Skip to content

কাক ও কবির গল্প – শুভদীপ চক্রবর্তী

কা কা কা কা কা কা…..
অবিরাম কর্কশ ডাকে ঘুম ভাঙে যুবকের। তার চোখে একরাশ বিরক্তি!

-‘আমায় নিয়ে একটা কবিতা লিখবে? ‘
প্রশ্নটা শুনেই চমকে ওঠে সে। কে কথা বলছে? ঘরে সে ছাড়া তো আর কেউ নেই। ঠিক তখুনি তার চোখ পড়ে যায় জানালায়। ওখানে বসে আছে একটা কাক।ঐ কাকটা তাকে একথা জিজ্ঞেস করছে! বিষ্ময়ের ঘোর কাটার আগেই কাকটা আবার জিজ্ঞেস করে, ‘ বলোনা, আমায় নিয়ে একটা কবিতা লিখবে? তোমরা কবিরা বিভিন্ন পাখি যেমন বুলবুলি, দোয়েল, ময়না, টিয়ে নিয়ে কত্ত সব কবিতা লেখো অথচ আমাকে নিয়ে একটাও কবিতা কেউ লেখেনা। লিখবে আমাকে নিয়ে একটা কবিতা? ‘
যুবকটি উঠতি কবি । কিছুদিন হলো কবিতা লিখে তার বেশ নামডাক হয়েছে ।

কাকের কাকুতি শুনে তার মনে দয়া হয়। সে কথা দেয়…. অবশ্যই কবিতা লিখবে।

কাক খুশিতে ‘ কা কা ‘ শব্দ করে উড়ে যায় আকাশে। আজকে তার মনে সীমাহীন আনন্দ! কবি কথা দিয়েছেন তাকে নিয়ে এবার কবিতা লিখবেন। কাককে নিয়ে প্রথম কোন কবি কাব্য রচনা করবেন।

এরপর অনেক দিন কেটে গেছে। গ্রীষ্মের পর বর্ষা, বর্ষার পর শরৎ এভাবে কত ঋতু এসেছে আর চলে গেছে। কাক আশায় আশায় বসে আছে একদিন তাকে নিয়ে কাব্য লেখা হবে। কবি তাকে নিয়ে কোন কবিতা লিখছেন কিনা জানার জন্য দিনের পর দিন সে কবির বাড়ির জানালায় উঁকি মেরে দেখেছে।

সময় যত এগিয়েছে কবির সুনাম একটু একটু করে ততই ছড়িয়ে পড়েছে। বিভিন্ন কবি সম্মেলনে তিনি আমন্ত্রণ পাচ্ছেন। সেখানে তিনি নিজের লেখা কবিতা পাঠ করে শ্রোতাদের মুগ্ধ করছেন। প্রতি সম্মেলনে অভাগা কাকও উড়ে চলে আসে কবিতা শোনার জন্য। আহা কি অসাধারণ সব কবিতা! কি মনমোহিনী ভাষা! কবির কবিতা শুনে শ্রোতারা যখন হাততালিতে ফেটে পড়ে, তখন কাকের মনে কেমন যেন দুঃখ হয়। কবি এতগুলো কবিতা পাঠ করলেন, কই তাকে নিয়ে তো একটা কবিতাও তিনি লিখলেন না। তবু আশা ছাড়ে না কাক। কবি যে তাকে কথা দিয়েছেন। একদিন নিশ্চয়ই তাকে নিয়ে তিনি কবিতা লিখবেন।

স্রোতস্বিনী সময় বয়ে চলে। কবি এখন খুব বিখ্যাত হয়ে গেছেন। চারদিকে তার নামের জয়গান। সমাজের বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবিদের মধ্যে আজ তিনি এক অন্যতম উজ্জ্বল ব্যক্তি! অনেক পুরষ্কারে ভূষিত হচ্ছেন। তবে কাক আজও আশা ছাড়েনি। একদিন সে কবির বাড়ির জানালায় এসে বসে। কবি মনোযোগ সহকারে কবিতা লিখছিলেন। ‘ কা কা ‘ শব্দে ডেকে ওঠে কাক। ডেকেই মনে মনে কুন্ঠিত হয় সে। সে জানে তার গলা কর্কশ। তার যে কিছুই করার নেই। এ গলা যে প্রকৃতি প্রদত্ত!
কাকের কর্কশ আওয়াজে সেদিনের মতোই আজও খুব বিরক্ত হন কবি।

-‘ কি চাই? ‘ একরাশ ঘৃণা কবির গলায়।

সেদিনের সেই তরুণ কবি আর আজকের কবির মধ্যে আকাশপাতাল তফাৎ।

কাক সসঙ্কোচে বলে, ‘ তুমি আমাকে নিয়ে একটা কবিতা লিখবে বলে কথা দিয়েছিলে। সে কথা মনে আছে কবি?’

-‘ মনে আছে কাক। আমার সময় হলেই তোমায় নিয়ে কবিতা লিখবো। আমি যে এখন খুব ব্যস্ত।’ কবি উদাসীন ভাবে বলেন।

-‘ আর কবে লিখবে কবি? আমি মরে গেলে তারপর? এত বছর আমি অপেক্ষা করে থাকলাম। একটা কবিতার জন্য আর কত অপেক্ষা করতে হবে? তুমি কি তাহলে লিখবে না? তবে কেন আমায় কথা দিয়েছিলে? ‘ কাকের গলায় তীব্র ক্ষোভ!

এই কথাগুলি শুনে কবি মেজাজ হারালেন। হাতের কলমটা অকস্মাৎ কাকের দিকে ছুঁড়ে মারলেন। বিপদ বুঝে কাক ডানা ঝাপটিয়ে উড়ে যায় আকাশে।

উড়তে উড়তে হতভাগ্য কাক মনে মনে বললো, ‘ উফ্ কি বজ্জাত লোকটা! আর একটু হলেই আমার প্রাণটা চলে যেত!’
……….

মন্তব্য করুন