Skip to content

চারুলতা – আজিজুল হক

শ্রুতি নাটক ——-
চারুলতা
আজিজুল হক
২৪/৮/২৩

মারিয়ান – তুমি বল ,কি করব আমি? আমি যে তোমায় ছেড়ে কিছুতেই থাকতে পারব না। বেঁচে থেকেও মৃত পরজীবী উদ্ভিদের মতোই জীবন কাটবে আমার।

রেজওয়ান – কিভাবে বোঝাব তোমায় বল, তুমি আমার জীবনে কত টা প্রিয় । কিন্তু কিই বা করতে পারি আমি! দেশের উচ্চ শিক্ষিত একজন বেকার। আমার কোন ভবিষ্যত নেই। তোমার জীবন টা কে ইচ্ছে করে অথৈ সাগরে জেনে শুনে কেমন করে আমি ডুবাই! খুব অপরাধী মনে হয় নিজেকে ।তোমার তো কোন দোষ নেই।

মা – আমিই বা কি করব ,বল? মেয়ে যথেষ্ট সাবালক। আব্বু আম্মু আমার বিয়ে ঠিক করার পথে, তারা আর তোমার অপেক্ষায় থাকতে রাজি নয়। দুর্বিসহ মানসিক চাপ আমায় শেষ করে দিচ্ছে ,রেজওয়ান।

রেজ – একটা কথা বলব?

মা – বল

রেজ – সত্যি তো তোমার আব্বু আম্মু ঠিকই বলেছে, একজন চালচুলো হীন বেকার যুবকের হাতে কিভাবেই বা তারা তোমার জীবন টা তুলে দেয়? আমি ভালোবাসি তোমায়, আমিই বা কেমন করে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে তোমায় আহ্বান করি?
ভালোবাসা তো শুধু পাওয়ার নয় মারি, ভালোবাসা ভালো চাওয়ারও রূপ। তুমি বিয়ে করে নাও, আমার সমস্ত ভালোবাসা আজ তোমায় উৎসর্গ করলাম, আমায় ক্ষমা কর, শুধু একটা কথা দাও,

মারি – কি কথা? বল

রেজ – তোমার যদি প্রথম সন্তান মেয়ে হয়,তবে তার নাম রেখো চারুলতা।( বলেই হন হন করে উত্তরের অপেক্ষা না করেই ক্লান্ত অবসন্ন চেহারায় বিদায় নিল রেজওয়ান)

(বেশ কয়েক বছর পর)

ফোনের ও প্রান্তে..
মহিলা – হ্যালো, জোম্যাটো??

পুং – বলছি ,

মহিলা – একটা মর্টন বিরিয়ানি হবে?

পুং – ঠিকানা বলুন

মহিলা – বি,এস রোড , মদনমোহন বাড়ি,

পুং – ওক্কে

( কেটে গেল ফোন টা)

পুং – হারু দা ,খুব দ্রুত একটা মর্টন বিরিয়ানি ,দেরি কর না।

(কিছুক্ষণ পর,

দরজায় কলিং বেলের শব্দ , দরজা খুললেন বছর তিরিশের এক ভদ্র মহিলা)

পুং – ২৯০ টাকা ,প্যাকেট টা এগিয়ে দিলেন)
মহিলা – তুমি ? (থমকে গেলেন তিনি)

পুং – কেন, তুমি কি আমার কাছে নেবে না অর্ডার টা?

মহিলা – একি করছ রেজওয়ান? তুমি কিনা শেষে ডেলিভারি বয়!

রেজ – বিধির পরিহাস । তবুওতো দুটো খেতে পাচ্ছি। আমাদের দেশে চাকরি কোথায়? হন্যে হয়ে ঘুরেও ভাল রেজাল্ট থাকা সত্ত্বেও ,শুধু মাত্র দাদা কাকা কিংবা ক্যাশ না থাকার জন্য অনেক হওয়া চাকরি থেকে বঞ্চিত হয়েছি।বয়স বাড়ছে, একটা কিছু করতে হবে, শেষে তাই…. ও ক্কে, এবারে আসছি। ভাল থেকো।

মা – দাড়াও রেজু, একটু ঘরে বস ,প্লিজ এভাবে যেওনা

রেজ , আজ নয় , অন্য দিন…
( বলেই বাইক স্টার্ট দিয়ে বেরিয়ে পড়ে, নির্বাক হয়ে চেয়ে রইলো মারিয়ান)

( হঠাৎ আবার একদিন ফোন মারিয়ানের)
মা – রেজু, প্লিজ একদিন আস, আমি ও কে বলেছি তোমার কথা, বল কবে আসবে? একটা দিন আস।

রেজু – কেন নিজের সুখের সংসারে আগুন জ্বালাতে চাইছ?

মা – কিসের আগুনের কথা বলছ রেজু? আগুনেই তো জ্বলছি রোজ। আজ আমার জন্য তোমার এই অবস্থা,না করলে সংসার,না দিলে আমায় মুক্তি ।

রেজ – পাগলি, সংসার তো করছি। পুরো জগৎ টাই তো এখন আমার সংসার। যখন যে ভাবে ডাকে ,আমি ছুটে যাই।অবশ্য কিছু পয়সাও জোটে তাতে। কি করব? একটা পেট জোগাড় করতে হিমশিম খেয়ে যাই, আর একজনকে সামলাবো কেমনে? আর সে মন টাও তো নেই। কয়েকবছর আগে তার জানাজা হয়েছে।

মা – ছি ,এভাবে বল না। আমি আমাদের সব কথাই বলেছি রাশেদ কে। ও খুব ভালো মানুষ, ও কে ঠকাতে মন চায়নি আমার। তাই তুমি সেদিন যখন আমায় শেষ কথা বলার সুযোগ না দিয়ে চলে এলে, তখন কি করব, বুঝতে না পেরে রাশেদ কে বিয়ের আগে সব খুলে বলি। ও খুব উদার মনের মানুষ। ভীষণ ভালোবাসে আমায়। তোমার এই সেদিনের কথাও আমি বলেছি ও কে।

রেজ – এসব কি বলছ মারিয়ান? এসব কথা বলা যায় নাকি ? ছি ,ভদ্রলোক কি ভাববে বল তো? কেন, নিজের অশান্তি ডেকে আনছ?

মা – ভয় নেই রেজু তোমার। নিশ্চয়ই তোমার ঘাড়ে গিয়ে চাপবো না।কিন্তু আমি চাই তুমি ভাল থাকো, আমি যে আজও তোমায় ভালবাসি, সে কথা কেমন করে অস্বীকার করি! আর তোমার চারুলতা? রোজ আমায় জিজ্ঞেস চারুলতার কথা, জানতে চায় চারুলতার গল্প । আসবে না রেজু ? দেখবে না তোমার চারুলতা কে? প্লিজ

রেজ – ( গলা ধরে আসে তার)
মারিয়ান , একি করেছ? আমি হতবাক হয়ে যাচ্ছি, এমন ভাবে ভালোবাসাকে মনে পুষে রাখতে নেই।

মা – কেন, তুমিও পুষে রেখেছো আমায় এখনও তোমার মনে। সেদিন তোমার চোখে মুখে সে ছাপ আমায় উদভ্রান্ত করেছে । তুমি নিজেকে নিঃশেষে শেষ করেছ। প্লিজ ,রেজু, ফিরে আস আবার স্বাভাবিক জীবনে। তোমার চারুলতা যে তোমার স্পর্শ চায়…

রেজ – মারিয়ান ..

মা – রেজু ,প্লিজ ….
( ফোন টা কেটে যায়)
© আজিজুল হক

মন্তব্য করুন