Skip to content

এক দুর্মতি সুখ – রমেন মজুমদার

এক দুর্মতি সুখ
–(ছোটগল্প)
কলমে-রমেন মজুমদার
তারিখ-২৮/০৮/২৩
—-
“যে মতি দুর্জনে চাহি কটাক্ষ নির্বেশে
চাহিয়া দেখে না বদন যায় চলে শেষে।
অলক আলুথালু বাড়ন্তের বয়সে;
ভোগের নিমিত্তে সবাই ঘাপটি মারে শেষে।”

এক বেনামি জীবনের করুণ গাঁথা নিয়েই আজকের গল্পের শুরু।
কবি ভাবনার অনুকূলে এক দৃশ্যায়ন পট
শুধু চেয়ে চেয়ে দেখার জন্য নয়।
তার মননে একটি ক্ষণস্থায়ী হেঁচকির সম্মুখীন হতে পারে ভাবনাগুলো,সেটা বোধ হয় দুর্বৃত্তের নিশানায় ঠাহর হয় না।
একদা ট্রেন যাত্রার পথে কবি ছুটছে বনগাঁ লোকাল ধরে বর্ডারের উদ্দ্যেশ্যে হরিদাসপুর ।
লোকাল ট্রেন এমনিতেই ডিক ডিক করে চলছে। সংহতি স্টেশন পার হয়ে এগুতেই লাইনের উপর দাঁড়িয়ে গেল ট্রেনটি। প্রায় আধাঘন্টা লেট। **
লাইনের দুধারেই ছোট ছোট বস্তির ঘুপরি ঘর। কোনটায় ছেঁড়া কাপড়দিয়ে ঘেরা।কোনটায় ছেঁড়া পলিথিন দিয়ে স্নান ও প্রাতঃক্রিয়া সম্পাদনের জায়গা গুলো ঘেরা।
ট্রেন থেকে পাশেই তার সবকিছু নিরীক্ষণ করা দর্শকের চোখ আটকে যায় বস্তির জীবন ধারার উপর।
এক পর্যায়ে পাশেই বস্তি ঘরের পাশে জীর্ণ কাপড় টাঙানো তিনফুট বাই চারফুট জায়গার উপরে ভাঙাচুড়া ইটবিছানো স্নানের স্থান। তার অপাশেই সাঁটানো জঙ্গল। একটি ছোট্ট ডুমুরগাছ থোকা থোকা ডুমুর ধরে আছে।
এ পাশে এক বয়স্ক মহিলা উনুনে ডালপালা দিয়ে মাটির হাঁড়ির ভাত নামিয়ে একটি কালো কড়াইতে ডুমুরের তরকারি রান্না করছে। মাঝে মাঝে উনুনে ফুঁ দিয়ে দিয়ে আগুনের তেজঃ বাড়িয়ে দেবার চেষ্টা করছে। উনুনের থেকে কালো ধোঁয়া বোগলা দিয়ে ট্রেনের কামরার গায়ে এসে মিশে যাচ্ছে। যাত্রীরা সেই ধোঁয়ার মধ্যে উৎসুক চোখ ফুঁড়ে দিয়ে পাশের মেয়েটির স্নানের দৃশ্য লক্ষ্য করছে।
কবির চোখদুটো সেই ধোঁয়ার ফাঁক গলে চোখ গেল মেয়েটির উপর।
তার পড়নে একটি কালো রঙের ছায়া।পিছনের অংশ আংশিক ছেঁড়া। সেই ছেঁড়া অংশ দিয়ে তার নিতম্বের প্রতি দুর্বল চোখগুলো নিক্ষেপ করল।
শরীরে একটি ময়লা পুরাতন গামছা দিয়ে ঘেরা। দুই বালতি জল রাখা চাতালের ভিতরে। ছোট্ট একটি রঙের কৌটা দিয়ে বালতি হতে মাথায় জল ঢালছে।

এবার নব্যদৃশ্য যেন আকাশের চাঁদ দেখার মতোই উৎসুক চোখগুলো ঠিকরে পড়ছে তার নিতম্ব ও খোলা স্তনের উপর।
কবি সেও একজন রক্তমাংসের মানুষ। উত্তেজনা অনুভব কাউকে ক্ষমা করেনা।
এ যে ঈশ্বরের দান!
তা হলে ঈশ্বরকে বিশ্বাস করা যায়। তাঁর সৃষ্টির মহিমা কি অপূর্ব !
কবি ভাবল,
স্বাত্ত্বিক সত্যায়নে জাগ্রত বোধ মানুষের থেকে শুরু করে সামান্য পোকামাকড় পর্যন্ত এক ঈশ্বরের প্রাণবন্ত লীলাখেলা।
সবাই যেন যাত্রাবিরতির মধ্যে কিছুটা হালকা টিফিন করে নিল জৈবিক ক্ষুধাকে!!
তবুও চোখের তারায় মেয়েটির নগ্নস্তনের
মহাযাগ্নিক চৈতন্যের ধুম্রযজ্ঞে নিজেদেরকে সমাহিত করতে লাগলাম।
কবি ভাবল,
এ যে ঈশ্বরের এক নতুন সৃষ্টি। আবৃত অবস্থায় যা দেখা যায় না,তার নিশানা দেখা যায়। কিন্তু তাতে স্খলিত সুখের সমাপন ঘটনা ঘটে না ,কাঙ্খিত ভাবনারাই কেবল অদৃষ্পটে যজ্ঞাহুতি হয়ে লোক চক্ষুর আড়ালে নিহিত থাকে।
কিন্তু এ যে দৃশ্যপট!
আপনার সুখ আপনে মরে চোখের আগুনে। ঈশ্বর সৃষ্টির সেই রূপ অবলোকন কল্পে নিজের শৈল্পিক ভাবনার কলমে আজ চিত্রায়িত করতে চাইছে কবি।
এ যে কবির সুখ নয়।
এ যে ঈশ্বরেরই অন্য আর এক রূপের জগৎ জনসমক্ষে দেউলিয়া করে তুলছে।
কিন্তু,
নারীর যৌবননামৃতরসে স্নিগ্ধতা জুড়িয়ে দিতে ওই উন্মুক্ত স্তনই বা কতটুকু দায়ী?
তাঁর আরও রূপ নানান স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। একটি পুতুলকে মাটি দিয়ে সাজালেই তাঁর রূপ নির্গত হয় না। তাকে রঙ দিয়ে রাঙিয়ে তুলে তারপর বসন পড়াতে হয়। তবেই সে রূপের যথার্থতা কবির মননে খুঁজতে গিয়ে বস্তিজীবনের এক অসভ্য দৃশ্যের অবতারণা করে চিত্রটি চিত্রায়ণ করা হল।
নিরন্ন জীবনের কত যন্ত্রণা এই মুক্তস্তনের সাদৃশ্য বর্ণনায় তৃষ্ণা মিটে না।
সংসারে তার আরও অনেক কিছুর দরকার আছে। একমুষ্টি ভাত,পড়নের কাপড়,সামাজিক ন্যায্য অধিকার,ধিক্কার মুক্ত মানুষের সহানুভূতি,না ছোঁয়া প্রেম,মানুষের ভালোবাসার মধ্যেই জীবনের মৌলিক অধিকারের প্রশ্ন আগে দরকার।
এক ফুৎকারে চোখের জলকে না দেখে ক্ষণিক দুষ্টের ভাবনায় মনমথিত সুখ অনুভব করার অর্থই অনর্থ।
জীবনকে চিনতে জানতে হলে নিজেকে আগে শুধরে নিয়ে তবেই নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার মধ্যেই বাস্তব সুখ পাওয়া যায়।
—-
এতক্ষণে সে বুঝতে পারল যে পৌরুষ চোখগুলো তার মুক্তস্তনের রূপরস নিঙরে নিচ্ছে পৌরুষকুলের ক্ষুধায় !!
এও বুঝতে পারল যে, হায়রে জীবন!
প্রতিটি মানুষ যদি আজ বুঝতে পারত এই কষ্টের মানুষের ভাবনাগুলোকে,তবে সমাজে বিদ্যমান সুখ অনুভব ঈশ্বর সৃষ্টিতেই প্রতিষ্ঠা পেত।
লজ্জায় মুখ নতকরে দুই বাহুদ্বয় দ্বারা নিজের খোলা স্তনের নিটোল নিপলকে চেঁপে রাখলেন। যাতে লজ্জার খৎনা আপাততঃ কিছু সময়ের জন্য হলেও আপনার নিজস্ব অবয়বকে ঢেকে রাখার ইচ্ছায় নিজেকে রক্ষা করা প্রতিটি নারীর জন্যই এক পরমধর্ম।
সিগন্যাল কাটিয়ে ট্রেন হুইচেল দিয়ে ছুটল তার নিজস্ব গন্তব্যে।
—-
শব্দবন্ধন -৬৪৩
শিখামন্দির,হরিদেবপুর।

মন্তব্য করুন