Skip to content

উনুনে পোড়া সম্মান – প্রকৃতি প্রভা

উনুনে পোড়া সম্মান (অণুগল্প)

মা হটাৎ করেই বাড়িতে এসেছে না জানিয়ে। এসে আমাকে এভাবে দেখে হতবাক। আমি কখনো রান্নার র জানতাম না। সবসময় আধুনিক পোশাক পরতেই ভালোবাসতাম। সারাদিন ঘুরে বেড়াতাম দস্যি মেয়ের মতো।
রুপম অবশ্য আমাকে এই নিয়ে কখনো কোন কথা শোনাতো না। বরং বলতো, আমি জানি তুমি কোন অন্যায় করবে না।
এই দেখুন, পরিচয় দিতেই ভুলে গেছি।রুপম আমার স্বামী।একজন আত্মমর্যাদাশীল মানুষ। আমাদের দুই বছর হলো বিয়ে হয়েছে। পারিবারিক ভাবেই হয়েছে কিন্তু ও আমার বাবার থেকে কোন উপঢৌকন পর্যন্ত নেয়নি। বাবা কিছু দিতে চাইলে বলতো, “আপনি আপনার ঘরের মুল্যবান সম্পদ আমাকে দিয়েছেন। আমার জন্য দোয়া করবেন, আমি যেনো আপনার বিশ্বাসের মর্যাদা রাখতে পারি।”
সেদিনই বুঝেছিলাম, এমন মানুষকে আজীবন সম্মান করা যায়।
ইশ! চুলোর উপরে তরকারি বসানো আছে। সম্ভবত পুড়ে গেছে। এসে বলছি পুরো গল্পটা।

রুপম একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে জব করতো। আমাদের দিন ভালোই কাটছিলো। রান্না তেমন পারতাম না তবে সমস্যা হয়নি কখনো। রুপম নিজেই আমাকে সাহায্য করতো অথবা তরকারিতে লবন বেশি হলে অমৃত বলে চালিয়ে দিতো। আমি নিজে না মুখে দেওয়া পর্যন্ত বুঝতেই পারতাম না।
এভাবেই যাচ্ছিল দিন।কিন্তু হটাৎ…..
একদিন রুপম কার এক্সিডেন্ট করে। তারপর চাকরিটা রক্ষা করা সম্ভব হয়নি।রুপম এখন পঙ্গু একজন মানুষ।
আমার উপর পুরো সংসারের দায়িত্ব। একটা চাকরিও খুঁজে নিতে হয়েছে। এখন ঘরে – বাইরে সবটাই আমাকে সামলাতে হয়।
আমি চাইলেই বাবার সাহায্য নিতে পারতাম কিন্তু নেইনি। এতে আমার রুপমের অসম্মান হবে; রুপম তো বাবাকে কথা দিয়েছিলো।
আমি নিজেই রান্না করি এখন উনুনে; উনুনের তাপে। একটু কপালে, নাকে,গালে কালি লেগে যায় ঠিকই কিন্তু কষ্ট হয়না আমার।
হাতে তেল পড়ে পুড়ে গেছে। রুপম রেগে গিয়ে মলম লাগিয়ে দিতে দিতে বলছে, “তুমি কেনো এতো কষ্ট করছো? বাবার বাড়ি গেলেই তো পারো।”
হেঁসে বললাম,”আমার কাছে তোমার অসম্মানের থেকে আমার উনুনে পোড়া সম্মান অনেক বেশি সহনীয়।”

মন্তব্য করুন