের ধুলে
সাইকেলে এক কন্যা চলে 
মাথায় বেনি তার,
মিষ্টি মধুর মুচকি হেসে
প্যাডেল করে ঘুরে যে সে
আহা চমৎকার!

নাকে নোলক দুই কানে দুল
মন অজান্তেই যায় হয়ে ভুল
লাল দোপাট্টা গায়,
একটি কালো কপালে টিপ
চালচলনে হয় মৃদু ঢিপ
ঠামকঠমক চায়।

দীঘল কালো চোখ দু’টি ওই
পলক ছাড়াই বিস্মিত হই
চিরল দাঁতের হাস,
হীরা মতির মালা গলে
সাইকেলে সে ধীরে চলে
খাইছে এ মন ক্রাশ !

কোন রূপসী কোন গাঁ যে ঘর
সইনা যে আর একটুকু তর
কোথাতে তার বাস,
ডাক দিয়ে মন কয় যে তারে
পল্লীবালা নে আমারে
সাইকেলে কই যাস ?

২৬।
ফুলের রানি শরৎকাল
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

শরৎ এসেছে নানান ফুলে
শেফালী কামিনী পবনে দুলে,
বাতায়নে ওই মেঘেরা ভাসে
নদীর ধারের কাশেরা হাসে।

শিউলি ফুলের মাতানো ঘ্রাণে
খুশির দোলায় মন ও প্রাণে,
দোলনচাঁপার স্নিগ্ধতা বেশ,
হিমহিম বায়ে উড়ায় কেশ।

ছাতিম কদম বকুল শাখে,
কিচিরমিচির বিহগ ডাকে।
শরৎকালের শাপলা বেলি,
মেঘ রোদ তাতে নাই কুহেলি।

গগনশিরীষ  জবা ও জুঁই,
সাধ জাগে হাত বাড়িয়ে ছুঁই।
বকফুল আর মিনজিরি ও
কম নয় রূপে হিমঝুরিও।

শরৎকাল এ রূপের রানি,
ফুলের শোভায় মধুর বাণী।
ছড়িয়ে সে রূপ মন মজায়,
এই প্রকৃতির সজীবতায়।

২৭।
সুন্দরী এক বালা
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

হায় হায় চীনে এই মন হারালাম,
কী জানি কখন তার পাশে দাঁড়ালাম!
লাল পরী নীল পরী পড়ে না পলক,
আমি তো অবাক এ কী রূপের ঝলক!

বিধাতার কাছে তাই পুছি বারেবার,
কেমন সৃজিত রূপ মানব গড়ার?
মনে হয় দেখি নাই কখনও কভু,
লালিত পালিত ভবে তোমার এ প্রভু!

চাঁদ যেন হার মানে রূপেতে তাহার,
দেখে তারে প্রাণিকুল করে না আহার।
আলোকিত এ ভুবন ও রূপ ছটায়,
মৃগনাভি সুগন্ধ কেশের জটায়।

মাথাতে মুকুট তার রাজরানি সাজ,
লজ্জায় মরে মন তবু নাহি লাজ।
একবার দেখে তারে ভরে নাকো মন,
অনুভবে অগোচরে পাশে সারাক্ষণ।

মরেছে মরেছে মন হারিয়েছে আজ,
লাগে না করিতে ভালো আর কোনো কাজ।
জানে না জানে না সেই চীনের’ই বালা,
মনের ভুবন যার কারণ উজালা।

২৮।
মানুষ চিনে বন্ধু করো
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

এই জগতে মানুষ চেনা
বড়ো কঠিন ওরে !
মানুষ নামে অমানুষেই
আঘাত মারে জোরে।

মানুষ চিনে বন্ধু করো
নইলে যাবে ফেঁসে,
চড়বে ঘাড়ে সুযোগ বুঝে
মিষ্টি করে হেসে।

ভাববে তুমি আপন সে তো
রাখবে বুকে তাকে,
মারবে তিরে সুখের নীড়ে
ঠাঁই দিলে গো যাকে।

মনটা চিনে মনকে দিলে
মনকে ভালো’বাসে,
বন্ধু হবে প্রকৃত সে
থাকবে নাকো নাশে।

নিদানকালে রাত সকালে
রইবে পাশা-পাশি,
ফুটলে হাসি তোমার মুখে
ফুটবে তারও হাসি।

২৯।

অভিমানী বৌ  (এক)
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

বৌ করেছে খুব অভিমান
মুখখানা তাই ভারি,
ঈদ এসেছে পরনে চায়
বেনারসি শাড়ি।

হাতের বালা কানেরই দুল
গলে হীরার মালা,
খোঁপাতে ফুল চোখের কাজল
সাজ গহনার ডালা।

এবার ঈদে সব কিছু তার
দিতেই হবে জানি,
তাই দু’চোখে মিষ্টি বধূর
অভিমানের পানি।

কী করি আজ ভেবে না পাই
ঈদের খুশির দিনে,
কেমন করে ফুটবে হাসি
বায়না পূরণ বিনে?

ঠিক করেছি সবই দেবো
আজকে কিনে আমি,
আঁধার ঘরের চাঁদের আলো
সবচেয়ে মোর দামি।

৩০।

প্রেমে পড়েছে মন
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

প্রেমে পড়েছে মন প্রেমে পড়েছে,
হৃদয়ের মণিকোঠে ঘর বেঁধেছে।।
তোকে ছাড়া দিশেহারা
প্রেমিক পাগলপারা,,
তোর বুকে সুখ যেন খুঁজে পেয়েছে।
প্রেমে পড়েছে মন প্রেমে পড়েছে,
হৃদয়ের মণিকোঠে ঘর বেঁধেছে।।

যখন যেদিকে চায় দুই চোখ মোর,
দেখে না কিছুই শুধু দেখে মুখ তোর।
এ বুকের মাঝখানে বাজে বীণা শোর,
খুলে দে খুলে দে তুই ও মনের দোর।

আর কত রবো একা
প্রতিদিন দিস দেখা,,
ছিলো নাকো প্রেম হৃদে প্রেম জেগেছে।
প্রেমে পড়েছে মন প্রেমে পড়েছে,
হৃদয়ের মণিকোঠে ঘর বেঁধেছে।।

একটাই পণ বুকে যতনে রাখা,
কানে দুল গলে হার বৌ সেজে থাকা।
ভালোবাসা প্রেম দিয়ে আদরে ঢাকা,
প্রিয়তমা সোনা পাখি সোহাগে ডাকা।

জীবন ভ্রমণ পথে
তুই তো সুখের রথে,,
তোকে নিয়ে কত মন স্বপন এঁকেছে!
প্রেমে পড়েছে মন প্রেমে পড়েছে,
হৃদয়ের মণিকোঠে ঘর বেঁধেছে।।

৩১।

তুমিই দেহের প্রাণ
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

তোমার হাতের কোমল ছোঁয়ায়
প্রাণ ফিরে পায় মন,
দুই নয়নে দেখতে যে চাই 
তোমায় সারা’ক্ষণ ।

তোমার আগে কিংবা পরে
আর তো কেহই নাই,
নয় তো শুধু এই জীবনে
পরকালেও চাই।

তুমি আমার স্বপ্ন আশা
দুই জনমের সুখ,
মনের যত দুঃখ ভুলি
দেখলে তোমার মুখ।

সুন্দরী নও ফুল পরী নও
জান্নাতেরই হুর,
মন গহীনের অমানিশা
সব হয়ে যায় দূর।

তুমি আমার জীবন মরণ
তুমিই দেহের প্রাণ,
এক পৃথিবী সুখের চাবি
বকুল ফুলের ঘ্রাণ।

৩২।

রাতের স্বজনী
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

দূর আকাশে হাসে চাঁদ
নাহি তাতে কোনো খাদ
বধূ তুমি ধরো হাত
কেটে যাবে সারারাত।

ঘোমটা তোমার খোলো আজ
কেনো বলো এত লাজ?
মনে কত জাগে সাধ
হরষতে ভাঙে বাধ।

নয়নেরই পাত খুলি
অতীতেরই সব ভুলি
জীবনেরই তুমি সুখ
মনোলোভা হাসি মুখ।

তব দেখে ভরে বুক
জ্বলে ওঠা নীলে শুক
বিধাতারই এ তো দান
হবে নাকো কভু ম্লান।

কত যে সুখ এই মনে!
আছো তুমি মোর সনে
চাওয়া পাওয়া নাহি আর
তোমাতে হই একাকার।

৩৩।
প্রেমের টান  (গীতি কবিতা)
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

কেমন করে বলবো তোরে কত ভালোবাসি!
প্রেমের টানে তোরই পানে ছুটে ছুটে আসি।।
তুই জীবনের স্বপ্ন আশা
বাঁচন মরণ ভালোবাসা,,
তুই বিহনে কেঁদে কেঁদে নয়ন জলে ভাসি। ঐ

পানি ছাড়া বাঁচে না হায় কারো জীবন কভু!
করুণ স্বরে বিধির দ্বারে চাই তোকে দাও প্রভু।।
চাওয়া পাওয়ার নাই কিছু আর
দে দে খুলে তোর মনো দ্বার,,
পরতে হলে তোর কারণে পরবো গলায় ফাঁসি। ঐ

কেমন করে বুঝাবো হায় নাই ভাষা মোর মনে,
মরে গেলেও প্রাণ ফিরে পাই থাকলে আমার সনে।।
তুই যে আমার স্বর্গ নরক
পাপ নিবারণ দুর্গা চরক,,
আঁধার রাতেও তুই যে আমার জ্যোৎস্নামাখা হাসি।  ঐ

৩৪।
প্রেমের কৃষ্টি
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

ওগো মোর সঙ্গী
                তব প্রেমে রঙ্গী
তোমাতেই বন্দি
            এসো করি সন্ধি।

তুমি জান পক্ষী
               আমি দেহরক্ষী
বিধাতাই সাক্ষী
           সংসারে লক্ষ্মী।

দু’টি তন এক মন
             মিলেমিশে সারাক্ষণ
রবো করি এই পণ
             ওগো সাথী প্রিয়জন!

তুমি দেহের অংশ
                শত ভাগ বিংশ
ত্বং বিনা ধ্বংস
                 আমি নর হংস।

এক দুই তিন নয়
                 যুগ যুগ হবে জয়
শৃঙ্গারে মধুময়
             নাহি তার ভবে ক্ষয়।

হাসো কী যে মিষ্টি
                  বিধাতার সৃষ্টি
ফিরে নাকো দৃষ্টি
                  এ তো প্রেম কৃষ্টি।

৩৫।

তোমার স্মৃতি
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

গাই যে গীতি তোমার স্মৃতি
কাঁদায় সর্ব-ক্ষণ,
নাই তো প্রীতি প্রেমের ইতি 
বিতৃষ্ণাতে মন।

আপন ছিলে দু’জন মিলে
হাতের উপর হাত,
চাঁদনি রাতে তোমার সাথে
কাটায় দিতাম রাত।

নাই কি মনে একই সনে
মিষ্টি সুরের গান ?
গাইতাম দুয়ে ছন্দ লয়ে
জুড়ায় যেতো প্রাণ।

তুমি আমি দিবাযামী
চোখের উপর চোখ,
তোমার পানে প্রেমের টানে
থাকতো দুইয়ের রোখ।

ভুলে গেলে পাখনা মেলে
উড়াল দিলে কই?
কাঁদে হিয়া ওগো প্রিয়া
তোমার আশায় রই।

৩৬।
কাব্যই আমার স্মৃতি
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

কেউ থাকে না জনম জনম
থাকে শুধুই স্মৃতি,
মরলে পরেই জিন্দা তখন
হয় নাকো তার ইতি।

থাকবো নাকো যেদিন আমি
এই ধরাধাম ‘পরে,
কাব্যমালার থাকবে স্মৃতি
কাঁদবে সেদিন ঘরে।

মূল্য এখন না বুঝে মোর
করছো হেলা-ফেলা,
বক্ষ মাঝে দুঃখ ধারণ
যায় এ হালে বেলা।

থাকতে যে দাঁত বুঝে না হায়
দাঁতের মূল্যা কত ?
দাঁত বিহীনে যায় হারিয়ে
মুখেরই স্বাদ যত।

আমি বিনে দিনে দিনে
কাঁদবে তোমার হিয়া,
কাব্যমালা কইবে কথা
কাব্যেরই সুর দিয়া।

৩৭।
একাকী তোমার ভাবনা
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

রিমঝিম রিমঝিম বৃষ্টি ঝরে
একাকী তোমার কথা মনে পড়ে,
কত স্মৃতি ভাসে এই চোখের তারায়
দু-চোখ বেয়ে দেখো অশ্রু গড়ে।।

ভুলিনি ভুলিনি আমি আজও তোমাকে
হয়তো তুমি ভুলে এই আমাকে,,
সুখ মোহনায় আছো সুখ সাগরে।

নেই তুমি কাছে তাই বিরহ ব্যথা
অনল দহনে জ্বলে চিত্ত যেথা,
মন বেদনার ঝড়ে শুধু হাহাকার!
শোনে না কখনো কেউ মনের কথা।

নাচে না ময়ুর তার তুলিয়া পেখম
আকাশে হাসে না আর চন্দ্র এখন,,
জীবন ভুবন সবই অন্ধকারে।

নীল নীল নীলিমায় মেঘের আবাস
ঝরবেই বারিধারা পাই যে আভাস,
আসবে না ফিরে আর কখনো তুমি
নিষ্ঠুর প্রিয়তমা শাবাশ শাবাশ!

তুমি ছাড়া এ হৃদয় শূন্য ভূমি
সুখে থেকো আজীবন সঙ্গী তুমি,,
এ দোয়াই চিরদিন রবের দ্বারে।

৩৮।
রাঙা প্রেম
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

কী দারুণ দেখতে
ভুলি সবই লিখতে
দিশেহারা মন!
মৌ মৌ গন্ধে
তার প্রতি রন্ধ্রে
জাগে শিহরণ।

ঝিরিঝিরি বায়ু বয়
চুপিচুপি কথা কয়
কাঁপে এই অঙ্গ,
আজ সারাক্ষণ তাই
তোমাকেই বলে যাই
চাই তব সঙ্গ।

একে একে দুই হয়
জানি প্রেমে হবে জয়
মধুময় ছন্দে,
গোলাপের ফুল ওই
প্রজাপতি হয়ে রই
সুরভিত গন্ধে।

এক দুই তিন নয়
বাজি প্রেমে হবো ক্ষয়
নয়নের তন্দ্রা,
তুমি ছাড়া নিশি চোর
কাটে নাকো ঘুম ঘোর
মাতমের মন্দ্রা।

এসো কাছে ধরো হাত
কেটে যাক সারারাত
আমার এই সঙ্গে,
ফুলে ফুলে শয্যা
নাই কোনো লজ্জা
রাঙি প্রেম রঙে।

৩৯।
শুধুই তার জন্য
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

যার কারণে আজকে কবি
কাব্য গাথার এই ভূমিকায়,
যায় না কভু নাম বলা তার
আমার সকল কাব্য কথায়।

আমার সাধের বসতবাড়ি
ঘর সংসার বাচ্চা বিবি,
কাব্য কথার কাব্য কলি
তার নিমিত্তে পাওয়া সবি।

প্রার্থনা আজ তারই তরে
দু’হাত তুলে রবের দ্বারে,
জীবন সুখের স্বপ্ন সাধন
দুঃখ নিপাত যাক আঁধারে।

সারাজীবন সুখ মহলে
বসতভিটার গড়ুক ঘাঁটি,
আরাম আয়েশ স্বচ্ছলতায়
হোক না জীবন পরিপাটি।

চোখের জলে বুক ভাসিয়ে
রব সমীপে দু’হাত পাতি,
দাও তারে সব সুখ বিলিয়ে
প্রার্থনাতে মগ্ন থাকি।

৪০.
কবি বধূর কল্পনা
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

আমার বধূ হইতো যদি
এই জামানার কবি,
রঙিন খামে এঁকে যেতাম
রংধনুরই ছবি।

কাব্য কথার মালা গেথে
পরিয়ে দিতাম গলে,
ঢেউয়ের তালে মন হারিয়ে
পদ্মা নদীর জলে।

ছন্দে ছন্দে প্রেমানন্দে 
জমতো প্রেমের খেলা,
প্রেমাবেশে কাটতো তবে
দুই জনারই বেলা।

পর্ব অতি-পর্বে দু’জন
একটু হত দ্বন্দ্ব,
দ্বন্দ্ব তো নয় কাব্য গড়ার
দু’টি মনের ছন্দ।

কোমল হাতের একটু ছোঁয়া
একটু চাপা বাড়ি,
অভিমানে বৌ দিতো মোর
একটু আবার আড়ি।

এইভাবে সেই দিনগুলো যে
হইতো প্রেমে খাঁটি,
সুখের পবন বইতো তখন
উজান কিবা ভাটি।

৪১।

মনে পড়ে তোমায়
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

টাপুরটুপুর বৃষ্টি ঝরে
তোমার কথাই মনে পড়ে
শৈশবের সেই স্মৃতি,
কোথায় আছো কোন্ বা দূরে
ডাকতে আমায় সুরে সুরে
হয়নি কো প্রেম ইতি।

হয়তো তুমি গেছো ভুলে
সুখ মোহনার সুখের কূলে
গাও হরষে গীতি,
আমারই তর একটুও নেই
ভালোবাসা যা ছিলো সেই
এইতো প্রেমের রীতি!

হয়তো আবার মনে পড়ে
মনটা তোমার কাঁপে ডরে
পরের ঘরের রানি,
চুপিচুপি মনের ঘরে
একটু ভাবো আমার তরে
ফেলাও চোখের পানি।

আর হবে না দেখা কভু
চোক্ষে দিলেন পট্টি প্রভু
মন বেদনার চরে,
ওই বিধাতার নাইকো লেখা
ব্যর্থ জীবন এই তো শেখা
মরণ প্রেমের জ্বরে!

৪২।
অভাবীর জ্বালা
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

অভাব বিনা সুখ-বিলাসী
নেয় না কারোর খবর,
ভীষণ দহন কতক লোকের
ভুবন দুখের নহর।

পায় নাকো মান, পায় নাকো দাম
গাধার মতই খাটে,
সহজ সরল মানুষ তারা
কাঁটা পুঁতা বাটে।

চলতে পথে হোঁচট খেয়ে
রক্ত ক্ষরণ হৃদে,
রাত্রি লগন ঘুম আসে না
যন্ত্রণাটাও নিদে।

দিন মাস সাল এভাবে যায়
অশ্রু লয়ে চোখে,
বক্ষ চাপে ভীষণ ব্যথায়
আর্তনাদে শোকে।

নুন জুটে তো তেল জুটে না
অনাহারেও থাকে,
কেউ দেখে না ক্ষুধার জ্বালা
বিদ্রুপে ধায় তাকে।

দুঃখগুলো জোট বেঁধে সব
দেয় মনে হায় কষ্ট,
গরিব লোকের সুখ ভালে নাই
জীবন তাদের নষ্ট!

৪৩।
বৃথা জীবন
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

শিল্পী যদি হতাম আমি
ধন্য হত জীবন,
কষ্ট করে সাধন করেও
চিত্ততে ফাট বিধন।

দালানকোঠা, গাড়ি বাড়ি
নাইরে এত কড়ি!
বাজেট শুনে বিস্মিত হই
লজ্জাতে যাই মরি।

একটা গানে পাঁচ কিবা দশ
হাজার টাকা লাগে,
কল্পনাতে স্বপ্নপুরে
বিরহী মন জাগে।

মনের আশা স্বপ্ন পূরণ
হইলো না এই ভবে,
জন্ম নিয়ে তাই কি হলো
বৃথা জীবন তবে?

দোষ কোনো নাই একটা তো দোষ
গরিব হলাম কেন,
জবাব কি তার আছে বলো
এই জগতে হেন?

৪৪.

মেঘলা দিনের প্রেম
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

মেঘলা দিনে মনটা যে চায়
শুধুই তোমার সঙ্গ,
রিমিঝিমি বৃষ্টি পড়ে
ভিজলো সারা অঙ্গ।

ঝড়-বাদলে মন মানে না
উতলা এ চিত্ত,
করবো দু’জন প্রেমের সুখে
বৃষ্টির তালে নৃত্য।

বৃষ্টি কন্যা মুচকি হেসে
ঢালবে আরও বৃষ্টি,
মন গহীনে উদয় হবে
গভীর প্রেমের সৃষ্টি।

ঝর্ণা বয়ে নদী হয়ে
ছুটবে সাগর পানে,
দিশেহারা মন দু’জনার
নাচবে গানে গানে।

মেঘলা দিনে তুমি বিনে
হয় নাকো মন পুষ্ট,
ছন্নছাড়া পাগল পারা
তোমার ছোঁয়ায় তুষ্ট।

৪৫।

অভিমানী বৌ (দুই)
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

এই আমি তব স্বামী ওগো প্রিয়তমা!
নাই নাই কোথা পাই এমনই  রমা?
দিনে রাতে উপমাতে কোথা দিই কমা?
শোনো শোনো নাই কোনো উপমা তো জমা।

ওগো জান অভিমান এতো কেনো মনে?
কাছে আসো ভালোবাসো রাখো সনে সনে।
হাত হাতে এক সাথে চলো প্রেমো বনে,
তুমি আমি নিশি যামী ওই নিরজনে।

কব কথা যথাযথা এ মনের যত,
আধা আধা নাই বাধা বেহায়ার মত।
নিরালাতে ইশারাতে রবো প্রেমে রত,
পাশাপাশি হাসাহাসি দু’য়ে অবিরত।

মান ভুলে নাও তুলে প্রেম তরী ‘পরে,
যাই চলে ভেসে জলে নাও হাত ধরে।
নদী তল ফাঁপে জল কাঁপে মন ডরে,
ওই কে রে আসে তেড়ে খুব বেগে ঝড়ে!

হাসো তুমি গালে চুমি ওগো সোনা পাখি!
তুমি মোর রাত ভোর ভালে দু’টি আঁখি।
সব কাজে হৃদ মাঝে স্ব-যতনে রাখি,
এসো আজ ভুলে লাজ করি মাখামাখি।

৪৬।

চন্দ্রিমা রাতে
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

চন্দ্রিমা রাতে, দু’জন একই সাথে
হারিয়ে যাবো ওই দূর অজানায়,
ও প্রিয়া ও প্রিয়া! এ প্রাণেরই হিয়া
তুমি ছাড়া জীবনে আর কেহ নাই।

চাঁদের ওই জ্যোৎস্নায় এ ভুবন রোশনাই
অনুভবে তোমাকেই খুঁজে যেন পাই।
ও প্রিয়া ও প্রিয়া! এ প্রাণেরই হিয়া
তুমি ছাড়া জীবনে আর কেহ নাই।

টোল পড়া গালে রূপের ওই ঝালে
আহা আহা  কী দারুণ লাগছে! 
চাঁদেরই আড়ালে দু’টিহাত বাড়ালে
মেঘেরাও চুপিচুপি ডাকছে।

হাতে হাত ধরে চলো বহুদূরে
উড়িবো গগনতলে শুধু দু’জনায়।
ও প্রিয়া ও প্রিয়া! এ প্রাণেরই হিয়া
তুমি ছাড়া জীবনে আর কেহ নাই।

বুনেছি যে স্বপন করিবো তা রোপণ
কাটাবো দু’জনে প্রেম বাসরে,
এক জনমেতে নয় চাই তব মরণেও
দেখা যেন হয় ফের ওই হাশরে।

কাছে আসো আরও যতখুশি পারো
ভরে দাও এ হৃদয় প্রেম ভালোবাসায়।
ও প্রিয়া ও প্রিয়া! এ প্রাণেরই হিয়া
তুমি ছাড়া জীবনে আর কেহ নাই।

৪৭।
এবার ঈদের বায়না
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

এবার ঈদে বধূ আমার
চায় না কিছুই চায় না,
বেনারসি শাড়ি নিবে
তাই ধরেছে বায়না।

ঈদ সালামি লক্ষ টাকা
এ জ্বালাতন সয় না,
বন্ধ জবান মনটা আমার
মনের ঘরে রয় না।

সঙ্গে আরো হীরার মালা
স্বর্ণে মোড়া আয়না,
অল্প বেতন স্বল্প দামে
কিছুই কেনা যায় না।

কি করি হায় ভেবেই মরি
বৌ তো কথা কয় না,
আদর দিয়ে প্রাণের হিয়ে
ডাকি সাধের ময়না।

এক এক করে সবই দেবো
মুখ কখনো ভার না,
ভালোবাসায় মন বিনিময়
কয় সে কিছুই আর না।

৪৮।

এক রজনী
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

গগনের তারা
দেখে দিশেহারা
বিধাতার অপরূপ সৃষ্টি!
দু’টি হাত বাড়ালে
মেঘের-ই আড়ালে
চাঁদের হাসি কী যে মিষ্টি!

দেখি চোখে স্বপনে
কত সে যে আপনে
চুপিচুপি লুকোচুরি খেলা,
নিশি ক্ষণ কাটে
নদী পথে ঘাটে
এ যে এক রজনীর মেলা।

দিঘি পাড়ে জলে
কত কথা বলে
পড়িলে চাঁদের কিরণ,
মিটিমিটি জোনাকি
জ্বলে নিভে আহা কি
খুঁজে চলে নিশীথে হিরণ।

প্রভুর  এ সৃজন
দখিনের বীজন
গরমের ক্ষণে দেয় ঠাণ্ডা,
ঝড় হাওয়া বাতাসে
বেগে ধায় আকাশে
তিমির রাতের সেই পাণ্ডা।

৪৯।
জামাই বাবুর সাধ
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

আসলো রোজা বাড়লো জোঝা
লোভের নেশায় ডুব,
শ্বশুর-বাড়ির জামাই বাবুর
ইচ্ছে জাগে খুব।

দামিদামি ফলফলাদি
রুহ আফজালের জুস,
শালা-শালি আসবে নিয়ে
তাই হারিয়ে হুঁশ।

ডালি ভরা ইফতার সাজা
আসবে যে তার ঘর,
বৌকে সে কয় এতে কি হয়
পণ্যে আগুন দর!

আর কিছু কও আনতে তাদের
সামনে আবার ঈদ,
অবুঝ খোকা ছি কী বোকা
ধরছে এ কী জিদ!

ও বাবু জান মায়েরই প্রাণ
শ্বশুর বাড়ির বর!
নাই কি তোমার লজ্জা-শরম
শূন্য প্রাণের ধড়?

না চেয়ে দাও বাও নিজে নাও
কৃতজ্ঞতায় তাই,
তোমার ঘরে রূপের রানি
তাঁর দানে পায় ঠাঁই।

৫০।
কালোর মাঝেই আলো
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

কে বলেছে কোন্ জ্ঞানীজন
নয়রে কালো ভালো ?
আল-কোরানের হরফ দেখো
কালোর মাঝেই আলো!

মাথারই চুল চোখের মণি
কৃষ্ণ বরণ হলে,
মদিরই ন্যায় নয়ন কাড়ে
আমজনতা গলে।

রাতের আঁধার কৃষ্ণ বরণ
শান্তি আনে ঘুমে,
পূর্ণিমা চাঁদ তাই আলো দেয়
জগতবাসী চুমে।

কোয়েল কোকিল দেখতে কালো
কী সুমধুর সুরে!
বৃক্ষ শাখে গায় গীতি গান 
চিত্ত সবার জুড়ে।

ভরা নদীর জল দেখো তাও
স্বচ্ছ না তা ঘোলা,
মনটা সাদা কালো নারীর 
হৃদয়ে দেয় দোলা।

রূপে গুণে সর্বসেরা
অন্তরে বিষ ভরা,
প্রকৃত জন নয় সে কভু
নোংরা হৃদয় জরা।

৫১।
দুস্থ কবি
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

লিখলে নাকি হয়রে কবি
কবি হতে পারলাম কই?
আমি তো আর লোকের মত
অর্থশালী ধনী নই।

যেখানে যাই গ্রাস করে খায়
সর্বপ্রথম চায় টাকা,
মন্দ কপাল নন্দ ঘোষের
তাই বুঝি হায় জেব ফাঁকা।

না আছে মোর মামা খালু
জর্জ ব্যারিস্টার উকিল ভাই,
সমুখ পানে অগ্রসরের
তাই তো কোনোই উপায় নাই।

এই পৃথিবী টাকার গোলাম
টাকায় মিলে বাঘের দুধ,
দুর্নীতিতে দেশ পাকা আজ
খাচ্ছে লুটে ঘুষ ও সুদ।

থাকলে টাকা হয়রে কবি
পায় উপাধি লেখক তাঁর,
টাকার অভাব যার ঘরে রয়
পাষাণ দুখেও দেয় না ছাড়।

৫২।
সর্বময়ী নারী
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

নারী জান নারী প্রাণ নারী সর্ব সুখ
ব্যথা হারে দেখিলেই হাসিমাখা মুখ,
নারীই জননী আর বোন, বিবি, কন্যা
তাঁর ছোঁয়া পেলে আসে স্বর্গ সুখ বন্যা।

প্রথমেতে জন্মে ভূমে মা’র কোলে আসা
পৃথিবীর মায়াজালে পাওয়া ভালোবাসা,
কিশোরী যুবতী পরে পর ঘরে বাস
এভাবেই কেটে যায় সাল শত মাস ! 

নারী গুণে এ সংসার সুখের ভুবন
জীবনে ফাগুন আসে দখিনা পবন,
ফুলে ফুলে ভরে ওঠে রঙিন স্বপন
আগামীর তরে বীজ নতুন বপন।

নারী ফুল নারী ফল সুখের চাবি
যতন করিলে ধন একবার ভাবি,
পদে দলে অবহেলা করিবে যখন
সুখের ভুবনে ধ্বস নামিবে তখন।

যে নারীর তরে দেখা অবনীর মুখ
হৃদে তার ব্যথা দিলে আজীবন দুখ,
এই নারী বিধাতার সেরা এক দান
কভু মাতা কভু বোন কভু বিবিজান।

৫৩।
ফাগুনের মেলা
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

ফাগুন মাসে ফুলের মেলা
তপ্ত খরা দুপুর বেলা
নতুন কুঁড়ির ঘ্রাণ,
রঙ-বেরঙের পাখির গানে
সুর কলরব সুরের তানে
জুড়ায় যেনো প্রাণ।

পুষ্পিত বাগ শোভা ছড়ায়
গুনগুনাগুন ভ্রমরে গায়
সংগ্রহে মৌ রস,
পাখনা মেলে প্রজাপতি
ধীরে ধীরে চলার গতি
এই ফাগুনের যশ।

বয় সমীরণ ঝরে পাতা
উতলা মন গানে মাতা
ওই কোকিলের ডাক,
সুশোভিত অবাক দৃশ্য
নজরকাড়া এ কী তৃষ্য
বোবার মুখেও বাক!

এ সবই তো তাঁর ইশারা
যাঁর প্রেমেতে পাগলপারা
তিনিই মহান রব,
প্রকৃতির এই লীলাখেলা
নিত্য সুখে যাচ্ছে বেলা
দিছেন মোদের সব।

৫৪।
পরাজিত সৈনিক
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

আজ আমি পরাজিত ভীরু সৈনিক
নিস্তব্ধতায় ———– থাকি দৈনিক,
নাম পরিচয়হীন নাই কোনো কূল
গন্ধবিহীন এক কাগজের ফুল।

মোমের মতই জ্বলে দেহ মন গলে
রুদ্ধবাকে কাঁদি চোখেরই জলে,
দিবানিশি ভেসে যায় এ দু’টি নয়ন
পলে পলে বেদনায় ভীষণ দহন।

আমিও তো রব তব সৃষ্টি মানুষ
লজ্জা অপমানে কেনো বা বেহুঁশ?
তোমারই দ্বারে করি এ মাথা নত
তবে কেনো এ হৃদয় ক্ষতবিক্ষত?

নাই কোনো ঠিকানা সুখের-ই নীড়
পরিচয় প্রদানে ঝরে আঁখি নীর,
বসবাস গাছতলে আকাশের নিচ
নর্দমা কাদামাটি পিচঢালা বিচ।

বেনামি মনুষ এক শোকাতুর লোক
সুখ নাই জ্বালা আছে বাড়ে শুধু শোক,
গরিবী হালতে পাই শুধু অপবাদ
জন্মিয়া এ জীবন হলো বরবাদ!

তবুও তুষ্ট আমি করি মোনাজাত
এইটুকু চাই পারে দিওগো নাজাত,
হে মহান প্রভু ওগো দাও করে মাফ!
এ জীবনে যত আছে জমা করা পাপ।

৫৫।
ভ্রমের মাশুল
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

তোকে আমি ভালোবেসে করেছি যে ভুল,
দিয়ে যাই কেঁদে কেঁদে ভ্রমের মাশুল।
পারিনি কো দাঁড়াতে যে নিজ পায়ে হায়!
ভবঘুরে এ ললাটে দু’কূল হারায়।

আজ তুই বহু সুখী মুখভরা হাসি,
নিপতিত এ জীবন আঁখি জলে ভাসি।
ভালোবেসে কেউ সুখী বহে চলে নদী,
অভাগা প্রেমিক আমি কাঁদি নিরবধি।

এ মনের বাগে ছিলো শত ফোটা ফুল,
এক ভুলে হারালাম জীবনের কূল।
ভালোবাসা পাপ নয় তবু পাপী আজ,
প্রেম অপরাধে শিরে আজও পড়ে বাজ।

পৃথিবীর কোনখানে নাহি পাই ঠাঁই,
অথই সাগরে হারে যেদিকে তাকাই।
ধেয়ে আসে শনশন বোশেখের ঝড়,
মরন্ত মানুষ আমি ধুধু বালুচর!

সতেরো বছর থাকে কুকুরের বিষ,
আজীবন রয়ে গেলো প্রেমো বাণ ইশ!
এ কেমন মারিলিরে বেগবান তির ?
বিনাশ করিলি হায় ঝরে আঁখি নীর!

৫৬.
নিরাশার বাঁধ ভাঙন
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

বড্ড মনে আশা ছিলো
থাকবে যেজন আমার সাথ,
পাইলাম না রে তার দেখা হায়
গ্রন্থেভরা কাব্য পাত।

অন্তরে বিষ বড়ই কৃপণ
হিংসা বুঝি তাহার হয়,
উগ্র মেজাজ সর্বক্ষণেই
বাক্য সদা তিক্ত কয়।

তারপরে ফের অফার দিলাম
সঙ্গতে এই আমায় নেন,
কথা দিয়েও রাখলো না সে
ফেললো ছুঁড়ে তুখাড় ব্রেইন।

ব্যর্থ হয়ে মন ভাবনায়
বুঝে নিলাম সেই তো লোক,
হয়তো বুঝি আমার দেখে
বাড়ছে মনে গভীর শোক।

দুঃখে এখন একলা চলি
নিজ ভাবনার কর্মকাজ,
যার মনে যা ইচ্ছা বলুক
দূর করি সব মনের লাজ।

আল্লাহ যদি সহায় থাকেন
হবেই হবে সফলকাম,
রবের প্রতি বিশ্বাসী খুব
ইব্রাহিম এক যাহার নাম।

৫৭।
প্রেমের বাতাস
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

ওহ্ ললনা যাচ্ছো কোথায়
হাত ছেড়ো না মোর,
এইদিকে চাও কাজল চোখে
খোলো প্রেমের দোর।

বয় সমীরণ ঝিরিঝিরি
উড়ে মাথার চুল,
যতই দেখি দুই নয়নে
হয় যেন কী ভুল!

কোথায় তোমার ঘর-বাড়ি আর
কোথায় তোমার গ্রাম,
যাও বলে যাও কন্যা তুমি
কী বা তোমার নাম?

এক দেখাতেই মন কেড়েছো
করেছো হায় খুন!
মরার আগেই মারলে প্রাণে
ধরলো মনে ঘুণ।

প্রেমের বাতাস লাগলো যে গায়
উথাল পাথাল মন,
রাখো তোমার হৃদ পিঞ্জরে
যত্নে সারা’ক্ষণ।

তুমি যে মোর ফুল বাগানের
একটা ফোটা ফুল,
স্বপ্ন আশা ভালোবাসা
জীবন নদীর কূল।

৫৮।
চোখে প্রেমের জল
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

তোমার প্রেমে পাগল হয়ে
দু-চোখ ভরা অশ্রু লয়ে
নয়ন জলে ভাসি,
শুষ্ক নদী উষ্ণ চরে
শূন্য হৃদে শূন্য ঘরে
দুঃখ নিয়ে হাসি।

ভালোবাসার এ অপরাধ
পেলাম শুধু ছল অপবাদ
লাঞ্ছনা ও ঘৃণা,
বোঝে না কেউ এ বুকে ঢেউ
লোক-সমাজে করে যে হেয়
প্রিয়া তুমি বিনা।

নিজের সুখে আমার কথা
ভাবলে নাকো মনের ব্যথা
অনল দহে পুড়ি,
কষ্ট ঘিরে চোখের নীরে
নাভিশ্বাসে দুখের নীড়ে
কয়লা হয়ে ঘুরি।

নাই কি দিলে একটু মায়া
আমার তরে প্রেমের ছায়া
পাষাণী ক্যান হলে ?
কাঁদনে মোর পৃথ্বী কাঁদে
বিরহী মন প্রেমের ফাঁদে
ভাসে সাগর জলে।

৫৯।
শাশ্বত প্রেম
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

শাশ্বত এই ভালোবাসার
সময় কখন বল?
নাই কোনো ক্ষণ নাই কোনো দিন
অনন্তকাল চল।

দুই হৃদয়ের মিলন মালা
সর্বক্ষণই রয়,
পলে পলে চোখ ইশারায়
মনের কথা কয়।

প্রকৃত প্রেম অবিনশ্বর
খেলনা কভু নয়,
চিত্তদ্বয়ের লেনাদেনা
ভুবন করে জয়।

একটু যদি না দেখে হায়
আনচানে রয় মন,
এমন প্রেমের আসিক ভবে
বল আছে ক’জন ?

স্বর্গ থেকে আসীন এ প্রেম
আল্লাহ তা’লার দান,
যে বুঝেছে মর্ম তাহার
দেয় চিরকাল মান।

প্রেমই স্বর্গ প্রেমই নরক
প্রেমই জীবন ফুল,
প্রেমের মিলন মনের হরণ
স্বর্গ সুখের কূল।

৬০।
ভালোবাসার সময়কাল
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

ফেব্রুয়ারির চৌদ্দ তারিখ
ভালোবাসার দিন ?
না,না,না,না মিথ্যা কথা
শোকের বাজে বীণ।

ইচ্ছাতে বা অনিচ্ছাতে
রক্ত ক্ষরণ হয়,
কামনারই শেষের বেলায়
জীবন পরাজয়।

হয় না ক্ষতি পুরুষ লোকের
নারীই বিষাদময়,
অনুতাপের অনল দহে
ভবিষ্যতের ভয়।

ঝরে শুধু অশ্রুবারি
হারিয়ে থাকে কূল,
চোখের জলে সাগর বহে
ফোটে না আর ফুল।

ভালোবাসার সময় কালের
নির্দিষ্টতা নাই,
আকদ বিহীন প্রেম-পিরীতের
ইসলামে নাই ঠাঁই।

প্রকৃত সেই ভালোবাসা
সর্বক্ষণেই রয়,
অনন্তকাল বিজয় মালা
হয় নাকো তার ক্ষয়।

বর বধূতে ভালোবাসা
পালন করা চাই,
আল্লাহু খোশ অন্তর সন্তোষ
সুখের দেখা পাই।

৬১।
ফাল্গুনী রূপ
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

ফুল ফুটেছে বাগ হেসেছে
বসন্তরাজ এলো তাই,
প্রকৃতির এই শোভাদানে
ফাল্গুনী গান আমরা গাই।

শাখায় শাখায় কচি পাতায়
যৌবনে রূপ এই ধরায়,
ভালোবাসার আলিঙ্গনে
প্রেম পরশে সব জড়ায়।

ভ্রমর ছুটে মধুর টানে
পুষ্পমালার ওই ঘ্রাণে,
আহ্লাদিত উন্মাদিত
ফাল্গুনী খোশ মন বানে।

মিষ্টি মধুর কোকিলের সুর
ফুল ফোটা গাছ মগডালে,
পাল তুলে ধায় মাঝিরা ভাই
ডিঙি নায়ের মাছ জালে।

দখিন হাওয়ায় গায় শিহরণ
মন ময়ূরী হায় নাচে!
মন উতলা যায় যে বেলা
ডাক দিয়ে কয় আয় কাছে।

বিহগ উড়ে নীলের নিচে
কিচিরমিচির সুরের তান,
হাজার ফুলের সুবাস পেয়ে
যৌবনে রঙ জুড়ায় প্রাণ।

৬২।
লাগছে দারুণ!
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

দিন-দুপুরে পকেট মেরে
কিনলে ওগো নতুন শাড়ি!
আমি কি আর দোষটা ধরে
রোষ দেখাতে তোমায় পারি?

পাড়ার লোকে বলছে সবাই
লাগছে দারুণ শাড়ি পরে!
বলবো কি আর নতুন করে
আইসো বিবি আমার ঘরে।

আমার বলার মুখ মরেছে
বললে তুমি গোসসা ভরে,
রাগ দেখাবে বাঁধবে আড়ি
হয়তো তখন যাইবো মরে।

পাড়ার লোকের চেয়েও ভারি
লাগছে ভালো আমার চোখে,
উদাসী মন পাগলপারা
ক্যামনে ভাবি আমায় রোখে?

চলো না আজ দুইজনে যাই
পুষ্পিত এক ফুলের বাগে,
আমি ভ্রমর আর তুমি ফুল
ভ্রমর কলির অনুরাগে।

৬৩.
বুকের দহন
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

বুকের দহন যায় না সহন
কষ্টতে বুক বাঁধা,
যায় না বলা পন্থে চলা
লোকজনে কয় গাধা।

বিরহী মন খুব জ্বালাতন
সঙ্গোপনে কাঁদা,
বুঝে না কেউ দুঃখেরই ঢেউ
সফেদ দিলে কাদা।

বইছে নদী নিরবধি
ডুবলো তরী আধা,
বাকি জীবন জ্যান্ত মরণ
সূচনা হয় ধাঁধা।

হয় কি সফল কিংবা বিফল
বলতে পারো দাদা?
জানেন বিধি কোথায় নিধি
পায় নাকি ফের সাধা?

চিত্ত ক্ষত শোকাহত
নিভৃতে রয় বাদা,
শিক্ষিত সে নিরুদ্দেশে 
প্রেম উন্মাদে হাঁদা।

৬৪।

রসিক দাদুর প্রেম
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

ষাট বছরেও রসিক দাদুর
মনের ভেতর রং,
প্রেমের জ্বালা মন উতলা
নানান রঙের ঢং।

চুল পেকেছে দাঁত পড়েছে
চামড়া গায়ের ঢিল,
হায় কী করি লাজে মরি
মানে না তার দিল!

সুন্দরী এক রূপসী আর
লম্বা মাথার চুল,
এমন মেয়েই মন কেড়েছে
তাই করেছে ভুল।

দাদি যখন শুনলো আমার
কী দারুণ এক খেল!
টাকলা মাথায় মারলো ছুঁড়ে
গাছের পাকা বেল।

পড়লো দাদু চিৎপটাং এ
উঠলো মাথার ছাল,
দাদির হুংকার এই বয়সে
প্রেমের এমন হাল।

৬৫.
পাবো না কখনোই ফিরে
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

পাবো না কখনোই আর কোনদিন
ফেলে আসা সেই ছাত্রজীবন,
পাবো না কখনোই আর কোনদিন
বাল্যকালের সেই কিশোর জীবন।

এই তো জীবন শুধুই স্মরণ,,
স্মৃৃতির আড়ালে এক প্রীতির দহন। ঐ

বাবা মায়ের সেই আদর স্নেহ
পাই না এখন তা শুধুই স্মৃতি,
ভাই বোন এলাকার প্রতিবেশি
অনেক দূরে,নাই গাই যে গীতি।

খুঁজে ফিরে দু-চোখ মেলে,,
পাই না কখনো তা করেও সাধন। ঐ

জানি না কোথায় খেলার সাথী,
কোথায় আছে সেই প্রিয়জন?
যে ছিলো জীবনে দিবা-রাতি
চোখের মণি সবচেয়ে আপন।। 

সেদিনের আবালের দুঃখ ভোলায় ,,
কবিতার আসরের প্রেমের বাঁধন।  ঐ

৬৬।
আমারই তো ভুল
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

আমার সরল প্রেমের কসুর
হৃদয় করেছো খুন,
নাহি বুঝে কেউ ভীষণ ব্যথায়
সারা অঙ্গেই ঘুণ।

যাচ্ছো হারায় এই না ধরায়
স্বামীর সুখের ঘর,
দু’হাত উঠাই ভরবো দোয়ায়
শুধুই তোমার তর।

সুখের মহল থাক চিরদিন
এই অবনীর ‘পর,
নাই আসে যেন্ আর কোনদিন
ঘর ভাঙা সেই ঝড়।

রবের নিকট ধৈর্য ধারণ 
প্রার্থনায় এ পণ,
তোমার স্মরণ হোক না মরণ
ভুলুক পাগল মন।

শেষের বেলায় এই বলে যাই
ফুটলো না মোর ফুল,
আমার এ দোষ হায় মনে রোষ
মাফ করে দাও ভুল।

৬৭.
আমার স্বপ্ন আমার আশা
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

আমার স্বপ্ন আমার আশা
“ইতি কথা” ভালোবাসা,
পূরণ করলেন মহান প্রভু
এত খুশির নাই যে ভাষা!

লাখো কোটি শুকরিয়া রব
আলহামদুতে যাই গাহিয়া,
তোমার দয়া আর করুণা
দু’হাত পেতে রই চাহিয়া।

রাত্রি জেগে কাব্য লিখি
একা থেকেও নই যে একা,
মনের মাঝের দুঃখ ভুলি
হয় যখনই কাব্যের দেখা।

এইভাবে মোর দিন চলে যায়
কাব্য প্রেমের জগৎ মাঝে,
চিত্ত কায়ার ফুলদানিতে
পুষ্প ফোটে প্রভাত সাঁঝে।

কাব্য দিয়ে গড়বো বাড়ি
আমার শুয়ার ফুল বিছানা,
বাড়িই হবে লাইব্রেরি মোর
গান কবিতার সেই ঠিকানা।

আসবে ছুটে দলে দলে
লোকজনে সব দেখতে তাহা,
যখন আমি থাকবো না আর
করবে দোয়া বলবে আহা!

ভাবতে পারো তুমিও মনে
হয়তো তোমার জন্য কবি,
আর পাবে না ঝরবে আঁখি
আঁকবে মনে আমার ছবি।

৬৮।
আমি যদি তুমি হতাম
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

আমি যদি কলম খাতা হতাম,
শিক্ষিত জনতার হাতে শোভা পেতাম।

আমি যদি কাব্য পুস্তক হতাম,
সকল লেখকের অন্তরে থাকতাম।

আমি যদি শব্দকলি হতাম,
সকল কবি আমাকে তন্নতন্ন করে খুঁজতো।

আমি যদি ফুল হতাম,
সকল ভ্রমর আমার কাছে গুনগুন করে ছুটে আসতো।

আমি যদি চাঁদ হতাম,
প্রণয় প্রণয়ীগণ আমার আলোয় উদ্ভাসিত হত।

আমি যদি হিমালয় পর্বত হতাম,
দুঃসাহসী জন কঠোর পরিশ্রম করে আমার চূড়ায় পৌঁছনোর প্রচেষ্টায় থাকতো।

আমি যদি সাগর হতাম,
গায়ক কণ্ঠ শিল্পীর সুমধুর সুরে ভাসতাম।

আমি যদি ঝর্ণা হতাম,
প্রেমিকের কণ্ঠে প্রেমিকার ছন্দের গীতে হাসতাম।

আর এই আমিই যদি তুমি হতাম,
তবেই তোমাকে বুঝার মানুষ পেতাম।

৬৯।
ফুল ও নারী
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

ফুল ফোটে ভ্রমর আসে
কত রঙে রঙে,
ঝরে গেলে সে বাতাসে
থাকে নাকো সঙ্গে।

পদে পদে পথে ঘাটে
পা’র তলে পিষ্ট হয়,
কারো কাছে ভুলক্রমে
কখনো যে কৃষ্ট নয়।

নারী তুমি পুষ্প ন্যায়
ষোলোতে রূপ অঙ্গে,
পুষ্প থেকে খুব দামি
অবয়ব এ চঙ্গে।

ফুল যদি ঝরে হায়
যায় শুধু তার ঘ্রাণ,
প্রকৃতির এ নিয়মে
হয় নাকো হানি মান।

তব অঙ্গে কর্দময়ে
লাগে যদি কোনো দাগ,
ষোলোআনা আয়ু মিছে
ভাবে সবে ধৃষ্টা নাগ।

ফুল নারী সম দুই
ঝরে গেলে অবক্ষয়,
সতী নারী চিরদিনই
সর্ব চূড়ায় নিত্য রয়।

৭০।
তুলির বিয়ে
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

বিয়ের ক্ষণে তুলির মনে
আনন্দ খুব আজ,
সে লাল শাড়ি অঙ্গে জড়ি
নববধূর সাজ।

ময়ুর পাখি খুলছে আঁখি
পাখনা মেলে তার,
তাক-ধিনাধিন নাচেরই বীণ
কী যে চমৎকার!

ডাকছে কোকিল আসছে উকিল
সঙ্গে কাজী সাব,
খাঁচায় টিয়া পাগড়ি দিয়া
জামাই বাবুর রাব।

কচিকাঁচা পাড়ার চাচা
মুরুব্বিরা সব,
মাথায় টুপি চুপিচুপি
খুশির কলরব।

কবুল কবুল বিয়েরই ফুল
ফুটলো মনের বাগ,
স্বপ্ন হাজার রানি রাজার
হাত ধরে তার আগ।

৭১।
আঁচলের গিঁট
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

আকাশের চাঁদ বলে আলো রূপ পায়,
তোমার কারণে সে যে শরমে লুকায়।
আমার স্বপন তুমি আমার সাধন,
বিধাতায় বেঁধেছেন দু’য়ের বাঁধন।

দেবো না হারিয়ে যেতে কখনো তোমায়,
রাখিবো যতন করে চোখের কোণায়।
মহান প্রভুর দান তুমি মোর জন্য,
তোমার লাগিয়া এই আমি আজ ধন্য।

তুমি আশা প্রেমপ্রীতি ভালোবাসা আর,
এ জীবনে নাই কিছু নাই চাহিবার।
কতই সাধনা করা এই আমানত,
দিয়েছি উজাড় করে প্রেম জামানত।

চাঁদ হয়ে আলো দাও মনের আকাশে,
অবয়ব তুমি বিনা ক্ষয় ফ্যাকাশে।
অচল দেহের বল জীর্ণশীর্ণ হয়,
আঁধারে ভুবন ঢাকা লাগে বিষময়।

কী করে আমাকে বলো যাবে একা করে?
পাথরের ও চোখেও বারিধারা ঝরে।
যেখানেই যেতে চাও আঁচলের গিঁট,
দিয়ে বেঁধে রেখো প্রিয়া হৃদয়ের ভিট।

৭২।
শীতের বুড়ি
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

কদিন যাবৎ সূর্য মামা
নাই বুঝি তেজ দিচ্ছে হামা,
দীন-দুখীর গায় ছেঁড়া জামা
ও বুড়ি মা! শীতকে থামা৷

থরথরানি কী কাঁপুনি!
শীত কুয়াশা দেয় ঝাঁকুনি,
দুস্থ লোকের শ্রম হাঁটুনি
কুজ্ঝটিকায় তাও খাটুনি।

এমন করে চলবে কদিন?
রাত কাটে হায় নিদ্রাবিহীন,
অঙ্গ শীতল চিন-চিনাচিন
যুবা বুড়ার মুখটা মলিন।

ঠাণ্ডা লেগে মরছে ধুঁকে
পথশিশু মাথা ঠুকে,
না আছে কেউ নেবে বুকে
শীতের বুড়ি শীত নে টুকে।

৭৩।
তোমায় পেয়ে ধন্য আমি
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

নিরানব্বই হয় একাকার
ছয়- ই আগস্ট রোজ শুক্রবার
তোমার আমার বিয়ে ,
মাতা পিতা আত্মীয়রা
বেঁধে দিলো সবাই ত্বরা
দুই জনারই হিয়ে।

বিয়ের পরে পাওনি কো সুখ
সদাই ছিলো মলিনে মুখ
দুঃখ ছিলো মনে,
ব্যর্থ ছিলাম প্রেম যে দিতে
চাইনি তোমায় সঙ্গে নিতে
অশ্রু চোখের কোণে।

পাষাণ হয়ে দিলাম ব্যথা
রাগ করোনি কইছো কথা
আমায় ভালোবেসে,
আমায় রেখে যাওনি দূরে
ডাক দিয়েছো সুরে সুরে
চোখের জলে ভেসে।

পাহাড় সমান দুঃখ নিয়ে
ভালোবাসার বাঁধন দিয়ে
করলে গো মোর যতন,
নূরের আলোয় ভরিয়ে দিলে
আমার তরেই সৃষ্টি ছিলে
তুমিই ঘরের রতন।

সেদিন কভু যায় না ভোলা
রেখেছিলে হৃদয় খোলা
এই আমারই জন্য,
চোখের জলে গাঙ বয়েছে
কষ্ট কত মন সয়েছে
মহতী এক রন্য।

সকল বাধা পেরিয়ে আজি
সফল তুমি আল্লাহ রাজি
আমি হলাম ধন্য,
সবার থেকে তুমিই সেরা
ভালোবাসায় চিত্ত ঘেরা
নও সাধারণ অন্য।

বিয়ের লগন আসলো ফিরে
মগ্ন তোমার প্রেমের নীড়ে
তেইশ বছর পূর্তি,
হাত ধরে মোর সাথ চলোনা
তোমার কভু নাই তুলনা
মন করে তাই ফূর্তি।
(০৬-০৮-১৯৯৯💝০৬-০৮-২০২২=২৩)

৭৪।

ওগো প্রিয়জন!
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

ওগো প্রিয়জন! দিলে জ্বালাতন
আজো কাঁদে মোর হিয়া,
বারেবারে চাই কোথা গেলে পাই
কীভাবে বোঝাবো প্রিয়া?

বলো কোন দোষ কিবা ছিলো রোষ
জানি না কিছুই আমি,
বিরহের তরী বেয়ে তব স্মরি
তোমার-ই শুভ-কামী।

শুধু কাঁদিলাম বৃথা বাঁধিলাম
বালুচরে ঘর খানি,
তব আশাতেই বেঁচে আছি এই
ঝরে শুধু চোখে পানি।

দাও দাও সাড়া আমি দিশেহারা
পথ খুঁজে নাহি পাই,
দুখে ভরা মন শুধু যে দহন
শান্তি কোথাও নাই।

মন ডেকে যায় কেঁদে ইশারায়
কাছে এসে দাও দেখা,
তুমি বিনা কাটে রোজ পথে ঘাটে
আঁখিজলে ভাসি একা।

৭৫।
কানমলা সেই স্মৃতি
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

প্রাইমারিতে বিদ্যালয়ে
কানমলা যে খায়নি,
লেখাপড়ার আসল মজা
পায়নি রে সে পায়নি।

হয়নি যদি পড়ালেখা
মাথা বেঞ্চের নিচে,
শিক্ষাগুরুর সেই প্যাদানি
ব্যাত দিয়ে হায় পিছে!

হাত প্রসারে খামচে ধরা
পেটের চামড়া খানি,
উরি উরি মা করবো পড়া
ঝরিয়ে চোখের পানি।

শিক্ষক মশাই চলে গেলে
হাসাহাসি তবু,
যায় কি ভোলা সেই কাহিনী
এমন স্মৃতি কভু?

৭৬।
তন্ময় দিল
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

হলো ভোর বধূ মোর খোলে দোর প্রাতে,
ডাকে মোরে ঘুম ঘোরে মধু শোরে তাতে।
মন ভরে প্রাণ ভরে প্রেম তরে তার,
জুড়ে আঁখি ডাকে পাখি ওই শাখি চার।

মিষ্টি হাসে ভালোবাসে বসে পাশে এসে,
রূপ রানি মিঠা বাণী দেয় পানি শেষে।
ভাঙে ঘুম ধুম ধুম দেই চুম এঁকে,
খুব বেশি রেষারেষি নন্দ কেশী বেঁকে।

অতি রাগে আগভাগে অনুরাগে সিক্ত,
কথা কাড়ি বাড়াবাড়ি প্রেমে আড়ি রিক্ত।
আমি চুপ দেখে রূপ ছাড়ে ধূপ অঙ্গে,
ভুল হলো চলো চলো মন গলো রঙে।

এলোচুলে কানে দুলে তুলতুলে গালে,
নাই হাসি পাশাপাশি তবু আসি তালে।
করো ক্ষমা ওগো রমা প্রিয়তমা আজ,
প্রেমে পুঁজি ভুল বুঝি পাই খুঁজি লাজ।

কাছে আসো ভালোবাসো মুখে হাসো প্রিয়া,
নাহি দুখ দাও সুখ হাসি মুখ দিয়া।
বধূ কয় নাই ভয় তব জয় মিলে,
এ সংশয় মধুময় ও তন্ময় দিলে।

৭৭।
নয় একাধিক প্রেম
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

আমার প্রেমে পড়লো নজর
লোকজনে সব কয়,
বৌকে আমার দেবেই বলে
লাগছে মনে ভয়।

কী করি হায় ভাবনা মনে
একটুখানি চুপ,
বৌ তো আমার সুন্দরী খুব
আছেও অনেক রূপ।

করবো যে প্রেম তার সনে ফের
ফেসবুকে আর নয়,
প্রত্যয়ে মন সর্বক্ষণে
হবেই আমার জয়।

কান ধরেছি তওবা করে
করবো না প্রেম আর,
বলিয়েন না কেউ দাদা ভাই
ভাঙবে আমার ঘাড়।

নাই যেনো হয় আর কারো ভাই
একের অধিক প্রেম,
হায় বাঁচিলাম আর নাহি চাই
এমন প্রেমের হেম।

৭৮।
তুমিও কাঁদবে
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

তোমার প্রেমের বাণে ঝরে বাগে ফুল,
প্রেমিক হারাই আমি হায় দু’টি কূল!
কেঁদে কেঁদে বুক ভাসে,ভাসে যে নয়ন,
আঁধারে গ্রহণ লাগে সুরুজ অয়ন।

মেঘে মেঘে ঢেকে যায় আকাশের চাঁদ,
মানে না বারণ ভাঙে নদী কূল বাঁধ।
ভাসি আমি নোনা জলে ভাঙে এই বুক,
হয় না মরণ তবু করি ধুকধুক।

ভালোবাসা পাপ নয় তবু মহাপাপ,
বিরহের ব্যথা নিয়ে মরণের কাঁপ।
প্রেমে ভুল প্রেমে শূল প্রেমে মারে বাণ,
আঘাতের এ জ্বালায় হই খানখান।

কাউকে কাঁদালে কেহ হয় নাকো সুখী,
কাঁদনে সাগর বয় সে মানব দুখী।
নারী হোক নর হোক, হোক না স্বজন,
ভাই বোন প্রিয়জন কিবা বিয়োজন।

আঁখিজলে ভাসবেই ডুকরে কাঁদন,
চিরতরে ভেঙে যাবে প্রীতির বাঁধন।
পাবে না কখনো খুঁজে তিমিরে কিনার,
সবার নিকটে হবে মেয়ে তো ঘৃণার।

৭৯।
জান পাখি
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

জান পাখি প্রাণ পাখি দেহেরি নিঃশ্বাস,
প্রিয় মুখ হৃদে সুখ আমারি বিশ্বাস।
বেঁচে আছি কাছাকাছি এই আছো বলে,
তুমি বিনা সুখ হীনা ভাসি আঁখিজলে।

পাশে থেকো মনে রেখো ওগো প্রিয়া তুমি!
তুমি ছাড়া সর্বহারা এ মনের ভূমি। 
সুখে দুখে হাসিমুখে মিষ্টি বাণী দিও,
ও স্বজনী অর্ধাঙ্গিনী ভালোবাসা নিও।

এলে কাছে প্রাণ বাঁচে স্বপ্ন আশা জাগে,
ছুটে মন সদা ক্ষণ তব অনুরাগে।
রব সৃষ্টি শুভ দৃষ্টি তুমি আমি দুই,
একসাথে দু’জনাতে দু’জনাকে ছুঁই।

কাটে রাত হাতে হাত রাখিলে গো তুমি,
স্বপ্নলোকে দুটি চোখে ঘুমে ঘুমে চুমি।
যথাতথা শত ব্যথা ভুলে সব কিছু ,
ছায়া হয়ে যাই রয়ে ছুটি পিছু পিছু।

কাছে ডাকো চাই নাকো অন্য কিছু আর,
দুয়ে মিল এক দিল প্রেমে একাকার।
ধন্য আমি দিবা যামী তোমাকেই পেয়ে,
এই আশা নাই ভাষা বুকে থেকো মেয়ে।

৮০।
চাঁদনি রাত
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

চাঁদনি রাতে চাঁদের আলো
অন্ধকার হয় দূর,
শিয়াল মামা হুক্কাহুয়া
কণ্ঠে তুলে সুর।

ঝিকিমিকি দিঘির জলে
মুগ্ধ করে প্রাণ,
চুপিসারে ব্যাঙ্গমা আর
ব্যাঙ্গমি গায় গান।

দূর আকাশে তারার মেলা
চাঁদের বুড়ি ওই,
দেখবি যদি খোকা খুকি
চল সবে এক হই।

তোদের সাথে জাগবো নিশি
আয় কাছে আয় আয়,
স্বপ্নপুরের নীল সাগরের
নাও ছুটে যায় হায়!

কই দাদু ভাই নাতনি আমার
ধর তোরা মোর হাত,
যাচ্ছে চলে চাঁদের আলো
ভোর হলে শেষ রাত।

৮১।
খাঁটি প্রেমের দহন
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

সত্যিকারের প্রেম তো কভু
নয় একাধিক হায়!
হয় যদি প্রেম খাঁটি তবে
জীবন বাঁচাই দায়।

একটা প্রেমের জ্বালায় মরি
ক্যামনে করি দুই,
পাহাড় সমান দুঃখগুলো
কোথায় বলো থুই?

গভীর নিশি একলা জেগে
স্মরণ যখন হয়,
অশ্রু জলে বন্যা এসে
সাগর নদী বয়।

কষ্টগুলো জমাট বেঁধে
বুকের মাঝে রয়,
তিলেতিলে সাধের জীবন
হয় ভুবনে ক্ষয়।

প্রেমের দহন হয় না মরণ
ছটফট করে মন,
তার চেহার চক্ষুদ্বয়ে
ভাসে সারা-ক্ষণ।

এক বছর না দুই বছর না
চব্বিশ বছর পার,
যায়নি ভোলা কভু তারে
জীবনটা ছার’খার।

ব্যথার ডালি বক্ষে নিয়ে
জীবন হলো শেষ,
কোনো রকম দিন কেটে যায়
এইতো আছি বেশ।

৮২।
তোমাদের স্মরণে
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

যাকে আমি ভালোবেসে হৃদে দেই ঠাঁই,
কেউ হাসে জ্বালা দেয়,কেউ বুঝে নাই।
কেউ বুঝে দূর থেকে নয়ন ঝরায়,
ছুটে আসে কেউ ফের ত্বরায় ত্বরায়।

হতে পারে বাবা ও মা ভাই আর বোন,
প্রতিবেশী সহপাঠী শোন তোরা শোন।
অকাতরে ভালোবেসে দিয়ে যাই মন,
কভু হাসি কভু কাঁদি ব্যথা সারাক্ষণ।

এত ব্যথা পাই তবু ভোলা নাহি যায়,
অতীতের জ্বালা ভুলে কাছে ডাকি আয়।
দু’দিনের  দুনিয়ায় বাঁচি কত দিন?
ভালোবেসে ক্ষমা করো যদি থাকে ঋণ।

সহজ সরল আর খুব সাধারণ,
পাই না কখনো কারো সাদাসিধা মন।
এইভাবে যায় কেটে দিন ক্ষণ মাস,
এ মনের আঙ্গিনায় বিরহের বাস।

সব কিছু সয়ে যাই টোটে ঠোঁটে হাসি,
হৃদে জ্বালা দুখ  নিয়ে তবু ভালোবাসি।
ভুলতে পারি না কভু কাছে ছুটে আসি,
তোমাদের সুখে আমি সুখ নদে ভাসি।

৮৩।
সুকেশী কন্যা
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

সুকেশী তার খোঁপাতে ফুল
লম্বা মাথার চুল,
হুর ও পরী পাখনা মেলে
খোঁজে সুখের কূল।

ঠোঁটের হাসি রাশিরাশি
চাঁদবদনী মুখ,
দেখলে নয়ন পরাণ জুড়ায়
মন খুঁজে পায় সুখ।

কপালে টিপ ঠিক যেনো ঠিক
গালে কালো তিল,
ভালোবাসায় পূর্ণতা পায়
অন্তরে প্রেম শীল।

এক রূপসী সেই সরসী
স্বচ্ছ নদীর জল,
তার কাছে চাই একটুকু ঠাঁই
মন বলে চল্ চল্।

নীলের দেশে আসমানে ওই
চাঁদ তারারই বাস,
একটু ছোঁয়া চিত্তে পেতে
জাগে কত আশ!

তার ছোঁয়া চাই সুখ খুঁজে পাই
একটু মনে ডর,
হাত বাড়ালে দু’জন মিলে
বাঁধবে প্রেমের ঘর।

৮৪।
প্রেমের কবিতা
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

বিধাতার অপরূপ  কী দারুণ সৃষ্টি!
ফিরানো তো যায় নাকো কভু এই দৃষ্টি।
নও তো মানব তুমি যেন হুর-পরী,
নাই মোর দু’টি ডানা উড়ে উড়ে ধরি।

মাথা ঘুরে বনবন হলো কী যে আজ?
তব ভাবনায় মোর শিরে পড়ে বাজ।
নাই জ্ঞান হুঁশ আর নাই কোনো লাজ,
অপলকে দেখে যাই ফেলে সব কাজ।

কোমল ঠোঁটের হাসি চাঁদের ঐ রূপ,
আঁধারের আলো ভবে নিশি জাগি চুপ।
টানাটানা চোখ দু’টি খুব উঁচু নাক,
যত দেখি তত হই অবাকে অবাক।

পৃথিবীর সেরা রূপ বিধাতার দান,
হবে না হবে না বুঝি কখনো তা ম্লান।
গোলাপের পাপড়ির এক তাজা ফুল,
হারিয়ে নিজেকে আজ করি কত ভুল!

জানি না জানি না কভু দেবে কি গো সাড়া?
চোখে চোখ রেখে দেখো মন দিশেহারা।
অবুঝ মনের প্রেম দিতে চাই সবি,
প্রেমের কবিতা তুমি আমি তার কবি।

৮৫.
বৌ দিয়েছে আড়ি
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

যাচ্ছি বাড়ি হয় তো আড়ি
দেবে আমার বধূ,
নাই যে সাথে দুইটি হাতে
মিষ্টিভরা মধু।

হয়নি বেতন মনের কেতন
উড়ছে না ওই নীলে,
আকাশ কাঁপে মেঘে ঢাকে
কাঁপন ধরে দিলে।

স্টেশনে-ই নিরজনেই
ভাবছি মনে মনে,
দেবে কি হায় দেবে না তাই
দেখা আমার সনে ?

বলবো প্রিয়া কান ধরিয়া
দুদিন পরেই হবে,
ব্যাংকে যাবো টাকা পাবো
ফুটবে হাসি তবে।

দিচ্ছি এখন মনের মতন
একটা চুমু এঁকে,
রাগ করো না ময়না সোনা
আর থেকো না বেঁকে।

বৌটা আমার খুব যে গামার
মন গলে না কভু,
রবকে বলি দুহাত তুলি
রাগ ভেঙে দাও প্রভু।

৮৬।
কালোই প্রেমের তাজ
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

আঁধার কালো তবুও আলো
মন আকাশের চাঁদ,
জ্যোৎস্না ছড়াও হৃদয় জুড়াও
নাই তোমাতে খাদ৷

চাঁদের মাঝেও রাত্রি সাঁঝেও
যায় দেখা এক দাগ,
খণ্ডিত রূপ অবাকে চুপ
ছিলো সে দুই ভাগ।

কালো হলেও শক্তি বলেও
মনেরই জোর খুব,
দিলের মাঝে সকল কাজে
তোমাতে দেই ডুব।

কালো বলেই চোখের জলেই
মুখ করো না ভার,
পাই না প্রিয়া সব খুঁজিয়া
তোমার মত আর।

শ্রেষ্ঠ বধূ মিষ্টি মধু
অন্তরে মোর বাস,
আমার তরে দিলেন করে
ওইা বিধাতা খাস।

তুমি যে জান তুমিই তো প্রাণ
তুমিই প্রেমের তাজ,
সকল কিছু তোমার পিছু
মোর সমীপে আজ।

৮৭।
কথা দাও
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

চুপচাপ চারিদিক সাক্ষী রেখে রব,
উজাড় মনের প্রেম দিলামও যে সব।
নেই কিছু মোর ভবে এ জীবনে আর,
তুমি ছাড়া বিষ মনে ব্যথা হাহাকার।

আজ হাতে হাত রেখে কথা দাও প্রিয়া,
কোনদিন যাবে নাকো ভুলে ফাঁকি দিয়া।
তুমি আছো প্রেম আছে, আছে আশা আলো,
চাঁদ হয়ে মনাকাশে দীপশিখা জ্বালো।

তুমি দিন তুমি রাত তুমি দুখ সুখ,
ভুলে যাই কষ্টগুলো দেখে ওই মুখ।
আঁধারেও আলো ছড়ে তব ওই রূপ,
অমানিশা নিরিবিলি থাকে যবে চুপ।

আমার জীবনে সুখ, সুখ তরী ভাসে,
যখন এ মন পায় তোমাকেই পাশে।
তুমি বিনা এ পরাণ জ্বলে যায় মোর,
কাঁদে মন ঝরে আঁখি অমানিশা ঘোর।

এই শুভ ক্ষণে  প্রিয়া কথা দাও আজ,
ভালোবেসে বুকে লও ভেঙে যত লাজ।
জীবনে মরণে শুধু তোমাকেই চাই,
এ ভুবনে তুমি ছাড়া নাই কিছু নাই।

৮৮।
তোমায় দেখার সাধ
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

রক্ত দিয়ে লাল কালিতে
লিখে দিলাম চিঠি,
কোথায় তোমার বসতবাড়ি
কেথায় তোমার দিঠি?

চব্বিশ বছর পার হলো আজ
হয়নিকো আর দেখা,
বিরহী মন কেঁদে ফিরে
তোমার আশায় একা।

চেষ্টা করি হাজার শতো
ভুলতে পারি নাকো,
রঙিন ভুবন রঙে তোমার
রঙ তুলিতে আঁকো।

আমায় ভুলে সুখেই আছো
সুখ সাগরের মাঝে,
অশ্রু বহে দুই চোখে মোর
নিত্য সকাল সাঁঝে।

কখনো গো আমায় যদি
পড়ে তোমার মনে,
আইসো তুমি সঙ্গে লয়ে
তোমার পতির সনে।

কাঁদবো নাকো শক্ত মনে
দেখবো তোমায় চেয়ে,
এই শুধু যাই দোয়া করে
সুখে থেকো মেয়ে।

৮৯।
মানলো না বশ
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

সারাজীবন মাটির খাঁচায়
দেহ মনের সন্ধি,
হয় না রে সেই আত্মা কভু
হয় না খাঁচায় বন্দি।

ভরণপোষণ সবই দিলাম
দিলাম মনের খোরাক,
তবু সে চায় উড়াল দিতে
দ্রুতগামী বোরাক।

এত আদর যত্নে যারে
চিন্তামুক্ত রাখি,
সেই তো এখন যায়রে চলে
আমায় দিয়ে ফাঁকি।

মানলো না হায় বশ এ দেহের
মানলো না হায় মানা!
শূন্য করে খাঁচা ভেঙে
মেললো দুটি ডানা৷

অবশ হয়ে রইলো পড়ে
মাটির দেহ’খানি,
স্বজন, বন্ধু, প্রিয়তমা
ঝরায় চোখের পানি।

৯০।
চাঁদনি রাতে বিভোর মন
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

আকাশের দিকে চেয়ে আছি দাঁড়িয়ে
চাঁদ মামা উঁকি মারে হাত বাড়িয়ে,
সে যে তার আলো দেয় ভূমে ছড়িয়ে,
প্রকৃতির শোভা বাড়ে তাকে জড়িয়ে।

নাহি পারে যেতে কেহ ইহা এড়িয়ে
নিশ্চুপ চারিদিক প্রেমে বেড়িয়ে,
জোছনা আঁধার কালো দ্রুত সরিয়ে
পাহাড়,সাগর,নদী যায় পেরিয়ে।

লাখো কোটি তারাদের পিছে ফেলিয়া
পৃথিবীর আলো রশ্মি সব হেলিয়া,
একা চাঁদ রাজরানি যায় দুলিয়া
স্নেহ,মায়া,ভালোবাসা হাত বুলিয়া।

চাঁদের এই খেলাতে মন মাতিয়া
প্রার্থনা রব দ্বারে কর্ পাতিয়া,
নিঝুম এ রাতে একা তাঁকে ডাকিয়া
তাঁর শান গুণগান গাই হাঁকিয়া।

বলি রব তব লীলা থাকি ভুলিয়া!
অহং বোধেই চলি বুক ফুলিয়া,
অসীম ক্ষমতা তব চোখ খুলিয়া
দেখিলাম চাই মাফ পাণি তুলিয়া।

৯১।
প্রিয়জন  (গীতি কবিতা)
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

শূন্য ভুবন মোর একাকী এ মন,
দেখে না দেখে না কেহ বুকের দহন।।
বিরহের জ্বালা বুকে
মরি আমি মাথা ঠুকে,,
দাও দাও দাও দেখা দাও প্রিয়জন,
জানো না জানো না তুমি কত যে আপন!!

তুমি বিনা এ জীবন ধুধু বালুচর,
সুখ নাই জ্বালা আছে বেদনার ঝড়।।
ভেসে যাই আঁখিজলে
এ জীবন নাহি চলে,,
কাটে না রজনী দিন কাটে নাকো ক্ষণ।
দাও দাও দাও দেখা দাও প্রিয়জন,
জানো না জানো না তুমি কত যে আপন!!

হৃদয়ের মণিকোঠে তোমারই তো ঠাঁই,
বিশাল এ ভুবনে নাই কিছু নাই।।
থেকো নাকো দূরে আর
ডাকি আমি বারেবার,,
দিও নাগো  প্রিয়তমা এত জ্বালাতন!
দাও দাও দাও দেখা দাও প্রিয়জন,
জানো না জানো না তুমি কত যে আপন!!

৯২ ।
হৃদয়ের সরোবরে
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

না,না,না,না পারবে না, পারবে না তুমি,
শূন্য, শূন্য করে এই হৃদভূমি,
একা চলে যেতে ;
মরণের ডাকে যদি দাও তুমি সাড়া,
সাথে নিও ওগো বিবি সাথে নিও ত্বরা,
মোর প্রেমে মেতে।

কথা আছে তুমি আমি একসাথে যাবো,
সুখ,দুখ,গ্লানিগুলো ভাগ করে নেবো,
পাশাপাশি গোরে ;
অভিমান করে কেনো যেতে চাও আজ?
দু-চোখের জলে ফেলে শিরে দিয়ে বাজ,
বেদনার কোরে।

তুমি বিনে বাঁচি বলো কীভাবে গো আমি ?
সেই নর ভবঘুরে অভাগা এ স্বামী,
নাই কোনো মূল ;
মরুভূমি বালুচরে এ জীবন খানি,
পিপাসিত আত্মার এ কেবা দিবে পানি?
পথের এ ধুল।

মহান রবের কাছে একটাই চাওয়া,
ইহ-পরকালে শুধু তোমাকেই পাওয়া,
চাই তব দেখা ;
চেয়ে দেখো প্রাণবিবি ঝরে অবিরল,
হৃদয়ের সরোবরে আঁখি ছলছল,
যেয়োনা গো একা।

৯৩।
মোনালিসা
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

ওগো মোনালিসা!
হারাই আজই দিশা,
এ মনেরই শিশা,
মেটাও এসে তৃষা।

একবার দেখে হায়!
বারেবার মন চায়,
কাছে ডাকে এসো তায়
চোখ দুটি ইশারায়।

কী দারুণ ওই রূপ!
সুবাসিত ছাড়ে ধূপ,
হে ভুবন! চুপ চুপ,
প্রেমে ডুব দেই টুপ।

মিঠা মিঠা বাণী তার
প্রেমে গলে একাকার,
বাজে বীণা ঝংকার
ফোটে ফুল চারিধার।

চন্দ্রিমা রাতে ওই
খুঁজি সখি তোরা কই?
আমি যেনো আমি নই
হারিয়েছি হৈচৈ।

৯৪.
কৃপণ প্রেম
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

একা একা চলি মনে ব্যথার পাহাড়,
এই নিষ্ঠুর ভুবনে কেউ না কাহার।
বিশ্বাস করেছি যাকে সেই বহু দূর,
রুধির ক্ষরণ হৃদে বেদনা বিধুর।

জান প্রাণ দিয়ে তারে ভালোবাসিলাম,
পৃথিবীর মায়া ত্যাগে কাছে আসিলাম।
সব কিছু ভুলে গেলো স্বার্থের-ই টান,
দিয়ে গেলো এ জীবনে যাতনার বাণ।

ছটফট করে হায় আনচান মন,
কুরে কুরে খায় বুক ভীষণ দহন!
বুঝিনি কখনো আগে প্রেমে আছে বিষ!
চোখের সমুখে ঘুরে বুক চেপে ইশ!

দম যেন বের হয়,  হয় না মরণ ;
ভুলে যেতে চাই তবু হৃদয়ে স্মরণ।
ভালোবাসা কেনো দেয় ব্যথা ভরা দিল?
যুগ ধরে প্রেম তবু হয় নাকো মিল।

ভালোবাসা পায় নাকো সবার কপাল,
তাই কেউ কাঁদে কেউ হাসে চিরকাল।
তেমনি জীবন এই বিধির লিখন,
দিলো না দিলো না ধরা প্রেম সে কৃপণ।

৯৫।
তোমার লাগি এ মন পোড়ে
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

তোমার লাগি এ মন পোড়ে
কোথায় আছো তুমি ?
রাত্রি বেলা মন একাকী
অশ্রুজলে ঘুমি।

যেথায় থাকো ভালোই থাকো
প্রার্থনা এ করি,
সকাল সাঁঝে নিত্যদিনে
তোমায় শুধু স্মরি।

তোমার সুখে আমারই সুখ
নাই কিছু যে চাওয়া,
থাকলে তব হাসিতে মুখ
সবই তো মোর পাওয়া।

আর থাকি না তোমার আশে
কষ্টে দিন পহে,
বিরহ ব্যথা  পোড়ায় তনু
বিকটে মন কহে।

নাই কপালে সুখ যে লেখা
প্রেম দহনে মরি,
কেউ বুঝে না আমার জ্বালা
চাপটে বুক ধরি।

৯৬।
জলপরী
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

জলপরী ও কন্যা তোমায়
লাগছে চেনা খুব,
কোথায় যেনো দেখেছিলাম
নদে দিতে ডুব।

জানি না হায় কোথায় বাড়ি
কোথায় তোমার বাস ?
অচিন পুরের রাজকুমারী
অচিন বারো’মাস।

আসবে কি গো আমার বাড়ি
ধরবে কি মোর হাত,
পারবো না যে পানির ভেতর
থাকতে তোমার সাথ।

নিশ্বাস আমার বন্ধ হবে
বেরোয় যাবে দম,
এই জীবনের মূল্যটা যে
নয় জেনো খুব কম।

পৃথিবীতে থাকবে বেঁচে
জীবন যত দিন,
প্রার্থনাতে এই কামনা
বাজুক সুখের বীণ।

তাদের সুখেই সুখ পাবে মন
আমার প্রিয়জন,
এই জীবনে সেই তো ছিলো
রত্ন হীরা ধন।

৯৭।
নীল নীল নয়না
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

নীল নীল নয়না,
কী দারুণ ময়না!
দেখে চোখ সরে না,
দে না মুখে ওড়না।

অপরূপ সৃষ্টি!
ফিরে নাকো দৃষ্টি।
আহা কী যে মিষ্টি!
রচনায় হিস্ট্রি।

কী যে বলে ডাক দেই, 
তুই নাকি মেয়ে সেই?
পৃথিবীতে কোথা নেই,
তোর ন্যায় আছে যেই।

হায় প্রাণ যায় যায়!
মন মানে না যে তাই।
এতটুকু মন চায়,
হৃদে যেন পাই ঠাঁই।

সুরে সুরে ডাকি আয়
তোকে ছাড়া বাঁচা দায়।
চাঁদ তারা নীলিমায়,
মিটিমিটি হেসে যায়।

৯৮।
চাঁদনি রাতের ভূত
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

দিনের শেষে সূর্য ডুবে
চাঁদের হাসি ফোটে,
তারার মেলা দারুণ খেলা
জোনাক পোকা জোটে।

হিমেল বায়ু রাতের স্নায়ু
ভূতের বাণী বেশ,
কল্পনাতে শঙ্কা মনে
জীবন বুঝি শেষ।

দাদার লাঠি ধূপের কাঠি
সাহস মনে দেয়,
চন্দ্র মামা বদন খানা
এ প্রাণ কেড়ে নেয়।

মেঘের ভেলা চাঁদকে ঘিরে
ঝাপসা ভব হয়,
গহিন রাতে সঙ্গী সাথে
একটু লাগে ভয়।

গল্প জমে ডর যে কমে
চাঁদনি রাতে সেই,
রাত পোহালে সকাল হলে
ভূতের রানি নেই।

৯৯।
শরতের স্পর্শ
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

নদীর পাড়ে কাশফুল
মাঠের ধারে ঘাসফুল,
আলতা রাঙা পায়ে
বঙ্গ নারীর নাকফুল।

দখিন হাওয়া দোলে
পদ্মা নদীর কোলে,
মায়ের কোলে শিশু
আপন ভাষার বোলে।

শরৎ রানীর ডাকে
ওই ভ্রমরা হাঁকে,
পদ্ম ও জুঁই শাপলা
জলাশয়ের বাঁকে।

কত ফুলের গন্ধে
নাকের ডগার রন্ধ্রে,
পূর্ণিমারই রাত্রে
আলো ছড়ায় চন্দ্রে।

শরৎ ঋতু আসে
শিশির বিন্দু ঘাসে,
প্রকৃতির এই শোভা
শরৎ ছোঁয়ায় হাসে।

১০০।

তব প্রেমের কাঙ্গাল 
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন 

আমি আগুন – অগ্নি শিখার লেলিহানে জ্বালায় এ বিশ্বকে, মৃত্যুর কলরব ;
আমি পানি – ঠাণ্ডা শীতল করে দেই এই মৃত্তিকাকে, সকলে নীরব।

আমি ঝড় – আমি সাইক্লোন, মানি না কারও বারণ, লণ্ডভণ্ড করে দেই বিশ্ব,
অহংকারীর যত সব দাপট ধূলিসাৎ করে দেই, করে দেই চূর্ণবিচূর্ণ নিঃস্ব।

আমি মেঘ – নীলাকাশে উড়ি হাওয়ায় দলে দলে অঝরে ঝরাই বর্ষণ,
আমি বৃষ্টি – আমার স্পর্শে, আমার ছোঁয়ায় দিগদিগন্তে, মাঠের আনাচে কানাচে হয় ফসল উৎপাদন।

আমি সাগর – অথৈজলের গভীরতায় স্থির,
ভাসাই জাহান, হাবুডুবু চারিদিক,
আমার কাছে ঝর্ণা নদী এসে হয় জড়োসড়ো, আমি তো হাত পেতে করিনা ভিখ।

আমি পাহাড় – সর্বোচ্চ উঁচু গিরি, সর্ব চূড়ায় করি বিরাজ,
পায় না কেউ নাগাল আমার, যতই হোক শক্তিশালী, হোক বীর যোদ্ধা রাজাধিরাজ।

আমি দূর্বল – আমি বড় অসহায় শুধু তোমার প্রেমে, তুমি ছাড়া এ জীবন যায় থেমে।
আমি কাঙ্গাল  – হাত পেতে রই ওই প্রভুর দ্বারে, তোমাকে পাওয়ার তরে,  আমি নিঃস্ব শুধুই তুমি বিনে।

১০১।
নীলাঞ্জনা
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

চলো না দু’জন যাই হারিয়ে
নীল আকাশের সীমা ছাড়িয়ে,
তোমার আশায় আছি দাঁড়িয়ে
এসো না স্বজনী হাত বাড়িয়ে।

মনের হাজার স্বপ্ন নিয়ে
বোঝাবো তোমায় কত কী দিয়ে!
ব্যাকুলে বিভোর আমার হিয়ে
উচাটন মন করবে বিয়ে।

সাজাবো তোমায় বেনারসিতে
হাতে হাত রেখে একই সাথে,
ঘুরবো দু’জন চাঁদ পাড়াতে
ফুটবে গোলাপ ওই কুঁড়িতে।

তারারা সবাই বসাবে মেলা
হরষে হরষে কাটবে বেলা,
প্রেম প্রেম প্রেম চলবে খেলা
নীলাঞ্জনা করো না হেলা।

নীলাঞ্জনা আমারি তুমি
আমার হৃদয় পূর্ণ ভূমি,
কোমল অধর একটু চুমি
শীতল পরশে রাত্রি ঘুমি।

মন্তব্য করুন