Skip to content

পরকীয়া আসক্ত – কবির নাম : সুভাষ চন্দ্র দাস

বিয়ের দুইবছর পাড় হয়ে যাওয়ার পরেও যখন আমি আমার হাসবেন্ডের সাথে নিজের সম্পর্কটা জোরালো করতে পারলাম না,একাকিত্ব আমাকে ঘিরে ধরলো। ঠিক তখনই আমার জীবনে আসলো শাকিব নামের একটা ছেলে। সে জানতো আমি বিবাহিত একজন মেয়ে,আমার স্বামীও আছে। তবুও সে আমার সাথে কথা বলতো। আমিও বলতাম নিজের একাকিত্বটা দূর করার জন্য। কারণ আমার হাসবেন্ড আমাকে সময় দেওয়ার প্রয়োজন মনে করতো না। আমার বিয়ের দুই বছর হয়ে গেলেও আমি কখনো আমার স্বামীর সাথে বাহিরে ঘুরতে যাইনি,যাইনি বললে ভুল হবে কখনো যাওয়ার সুযোগ হয়নি। সারাদিন বাসায় একা একা বসে থেকে যখন ডিপ্রেশনে চলে যেতাম ঠিক তখনই আমার জীবনে শাকিব আসলো। আমিও সব ভুলে গেলাম। যে মানুষটা আমাকে বিয়ে করেও স্ত্রীর সুখটা দিতে পারেনি,কখনো দেওয়ার চেষ্টা করেনি। তাঁর কথা আর ভাবলাম না। নিজের ভালো থাকার কথা ভেবেই আমি শাকিবের সাথে কথা বলবো বলে সিদ্ধান্ত নিলাম।

মানুষ ভাবে একটা বিবাহিত মেয়ে শুধুমাত্র শারীরিক সম্পর্কের জন্য পরোকিয়ায় লিপ্ত হয়। কারণ বেশির ভাগ প্রবাসীর বউ,কিংবা যাদের স্বামী তাদের থেকে দূরে থাকে সেইসব মেয়েরা পরোকিয়াতে লিপ্ত হয়। কিন্তু এই ধারণাটা সম্পূর্ণ ভুল। একটা মেয়ে শুধুমাত্র সেক্সুয়াল কারণেই পরোকিয়াতে লিপ্ত হয় না,এর পেছনে হাজারটা কারণ থাকতে পারে। কেউ ডিপ্রেশনে পড়ে পরোকিয়া নামক জঘন্য কাজে লিপ্ত হয়,কেউ একাকিত্বটা দূর করার জন্য, কেউ একটু ভালো থাকার জন্য,আবার কেউ কেউ শারীরিক সম্পর্কের কারণেও পরোকিয়ায় লিপ্ত হয়ে থাকে। আমার স্বামী তো আমাকে শারীরিক তৃপ্তি দিতো,আমার চাহিদার থেকেও বেশি দিতো। কিন্তু আমি কখনোই তার কাছ থেকে মানুষিক তৃপ্তি পাইনি। একটা মেয়ের জীবনে কি শারীরিক তৃপ্তিই সব? মানুষিক তৃপ্তি কিছু না? অন্য সবার কথা আমি জানি না,তবে আমার কাছে শারীরিক তৃপ্তির চেয়ে মানুষিক তৃপ্তিটাই বেশি প্রয়োজনীয়।

সেই মানুষিক তৃপ্তিটা আমি শাকিবের কাছ থেকে পেতাম। তাঁর সাথে যখন কথা বলতাম তখন মনে হতো খুব কাছের একজন মানুষের সাথে আমি কথা বলছি। এই মানুষটাকে আমি অনেককাল ধরে চিনি। এমন মানুষকে বিশ্বাস করা যায়,ভালোবাসা যায়। আমি আর শাকিব নিজেদের অজান্তেই খুব অন্তরঙ্গ হতে লাগলাম। তবে সেটা শুধু ফোন কল কিংবা মেসেজেই। আমি প্রথম প্রথম শাকিবকে না করতাম,শাকিব রাগ করতো। পরে ভয় হলে,ও যদি রাগ করে আমার সাথে কথা না বলে তাহলে আমার কি হবে? আমাকে তো আবার একা হয়ে যেতে হবে। তাই আমিও ওর সাথে ওইসব কথা বলতাম যেসব কথা আমি আমার হাসবেন্ডকেও কখনো বলিনি। আর সত্যি কথা বলতে একটা ছেলে আর একটা মেয়ে সারাদিন কথা বললে সেখানে আর বিশুদ্ধতা শব্দটা থাকে না। আপনা আপনিই অন্তরঙ্গ হতে হয়। দিনে প্রায় সময়ই কথা বলতাম আমি,রাতেও কথা বলতাম আমার স্বামী আসার আগ পর্যন্ত। তাই আস্তে আস্তে আমি না চাইতেও ক্লোজ হতে লাগলাম।

তখন রাত আটটা বাজে,আমি শাকিবের সাথে কথা বলছিলাম। আমার স্বামী আজ যে এতো আগেই বাসায় এসে পড়বে বুঝতে পারিনি। আমি তাকে দেখেই কান থেকে ফোনটা নামিয়ে নিলাম। তাঁর পাশেই আকাশী রঙের শাড়ী পড়া একটা অসম্ভব সুন্দরী মেয়েকে দেখতে পেলাম। কি সুন্দর! মেয়েটা। চোখ দুটো হরিণের চোখকেও হয়তো হার মানাবে। চুল গুলো মাথা থেকে খুব গোছালো ভাবে মাজার কাছে এসে সমাপ্তি হয়েছি। এমন একটা মেয়েকে নিজের করে পাওয়ার জন্য পৃথিবীর যেকোনো ছেলেই হয়তো নিজের সবকিছু উজার করে দিতে চাইবে। এই মেয়েটার সৌন্দর্যের কাছে আমার সৌন্দর্যটা নিতান্তই তুচ্ছ। আজ বুঝতে পারলাম আমার স্বামী কেনো আমার থেকে দূরে দূরে থাকে,কেনো আমাকে ভালোবাসে না। এমন সুন্দরী মেয়েকে রেখে কেউ ঘরের অসুন্দর বউকে ভালোবাসতে চাইবে না। আমি এই মেয়েটার পাশে দাঁড়ালে আমাকে অসুন্দরই মনে হবে। পুরুষরা সুন্দরের পূজারি। নিজের স্বামীকে অন্য একটা মেয়ের সাথে এভাবে দেখে মরে যেতে ইচ্ছে হলো। তাও আবার বাড়িতে নিয়ে এসেছে। মেয়েটাও কেমন? বিয়ে করা একটা মানুষের সাথে তাঁর বাড়িতে চলে এসেছে। মেয়েরাও কি তাহলে টাকার পাগল? কিন্তু আমি কেনো টাকার পাগল হতে পারলাম না? আমার স্বামীর তো টাকার অভাব নেই। তাহলে আমি কেনো টাকার মধ্যে সুখ খুঁজে পাই না।

আমার স্বামী যখন মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আমাকে বলল,
“ওর নাম নীলআশা ,আমার সাথে আমার অফিসেই চাকরি করে। যে বাসায় থাকতো সেখানে একটু সমস্যা হয়েছে। তাই আজ থেকে এখানেই থাকবে। আশা করি তোমার সমস্যা হবে না,ম্যানেজ করে নিবে তুমি।”

তাঁর কথার বিপরীতে আমার বলতে ইচ্ছে হলো,
“এই বাড়িতে কেনো? ঢাকা শহরে আর কি কোথাও থাকার জায়গা নাই? কিন্তু আমি এসবের কিছুই তাকে বলতে পারলাম না।” হয়তো এই না বলার কারণটা আমাদের মাঝে দূরত্ব।

কথাগুলো বলেই রনি মেয়েটাকে ওয়াশরুমের দিকে নিয়ে গেলো। আমি অবাক চোখে দেখছি,আমার সামনে আমার সাথে কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না। তবে আমার অগোছালো মস্তিষ্কের এলোমেলো নিউরন গুলো এইটুকুন হলেও আন্দাজ করতে পেরেছে যে,আমার স্বামী অন্য একটা সুন্দরী মেয়ের প্রেমে পাগলের মতো আসক্ত। সেজন্যই হয়তো আমাকে নিয়ে কোনোদিন বাহিরে ঘুরতে যায়নি,কারণ তাঁর ঘোরার মতো মানুষ ছিলো। এর জন্যই বুঝি আমাকে মানুষিক তৃপ্তি দেওয়াটা দরকার মনে করেনি,কারণ সে অন্য একজনের কাছ থেকে মানুষিক তৃপ্তি পেতো। এই মেয়েটার জন্যই হয়তো বা কোনোদিন একটু আদর করে জড়িয়ে ধরে ভালোবাসার কথা বলেনি। কারণ তাঁর ভালোবাসার কথা বলার মানুষ ছিলো। এজন্যই বুঝি আমার অসহ্য যন্ত্রণাকর একাকিত্বটা তাঁর চোখে পড়েনি,কারণ সে কখনো একাকিত্বের স্বাদ ভোগ করেনি।

ডিনারের সময় আমার স্বামী আমার পাশে না বসে মেয়েটার পাশে বসলো। রাতের খাবারটা অনেক কষ্ট করে খেলাম। নিজের স্বামীকে অন্য একটা মেয়ের সাথে কল্পনা করতেই যেখানে মেয়েরা ভয় পায়,সেখানে আমাকে বাস্তবের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। রাতে ঘুমানোর সময় সব বলবো ভেবে নিজের বিছানার দিকে এগিয়ে যেতেই রনি আর মেয়েটা আমার দিকে এগিয়ে আসলো।

রনি আমাকে বলল,
“নীলআশা রাতে একা থাকতে ভয় পায়। তোমরা দুজন বরং এই রুমে থাকো আমি অন্য রুমে থাকি। তোমার তো সমস্যা হবে না?”

আমার উত্তরের জন্য রনি অপেক্ষা করলো না। কথাগুলো বলেই সে চলে গেলো। পাঁচ মিনিট পরে দুইটা দুধের গ্লাস হাতে আবার চলে আসলো। আমাদের দুজনকেই খেতে বলল,আমার পাশে থাকা মেয়েটাকে বলল,

“তুমি অনেক টায়ার্ড, দুধ টুকু খেয়ে নাও। ভালো লাগবে। সাথে আমাকেও খেতে বলল।”

এতো দিন হয়ে গিয়েছে আমাদের বিয়ে হইছে। কখনো দুধ তো দূরের কথা এক গ্লাস পানিও কখনো আমার স্বামী আমাকে নিজ হাতে খাওয়াইনি। আর আজ একটা মেয়ের জন্য? হয়তো বা ভদ্রতার খাতিরে আমার জন্যও এক গ্লাস নিয়ে এসেছে। মূলত সে মেয়েটার জন্যই এটা করেছে। আমি মেয়েটার সাথে কোনো কথা না বলেই ঘুমিয়ে পড়লাম। মেয়েটাকে বলতে চেয়েছিলাম,
“আমার স্বামীর কে হও তুমি? ভালোবাসার মানুষ? তোমাকে অনেক ভালোবাসে বুঝি? তোমার জন্য এতো এতো ভালোবাসা তাঁর হৃদয়ে,সেথান থেকে একটু আমাকে দিতে পারে না সে?”

আমি কখন যে ঘুমের ঘরে তুলিয়ে গেলাম বুঝতেই পারলাম না। তাই কথাগুলো না বলায় রয়ে গেলো। এরকম ঘুম কখনো ঘুমাইনি আমি। মানুষ হয়তো ঘুমের ওষুধ খেলেও এতটা গভীরভাবে ঘুমায় না। ঘুম ভাঙলো সকাল আটটায়। ঘুম ভাঙতেই দেখতে পেলাম ড্রেসিং টেবিলের সামনে ভেঁজা চুলে একটা মেয়ে নিজের অতুলনীয় সুন্দর চেহারাটা দেখছে। ভেঁজা চুলে মেয়েটাকে একটু বেশিই সুন্দর লাগছে। আমি ভাবলাম মেয়েটা হয়তো অফিসে যাবে তাই এতো সকাল সকাল গোসল করেছে। কিন্তু যখন আমার স্বামী রনি তাকে বলল,
“অফিসে যাবে না?”

তখন মেয়েটা বলল,
“না,আজ খুব ক্লান্ত লাগছে। তুমি যাও। আমি আজকে বিশ্রাম নিবো। তোমার বউয়ের সাথে তো কথায় হলো না। তাঁর সাথে সময় কাঁটাবো।”

রনি অফিসে চলে গেলো। আমি বুঝতে পারলাম না সে রাতে কি এমন করলো যে ক্লান্ত হয়ে পড়লো। আমার অজান্তেই কি তাহলে আমার কাছের মানুষ গুলো আমাকে ধোঁকা দিচ্ছে? নাকি আমারই বোঝার ভুল হচ্ছে?

চলবে……..

মন্তব্য করুন