Skip to content

ঝরা কাব্য — রমেন মজুমদার

কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১৪০০ সাল কবিতা অবলম্বনে,
———আমার কবিতা
————” ঝরা কাব্য ”
===========
রমেন মজুমদার।

আজি হ’তে কত কাল আগে ,
কাহারে জানালে প্রণাম
সিক্ত অনুরাগে !
— বলো কবি মোরে—তবে বলো,
আঁখির দুয়ার খানি
খুলে তবে চলো– সম্মুখ ভাগে ।

—-আজিকার কুসুম বনে,
ফুটিল মালতি সনে পুষ্প শতদল !
কে পরালো সিক্ত কলবরে,
কাহার আশীর্বাদ ভরে, তনু’তে সবল ?

আজি দিবা ভাগে,
…..তোমা অনুরাগে !
করেছিনু স্মরণ ত’বে বিস্ময় ভরে
কত শত পূর্ব ভাগে !

ভাবিনু স্বপনে একি ! রহস্যের চাক্ষুষ সাকি !
উঠিল অবগুণ্ঠন তবে–স্বপন সাজাগে ,
তব নব অবিচল—একি !
কি সেই আকুল চরণ প্রভাগে ?

অনাহুত খুলি দ্বার !—বাতাবি পড়িল ভার;
মোর জানালা ঘেষে !!—-
–কোন সুরে ,কবে —তুমি
এসেছিলে আমাদের তরে ,
প্রমত্ত সৈনিক বেসে ?

যায় শীত পরাভূত উত্তর দুয়ারে !
দখিনের খুলি দ্বার বসন্ত পবন
——–বহে ধীরে, ধীরে ।

বায়ু তার সুঘ্রাণ পরিপূর্ণ করে,
ক্লান্ত পথিক !–ছুটে চলে দুর্গম পথে
কিছু তার আলো লয়ে সাথে,
শিথিল বাহুতে ভর,–শক্তি সঞ্চারে ।

হে কবি ! আজি তুমি নাই ,
বেদনাহত প্রাণ বক্ষে ধরি ঠাঁই—
ছল ছল আঁখি খানি,
বেদনা বিরহ জানি ?
বেসুর বীণা খানি কেন নাহি বাজে ?
কি জানি কোথা গেলে
আজি তোমা পাই ?

উদাস পথিক হয়ে —
ধীরে আমি থাকি চেয়ে !
প্রভাতে যৌবন আলো, ধমনীতে ঘাম কালো,
রক্ত জল করি !
শিথিল নয়নে দেখি !
সেই সুর আজও একি !
——-মরমে মরমে ধ্বনি
কোথা হতে আসে ধেয়ে ?

কিসের ইঙ্গিত ধায় ?–রুদ্ধ বাতায়ন বায়,
গুমুড়ি কাঁদে প্রাণ উচাটন করি !

—-আজি নব পল্লব মর্মরে,
কাপে বুক থর থরে ; খসিল কবরী বন্ধন
তারা ঝরা ফুল-দলে উদাস প্রহরী ।

কে লয় কাড়িয়া মধু !– মুখ হতে তার ?
বিহঙ্গের চষ্ণুপুট হারায় বিহঙ্গিনীড়ে?
দুলাইয়া আপন শরীর !

কবি দেখে যাও !–তোমার স্বদেশভূমি
আজও আছে অটুট মেলিয়া আঁখি !
শ্যামলের গ্রাম খানি !
-আজও তারে চুমি!

সেই গ্রাম !সেই নববধূ ! শিমুলের গায় !!
আ’রক্তিম যৌবন তার
বিলাইয়া শস্য খেত করিতেছে ভার !

ধরণী রহিয়া রহিয়া কাঁদে !
দুলে তার করুন নিঃশ্বাস
সমীরণ ফাঁদে !!
তোমা হতে কত পূর্ব আগে,
জন্মেছে কোন মহা মনীষী
স্বপনের রাগে ?

হে মহান ! তুমি নাই –কে বলেছে ?
শয্যায় নিদ্রাতে যখন,
শুনে লই ফাগুনের
নিশীথ ভাষণ !!

কম্পিত প্রাণে শুনি তব মর্মবাণী
সকরুন গীতে—
আজি মোর চিত্ত খানি পরিপূর্ণ ভরে
তব অমর সংগীতে ।

দুরন্ত যৌবনে ছুটি, কবিতা বাসরে লুটি
সিক্ত করুন কণ্ঠে—-
সব নদী ভরে ,অকুল স্বপন উজারে—
তোমার চরণ তলে প্রণমি ভুলুন্ঠে !!

জাগিল ধরণী ধূলি !–ওগো মহাবীরবলী,
পূজার নৈবেদ্য সাজি—দু’হাত ভরে;
—-অমৃত বাসরে কাব্য
পাদপদ্মে পুষ্প নব্য
করিনু উজাড় আজি
ব্যাথিত বাসরে !!

কত গান কত ছন্দ ! কাব্যের অমৃত দ্বন্দ !!
অর্ধ নগ্ন রাতে শায়িত স্বপন —
অলোক আলুথালু ,শোভিত সিঁদুর কালো!
কে রেখেছে মাখিয়া তারে
রঞ্জিত চরণ ।।

শীতল দখিনা বায়ু, চারিদিকে ছন্দে আয়ু
মেলিতেছে দ্বার !—
তোমার রুদ্র রঞ্জিত রক্ত ধারা
পলে পলে দেয় সাড়া —
অনঙ্গ রঙে সাজে—যুদ্ধে সাজিবার ।।

কত নদ স্রোতে বহি ! যন্ত্রনা কাহারে কহি ?
কত দেশ অভিশপ্ত আজি !!—-
তাইতো তোমারে চাহি—
নীরবে গুঞ্জন গাহি ;
ক্ষুধাতুর ঘরে ফিরে
কিসে বীর সাজি ?

বুভুক্ষ সমাজ তরে,
আজও নিশি নির্ঘুম প্রহরে, কাটাইনু রাত !!
তব বাণী দাও শিরে!
প্রভাত নবীন ধীরে
ক্ষুধার্থ উদ্ধারে আজ লহুক বরাত ।।

লহ মোর প্রণাম তবে,
যুগে যুগে আসিও ভবে—
ঈশানী ঝড়ের গতি—পরি পূর্ণ করে !
লাঞ্চিত বঞ্চিত ক্ষুধার্থ পীড়িত জনে
করে দাও উদ্ধার আজি
কৃপা থালা ভরে,
হে নজরুল !.হে রবি তুমি কবি গুরু
আমাদের করে ।

লহ মোর প্রানের অসুখ !
রোগে ভরা সুখ-দুখ
অনল-জ্বলন জ্বালা কম্পিত প্রণাম
যুগে যুগে তুমি রবে,
অনন্ত স্বগৌরবে —
ঝরা মোর কাব্য মালায়
সুবর্ণ সুনাম ।।

রমেন মজুমদার
সমুদ্র সৈকত, দিঘা ।

মন্তব্য করুন