Skip to content

তাকফীর ও তুচ্ছ করা ছাড়াও সমালোচনা ও সংশোধন সম্ভব – আবু উবাইদাহ আল-হিন্দী

মাসআলা হলো; এই কুফুরি শাসনব্যবস্থায় শরয়ী তাবীলের মাধ্যমে, দ্বীনের খেদমতের নামে কেউ যদি অংশ গ্রহণ করে তাহলে জিহাদের আলেমদের মতে এটি বাড়াবাড়ি, গুনাহের কাজ এবং হারাম। তার পুরোপুরি বিরোধিতা করা হবে এবং দাওয়াতের ভাষায় এই ব্যক্তিদের প্রকাশ্যে সমালোচনা করা হবে। কিন্তু তাদেরকে কাফের বলা হবে না। এই ব্যক্তিরা সবাই এক স্তরের নয়। কোন বিশেষ নেতা এমনও থাকতে পারে, যে দ্বীন ও জিহাদের ক্ষতি করায় অনেক অগ্রসর অথবা তার ব্যক্তিগত কোন কাজ তার ঈমানের দাবির বিপরীত। কিন্তু তা সত্ত্বেও ওই ব্যক্তিকে কাফের ফতোয়া দেয়া থেকে আমাদের ভাষাকে সংযত করবো। তার বিরুদ্ধে এ ধরণের ফতোয়া দেয়া জিহাদের দাওয়াতের জন্য ক্ষতির কারণ।
আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের পূর্ববর্তী আলেমগণ সর্বদা কোন বিশেষ ব্যক্তি অথবা গ্রুপকে কাফের ফতোয়া দেয়ার পূর্বে দাওয়াতের লাভ-ক্ষতির দিকটি বিবেচনায় রাখতেন। যদি কোন ব্যক্তি ইসলামের পোশাক গায়ে জড়াতো অর্থাৎ মুসলিম দাবী করত অথচ সে কুফুরি গ্রহণ করেছে, তাহলে পূর্ববর্তী আলেমগণ দেখতেন তাকে স্পষ্ট কাফের ফতোয়া দেয়া বা হত্যা করা দ্বারা দাওয়াতের ক্ষতি হবে নাকি লাভ হবে? যদি ক্ষতি হওয়ার আশংকা বেশি থাকত তাহলে নাম ধরা ছাড়া তার সমালোচনা করা হত। সংশোধনের চেষ্টা করা হত। তার খারাবী বন্ধ করে দেয়া হত। কিন্তু তাকে নির্দিষ্ট করে তাকফীরও করা হত না। তাকে হত্যা করাও হত না।
আমরা রঈসুল মুনাফেকীন আব্দুল্লাহ বিন উবাই’র সাথে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আচরণের দিকে লক্ষ করি। সাহাবীগণ যখন বললেন, ‘আমরা তাকে হত্যা করি?’ তখন তিনি বললেন, ‘তাকে ছাড়, মানুষ বলবে মুহাম্মদ তাঁর সাথীদের হত্যা করে’।
.
আরেকটি বিষয় লক্ষ করি, ইবনে উবাই আনসারিদের খাজরাজ গোত্রের ছিল। এক গোত্র হওয়ার কারণে খাজরাজের সরদার সাআদ বিন উবাদা রাদিয়াল্লাহু আনহু সাহাবী হওয়া সত্ত্বেও এটা সহ্য করেননি যে, অন্য গোত্রের কোন লোক তাকে (ইবনে উবাইকে) হত্যা করবে। এই কারণেই আউস গোত্রের সরদার সাআদ বিন মুআয রাদিয়াল্লাহু আনহু যখন রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আব্দুল্লাহ বিন উবাইকে হত্যা করার অনুমতি চাইলেন, তখন সাআদ বিন উবাদা রাদিয়াল্লাহু আনহু তার ওপর রাগ করলেন এবং এমন কাজ করতে নিষেধ করলেন।
.
এই ঘটনা সহীহ মুসলিমমে এসেছে। সেখানে আয়শা রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর একটি কথা বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, “সাআদ বিন উবাদা ভালো মানুষ ছিলেন। কিন্তু ওই সময় তার আত্মমর্যাদাবোধ জেগে উঠেছিল। তিনি চাচ্ছিলেন যদি হত্যা করার আদেশ দেয়া হয় তাহলে যেন তাদেরকে আল্লাহর রাসুল আদেশ দেন। তারাই ইবনে উবাইকে হত্যা করবে। অন্য গোত্রের কেউ হত্যা করবে এটা তারা চাচ্ছিলেন না। ঠিক এমন কথাই বলেছিলেন ইবনে উবাই এর মুসলমান ছেলে ‘আব্দুল্লাহ’ রাদিয়াল্লাহু আনহু ।
যখন ইবনে উবাই এর খারাবী বেড়ে গেলো, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কষ্টের বিষয়টি তিনি বুঝতে পারলেন, তখন তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে উপস্থিত হয়ে বললেন, “ইয়া রাসুলাল্লাহ! যদি আমার পিতাকে হত্যা করতে চান তাহলে আমাকে আদেশ করুন। আমিই তা’র মাথা এনে আপনার সামনে রাখব। কিন্তু অন্য কেউ হত্যা করলে আমার আত্মমর্যাদাবোধে আঘাত লাগবে”।
.
সম্মানিত ভাইয়েরা!
.
বংশীয় এবং দলীয় সম্পর্ক খুব নাযুক। নিজের দলের কোন নে’তার সাথে দলের কোন সদস্যের মতবিরোধ থাকতে পারে – কোন এক পর্যায়ে সে তাকে খারাপও মনে করতে পারে। কিন্তু দলের বাহিরের কেউ ওই নে’তার নামে কোন খারাপ কথা বললে তার দলীয় অনুভূতি জেগে উঠে। বিশেষ করে দলটি যখন দ্বীনী দল হয় তখন অনুভূতিও তীব্র হয়। তাই এই নাজুকতার প্রতি লক্ষ্য রাখা জরুরি।
এই দ্বীনী দলের মধ্যে ভালো মানুষও আছে। তারা তাদের নেতাদের ভালোবাসে নেতাদের দুনিয়া পূজার কারণে নয়, বরং নেতাদের দ্বীনী খেদমতের কারণে বা দ্বীনী খেদমতের ওয়াদার কারণে। সুতরাং এই নেতাদেরকে কাফের ফতোয়া দিয়ে আমরা কীভাবে ধারণা করতে পারি যে, তার দলের লোকেরা আমাদের কথা শুনবে? আর তাদেরকে কাফের ফতোয়া দেয়ার দ্বারা অন্য দ্বীনদার ও জনসাধারণকে মোটেও প্রভাবিত করা যায় না।
.
সুতরাং আপনি যদি চান যে, তাদের এই রোগের চিকিৎসা করবেন, তাদেরকে গণতন্ত্রের কুফুরি বোঝাবেন, তাদেরকে দাওয়াত দিয়ে নববী মানহাজে নিয়ে আসবেন, তাদেরকে এই খারাপ পথ থেকে ফিরাবেন, তাহলে সিরাতের অনুসরণ করুন। কাজের সমালোচনা করুন। কারো নাম উল্লেখ ব্যতীত, কাউকে কাফের ফতোয়া দেয়া ব্যতীত গণতন্ত্রের ভ্রান্ত হওয়ার দলিলাদি বর্ণনা করুন।
.
.
টিকা –
.
.
দাওয়াতের পদ্ধতি ও জিহাদি মানহাজের হেফাযত
উস্তাদ উসামা মাহমুদ হাফিজাহুল্লাহ

মন্তব্য করুন