Skip to content

দুটি ফুল একটি ভ্রমর পর্ব ১৫ মামুন ইকবাল

এক
সময় এবং স্রোত কারো জন্য অপেক্ষা করে না। কয়েকটি মাস পার হয়ে গেছে এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি এখন এরিনদের বাসায় খাবার পর্ব চলছে। দুইদিন পর শুক্রবারে আমার বোন সালমা এবং মামাতো বোন জ্যোতির বিবাহ লাইভ অনুষ্ঠানে দেখানো হবে। আমি আরো এক লক্ষ ডলার আম্মুর কাছে পাঠিয়েছি। মামারা সবাই দিয়েছেন। এরিন মীরা ওরাও ৫০,০০০ করে ডলার পাঠিয়েছে।আমার কার্যক্রমের গতিবেগ বেড়ে গেছে মামার প্রত্যেকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আমি দেখাশোনা করছি। পারফিউম কোম্পানির ম্যানেজারের কাছে থেকে ৪,৩০,০০০ ডলার আদায় করেছি। এবং তাকে বরখাস্ত করেছি।সবার সাথে পূর্বের মত সম্পর্ক আছে। আমার বাসার কার্যক্রম পুরোপুরি শুরু হয়ে গেছে। কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। এ বছরের ভিতরেই কাজের সমাপন হবে। মামাদের দুই ভাইয়ের সম্পর্ক মজবুত হয়েছে। মামাদের জমিন দেখাশোনা এবং সেখান থেকে ফসল ও ফল উত্তোলন বিক্রয় নিয়মিত দায়িত্ব নিয়ে আমি পালন করছি। এখন সবজি কিনতে হয় না পুকুরের মাছও প্রচুর মাছ কেনার প্রয়োজন নেই, পুকুর ক্যানেল থেকে মাছ ধরছি। মীরাদের সুইমিংপুল চালু করা হয়েছে। সেখানে রীতিমতো গোসল করা হয়। ঘোড়া ছাগল পশুপাখি সবার যত্ন ও দেখাশোনা করতে হয়। এরিন এবং মীরা আমার সাথেই থাকে। এর মাঝে অনেক কয়েকটি জেমস্টোন মিশন চালিয়েছি তাতে অনেক ডলার ইনকাম হয়েছে। জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে এরিনের সেই বিখ্যাত ডায়মন্ডের নিলাম। এই নিলাম টি অনলাইনে অনুষ্ঠিত হবে। বোনদের বিবাহ এক সপ্তাহ পরে কায়েস ভাইয়ের সাথে আম্মু জ্যোতি এবং সালমা আসবে। ওরা দুই বোন বোনদের বিবাহ খরচ বাবদ ১ লক্ষ ডলার পাঠিয়েছে। তাদের স্বামীরা আসতে পারবেনা। সবার সাথে আমার সম্পর্ক ভালো আছে শুধুমাত্র ইরা আমার কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শেষ পর্যন্ত বুঝতে পারলাম ও আমাকে ভালোবাসে কিন্তু সে মুখে বলতে পারছে না। কারণ সে জানে আমার মামাতো বোনদের সাথে যেকোন একজনের কারো বিয়ে হবে। অফিসে অফিসের প্রয়োজন ছাড়া তার সাথে কোন কথাবার্তা হয় না। তবে তার প্রেমের দৃষ্টিতে আমি দগ্ধ হচ্ছি। আমি কাউকে বলতে পারছিনা সইতেও পারছি না। ইকবাল আমাকে বলেছে সে নাকি আমাকে ভীষণ ভালোবাসে। আমি এক দিন পরপর কোম্পানি দেখা শুনা করি। প্রতিনিয়ত আমরা এখন ঘোড়াই করে ভ্রমন করি। একবার নাম ধরে ডাকলেই ছুটি আসে। আমাদের ঘোড়াদের সাথে আমাদের বন্ধুত্বের সম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
বাসার চতুর্দিক থেকে বিভিন্ন প্রকার ফুল ফল বৃক্ষ আছে। ফুলে ফুলে চতুর্দিকের যেন সজ্জিত করা হয়েছে। ফুলের সৌরভে মৌমাছি প্রজাপতিরা ফুলের উপর খেলা করছে। নীল ভ্রমরা গুনগুন করে গান গায়। সুইমিং পুলের পাশ দিয়ে চতুর দিক থেকে শত শত রকমের ফুল ফুটে রয়েছে। এত সুন্দর অপরূপ প্রকৃতি চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না উপরের নীল আকাশে উড়ন্ত পাখিতে পরিপূর্ণ।
এরিন আমিও মীরা ঘোড়ার পিঠে চড়ে আঙুর ফলের বাগানে ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম। এখানে দুই প্রকারের আঙুর আছে সাদা এবং কালো। ঘোড়া এক সাইডে রেখে আমরা আঙ্গুর ফল পাড়তে লাগলাম। পাশে আছে নাশপতি বেদনা কমলা আপেল ও বিভিন্ন প্রকারের ফল। ঘোড়ার জন্য একপাশে ঘাস লাগানো আছে ঘোড়া তিনটি সেই ঘাস খেতে লাগলো। এখন বিকাল চারটা। পাঁচটার সময় আসরের আজান হবে। যে দুটি ছেলে ঘোড়া রক্ষ্যণাবেক্ষণ করে ওরা আমাদের সার্বিক সহযোগিতা করল। বিভিন্ন প্রকারের ফল তোলার পরে শাক সবজির ক্ষেত্র গুলো ঘুরে ঘুরে দেখলাম। সেখান থেকেও কিছু বেগুন করলা লাউ মিষ্টি কুমড়া তোলা হলো এগুলো বাসায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য রিফাতদের বলা হলো। এরপর আমরা তিনজন ঘোড়া নিয়ে একটু দূরে চলে গেলাম একটি নির্জন বৃক্ষের তলে সাদা প্রকাণ্ড এক পাথরের উপরে যেয়ে বসলাম এখান থেকে পাহাড়ে ঝর্না একেবারে নিকটবর্তী। মাত্র ১০০ ফিট দূরে প্রবাহমান লেক বয়ে গেছে। আমাদের থেকে মাত্র পাঁচ সাত ফিট দূরে লেকের পানি ছুটে চলেছে। লেকটি ২০ ফিট গভীর। আমি যখন আমার গোপন মিশন করি সেই স্থানটা এখান থেকে আরো একটু দূরে এবং দুর্গম সেখানে পানির পরিমাণ খুব কম। পাহাড়ি ঢাল। এই পানি পাহাড়ি ঝর্না ধারার। অপরূপ সুন্দর একটি স্থান। নিজেদের জমির সীমান্তে বাড়ির পাশেই এমন একটি স্থান আছে আমরা কল্পনা করিনি। এই জমিটা আমার জমির সীমান্তবর্তী এলাকা। পাহাড়ের কোল ঘেঁষে আমার জমির সীমানা। সাথে কিছু আঙ্গুর ফল এনেছি খেতে লাগলাম। আমাদের তোলা ফলগুলি কয়েক জনকে বলা আমাদের বাসায় পৌঁছে দিতে তারা বাসায় নিয়ে গেল তাদেরকে কিছু দেওয়া হলো। আমি সর্বপ্রথম কথা বললাম এই স্থানটি আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে। আমরা এখানে সময় করে আসবো মাঝে মাঝে ঠিক আছে। নিজেদেরই জমিনটা বেড়াতে কেমন লাগলো? ওরা কেউ কথা বলছে না। রাগ করে ‌ আমি কয়েকটি আঙ্গুর ওদের দিকে ছুড়লাম কারো বুকে লাগলো কারো বুকে ও মুখে লাগল। আমি এত কথা বলছি তোমরা কথা বলছো না কেন? কি হয়েছে তোমাদের? এরপর ওরা কথা না বলে শুধু হাসে আমার দিকেও আঙ্গুর ছুড়ে মারে।
আমি যে স্থানটা বসেছিলাম সম্পূর্ণ পাথরের স্থান ছোট বড় বিভিন্ন প্রকার রঙিন পাথর দেখা পেলাম। ঠিক লেকের ধারে অল্প পানিতে একটি চকচকে দ্রব্য দেখতে পেলাম বেশ বড়সড় প্রায় কবুতরের ডিমের মতো। গাড় সবুজ রঙের। সঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না। এটা কি জেমস্টোন না অন্য কোন কিছু। স্বচ্ছ পানির ভিতর থেকেই মনে হচ্ছে আলোর বিচ্ছুরণ হচ্ছে।
কিন্তু ওদেরকে আমি কিছুই বললাম না। আমি বুঝতে পারলাম এখানকার পাহাড় এবং প্রত্যেক জমিতে অফুরন্ত রত্ন পাথর লুকিয়ে আছে। যা সবারই অজানায় রয়ে গেছে। তোমরা আমার সাথে কথা না বলে শুধু হাসছো কেন দেখাচ্ছি মজা।
এরিন বলে তোমার মজা দেখার জন্যই হাঁসছি।
মীরা বলে তুমি যে কি মজা দেখাবে সে তো আমি জানি?
বলতো আমি তোমাদের কি মজা দেখাবো এই মুহূর্তে জীবনেও ভুলতে পারবে না স্মৃতি হয়ে থাকবে তোমাদের জীবনে।
এরিন বলে ঠিক আছে তাই হোক তুমি শুরু করো যা করতে চাও কি মজা দেখাতে চাও।
বললাম শোন আমরা তিনজন এখানে আসরের নামাজ পড়বো তারপর এখান থেকে ওই ব্রিজটা পার হয়ে মিশরীয় এবং আলবিনীয় মহল্লায় ঘুরে বেড়াবো ওখান থেকে আমরা পাশে অবস্থিত বড় শপিংমল তার চতুর্দিকে ঘুরবো। আমার সব থেকে বড় দুঃখের ব্যাপার এরিন তার কোম্পানি আমাকে দেখিয়েছে কিন্তু মীরা আপন মামাতো বোন তার ব্রেন রিসার্চ সেন্টার এন্ড ক্লিনিকে আমাকে এখনো নিয়ে যেতে পারিনি তার ছোট ভাই ইকবাল নিয়ে গেছে। ওই যে এখান থেকে এরিনের কোম্পানি দেখা যায়। ওই টা মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে সাগরের মাঝখানে মীরার ব্রেন রিসার্চ সেন্টার। আরেকটু দূরে এখান থেকে দেখা যাচ্ছে মারিয়া পারফিউম মিউজিয়ামের অট্টলিকা। সত্যই এই জায়গাটি অপূর্ব সুন্দর। তোমরা কি আমার প্রস্তাবে রাজি আছো নামাজের পরপরই আমরা ঘোড়াই করে ভ্রমন করবো। তোমাদের যে মজা দেখাতে চেয়েছি সেটা কিন্তু এই কথাগুলো নয় সেটা এখনই দেখবে। মীরার মনটা খারাপ হয়ে গেল। তোমরা এক মিনিট অপেক্ষা করো আমি আসছি। প্রখর রোদে আমার চোখ মুখটা জ্বালা করছে আমি একটু পানি ছিটে দিয়ে আসি। আমি সেই সবুজ পাথরটিকে সংগ্রহের জন্য একটু নিচে নেমে গেলাম কিন্তু ওদেরকে বুঝতে দিলাম না। এরপর ঠিক সেই স্থানে যেয়ে পাথরটিকে হাতে নিলাম এবং খুব গোপনে পকেটে রেখে দিলাম পানি দিয়ে হাত মুখ ধুয়ে উপরে উঠে গেলাম আমি লক্ষ্য করলাম ওখানে আশে পাশেও আরো অনেক রঙিন পাথর আছে তবে কোনটা কি এটা জানিনা। ওরা উভয়ে তাকিয়ে দেখলো দেখল কিন্তু কিছু বুঝতে পারল না। আমি হাতমুখ রুমালে মুছে নিলাম। এবং ওদের দুজনের মাঝখানে এসে বসলাম। অপরাধ হওয়া সত্ত্বেও ওদের দুজনের কপালে দুটি চুম্বন দিলাম।
বললাম আমার সুন্দরী বোনদের থেকে আদর ভালোবাসায় আমি ধন্য। তোমরা আমার সৌভাগ্যের পরশ মনি। দুষ্টুমি করলাম মীরার কোলে মাথা রেখে এরিনের হাটুর উপর দিয়ে পা দিয়ে শুয়ে পড়লাম। আমি জানি ওরা কিছু বলবে না কিন্তু একটু আশ্চর্য হল। মীরা আমার মাথায় মুখে হাত বুলাতে বুলাতে বলে আগামীকাল সকালেই তোমাকে আমি আমার ক্লিনিকে নিয়ে যাব আই এ্যম সরি রিয়েলি সরি এতদিন তোমাকে না নিয়ে যাওয়ার জন্য।এরিন অভিমানের কন্ঠে বলে আপন মামাতো বোনের কোলে মাথা রেখেছে। আর আমার রানের উপরে হাটু দিয়েছে কি সৌভাগ্য তোর। আমরা যেখানে অবস্থান করছিলাম ঠিক তার পাশে অনেকগুলো কমলালেবুর গাছ। তারপরও পাখি কমলা খেতে ব্যস্ত। একটি এরিনের বুকের পরে এসে পড়ল।
ও একটু ভয় পেয়ে গেছিল কিন্তু যখন দেখলো কমলালেবু তখন আর কিছু করার কিছু করার ছিল না। আমি লেবুটি নিয়ে কোয়া বের করে ওদের মুখের ভিতর ঢুকিয়ে দিলাম ওরা খেয়ে নিল আমিও কিছুটা খেলাম। অনেক সুন্দর একটা রোমান্টিক পরিবেশ। ঠিক এমন মুহূর্তে এরিনের ফোন বেজে উঠল। এরিন বলে আব্বু ফোন করেছে রিসিভ করল বলে
আব্বু তুমি কিছু বলবে?
মামা বললেন হ্যাঁ তোমরা কি আমাদের সাথে যাবে লিটিল বাংলাদেশ আমার মামাতো ভাইয়ের বাসায় ওখানে আমারদের সবার দাওয়াত রয়েছে। এবং ওখানে জেনিফার এবং রাহিমের বিবাহ সম্পর্ক পাকা হবে। এবং তারিখ নির্ধারণ করা হবে। জেনিফারের পিতা মাতা এবং ভাই ভাবীরা ওখানে আসবে। আমরা সকলে যাচ্ছি আমরা ডিনার সেরে আসবো।এরিন বলে মীরা ভাইয়া আব্বুর কথা তো তোমরা শুনতে পেয়েছো তোমরা কি যাবে? আব্বু জানতে চাইছি আমরা যাব কিনা? আব্বু তোমরা কখন যাচ্ছ? বড় মামা উত্তর দিলে না আমরা আসরের নামাজ পড়ে যাচ্ছি। মিনুরের কাছে দাও তো ওর সাথে কথা বলি। এরিন ফোন আমার কাছে দিলো আমি সালাম দিয়ে কথা বললাম শুনতে পাচ্ছি বলছিলাম যে আপনারা চলে যান আমরা মাগরিবের পরে আটটার পূর্বে তিনজনে একত্রে আসবো ইনশাল্লাহ। আমরা না গেলে উনারা তো অসন্তুষ্ট হবেন কাজই আমরা আসব ইনশাল্লাহ। মামা বলেন ঠিক আছে বাবা তাহলে আমরা নামাজ পড়ে তারপরে যাচ্ছি। ঠিক আছে রাখছি এখন তোমরা এস ওরা খুবই খুশি হবে।
আমি ফোন রেখে দিলাম। ঠিক আছে আমাদের যেতে হবে।
মীরা বলে ঠিক আছে তুমি যখন বলছ তখন আর কি আমার খুব ইচ্ছা ছিল না
এরিন বলে রাহিম বারবার আমাকে অফিস থেকে বলে দিয়েছে না গেলে কেমন কি হয়?
এরপর
আমি মনে মনে ভাবছিলাম পাথরটি দেখাবো কিনা। নিশ্চয়ই এটা ক্রিস্টাল নয় খুব মূল্যবান কোন পাথর প্রায় ৫ থেকে ৭০০+ ক্যারেট হবে। বেশ অনেকক্ষণ ওই অবস্থায় থাকলাম ওরা কেউ বিরক্ত বোধ করল না কারণ ওরা এভাবেই তারা চায়। আমি ওদের মুখের দিকে তাকিয়ে মিটি মিটি করে হাসছিলাম। এই হাসি যেন লজ্জা পেল। মীরা কি ব্যাপার কিছু তো বুঝতে পারছি না তোমার হৃদয়ের জন্য রঙিন হাওয়া লেগেছে। কি দেখছ এমন করে।
তোমাদের শত জনম ধরে দেখলেও সাধ মিটবে না অনাদি অনন্তকাল ধরে যেন মনে হয় শুধু দেখি আর দেখি। তোমরা আল্লাহর অপূর্ব সুন্দর সৃষ্টি। বিশ্বাস কর এই পর্যন্ত এর আর বেশি কিছু নয়। আমার দারা লিমিট ক্রস হবে না। এরপর আমি এরিনের কোলে মাথা রাখলাম এবং মীরার রানের উপর দিয়ে পা রেখে শুয়ে পড়লাম।এরিন বলে দেখলি আমাকে অসন্তুষ্ট হওয়ার কোন সুযোগ দিল না খুব বুদ্ধিমান। ওরা শুধু হাসে। মীরা বলে তোমাকে নিয়ে আমরা বহুৎ অনেক অনেক জায়গায় বেরিয়েছি কিন্তু এখানকার মতো এনজয় করিনি এত সুন্দর জায়গা নিজেদের জমিনের পাশেই তোমার জমিনের উপরে কখনও কল্পনাও করিনি। একটু দূরে ঘোড়ারা ঘাস খেয়ে বেড়াচ্ছে। এই মুহূর্তে আশেপাশে কেউ নাই গাছে আছে পাখিরা চাকে আছে মৌমাছিরা। ফুলে আছে ভ্রমরা প্রজাপতি। বলি শোন আসরের আযান দিলে একসাথে এই সাদা পাথরের উপরে নামাজ পড়বো কোন আপত্তি করতে পারবে না। তোমাদের কারো কোন সমস্যা নেই তো?
এরিন বলে আমার কোন সমস্যা নেই।
মীরা বলে আমারও কোন সমস্যা নেই ঠিক আছে তোমাদের কথায় রাজি আমরা।
এক সাথে নামাজ আদায় করবো।আমি উঠে বসলাম। বললাম তোমাদের কষ্ট দিলাম। তোমাদের সে মজাটা দেখতে এখনো কিন্তু বাকি আছে সেটাই মূল আকর্ষণ। তুমি বারবার বলছো মজা দেখাবে সেটা সেটা দেখাও না দেখি কেমন মজা পাই। আগামী শুক্রবার সালমা জ্যোতির বিবাহ আমরা সবকিছু লাইভে দেখব। এই মুহূর্তে ওদের কাছে আমি নেই নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছে ছোট বোনটার জন্য হৃদয়টা কাঁদছে ও পৃথিবীতে সবথেকে বেশি ভালবাসে আমাকে যা পবিত্র। ওর সাথে কথা বলতে পারলে ভালো লাগলো কিন্তু এই মুহূর্তে তো সম্ভব নয় ঘুমিয়ে রয়েছে। আমি মেসেজ দিয়ে দিয়েছি রাত দশটার পরে কথা বলার জন্য। ঠিক আছে তোমরা দুজন চোখ বোঝ আমি তোমাদের সেই মজাটা এখন দেখাবো তবে কেউ চিৎকার করবে না কথা বলবেনা প্রাণভরে শুধু দেখবে।
ওরা ওরা দুইজনেই চোখ বন্ধ করলো আমি পকেট থেকে সেই পাথরটি বের করলাম হাতের পরে রেখে বললাম এবার তোমরা চোখ খোলো দেখো আমার হাতে এটা কি। ওরা চোখ খুলে কবুতরের ডিমের আকৃতি সেই সবুজ পাথরটি দেখে যেন হতভম্ব হয়ে গেল অনেকক্ষণ কোন কথাই বলতে পারল না আমার হাত থেকে একবার মীরা একবার এরিন নিয়ে দেখতে লাগলো। এবং আমার দিকে
বারংবার তাকাতে লাগলো লাগলো। ওদের আবেগে আনন্দে কণ্ঠরোধ হয়ে গেছে। আমি একটু ভয় পেলাম বেশ কিছুক্ষণ কোন কথা বলছে না কেন ওদের দুজনকে ধাক্কা দিলাম তোমার কথা বলছো না কেন তোমাদের আবেগ প্রকাশ করো।
এরিন বলে কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না এটা কোথায় পেলে কিভাবে পেলে কখন পেলে এটা তো অনেক অনেক এটা দামি জেমস্টোন।
মীরা বলে কিভাবে কোথায় পেলে তুমি তো আমাদের থেকে কোথাও যাওনি তাহলে এটা কোথা থেকে পেলে সব সময় তো আমাদের সাথেই আছ এ তো অনেক মহামূল্যবান জেমস্টোন। তোমার হঠাৎ হঠাৎ এই অলৌকিক কারবারে আমরা খুবই বিস্মিত হচ্ছি। প্লিজ একটু খুলে বল।
এরিন বলে ৭০০/৮০০ ক্যারেট ওজনের হবে।
দৃঢ়তার সাথে বললাম আমার কাছে কখনো জানতে চেয়ো না কোথায় পেলাম কিভাবে পেলাম তাহলে আর কখনো আমার এসব সংগ্রহ করা সম্ভব হবে না। আমি চেষ্টা করলেও কখনো আর হবে না এটা আমার জন্য বড় ক্ষতি হবে আমার কথা নিশ্চয়ই তোমরা বুঝতে পেরেছ মাই সুইটহার্ট।
মীরা বলে ঠিক আছে ওই প্রসঙ্গে আর কখনো প্রশ্ন করব না তোমার কথা আমরা বুঝতে পেরেছি।
অনেকক্ষণ যাবত পাথরটি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখলো। গারো সবুজ রঙের পাথর থেকে আলোর বিচ্ছুরণ হচ্ছে।
এরিন বলে সিয়র এটা গ্রেট অনের পান্না পাথর। যার প্রতি ক্যারেট এক লক্ষ ডলার
মীরা বলে কি বলিস তুই তাহলে এটি কত ক্যারেটের হতে পারে?এরিন বলল আনুমানিক ৬০০ থেকে ৭০০ ক্যারেট। এবার দামটা হিসাব কর তোর ভাইজান কি পেয়েছে?
মীরা বলে তুই ঠিকই বলেছিস আমার ভাইজান আর তোর ডার্লিং।মীরার কথায় আমি এবং এরিন দুজনে হেসে উঠলাম।এরিন বলে বা: এ কথাটা তুই খোঁচা দিয়ে বললি। ওরে ও তো তোর আমার থেকেও আপন।
আমি বললাম আমার কথাটা মনোযোগ সহকারে শোনো এখনই তোমরা খোঁচা মারছো যদি দুই বোনকে একসাথে বিবাহ করি কিভাবে ঘর সংসার করবে বলো সব সময় তো ঝগড়াঝাঁটি করতেই থাকবে। শুধু ঝগড়াঝাঁটি না মারামারিও করবে। আমাকে নিয়ে টানাটানি করতে করতে আমি শেষ হয়ে যাব।
আমার কথা শুনে ওরা দুই বোন গলা জড়িয়ে ধরে হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ে।
এরিন বলে আমি শুধু ভাবছি তুমি কিভাবে এই রত্নপাথরটি সংগ্রহ করলে আমাদের অজান্তে কখন কি করলে আমার মাথায় কাজ করছে না ব্যাপারটা ছোট যত ছোট মনে করি না কেন ছোট ব্যাপার নয়। তুমি কি সত্যিই আমাদের ফুফাতো ভাই মিনুর ভাইয়া। না মিনুর ভাইয়া রুপি জিন। জিন হয়ে আমাদের মাঝে প্রেমের অভিনয় করছো। impossible কখনো সম্ভব হতে পারে না। তুমি সাধারণ কোন কিছু নও। ওর কথা শুনে আমি অট্টহাসিতে ফেটে পড়লাম। আমার হাসির শব্দ পাহাড়ে প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরে এলো। আমার এমন হাসি জীবনে
ওরা কখনো দেখিনি। একটি আশ্চর্য ঘটনা ঘটলো আমার হাসির শব্দ শুনে দুধরাজ, দুলদুল, রিবেল তিনটি ঘোড়াই, আমাদের পাশে এসে দাঁড়ালো। আমি ওদের সবার মাথায় হাত দিয়ে আদর করলাম। পাসের একটি গাছ থেকে কমলালেবু পেড়ে খেতে দিলাম। এরপর ওরা লেকের দিকে নেমে যেয়ে পানি খেয়ে এলো।
আমি বললাম আমার হাসির শব্দ শুনে ঘোড়া তিনটি কেন ছুটে এল তোমরা কি এর অর্থ বুঝতে পেরেছ। আমি জানি তোমরা বুঝতে পারোনি। কিন্তু ওরা ঠিকই বুঝতে পেরেছে। ওরা দুই বোন আমার দিকে জিঘাংসার দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।
ভয় নেই তোমাদের, আমি তোমাদের ভাই জিন নই। আর আমার এই হাসি দেখে তোমরা হতভাগ হয়ে গেছো সবকিছু প্রকম্পিত হয়ে উঠেছে। তোমাদের আয়াতুল কুরসি মুখস্ত থাকলে পড়ো আমি জিন হলে নিশ্চয়ই তোমাদের কাছ থেকে দূরে সরে যাব।
মীরা আমাকে এমন ভাবে ধাক্কা মারে আমি একটু দূরে গড়িয়ে পড়ি। বলে তুমি এমন হাসি হেসেছো আমাদের কলিজা ফেটে গেছে মানুষ এইভাবে হাসতে পারে পাখিগুলো ভয় পেয়ে উড়ে গেছে ঘোড়াগুলো ছুটে এসেছে কি সাংঘাতিক ব্যাপার।
এরিন বলে দেখ ওই আমাদের বিল্ডিংয়ের তৃতীয় তলার রেলিং থেকে আমাদের সব দেখছে। হাসান রাসেল মা সামিরা রিনা কাকি এবং আব্বু কাকা সবাই। আমাদের দিকে তাকিয়ে তারা দূর থেকেই হাত নাড়ছে। আমি সকলের উদ্দেশ্যে হাত নাড়লাম এতক্ষণ পর্যন্ত খেয়াল করিনি যেখান থেকে স্পষ্ট বাসার লোকজনের দেখা যায়। তোমার এই অট্টহাসি তারা সবাই শুনতে পেরেছে মনে হয় আর এই জন্যই এক জায়গায় সবাই দাঁড়িয়েছে। আমি বললাম তাইতো সর্বনাশ আমাদের মান সন্মান থাকবে না তোমাদের কোলের পরে মাথা রেখে রানের উপরে পা দিয়ে শুয়েছি।এই যদি সব দেখে ফেলে আমার বাসায় আর ফেরা হবে না। লজ্জায় আমি মরে যাব। ওনারা ভাববেন তাহলে আমরা এই করি ছি: ছি: ছি: কি করলাম তোমাদেরই বা কি ভাববে আমাকেই বা কি ভাববে সবাই ভাববে আমার বেয়াদব একটা অসম্ভব। আমাদের পাপের কোন ভয় নেই আল্লাহ ক্ষমা কর। তুমি দুশ্চিন্তা করো না তোমার হাসির শব্দে সম্ভবত তারা একত্রিত হয়ে আমাদের দেখেছে। এর পূর্বে ওনারা কেউ ছিল না। আমি এখান থেকে কয়েকবার বাসার দিকে তাকিয়েছি ভয় নেই, আমাদের লজ্জায় মরতে হবে না।
এরিন বলে এ স্থানটি সুন্দর কিন্তু আমাদের ইনজয় করতে গেলে এমন জায়গায় যেতে হবে যেখান থেকে বাসার কেউ দেখতে পারবে না। তার মানে আমরা এই বলছিলাম যে আমরা নোংরামি করবো কখনো কঠিন খারাপ কিছুই করব কখনোই তা নয়। দেখলাম রিফাত আসছে। ও এলে বললাম তুমি ঘোড়ার স্যাডল এবং জিন রেডি কর। ঘোড়া তিনটিকে সজ্জিত করো। আমরা এখনই নামাজ পড়ে বেরোবো। ইতিমধ্যে মসজিদে আজান দেওয়া শুরু হয়ে গেল। আমরা সকল ক্যানেলে নেমে (পাঠকদের অবগতির জন্য একটি বিষয় জানাচ্ছি এখানে আমি কখনো লেক কখনো ক্যানেল ব্যবহার করছি তবে এখন থেকে লেক শব্দটা বেশি ব্যবহৃত হবে) সকলে ওযু করে নিলাম। কিছুক্ষণ পরপরই আমরা যার মত সেই সাদা পাথরটির উপরে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ে নিলাম। এরপর পরপরি ঘোড়াই উঠে বসলাম। যে সমস্ত স্থানগুলো দেখতে চেয়েছি পাহাড়ি পথ বেয়ে লেকের ব্রিজ পার হয়ে তিনজনে একত্রে রওনা হলাম। মীরা বলে তোমার এক্সপেন্সিভ স্টোনটি সযত্নে রেখেছো তো?
এরিন বলে ওটা কি তোমার পকেটে রেখেছো না আবার ফেলে রেখে এসেছো?
আমি পকেটে হাত দিয়ে দেখলাম ঠিকই আছে বললাম না আমি সহযত্নে রেখেছি তবে তোমরা যে কোন একজন রাখলে আমি খুশি হতাম কখন আমার কাছ থেকে পড়ে যায়।
মীরা বলে ওটা তোমার কাছেই থাকবে খুব সাবধানে রেখো। চলো এবার পাহাড়ি পথে চলতে পারবে তো? বললাম তোমরা তো আছো আল্লাহ ভরসা চল যায়।
দুই
আমাদের সবাইকে ইতিমধ্যে স্থানীয় লোকজন সবাই চেনে আমাদের এই অবস্থায় অত্যাধিক দামী পোশাকে সজ্জিত হয়ে রাজপুত্র রাজকন্যার মত ঘুরতে দেখে আশেপাশের লোকজন কৌতুহলি হয়ে উঠলো। এভাবে একই সাথে তারা কেউ কাউকে দেখিনি। আমরা পাহাড়ি পথ ধরে চলছিলাম। অনেকক্ষণ চলার পরে আমাদের সামনে আরো একটি পাহাড় দেখতে পেলাম খুব বড় এবং তার থেকে ঝর্না ধারা নেমে আসছে এবং লেকে পড়ছে। এই ঝর্না ধারাটি
অনেক বড় কিন্তু এটা কি বাসা থেকে দেখা যায়? এখানে অনেক পর্যটক দেখলাম। পিছন দিকে তাকিয়ে দেখলাম বাসা দেখা যায় কিনা না দেখা যায় না। তবে কেমন যেন মনে হল আমার বাসাটি তৈরি হলে তার উত্তরের পাশের জানালা ও রেলিং দিয়ে দুটি ঝর্ণাধারায় দেখা যাবে। কারণ আমার জমিনে যে বড় বড় গাছগুলি আছে ঠিক যেখানটাই বাসা তৈরি হচ্ছে সেই গাছগুলি দেখা যাচ্ছে।
তাহলে তো এরিনের বাসা থেকেও দেখা সম্ভব। আসলে এখান থেকে সঠিক বুঝতে পারছি না যা হোক আমরা পথ চললাম। অনেক বড় বড় গাছ আছে হয়তো তার অন্তরালে পড়ে যেতে পারে। প্রথম পাহাড়ি ঝর্ণাধারা থেকে এই পাহাড়ি ঝর্ণাধারাটি প্রায় এক কিলোমিটার দূরে। সম্পূর্ণ পাথরের পাহাড়। অনেক উঁচু এবং দীর্ঘ প্রস্তে অনেক বড়। পাহাড়ের পাদদেশে জনগণ বসতি স্থাপন করেছে ঘন ঘন বসতবাড়ি দেখা যাচ্ছে। রাস্তার দুপাশে ও দোকানপাট বাজার এবং বসতি স্থাপন করা হয়েছে। আজ সাগর তো চন্দ্র আকৃতির অবকাঠামো নিয়ে অবস্থান করছে। এরপর আমরা অনেক নিচে নেমে এলাম সাগরের কূল ঘেঁষে দুই লেনের রোডে চলতে শুরু করলাম। এটা তো হাইওয়ে রোড নয় যা আমাদের বাসার সামনে দিয়ে চলে গেছে শত শত মাইল দূরে। সাগরের কোলে এত পর্যটকদের ভীড় হয়েছে চোখে না দেখলে অনুমান করা সম্ভব নয়। রোড লোকে লোকারণ্য হয়ে গেছে আমাদের চলতে রীতিমতো সমস্যা আছে। সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। দেখবে বা না কেন যেমন ঘোড়া তেমনি সোয়ারি। আমরা অনেক ঘুরে এসেছি।এরিন বলল মীরা আমরা কোথায় এলাম আর কোথায় যাচ্ছি আমি তো কিছুই চিনতে পারছি না এখানে আমি তো কখনো আসিনি পথ ভুলে গেলাম না তো।
মীরা বলে আমি তো কিছু বুঝতে পারছি না যাচ্ছি কোথায় সে মিশরীয় আলবিনীয় মহল্লা কোথায় শহরকেন্দ্রিক বাজার ঘাট শপিং মল সব কি ভুলে গেলাম। আমি রেগে গিয়ে বললাম তোমরা কোন কিছুই চিনতে পারছো না তাইলে এখন কি করবে অনেক দূরে চলে এসেছি। ঘুরাঘুরি এমন জোরে ছুটি এসেছে আমরা এমন জোরে তাড়না করেছি। কত কিলোমিটার এলাম বুঝতেই পারছি না। তোমাদের মোবাইলে গুগল ম্যাপে সার্চ করে দেখো কোথায় গেলে আমার কোথায় যাব।
ওরা দুই বোন মোবাইল খোঁজাখুঁজি করতে লাগলো।
কি হলো মোবাইল কই। মোবাইল কি ফেলে রেখে এসেছো না পড়ে গেছে তোমাদের হাবভাব দেখে তো মনে হচ্ছে মোবাইলে হারিয়ে ফেলেছ।
এরিন বলে তুমি ঠিকই বলেছ আমাদের দুজনের মোবাইলে একই সাথে যে পাথরের উপর নামাজ পড়েছিলাম ওখানে একই স্থানে রেখেছিলাম। আনতে ভুলে গেছি এখন কি করবো যদি কেউ পেয়ে থাকে দিবে কিনা জানি না। মীরার মোবাইল আমার মোবাইলের সাথে আছে।
মীরা বলে এখন কি করব? তোমার মোবাইলটা কোথায়?
আমি বললাম আমার কাছেই আছে। ঠিক আছে দেখছি কি করা যায় আমি রিফাত কে ফোন করলাম বললাম আমরা যেখানে নামাজ পড়েছি ওখানে তোমার ম্যাডামদের মোবাইল পড়ে রয়েছে এখন যাও যদি পেয়ে থাকো বাসায় পৌঁছে দিবে। রিফাত উত্তর দিল ঠিক আছে স্যার আমি এখনই যাচ্ছি পেলেই আপনাকে জানাচ্ছি।
কিছুক্ষণ পরে রিফাতের ফোন এলো বলল স্যার মোবাইল পাওয়া গেছে আমি বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসছি আমি বললাম ঠিক আছে তোমাকে ধন্যবাদ। মোবাইল পাওয়া গেছে কোন সমস্যা নেই কিন্তু আমরা ফিরব কিভাবে এখন সন্ধ্যার পূর্বে আমাদের ফিরতে হবে। তোমরা যে অঞ্চল এ এরিয়া চেননা জানতাম না। আমরা আধাঘন্টা অবিরাম গতিতে চলে এসেছি।
বাসা থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছি। আমি নিশ্চিত পথ হারিয়ে ফেলেছি এখন কি করবে যে কোন সিদ্ধান্ত দ্রুত নিতে হবে। এসব পাহাড়ি পথ যখন অতিক্রম করেছি অগণিত একই রকমের পথের সন্ধান দেখেছি দুই পাশের পাহাড় এখন এখান থেকে ফিরে গেল ঠিক কোন পথে এসেছিলাম মনে নেই তোমাদের মনে আছে কিনা জানিনা একই রকমের পথ। মীরা বলে তাহলে কি আমরা এখন সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছি না?
এরিন বলে সম্মুখে যত অগ্রসর হব ততই দূরত্ব বাড়বে বিপদের ঝুঁকি আসবে। এরপরও আমরা অনেক খানিক সম্মুখের দিকে অগ্রসর হলাম। কিন্তু এবার রোডটি দেখা গেল একটি পাহাড়ের ঢালুতে বেয়ে উপরে দিকে উঠে গেছে। দুই লেনের সেই রোডটি কোথায় যেন হারিয়ে গেল। ভারী ঝামেলায় পড়ে গেলাম। আমি বললাম আমার মাথায় একটু বুদ্ধি এসেছে আশা করি আমার মাগরিবের পূর্বেই ফিরে যেতে পারবো।এরিন বলে বুদ্ধিমান তুমি তোমার বুদ্ধিটা খাটাও। গুগল ম্যাপে দেখলে তো
আমাদের বাসা থেকে আমরা ৩৫ কিলোমিটার দূরে এসেছি। জীবনে কখনো এই অঞ্চলে পা দেইনি।
আমি আমাদের ঘোড়া তিনটির উদ্দেশ্যে বললাম বন্ধুরা তোমাদের বাসার উদ্দেশ্যে ফিরে চলো সন্ধ্যার সময় তোমাদের খাওয়াতে হবে তোমাদের জন্য তোমাদের রাখাল অপেক্ষা করছে দ্রুত ফিরে চল
আমার কথা শেষ না হতে হতেই ঘোড়া তিনটি আমরা যেদিক থেকে এসেছিলাম সেই দিকে মুখ ঘুরালো এবং দ্রুত ছুটে চলল। এরিন মীরা তোমরা দেখ এবার আমার প্লান্টটা খাটে কিনা? চলতে চলতে আমাদের কথা হচ্ছে। এখন আমাদের ঘোড়া বন্ধুদের দায়িত্ব দিয়ে দিয়েছি। আমাদের কে তারাই পৌঁছে দেবে ইনশাল্লাহ। ওরা সঠিক পথ ধরে চলছে। দশ মিনিট চলার পরে দুই পাহাড়ের মাঝ দিয়ে ওরা ছুটছে। দুই পাশে পাহাড়ি গভীর বন। এই অঞ্চলটায় কোন বসত বাড়ি নাই। হঠাৎ করে আমাদের সামনে নিগ্রো যুবকেরা পথ আগলে ধরল। ওরা একটি মোটা গাছের ডাল দিয়ে আড়াআড়ি আটক করে রাখল বুঝলাম ওদের মতিগতি খুব খারাপ। আমরা তিনজনে ওদের সামনে যে থমকে দাঁড়ালাম। ওদের হাতে ছোটখাটো ছুরি চাকু ছিল। ওদের সংখ্যা আটজন। অতিকায় অভদ্র জঙ্গি জংলি পোশাকে আবৃত। ওদের দেখে মনে হল এরা সভ্য জাতি নয়। সকলে মোটা লন্বা এবং সুঠাম দেহের অধিকারী। চুল দাড়ি উস্কখুস্ক। দুই বোনের মাঝখানে রয়েছি।এরিন ওদের সাথে সর্বপ্রথম কথা বলল তোমরা কার কি চাও? পথ আটকে রেখেছো কেন?
মীরা বলে আমাদের পথ তোমরা ছেড়ে দাও কোন রকম দুঃসাহস দেখানোর চিন্তা করো না। এর পরিনতি খুবই খারাপ হবে।
ওদের একজন বলল আমরা তোদের চাই তোদের মতো সুন্দরী মেয়েদের সারারাত ধরে উপভোগ করবো সকালবেলায় পুড়িয়ে ভেজে খেয়ে ফেলবো আর ওটাকে মেরে সাগরে ভাসিয়ে দেবো পুরুষ মানুষ আমরা খাই না। ওদের কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথে এরিন মীরা ওদের ব্রেসলেট এবং ঘড়ি খুলে ফেলল আমার কাছে দিয়ে দিল বললো তুমি এগুলা নিয়ে সরে দাঁড়াও। তোমার ওটা খুব হেফাজতে রেখ। আমাদের মোকাবেলা করছে তুমি চিন্তা করো না ওদের জন্য আমরা দুজন যথেষ্ট।
আমি ঘোড়া নিয়ে পিছনে এলাম রোডের এক পাশে দাঁড়িয়ে যেখানে ছোট ছোট অনেক গাছ আছে নাম জানিনা গাছ কাটলে ভালো লাঠি হয়। ওরা ক্রমেই অগ্রসর হচ্ছে। ওটা তোমার মনে পড়ে গেল সাথে আমার কোন জিনিস সাথে একটু ব্যাগ বাধা আছে। তাতে দা ছুরি চাকু এবং অন্যান্য ছোটখাটো যন্ত্রপাতি আছে যা অনেক সময় লাগে। আমার ধারালো দা বের করে হাতে ধরে রাখলাম।
এরিন মীরা ঘোড়ার পিঠেই আছে। আমি জানি ওরা জুডো কম্পু ক্যারাটে জানে। দেখি ওরা কি করে। ওরা দুজনে দুটি ঘোড়ার লাগাম ধরে ফেললো। সাথে সাথে ওরা দুজন পায়ের জুতা দিয়ে ওদের মুখে এমন লাথি মারলো চিট পাটাং হয়ে পড়ে গেল মুখ দিয়ে কল কল করে রক্ত বেরোলো। এই দৃশ্য দেখে অন্যরা সকলে ছুটে এলো। দুই বোন এবার ঘোড়া থেকে নামলো। একজন চারজনের সাথে লড়তে লাগলো। লাথি ঘুষি লাফিয়ে লাফিয়ে এমন ভাবে দিতে লাগলো ওরা নাস্তানাবুদ হয়ে গেল। কল্পনাও করতে পারিনি এই দুটি সুন্দরী মেয়ে তাদের এই অবস্থা করবে। ওদের পুরুষাঙ্গ লক্ষ্য করে অবিরাম লাথি দিতে লাগলো ওরা চিৎকার করে গড়িয়ে পড়ে। দুই বোনের ক্যারাটে জুডো কম্পু কখনো দেখিনি আজকেই ওদের এই অগ্নি মূর্তি দেখলাম। ওরা দুজনে ক্যারাটে ব্লাকবেল্ট। কিন্তু ওরা কমে ছাড়তে চাইনা তারাও আঘাত করছে। কিন্তু সে আঘাতকে সামলে দিচ্ছে এদের কৌশল। পাশে থাকার লাঠি ধরল ওরা সাথে সাথে আমি বুঝতে পারলাম লাঠির প্রয়োজনে আমি দুটি গাছ কেটে চার হাত লম্বা করে দুটি লাঠি বানালাম খুব মজবুত লাঠি। চিৎকার করে বললাম তোমরা লাঠি নাও লাঠি ছুড়ে দিলাম। এরিনের হাতে একটি বাড়ি মেরেছে এবং মীরার পায়ে বাড়ি মেরেছে একটু লেগেছে। লাঠি নিয়ে এবার শুরু করে দিল কত মারতে পারে মাথায় পায়ে পিটিয়ে হাতে সর্বস্থানে পিটাতে লাগলো। আমার দিকে একজন অগ্রসর ছিল আমি একটি পাথর ছুড়ে তার মাথায় আঘাত করলাম চিৎকার করে এসে বসে পড়ল। আরো একজন অগ্রসর হচ্ছিল আমি যখন লাঠি বানিয়ে দিয়েছে তখন সে লক্ষ্য করেছে ওই লাঠির পিটানি তারা খাচ্ছে এই জন্য আমার উপরে রাগ আমি ঘোড়াকে বললাম দুধরাজ লাথি মার আমার কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথে দুধরাজ লাফিয়ে উঠে জোড়া পায়ের লাথি এমন ভাবে মারলো নিগ্রোটি হুমড়ি খেয়ে পড়ে গেল। ওরা দুই বোন তো লাঠি দিয়ে ওদের অবিরাম পেটাচ্ছে ওদের শক্তি কোন কাজেই আসছে না। এরিন রিবেল এবং দুলদুল কে অর্ডার দিল দাড়িয়ে আছিস কেন মেরে ওদের বুক ভেঙে দে। এবার হরদম শুরু হয়ে গেল ঘোড়াদের জোড়ালাথি। এরপর ঘোড়ার লাথির আঘাতে সবকটি লুটিয়ে পড়ল। ওরা এক প্রকার শক্তি প্রয়োগ করে বক্র করে পেঁচিয়ে ধরে ওদের হাত এবং পা ভেঙে দিল ওরা ছটফট করতে লাগলো। ওদের আর নড়াচড়ার শক্তি নেই। ওদের দুই বোনের বেশ কয়েক জায়গায় আঘাত লেগেছে। তবে তা গুরুতর নয়। ওরা চিৎকার ও আর্তনাদ করছে।মীরা বলে চলো এবার আমরা প্রস্তান করি ওঁরা এভাবে পড়ে থাকুক। জীবনে মেরে ফেললাম না বেঁচে থেকে বুঝুক অপরাধের সাজা কি। এরপর মোটামুটি বিলম্ব করলাম না দ্রুত ঐ স্থান ত্যাগ করলাম। আমাদের ঘোড়া ছুটে চলল। পনের মিনিট চলার পরে সেই বড় পাহাড়ি ঝর্ণার পাশে এসে দাঁড়ালাম। বুঝলাম প্রায় এসে গেছি। এখন সবকিছু পরিচিত মনে হল। ওই স্থানটা পর্যটন কেন্দ্র সেখানে হোটেল রেস্টুরেন্ট দোকানপাট আছে আমরা রেস্টুরেন্টের সামনে দাঁড়ালাম ঘোড়া থেকে নামলাম। রেস্টুরেন্টের ভিতর যেয়ে হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। আমাদেরকে সবাই দেখতে লাগলো। আমরা কারো সাথে কোন কথা বললাম না কফির অর্ডার দিলাম। খেতে খেতে আমি বললাম তোমাদের কোন আঘাত লাগে নি তো? ব্রেসলেট ও ঘড়ি তাদের দিয়ে বললাম এগুলো ইউজ কর।
এরিন বলে এতগুলো লোকের সাথে লড়াই করতে কিছুটা আঘাত পেতেই হয়েছে তবে মারাত্মক না চিন্তার কোন কারণ নাই। আমার হাতে এবং পায়ে লেগেছে। মীরা বলে আমার পিঠে একটা লাঠির বাড়ি লেগেছে। দুই পায়ে দুই জায়গায় লিগেছে। তবে মারাত্মক না এর জন্য কোন চিন্তার কারণ নেই। আমি বললাম তোমরা আজকে রিভলবার সাথে রাখোনি?
মীরা বলে ওটা তো সাথে রাখিনি সাথে কোন পার্সও নেই।
এরিন আমারও তোর মত একই অবস্থা। এমন একটা ঘটনা ঘটবে কি জানতো?
কপি শেষ হওয়ার পরে বিল দিয়ে আমরা আবার চলা শুরু করলাম। মাগরিবের আজান হতে মাত্র ১০ মিনিট বাকি। এই ১০ মিনিটেই আমরা আমাদের জমিনের সীমানায় পৌঁছালাম। আজান শুরু হয়ে গেছে আর তিন-চার মিনিট পরেই আমরা বাসায় ফিরে এলাম। রিফাত ফোন দুইটি বুদ্ধি করে সামিরার কাছে দিয়েছিল। সামিরা কাউকে কিছু না বলে রেখে দিয়েছিল। বাসায় আসার সাথে সাথে ফোন দুটি এরিন মীরা কে দিয়ে দিল। আমি বললাম তোমরা সবাই নামাজ পড়ে নাও। আমি মসজিদে যাচ্ছি।বাসায় মামা মামীদের ও ইকবালের দেখতে পেলাম না। বুঝতে পারলাম তারা আসরের নামাজ পড়ে রওনা হয়ে গেছে লিটিল বাংলাদেশ। অন্য কোন কথা এই মুহূর্তে আমি কারো কাছে কিছু জানতে চাইলাম না। আমি মসজিদের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম।
তিন
আমি নামাজ শেষ করে বাসায় ফিরে এলাম দেখলাম ওরা এরিনদের গেষ্ট রুমে বসে পোশাক পাল্টে দুইজন দুটি নতুন শাড়ি পড়েছে আমার দেয়া শাড়ি এই দুটি শাড়ি এর পূর্বে ব্যবহার করিনি। ওদের পাশে যে বসলাম কিছুক্ষণ পরে রিনা আমাদের কফি দিল। আমি বললাম তোমরা কি প্রস্তুত
মীরা বলে হ্যাঁ আমরা নামাজ পড়ে প্রস্তুত হয়ে আছি তবে এখন না কিছুক্ষণ পরে যাব। তোমার সেই এক্সপেন্সিভ মেটেরিয়ালস কোথায় রেখেছো?
এই বললাম আছে সযত্নে রাখা হয়েছে। তোমাদের বড় ধরনের কোন সমস্যা হয়নি তো আর ব্যাপারটা অবশ্যই গোপন রাখার চেষ্টা করতে হবে নইলে মামা মামীরা জানলে খুবই সমস্যা।
এরিন বলে অবশ্যই কখনো যেন বাস্ট না হয় তাহলে সমস্যায় পড়ে যাব। রিনা সামিরা তোমরা সবাই রাতের ডিনার সেরে নিও আমরা ওখানে যাচ্ছি যেখানে আব্বু আম্মুরা গেছে।
সামিরা বলল ঠিক আছে আপু তাই হবে অনেক মাছ মেরে ছিলেন আবার মাছ ধরার সময় হয়ে গেল ফ্রিজের মাছ প্রায় শেষ ‌ আগামী হলিডে পর্যন্ত চলতে পারে।
মীরা বলে ঠিক আছে এ কয়দিন চলতে থাকুক আগামী হলিডে আমরা মাছ ধরবো এবারে জাল ফেলে পরীক্ষা করব ওখানে মাছ আছে কি পরিমান।
এরিন বলে অবশ্যই এবার আমাদের পুকুর থেকে মাছ ধরা হবে। আর লেকের মাছ যেভাবে ধরছে ওইভাবে নিয়মিত ধরা হবে। আগামীকালকে আব্বু কাকু শুরু করে দেবে। শুধু একটু বলবি মাছ প্রায় শেষ বাস আর কিছু লাগবে না। আমি বললাম ঠিক তো তাই এতদিন মাছ আছে মনে করে আর মাছ ধরিনি। তবে এখন থেকে অত মাছ ধরার প্রয়োজন নেই অল্প অল্প করে ধরে খাওয়া যাবে সেটাই ভালো হবে ফ্রিজের বেশীদিনকের মাছ ভালো লাগেনা।
রিনা বলল আপনারা আজকে শাড়ি পড়েছেন দেখে মনে হচ্ছে ডানা কাটা পরী। শাড়ি পরলে আপনাদের এত সুন্দর দেখা যায় কল্পনাও করা যায় না। যে কোন পুরুসের মাথা খারাপের জন্য যথেষ্ট।
মীরা বলে থাক হইছে আর প্রশংসা করতে হবে না। কারোর মাথা খারাপ হয়ে যাক এটা আমরা চাই না।
সামিরা বলল আপু মাথা খারাপ হয়ে গেলে তো আপনার ব্রেন রিসার্চ সেন্টার আছে আর আপনি তো থাকলেন ট্রিটমেন্টের জন্য ।
এরিন বলে আসলে তোরা খুব পাকা হয়ে গেছিস এত পাকা হয়েছিস যা আমরা ভাবিনি যারে বলে ইছড়ে পাকা। স্বামীদের সাথে থেকে থেকে লজ্জা শরম নষ্ট হয়ে গেছে। এত বছর ধরে স্বামীদের সাথে থাকিস তোদের দুইজনের একটারো পেটে বাচ্চা ঢুকলো না। স্বামীদের সাথে থেকে কি করতে হয় তাও তো মনে হয় তোরা বুঝিস না। শুধু পাকা পাকা কথা বলিস। রিনা বলে আমরা বুঝে কি না বুঝি আমাদের ব্যাপার, পাঁচ বছর পরে তারপর পেটে বাচ্চা নিব।
এরিন বলে ও তার মানে সব বুঝিস তোরা ফ্যামিলি প্ল্যানিং করছিস আমি তো মনে করেছিলাম তোরা কিছু বুঝিস না শুধু ঘুমাস।
ওরা এরিনের কথা শুনে লজ্জা পেয়ে সবাই এখান থেকে চলে গেল হাসতে হাসতে। আমি এবং মীরা হাসি আর থামাতে পারিনা। মীরা বলে তুই এদেরকে এভাবে বললি মনে হলে তোরই অভিজ্ঞতা আছে বিয়ে না করেও বুঝিস কি করতে হবে।
এরিন রেগে যায় বলে আমি বুঝি তুই বুঝিস না। মীরা বলে বোঝা না বোঝা পরের কথা। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে তোর হাজবেন্ড কে তুই এক রাতেই আলু ভর্তা করে দিবি, তোর যে অ্যাকশন। জানিনা সে হতভাগ্য কি হবে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বলে তুমি না তো?
এরিন বলে আমি যদি আলু ভর্তা করি তুই করবি ডাল ঘুন্ঠা।
আমি বললাম তোমাদের যে কথাবার্তা তাতে আমি এখনই ভয় পেয়ে যাচ্ছি শেষ পর্যন্ত আমাকে পলাতে হবে। ওসব আজেবাজে কথা বাদ দাও এখন কি নামাজ পড়ে বেরোবে না ওখানে যেয়ে নামাজ পড়বে। এখনো এক ঘন্টা পরে নামাজ।
এরিন বলে আমাদের এখনই বেরোনো উচিত খালি হাতে যাওয়া যাবে না কিছু নিয়ে যেতে হবে।
মীরা বলে অবশ্যই নিয়ে যেতে হবে তারা তো আত্মীয়। আনকমন কোন কিছু নিয়ে গেলে হয় যা ইতিপূর্বে কেউ নিয়ে যায়নি।
আর রাত্রে আমরা বেরোচ্ছি সেভাবে প্রস্তুতি হয়ে বেরোবি আমি প্রস্তুত হচ্ছি। নিশ্চয়ই আমার কথা বুঝতে পারছিস।
আজকের ঘটনা আমার অভিজ্ঞতা হয়ে গেছে খালি হাতে আর বের হব না সাথে রাখবো।
আমি বুঝতে পারলাম না কি বলতে চাইছে ওদের অস্ত্র সাথে রাখতে চাই সমস্যা নেই আমি কোন মন্তব্য করলাম না।
এরিন ভেবেচিন্তে বলল আনকমন কি নিতে চাস? মীরা বলে তিন চার রকমের মিষ্টি আর বাংলাদেশের বরিশালের ইলিশ মাছ দাম যা হয় হোক।এরিন বলে
মিষ্টি কি আনকমন হল?
আমি একটু খোঁচা দিলাম বললাম আনকমন হলো কোন কিছু না নেওয়া। আমি বললাম
আমি যাচ্ছি না তোমরা যাও।
ওরা হঠাৎ করে আমার এই খামখেয়ালি দেখে প্রচন্ড রেগে গেল।এরিন বলে ঠিক আছে আত্মীয় যখন আমার তখন আমাদের যেতেই হবে তুমি না যেতে চাও আর একবার বলবো না। মীরা চল এখন আমার সাথে।মীরা উঠে দাঁড়ালো বলে চল
আমরা তার সাথে কোন খারাপ আচরণ করিনি সে যেতে চাইছে না এই প্রসঙ্গে আর কোন কথা নেই। এরিন বলে মীরা আমার ‌ঘরে চল কথা আছে। ওরা ঘরে গেল। আমিও আমার ঘরে প্রবেশ করলাম।আমি খেজুর খেতে খেতে ল্যাপটপে কাজ করার জন্য রেডি হচ্ছিলাম।এরপর ওয়েবসাইটে ‌কাজ শুরু
করলাম।বেশ কিছুক্ষণ পরে ওঁরা দুই বোন আমার ঘরে প্রবেশ করল।
মীরা বলে তুমি কি যাবে হাঁ কি না বলে দাও।না‌ যদি বল আমরাও যাবনা কাপড়
খুলে ফেলি। সাহেব যাবেনা যখন কাজেই
কাপড় খুলে ফেলাই‌ ভালো।
আমি বললাম আসতাগফিরুল্লাহ বলে কি এরা? খবরদার কেউ এ কাজটি করনা। আসতাগফিরুল্লাহ। কাপড় খুলে ফেললে তোমরা তো উলঙ্গ হয়ে যাবে ছি ছি।
এরিন হাসতে হাসতে ফেটে পড়ে আরে সাহেব তুমি কি বুঝলে তোমার মনে দোষ আছে কাপড় খোলা মানে কি তাই?
মীরা বলে চোরের মন পুলিশ পুলিশ।
আমরা বলতে চেয়েছি যে তুমি যদি না যাও তাহলে আমরা ড্রেস পাল্টে ফেলি এই তোমার দামি পোশাকটা অকারনে পরে থাকতে চাই না।
আমি বললাম ও আচ্ছা এবার বুঝেছি মনে করলাম সত্যি সত্যি—-
মীরা আমাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়ে জড়িয়ে বুকের উপর উঠে চেপে ধরল বলল অসভ্য ইতর মনে তোমার এত দোষ তুমি যাবে না সত্যি সত্যি কিছু করে ফেলব। আমি মীরাকে জোর করে জড়িয়ে ধরে বিছানার সাথে নিচে চেপে ধরলাম এবং আমি উপরে উঠে এলাম। সত্যি সত্যি কি করবে বলো না আমি করব ? ওর মুখের কাছে মুখ নিলাম শত শত কিস দিয়ে দেবো? এদিকে এরিন কখন ভিডিও করছে বুঝতে পারিনি মীরা এরিনের ভিডিও করা দেখে রেগে গেল বলে এই তুই এরে টেনে না উঠিয়ে ভিডিও করছিস। আমি দেখলাম এরিন সত্যই ভিডিও করছে। বললাম আমার কোন দোষ নেই তুমি যা করেছে তার রিপ্লাই করছি। এরিন বলে তুমি ঠিকই বলেছ তোমার কোন দোষ নেই। তোমার কাজ চালিয়ে যাও আমি ভিডিও করছি।
মীরা বলে তুমি ছাড়বে আমার কাপড়-চোপড় সব নষ্ট হয়ে যাবে। ঠিক আছে আমি তো স্বীকার করছি এখন প্লিজ ছাড়ো শরীরের অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে কিন্তু তখন সর্বনাশ হবে। বললাম তোমার শরীর থেকে সৌরভ আসছে নিশ্চয়ই তুমি তো সেন্ট ব্যবহার করেছ। যে তোমার স্বামী হবে তোমার এই অপূর্ব সৌন্দর্যের পরশে প্রথম রাত্রি তার জীবন ধন্য হয়ে যাবে। মীরা আমাকে কিল ঘুষি চড় দিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নিল। তবে সেগুলো মৃদু আঘাত করেছে। মারার উদ্দেশ্যে মারা নয় তারপর নাকে লেগেছে খুব জোরে। এরপর উঠে দাঁড়ালো।বলে দেখতো কাপড়-চোপড় গুলো কিভাবে এলোমেলো হয়ে গেছে কত সুন্দর করে সাজগোজ করেছিলাম সব তুমি নষ্ট করে দিয়েছো আবার ঠিক করতে হবে।
এরিন ভিডিও করা বন্ধ করে বলে তোর তো দোষ উনার কোন দোষ নেই।
আমার নাকে এমন একটা ঘুষি দিয়েছে কখন রক্ত বের হয়েছে আমি টের পায়নি।
আমি কিছু বুঝতেই পারিনি। ফোঁটা ফোঁটা করে রক্ত পড়ে আমার জামা লাল হয়ে গেছে। আমি অনুভবই করতে পারিনি ওরা ওরা দুই বোন আমার নাকের রক্ত পড়া দেখে হতবাক হয়ে গেল। আমি বললাম আমরা দুজনে দুষ্টুমি করেছি সিরিয়াসলি কোন কিছু নয় কেউ যেন কিছু না মনে করে।সরি প্লিজ মীরা এক্সকিউজমি। তোমাকে লজ্জিত অপমান করা আমার উদ্দেশ্য নয়। চল আমরা যাই।
মীরা বলে কিন্তু আমি তো তোমাকে আঘাত করে ফেলেছি তোমার নাক দিয়ে রক্ত পড়ছে তুমি এখনও বুঝতে পারনি?
এরিন বলে তোর ঘরে কোন রক্ত বন্ধ হওয়ার ওষুধ থাকলে শিগগিরি নিয়ে আয় নইলে রক্ত বন্ধ হবে না নাকে প্রচন্ড আঘাত লেগেছে ও যদিও তা বলছে না।
মীরা বলে অবশ্যই আছে আমি এখনই আছি ও দ্রুত ঘর থেকে বের হয়ে গেল।
এবার আমি ওদের কথা মতো নাকে হাত দিয়ে দেখলাম অবিরাম রক্ত বের হচ্ছে জামাটি ভিজে গেছে। হাত লাল হয়ে গেছে। দুষ্টুমির ছেলে এমন একটা মুহূর্তের জন্য আমরা কেউ প্রস্তুতি ছিলাম না। আমার মনে হচ্ছে এটা পাপের শাস্তি। মীরা তার ঘর থেকে তুলা এবং ওষুধ নিয়ে আসলো।এরিন বলল তাড়াতাড়ি আমার কাছে দে একটু দুষ্টুমি করতে যেয়ে কি অবস্থা হল। এরিন তুলাই করে ওষুধ লাগিয়ে আমার নাকে চেপে ধরল। মীরা তুলা এবং একটি শুকনা কাপড় দিয়ে আমার নাক মুখ মুছে দিল।মীরা বলে সত্যি যাবে দুঃখিত ইচ্ছে করে মোটেও করিনি আমি তোমার কাছে সত্যি এক্সকিউজমি। তোমার এই অবস্থায় আমরা কোথাও যাচ্ছি না।
এরপরে রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে গেল।
আমি বললাম কোন সমস্যা নেই। সামান্য একটু রক্ত পড়েছে এখন আমি ড্রেস পরিবর্তন করে নতুন একটা ড্রেস পরে নিচ্ছি। আমি ওয়াশ রুমে আছি, হাত মুখ ধৌত করে ফ্রেশ হয়ে আসলাম। এবং ড্রেস পরিবর্তন করে নিলাম। ওরা ভালো করে লক্ষ্য করে দেখলে আর কোন রক্ত পড়ছে কিনা। ওরা উভয়ে চিন্তাযুক্ত হয়ে একে অপরের দিকে চাওয়াচাওয়ি করছে। আমি মীরাকে বললাম তোমার কাপড়টা সঠিকভাবে পরে নাও এলোমেলো হয়ে গেছে। চলো ওখানে যেয়ে নামাজ পড়বো।মীরা আমার বুকে মাথা রেখে ঝরঝর করে কেঁদে ফেললো।
এরিনের চোখ দিয়েও পানি বেরোচ্ছে। ওদের উভয়কে জড়িয়ে ধরে সান্তনা দিলাম। আমি বললাম আরে আমার কিছুই হয়নি। তোমরা এতো কষ্ট পাচ্ছ কেন? তোমরা আবারও প্রমাণ করলে সত্যিই আমাকে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসো। ওদেরকে ছেড়ে দিলাম। মীরা বলে এরিন কি করবি যাবি?
আমি বললাম অবশ্যই যাবো তোমার ড্রেস ঠিক করে নাও। মীরা তার ড্রেস ঠিক করে নিল।
এরপর আমরা আর অপেক্ষা করলাম না লিটিল বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম।
তিন
মীরার প্রাইভেটে আমরা উঠে বসলাম মীরা নিজে ড্রাইভ করছে। পিছনের ছিটে আমার পাশে এরিন বসে আছে। বুঝতে পারছি না নাক দিয়ে এখনও রক্ত পড়ছে কিনা জ্বালা করছে। এরিন বলে, তোমার কোন সমস্যা হলে আমাকে বলবে। আমি বললাম না কোন সমস্যা নেই।
মীরা বলে তোমার নাকের আঘাতটা খুব লেগেছে আমি আসলে বুঝতে পারিনি দুষ্টুমি করতে যেয়ে আঘাতটা দিয়ে ফেলেছি রিয়েলি সরি। ওরা দুই বোন পরামর্শ করে বাসা থেকে কয়েক প্রকারের ফল গাড়ির ভিতরে প্যাকিং করে এনেছে।
এরপর একটি মার্কেটে প্রবেশ করে তিন প্রকারের মিষ্টি ২ কেজি করে ক্রয় করলাম
আধা ঘন্টার ভিতরেই আমরা রাহিম দের বাসায় প্রবেশ করলাম আমাদের পরপরই জেনিফারের ভাই ভাবি আব্বু এবং জেনিফার ও মিস ইরা ম্যাডামকে প্রবেশ করতে দেখলাম। সকলের সাথে সকলের শুভেচ্ছা বিনিময় এবং কথাবার্তা হল। ইরার সাথে আমার দৃষ্টি বিনিময় হতে আমি অন্য দিকে চেয়ে রইলাম।ইরা তা লক্ষ্য করল আমি বুঝতে পারল। ওর সূক্ষ্ম এবং ধারালো কথাবাত্রায় আমি চরম অপমানিত হয়েছিলাম। যা আজও আমাকে কুরে কুরে খাচ্ছে। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া অফিসেও উনার সাথে আমি কথাবার্তা বলি না।ইরা এক দৃষ্টিতে আমার পানে চেয়ে আছে।এরিন এবং মীরা তা বুঝতে পারল। ইকবাল আমাকে দেখে আমার কাছে এলো।ইরা বলল স্যার আপনার নাক দিয়ে রক্ত পড়ছে আপনি কি লক্ষ্য করুন আপনার জামা ভিজে গেছে। আর এতক্ষণ আমি সেটিই দেখছিলাম। কিভাবে আপনার নাকে আঘাত লাগলো? ওনার কথায় সকলে আশ্চর্য হল এবং আমাকে লক্ষ্য করলো তারাও তার কথার সত্যতার প্রমাণ পেল।
আমি নাকে হাত দিয়ে স্পর্শ করলাম। সত্যিই অনেক রক্ত পড়েছে এবং আমার জামা ভিজে গেছে। নাকে স্পর্শ করার সাথে সাথে আমার হাত রক্তাক্ত হয়ে গেল। একটি সুন্দর পরিবেশে অস্বস্তিকর বিব্রতকর একটি পরিবেশের সৃষ্টি হল সকলের চিন্তায় পড়ে গেল। ইকবাল মামা মামীরা সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। কিভাবে এটা হল কখন হল সবাই প্রশ্ন করতে থাকেন। আমি ভাবলাম কিভাবে মিথ্যা কথা বলবো আবার সত্য কথা তো বলতে পারছি না। মীরার মানসিক অবস্থা খুবই খারাপ বুঝতে পারলাম খুব চিন্তা করছে। ভেবেচিন্তে বললাম নাকের ভিতর খুব চুলকাচ্ছিল নখ দিয়ে চুলকাচ্ছিলাম নখের আঁচড় লেগে কেটে গিয়েছে। সামান্য একটু রক্ত পড়েছে সমস্যা নেই ঠিক হয়ে যাবে। ডক্টর রাকিব ভাই পাশে ছিলেন তিনি এসে দেখলেন বললেন না আসলে এটা ধারাল কোন কিছুতে নাকের মাঝের পর্দা ছিঁড়ে গিয়েছে এখন অপারেশন করতে হবে নইলে রক্ত বন্ধ হবে না। সমস্যা নেই আমার প্রাইভেট ট্রিটমেন্ট রুমে সব কিছু ব্যবস্থা আছে এখানে সবকিছু করতে পারবো ভয়ের কোন কিছু নেই।
এরিন বলল অপারেশনের কি কোন বিকল্প নেই ওখানে ওই ছোট্ট জায়গায় কিভাবে অপারেশন করবে।
মীরা বলে প্রয়োজন হলে অবশ্যই আমি করব কোন সমস্যা হবে না।
ইরা বলে ম্যাডাম আমি একটা উপায় জানি অপারেশন করার বিকল্প হিসেবে আমার উপায়টা ব্যবহার করে দেখতে পারি যদি অনুমতি দেন রক্ত পড়বে না ব্যাথাও হবে না কোন সমস্যা হবে না খুব অল্প সময়ের ভেতরে তিনি ওই আঘাত জনিত সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন। ইনশাল্লাহ আর কখনো সমস্যা হবে না।
মামা এবার বললেন ঠিক আছে মা তুমি তাই কর।
এরিন বলে Nothing outside the medical system needs to be operated on.

আমি বললাম আমাকে একটু হলুদের গুড়া এনে দিন। সামান্য এই ক্ষতের জন্য কোন অপারেশনের প্রয়োজন নেই। এরপর হলুদের গুঁড়া আনা হলো আমি নাকের ক্ষতস্থানে লাগিয়ে দিলাম। গায়ের জামাটি খুলে ফেললাম। রাহিম দের বাসার কাজের বুয়া
জামাটি ওয়াশ করে আবার শুকিয়ে আনল কয়েক মিনিটের মধ্যে আমি ফ্রেশ হয়ে হাতমুখ ধুয়ে জামাটি আবার গায়ে দিলাম। বড় মামী বললেন তোমার নাকের আঘাত তোমার নখের থেকে সৃষ্টি হয়নি নিশ্চয় কোন কারণ আছে কিন্তু তুমি এড়িয়ে যাচ্ছো। আমি আড় দৃষ্টিতে মীরার দিকে তাকালাম। বড় মামা রসিকতা করে বললেন নিশ্চয়ই ভাই বোনরা মিলে কোন দুষ্টুমি করছিল আর এটা তারই শুভ ফল।এরিন
তুমি তো একবার হাতে কামড়ে দিয়েছিলে এবার কি ঘুষি মেরেছ নাকটা ফাটিয়ে দিয়েছো? তোমার যে রাগ তাতে এই ঘটনা ঘটানো সম্ভব হয়ত মিনুর লজ্জায় বলতে পারছে না।
এরিন বলে হ্যাঁ আমি ওর নাকটা ফাটিয়ে দিয়েছি বক্সিং শিখছিল আমার সাথে তাই একসময় আমার হাতটা তার নাকে যেয়ে লাগে। ওতেই এই বিপত্তির সৃষ্টি হয়েছে।
মীরা বলে জীবনে কখনো তুই মিথ্যা কথা বলিস নি আমার জন্য তুই মিথ্যার আশ্রয় নিচ্ছিস কেন? ঘটনাটা আমি ঘটিয়েছি, আমি ওকে মেরেছি আমার হাতের আংটিতে উনার নাক ছিঁড়ে কেটে গিয়েছে।
এরিন বলে মীরা আমার অপরাধ তুই কাঁধে তুলে নিচ্ছিস কেন?
মীরা চিৎকার করে বলে এরিন তুই থামবি? জীবনে কেউ কখনো আমরা কোনদিন মিথ্যা কথা বলিনি পিতা-মাতার সামনে আর আমার জন্য তুই কেন সেটা করবি। আমার জন্য তো নিজেকে কেন এত ছোট করছিস নিরপরাধ হয়েও কেন নিজেকে অপরাধী করছিস।
এবার আমি বললাম মামা বা এখানে যারা আছেন সবাইকে অনুরোধ করছি আসলে মীরার সাথে দুষ্টুমি করতে যেয়ে আমার এই অবস্থা হয়েছে ও ইচ্ছা করে আমাকে আঘাত করিনি কখনোই করতেও পারে না
এ বিষয় নিয়ে কেউ কোন মন্তব্য করবেন না এটা আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ সে আমার আপন মামাতো বোন সে এর জন্য লজ্জা পাক তাকে কেউ এ নিয়ে মন্তব্য করুক এটা আমি চাইনা।বড় মামী বললেন তাই হোক এ প্রসঙ্গটা সম্পূর্ণ ভুলে যাওয়া হোক। এখন সবাই প্রায় এসে গেছে আমরা যে উদ্দেশ্যে এসেছি সেটাই আরো আলোচনা করা হোক অন্যসব প্রসঙ্গবাদ থাক।
ইকবাল বলে আপুমনি তুমি কেন ভাইয়ার নাকটা ঘুসি দিয়ে এভাবে ফাটিয়ে দিলে। বিশ্বাস করো আমার খুব কষ্ট হচ্ছে না জানি কত রক্ত বের হয়েছে।
মীরা বলে ছোট ভাই আমার শোন বিশ্বাস কর একেবারে দুষ্টুমি করতে যে এটা হয়ে গেছে আমার কোন প্রকার এভাবে তাকে আঘাত দেওয়ার ইচ্ছা ছিল না সেতো আমার ভাই।
ইকবাল বলে ঠিক আছে মানলাম ভাইয়া তুমি মন খারাপ করবেনা। মনে করো এটা দুর্ঘটনা মাত্র আপুমনিরা তোমাকে যে কত ভালবাসে তুমি তো নিজেই জানো যাই হোক জেনিফার ম্যামের বিবাহ ঠিক হবে আমার রাহিম ভাইয়ের সাথে আমার ভাবতে খুব আনন্দ লাগছে জেনিফার ম্যাম নিজে যখন এখানে হাজির হয়েছে আমার মনে হয় এখানেই কাজী সাহেব ডেকে এনে কলমা পড়িয়ে দেওয়া হোক। শুভ কাজে বিলম্ব করতে নাই। ইকবালের কোথায় সবাই যেমনে হেসে ওঠে ঠিক তেমনি ওর ওই ছোট মুখের বুদ্ধদীপ্ত কথা শুনে আশ্চর্য হয়ে যায়।
জেনিফারের পিতা মোহাম্মদ রাব্বি বললেন ইকবাল তুমি আমার কাছে এসো তোমার কথাগুলো আমার খুব ভালো লেগেছে। ইকবাল তার স্যারের পাশে যে দাঁড়ালো বলল স্যার আমার কি কোন ভুল হয়েছে।
মোহাম্মদ রাব্বি বললেন না বাবা তোমার কোন ভুল হয়নি। তুমি খুব বুদ্ধিমান ছেলে অল্প বয়সে অনেক শিখেছো আমার মেয়েকে আমি নিয়ে এসেছি এখানকার ঘরবাড়ি দেখানোর জন্য পরিবেশ দেখানোর জন্য এটা তো ওয়েস্টার্ন কান্ট্রি। আমাদের বাংলাদেশ নয় এখানে ইচ্ছে করে মুসলিম মেয়েরা হবু স্বামীর ঘর বাড়ি দেখতে পারে। যেখানে আমার মেয়ে থাকবে বিবাহর পূর্বে সেখানটা দেখা অনেকটাই পজিটিভ এটাই হওয়া উচিত। মামনি তোমরা সব কিছু ঘুরে ফিরে দেখো আর ও ব্যাপারে এ বাসার ফ্যামিলি সদস্য যারা আছেন তারা ওদেরকে হেল্প করুন। আলোচনা তো একপ্রকার হয়ে রয়েছে শুধু আজকে নির্ধারিত একটা ডেটের বিষয়ে আলোচনা হবে। রাহিম এবং রাহিমের ভাবি জেনিফার দের পুরো ফ্যামিলির এবং মিস ইরাকে তাদের বাসাটি এ টু জেড ঘুরে ঘুরে দেখালো। এরই সাথে রাব্বি সাহেবও দেখলেন। সবাই সন্তুষ্ট প্রকাশ করলেন। সকলের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলো
আগামী ইংরেজি মাসের প্রথম শুক্রবার শুভ বিবাহ অনুষ্ঠিত হবে। যৌতুক নয়। রাব্বি সাহেবের বাসাতেই বিবাহর অনুষ্ঠান হবে। এরপর খাওয়া-দাওয়া হল। সবশেষ আমি বললাম মামা আমার আরো একটি উপযুক্ত পাত্রের প্রয়োজন কথা বলার সময় মিস ইরার দিকে তাকালাম জানিনা তিনি কিছু বুঝতে পারলেন কিনা আমার দেখে তিনি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে রইলেন।
মীরা এবং এরিন জিঘাংসার দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালো।
এরিন বলে কার জন্য তোমার একটি উপযুক্ত পাত্রের দরকার।
মীরা বলে আমি কিছুটা অনুমান করতে পারছি কিন্তু শিওর নয়।
আমি কোন প্রতি উত্তর না দিয়ে শুধু মিটমিট করে হাসতে থাকলাম। কিছুক্ষণ পরে বলল যার ইঙ্গিত করে বলেছি সে নিশ্চয় বুঝতে পেরেছে।
ইকবাল বলে আমি জানি ভাইয়া তুমি কার জন্য পাত্র খুজছো? দুইজন হতে পারে আমার আপু মনি নইলে আমার ম্যাম। মীরা বিরক্ত হয়ে ওঠে বলে তুই কি বলছিস এসব? আমাকে তুই মিন করছিস কেন? আমার জন্য উনি পাত্র খুঁজতে যাবেন কেন?
বুঝতে পারলাম পরিবেশ ঘোলাটে যাচ্ছে দ্রুত বললাম তুমি কি সব বলছো এখানে কাউকে নিয়ে আমি কিছু বলছি না আমার প্রসঙ্গ অন্য কাউকে দিয়ে যা কেউ বুঝতে পারবে না।
ইরা বলে দেখুন আপনি যত নিজেকে বুদ্ধিমান মনে করেন না কেন আপনার কথা বোঝার মত বয়স আমাদের হয়েছে কাকে নিয়ে কি বলছেন বুঝতে পারছি। যাহোক কাউকে যদি বিবাহবন্ধনের জুটি বেঁধে দিয়ে সোয়াবের আশা করেন দোষের কিছু নেই। অনুরোধ তার মতের বিরুদ্ধে কিছু করতে চাইবেন না।
এরিন বলে বুঝলাম সবকিছু যাই হোক কথা বাড়ানোর পূর্বেই ও প্রসঙ্গ বন্ধ করা হোক। আগে নিজেকে নিয়ে ভাবো তারপর অন্যকে নিয়ে ভাবতে শিখ।
বড় মামা বললেন তুমি ঠিক বলেছ মা।
আমার মামী বললেন ইরা মা মনে করেছে
শুধু তার জন্য মিনুর পাত্র সন্ধান করতে যাচ্ছে এজন্য সে সতর্ক করে দিয়েছে।
এবারে বড় মামী বললেন মিনুর তো খারাপ কিছু বলিনি একথায় মামনির সন্তুষ্ট হওয়া উচিত। তবে আমি বলছি না যে সে অসন্তুষ্ট হয়েছে সে সতর্ক করে দিয়েছে শুধুমাত্র।
মীরা বলে ইরা ম্যাডাম কাকে যে লাইক করেন আমি জানি এই কথাটি বলার সময় মীরা ইরা ম্যাডামের দিকে তাকালো।
এরিন বলে তোর কথা আমিও বুঝতে পারছি
ইরা বলে ম্যাডাম আপনাদের ভয় নেই আপনাদেরকে আমি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম যে আপনাদের প্রিয় ব্যক্তিত্বের উপর আমি হস্তক্ষেপ করব না সে কথাটি আমি ভুলে যাইনি চিরজীবন আমার মনে থাকবে আপনারা আমার থেকে সর্ব মুহূর্তে নিশ্চিত থাকতে পারেন।
আমি বুঝতে পারলাম ইরা কি তাহলে সত্যিই আমাকে পছন্দ করে। কিন্তু সে তো আমাকে মুখ দিয়ে ফুটে একবারও বলিনি। আর এরিন এবং মীরা ওকেই সন্দেহ করে। আমি আবার মস্তক নিচে করে রইলাম কারুর দিকে তাকাতে পারলাম না। ভীষণ একটা দ্বিধা দ্বন্দ্বের ভিতর পড়ে গেল নিজের পাত্র খোঁজার কথা বলে এখন নিজে বিপদে পড়লাম।
ইকবাল বলে দুই বোনকে আমার ভাইয়া বিবাহ করবে কি করে সম্ভব।
বড়মামী বললেন আরে বাবা সম্ভব ওরা তো আপন দুই বোন নয় আপন দুই বোন হলে বিবাহ করা যায় না বাবা তুমি যা জানো না তা বলতে যেওনা।
ইকবাল বলে আমি বুঝি কাকিমা আমার আপুকে আর আপনার মেয়েকে একসাথে তাহলে মিনুর ভাইয়ার সাথে একসাথে বিবাহ দিয়ে দিন। কারণ ওরা তো দুজনই ভাইয়াকে ভালোবাসে।
মামী বললেন বাবা তুমি থামো তুমি ছোট মানুষ বেশি কথা বলতে যেও না।
ইরা বলে আন্টি আপনি যদি কিছু না মনে করেন আমি কয়েকটি কথা বলতে চাই যদিও এখানে এই বাসায় এই পরিবেশে বলা ঠিক নয় তবু না বললেই নয় এরিন এবং মিরা ম্যাডাম আমাকে সন্দেহ পোষণ করছেন আমি এর থেকে পরিত্রান পেতে চাই। আমি প্যাসিফিক পার্কের অফিস থেকে অব্যাহতি চাই। এবং ইকবালকে পড়াতে যাই আপনার বাসায় আপনি অন্য শিক্ষিতা দেখুন ওখানে আমি আর যেতে চাই না আপনার ভাগ্নে যেখানে আছে তার আশেপাশেও থাকবো না আমি দোয়া করি আপনার মেয়েদের সাথে যেন তার সু-সম্পর্ক থাকে এবং তারা যেন তাকে পেয়ে ভালো থাকে। আমার আব্বু যেখানে চাকরি করেন এরাবিয়ান কোম্পানিতে সেখানে আমাকে ওই কোম্পানির চাকরির জন্য অফার দেওয়া হয়েছে আমার বাসা থেকে কাছে যে কোন মুহূর্তে আমি ওখানে যেতে পারি তবে আপনাদের কাছে আমি দোয়াপ্রার্থী আমাকে কেউ যেন ভুল বুঝবেন না।
এবার মামা দৃঢ়তার সাথে বললেন না মা কখনো তা হবে না তোমাকে কেউ কখনো সন্দেহ পোষণ করে না তুমি আমার মেয়ের মতো আমি তোমাকে তোমার আব্বুর কাছ থেকে চেয়ে নিয়েছি তুমি যেখানে আছো সেখানে থাকবে যেভাবে যা করছো সেভাবেই তাই করবে এটা আমার অনুরোধ এরপরে কখনো ঐরূপকথা বলবে না। তুমি কোন প্রবলেমে পড়লে আমাকে তুমি নির্দ্বিধায় জানাতে পার সব সমস্যার সমাধান আমি করব।
এরিন বলে আমার কাকুর অনুরোধ আপনি অবশ্যই রাখবেন আপনাকে আমরা কখনো সন্দেহ করছি না প্লিজ ওই কথাটি আর বলবেন না যেমন আছেন তেমন থাকুন দোয়া করবেন আপনার জন্য আমরা দোয়া করব প্রান থেকে।
মীরা বলে আব্বু আমাকে যেমন ভালোবাসেন স্নেহ করেন তার থেকে কোন অংশে আপনাকে কম স্নেহ করেন না। আমরা আমাদের বোনের মতোই ভাবি আপনি সিরিয়াসলি কোন সিদ্ধান্ত নিয়েন না। আমরা দুই বোন মিনুর ভাইয়াকে খুব ভালোবাসি। আর উনি এমনই একটি ব্যক্তিত্বের অধিকারী যে কোন মেয়ে তাকে ভালবাসতে পারে মন থেকে কামনা করতে পারে। যাই হোক আপনার কথা আমাদের মনে আছে। এবার আমি বললাম সব সমস্যার সমাধান আমাকে দেশে ফিরে যাওয়া। তাহলে কারোর ভিতরে আর কোন রেষারেষি আবেগ ভাবাবেগ হিংসা না পাওয়ার কষ্ট থাকবে না।
মামা দুঃখ ভারাক্রান্ত কন্ঠে বললেন মিনুর তুমি এসব কি বলছ? তোমাকে নিয়ে কত আশা কত স্বপ্ন আমাদের সবার তুমি যদি দ্বিতীয় বার একথা বল আমি স্ট্রোক করবো তুমি আমাদের স্বপ্নগুলোকে ভেঙেচুরে খানকানা করে দিও না। মামা সত্যিই কেঁদে ফেললেন। এখানকার পরিবেশটা ভারাক্রান্ত হয়ে উঠলো আমি আমার কথায় এতটা দুঃখজনক পরিবেশের সৃষ্টি হবে আমি বুঝতে পারিনি। খুব দ্রুত আমি মামাকে জড়িয়ে ধরলাম বললাম মামা এটা আমার মনের কথা নয় আমি সারা জীবন আপনাদের সাথে থেকে যাব।
বড় মামা ক্রন্দিত কন্ঠে বললেন বাবা মিনুর তুমি আমাদের হৃদয় জয় করেছ আমাদের মেয়েরা তোমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছে তারা তোমার প্রাণপ্রিয়। কিছুদিন পরে তোমার আম্মু বোন কায়েস আমেরিকা আসছে সব কিছু আলোচনা পরিপ্রেক্ষিতে একটা সমস্যার সমাধান করা হবে আর এখানকার যে পরিবেশ সৃষ্টি হল এটা হওয়া উচিত হয়নি এসেছি এক উদ্দেশ্যে আর কথাবার্তা হলো অন্য রকমের যাইহোক এখানে সব কিছু সমাপ্তি করা হোক আমরা এখন উঠবো তাহলে কোথাও রইল আগামী মাসের প্রথম শুক্রবার জেনিফার রাহিমের বিবাহ অনুষ্ঠিত হবে। আর তোমরা সবাই কে মিনুরের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে থাকবে। রাত ক্রমশ বেড়ে চলছে আমরা আর অপেক্ষা করব না বাসায় ফিরে যাবো।
রাব্বি সাহেব বললেন সবাই সকলের জন্য দোয়া করবেন কিছু লোক একত্রিত‌ হলে বিভিন্ন কথা উঠতেই পারে এখানে কিছুটা তাই হয়েছে যাই হোক কেউ কিছু মনে করবেন এবছর ফ্যামিলিতে যারা আছেন এবং আমরা যারা দাওয়াতি মেহমান আছি আশা করি কেউ কিছু ভাববো না বা মনে করব না আমার হবু মেয়ে জামাইয়ের জন্য সবাই দোয়া করবেন। এবং বিবাহ অনুষ্ঠানে আপনারা সবাই উপস্থিত হবেন। এখন আল্লাহু আমাদের সহায়।
এরপর আমরা আর কোন কথা বাড়ালাম না রাহিমদের ফ্যামিলির সবার কাছ থেকে আমরা একে একে সবাই বিদায় গ্রহণ করলাম। বাসায় ফিরে গেলাম রাত এগারোটা বাজে।
১৫ তম পর্ব সমাপ্ত।

মন্তব্য করুন