Skip to content

পীর গিরি আর আগের মতো চলে না, ইহা ধর্মের নামে ব্যবসা বৈকি!

পীরগিরি আর আগের মতো চলে না! ইহা ধর্মের নামে ব্যবসা বৈকি!
কবি-মোয়াজ্জেম বিন আউয়াল।

পীর শব্দের অর্থ হচ্ছে মুরব্বি বা সূফি,গুরু বা শিক্ষক। আধ্যাতিক শিক্ষকদের একটি উপাধি। অনেক ক্ষেত্রে তাদের কে শাইখ নামেও ডাকা হয়, যা মূলত এর আরবি প্রতিশব্দ। এবং ইংরেজিতে সেইন্ট বা সাধু, খ্রিস্টান পরিভাষায় “এল্ডার” হিসেবে ও ব্যাখ্যা করা হয়।

বহু প্রাচীনকাল থেকে পীর ও মুরিদ ও তাসাউফ চর্চা চলে আসছে। কিন্তু এই চর্চার মধ্যে বহু সমস্যাও রয়েছে। মূলত ইসলাম প্রচার ও প্রসারের জন্য এই দ্বীনি ব্যবস্থায় কোরআন ও হাদিসের বাহিরে নিজস্ব স্বার্থ সিদ্ধি উদ্ধারের আশায় অনেক নিয়ম কানুন চালু হয়, যা হাদীস ও কোরআন সমর্থন করে না। যেমন বাইআত নিয়ে অনেক বাড়াবাড়ি রয়েছে অনেকে মনে করে পরকালে মুক্তির জন্য বাইআতের কোন বিকল্প নেই। কেউ আবার বাইআত নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।

অনেকে আবার শরীয়তের মানদন্ড বিচার না করে যাকে মন চায় তার কাছেই নিজেকে সমর্পণ করে ফেলে। এতে করে মূর্খ পীরের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে।

অনেকে আবার ফরজ,সুন্নত ছেড়ে দিয়ে অজিফা নিয়ে পরে আছেন। তাই শরিয়তের ফরজ, ওয়াজিব ব্যাতিরেকে নফল কাজ করাও সঠিক নয়।

কোরআনের সুরা ও আয়াতকে বাদ রেখে পীরের বানানো দুরূদ নিয়ে অনেকে পাগলপড়া। হাদিসের ভুল ব্যাখ্যা করা, নবীজীর আমলকে বাদ দিয়ে পীরের আমলকে বড় করে দেখা, এগুলো নিয়েও রয়েছে ব্যাপক মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

একটা সময় পীরেরা ছিল সমাজের সকলের সম্মানের প্রিয় পাত্র। তাদের কে মানুষ অন্ধের মতো ভালোবাসতো। এই সুযোগে পীরেরা সাধারণ মানুষের সরলতার সূযোগ নিয়ে বিশাল সহায় সম্পত্তির মালিক বনে যায়। তাদের হুকুমে সমাজের প্রতিটা কাজ পরিচালিত হতো। সমাজের যে কোন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির আসনে তারা বসতেন। সকলে তাদের সালাম করতেন। এই ভাবেই সিলসিলা পীর মারা গেলে তার ছেলে তারপর নাতী এভাবেই বংশ পরিক্রমায় তাদের বংশধরেরা সমাজপতি হিসেবে সমাজ পরিচালনা করে আসছে। কিন্ত অনেক ক্ষেত্রে পীরের ছেলের চেয়ে অনেক শিক্ষিত লোক সমাজে থাকা স্বত্বেও সেই কম শিক্ষিত পীরের ছেলেই পীর হতেন। এই নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া থাকলেও কেউ মুখ খুলেনি। কিন্তু দিন যত গড়াচ্ছে মানুষ শিক্ষিত হচ্ছে পীরগিরি এখন আর আগের মতো চলে না।

অনেক ক্ষেত্রে অনেক কুসংস্কার ও কিচ্ছা কাহিনিও পীরদের নিয়ে সাজানো ছিল যেমন কেউ বলতো এই পীরের বড় পীর অনেক কামেলদার ছিল তিনি মরা গাছ জীবিত করে ছিলেন। কেউ বলছে তার পূর্ব পুরুষেরা মক্কা থেকে এদেশে ইসলাম প্রচারের জন্য এসেছিলেন। কেউবা আবার নিজেদের কে হযরত আলী বা মহানবী (সাঃ) এর বংশধর ও দাবী করে বসেন।

অনেকে আবার বানোয়াট অনেক মুজিজার কথাও তাদের অতীত ইতিহাসের মধ্যে তুলে ধরেছেন। আসলে এসব ইতিহাসের মধ্যে খোঁজ নিলে বেশিরভাগ কল্পকাহিনীতে ভরপুর, যার ভিত্তি নেই বললেই চলে। অনেক ক্ষেত্রে অনেক লোমহর্ষক ঘটনা বলেও মুরিদেরকে আকর্ষণ করা হয়। প্রকৃত পক্ষে বিচার বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় এটা ধর্মের নামে ব্যবসা ছাড়া কিছুই না।

এদেশের শিক্ষার হার কম থাকার কারনে এবং ইসলাম চর্চা কম হওয়ায় গুটিকয়েক পীরের নিকট ইসলাম বন্দী হয়ে যায়। তাদের কে অন্ধ বিশ্বাস করে বহুকাল আগে থেকেই এদেশের কম শিক্ষিত ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা নিজের অর্থ, শ্রম পীরের দরবারে অকাতরে বিলিয়ে দেয়। এই সুযোগে কিছু মুখোশধারী পীর রাতারাতি অঢেল টাকার মালিক বনে যায়। তাই সে প্রাচীনকাল থেকে পীরের ব্যবসা রমরমা।

আবার বিংশ শতাব্দীতে যখন নিজস্ব ভাষায় কোরআন পড়া ও অর্থের প্রচলন শুরু হয়েছে ঠিক সেই মুহুর্তে একদল ধর্ম ব্যবসায়ীদের মাথা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আসলে এদেশের মানুষ আরবি শিক্ষায় শিক্ষিত হোক তা অধিকাংশ ধর্ম ব্যবসায়ীরা চায় না। উদাহরণস্বরুপ ভারতের বর্তমান সময়ের ইসলামের পন্ডিত ডাঃ জাকির নায়েক বিভিন্ন ধর্ম তথ্য নিয়ে যখন সারা বিশ্বে সাড়া ফেলে দিয়েছেন তখন কিছু ধর্ম ব্যবসায়ীরা তার পিছনে উঠে পড়ে লেগেছে। এটাই নির্মম বাস্তবতা।

কিছু কিছু ক্ষেত্রে যারা পীর আছেন তাদের মধ্যে আল্লাহর অনেক ভালো বান্দাও আছেন। কিন্তু তাদের নাম ব্যবহার করে এক শ্রেণীর ধর্ম ব্যবসায়ীরা আঙুল ফুলে কলা গাছ হচ্ছেন। তাই পীর আসল নকল বুঝে তাকে অনুসরণ করতে হবে।

তবে পীরের বাহ্যিক ও আত্মিক আমল যদি শরিয়ত ও সুন্নত মতো পরিচালিত হয় তবে তিনি অবশ্যই অনুকরণীয়।

কবি মোয়াজ্জেম বিন আউয়াল।
কবি ও সাংবাদিক।

মন্তব্য করুন