Skip to content

পোয়াতি চাঁদের মৃত্যু

পোয়াতি চাঁদের মৃত্যু
———
রমেন মজুমদার
25/11/2022

শ্মশানের ওপারে দহনের খেলাঘর,
নিয়ে যাবে সকলেরে সেথা;
বাকি সব প্রতীক্ষার প্রহরে।

গিয়েছে মাঘীপূর্ণিমার তিথি,
ডুবে গেছে আলোটুকু নিশুতি ফাল্গুনে…
দশমীর চাঁদ যেন জানায় বিদায়
চিরতরে মরিবার তরে।

আকাশে একদা উঠেছিল চাঁদ,
জানালায় শুয়ে ছিল বধূ তার সন্তান কোলে;
বুকের স্তন হতে দুধটুকু পিপাসার নেশায়
চুক চুক করে তার উদর ভরেছিল।

ছিল প্রেম বিশাখার বুকে,
বিমূর্ত আলোর পরশে ঘুম ভেঙে যায়;
আজানা বিভুঁইয়ে স্বামী; অচিন ঠিকানায়-
ঘুম নেই, রাত্রি জেগে ভাবে মনে সেই।

বহুকাল পরে,কে ডাকে কারে ইশারায় ?
অরণ্যের অলক দ্যুতি গভীর কম্পনে !
চিরকাল শুয়ে ঘুমায় শ্মশান চিতায়!
এই বুঝি চেয়েছিলে বিধাতার লেখায়
সমর্পণ ঘটিবে সকলের বেলায় ।

কী চেয়েছিলে তুমি?
আর পাওনি কি তার অমূল্য রতন ?
ঘুম কি চাওনি কোনদিনের তরে ?
ফাল্গুনের শেফালীর সনে রক্তমাখা কৃষ্ণচূড়ায়;
মাথা নুয়ে সমাজের বুকে,
শীতের পাখির মত আসিবে কি ফিরে;
একদিন আঁধার ফুঁড়ে !

অলোক আলুথালু নিদ্রাহীন বালিশ!
জাগিবে কী কোনদিন শয্যা হতে;
ধোপাঘরে ধৌতহয়ে আয়রন শালায়
জাগিবে কী খল খল হাসিমাখা পূর্ণিমার চাঁদ হয়ে..
অদ্ভুদ আঁধার ডিঙে শ্মশানের পারে!
দহন রাত্রির নিশায়
জানালার পাশে ডুবে যাবে,
চাঁদখানি চিরতরে।

শৃগালের ব্যথিত ডাক নিস্তব্ধতায় বুক ফুঁড়ে!
ভাঙাবে কি সে এসে ঘুমের ঘরে ?
তবু রাত্রি জাগে পেঁচাদের নিয়ে,
অর্ধগলিত ব্যাঙ পন্নগের মুখে,
তখনও ভিখ মাঙ্গে বাঁচিবার তরে।

ধূম্র কুয়াশার প্রভাতের অনুরাগে,
উষ্ণ অনুমেয় ঘুম ভাঙাবে কী প্রিয়জন এসে!
আপন আহ্লাদে গাঢ় চুম্বনে চুম্বনে;
তবুও তার বোধের কিনারায় আসে কী
নিরেট স্রোত!
উজান বিহ্বল বেদনা ডিঙিয়ে।

অকস্মাৎ জেগে উঠি,
টের পাই যুথিচারী নির্বিকার পথিক;
মদ্যপ নেশার ঘোরে হেলেদুলে পার হয়
নির্বাক রাত্রির অধর চুমে
একেলা একেলা মনে কথা বলে যায়
কোন শালা নিয়েছে পথ চুরি করে !!

চারি দিকে সুনসান আলোহীন নিশা;
মিটমিট জোনাকিরা জ্বালে আলো ঝোপঝাড়ে;
জীবনের অস্তিত্বের সন্ধান খোঁজে সঙ্ঘাহীন ভাবে
রক্তক্লেদ গন্ধ পায় মশকের দলে।

যবে ফিরে আসে দিন নির্মল পবিত্র হয়ে,
মিহি রোদে ডানা মেলে কত কীট উড়ে;
বিকিকিনি ক্ষুধাতুরে যৌবনের ঢেউ
উদর কি জানে তার দুরন্ত হিসাব?
অধিকার আদায়ে শিশুর মতন
ঘন ঘন শ্বাসবয় ফড়িংয়ের ডানায়।

এখনও কী ডোবেনি চাঁদ অশ্বত্থের তলায়
হয়নিকো লগন শেষ অমাবশ্যার খেলা!
মানুষের অধিকার সংরক্ষণ করতে
আসিবেকি ফিরে আবার ভরাট পূর্ণিমা
উত্থাল সাগরের জলে নীল তরঙ্গ উচ্ছ্বাসে।

করেনি প্রতিবাদ কোনদিন অশ্বথ বৃক্ষ?
ঘর্মাক্ত পথিকের দিবেনা ছায়াদান একরত্তি;
নির্বাক বোবা হয়ে দিয়েছে শীতল ছায়া;
সোনালী ফুলের স্নিগ্ধ বাঁকে,
করেনি কোনদিন পথিক সোহাগ
অন্ধকারে গাছে ঝোলা বাদুড়ের মতন।

বৃদ্ধ হয়েছে চাঁদ একটি রাত্রির কোলে !
গেছে বুঝি বেনোজলে চিরতরে ভেসে?
জীবন যেখানে মৃত্যু অনিবার
স্বাদ কী নিয়েছে আগে কেউ
বসন্তের লগ্নভ্রষ্ঠা সুপক্ক আম্রের ঘ্রাণ!!

একদিন মৃত্যুর স্বাদ নিতে হবে সকলের!
যতই অসহ্যবোধ হোক মৃত্যুর কোলে
চিরতরে জিতে নিতে অগ্নির লেলিহান!
জুড়াবে কী সেদিন তোমার রেখে যাওয়া
কীর্তিকর্মের ফল ?
গুমোট আঁধারে ডুবে গেছে জীবন
নিঃশ্বাসের দ্বার বেয়ে বেরিয়ে আসবে
দু’ফোঁটা রক্তের ধারা!!

শুনে নাও কবির বাণী একেলা নির্জনে বসে,
নারীর প্রথম প্রণয়ের ব্যর্থ কাহিনীটুকু!
হয়নিকো বৈবাহিক জীবনের অমৃতরঞ্জন
একাঙ্গি হয়ে লুটোপুটি খাওয়া…
সময়ের আবর্তে ঘুরে মননের মধু
লয়েছে কি মৃনালের মৃন্ময়ী দুধের স্বাদ?

কবিতার বোবা মুখে যদি ভাষা লুটে,
চিরন্তন গম্ভীর হ্রদে;
কত তার অক্ষয় খাদ!
কত তার গ্লানিভরা কম্পিত হৃদয়!
কত তার দহনজ্বালা মৃত্যুর বিভীষিকা !
কত তার জন্ম-মৃত্যুর দুরন্ত অভিশাপ!!

চিৎ হয়ে শুয়ে থাকা অমর্ত্য নির্দেশ,
সুখ আর দুঃখ মিলে মিলনের বাসর শয্যায়;
তবু জানি, আম্রকাষ্ঠের শায়িত শয্যায়
মুখাগ্নি নির্বাক চোখের জলে;
যায়নি’কো ক্ষয়ে নারীর হৃদয়!
অবধ্য গ্লানিমাখা প্রেমটুকু তার
স্তনের অগ্রশিরে রহস্যের অমৃত স্বাদ
লয় শিশু চিরকাল এক এক করে।

বিপন্ন বিস্ময় গ্লানি, খেলা করে চিরকাল;
দুরূহ দুর্বার রক্ত কথা বলে অপরাধী!
ক্ষান্ত হও, আর্ত চিৎকার ধ্বনি শুনতে পাই!
মরণের খেলাঘরের নিমিত্ব আঁধারে!
তবু তার চিরকাল চিৎ হয়ে শোয়া।

চেয়ে দেখি রোজ রাতে থুরথুরে অকপট দৃশ্য!
জোনাকিরা জ্বালে আলো স্নিগ্ধতার আবেশে—
একাদশীর চাঁদ বুঝি ছুঁয়ে যায় চিলে কোঠার ভাঙা প্রস্তর।
তবু সেথা প্রেমিকের কান্নার সুরে
হৃদখানি কেঁপে ওঠে বিদায়ী চাঁদের মত।

প্রগার প্রেমের কথা আজ না হয় থাক;
কোন কালে চলে গেছে বংশ পরম্পরায়
পিতা থেকে পিতামহ কিংবা প্রপিতামহ(?)
তার পর ?
তুমি আমি আমরা সকলে সে গন্তব্যের নীরে
একদিন ডুবে যাব পোয়াতি চাঁদের মত
অচিন সাগরের জলে।।
***সমাপ্ত—-

মন্তব্য করুন