Skip to content

জন্মান্তর

.
তোর মনে নেই, কতটা প্রাচীন আমাদের সম্পর্ক!
তোর কোলে মাথা রেখে কাটিয়েছি শতাব্দী, আরো এক শতাব্দী।

মানবসভ্যতার সাথে ভালোবাসার পরিচয় আমাদের হাত ধরে।
সেই প্লাবনের কথা মনে আছে? পুরো পৃথিবী ডুবে একাকার।
পর্বতের চূড়ায় দুজনে হাত ধরে আছি, নৌকাটা চলে যাচ্ছে-
ধীরে ধীরে পর্বত ডুবিয়ে আমাদের পায়ে কুর্নিশ করছিলো স্রোত।

মনে আছে গিলগামেস এর কথা? সেদিনের উরুকে নৈশভোজ,
ইনানা-ইশতার’কে একদম’ই পানসে লাগছিলো তোর পাশে।
আর এনকিডু? সবাই জানে ইশতার হত্যা করেছিলো তাকে।
অন্য উপায় ছিলো না, ঐ অ্যাসিরীয় প্রাসাদ থেকে বের হবার।

যেবার আক্কাদিও রাজা সারগনের আমন্ত্রণে শিকারে গেলাম,
খুব ভয় পেয়েছিলি তুই -দলছুট হয়ে বেরিয়েছি সুমেরীয় পর্বতে।
তবে ব্যাবিলনে তুই যা করেছিস, সেটা তো এপিক হয়ে থাকবে।
কি যে বলেছিলি রানীকে, আস্ত জঙ্গল ঝুলিয়ে দিলো মরুতে।

কালিবঙানের সাথে লোথালের বিরোধে’ই তোর আমার প্রেম,
নইলে লোথালে যাওয়া হতো না। লোথাল পুরোহিতের মেয়ে-
ছোট্ট করে পড়া শাড়ি, নাকে নথ আর গলায় উল্কির মালা।
মনে পারে নি এখনো! আমি’ই সেই কালিবঙানের রাজপুত্র।

তুই আমি থেবেসের ছেড়ে মেমফিসে চলে আসি, মনে আছে?
নেফারতিতি কয়েক বছর রাজত্ব করে মারা যায়, রটিয়েছিলাম।
ওই সময় গুলো ভীষণ সুন্দর ছিলো -নীল নদে ছিলো স্নিগ্ধতা
স্বচ্ছতা। আর আমার ছেলেমানুষী চিৎকার -“নেফারতিতি”।

আর এথেন্স! সেই অপুর্ব যে নীল এজিয়ান সাগর -পোসাইডন,
অ্যাফ্রোদিতি’র কাছে তোর আকুতি। মনে আছে? পার্থেননের।
যুদ্ধ সবসময়। তোর অ্যাথেনার কাছে প্রার্থনা -যুদ্ধ বন্ধের জন্য।
পেলোপনেসিয়ার যুদ্ধ দশ বছর ধরে চলেছিলো -স্পার্টার সাথে।

অগাস্টাস সিজার কি কান্ড’টা করেছিলো মাসের দিনগুলো নিয়ে,
মনে নেই -জুলাই ৩১ দিনের বলে, অগাস্ট’ও ৩১ করে দিলো যে!
আচ্ছা, স্পার্টাকাস’কে মনে আছে? হার্ডিয়ানের সেই প্যান্থিয়ান?
ফ্লাবিয়ান অ্যাম্পিথিয়েটারে রথ থেকে পরে গেলাম, তোর কান্না।

তোর কি মনে নেই, কতটা প্রাচীন আমাদের সম্পর্ক!
ইউয়ান সম্রাজ্যে, ক্যারোলিঙ্গিয়ান কিংবা তিমুরিয়ান সম্রাজ্যে,
মৌর্য সম্রাজ্যে, পাল কিংবা চোলা সম্রাজ্যে, মোগলের শাষণে-
আমরা ছিলাম। ঘুরে বেরিয়েছি লাদাখ, এন্টিলোপ ক্যানিয়নে,
সালার দে ইয়ুনি, হা লং বে কিংবা নামিবিয় মরু সৈকত জুড়ে।
আর বলিস তোর মনে নেই! পুরনো কথা মনে থাকবে কি করে।

০৩ মে ২০২৩

মন্তব্য করুন