Skip to content

প্রকৃতি প্রেম


শীত
গল্প পড়ছিলাম। বলা চলে হারিয়ে গিয়েছিলাম এক ধুসর জগতে। হঠাৎ টুপটাপ শব্দে মনোযোগ অন্য দিকে নিয়ে গেল। টিনের চালে অনবরত টুপটাপ শব্দ তুলে শিশির পড়ে চলছে। শিশির নাকি কুয়াশা? প্রকৃতির ব্যাপার স্যাপার গুলোতেও নাম নিয়ে ঝামেলা আছে। মাঝেমধ্যে দু একটা ঝিঝি পোকার শব্দ শোনা যাচ্ছে। ঝিঝি পোকার ডাক নিয়ে কিন্তু কোন সমস্যা নেই। ফোনে তাপমাত্রা দেখলাম ১৪ ডিগ্রি। যদিও প্রত্যাশিত মান আরও কম থাকার কথা। কারন তাপমাত্রা বিষয়টার সাথে উত্তরবঙ্গের মান সন্মান জড়িত। যদিও রাত বাড়ছে। হাই ইশকুলে পড়ার সময় জহির রায়হানের উপন্যাসের শেষ লাইনটার কথা মনে পড়ে গেল। রাত বাড়ছে, হাজার বছরের পুরনো সেই রাত। আচ্ছা, ঠিক কতগুলো রাত পার করলাম? ভাবতেই বুকের ভেতরটা কেমন ছ্যাত করে ওঠে। খুব কাছের স্পর্শ পাওয়া কত মানুষ আচমকাই ঝড়ে গেল, কত জন পৃথিবীতে এসে পরিনত হল। মাঝেমধ্যে মনে হয় চেনা মানুষগুলোর বুড়ো হওয়াটা ঠিক হচ্ছে না। আরেকটু সময় নিই। তাদের জিজ্ঞেস করি জীবন নিয়ে? কেমন হল এত দুরের পথ, এ পর্যন্ত হাটা? অথাবা সমনের গন্তব্য? ভয় হয় কি আমার মত? নাকি প্রস্তুত সামনের অচেনা পৃথীবির জন্যে! কিন্তু না, এ গ্রহের কিছু নিয়ম কেউ ভাঙতে পারে না। সে নিয়মেই তারা বুড়ো হয়, ঝড়ে যায়। কিছু কথা তাদের বলা হয় না, আমরা তাদের মনে রাখি শিশিরের শব্দের মতন। হয়তো আমাদেরকেও কেউ কেউ কখনো মনে রাখবে শিরিরের শব্দের মতন। যদিও শিশির কখনো বুড়ো হয় না, প্রত্যেক শীতে সে আসে নতুন করে, টুপটাপ শব্দে।


বর্ষা
আজ উত্তরবঙ্গে দীর্ঘ একটা বৃষ্টির পর হালকা ঠান্ডা নেমে এসেছে। সেই ঠান্ডাকে নিজের সাথে মিশিয়ে গায়ে ছুয়ে দিচ্ছে হালকা বাতাস। কাঠাল, ইউক্লিপটাস, কড়াইের মত বেশ লম্বা গাছগুলোতে একটু হাওয়া দিতেই পাতায় জমা হওয়া বৃষ্টির জল টিনের চালে টুপ টাপ প্রতিধন্নি তুলছে। খুব কাছের পুকুর থেকে ভেসে আসছে ব্যাঙের ডাক। ঝিঝি পোকারাও বসে নেই। দু-একটা সুর তুলে সঙ্গ দিচ্ছে ব্যাঙেদের। মাঝে মাঝে আকাশ গুড় গুড় শব্দ তুলে জানান দিচ্ছে আবার মেঘ ভেঙে নামবে বৃষ্টি।

চায়ের কাপে চামুচের টুং টাং শব্দে ঘোর ভাঙে কবি’র। এ চা খাটি বৃষ্টির জলের চা বলে চিৎকার তোলে রাকিব। রাকিব পুরো গায়ের এই একটি মাত্র চা স্টলের এক মাত্র নিবেদিত কর্মী। এই অজো পাড়া গায়ে রাত নয়টাই বেশ রাত, তার উপর ভর করেছে বৃষ্টি। কোথাও কেউ নেই। লেখক ‘শুন্য হাট’ ছেড়ে গায়ের একা পথ ধরে হাটতে থাকে। পথের দু পাশে সারি করে লাগানো ধানের চারা। চারার মাথায় হালকা বাতাস ছুয়ে যায়। সুবিস্তৃত ধান ক্ষেত পেরুলেই কিছু কবরের সারি। কবি’র ইচ্ছে হয় তাদের জিজ্ঞেস করতে তোমরাও কি বৃষ্টি দ্যাখো? অনুভব করো কি ঠান্ডা বাতাস? ঝিঝি পোকার ডাক? না, উত্তর আসে না। হয়তো তারা গভীর কোন ঘুমে আচ্ছন্ন। সে ঘুম ভাঙানোর শক্তি কবি’র নেই। কবি আবার পথ চলতে শুরু করেন। মেঘ ভেঙে আবার নামে বৃষ্টি। এই বৃষ্টি বহু বছরের চেনা বৃষ্টি।
📖জুলফিকার (লেখা: জানুয়ারি, জুলাই ২০১৯)

মন্তব্য করুন