Skip to content

না- মানুষের গল্প- যুবক অনার্য

না-মানুষের গল্প
যুবক অনার্য

আমার সম্মুখে ওরা বসে আছে। একজন হিন্দু অপর জন মুসলমান। এই বিভাজন
ধর্মীয় কিংবা সামাজিক। সমাজ বা ধর্ম ওদের নামকরণ করেছে- হিন্দু আর
মুসলমান। ইসলাম ধর্মে খোদাই করা আছে- মুসলমান মুসলমানের ভাই
মানুষ মানুষের ভাই- এই কথা কোনো ধর্মে উৎকীর্ণ হয়ে আছে কিনা
আমার জানা নেই। বলছিলাম ওদের কথা। ব্যাপারটা এই- ওদের সঙ্গে
আমি কথা বলছিলাম। একজন বিউটি রানী সাহা-সামাজিক বা ধর্মীয় হিন্দু
অপরজন মোসাম্মৎ রুবিনা- সামাজিক বা ধর্মীয়ভাবে মুসলমান
তৃতীয় ব্যক্তি আবদুল্লাহ্ আল মামুন। নাম থেকে আঁচ করা সহজ-
ইনি একজন মুসলমান। কিছুক্ষণ পর মামুন চলে গিয়েছিল। হিন্দু মুসলমান
ধর্ম ঈশ্বর- এইসব সম্ভবত মামুনের ভালো লাগছিলো না। যা-কিছু কথা
আমিই বলে যাচ্ছিলাম। ওরা তেমন কিছু রা করছিল না। আমি বলছিলাম-
এখানে আমরা চারজন আছি। ছুরি দিয়ে পোছ দিলে আমাদের হাত থেকে
যে-রক্ত বের হবে তার রঙ- লাল। আমরা চারজন পৃথিবীতে একই পদ্ধতিতে
এসেছি। একটি দ্বীপে চার ধর্মের চারটি শিশু রেখে আসলে ওদের
সাদা চোখে দেখে চিহ্নিত করার উপায় নেই- কে কোন ধর্মের। একটি শিশু
কিছু বুঝে উঠবার আগেই তাকে বিশেষ কোনো ধর্মের তকমা
এঁটে দেয়া হয়। সামাজিক ও পারিবারিক ভাবে তার মননের শার্সিতে
ঢুকিয়ে দেয়া হয়- হিন্দু মুসলমান বৌদ্ধ খ্রিস্টান। অথচ সকল মানুষের
বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা একই রকম। অর্থাৎ সকল মানুষের রক্ত মাংস হাড়
জেনেটিক্স জন্ম-পদ্ধতি অভিন্ন প্রকারের। যদি তা-ই হয় তাহলে
মানুষকে বিভিন্ন ধর্মে বিভক্ত করে দেয়া নিশ্চিতভাবেই অবৈজ্ঞানিক
এবং অদ্ভুত। আমি ওদেরকে একটি প্রস্তাবনার কথা বলি- চলো
পৃথিবীর মানুষকে আমরা আহ্বান জানাই- যারা আস্তিক কিংবা
ঈশ্বরের একত্ববাদে বিশ্বাসী তারা সবাই একদিন বিশালতম ময়দানে
দাঁড়িয়ে তাদের ঈশ্বর ভগবান খোদার উদ্দেশে প্রার্থনা করবে-
হে খোদা হে ঈশ্বর হে ভগবান যদি তুমি সত্য হও তবে
নেমে আসো লৌকিক পৃথিবীতে। ঘোষণা দাও তুমি আছো। আজ থেকে
কোনো ধর্ম নেই কিংবা সকলেই একটি ধর্ম পালন করবে
কারো কাছে যাবে যিশু কারো কাছে গৌতম কারো কাছে মুহম্মদ কৃষ্ণ কারো কাছে-
মহাপুরুষদের এরকম গোষ্ঠীবদ্ধতা আমাদের কাছে বিভ্রান্তিকর। আমাদের
কোনো মহাপুরুষ প্রয়োজন নেই। অক্ষিগোলক বরাবর হে ঈশ্বর
স্বয়ং তোমাকে চাই। মহাপুরুষদের প্লাটফর্ম নিয়ে মানুষেরা মানুষ না হয়ে
হয়ে গ্যালো হিন্দু মুসলমান বৌদ্ধ খ্রিস্টান মুর্খ আর
অবৈজ্ঞানিক প্রাণী। আমাদের আহ্বানের পর যদি কোনো ঈশ্বর
বা ভগবান নেমে না আসেন তখন সকলেই ধর্ম ত্যাগ করে
রূপান্তরিত হবো সমস্বরে একটি মাত্র অভিধায়- মানুষ মানুষ মানুষ
কথা শেষ করে জানতে চাইলাম- তোমরা কি আমার এই প্রস্তাবে
সম্মত আছো? ওরা ম্লান হেসে উচ্চারণ করেছিল- এটা কি
আদৌ সম্ভব! উত্তরে কিছুই না বলে আমিও হেসেছিলাম
হেসেছিলাম এই ভেবে- আমার স্ট্রেইট প্রস্তাবনায় পৃথিবীর
তাবৎ ধর্ম বিশ্বাসী লোকেরা- এটা কি আদৌ সম্ভব- এই কথার
মধ্য দিয়েই উত্তর বা প্রস্তাবনা এড়িয়ে যাবেন অনায়াসে। বস্তুত
পৃথিবীর মানুষেরা শুধুই মানুষ না হয়ে ধার্মিক বা
ধর্মকেন্দ্রিক মানুষ হিন্দু মুসলমান হয়ে বেঁচে থাকতে সুখ পায়

সম্প্রদায়প্রবণ এই সুখ শুধু জন্ম দিয়ে যেতেছে একটি আদিম

ও অবৈজ্ঞানিক পৃথিবী যেখানে একদিন ক্ষমতাই হবে মানুষের শেষ ধর্ম!

মন্তব্য করুন