Skip to content

উদ্দীপ্ত চেতনা – মোঃ ইব্রাহিম হোসেন রাজশাহী

উদ্দীপ্ত চেতনা
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন – রাজশাহী
Uddipto Chetana
Md Ibrahim Hossen – Rajshahi.
মোবাইলঃ ০১৯৪১৯৩৮৪৯৪.

উৎসর্গঃ
উদরে গর্ভধারিণী প্রাণের সহধর্মিণী
জন্মদাতা পিতা কন্যা ও তনয়,
আপামর সনে মানুষের কল্যাণে
বিশ্বমানবতার প্রণয়।

অভিমতঃ কবিতার বই ‘উদ্দীপ্ত চেতনা’ ও আমার কথা…

কীর্তিনাশা পদ্মা আর মহানন্দা বিধৌত বরেন্দ্র জনপদে কবি ও ঔপন্যাসিক মোঃ ইব্রাহিম হোসেন  অন্য দশজনের মতোই বেড়ে উঠেছেন। অল্প বয়সে বাবা হারিয়ে ‘মাটি ও সময়’-এর সাথে লড়েছেন। দেখেছেন জীবনের ঘাত প্রতিঘাত। প্রত্যক্ষ করেছেন বৈচিত্র্যময় মানুষের আচার-আচরণ। নদীর ঢেউ থেকে ছন্দ, অসীম আকাশ থেকে বিশালতা, মুক্ত বাতাস থেকে স্বাধীনতা, সবুজ প্রকৃতি থেকে ‘তারুণ্যে উজ্জীবিত প্রাণ শক্তি’ নিয়ে লেখেছেন বহু কবিতা। সেই সব কবিতা থেকে বাছাই করে দিন বদলের আহবানে, প্রেমের উচ্ছ্বাস ও বিরহে এবং দেশ গড়ার প্রত্যয়ে সাজিয়েছেন চতুর্থ একক কবিতার বই ‘উদ্দীপ্ত চেতনা’।

কবি মোঃ ইব্রাহিম হোসেন খুঁজে বেড়িয়েছেন শেকড়। আত্মস্থ করেছেন, ‘টেকসই নয় শেকড়হীন বন্ধন , স্বার্থের টানে যায় ছিঁড়ে যখন-তখন’। তাই কলমে ছন্দবদ্ধ আঙ্গিকে লেখেন, ‘হারিয়েছে পাখি তার আবাসের নীড় / ঠিকানাটা নাই হায়, নাই কুল তীর!’ ( কবিতা: উদ্দীপ্ত চেতনা)। 
ধ্যানমগ্ন হয়ে স্রষ্টার বিধান জপেছেন পবিত্র মনে, প্রতি ক্ষণে ক্ষণে। তাই তাঁর রবের প্রতি উচ্চারণ অত্যন্ত স্পষ্ট। দৃঢ়চিত্তে লেখেন ‘রবের খেলা নয় তো হেলা প্রহর কেটে যায়, / বাবা আদম ফেলে কদম একলা পথে ধায়।’ ( কবিতা:  সৃষ্টির প্রথম লগন)

কবি প্রথাগত ব্যাকরণের বাইরে গিয়ে নিজস্ব ভাষা ও ছন্দের সংমিশ্রণে কবিতার নতুন সূত্র সন্ধান করেছেন। ভাঙা গড়ার ভেতর দিয়ে অনুসন্ধানি মন কবিতার সৌরভে পাঠকের মুগ্ধতা কামনা করেছেন। সফল হবেন কি হবেন না, তা কালই নির্ধারণ করবে। ঋদ্ধ কবি তাই উচ্চকিত কণ্ঠে বলেন, ‘চাও যদি পেতে সবে / পরকালে শান্তি, / পৃথিবীর মোহ ভুলো  /  দূর হবে ক্লান্তি’। ( কবিতা: বিদায়ের ঘন্টা)

ছোট ছোট বাক্য, সহজবোধ্য শব্দ চয়নে গ্রাম-বাংলার গন্ধ মাখা ভাবনার স্ফুরণ আছে, প্রেমের শাশ্বত উচ্চারণ আছে— ‘সুখের পরেও সুখ যে তুমি / দুখ বেদনার যন্ত্রণা, / ঝড়-তুফানে ঢেউয়ের মাঝেও / তুমিই কেবল মন্ত্রণা’। ( কবিতা : কাব্য তুমি সান্ত্বনা)

পাশাপাশি নীতি ও আদর্শের কথাও আছে, আছে নৈতিকতার বাণী— ‘পাপের বোঝা হচ্ছে ভারি / যাচ্ছে টুটে পুণ্য, / ষোলোআনা এই জীবনের / বারো আনাই শূন্য।’ ( কবিতা: জীবন বড়ই কঠিন) কিংবা কবি যখন গভীর আত্মবিশ্বাসে লেখেন, ‘মূর্খ লোকে জগৎ ভরা মূল্য কি তার হয়? / সৎ জ্ঞানী এক সর্বসেরা ভুবন করে জয়। / ডিগ্রিধারী শিক্ষিত লোক লক্ষ কোটি হয়, / কোরআনের ওই একটা হাফেজ তাঁর সমমান নয়’। ( কবিতা: অল্প হলেও দামি)

কবি ও ঔপন্যাসিক মোঃ ইব্রাহিম হোসেন যাপিত জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপ থেকে অনুভবের ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করেছেন। যা দেখেছেন, উপলব্ধি করেছেন, সাধনা করেছেন তাই তিনি সহজ উচ্চারণে পাঠকের কাছে পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা প্রতিনিয়ত করে যাচ্ছেন। পাঠকও তাঁকে সহাস্যে গ্রহণ করেছে। এখানেই একজন কবি ও একজন লেখকের সার্থকতা।

প্রচ্ছদ নান্দনিক ও প্রকাশনার কাজও মানসম্মত। তাঁর কবিতার রঙ, রস, ছন্দ ও ভাবনার প্রাজ্ঞতা দেখে আমার মনে এই ধারণা চূড়ান্ত যে কবি ও ঔপন্যাসিক মোঃ ইব্রাহিম হোসেন-এর চতুর্থ একক কবিতার বই ‘উদ্দীপ্ত চেতনা’ সাফল্যের আলোয় উদ্ভাসিত হবে। পাঠকের প্রত্যাশা পূরণ করে কবিতার মিছিল নিয়ে লক্ষ্য পূরণে আগুয়ান হবে। কবি ও কবিতার স্থায়িত্ব কামনা করি। সবার জন্য শুভ কামনা।

শুভেচ্ছান্তে—
এবি এম সোহেল রশিদ
—————————————–
কবি, কথাসাহিত্যিক ও অভিনেতা।

লেখকের কিছু কথাঃ

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।
আস্সলামু আলাইকুম।
আলহামদুলিল্লাহ। সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ তায়া’লার জন্য। যিনি আমাকে ৩২টি যৌথ কাব্যগ্রন্থে অংশগ্রহণ করে এবং ১৮টি যৌথ কাব্যগ্রন্থ  সম্পদানা করে  ‘উদ্দীপ্ত চেতনা’ চতুর্থ  একক কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশ করার তৌফিক দান করেছেন।
এর পর জানাই প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর প্রতি লাখো কোটি দুরুদ ও সালাম। তার পরপরেই জন্মদাতা পিতা-মাতার পদতলে করি শ্রদ্ধা নিবেদন। যাঁদের ভালোবাসা, স্নেহ মমতার বাহুডোরে লালিত পালিত হয়ে আজ আমি এত বড় হয়েছি। মহান আল্লাহ তায়া’লা যেন তাঁদেরকে জান্নাতুল ফেরদাউস নসিব করেন – আমিন।
তারপর জানাই আমার প্রাণ প্রিয় সহধর্মিণী মোসাঃ নূরমহল বেগমের প্রতি অফুরান  হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা,যার অনুপ্রেরণায় এতদূর আসা!

১৯৯৭-৯৮ সাল সপ্তম শ্রেণী থেকেই আমার লেখালেখির হাতে খড়ি পড়ে। কত লেখা নষ্ট হয়েছে অকালে, কত লেখা নষ্ট হয়েছে হারানো খাতার পাতায়। কত লেখা নষ্ট হয়েছে অবহেলা গঞ্জনায়। এই লেখার জন্য কত মানুষ করেছে হিংসা, উপহাস, ঠাট্টা, বিদ্রুপ । তবুও মহান আল্লাহ’র  অশেষ রহমতে হিংসুকদের  হিংসা, উপহাস আমার লেখালেখি দমাতে পারেনি। তাদের এ সব উপেক্ষা করে চলেছে অনির্বাণ কলমের গতি এবং এ পর্যন্ত আড়াই হাজার এরও অধিক (২৫০০+) কাব্য  রচনার মাইল ফলক স্পর্শ করতে সক্ষম হই । আলহামদুলিল্লাহ।

প্রত্যেক লেখক লেখিকা-ই চায় তাঁর নির্ভুল লেখা দিয়ে সুন্দর সুরুচিসম্মত একটি কাব্যগ্রন্থ উপহার দিতে। আমিও কায়িক পরিশ্রমের বিনিময়ে ছন্দবদ্ধ সুন্দর সুনিপুণ সৌন্দর্যমণ্ডিত শব্দশৈলীর দ্বারা নির্ভুলভাবে, নির্ভুল একটি একক কাব্যগ্রন্থ ‘উদ্দীপ্ত চেতনা’ চতুর্থ একক কাব্যগ্রন্থ লেখার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি মাত্র।
‘উদ্দীপ্ত চেতনা’ কাব্য গ্রন্থটি সম্পূর্ণ সামাজিক আঙ্গিকে , ধর্মীয়, বিদ্রোহী ও  প্রকৃতির সজীবতায় রোমান্টিক ছন্দবদ্ধভাবে  সুর ও ছন্দের ঝঙ্কারের সমাহারে, শিক্ষণীয় বিষয় নিয়ে অত্যন্ত নিপুণভাবে সাজানো হয়েছে। আশা করি গ্রন্থটি সকলের হৃদয়ে নাড়া দেবে, সরল সঠিক পথ নির্দেশনার ভূমিকা পালন করবে এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার,  ন্যায়-নীতি ও সদাচারণের দিকে ধাবিত করতে সহায়তা করবে বলে আমি আশাবাদী।
প্রত্যেকেরই এমন একটি বই পড়ে অনুধাবন করা উচিৎ। বই হলো জ্ঞানের ভাণ্ডার। মানুষ বেইমানি করতে কিন্তু বই ও বইয়ের সঠিক অনুধাবনের জ্ঞান কখনো কারো সাথে বেইমানি করতে পারে না। সকলের মাঝে এমন একটি সুন্দর কাব্যগ্রন্থ উপহার দিতে পেরে সত্যি আমি অত্যন্ত আনন্দিত, আপ্লুত ও অভিভূত!

পরিশেষে একটি কথা না বললেই নয় ।
মানুষ মাত্রই ভুল হয়। ভুল হওয়াটা স্বাভাবিক, অস্বাভাবিক এর কিছুই নয়। কেউ ভুলের ঊর্ধ্বে নয়। বইটিতে যদি কোনো প্রকার ভুলভ্রান্তি হয়ে থাকে। আমি সকলের কাছে ক্ষমা ও দোয়াপ্রার্থী।
সকল পাঠক পাঠিকার প্রতি হইলো আমার নিরন্তর ভালোবাসা প্রীতি শুভেচ্ছা ও শুভকামনা।

মোঃ ইব্রাহিম হোসেন 
কাদিপুর, ভাটোপাড়া, গোদাগাড়ী, রাজশাহী
প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালকঃ
রাজশাহী সাহিত্য সংস্কৃতি পরিষদ
মোবাইলঃ 01941-93-84-94.

কবি পরিচিতিঃ
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন যদিও এন আইডি কার্ডে বর্ধিত তথাপি শিক্ষা সনদ অনুযায়ী ১৭-১১-১৯৮৫ সালে রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার ৬ নং মাটিকাটা ইউনিয়ন পরিষদের নিকটবর্তী এলাকা হরিশংকরপুর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে বাবা মরহুম জয়নাল আবেদীন সরকার ইবনে রফাতুল্লাহ সরকার এবং মাতা মোসাঃ মাবিয়া বেগম এর ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমানে স্থায়ী বসবাস গোদাগাড়ী থানার কাদিপুর গ্রামে। তাঁর বাবা একজন সৎ সাহসী পরহেজগার ব্যক্তি ছিলেন।  কিন্তু  তিনি খুব ছোট বেলাতেই তাঁর বাবাকে হারিয়ে ফেলেন। ফলে সংসারে দুঃখ নেমে আসে এবং অতি কষ্টে অভাব অনটনের মধ্য দিয়ে তিলে তিলে হাতে খড়ি পড়ে। আরও অনেক করুণ কাহিনি নিহিত রয়েছে সবার অগোচরে অন্তরালে!

তিনি সততার সহিত খুব সহজ সরলভাবে জীবন-যাপন করেন। তিনি ১৯৯৯ সালের ৬ ই আগস্ট রোজ শুক্রবার রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার গোগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের কলোনী পাড়া গ্রামে মোঃ আব্দুল অকিল এর প্রথম  কন্যা মোসাঃ নূরমহল খাতুন এর সঙ্গে ইসলামি শরিয়ত অনুযায়ী বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।

তিনি প্রায় আড়াই হাজার এরও অধিক  (২৫০০+) ছড়া-কবিতা ছন্দ মাত্রায় লিখেছেন। তাঁর লিখিত গল্প “আলোর পথের যাত্রী”, দুখিনী মা “মিষ্টি প্রেমের ছোঁয়া”। উপন্যাসঃ “ইতি কথা” ও “অভিলাষ” বিশেষভাব উল্লেখযোগ্য।
তাঁর প্রথম যৌথ কাব্যগ্রন্থ “জ্যোৎস্না জলের কাব্যসহ” প্রায় ৩২ টি কাব্যগ্রন্থ প্রাকাশিত হয়।
তিনি “মিষ্টি প্রেমের ছোঁয়া”, “বঙ্গ জাতির বঙ্গ পিতা”, “বিদ্রোহী কন্যা”, “রূপসী পল্লী”, মদিনার ফুল”, “বাবা মানে বৃক্ষ ছায়া” ও “রক্তাক্ত কারবালা সহ ১৮টি কাব্যগ্রন্থও নিজেই সম্পাদনা করেন।
তাঁর প্রথম একক গ্রন্থ “প্রেমের সম্ভাষণ” (কাব্য, ফেব্রুয়ারি ২০২২ ইং)
“ইতি কথা” (উপন্যাস, জানুয়ারি ২০২৩ ইং )
বৈচিত্র্যময় জীবন,( কাব্য, নভেম্বর ২০২৩ ইং)
উদ্দীপ্ত চেতনা ২০২৪ সালে প্রকাশিত হয়।
তিনি “ইতি কথা” উপন্যাসে ২০২৩ এ জাতীয় কবিতা মঞ্চ কর্তৃক সেরা পুস্তক সম্মাননা প্রাপ্ত হন।
এছাড়াও বিভিন্ন সংগঠন কর্তৃক সম্মাননা প্রাপ্ত হন।

তিনি যেন ভবিষ্যতে দেশ ও দশের কল্যাণে আরও ভালো কিছু উপহার দিতে পারেন তাঁর লেখনীর মাধ্যমে এবং সৎ পথে জীবিকা নির্বাহ ও ন্যায়-নিষ্ঠার সহিত বিশ্বস্ততার সাথে তাঁর ভবিষ্যৎ সমস্ত কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে পারেন সে জন্য তিনি সকলের কাছে দোয়া প্রার্থী। আমরা কবি ও তাঁর পরিবারবর্গের উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি – আমিন।

১।
উদ্দীপ্ত চেতনা
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

কালবৈশাখী এসে উড়িয়েছে ঘর,
উড়ছে বিহগ নীলে পাখনায় ভর।
হারিয়েছে পাখি তার আবাসের নীড়,
ঠিকানাটা নাই হায় নাই কুল তীর!

চিন্তিত চিত্ততে বেদনার শোক,
দেখছে ভুবন সারা দেখছে তা লোক।
উড়ে উড়ে চলতেছে ঠিকানা বিহীন,
এভাবেই কেটে যায় তার সারাদিন।

সে ক্লান্ত শরীরে খুঁজে পায় এক বন,
মরা গাছে পাতা নাই একা নিরজন।
তবু-ও তো ছাড়ে না সে বাঁচিবার হাল,
খড়কুটো খুঁটে এনে বাঁধে এক জাল।

অক্লান্ত এ শ্রমে টিকে থাকা পণ,
সফলতা ফিরে আনে শান্তিতে মন।
বাসা কুল খুঁজে পেলো সেই পাখি ফের,
দুখ জ্বালা দূর হলো আনন্দ ঢের।

যুদ্ধের দামামা
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

ভীতহীন চেতনায় যুদ্ধের দামামা,
বাজিয়ে তা মস্তকে বাঁধো বীর আমামা।
দেখো দুই চোখ মেলে জনতার রক্ত!
আর কতদিন রবে জালিমের ভক্ত ?

জেগে তুলো বিপ্লবী ঘুমন্ত মনটা,
মিছিলের স্লোগানের বাজুক এ ঘন্টা।
নিপীড়ন জ্বালাতনে দেশ নহে তৃপ্ত ,
আছে বল বাহুতে যে তুমি তো না রিক্ত।

চারিদিকে হাহাকার রক্তের বন্যা!
শহিদ দেশের বুকে সহোদর কন্যা।
সাহসেতে বাঁধো বুক হে দামাল শক্তে!
অগ্নির লেলিহান জ্বালো ওই তক্তে।

নর খুন নারী গুম কী যে চক্রান্ত !
শোষণের দাবানল এ বিষাদে ক্রান্ত।
পুড়ে ছাই ভস্মতে অবয়ব জ্যান্ত,
মাতমের শোকাতুর হবে নাকি শান্ত ?

রুধির ক্ষরণ বহে লালে লাল সিক্ত!
নাহি ঘুমে তনুমন হও উদ্দীপ্ত।
বজ্রের হুংকারে উত্থানে মহাবীর,
শঙ্কিত শত্রুরা পরাজয়ে নত শির।

সৃষ্টির প্রথম লগন
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

সৃষ্টি প্রেমে কৃষ্টি হেমে আল্লাহ পাকের সাধ,
শূন্য ভূমে রইবে ঘুমে কেউ যাবে না বাদ।
রব ইশারা মাটির দ্বারা বাবা আদম হয়,
অলৌকিকে নয় তা ফিকে প্রাণ ভেতরে রয়।

সর্বপ্রথম প্রেমে জখম হযরত আদম বাপ,
প্রাণ দেহে পায় রব ইশারায় একলা মনস্তাপ।
রবের খেলা নয় তো হেলা প্রহর কেটে যায়,
বাবা আদম ফেলে কদম একলা পথে ধায়।

তাঁর পাঁজরের একটি হাড়ের অংশ হাওয়াই মা,
ধরতে গেলেন প্রভু বলেন এখন হবে না।
বৈধতা পাক দিল হবে সাফ আওয়াজে কন রব,
তারপরে যাও একাকার হও খোশ দিলে রও সব।

অনেক সাধন বিয়ের বাঁধন মিলন দু’টি মন,
আদম হাওয়ার চাওয়া পাওয়ার স্বর্গ সুখের ক্ষণ।
জন্মে কাবিল আর এক হাবিল দুইবারে দুই ভাই,
দুষ্টু কাবিল হয় তা আবিল স্থিরে নাই ঠাঁই।

করুণ কারণ হায় বিভাজন দ্বীন বে-দ্বীনের হাল!
দুই দলে হয় বিভক্ত রয় ইবলিশের এই চাল।
সেই থেকে হয় এই জগতময় বিশ্বমানব তাই,
আল কোরআনের, আল হাদিসের বর্ণনাতে পাই।

২।
বিদায়ের ঘন্টা
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

দিন দিন প্রতিদিন
               আয়ু কমে যাচ্ছে,
হঠাৎ হঠাৎ করে
                 অক্কাটা পাচ্ছে।

শিশু থেকে কিশোর আর
                   যুবা থেকে বৃদ্ধ,
একে একে ক্রমাগত
                  এ জ্বালায় বিদ্ধ।

দু’দিনের দুনিয়ায়
                   হায় এ কী  মচ্ছব!
ভাই বোনে দ্বন্দ্বটা
                         পৈতৃক কচ্ছপ।

মারামারি কাটাকাটি
                           সম্পদ লুণ্ঠন,
জোর যার খ্যাতি তার
                   নীতি হীনে গুণ্ঠন। 

কবে হবে বুদ্ধিটা
                           এই সব বন্ধ ?
দেখে না কোরান খুলে
                      চোখ থেকে অন্ধ।

এইভাবে দিন গেলে
                     জবাবটা হবে কী?
প্রকৃত মানুষ যারা
                      ধিক্কারে দিবে ছি!

চাও যদি পেতে সবে
                        পরকালে শান্তি,
পৃথিবীর মোহ ভুলো
                          দূর হবে ক্লান্তি ।

আজ আছে কালা নাই
                         বের হলে দমটা,
অবশ মাটির দেহ
                         বিদায়ের ঘন্টা।

৩।
কাব্য তুমি সান্ত্বনা
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

আমার সকল কষ্ট জ্বালায়
কাব্য তুমি সান্ত্বনা!
দুঃখ ভুলে সুখ খুঁজে পাই
তৃপ্তি বিভোর অন্ত না।

তুমি প্রেমের ফুল বাগানে
স্বর্গেরই কূল ঠিকানা,
প্রেম বিরহে নাভিশ্বাসের
মৃত্যু দণ্ডের শেল খানা।

সুখের পরেও সুখ যে তুমি
দুখ বেদনার যন্ত্রণা,
ঝড়-তুফানে ঢেউয়ের মাঝেও
তুমিই কেবল মন্ত্রণা।

পরিশ্রমী ক্লান্ত দেহের
শ্রান্তিরই সুখ মস্তানা,
জীবন-মরণ কান্না-হাসির
গহীন বনের আস্তানা।

দুষ্টু লোকের গাত্রদাহ
ঈর্ষা মনের কারখানা,
কাব্য তুমি শাহানশাহের
রাজাধিরাজ বার খানা।

পুষ্পরেণু গোলাপ তুমি
লোক সমাজের ভর্ৎসনা,
রবের দ্বারে করুণ স্বরে
দু’হাত পেতে অর্চনা।

৪।
ধূর্ত ছুছুন্দর
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

চেহারাটা খুব ভালো
            বিষে ভরা অন্তর,
আলো ছাড়া শূন্যতে
         বিশাল এক প্রান্তর।

আঁধারে আঁধারে ঢাকা
           মণিকোঠা চত্ত্বর,
প্রকৃত মানুষ না তো
         আসলে সে খচ্চর।

রূপে গুণে ভরপুর
          লোকে বলে বিজ্ঞ,
নামধারী নামি-দামি
               শিক্ষিত অজ্ঞ।

নিজে ভাবে মহাজন
                আছে ব্যক্তিত্ব,
খতিয়ে দেখো না তার
                  নাহি অস্তিত্ব।

টাকা-কড়ি ভুরি ভুরি
                   সম্পদে পূর্ণ,
গাড়ি বাড়ি কত কী যে
                তবুও সে শূন্য!

মানবতা নাই যার
                 মূর্খ  সে অন্ধ,
অন্যায় অবিচার
                 লিপ্ততে সন্ধ।

হিতাহিত গুণ এই
           মানুষ কি প্রকৃত ?
প্রকৃত মানুষ নয়
            মানবতা বিকৃত।

দৃষ্টি ভোলানো রূপে
                 নয় কভু সুন্দর,
রূপের আড়ালে এক
                    ধূর্ত ছুছুন্দর।

৫।
ফজরের ক্ষণ
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

খোকাখুকি খোলো আঁখি
পাখিরা যে গেয়ে যায়,
মিনারেতে আযানেতে
নামাজেতে ডাকে তায়।

নিশি শেষে এলো হেসে
ফজরেরই ক্ষণকাল,
এ তো চাহি ঘুমে নাহি
ওঠো ওঠো হেনকাল।

বহিয়া তো যাবে সে-তো
নাহি রবে কারো তর,
বেটিবেটা বিছানাটা
ছাড়ো ছাড়ো অতি ত্বর।

অজু করি তড়িঘড়ি
বিছাইয়া নাও সপ,
সিজদাতে মাথা লুটে
প্রভু দ্বারে করো জপ।

তারপরে এই ভোরে
একসাথে খাতা বই,
পড়ো লেখো কিছু শেখো
হইহই রইরই।

৬।
রাতের বাহার
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন
  
নভে ভাসে চাঁদে হাসে
               মিটিমিটি তারারা,
জ্বলে নিভে ঘুরে উবে
              সারারাত পাহারা।

দাদু দোলে খুকি বলে
            কী দারুণ আহারে!
এত শোভা মনোলোভা
              প্রকৃতির বাহারে।

কত সব কলরব
          ছোট ছোট কচিরা,
দাদু ভাই ডাকে আয়
           পুলকিত নাতিরা।

খোকাখুকি দিয়ে উঁকি
        যায় ছুটে কোলেতে,
ফুল ফুটে নিশি টুটে
       শিশুদের বোলেতে।

চাঁদ তারা দিশেহারা
             সকলেই দেখে এ,
সাধ জাগে অনুরাগে
          বানাইছে ইহা কে?

বলে দাদু শোনো যাদু
              এ তো রব ইশারা,
মানো যদি নিরবধি
          হবে তাঁর পিয়ারা।

৭।

সোনার বাংলাদেশ
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

বাংলা আমার সোনার দেশে পাখপাখালির মেলা,
নীল আকাশে উড়িয়া চলে আনন্দেতে করে খেলা।
সবুজ শস্য ধানের ক্ষেতে বাতাসেতে দোল খায়,
চাষিরা সব মন আনন্দে পল্লি রূপের গান গায়।

এই দেশেতে স্বর্ণ ফলায় আমার দেশের চাষি,
ধান উঠিলে তাদের মুখে ফুটে মধুর হাসি।
রাখাল ছেলে পল্লী বালায় মুচকি মধুর হাসে,
মেঠোপথের ধুলিকণায় স্বপন তাদের ভাসে।

ময়না শ্যামা, কোকিল টিয়া,গাছের ডালের ‘পরে,
মনের সুখে নাচিয়া তারা সুখের’ই গান ধরে।
ময়ূর নাচে পেখম তুলে ফুল কলিরা ফোটে,
ভ্রমর অলি প্রজাপতি অনুরাগে ছোটে।

নদীর পানি দিঘির জলে জোছনার আলো পড়ে,
রাতের ফোটা শিউলি ফুলে ভোরের বেলায় ঝরে।
খুব সকাল ফুল কুড়াতে ছেলেমেয়ের দলে,
ফুল সুবাসে মন হরষে কতই কথা বলে!

বুকটা ভরে গর্বে আমার  আমি এ দেশের ছেলে,
পদ্মা মেঘনা যমুনা তীরে মাছ ধরে সব জেলে।
বাংলা আমার মায়ের ভূমি আছে রানির বেশে,
উতলা হয় দেশ-জনতা জনম এমন দেশে।

৮।
ভালোবাসার বন্ধন
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

পৃথিবীতে কতজন বিচিত্র মন!
বাড়ি-গাড়ি টাকা-কড়ি হীরামতি ধন।
প্রতিবেশী  হাসাহাসি কত আয়োজন!
তবু কভু নাই পাশে হলে প্রয়োজন।

সবাকার চলাফেরা পাশাপাশি বাস,
নিকটতা মিলমিশ মনে কত আশ !
স্বার্থের হানি হলে দেয় গালে ঠাস,
অবহেলা গঞ্জনা আর উপহাস।

মাতা-পিতা ভাই-বোন চাচা ফুফু আর,
রক্তের বন্ধনে সবে একাকার।
পৈতৃক সম্পদে গরমিল যার,
ভালোবাসা টুটে যায় হয় অনাচার।

আছে যত দীন ধনী আর মিসকিন,
নাহি রয় প্রীতি যদি নহে কভু লীন।
নয় আট সাত ছয় পাঁচ চার তিন,
দুই এক জিরো হয়ে সংযোগ ভিন।

চেনা নাই জানা নাই কত নর-নারী,
বিবাহের বন্ধনে গড়ে ঘর-বাড়ি।
রক্তের সংস্রব কিবা টাকা কড়ি,
নাই কোনো সংযোগ নাই বাঁধা দড়ি।

অটুট এ সংস্রব হীরা চন্দন,
যুগযুগ সুখে দুখে হাসি ক্রন্দন।
অভেদের দু’জনার প্রীতি বন্দন,
রক্ত টাকার নয় প্রেমো বন্ধন।

১০।
ভ্রমরকুলের বাহার
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

পুষ্প গন্ধে মনানন্দে
পাগলপারা ভ্রমর সব,
ধরাধামে আল্লাহ নামে
গুনগুন গুন কলরব।

মধুই মেশা লাগছে নেশা
সুরভিত ফুলের ঘ্রাণ,
দিশেহারা উড়ছে তারা
গাইছে মধুর সুরে গান।

বাগান ভরা জোড়ায় জোড়া
বসছে পাখি গাছের ডাল,
ভ্রমরকুলে ফুলের মূলে
মধুর টানে আজ বেহাল।

সবাই মিলে খুশির দিলে
ঘুরছে দিয়ে পাখায় ভর,
এই আহরণ মধুর বরণ
সয়না যে আর প্রাণে ত্বর।

ফুল ফুটেছে কী ঘটেছে?
আজকে বড়ই মনের সুখ,
মৌচাকে তাই ন্যস্ত সবাই
ব্যস্ত কাজে মিষ্টি মুখ।

১১।

আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

ঊনিশ তারিখ নভেম্বরের দিনকে করি স্মরণ,
আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস শ্রদ্ধাতে তাই বরণ।
পুরুষ মানে মাথার ছাতি নারী জাতির স্বামী,
জন্মদাতা কারো পিতা সব থেকে ফের দামি।

বটবৃক্ষ গাছের ছায়া বুকভরা তাঁর মায়া,
সারাজীবন কষ্ট সাধন শুকায় সাধের কায়া।
ঝড়ঝঞ্ঝা বর্ষাবাদল মাথায় বহন করে,
পরিবারের একটু মুখে হাসি ফোটার তরে।

নিজের জীবন বাজি রেখে সংসারে সুখ আনে,
তবু যেন পায় না সে দাম ভাসে নয়ন বানে।
ক্যামনে গড়ি সংসার ভুবন? নিজ্ নিজেকেই পুছে,
ফোস্কা পড়া দু-হাত দিয়ে অশ্রু চোখের মুছে।

পথ দিশারি নাও য়ের নাবিক বৈঠা ধরে হাতে,
সাত সমুদ্র তেরো নদী পার করে নেয় সাথে।
সকাল হলেই কর্মে মাতে সন্ধ্যা হলেই ঘরে,
চক্রাকারে জীবন ঘুরে রণাঙ্গনে লড়ে।

এইভাবে তাঁর দিন কাটে হায় টাকার পেছন ঘুরে!
পাতালভেদে কর্মশালায় জাগে গগন ফুঁড়ে।
পুরুষ হলো চলার গতি সংসার রণে যোদ্ধা,
সম্মানে তাঁর হাজার সালাম এক পৃথিবী শ্রদ্ধা।

১২।
মাটির তলে ঘর
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

রঙ্গ লীলার এই পৃথিবী
চিরদিনের নয়,
আজকে না হয় কালকে হবে
হবে সবই ক্ষয়।

আমার আমার করো সবাই
আমার কেহ নাই,
কেউ রবে না সঙ্গী তোমার
দমটা গেলে ভাই।

দমের গাড়ি হোঁচট খেলে
আসবে জানি যম,
সাধের দেহ নিথর হবে
থাকবে না আর দম।

মুসলিম হলে মরণ পরে
কবর হবে ঠাঁই,
হিন্দু, বৌদ্ধ গঙ্গা ধারে
চিতায় পুড়ে ছাই।

খৃস্টান হলে কফিন বক্সে
মাটির তলে ঘর,
মরার পরে কেউ না আপন
সবাই হবে পর।

১৩।

টাকার কাঙ্গাল
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

টাকার কাছে মানব জাতি
খুব অসহায় হয়,
টাকার কারণ জীবন ভুবন
জয় পরাজয় ক্ষয়।

গরিব দুখী এতিম কাঙ্গাল
যেমন চেয়ে রয়,
উপর তলায় যারা তারাও
তাদের মতই কয়।

টাকার জন্য মিথ্যা বলে
মিথ্যাকে দেয় ঠাঁই,
টাকার কারণ আবার কারও
মানবতা নাই।

টাকার কারণ  হত্যাযজ্ঞ
মানুষ করে খুন,
পরিবারে আঁধার নামে
অশান্তিরই ঘুণ।

তরুলতা বৃক্ষ যেমন
পানি বিনে লয়,
টাকা ছাড়া দুস্থ জীবন
তেমন পরা’জয়।

টাকাই হলো এই ভুবনে
সবার গুরু বশ,
টাকা ছাড়া নেমে আসে
জীবন নদে ধস।

টাকার জন্য মানুষ হয়ে
মানুষকে কয় রব,
শীর্ষ নেতা করলে দয়া
সার্থক হবে সব।

দেশ প্রশাসন মন্ত্রী রাজাও
খায় জনতার হক,
টাকার কাঙ্গাল তারাও ছুটে
আঁকে নানান ছক।

১৪।
মানবতার খোঁজ
মো: ইব্রাহিম হোসেন

মানবতা তোমায় খুঁজি
কোথায় থাকো কও ?
স্বার্থ নিজের সিদ্ধি করো
অন্যায়ে চুও রও।

আফসোসে কয় মানবতা
নয় তো আমার দোষ!
বিবেকহীন ও লোলুপ জনের
বিদ্বেষের এই রোষ।

দাও না কেনো বাধা তারে
নাই কি তোমার হুঁশ,
কিসের লোভে ছুটছো কোথায়
খাচ্ছো কেনো ঘুষ ?

নাইকো আমার আবাস ভূমি
নাইকো নিজের জ্ঞান,
গুণীজনের চিত্ততে রই
সত্যতে যাঁর ধ্যান।

কোথায় গেলে পাবো তোমায়
খুঁজে ফিরি রোজ,
দাও না আমায় দাও না বলে
করবো কোথায় খোঁজ?

আল্লাহ নবীর অনুসারী
তাঁদের প্রেমেই ঘোর,
সেথায় গেলে পাবে আমায়
আসবে রাঙা ভোর।

১৫।
অশান্তির কারাগার
মো: ইব্রাহিম হোসেন

তোমাদের অবহেলা গঞ্জনা আর
বিদ্রুপ উপহাস যত অনাচার,
আমার জন্য তাহা ক্ষতিকর নয়
বয়ে আনে ভালোবাসা সম্মান জয়।

যত পারো মারো মোরে আঘাতের তির
অন্যায় অপকামে নহে নত শির ,
ইমানের বলে গাই সততার গান
ভীতু নই যদি যায় যাক চলে প্রাণ।

আল্লাহ রাসুলের পথে মোর ঠাঁই
কষ্টে যদিও থাকি তবু সুখ পাই,
আঘাতের শোর বিঁধে চিত্তে আঘাত
ধৈর্যধারণ পর রঙিন প্রভাত।

তোমাদের অনাচারে বক্ষে বেদনা
নয় অনাচার যেন এ শুভকামনা,
এই ভেবে রব দ্বারে মাথাটা নোয়াই
সিজদাতে আঁখিজলে অশ্রু খোয়াই।

মালিকের এ কী খেলা বুঝা বড় দায়!
বিরহী এ মন খুঁজে প্রশান্তি পায়,
মলিন বদনে ফের ফুটে মুখে হাসি
অশান্তি কারাগারে তবু ভালোবাসি।

১৬।
হে মহান খালিক
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

সব কিছু ভুলি দুটি হাত তুলি
নুয়ায়েছি এই শির,
স্মরণেতে পাপ চাই মোরা মাফ
ঝরাই যে আঁখি নীর।

জানি না কখন বাজিবে যখন
জীবনের শেষ বীণ,
হয়তো হবে না চাওয়া পাপ ক্ষমা
সময় সুযোগ দিন।

পাপ অনুতাপে এ হৃদয় কাঁপে
হে রহিম রহমান!
অঝোরেতে ঝরে আঁখিজল ডরে
যেন নদী বহমান।

গাহি গুনগান তুমি মহিয়ান
হে আল্লাহ মালিক !
তব সমমানে নাই দো-জাহানে
তুমি’ই তো খালিক।

তুলিয়াছি হাত দিও গো নাজাত
ওগো দয়াবান রব!
তুমি তো রহিম, তুমি রহমান
সঁপি তব পদে সব।

১৭।

মদিনার ফুল
মো: ইব্রাহিম হোসেন

ওই মদিনার ফুল বাগানে
ফুল ফুটেছে ফুল,
দ্বীনের নবী কামলিওয়ালা
মাখলুকাতের কূল।

সুরভিত বিশ্ব ভুবন
গুনগুন গুন স্বর,
গাইছে ভ্রমর উড়ছে বিহগ
পাখায় দিয়ে ভর।

আকাশ বাতাস পাহাড় নদী
দূর নীলিমায় দূর,
মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সাঃ)
এই কালিমার সুর।

লাখো কোটি দুরুদ সালাম
মুহাম্মাদের নাম,
জমিন ভরা ফেরেস্তাকুল
এইনা ধরা’ধাম।

চিনবে না যে কূল হারাবে
করবে সেজন ভুল,
নূরের নবী ধ্যানের ছবি
না আছে তাঁর তুল।

১৮।
ওয়াদা পালন
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

ওয়াদাটা করে যেবা করে খিয়ানত,
মিলে না কপালে তার রব নিয়ামত।
মুনাফেক বলে তারে হাদিসে প্রমাণ,
মানুষের সাথে তার হয় না সমান।

কলহ বিবাদ লাগে স্বজনে স্বজন,
সমাজের চোখে কুটা হয় সে কুজন।
লোকে বলে থাকে সদা বড় বেইমান,
কথা দিয়ে রাখে না সে নাই যে ইমান।

নামে সে মানুষ হয় শয়তানি কাম,
রবের লানত পড়ে এই ধরাধাম।
নিজের বিবেক খুনি, খুন মহাপাপ!
অতিষ্ঠ জনতারা দেয় তারে শাপ।

কারে বলো কথা দিয়ে কথা রাখা কয়?
আজ দেবো কাল দেবো কথা রাখা নয়।
কথা যদি দিয়ে থাকো কখনও কভু,
ক্ষতি হলে হোক তব করো তাহা তবু।

আস্থা অটুটে রবে পাবে তবে দাম,
কামাবে জগৎ মাঝে খ্যাতি ও সুনাম।
অমর অবনী ‘পরে হবে নাকো ম্লান,
সাদরে সম্ভাষণে গুণী মেহমান।

১৯।

অভাবী লেখক আমি
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

কবিতার কথামালা মধুর বচন,
নাই যদি লেখা হয় ধরে যে পচন।
কলমের আঁচড়েই সাজানো তা কিছু,
উরু উরু মন ছুটে যায় পিছু পিছু।

এক দুই তিন করে কবিতা ও গান,
লিখে যাই সুখ পাই জুড়ায় এ প্রাণ।
মাঝে মাঝে শখ খুব বই প্রকাশের,
দীন হাত না প্রভাত হায় নিকাশের!

দিন শেষে রাত আসে এ মনের চাওয়া,
তৌফিক দাও রব হয় যেন পাওয়া।
ফুল ফুটে গাছে শাখে কাননের বাগ,
কবিতার প্রেমে আজ মন অনুরাগ।

কত আশা হৃদে জাগে কত মনে সাধ!
পারি না অচলে রই অভাবের বাধ।
জ্বলন্ত আশাগুলো হয় নির্বাক,
কলি থেকে ঝরে যায় ব্যথার এ ঢাক।

অর্থের কারণেই হয় নাকো বই,
হয় নাকো উপরের আরোহন  মই।
এইভাবে দিনকাল কেটে যায় হায়!
গরিব মানুষ ভবে তাই নিরুপায়।

পরিশেষে এ জানাই হাজার শোকর,
যদিও বিরাজ হৃদে বেদনা ফোকর।
তবুও তারিফ গাহি মহান রবের,
কি আছে মূল্যখানি যশ এ সবের?

লোকে বলে সব আছে আসলে তা নাই,
হোঁচট খেয়েই পথে থমকে দাঁড়াই।
মনে শোক ধুকধুক বিষণ্ণতায়,
অভাবী লেখক আমি বিরহ ব্যথায়।

২০।
সাচ্চা মুমিন 
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

তুই মুনাফেক তুই  যে বে-দ্বীন
তুই কাফেরের বাচ্চা,
রাসূল প্রেমে মন না দিলে
নয় তো মুমিন সাচ্চা।

মান হানে তাঁর যে কাঁদে না
ঈমান যে তার কাঁচ্চা,
রাজ-ক্ষমতায় নিম্ন শিরে
অন্যায়ে কয় আচ্ছা।

কর্ প্রতিবাদ শক্ত জিহাদ
দুশমনে দে ধাক্কা,
স্বর্গে যদি চাস পেতে ঠাঁই
ঈমানটা কর্ পাক্কা।

ভাই বেরাদার বন্ধু স্বজন
নও জোয়ান ও  কাক্কা,
অন্তঃকরণ চিত্তে ধরণ
ওই পবিত্র বাক্কা।

গুটিয়ে না হাত লড় দিবারাত
বৈরী না দে পাত্তা,
নবীর প্রেমে  মৃত্যু হলেও
শুদ্ধতে রয় আত্মা।

২১।
প্রকৃত মানুষ
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

আজীবন নয় প্রাণ
             সত্যের গাও গান
দু’দিনের দুনিয়ায়
         কেনো এত পিছু টান?

তুমি আমি অসহায়
             হাশরের মাঠে ভাই
নবী বিনা কাণ্ডারী
              বাঁচিবার পথ নাই।

আরশের ছায়াতলে
          পিয়াস মিটাতে জলে
চাও যদি সবে তবে
        এসো দ্বীনে দলে দলে।

এই করি আহ্বান
        যুবা বুড়া নওজোয়ান!
দাও ছেড়ে সেই পথ
             যেই পথে শয়তান।

মুমিনের শত্রু যে
          অকারণে ফাসাদে সে
দ্বন্দ্ব লাগায় মাঝে
         ইবলিশ চিনে না কে ?

এর থেকে দূরে থাকো
            নবী রব হৃদে রাখো
মুক্তির দিশারি এ
      মনেপ্রাণে ধ্যানে আঁকো।

জীবনের যত আয়ু
              বের হলে প্রাণ বায়ু
পড়ে থাকে তনুখান
              অচলনে রয় স্নায়ু!

বিবেকের চাবিকাঠি
                 হয় যদি পরিপাটি
প্রকৃত মানুষ তুমি
          মুসলিম পাকা খাঁটি।

২২।
নিরুপায় জনতা
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

হায় এ কী লুটপাট!
               জনমনে ঝঞ্ঝাট
চারিদিকে হাহাকার!
          মানহানি এ লোপাট।

লোভ মোহ ক্রোধ আর
                  অন্যায় অবিচার
সুদ ঘুষে ভরপুর
             ধর ধর মার মার!

লালে লাল বেসামাল
           জনতারা নাজেহাল
লোহিত সাগর যেন
          বুকে চিরে মারে ফাল।

রক্তের সরোবর
              রাজপথে নারী নর
পাপে ভরা দুনিয়াটা
          পা বাড়াতে খুব ডর।

সততার যুগ শেষ
            বিরহের জ্বালা ক্লেশ
বিনাদোষে কারাগার
           হাততালি বেশ বেশ।

অপবাদ অপরাধ
            এ জীবন বরবাদ
শোষণের কশাঘাত
         ভাঙে নীড় ভাঙে বাঁধ।

নিদারুণ নিপীড়ন
             করে ঘাড়ে আরোহণ
কান্নার কলরব
            বিভিশিকা বিবরণ !

শান্তি কোথায় হায় !
              সাধারণে নিরুপায়
হে মালিক স্রস্টা !
              তব দ্বারে দয়া চাই।

২৩।

বিভেদ
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

দীন ধনী আর যত আছে মিসকিন,
সব মনে আশা আছে সবাই তো হীন।
ধনী চায় গাড়ি বাড়ি অর্থ কাঁড়ি কাঁড়ি,
গরিবের চাওয়া এক পান্তা ভাতে হাঁড়ি।

ধনীদের পোশাকের কত যে বাহার!
দুখী চায় এক মুঠো পেটেতে আহার।
সাত তালি জামা গায় ছেঁড়া বস্ত্রখানি,
অভাবের তাড়নায় ঝরে চোখে পানি।

মাটির গঠনে দেহ সবাকার ভাই,
তবু এত ব্যবধান জানিবার চাই!
বিলাসিতা করে কেহ করে দিন পার,
আঁখি নীরে অনাহারে কারো হাহাকার!

কেউ থাকে দশতলা কেউ গাছতলে,
উভয়েরই চাওয়া পাওয়া দু’চোখের জলে।
জেলায় জেলায় বাড়ি বিদেশেও চায়,
অসহায় নিঃস্ব যারা প্রভুর আশায়।

বিবেকের চোখে দেখো সবাই আবেদ ,
ধনী গরিবের মাঝে কীসের বিভেদ ?
ধনীদের জেভ ভরা গরিবের নাই,
মাটির কবরে হবে উভয়ের ঠাঁই।

২৪।
সামপ্রদায়িক দাঙ্গাফাসাদ
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

কোন্ বা রবের সৃষ্টি তুমি
কোন্ বা ধর্ম পালন করো ?
মসজিদ, গীর্জা ভেঙে আজি
ধার্মিকেরই সাজটা ধরো ?

কোন্ গ্রন্থতে লেখা আছে
হত্যা করো মানুষ মেরে ?
স্বার্থ নিজের সিদ্ধি করো
অসহায়ের অর্থ কেড়ে।

তোমরা দানব, নও তো মানব
বনাঞ্চলের হিংস্র প্রাণী,
স্বার্থ লোভে, অর্থ মোহে
অন্যের করো আত্মহানি।

অন্য মনে আঘাত হানে
পাক কোরআনের নাই তো বাণী,
বেদ ও বাইবেল, ত্রিপিটক’ও
একই বলে আমরা জানি।

সামপ্রদায়িক দাঙ্গাফাসাদ
করছো যারা শক্তি বলে,
নাজিল হবে প্রভুর গজব
ছিটকে পড়বে গভীর জলে।

সাম্প্রদায়িক দ্বন্দ্ব ভুলে
এসো হাতে হাতটা রাখি,
মিলেমিশে এক সমাজে
উপাসনায় রব’কে ডাকি।

২৫।
ধর্ম নিরপেক্ষ 
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

ধর্মমতে জীবন গড়ো
দাঙ্গাফাসাদ কিসের ভাই ?
দ্বন্দ্ব বিভেদ রেষারেষির
এই সমাজে শান্তি নাই।

যার যা ধর্ম করবে পালন
কোনো শাস্ত্রে নিষেধ কী ?
মসজিদ, গীর্জা ভাঙলে তবে
লোকসমাজে বলবে ছি!

মানবতার নয়তো এ কাজ
মনুষ্যত্ব বিলোপ তার,
ধ্বংস যজ্ঞের এই লীলাতে
অভিশাপের ডালির ভার।

ধর্মভীরু ধার্মিক যারা
তাদের ভবে এ কাজ নয়,
সত্য বাণী প্রচার করে
মানবতার করে জয়।

কারও ধর্মে আঘাত হানা
আল কোরআনের বাণী না,
রব’কে মুসলিম আল্লাহ বলে
হিন্দু বলে দূর্গা মা ।

২৬।
মাফ করো হে রব!
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

দমের গাড়ি ছাড়বে বাড়ি
বাঁচার কোনো উপায় নাই,
থাকতে সময় পুণ্য কামাই
নেক আমলের হিসাব চাই।

করছি কী যে ভুলছি নিজে
আল্লাহ রাসূল দ্বীনের পথ!
পাবো কি হায় শেষের বেলায়
পারাপারের স্বর্গ রথ?

পথের কড়ি পকেট ভরি
সময় তো যায় বয়ে হায়!
কখন শেষে এক নিমিষে
মরণ কাছে এসে যায়?

সাঙ্গ হলে চোখের জলে
কাঁদবে স্বজন প্রিয়তম্,
প্রাণ নিবে যম শেষ হবে দম
ডাকবে কবর স্বাগতম।

চাই যে ক্ষমা পাপের জমা
মাফ করো হে মালিক রব!
দু-হাত তুলি সকল ভুলি
তোমার পদে সঁপি সব।

২৭।

গর্জন 
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

চারিদিকে ইসলাম আজ অপমান!
কে আছো জোয়ান ভবে রব মেহমান?
তলোয়ার হাতে ঢাল কালিমার বাণী,
গর্জনে তোমার ওই নিরাময় গ্লানি।

জেগো ওঠো দামালেরা এখনি সময়,
দূরীভূতে করো পণ সকল অনয়।
তোমাদের দিকে চেয়ে আছে এই দেশ,
হাতে হাত রেখে সব দূর করো ক্লেশ।

চলবে না অবিচার অনিয়ম আর,
পাবে না পাবে না পাপী কখনোই ছাড়।
হবে নাকো এই দেশে ধর্ষণ ও খুন,
ঝরবে না দু’নয়ন লাগবে না ঘুণ।

তোমারও  আছে রাগ আছে বাহুবল,
অনয়ের জ্বালা সয়ে কেন আঁখিজল?
মুছে ফেলো অশ্রুবারি কাঁদনের শোর,
মুষ্টি ধরো শক্ত করে খোলো মনো দোর।

মৃত্যু যদি আসে কভু নাই কোনো ভয়,
শহীদ দ্বীনের পথে এ আসল জয়।
এক হও জনতারা বাঁধো সবে জুটি,
রাসুলের অপমানে চেপে ধরো টুঁটি।

২৮।
আলাল ও দীনের প্রলাপ
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

শোন তোরা দীন ভাই! দূরে থাক তাই
আমাদের সাথে ওরে দিনে কিবা রাতে
হবে না হবে না মিল কভু কোনো প্রাতে
না আছে দেহের ছাল কাদাভরা গায়।

ওহে ও আলাল আর ওহে ও দুলাল!
তোমাদের ন্যায় আর নাহি হয় ব্যয়
আমাদের এ সংসারে খুব কম আয়!
সময় তো নাই কোনো করার প্যাঁচাল।

আমাদের খেয়ে পরে বাঁচিস যে তোরা
গলাবাজি কেন বল, কেন উঁচু গলা?
চপেটাঘাতের ঘাত দেবো কানমলা
বাঁচিবার যদি চাস এখনই দৌড়া।

খাবারটা তোর নাকো তুই না মালিক
সাগরের নিচে ওই পাথরের তলে
যে পোকাটা বাস করে সে গভীর জলে
আহারটা দেন যিনি তিনি তো খালিক।

ছোট মুখে বড় কথা সাহস না কম
ডাক দেখি তোর খোদা বাস করে কই?
সবারই শীর্ষে মোরা অপারগ নই
প্রাণ কেড়ে নিতে পারি হয়ে তোর যম।

আলালের ঘরে তোরা আদুরে দুলাল
ধন আছে মন নাই, নাহি মানবতা
দাপটে ভাবিস নিজে নিজেকে দেবতা
হালাল রুজি তো নাই সব বেহালাল!

চুপ শালা চুপচাপ একদম চুপ!
মার দেবো এখানেই শ্মশানের লাশ,
ভিটা বাড়ি ছাড়া তুই হয়ে যাবি নাশ!
ঝলসে যাবে যে তোর বদনের রূপ।

আজ আছি কাল নাই ভয় কি দেখাস?
ক্ষমতার ওই বল হবে ছারখার
মালিক মহান প্রভু নীতি সুবিচার
বাঁচা মরা তাঁর হাতে তাঁর নামে শ্বাস।

২৯।
কেদারা
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

মানবতার কাছে আমি জিজ্ঞাসক এক জন,
কই গেলো তার মান-মর্যাদা ? নাই ভবে যার ধন।
মাটির দ্বারা তৈরি দেহ তার ভেতরে মন,
সব মানুষের রক্ত একই, একই রকম তন।

দুঃখ কী যে কষ্ট কী তা বুঝার পারে সব,
বুঝে না কেউ পরের বেলা দীন-ধনীতে লব!
কেউ করে বাস মৃত্তিকাতে ধুলোমাটির ঠাঁই,
কারও আবার এই ভুবনে সেইটুকুও নাই!

অঢেল ভবে সম্পদে যার বিলাসবহুল ঘর,
ঠাঁই হলো তার সিংহাসনে উচ্চ আসন ‘পর।
সম্পদহীনে নিঃস্ব দীনের দন্ডটা তার শূল,
গরিব হওয়া খেটে খাওয়া এই হলো দোষ মূল!

নাই অপরাধ পাহাড় সমান তবু হাজার দোষ,
কথার খোঁটা নুনের ছিটা দেখায় কত রোষ!
চপেটাঘাত দুই গালে দেয় বজ্রধ্বনির শোর!
নাইকো আদর, প্রীতি, স্নেহ, মর্যাদা, মান কোর।

ওই কেদারার উচ্চতে যার বসার আসন হয়,
সেই মহাজন ভবের মালিক পৃথিবী তার জয়।
হায় এ কী দাম! এই কেদারার নাই কভু তার তুল,
দীন-দুখীদের জীবনই হয় কসুরহীনেও ভুল!

৩০।
মানুষ মানুষের জন্য
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

মহান রবের সৃষ্টি সবে
হিন্দু মুসলিম আমরা তবে
বিভেদ বলো কিসের ভাই?
বৌদ্ধ খ্রিস্টান সকল জাতি
সবাই সবার মাথার ছাতি
মানুষ মাঝে বিভেদ নাই।

আল্লাহ তা’লার সকল সৃষ্টি
দাও সকলে শুভ দৃষ্টি
মানব সেবা মহৎ গুণ,
কারও মনে হানলে আঘাত
ধর্মতে হয় দেওয়া ব্যাঘাত
মনের ভেতর ধরে ঘুণ।

যার যা ধর্ম পালন করো
মানব সেবায় জীবন গড়ো
ঈশ্বর হবে তবেই খোশ,
অত্যাচার ও নির্যাতনে
শক্তিশালীর কৃপাণ বাণে
মহান প্রভুর উদয় রোষ।

আমরা মানুষ মানব তরে
বাহুডোরে আপন করে
রাখবো সবার দিলে দিল,
ভগবানের মিলবে কৃপা
শয়তানের বাক-কণ্ঠ চিপা
আল্লাহতে চিত্ত মিল।

৩১।
ক্ষেপণাস্ত্র
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

অত্যাচারীর উৎপীড়নে ঝরছে তাজা রক্ত!
থাকবে কত বশ্যতায় আর জালিমদেরই ভক্ত?
ভয় পেওনা তোমরা তরুণ গড়তে হবে তক্ত,
মুক্তি পেতে যুদ্ধ করো মুষ্টি ধরো শক্ত।

হস্তে ধরো অসি কেতন দেশ বাঁচাতে যুদ্ধ,
শান্ত মনের অশান্ত রূপ করতে হবে ক্রুদ্ধ।
আর কতদিন থাকবে ভবে শত্রুর ভয়ে জব্দ?
আনতে হবে ছিনিয়ে বিজয় গৌরবের এই লব্ধ।

সাহস বুকে প্রত্যয়ে পণ ভাঙতে জালিম ঘাঁটি,
সাগর নদীর তরঙ্গে বাও নৌকা উজান-ভাটি।
চলার পথে সঙ্গী করো আয়ুধ ঘটিবাটি,
রক্ষা করো ওহে তরুণ! পবিত্র এই মাটি।

দেশ জনতা তাকিয়ে আছে তোমাদেরই পানে,
চক্ষু যুগল খুলে দেখো ভাসছে নয়ন বানে।
বৈরীদলের আক্রমণে বিদীর্ণ বুক বাণে,
এই আকুতি বাঁচার তাগিদ জীবন নামের প্রাণে।

তোমরা যুবক মহাপুরুষ হস্ততে নাও অস্ত্র,
অঙ্গে পরো শত্রু নিধন রণাঙ্গনের বস্ত্র।
বিশ্ব জয়ের বীর সাহসী তোমরা ফিদেল-কাস্ত্র,
বোমাবারুদ গোলার আগে বিকট  ক্ষেপণাস্ত্র!

৩২।

জাগ্রত হও বিশ্ব
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

ফিলিস্তিনে কাঁদছে মানুষ, কাঁদছে মানুষ শোকে!
বিশ্বমুমিন এক যদি হয় একত্ব কে রোখে?
আশি লক্ষ ইহুদিদের ফাঁদ পাতা ওই জালে,
মসজিদুল আল আকসাবাসী কী নিদারুণ হালে!

বুক ফেটে হয় চৌচির আজই ধ্বংস লীলা দেখে,
ফিলিস্তিনি শিশু কিশোর রক্ত গায়ে মেখে!
আল্লাহু এক ধ্বনির রবে তবুও তারা মাতে,
তাকবীরে এক কালিমাখান নিত্য ক্ষণের সাথে।

দুইশো কোটি মুসলমানের আবাস ভুবন ‘পরে,
তবুও কেনো খাচ্ছে রে মার কাঁপছে পরান ডরে!
বলতে কি হায় পারি তবে বেইমান ওরা ভবে,
জাগবে কবে বিবেক ও জ্ঞান বুদ্ধি কবে হবে?

আর কতদিন করবে শোষণ রইবে দখল ভোগে?
ইসরায়েলের সঙ্গ দেবে মুনাফিকের যোগে।
বে-দ্বীন ওরা একত্রে আজ বিশ্ব শাসন করে,
নবীর উম্মত কেমন তোমরা ক্যামনে থাকো ঘরে?

তোমার ভাইয়ের রক্ততে লাল ফিলিস্তিনের মাটি,
ভোগ-দখলে গড়ছে ওরা উৎপীড়নের ঘাঁটি।
জাগ্রত হও বিশ্ব মুসলিম ঐক্যতে রও জুটি,
বজ্রাঘাতে জাপটে ধরো ইসরায়েলের টুঁটি।

রক্ষা করো প্রথম কেবলা মসজিদুল আল আকসা,
ধ্বংস করো ইহুদিদের নীল নকশা আর মাকসা।
আর ঘুমে না মস্তক ওঠাও শান্তি আনো ভূমে,
ফিলিস্তিনের পুণ্য ভূমি তাকবীরে দাও চুমে।

৩৩।

সরাইখানা
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

আমির, ফকির, টোকাই, মিসকিন
এক ছাদেরই তলে বাস,
আকাশ-পাতাল বিভেদ কেনো
দীন-দুখীদের হাহুতাশ ?

পাশাপাশি হয় অবস্থান
নাই সুবিধা কিছুই তার,
অপবাদের ডালি বহন
হায়রে এ কী চমৎকার!

বিশ্ব মানব তৈরি মাটির
রুধির ক্ষরণ উঠলে ছাল,
অঙ্গ যদি বিক্ষত হয়
দেখবে সবার রক্ত লাল।

এক বিধাতা স্রষ্টা সবার
হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান ভাই,
মরলে মুসলিম মাটির তলে
বে-দ্বীন হলেই চিতায় ছাই!

অন্তরালে অহং কীসের
কীসের টাকার দেমাক ভাই?
সরাইখানার দুনিয়াটা
মুসাফিরের ক্ষণিক ঠাঁই।

৩৪।
সততার পণ
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

খুব ভোরে ওঠো সব এই করো পণ,
সৎ পথে চলো যাক দিন কাল ক্ষণ।
গুরুজনে মেনে চলো দাও তাঁর মান,
ভোর সাঁঝে গাও সদা বিধাতার শান।

প্রতিবেশীদের সাথে ভালো আচরণ,
করে যাও হবে তারা তবে জাগরণ।
তোমা থেকে জ্ঞান তারা শিক্ষা নিতে পারে,
সমাজের কালো হবে দূর অবসারে।

দুখীজনে সেবা দাও ধরো বুকে টেনে,
সত্য যাহা মনে প্রাণে নাও তাহা মেনে।
সদা নিজ সুখে নয়, পর সুখে হেসো;
এতিমেরে স্নেহ মমে শুধু ভালোবেসো।

নিয়মিত লেখাপড়া করে যাও সব,
পাঠ নিতে স্মরণেতে মুখে বলো রব।
জ্ঞান আহরণ করে বড় হলে ভবে,
শিক্ষা আলো ছড়ে যাবে মনে রেখো তবে।

শিক্ষা এনে দিবে জেনো জীবনের সুখ,
আলোকিত হবে এই সমাজের মুখ।
সততাকে মনে ধরে গড়িবে সমাজ,
স্মৃতির অম্লানে শিরে সকলের তাজ।

৩৫।
পড়তে হবে বই
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

আয় খোকা আয় শোন বলে যাই
পড়তে হবে বই,
সর্ব চূড়ায় আরোহনের
বইয়ের পাতাই মই।

কলমটা নে বই হাতে ধর
পাঠলাশাতে যা,
শিক্ষা দেবে যা ভুবনে
কেউ দেবে না তা।

শিক্ষা মানে জ্ঞানের আলো
আঁধার করে দূর,
অন্ধকারে মনের ভেতর
চমকিত এক নূর।

অ আ ক খ, এ বি সি ডি
আলিফ বা তা শা,
পড়ার প্রথম বর্ণমালা
শরবত করে খা।

এক দুই তিনে, চার পাঁচ গুনে
অংক কষে চল,
এই কলমের লিখনই তোর
শক্তি সাহস বল।

৩৬।
সত্যে ব্রত  (শেক্সপীরীয় সনেট)
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

সন্নিকটে প্রভু তব, অন্তরের কূলে,
জগতের মায়াজাল, আর কিছু ভুল;
কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহে, পরকালে শূলে,
পার্থিব সম্পদ বশে, হারাবে দু’কূল।

কুটিলতা দূর করো, করো সৎ পণ,
নেক আমলের খাতা, আঁধারের বাতি;
সততার পথে চলো, পাবে সেরা ধন,
শান্তির আহ্বানে মুক্তি, কবরের সাথী।

তবে আর দেরি নয়, চলো এক সাথে,
লক্ষ্যে যার সৃষ্টি ভব; মাতো নবী নাতে।

রব নির্দেশ পালনে, ব্রত রাখো প্রাণ,
ক্ষণিকের এ দুনিয়া, নহে চিরদিন;
দোজখে আজাব থেকে, মিলিবে যে ত্রাণ,
অনন্ত সুখের ছোঁয়া, রবে সীমাহীন।

৩৭।
দুস্থ জীবন
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

জামা তালি জেব খালি শূন্য পাণি
আজীবন কাঁধে বহে দুঃখ গ্লানি!
দুই চোখে অবিরত ঝরে যে পানি
গরিবের নিদারুণ এই কাহিনি!

দিন আনে দিন খায় থাকে না জমা
এইভাবে চলে তার জগতে রমা,
সমাজেতে দামি নয় সব’চে কমা
এত জ্বালা দুখ হায় নাই উপমা!

এ বেলায় জোটে ভাত ও’বেলাতে না
ছোট ছোট ছেলেমেয়ে করে কান্না,
এক ঘরে কাঁদে বসে ও দুখিনী মা
নাতিদের বলে খোকা কাঁদে না মনা।

বেচারা সে নিরুপায় কর্তা বাবু
অভাবের তাড়নায় খুব সে কাবু,
ভোজনের খোঁজে নদী পন্থে তাঁবু
এমনি কপলা তার ভরে না ডাবু!

অভাগা যেদিকে যায় সাগর শুকে
চিন্তায় ঘোরে মাথা বিষাদে ধুঁকে,
বিরহের গীতি গায় তুম্বি ফুঁকে
জীবনের লেনাদেনা এখানে চুকে।

৩৮।
আহ্বান
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন 

ক্ষণিকের এ জীবন
            আজ আছে কাল নাই,
ডাক এলে যাবো চলে
                অবনীতে কই ঠাঁই ?
               
চলো সব ছুটে যাই
             ঘুমে আর নয় ভাই,
আযানের ধ্বনি ওই
              নামাজেতে ডাকে তাই।

পাখিদের কলরব
            জিকিরেতে  মাওলার,
সুমহান গায় শান
              কী মধুর বারবার !

করে ওজু নিজ রুজু
              ইবাদতে চলো ধাই
তন্মনা প্রতি জনা
                শান্তির ছোঁয়া পাই।

এই প্রাত দু’টি হাত
               নামাজের-ই অন্তে,
চাহো মাফ যত পাপ
                এ মনের ভ্রান্তে।

করো পণ এই ধন
               আমলের খাতা দ্বীন,
ইহকালে পরকালে
               সুখ রবে সীমাহীন।

৩৯।
সত্যের ধারিণী
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

কবির লেখনী সত্যের ধারিণী সত্যের দিকেই ধাবিত হয়,
তিমির রাত্রির ঝড়-ঝঞ্ঝার নাহি কোনো তার ভয়।
সত্যতে বলীয়ান মিথ্যা চুরে করে খানখান,
পাপাত্মার বলিদানে হয় চির অবিনশ্বর, চির অম্লান।

পাতাল ভেদিয়া পর্বত ছেদিয়া মহাশূন্যে দেয় পাড়ি,
বেদনার পাহাড় বক্ষে ধারণ অক্ষিদ্বয়ের মুছিয়া বারি।
তীক্ষ্ণ তলোয়ার লেখনীর আঁচড় দৃঢ়সংকল্পের ইচ্ছা,
সত্যের দাপটে অসত্যের দাপট বিলীনের কিচ্ছা।

অকুতোভয়, দুর্বার, দুর্জয়, লেলিহান অগ্নিশিখায়,
বিভীষিকার ক্ষণে কলমের গর্জনে তর্জনে নির্বাপিত বরিখায়।
শান্তির শৃঙ্খল, ভাঙিয়া চুর অনিয়ম এ তো অগ্নিবীণা!
কবির কলম যায় না কখনো ধনরত্ন, অর্থ দিয়ে কিনা।

ভীতু কাপুরষ, ভীতসন্ত্রস্ত বিবেকের বলিদানে হয় চাটুকার,
কিছু স্বার্থ, কিছু লোভ মোহে গোলামি জালিমের অনুকার।
নাই হিতাহিত জ্ঞান,নিবোধের ধ্যান মানবতার দুশমন,
এদের বিলুপ্ত করণ সৎ সততার কলমেই প্রশমন।

জাগ্রত কলমের জাগ্রত আঁচড়ে জাগ্রত জনগণ,
উচ্ছ্বাস, উদ্ভব এ তো মহা বিপ্লব বিবেকের জাগরণ।
ওহে তরুণ আর তরুণী! ন্যায়নীতি ধারিণী অবিরাম চালাও কলম,
অশ্বশক্তিতে প্রবল স্ফীতে উচ্ছল ধরণী  আলম।

৪০।
মনুষ্যত্বহীন
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

কারোর কাঁদনে তোমার নয়নে
নাহি আসে যদি জল,
নও তো মানুষ তুমি অমানুষ
পাক্কা মাকাল ফল।

ভেতরে তোমার বিষ্ঠা জমার
কারখানা সেই ঘর,
নাই সরলতা রোষ বিরোধিতা
স্বার্থ নিজের তর।

কারোর হাসিতে তোমার বাঁশিতে
বাজিলে করুণ সুর,
মানবতাহীন নিচুমনা ক্ষীণ
সঙ্কটে পর দূর।

হিতাহিত জ্ঞান নাহি সৎ ধ্যান
কপট তো এক জন,
লোলুপতা তুমি বিষে হৃদ ভূমি
লুণ্ঠনে সব ধন।

বড়ই পাষাণ সত্য ভাসান
নির্মমতার মন,
নিষ্ঠুরতার পাপ অবিচার
বিষ দহনের ক্ষণ।

এই যদি হয় মানবতা ক্ষয়
বিবেকহীনের বশ,
সুখের স্বপন মিথ্যা বপন
জিন্দেগীটাই লস।

৪১।
বিন্দু তর্জন
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

নই অনন্য খুব নগণ্য
মানুষ আমি ছোট্ট,
কঙ্কালের এক অংশবিশেষ
খুব লাজুকে কট্ট।

বিশালতা নাই ক্ষমতা
পদবিহীনে গণ্য,
না পড়ি তাই মানব খাতায়
বিদ্বজন থেকে অন্য।

করুণ এ হাল হায় কী নাকাল
তুচ্ছ জাতের পণ্য!
পাই না তো দিক কূলকিনারার
খুঁজিয়া তন্ন-তন্ন।

যেদিকে চাই অর্ণব শুকায়
মরুর এ বুক শূন্য,
হয় নাকো তাই দরদি ভাই
হয় না আশা পূর্ণ।

ভবলীলায় অবহেলায়
চলছে দেহের হংস,
লজ্জারই ভার অবনী ‘পর
করছে বহন অংস।

আর ডরি না ভয় করি না
বীণায় তুলি ঝংকার,
বাঁচবো ক’দিন এই তো দু’দিন
কণ্ঠতে রব ওংকার।

বিন্দু থেকে সিন্ধুতে হয়
সাগর নদী সর্জন,
ক্ষুদ্র আমি বিন্দুতে নই
সিন্ধুতে দেই গর্জন।

৪২।
সুখের খোঁজে
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন
মালঝাঁপ পয়ার
অক্ষরবৃত্ত ছন্দ (৮+৬)

উঠে রবি আঁকি ছবি লিখে কবি ভাই, 
প্রভু দ্বারে বলি তাঁরে জ্ঞান ধারে চাই।
যথা তথে চলে পথে স্বর্গ রথে যাবো,
হৃদে এঁকে নাহি বেঁকে মন থেকে পাবো।

মিলে মিশে নয় বিষে শান্তি শীর্ষে রই,
পাড়া প্রতি বেশি অতি উঁচু নতি নই।
বেসে ভালো পেয়ে আলো নূর জ্বালো সব,
মুখে মুখে সুখে দুখে  রাখো বুকে রব।

হাত তুলি দুখ ভুলি সব কুলি পার,
নাই ভবে কেউ সবে খোদা হবে তার।
তুমি আমি মেয়ে স্বামী কেউ দামি নয়,
মৃত্যু পরে গোর ঘরে কর্ম তরে জয়।

কবি হয়ে লিখি সয়ে দুখ লয়ে মনে,
কষ্ট গাঁথা ছেঁড়া কাঁথা সঙ্গী ব্যথা সনে।
কলমেতে লিখি চেঁতে সমাজেতে দুখ,
কষ্ট যদি নিরবধি ভরা নদী সুখ।

লিখে লিখে যাই শিখে চারিদিকে মন,
ভালো লাগে মনে জাগে কাটে বাগে ক্ষণ।
ভালোবাসি কাছে আসি বাজে বাঁশি সুর,
এই বুঝি অল্প পুঁজি সুখ খুঁজি দূর।

৪৩।
সাহসই জয়
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

আঁধার রাতে চন্দ্র হাসে
তিমির হলে কীসের ভয়?
ডাণ্ডা হাতে মুষ্টি ধরে
অন্ধকারে চলতে হয়।

একটু পরেই উঠবে যে চাঁদ
ভরবে আলোয় জগতময়,
আঁধার দূরে দীপ্ত শিখা
জ্বলবে আলোর হবেই জয়।

সূর্য হাসে মেঘ-আড়ালে 
ভয় কোনো তোর মনের মাঝ?
ঝড়ের পরেই শীতল হাওয়া
এই তো মহান প্রভুর নাজ।

দুখের পরে সুখের দেখা
আল্লাহ তা’লার দু’টোই দান,
ধৈর্য ধরে রবকে স্মরে
চললে পায় তার প্রতিদান।

আসলে বিপদ সাহস বুকে
বাঁধতে হবে বুকের বল,
সফলতা আসবে তবেই
মুছতে হবে চোখের জল।

৪৪।
রমজানের কোলাহল
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

আল্লাহ মহান বান্দার লাগি কতই মেহেরবান!
বারেবারে বছর পরে দেন মাহে রমজান।।
বান্দা যে তাঁর মহাপাপী
হয় যেন তাই অনুতাপী,,
জাগ্রত হও মুমিন সকল ওহে মুসলমান!

আল্লাহ মহান বান্দার লাগি কতই মেহেরবান!
বারেবারে বছর পরে দেন মাহে রমজান।।

সেহরি খাবে রাখবে রোজা করবে পাপের মোচন,
মুখের পরে থাকবে সদা সুশ্রী মুখের বচন।।
ওই কালিমা নামাজ রোজা
দূর করিবে পাপের বোঝা,,
বন্দি ঘরে ক্রন্দনে তাই আজাজিল শয়তান।

আল্লাহ মহান বান্দার লাগি কতই মেহেরবান!
বারেবারে বছর পরে দেন মাহে রমজান।।

এই মাসেতেই কদরের রাত হাজার মাসের সেরা,
বান্দা অবুঝ বুঝো না ক্যান রহমতে তাঁর ঘেরা।
এসো সবাই দলে দলে
রমজানেরই কোলাহলে,,
শুদ্ধ করে আত্মাতে এক গাই রবেরই শান।

আল্লাহ মহান বান্দার লাগি কতই মেহেরবান!
বারেবারে বছর পরে দেন মাহে রমজান।।

৪৫।

হিমেল সকাল
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

এসেছে হিমেল জ্বালা শিশিরের মেঘ,
থরথর কাঁপুনিতে শীতের উদ্বেগ।
নিশি কাটে রাত শেষে  ঘন কুয়াশায়,
বিছানায় শুয়ে শুয়ে চাদরে মুড়ায়।

খুব ভোরে ঘুম ভাঙে বিহগের ডাক,
খোকা বাবু জেগে ওঠে মায়ে বলে থাক।
উঠিছে সুরুজ পুবে ঊষার আলোয়,
কুয়াশায় ঢাকা আছে কিছুটা কালোয়।

দুই গালে চুমু দিয়ে মাতা কয় শীত!
ঘুম পাড়ো কিছুক্ষণ গাই আমি গীত।
ঠাণ্ডা যদি লেগে যায় খকখক কাশ,
কুজ্ঝটিকা চারিদিকে আঁধারে আকাশ।

চতুর খোকায় বলে এ কী বলো মাতা!
ফুলগুলো ফুটে আছে ঝরে পড়া পাতা।
সুরুজের আলো দেখো প্রভাতের ক্ষণ,
মন ছুটে যেতে চায় বাহিরে এখন।

দেখো না পাখিরা ডাকে কিচিরমিচির,
সুমধুর গানে সুর কী শোভা রুচির!
এখন তো রাত না মা আলোকিত ভোর,
আর ঘুমে না থাকিবো খোলো খোলো দোর।

৪৬।

অভিনয়ের চাল 
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

যাহারা যখন উচ্চে অনেক
তাহারা ভুলে যে নিম্নদিক,
তেল থাকে যার মাথার উপর
নজরদারির চোখ সেদিক।

মূল্যটা খুব তাহাদের হয়
মুখের ভাষার অনেক দাম,
নাহি দেখে হায় চোখের তারায়
যাদের দেহের ঝরছে ঘাম।

মুখে শোভা পায় মানবতার সে
কল্যানকামী জনসেবার,
বারেবারে ভাই মিনতি করেও
পায় নাকো কেউ দেখা আবার।

দাপটে চলন গর্ববোধের
অর্থশালীর পেছনে ধায়,
অসহায় যারা নাই ক্ষমতায়
তাহারা কি তার নাগাল পায়?

উচ্চে আসন বজ্রে ভাষণ
জনকল্যাণে আত্মদান,
বাস্তবে হায় ধারে কাছে নাই
কী চমৎকার মুখ-জবান!

৪৭।

মিথ্যাবাদী
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

গুরুজনে যাহা কয় তাহা কিছু ঘটে,
মিছা শুধু পাপ নয় অভিশাপও বটে।
মিছাতে বিনাশ হয়,হয় পরাজয়,
অবয়ব ধন মন তিলেতিলে ক্ষয়।

বিশ্বাসে আঘাত হানে অবিশ্বাস জন্মে,
অনুতপ্ত হয়েছে সে বুঝেছে যে মর্মে।
মিথ্যাবাদী মহাপাপী সকলে তা জানে,
জেনে-শুনে হে কপট! ছুটো তার পানে।

ধর্ম কর্ম সবই করো মুখে মহা বাণী
তব আচরণে ঝরে কারো চোখে পানি।
নীরবতা থাকে তারা,থাকে চুপচাপ,
পারে না ক্ষমতা বলে সয় যে আঘাত।

ছলাকলা করে আর কতদিন যাবে?
আজ হোক কাল হোক এর সাজা পাবে।
নাই যে রেহাই তার পাবে নাকো ক্ষমা,
অপরের চোখে জল পাপ হবে জমা।

নাহি পাবে এক দিন তাকে কভু খুঁজে,
আঁখিজলে ভেসে যাবে আধা চোখ বুজে।
পরিশেষে তপ্ত মনে হা-হুতাশে রবে,
পাপ-কালি ঘিরে রবে অমানিশা নভে।

৪৮।
পাঠশালা
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

চল্ ছুটে যাই পাঠশালাতে
বই খাতা আর কলম হাতে,
শিক্ষাগুরুর শিক্ষা নিতে
গড়তে জীবন শক্ত ভিতে।

জ্ঞানের প্রদীপ থাকবে সাথে
জ্বলবে আলো গহীন রাতে,
পাখিরই ডাক ভোর প্রভাতে
চোখ বুলাবে বইয়ের পাতে।

উঠবে রবি পুব গগনে
আঁধার দূরে সুখ লগনে,
রাখবে সবে খুব স্মরণে
কাঁদবে যে লোক তোর মরণে।

পণ করে যা শিখবে ত্বরা
শিক্ষা ছাড়া বেঁচেও মরা,
জীবন রোগে শোকে জরা
এই জ্ঞানই দূর করে খরা।

৪৯।
সত্যের দাস
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

সত্য বলি সত্যে চলি সত্যেরই দাস আমি,
সত্য পথে
মুক্তি মিলে
শুদ্ধতা পায়
আত্মা দিলে
সত্যতে খোশ অন্তর্যামী সত্য সবার দামি।

দ্বীনের পথে চলবো যে তাই পণ করেছি আজি,
আল্লাহ নবীর
প্রিয় বাণী
মানলে মুমিন
সবাই জানি
এই পথে হায় মরণ এলেও ধরবো মরণ বাজি।

পরকালের শান্তি পেতে চাই না হতে সুখী,
অল্প ক্ষণের
এই দুনিয়া
লাভ কী মিছা
বীজ বুনিয়া
লোভের মায়ায় পড়লে সাধের জীবন বিপদ’মুখী।

৫০।
অল্প হলেও দামি
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

ওজন বেশি অনেক দামি এমন কথা নয়,
কিনতে গেলে স্বর্ণ-হীরা লোহার ভিটা ক্ষয়।
অনেক বড়ো শক্তিশালী ভুল ধারণা এই,
ট্যাংরা মাছের বিঁধলে কাঁটা ভীষণ জ্বালা সেই।

মাকাল ফলের ভেতর কালো উপরে হয় লাল,
মূল্যবানে নয় তো সে ফল সবার কাছেই কাল।
অর্থ আছে ভুরি ভুরি নাই বা তারই জ্ঞান,
মর্যাদাহীন সে সমাজে কেউ করে না ধ্যান।

মূর্খ লোকে জগৎ ভরা মূল্য কি তার হয়?
সৎ জ্ঞানী এক সর্বসেরা ভুবন করে জয়।
ডিগ্রিধারী শিক্ষিত লোল লক্ষ কোটি হয়,
কোরআনের ওই একটা হাফেজ তাঁর সমমান নয়।

নীলাম্বরে তারার মেলা কেউ থাকে না সাথ,
চন্দ্র মামা একাই করে আলোকিত রাত।
বিন্দু বিন্দু জলের দ্বারা সাগরেরই তল,
ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বালুকণায় মহাদেশের বল।

একটু করে একটু করে পাহাড় সমান পাপ,
একটু প্রভু করলে রহম সব হয়ে যায় মাফ।
বিশাল বড়ো মানব দেহের ছোট্ট একটা প্রাণ,
বের হলে ভাই পারবে না কেউ ফিরিয়ে দিতে জান।

৫১।
মৃত্যুর শঙ্কা   
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

দু’দিনের দুনিয়ায় – কান পেতে শুনে হায়
কাঁপে বুক থরথর,
এই আছি এই নাই – ভবে সব মিছা ভাই
সকলেই হবে পর।

ফুরাবে যেদিন দম – ক্রন্দন হরদম
স্বজনের আহাজারি,
অথর দেহটা শব – শোকের মাতমে রব 
কবরটা হবে বাড়ি।

ভালো কাজ করে গেলে – চিরদিন রবে দিলে
হবে না তা কভু ম্লান,
দ্বীন ‘পর যোদ্ধার – সম্মান শ্রদ্ধার
অক্ষয় জয়গান।

হয় যদি দীন হীন – স্মরণের অমলিন
সততায় নাম যাঁর,
ক্ষয় নয় অবদান – সে-ই তো চির মহান
শীর্ষতে ঠাঁই তাঁর।

বিধাতার ইশারায় – খুব সুখী এ ধরায়
যদিও হয় দুঃস্থ,
শান্তির ছায়াতলে – দুঃখকে পায়ে দলে
তবুও রয় সুস্থ।

এ তো এক নিয়ামত – প্রভুর-ই রহমত
থাকিলেই রব খোশ,
এসো তাঁর গান গাই – নামাজ কালামে তাই
হাসিল করিয়া তোষ।

যম এলেও স্বস্তি – নাহি হারায় অস্তি
ইহ-পরকালে ভাই,
মানুষের ক্ষতি নয় – নয় কোনো অপচয়
মুমিনের সাজা নাই।

৫২।

জীবন বড়ই কঠিন
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

দিনের শেষে রাত্রি আসে
সূর্য উঠে ভোরে,
জীবন বড়ই কঠিন ভবে
বিপদ আসে দোরে।

সরল লোকের দুঃখ বেশি
মুক্তি নাহি মিলে,
অন্তরে তার রক্ত ক্ষরণ
শান্তি না পায় দিলে।

রঙিন ভুবন রঙের খেলায়
যাচ্ছে সবই ভুলে,
সত্য সদা গোপন রেখে
মিথ্যাকে নেয় তুলে।

ভাবে না কেউ মিথ্যা আনে
ধ্বংস জীবন কুলে,
ক্ষণিক সুখের মায়ায় পড়ে
যাচ্ছে হেলে দুলে।

পাপের বোঝা হচ্ছে ভারি
যাচ্ছে টুটে পুণ্য,
ষোলোআনা এই জীবনের
বারো আনাই শূন্য।

এমন করে আর কতদিন
চলবে ভবে বলো ?
থাকতে সময় দ্বীনের পথে
ভাই বোনেরা চলো।

জন্ম নিলেই হবে মরণ
মৃত্যুটা খুব নিকট,
অপকর্মের জীবন নাশের
আওয়াজ হবে বিকট।

আজকে আছি কালকে তো নাই
পালাক্রমে সবে,
তুমি আমি আমরা সবার
কবরে ঠাঁই হবে।

আসবে না হায় সেদিন কভু
সকল কিছুই বাজে,
অল্প আয়ু শেষের পরে
লাগবে না কেউ কাজে।

পরকালের সুখ পাওয়াটা
নয় তো সহজ লভ্য,
রঙের ভুবন নয় চিরদিন
যুবা বৃদ্ধ নব্য।

৫৩।
কেমন মুসলমান ?
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

তোমার ভাইয়ের রক্ত চুষে
নিচ্ছে যারা প্রাণ,
গাইছো ভবে তাদের জয়ে
তাদেরই জয়-গান।

যেই দেশেতে হচ্ছে না ওই
আযান ধ্বনি আর,
নির্যাতিত মুমিন সকল
দুঃখে একাকার।

পড়লে নামাজ হয় যে নারাজ
বক্ষে ছুঁড়ে তির,
বুক ফাটে হায় মুখ ফোটে না
চোক্ষে ঝরে নীর।

শত্রু সংঘাত অঙ্গে আঘাত
ভাঙে মসজিদ ঘর,
কাফের তারা বিবেক হারা
চিত্ততে নাই ডর।

তাদের প্রেমে মজনু সেজে
মারছো নিজের ভাই,
রেষারেষি দেশ-বিদেশী
সম্পর্ক ঠিক নাই।

দুনিয়া দু’দিন নামাজ বিহীন
শান্তি না পায় দিল,
ইহুদিদের সঙ্গে তবে
ক্যামনে করো মিল?

ওহে মানব তোমরা বলো
কেমন মুসলমান?
দ্বীনের কালাম নাই যে সালাম
আল্লাহ মেহেরবান।

৫৪।

ভালো মন্দ
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

সমাজের লোকগুলো
সব ভালো নয়,
ভালোতে টাটায় কেহ
ভালো কথা কয়।

কারো কাছে খুব ভালো
কারো কাছে আধা,
গালি দেয় মুখে যারা
তারা বড় গাধা।

সামনের পথে যেতে
আসবেই বাধা,
সেই বাধা পায়ে দলে
যাও করে সাধা।

খারাপের দিকে কভু
কান দিও নাকো,
সততার গুণ ধরে
এক রব ডাকো।

রাগ করে কাজ থেকে
নাহি থাকো দূরে,
সফলতা পাবে তবে
এ ভুবন ঘুরে।

৫৫।

শিক্ষার অভাব  
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

শিখতে পারোনি ভদ্রতা তুমি
শিক্ষা সনদ হাতে,
তব আচরণে রুষ্ট সমাজ
গরিবেরে মারো ভাতে।

কাহাকে কিভাবে বচন শুনাবে
কিভাবে বলবে কথা?
ডিগ্রি ধারণ করিয়াছো তবু
হয়নি তোমার শেখা।

অন্যের মানে আঘাত হানিয়া
মস্ত নিজেকে ভেবে,
নিচু হীন যারা পদচাপে তারা
দিচ্ছো মাটিতে দেবে।

আকাশ পাতাল মধ্যখানের
শূন্যতে বসবাস,
কেরোসিন শিখা চন্দ্রের দেখা
পাতালের করো নাশ।

নাহি ভাবো কভু ঈশ্বর প্রভু
ক্ষমতার বলে চলো,
স্বার্থ যেখানে রও তো সেখানে
অর্থের মোহো ঢলো।

পাতালে তোমার ভিত গাড়া ঠায়
তার উপরেই ঘর,
ইট পাথরের রড সিমেন্টে
ভাবছো লাগে না ঝড় ?

ভেবে নিও ভাই গরিব দুখীর
রক্ত ঘামের ভিত,
শক্ত হস্তে রাখিয়াছে ধরে
যুগ যুগ ধরে নিত।

পতাল কখনো কাঁপিয়া উঠিলে
আসিবে ভীষণ বেগ,
ভাঙবে তখন শখের দালান
হারাবে আহার ডেগ।

মর্যাদা জেনো ওদেরও আছে
ঠিক তোমাদের মত,
নাই শুধু হায় জেব ভরা তাই
শিরখানা হয় নত।

তাদেরও দেখো সুনজর দিয়ে
তারা তোমাদের বল,
বিবেকের জ্ঞানে চোখ বুজো ধ্যানে
আসবে চোখের জল।

৫৬।
পুরুষের জীবন   
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

জীবন বড় কষ্টের, সে তো বড়ই কষ্টের! 
বাঁচার তাগিদে পেটের দু’মুঠো দানা-পানির  নিমিত্তে কঠোর পরিশ্রমী!
পালতে হবে সংসার বৌ বিবি বাচ্চা আর
সামলাতে হবে হাজারও ধাক্কা,
তাই তো খেয়ে না খেয়ে অন্যর জন্য নিজেই সংযমী।

রোদ বৃষ্টির মাঝে দিন-রাত সকাল সাঁঝে
আপ্রাণ চেষ্টায় বিভোর থাকে স্বপ্ন দেখে দু’টি চোখে,
ছেলে আমার হবে বড়, বড় হবে কন্যা, সুখে রবে অর্ধাঙ্গিনী,
নিজের পায়ে দাঁড়াবে বয়ে যাবে সুখের বন্যা
আশার পানে চেয়ে থাকে মলিন মুখে।

নিজের গায়ে ছেঁড়া জামা, ছেঁড়া লুঙ্গি, ঘাড়ের গামছাখানাও ছেঁড়া!
নাই কোনো ভাবনা নিজের জন্য,
কীভাবে পাবে? ছেলে সন্তান, কন্যা বিবি
একটি সুন্দর জামা কাপড়, তবেই হবে সে ধন্য, এই ভাবনায় অনন্য।

দিন শেষ বেলা গড়ে সন্ধা নামে পড়ন্ত দুপুরের পর,
ক্লান্ত শরীর তপ্ত দেহ তবুও হামাগুড়ি দিয়ে চালিয়ে যায় নিজের কর্ম,
পরিবারের তরে সে অকাতরে নিজেকে বিলীন করে
ভেবে নেয় এটাই তার ধর্ম,
বুঝে না হায়! বুঝে না কেউ তার মর্ম!

ছেলেমেয়ে মানুষ হয়, সে বার্ধক্যে উপনীত হয় জীবনের সুখ আহ্লাদ বিসর্জনে,
একটি পরিবারের জন্য জীবন যৌবন সকল স্বার্থ বিলুপ্ত করে নুয়ে পড়ে পরাজিত হয়ে রণাঙ্গনে।

কী পেলো সে শেষ জীবনে? শুধুই দীর্ঘশ্বাস!
হায় হায়! শুধুই দীর্ঘশ্বাস!
ছেলে বলে মেয়ে বলে বাবা তুমি কী রেখেছো আমাদের জন্য?
বাবা করুণ স্বরে বলে নেই কিছু আঁখিজলে
আজ আমি হয়েছি পূর্ণ, তবুও জানি এ জীবন খানি লাগে যেন শূন্য!

৫৭।
মায়ের জন্য দোয়া
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

ধন্য জীবন ধন্য ভুবন
মা জননীর জন্য,
জীবনধারণ মায়ের কারণ
অবনী ‘পর গণ্য।

মায়ের কাছে এ প্রাণ বাঁচে
জন্মেছি তাঁর কোলে,
ভালোবাসা প্রথম ভাষা
শিক্ষা মাতার বোলে।

এই তো শুরু শিক্ষা গুরু
মা হলো তাই প্রথম,
শিশুকালে ভোর সকালে
সেই ভয়ে গা থমথম।

মায়ের আদর স্নেহের চাদর
চুমাতে গাল ভরেন,
বিপদমুখী খুব যে দুখী
আগলে বুকে ধরেন।

কেউ হবে না তাঁর তুলনা
মায়ের মত কভু,
শূন্যতে মা আর ডাকেন না
জান্নাতে দেন প্রভু।

৫৮।
প্রকৃতির ভাবনা
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

দুই দু’টি ডানা মেলে হাওয়ায় ভাসে 
বিহগের ঝাঁক উড়ে দূর আকাশে।
মহান প্রভুর গায় গুণগান শান,
চারিদিকে ছড়ে পড়ে মৃদু বাতাসে।

আল্লাহু আকবার ধ্বনির আওয়াজে,
রব রব কলতান কণ্ঠে বাজে।
গগনের নিচে ঠিক মেঘেরা আসে,
সাগর পাহাড় নদী ঝর্ণা হাসে।

গাছপালা উদাসীন এ শোর শুনে,
সিজদায় নুয়ে পড়ে তসবী গুনে।
প্রকৃতির এ খেলায় বিভোর ভুবন,
প্রভুর মাশুক লাভে এইতো হবন।

গভীর বনের যত পশুপাখি সব,
সমস্বরে যায় গেয়ে রব ইয়া রব!
দুই কানে ভেসে আসে দূর থেকে দূর,
বুঝানো তো নাহি যায় কী দারুণ সুর!

পৃথিবী হঠাৎ করে থমকে দাঁড়ায়,
ঘড়ির কাঁটাও পা সমুখে না বাড়ায়।
অনুভবে নিরালায় আমি নিশ্চুপ,
মাটিতে দাঁড়িয়ে দেখি আকাশের রূপ।

৫৯।
বাদলা দিনে
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

বাদলা দিনে নাইকো বাদল
পাগলা হাওয়া শুরু,
ইচ্ছে করে উড়তে শুধু
মনটা উরু উরু।

ইচ্ছে ডানা পাখনা মেলে
ওই আকাশের পানে,
দূর অজানায় হারিয়ে যাবো
মিষ্টি মধুর গানে।

আকাশ নীলে সাগর তীরে
উড়বো হাওয়ায় ভেসে,
সাত সমুদ্র তেরো নদী
তেপান্তরের দেশে।

ইচ্ছে গুলো মন গহীনে
উথাল-পাথাল করে,
ছুটির দিনে আব্বু ঘরে
মন কাঁপে তাই ডরে।

শুনবো না আর নিষেধ কারো
আম্মু তুমি বলো,
আমার পাখায় ভর করে মা
তুমিও সেথা চলো।

৬০।
নবীর প্রেমে মগ্ন মন
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

মনের মাঝে প্রেম জেগেছে 
প্রেম জেগেছে মনে, 
একটা আশা করবো দেখা
নবী তোমার সনে।

মন জেনেছে খোঁজ পেয়েছে
মদিনাতেই থাকো,
উম্মতেরি জন্য তুমি
রব কাঁদিয়া ডাকো।

হায় অভাগা নাইকো টাকা
ক্যামনে যাবো সেথা?
তাইতো মনে একলা বনে
ভীষণ জ্বালা ব্যথা।

দয়াল নবী ধ্যানের ছবি
স্বপ্নে দিও দেখা,
কাণ্ডারী কে?  তুমিই যে সে
পাই যে ঘেঁটে ফেকা।

এক নজরে দাও না দেখা
এই আকুতি করি,
তোমার নামে প্রভাত সাঁঝে
দুরুদ খানা পড়ি।

তোমার প্রেমে মগ্ন থাকি
নয়ন মাঝে বারি,
তোমার নামে দুরুদ পড়ে
মরতে যেন পারি।

৬১।
প্রেমই ঈশ্বর
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

জগৎ কৃষ্টি প্রেমের সৃষ্টি
আদি থেকেই অনন্ত,
প্রেমবিহীনে জীবাত্মা লীন
অঙ্গারে তা জ্বলন্ত।

বীর্য থেকে ভ্রণ সূত্রপাত
মাতৃগর্ভ ধারণে,
দু’টি আত্মার তনদ্বয়ে
প্রেম-শৃঙ্গারের কারণে।

অবলীলায় ভবলীলা
তিলেতিলে ধ্বংসস্তূপ,
এ প্রেমহীনে অশান্তির এক
বিভীষিকার করুণ রূপ!

নভস্পৃক মেঘমালা
বৃষ্টির রূপে মৃত্তিকায়,
প্রেমাবেশে দ্রুতবেগে
ঝরে পড়ে দৃপ্ততায়।

ধ্যানে ধ্যানে পরিশুদ্ধ
জীবাত্মা হয় পবিত্র,
নামাজ-রোজা, হজ্জ-যাকাতে
রবের সঙ্গে সৌমিত্র।

প্রেমে ঈশ্বর প্রেমে আল্লাহ্
প্রেমে তুষ্ট ভগবান,
আত্মায় আত্মার মিলনমেলা
পরমাত্মায় হয় কোরবান।

৬২।
মানবতার খোঁজ   
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

বিশ্বভরা মানুষ আছে
মানবতা কই?
অত্যাচার ও নিপীড়নে
বন্ধ চোখে রই।

জোরের লাঠি শিরের ‘পরে
নিত্যদিন হয় খুন!
কই পাবো আর মানবতা
কই পাবো তার গুণ?

দেখবো কত যুদ্ধ শোষণ
রক্ত ক্ষরণ হায়!
আমেরিকা করছে শাসন
জবরদখল তায়।

স্বার্থে সবাই বিভোর আজি
মিথ্যাবাদীর জয়,
সত্যবাদী সৎ সাহসী
বদ্ধ ঘরে রয়।

কষ্ট জ্বালা বুকের দহন
যেথায় গিয়ে পাই,
না করে ভোজ রোজ করি খোঁজ
মানবতা নাই।

৬৩।
প্রভুর প্রেমেই সুখ
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

অল্প দিনের এই দুনিয়া
আজ আছে তো কালকে নাই,
মিছা মোহের এই তাড়না
ভুলতে হবে সবকে তাই।

যাঁর আদেশে এলে ভবে
রব সমীপে পণ করে,
রবের বিধান হইবে নিধান
শক্ত হাতে দ্বীন ধরে।

সৃষ্টিকারীর লক্ষ্য যে এক
সকল জ্বিন আর ইনসানে,
ইবাদতে মগ্ন রবে
বর্ণনা আল-কোরআনে।

রঙ্গ লীলায় গাফেল হয়ে
রইছো কেনো ভুল করে?
পাপের সাজা পাইতে হবে
রোজ হাশরে শূল ‘পরে।

মহান প্রভুর পড়লে প্রেমে
জীবনে ভাই ফুল ফোটে,
ইহকাল ও পরকালেও
সর্বকালের সুখ জোটে।

৬৪।
নীতির ইতি
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

নীতি নীতি কইরে নীতি ঝড়ে গেছে উড়ে,
তাই নরকের অনল দাহে ওই জনতা পুড়ে!
সমাজপতির বিচারপতির বিবেকটা আজ ইতি,
বজ্রধ্বনি মুখের ভাষণ নাই দেশে আর নীতি।

লোকদেখানো সমাজ সেবক বাস্তবে নাই প্রীতি,
নীতির কথা বলতে গেলে শুধুই এখন স্মৃতি।
যার গায়ে খুব শক্তি আছে জাতির প্রধান নেতা,
আমজনতার নাই অধিকার বাংলাদেশের ক্রেতা।

বাবার সামনে ধর্ষণ মেয়ে ছেলের সামনে মাতা,
নাই ক্ষমতা প্রতিবাদের কলঙ্কিত ভ্রাতা।
রাহাজানি খুনখারাবি নিজের স্বার্থে সবাই,
ক্ষমতার বল প্রয়োগ করে দিন-দুপুরে জবাই!

দোষীরে কয় নির্দোষী সে করতে গিয়ে তালাশ,
প্রশাসনের এই নীতিতে সব অপরাধ খালাস!
নির্দোষীর হয় যাবজ্জীবন জেলখানাতে বন্দি,
ঘুষের টাকায় হয় মিতালি অপরাধীর সন্ধি।

মিথ্যাবাদী মুক্তি সে পায় শয়তানি তার হাসি,
বিনাদোষে জেল খেটে হয় সত্যবাদীর ফাঁসি।
সংবিধানে নাইকো লেখা আল-কোরআনের বিধান,
ভাবছে তারা অবৈধতার অবিনশ্বর নিধান।

অত্যাচারে নিপিড়ীনে দিশেহারা মানুষ,
অসৎ যারা আত্মহারা উড়ায় সুখে ফানুস।
খাচ্ছে তারাই লুটেপুটে দেশের নেতা ওরা,
অসহায় দীন খাদ্য বিহীন জীবন নদীর খরা।

রক্ষক যদি ভক্ষকই হয় নীতির বিবেক মরা,
মিথ্যা আশা শাসন কায়েম মিথ্যা এ দেশ গড়া।
আসবে কবে নীতির শাসন শান্ত হবে ধরা,
দেশটা কি ফের স্বাধীন হবে রক্ত দিয়ে গড়া?

৬৫।
সোনার দেশ
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

কত সুন্দর চলন বলন
কত সুন্দর ধরা!
তার থেকে এ দেশটি আমার
রূপে গুণে ভরা।

আকাশ বাতাস সাগর নদী
চন্দ্র সুরুজ তারা,
পাহাড় থেকে ঝর্ণা বহা
এ কী দারুণ ধারা!

এই দেশেরই মৃত্তিকাতে
সোনার ফসল ফলে,
কল কলকল শব্দ করে
পদ্মা নদীর জলে।

পাল তুলে নাও জেলেরা বায়
নজর কাড়া দৃশ্য,
কৃষ্য মাঠের শস্য শ্যামল
মনোলোভা তৃষ্য।

এই দেশেতেই জন্ম নিয়ে
মায়ের কোলে পুষ্ট,
এমন এ দেশ আর কোথা নাই
যা দেখে হই তুষ্ট।

৬৬।
স্বদেশ প্রেম
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

সোনা থেকেও খাঁটি রে ভাই
বাংলাদেশের ভূমি,
তার উপরে এ শির নোয়াই
তার উপরেই ঘুমি।

জন্ম নিয়ে ধন্য হলাম
ধন্য জীবন খানি,
বিশ্বসেরা এ দেশ আমার
সকল দেশের রানি।

সুজলা আর সুফলা ভূম
সোনা ফলে তাতে,
দিঘির জলে জোছনা হাসে
পূর্নিমারই রাতে ।

প্রকৃতির এই গাছ-গাছালির
সবুজ শ্যামল ছায়া,
শান্তি শীতল এ মন জুড়ায়
মায়াবতীর মায়া।

পাখ-পাখালির ডাকে হাসে
ঊষার আলোয় রবি,
কল্পনাতে আঁকতে এ রূপ
আজকে হলাম কবি।

৬৭।
খুকুমণির ভোর
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

ডাকে পাখি খোলো আঁখি
ভোর বেলা হলোরে,
বই হাতে ঐ পাতে
অ আ ক খ বলোরে।

আরবিটা মিঠা মিঠা
আলিফ বা তা শা খা,
কোরানের বানানের
লাম মীম দাল হা।

এ বি সি ডি, ই জি ও পি
খাতাভরে লিখবে,
বড় হবে যবে তবে
ইংরেজি শিখবে।

অংকতে ঠুনকোতে
না রাখিবে ভয়টা,
হলো এ কী বলো দেখি
এক তিনে কয়টা?

দমড়ে গা হাইতে হা
খুকুমণি জাগলো,
মুখ ভারে হাত আড়ে
একটু সে রাগলো।

৬৮।
সাবধান!  অরিত্রিক কবিতা
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

যত করো অনাচার – মারো যত বাণ,
পাপতাপ অবিচার – হবে খানখান।
ক্ষমতার অহমিকা – পরিণতি চূর,
বিনাশের এ ভূমিকা – নয় খুব দূর।
যাহা পারো করো তুমি – দেমাকেতে ভর,
পাপাত্মার পদচুমি – নাহি করো ডর!
আজ নয় কাল হোক – পাবে সাজা তার,
অনুতাপে মনে শোক – বুকে হাহাকার!

দু’দিনের দুনিয়ায় – আয়ু খুব কম,
বাঁচা মরা এ ধরায় – আসিবেই যম।
দ্বীনে এসে সৎ কাজ – না করিলে ভাই,
হারাবে রবের নাজ – নরকেতে ঠাঁই।

৬৯।
আমার দেশের চাষি
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

সময় ফজর নাইকো ওজর
নামাজ পড়া হলে,
ঊষার আগেই লাঙ্গল ও মই
হালের ক্ষেতে চলে।

রা রা রা রা, র র র র
ডানে কিংবা বামে,
কপাল জুড়ে ঘর্ম ঝরে
কাদা মাটির ধামে।

এমনি করে দিবানিশি
শ্রম দিয়ে যায় ক্ষেতে,
উঠবে ফসল ভরবে গোলা
এই আশাতেই মেতে।

বাঁচবে নিজে বাঁচবে এ দেশ
থাকবে মানুষ ভালো,
দীন-ধনীদের আঁধার ঘরে
জ্বলবে দীপের আলো।

আল্লাহরই দান ক্ষেত ভরা ধান
একটু হাসি ফুটে,
নবান্নের ক্ষণ আনন্দে মন
দুঃখ জরা টুটে।

হাজার কষ্ট বক্ষে ধারণ
স্বার্থত্যাগী তারা,
মর্যাদা নাই তবু তাঁদের
জীবন স্রোতের ধারা।

আমার দেশের চাষিরা ভাই
সোনার চেয়েও খাঁটি,
মাটির মানুষ মৃত্তিকাতেই
গড়ে তাঁদের ঘাঁটি।

৭০।
জাগো হে তরুণ
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

বিভেদ ভাঙিয়া পাহাড় ডিঙিয়া
তুঙ্গে উঠোরে তরুণ,
ক্রোধের দাবাতে হিংস্র থাবাতে
সমাজে কাহিনী করুণ!

বাঁচার তাগিদে আকুতি নিবেদে
আঁখি নীর কত ক্ষরণ!
নাহি পায় ত্রাণ দেহ বলিদান
মাতা বোন নারী হরণ।

জুলুৃমের বাণে মরে দীন প্রাণে
হায় নিদারুণ হাভাত!
আর কতকাল করুণ এ হাল
দোষ বিনাদোষ আঘাত।

বাজিয়া ডঙ্কা দলিয়া শঙ্কা
আনিতে রাঙ্গা প্রভাত,
জাগো হে তরুণ! তোমরা অরুণ
ঘাত-প্রতিঘাত সঙ্ঘাত।

আসিবেই নীড়ে সুখ ধীরে ধীরে
ঘাঁটিতে শক্ত বুরুজ,
ঊর্ধ্বগগনে দীপ্ত ধমনে
উঠিবে রাঙ্গা সুরুজ।

৭১।
লোপাট
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

হায় কোন্ জামানা!
                 সুদ ঘুষ না মানা
অপকামে নিত্য
        লোলুপের চিত্ত।

সাধু বেশে দরবেশ
            মনে তার পোষা দ্বেষ
অভিনয়ে নীতি প্রীতি
            হয় নাকো কভু ইতি। 

চারিদিকে অন্যায়
            ন্যায় পথে লোক নাই
ক্ষমতার দাপটে
            লাথি মারে কপাটে।

রাহাজানি শুধু খুন
                জনতার মনে ঘুণ
ব্যবিচারে ভরপুর
               হরে নর নারী চুর!

ভর্ৎসনা বিদ্রুপ
             লজ্জাতে থাকি চুপ
প্রতিবাদে নেই কেউ
               ধ্বংসের নদে ঢেউ।

বিবেকের কাঠগড়া
                  নিশ্চুপ ঘুণে ধরা
নিশি চোর গুপ্ত
                   মানবতা লুপ্ত।

দেশ জাতি নিঃশেষ
             করুণে তা একশেষ
হায় হায় কী ললাট
          মা-মাটির এ লোপাট!

৭২।

মামার বাড়ি
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

আম কাঁঠালের সময় এলো
পাকা পাকা ফল,
তাই তো লোভে খোকার আসে
জিভের ডগায় জল।

ফোকলা দাঁতে চতুর খোকা
জৈষ্ঠ্য মাসের ক্ষণ,
মিষ্টি হেসে আঁচল ধরে
ভুলায় মায়ের মন।

মামার আছে বাগান ভরা
পেঁপে ডালিম আম,
বাতাবি লেবু  লিচু কলা
কালো কালো জাম।

তাল-তরমুজ  আনারস আর
কচি কচি ডাব,
মামার বাড়ি যাবে সে তাই
মায়ের সাথে ভাব।

৭৩।
হুকুমের দাস
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

হুকুমের দাস আমি হুকুমেই চলি,
আঘাতের বেড়াজালে হই কারো বলি।
কারণ ও অকারণে মোর শত দোষ,
অশালীন ভাষা চড় দিয়ে করে রোষ।

ধেয়ে আসে মার মার বলে কেউ শালা,
অসহায় বলে করি এ জ্বালা-ই মালা।
নাই টাকা জেব ফাঁকা খুব ছোট তাই,
পথের টোকাই ভাবে বুকে মারে ঘাই।

এইভাবে দিন যায় অশ্রু গড়ায়,
ভালোবাসা স্নেহ মমে না কেহ জড়ায়।
নাই মান-সন্মান নাই কোনো দাম,
শঙ্কা শ্রমের ফলে গায়ে ঝরে ঘাম।

ফাঁপরে কাঁপন উঠে ভীরু ভীরু মন,
রুধির ক্ষরণ ঝরে কৃশে রয় তন।
বুঝে না কেহই কভু যায় না সহন,
দোষহীন বুকে জ্বলে অনল দহন।

আজ যারা গা’র জোরে দীনে করো খুন,
অবয়ব ধন লীনে জ্বলবে আগুন।
ক্ষণিকের এ মালিক তোমরাও দাস,
সজাগ বিবেকে দেখো জাগরণে ত্রাস।

৭৪।
বিবেকের লোপ  (পেত্রার্কীয় সনেট)
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

প্রতিটি মানুষ ভবে হুকুমের দাস
রাজার আদেশে দেশ তিনি জাতিসংঘ
একজন হয় নেতা বাকি ভৃত সংঘ
এভাবেই কাটে হায় দিন সাল মাস।
কেউ তাই সুখী নয় দুখী হাহাকার
অগোচরে আঁখি নীরে ফেলে দীর্ঘশ্বাস
চাকরিটা যায় বুঝি মনে হাহুতাশ
গবেষণা করে পাই এই সমাচার।

তবুও বোধের টুট বিত্তশালী ভাই
অহং দাপটে চলে বিবেক হারায়
চিত্তে নাই মানবতা পশুর মতন,
গাড়ি বাড়ি এসি ফ্যান দশ তলে ঠাঁই
মারে লাথি বুকে যার দীন অসহায়
বিবেক বোধের ধিক না করি যতন।

৭৫।
নিপীড়িত দীন
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

ভালো মন্দ দু-ই করে সমাজেতে বাস,
কেউ করে সেবা ফের কেউ দেয় বাঁশ।
অভাব ভালোর বেশি মন্দটার নয়,
অসহায় যারা তাই আঁখিজল ক্ষয়।

রক্তের-ই ধারা বয় জনে জনে খুন,
নিপীড়িত জনগণ মনে ধরে ঘুণ।
হায় হায় এ কী হলো হে মহান প্রভু!
নাই কি এ ধরাধামে সুখ ভালে কভু?

আর কত বহিবে এ রুধির ক্ষরণ,
কত হবে দেশে আর মা-নারী হরণ!
“তোমার সমীপে চাই” নাই কেহ আর,
সঁপিলাম এ বিচার ওগো পরওয়ার!

এইভাবে কাটে দিন, দীন অসহায়,
নীরবে চোখের পানি সাগরে বহায়।
জালিমের বাহাদুরি চলে সদা ক্ষণ,
অবিচার নিপীড়নে জ্বলে পুড়ে মন!

কেঁদে কেঁদে আঁখি নীরে অবয়ব ক্লান্ত,
লাশ হয়ে রয় পড়ে যদিও তো জ্যান্ত।
এমন বেহাল দশা গরিবের হায়!
যেদিকে তাকায় তারা সাগর শুকায়।

তিলেতিলে মিসকিন আরো হয় ক্ষীণ,
ভাবে তারা দীন হওয়া পাপের এ ঋণ।
বেহালাল টাকাতেই জালিমের জয়,
ভাবে না কখনো ধন চিরদিন নয়।

৭৬।
জাগো হে দামাল!
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

মোদের দেশে ধর্ষকের ঠাঁই
চাই নাকো আর ভাই,
চাই না কোনো সন্ত্রাসী আর
হিংস্র খুনীর ঠাঁই ।

অত্যাচারী অত্যাচারে
ভাঙবে দীনের ঘাড়,
আর না সহে ভাঙো তাদের
মেরুদণ্ডের হাড়।

ধর্ষকেরা ধর্ষক হয়ে
ধরলে নারীর হাত,
শক্ত হাতে মুষ্টি ধরে
দাও ভেঙে বিষ দাঁত।

গর্জে ওঠো বঙ্গ দামাল
নাও ঈমানের বল,
চাই না কারো দেখতে চোখের
কষ্টে ঝরা জল।

গাড়ি বাড়ি অর্থ কড়ি
নয় কখনো ধন,
মানুষ হয়ে মানব সেবার
করতে হবে পণ।

কারো মুখে ফুটলে হাসি
ফুটবে জীবন ফুল,
আল্লাহ রাজি রাসুল খুশি
পাবে সুখের কূল।

সত্য ন্যায়ের হুঙ্কারে সব
তুলো মনের জোর,
ফুটবে কলি গাইবে অলি
আসবে রাঙা ভোর।

৭৭।
রুবাইয়াত গুচ্ছ
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

(১)
দখিন হাওয়া বইতে থাকে বিকেল বেলা নদীর ধার,
দিনের শেষে ক্লান্ত মনে হয় বধূরা একাকার।
পল্লী গাঁয়ের কোমলমতি কন্যারা যে উড়ায় চুল,
সন্ধ্যা লগন গোধূলির রঙ দেখতে লাগে চমৎকার।

(২)
নৌকা মাঝি পাল তুলে যায় মাছ ধরিতে নদীর মাঝ,
হাল্কা ঢেউয়ে নৌকা দোলে কী অপরূপ নদীর সাজ!
সন্ধ্যা লগন আযান ফুঁকে মুয়াজ্জিনে মিনার পর,
নায়ের ‘পরে নামাজ পড়ে প্রার্থনাতে রবের নাজ।

(৩)

চন্দ্র মামা নীলাম্বরে দেখায় হাসি রাত্রিকাল,
ভাটিয়ালি গানের সুরে বায় মাঝিরা নৌকা হাল।
আকাশ ভরা তারার মেলা মিটিমিটি উঁকি দেয়,
মাঝ-নদীতে চন্দ্রালোকে মন হরষে ফেলে জাল।

(৪)
মা-ঝিয়েরা সকাল বেলা ব্যস্ত থাকে নানান কাজ,
নতুন বধূ ভোর-বিহানে ঘোমটা দিয়ে পায় যে লাজ।
মা যে ডাকে বৌমা এসো নাস্তা করার সময় হয়,
আনবে খোকা মাছের ঢাকি সেই যে গেছে কালকে সাঁঝ।

(৫)
সকাল বেলা খোকা এসে মা বলে দেয় জোরসে ডাক,
আম্মু তুমি বাইরে এসো মাথায় আছে মাছের ঢাক।
রাত্রি জেগে মাছ ধরেছি বেচতে যাবো বাজারে,
আনবো শাড়ী গয়নাগাটি ফুটবে মুখে খুশির বাক।

৭৮।
ছড়াক্কা গুচ্ছ
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

(১)
“ময়না পাখি”

আমার প্রাণের ময়না পাখি কোথায় করিস বাস?
কাটে না দিন রজনী হায়
তোর দেখা এই মন পেতে চায়
তুই বিনা দুখ মন কুরে খায়
ব্যাকুল হয়ে ডাকছি যে আয়
তুই ছাড়া এই জীবন আঁধার দুঃখ বারো-মাস।

(২)
“পড়তে বসো”

খোকন সোনা পড়তে বসো সঙ্গী করো বই,
শিক্ষা নিবে বই পড়ে তাই
শিক্ষা ছাড়া উন্নতি নাই
স্বর্গে যদি চাও পেতে ঠাঁই
জ্ঞানার্জনে শিক্ষাটা চাই
শিক্ষা হলো সর্ব চূড়ায় আরোহণের মই।

(৩)
“ছাত্রজীবন”

পাঠশালা যে ফুলের বাগান ছাত্রছাত্রী ফুল,
খেলাধুলা বই পড়া আর
ছেলেমেয়ে সব একাকার
দৌড়াদৌড়ি কেউ উঠে ঘাড়
মন খুশিতে তৃপ্তি সবার
এমন মহা সুখের জীবন হয় না যে তার তুল।

৭৯।
হারাম টাকা
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

হারাম টাকায় করলে কি হজ্জ
কবুল কভু হয় ?
হক মেরেছে ভাই ও বোনের
ঈমান তাজা নয়।

জোরের লাঠি শিরের ‘পরে
দখল পরের ভূম,
সেই ভূমেতে নিত্য রুজি
হারামে দাও চুম।

পাল্লা দিয়ে মারলে ওজন
পণ্য দিলে কম,
আয় করা সেই সরল লোকের
ঘাম ঝরানো শ্রম।

সারাজীবন সুদ ও ঘুষে
জীবন করলে পার,
লোভের নেশায় মত্ত পাপে
পাবে কি ছাড় তার?

হারাম টাকায় দানশীলতার
মূল্য কি তার পায়?
পায় না’রে ভাই পায় না কভু
ঠাঁই নরকে হায় !

৮০। 
অপশক্তি
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

গায়ের জোরে জোর ক্ষমতার
অপশক্তির বলে,
শীর্ষ দেশের প্রধান নেতা
বাঁকিয়ে গ্রীবা চলে।

সিংহাসনে আসন হয়ে
করছে হুকুম-জারি,
পাতি নেতা খাচ্ছে চুষে
ভাঙছে লোকের বাড়ি।

মারছে লাথি থাপ্পড় গালে
ধরছে মুখের দাড়ি,
আসবে সেদিন নয়রে কমা
জীবন পথের দাঁড়ি।

বে-ইনসাফি অত্যাচারী
ক’দিন লুটে খাবে ?
পাপের পথের হারাম কামাই
ধ্বংসে গলে যাবে।

বিচার হবে নিপাত হবে
অপেক্ষারই পালা,
সময় হলে পড়বে গলে
কাঁটা তারের মালা।

না পাবে কূল  না পাবে ঠাঁই
মরবে ধুঁকে ধুঁকে,
অনুতাপের অনল দহে
জ্বলবে দহন বুকে।

৮১। 
চিন্তা বড় ব্যাধি
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

চিন্তা হলো এই জীবনের
সর্বনাশের ঘাঁটি,
মানব সুরত নষ্ট হয়ে
হয় যে দেহ মাটি।

ঔষধ খেলে অসুখ সারে
চিন্তা সারে নাহি,
বিদ বিদ করে একলা বকে
বিরহের গান গাহি।

অভাব জ্বালায় কষ্ট বাড়ে
মাথার পরে বোঝা,
মেরুদণ্ড হয় যে বাঁকা
হয় না জীবন সোজা।

তিলে তিলে ক্ষয়’রে কায়া
ঘুণ ধরে যায় মনে,
ভাল্লাগে না কোনো কিছু
দুঃখে ঘুরে বনে।

চিন্তা হলো বড়ো ব্যাধি
যায় না দূরে কভু,
চিন্তা মুক্ত গড়তে জীবন 
ডাকতে হবে প্রভু।

৮২।।
দাবিদার
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

এই মনে জ্বালা দিয়ে যদি তুমি সুখ পাও,
দেবো নাকো বাধা সেই সুখে নাও বেয়ে যাও।
অভিশাপ দেবো নাকো আসিলে এ চোখে জল,
রুমালে তা মুছে নেবো চুপচাপ অবিরল।

জানি ভুল বুঝে তুমি অনুতাপে একদিন,
ঝরাবে আঁখিতে নীর জ্বালা পেয়ে সীমাহীন।
অভিশাপ দিলে শুধু হয় নাকো অভিশাপ,
দীর্ঘশ্বাসে বাড়ে জ্বালা ডালি ভরা যত পাপ।

সুস্থ দেহ মনে বল রুধির-ই সে দাপটে,
অপরের হৃদ ভাঙো লাথি মারো কপাটে।
থাকিবেনা এই জোর ভেঙে হবে চুরমার,
বিবেকের ধরাতলে নিজে নিজে ছারখার।

হয়তোবা খুঁজিবেই সেই দিন দ্বারে দ্বারে,
নাহি পাবে দেখা খুঁজে ছটফট চিৎ-কারে।
নিরুপায় অসহায় এতিমের মত হায়!
দৌড়াবে হাশর মাঠে ঋণ যদি থেকে যায়।

দাবিদার হবে পার রবে পাপে বাঁধা ঋণী,
শোধ করো ঋণ তার মুক্তি নাই শোধ বিনি।
বিধাতার এক বোল তাঁর কাছে নাই ক্ষমা,
দাবিদার দিলে মাফ রবে নাকো পাপ জমা।

৮৩।
কৃষাণের স্বপ্ন
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

আমার দেশে স্বর্ণ ফলে
রোদবৃষ্টি মেঘের জলে
তিন ফসলের জমি,
যায় কৃষাণে মাঠের পানে
ক্ষেতখামারে লাঙ্গল টানে
নাই শ্রমে তার কমি।

মনের ভেতর স্বপ্ন আশা
ক্লান্ত দেহেও মধুর ভাষা
উঠবে ফসল ঘরে,
ভরবে গোলা ধানে ধানে
ভাসবে তারা খুশির বানে
ধৈর্যটুকু ধরে।

এই আশাতে দিন কাটে তার
মাস ও বছর যায় হয়ে পার
সুখেরই দিন আসবে,
কষ্ট শেষে হাসির দেখা
ঘুরবে তাদের ভাগ্য রেখা
সুখের নায়ে ভাসবে।

ফুটবে হাসি সবার মুখে
থাকবে না আর কেউ তো দুখে
আসবে ফিরে শান্তি,
নতুন ধানের পিঠা পায়েস
মিটবে সকল মনের খায়েশ
দূর হবে সব ক্লান্তি।

৮৪। 
মা আমার জান্নাত
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

মাগো তোমার মত ভবে আর কেহ তো নাই,
এই অভাগায় চরণ তলায় দাওনা গো মা ঠাঁই।
তোমার হাতের কোমল ছোঁয়ায় শান্তি এনে দেয়,
তুমি বিনা সুখ-পাখিটা সুখটা কেড়ে নেয়।

মাগো তুমি হাসো যখন ওই আকাশের চাঁদ,
আঁধার রাতেও জ্যোৎস্না ছড়ায় ভাঙে খুশির বাঁধ।
মাগো তোমার চোখে যদি একটু ঝরে নীর,
ভুবন ভাসে সাগর জলে ডুবে সুখের নীড়।

তুমি বিনে এতিম আমি সারা ভুবন পর,
ধেয়ে আসে এই জীবনে কালবৈশাখী ঝড়।
কেউ থাকে না আপন স্বজন স্নেহ মমের তর,
জিন্দাতে হই লাশের মত প্রাণ বিহীন এই ধড়।

আমায় ছেড়ে থেকো না মা কখনো দূর দূর,
তুমি আমার সুখের প্রদীপ আঁধার ঘরের নূর।
সারাজীবন পাশে থেকো রেখো আঁচল তল,
তুমি আমার শক্তি সাহস এই বুকেরই বল।

মাগো তুমি সুখ সাগরে সুখের নায়ের হাল,
তুমি বিনা যে ডাল ধরি ভাঙে যে সেই ডাল।
মাগো তুমি পরপারে জান্নাতেরই সুখ,
কবুল হজ্জের সওয়াব মিলে দেখলে তোমার মুখ।

৮৫।
দুদিনের দুনিয়া
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

ভবের মাঝে ক’দিন পাবে 
এই পৃথিবীর বায়ু,
কেবা জানে কখন যাবে
প্রাণ পাখিটার আয়ু ?

দুঃখ কেন মানব মনে
দাও গো সদা তুমি ?
পায়ের তলে থাকবে না যে
মাটির নামে ভূমি।

ভালো কাজের ফল পাবে যে
ইহ-পরো’কালে,
মন্দ কাজের এই প্রতিদান
অগ্নি কাঁটার জালে।

চিরদিনই কেউ রবে না
ভুবন মাঝে বেঁচে,
সাগর তলেও থাকলে তুমি
আনবে বিধি সেঁচে।

দুই দিনের এই দুনিয়াতে
কিসের বাহা’দুরি ? 
সরল পথে জীবন গড়ো
দাও ছেড়ে সব চুরি।

৮৬।
পরীক্ষার হলের স্মৃতি
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

পিরিজপুরে অবস্থিত মাদ্রাসা এক আলিম,
নিত্যদিনই যেতাম সেথায় করতে জ্ঞানের তালিম।
সেই দিনের সেই স্মৃতিগুলো খুবই মনে পড়ে,
আজও আমার মনের মাঝে দোলা দিয়ে নড়ে।

উনিশ শত আটা-নব্বই নিরানব্বই সনে,
ছাত্র ছিলাম অনেক ভালো ছিলাম সবার মনে।
করতো কেহ হিংসা আবার ছাত্র ভালো বলে,
নকল করে ফেলতো নকল আমার পায়ের তলে।

শিক্ষক এসে কেড়ে নিলেন আমার লেখার খাতা,
সেই নকলের প্রশ্নোত্তরেই ছিলো ভরা পাতা।
নাজিমুদ্দিন নামের শিক্ষক ধমকে বলেন ছেলে,
পাস হবে না তোমার এবার যাবে বছর ফেলে।

চোখের পানি ঝরে চোখে ভাবি কি যে হবে?
বিনয় করি স্যার আমাকে পরখ করেন তবে।
স্যার আমাকে পরখ করেন ঝরে আমার আঁখি,
প্রশ্নের উত্তর দিলাম আমি যেনো তোতা পাখি।

সার্থক হলাম জবাব দিতে খাতা পেলাম ফিরে,
নকলকারীর মুখটা কালা পড়লো ধরা ধীরে।
নামটা আমি বলবো না তার লজ্জা পেতে পারে,
হিংসা করেও মিশতো তারা কৌশলে মোর ধারে।

৮৭।
গরিব ইতিহাস
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

আর কতকাল খেলবে তুমি
গরিব নিয়ে ভাই!
পকেট ভরা টাকার খেলা
দম ফুরালে নাই।

আজকে তুমি ও অফিসার!
খেলছো কত খেলা,
দালানকোঠা রইবে পড়ে
শেষ হবে যে বেলা।

অনুতাপের দহন জ্বালা
খাইবে তোমার দেহ,
রইবে না আর পাশে তোমার
অন্ধকারে কেহ।

কথার ছলে মারছো বানে
গরিব দুখী হায়!
ধরার মাঝে একটু তারা
শান্তি নাহি পায়।

জীবন তাদের কষ্টে বহু
দুঃখে ফেলে শ্বাস,
দুখের তরী বেয়েই চলে
গরিব ইতিহাস।

৮৮।
শিয়াল ও কুকুর
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

শিয়াল দেখিলে কুকুরের জ্বলে
সর্বদা দেয় তাড়া,
পেছনে পেছনে দৌড়ে দৌড়ে
হয়ে যায় দিশেহারা।

বিনা কারণেই ক্ষমতার বলে
শিয়ালের পিছু ধায়,
কুকুরের কাজ ঘেউ ঘেউ করা
তাতে কিবা আসে যায় ?

ভাবে না কভু সে মারিলে ইটটি
পাটকেল রয় পাওনা,
কারোর ক্ষতির সাধনার ফলে
সুখ মিলে ভালে তাও না।

মূর্খ কুকুর পায় সে মুগুর
সম্মানে নাই কভু,
যথাতথে খায় লাথি আর ঠিল
হয় নাকো হুঁশ তবু।

শিয়াল বেটায় চালাকচতুর
শীর্ষতে তার ঠাঁই,
বনের হরিণ পশু ও পাখির
বিজ্ঞ মশাই তাই।

৮৯। ।

চন্দ্রালোকে
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

চন্দ্র মামা! চন্দ্র মামা!
তোমার সাথে আড়ি,
বলো বলো কোথায় থাকো
কোথায় তোমার বাড়ি?

দিনের বেলা লুকায় থাকো
রাত্রে ওঠো হেসে,
জ্যোসনা মাখা হাসি দেখে
হারাই ভালোবেসে।

তারার সাথে খেলো তুমি
লুকোচুরি খেলা,
জ্যোৎস্নারাতে তোমার পাশে
সাদা মেঘের ভেলা।

তোমার আলোয় রাত্রে ফোটে
ফুল বাগানের ফুলে,
সলিল করে ঝিকিমিকি 
সাগর নদীর কূলে।

চন্দ্র মামায় চন্দ্রালোকে
মনের কথা বলি,
চাঁদের আলোর হাট বসেছে
একলা নিশি চলি।

রাত্রে দেখি তোমার হাসি
সূর্যালোকে কাঁদি,
কল্পনাতে হৃদয় তটে
মন গহীনে বাঁধি।

৯০।
ঝড় বৃষ্টির দিন
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

আকাশটা আজ মেঘে ঢাকা
বাদল ঝরে হয় না ফাঁকা
সূর্য মামা কই?
রৌদ্র বৃষ্টি ঝড়ের রেখা
যায় না কভু সূর্য দেখা
ঝড় এলোরে ওই।

ডিঙি নায়ে ওই জেলেরা
নদীর তীরে সব ছেলেরা
চেয়ে চেয়ে রয়,
ঢেউয়ের মাঝে করছে খেলা
ডুবুডুবু ভাসছে ভেলা
মনের ভেতর ভয়!

কালবৈশাখী আসছে ধেয়ে
টাপুরটুপুর বৃষ্টি পেয়ে
বিজলি তাদের সাথ,
বাড়ির সবার মনটা কাঁপে
দোয়া দুরুদ পড়ছে বাপে
শঙ্কাতে সব  মাত। 

গুড়ুম গুড়ুম বিজলি ডাকে
বাসা খুঁজে পক্ষী কাকে
নদীর বুকে ঢেউ,
বাড়ির বাহির যেতে বারণ
মেঘের আঁধার এইতো কারণ
যাসনে তোরা কেউ।

৯১।
মৃত্যুর ভয়
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

দিনের পরেই রাতের আঁধার আসবে রে ভাই নেমে,
কখন বুঝি সাধের দেহের দম’টা যাবে থেমে !
মনের ভেতর ভয়’টা বিরাজ করছে প্রতি’ক্ষণে,
একলা যাবো ভুবন ছেড়ে কেউ যাবে না সনে।

কাঁদবে সবাই পাশে বসে নিথর দেহ রবে,
শুনবো আমি  সবই কানে জবান বন্ধ হবে।
বলবে আমার প্রতিবেশী অতি ত্বরা করে,
করতে হবে লাশ’টা দাফন মাটির কবর ঘরে।

আনবে যে কেউ কাফন কিনে আবার কাটবে কেউ বাঁশ,
বরই পাতার উষ্ণ জলে গোসল দিবে মোর লাশ।
কাফন পরায় করবে বিদায় তুলবে খাটলি ‘পরে,
চার বেহারা করবে বহন আমায় ঘাড়ে করে।

শেষ জানাজা পড়বে আমার গোরস্থানে নিবে,
কবর মাঝে রেখে দিয়ে মাটির চাপা দিবে।
সবাই মিলে করবে দোয়া পাপ মোচনের তরে,
অবশেষে একলা রেখে ফিরবে আপন ঘরে।

মুনকার নাকির করবেন সাওয়াল নাই তো জবাব জানা,
ডাণ্ডাবাড়ি পড়বে গায়ে শঙ্কা দিবে হানা।
আঁধার ঘরে রইবো পড়ে চিন্তা মনে ধরে,
মাওলা তুমি পাপ রাশি সব দাওনা ক্ষমা করে!

৯২।
মরণের ভয়
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

কেউ নাই পৃথিবীতে হবে যে আপন,
মনে খুব ডর ধরে এ দেহে কাঁপন!
আপন আপন ভাবি কেউ মোর নয়,
তিলেতিলে আয়ু শেষ জীবনের ক্ষয়!

জানি না কখন কবে আসিবে মরণ?
কাঁপে বুক থরথর করিয়া স্মরণ!
জীবনের পাপ রাশি সারিসারি জমা,
মোচনে দয়াল প্রভু করে দাও ক্ষমা।

ভিখারিনী ভিখ পায় ঘুরে দ্বারে দ্বারে ,
কেউ দেয় কেউ কভু বকা দিয়ে তাড়ে।
ক্ষমিবে আমায় প্রভু কেবা আছে ভবে?
না করিলে পাপ ক্ষমা কী বা হবে তবে!

হারাবে যে দুই কূল নরকে দহন,
হাশরের মাঠে পাপ দু’কাঁধে বহন!
পারিবো না সহিতে যে এতো জ্বালা কভু,
নত শির চোখে নীর দেখো ওগো প্রভু!

মরণের আগে এই দিল করো সাফ,
একটাই চাওয়া পাওয়া তব দ্বারে মাফ।
তুমি ছাড়া দয়াশীল না আছে যে আর,
তোমাতে নোয়াই মাথা ওগো পরওয়ার!

৯৩।
ঘুষ
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

কর্তাবাবু বড় সাহেব 
ঘুষ পেলে হয় খোশ,
না যদি পায় কারণ ছাড়াই
চাপায় ঘাড়ে দোষ।

চাকরি নিতে ঘুরছে মাথা
থাকছে না আর হুঁশ,
এক লাখে নয়, দশ লাখই চায়
কর্মকর্তা ঘুষ!

যেখানে যাই ঘুষের দাবি
ঘুষ ছাড়া নাই ঠাঁই ,
ভাগ্যগুণে মন্দ কপাল
দোষ দেবো কার ভাই?

যার আছে তাই বাড়ি-গাড়ি
চাকরিটা তার হয়,
দালান-প্রাসাদ বিলাসিতার
আহ্লাদে সুখ রয়।

টাকার অভাব মধ্যবিত্ত
গরিব শ্রেণির ক্ষয়,
মালিক বেটার ঘুষের টাকায়
জীবনখানি জয়।

আর কত দিন হারাম খাবি ?
ফুরালে দম ঠুস,
নিলামে তোর দখলদারি
সঞ্চিত সব ফুস!

৯৪।
ঝড়ের দিন
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

ঝড়ের বেশে বৈশাখ এসে
কাড়লো সবার ঘুম,
খোকাখুকি সবাই নাচে
আম কাঁঠালের ধুম।

একই সনে আম বাগানে
আম কুড়াবে তাই,
পুলকিত মন হরষে
খুশির সীমা নাই।

পুব আকাশে হাওয়ায় ভাসে
কালো কালো মেঘ,
প্রবল গতি হয় যে ক্ষতি
ভীষণ ঝড়ের বেগ।

তবুও রে ভাই পাড়ার সবাই
চায় যেতে আম বাগ,
আম কুড়ানোর শখ জেগেছে
জাগ তোরা ভাই জাগ!

নাই মনে ডর একটুখানি
সয় না কারো ত্বর,
ডাক দিয়ে কয় আয় ছুটে আয়
আসলো ওরে ঝড় !

৯৫। 

মসজিদ ও মন্দির
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ,  খ্রিষ্টান
এক সমাজেই বদ্ধশ্বাস,
বিভেদ কিসের হিংসা বিষের
বন্ধুত্বে হোক অন্ধনাশ।

আযানের সুর মসজিদ ঘরে
ঘন্টা বাজুক মন্দিরে,
জাত ও বেজাত বিদ্বেষ ভুলি
পণ করি তাই সন্ধিরে।

সবাই মোরা সবার তরেই
প্রীতির বাঁধন অন্তরে,
আসলে বিপদ উদ্ধারে তাই
ছুমন্তর ছু মন্তরে।

তুমি-আমি বা সে তাহারা
কাটলে শরীর রক্ততে,
লাল রঙে রঙ রুধির ক্ষরণ
চিত্তটা রয় ভক্ততে।

এই মানি তাই সব জাতি ভাই
না থাকি আর দ্বন্দ্বতে,
ভালোবাসার জয়-ধ্বনিতে
সুর তুলে যাই ছন্দতে।

৯৬।
তর্ক
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

চুপ বেটা তুই তর্কে কেনো
দ্বন্দ্ব করিস আমায় বল ?
তর্ক করা নয় তো ভালো
ইবলিশের এই মনের ছল।

তর্কতে হয় ক্রোধের নেশা
শত্রুতা তার প্রকাশ পায়,
নিজের ক্ষতি পরের ক্ষতি
ভাঙে কপাল হায়রে হায়!

দ্বন্দ্ব ফাসাদ তারাই করে
কলুষিত যাদের মন,
হারাম টাকার গাড়ি-বাড়ি
অবৈধ আয় নিত্য ক্ষণ।

বুঝেও তারা বুঝে না যে
সর্বদাতেই পাপের কাম!
গর্ববোধে চলার গতি
দেয় না কারো একটু দাম।

জ্ঞানী-গুণী চতুর যারা
তর্ক তারা কম করে,
তর্ক করা মূর্খেরই কাজ
চুপ করে তাই দম ধরে।

৯৭।
সত্যের ফুল
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

ছন্দ কবির দীপ্ত রবির
জগৎ করে আলো,
সেই অবতার মানবতার
জীবন প্রদীপ জ্বালো।

একটু আশার ভালোবাসার
গড়তে জীবন ভবে,
স্বার্থ ত্যাগে সবার আগে
ছুটতে হবে তবে।

হিংসা মনের জগৎ জনের
থাকলে পোষা হৃদে,
ঝড়ের পবন ধ্বংস ভুবন
পাপ-কালিমার জিদে।

গরিব ধনী প্রদীপ মণি 
মহান রবের সৃষ্টি,
হীন চোখে তাই কাউকে না ভাই
দাও শুভতে দৃষ্টি।

রঙের মানুষ উড়াও ফানুস
ক’দিন রবে রঙে?
বেলা শেষে ফকির বেশে
রইবে না কেউ সঙ্গে।

পবিত্র কূল সত্যেরই ফুল
ফোটাও হাসি মুখে ,
ধর্ম শুনে কর্ম গুণে
জনম জনম সুখে।

৯৮।
রঙের ভুবন  
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

চাঁদ তারা নীল ভূমি বিধাতার দান,
অবনীর তরে তিনি গায় তাঁর শান।
গাছ-পালা পশুপাখি আর ইনশান,
কেউ বলে রব প্রভু কেউ ভগবান।

পাপাচারে লিপ্ত বান্দা খাদ্য দেন তবু,
অসীম দয়ালু তিনি জগতের প্রভু।
যতই বিমুখ থাকে অভাগা এ বান্দা,
কখনো না দেন ত্বরা গজবের ডাণ্ডা।

দানাপানি দিয়ে সদা বাঁচিয়ে রাখেন,
সুনজর দিয়ে খোদা সবারে দেখেন।
পাপ থেকে ফিরিবার এ এক সুযোগ,
বান্দা যদি নাহি বুঝে নামে যে দুর্যোগ।

ভুল থেকে তাই যদি শোধরানো যায়,
পাপী বান্দা প্রভু দ্বারে পাপ ক্ষমা পায়।
মহান রবের ছক বুঝিবার নয়,
স্মরণে প্রভুর জপ আত্মা শুদ্ধ হয়।

কোরানের বাণী তিনি ঘোষণায় কন,
চিরদিন নাহি রবে এপারের ধন।
খালি হাতে ফিরে যেতে হবে একদিন,
রঙের ভুবন মিছা মায়াবী রঙিন।

৯৯।
আত্মত্যাগের কোরবানি 
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

জিলহজ্জ মাসের চাঁদ উঠেছে
বিশ্ব মুমিন সব জেগেছে
আত্মত্যাগের ধন,
ইসমাইলের গলায় ছুরি
সেই থেকে আজ জগত জুড়ি
ইব্রাহিমের ক্ষণ।

জাতির পিতার স্মরণে তাই
ইসলামের এই শিক্ষাটা পায়
বিশ্বজুড়ে আজ,
শুদ্ধ মনের কোরবানিতে
আল্লাহ্ তা’লা সন্তুষ্টিতে
নাজিল করেন নাজ।

কোরবানি হোক হালাল পশুর
হালাল টাকায় মাফ যে কসুর
পায় জান্নাতের পথ,
নামাজ রোজা আত্মত্যাগে
শুদ্ধতায় মন দ্বীনে জাগে
আল কোরানের মত্।

নয় তো শুধু নিজের তরে
কোরবানি হোক প্রভুর ডরে
তাকওয়াতে হয় জয়,
আত্মত্যাগে রয় না মন যার
হয় না কবুল কোরবানি তার
লোক দেখানোর নয়।

১০০। 
স্মৃতিময় দিন
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

কত স্মৃতি মনে পড়ে অতীতের সেই,
সব ফেলে কোথা আজ আছি আমি এই ?
কত প্রেম ভালোবাসা মায়ার আদর!
জড়িয়ে মা রাখিতেন স্নেহের চাদর।

কোথা গেলে পথপারে পাশে হাত ধরে,
যেন কভু নাহি পড়ি আঘাতের তোড়ে।
চোখের আড়াল হলে আনচানে মন,
কোথা গেলি আয় ফিরে ও মানিক ধন!

সেই মা তো নেই আজ নেই কোলাহল,
স্মৃতিগুলো দোলা দেয় কাঁদি অবিরল।
মাগো তুমি কই আজ ডাকো না খোকায়?
খুঁজে খুঁজে নাহি পাই পড়েছি ধোঁকায়।

আরো আছে স্মৃতিময় কত যে সে দিন,
লেখাপড়া খেলাধুলা স্বপন রঙিন।
মনের ময়ূরী প্রিয়া রাঙা বধূ মোর,
সুমধুর ডাকে তার হত রাত ভোর।

মোর ক্রোড়ে বসে মুখে তুলে দিতো ভাত,
কাটিত গহন নিশি চাঁদনি সে রাত।
কত সুখ হাসি আর গানে গানে দিন,
কেটেছে প্রহর গুলো বেজে সুখ বীণ।

সুখের সে দিন গুলো নেই আজ আর,
ফিরে পেতে এই মন করে হাহাকার!
পাবো না পাবো না কভু ফিরে আর তাহা,
অতীতের স্মৃতিগুলো দেয় ব্যথা আহা!

১০১।
জন্মভূমি প্রস্থান
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

মায়ের কোলে জন্ম দিয়ে
বাবা গেলেন বিদায় নিয়ে
রেখে গেলেন জন্মেরই ঠাঁই হরিশংকরপুর,
কতই স্মৃতি মনে পড়ে
দু’চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরে
সেই থেকে আজ রইছি দূরে দুখ-বেদনার সুর।

এক জালিমের অত্যাচারে
অন্যায় আচার অবিচারে
ছেড়ে দিলাম আমার প্রিয় জন্মভূমির গ্রাম,
স্বস্তি পেতে কাদিপুরে
এলাম তবু কপাল পুড়ে
এবার বুঝি ছাড়তে হবে কাদিপুরের ধাম।

যেথাতে যাই ইবলিশের বাস
ভাঙলো বুঝি মনের এ আশ
আর কতকাল সইবো বলো এমন জ্বালা রব!
কেউ দেখে না গরিব বলে
ভাসি শুধু নয়ন জলে
পাশের বাড়ির অত্যাচারে করুণ কলরব!

মানবকুলে কুল না পেলাম
আল্লাহ তোমায় বিচার দিলাম
তুমি ছাড়া এই অভাগার আর তো কেহ নাই,
থানা পুলিশ কেউ দেখে না
অত্যাচারীর বিষের ফণা
দয়ার সাগর মালিক প্রভু তোমার দয়া চাই।

১০২।
কর্মই দলিল
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

ফুরিয়ে যাবে যৌবন তোমার
পাপ চিরদিন রবে,
কোনখানে কোন্ কর্ম ছিলো
কোন্ অপকাম কবে? 

করছো কবে চোর-ডাকাতি
করছো নারী হরণ!
গায়ের জোর বা কৌশল এঁকে
অত্যাচারের ধরণ।

গোপনে বা লোক-সমাজে
খুন-খারাবি করে,
অন্ন জোটাও অর্থ লুটে
দালানবাড়ি গড়ে।

রইবে সবই দলিল হয়ে
শেষ হবে হায়  জীবন,
রোজ-হাশরে আমলনামার
এইতো প্রথম সীবন!

আমলনামা হস্তে নিয়েই
দেখতে পাবে তাহা,
বিচার হবে অণু-অণু
অনুতপ্তে আহা!

সেদিন তোমার থাকবে না আর
বল-ক্ষমতা গায়ের,
থাকবে নাকো হারাম অর্জন
থকবো না জোর আয়ের।

বন্ধ হবে মুখের জবান
সাক্ষ্য দেবে অঙ্গ,
কেউ ননা রবে আপন সেদিন
না দেবে কেউ সঙ্গ।

যেমন তোমার কর্ম হবে
ফলবে সে ফল বাগে,
কষ্ট সুখের স্বর্গ নরক
কর্ম গুণেই ভাগে।

১০৩।
বৃষ্টির আরাধনা
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

তপ্ত খরা জীবন মরা
না বাঁচি হায় দমে!
ওষ্ঠাগত প্রাণ আসে যায়
যাচ্ছে আয়ু কমে।

এই গরমে অগ্নি ঝরা
প্রবল রৌদ্র তাপে,
ফুটিফাটা জমিন কাঁদে
বিশ্ব যেনো কাঁপে!

নেই আকাশে মেঘের ভেলা
নাইরে বাদল হাওয়া,
অতিষ্ঠ হয় প্রাণি সকল
মৃত্যুতে দেয় ধাওয়া!

এ যেনো এক নরক আজাব
নাভিশ্বাসের জ্বালা,
কোন্ পাপে হায় অবতরণ
যন্ত্রণার এই ডালা?

হে দয়াময় মালিক প্রভু
দাও রিমিঝিম বৃষ্টি!
শান্ত শীতল এই ধরা হোক
হোক ফসলের কৃষ্টি।

১০৪।
অহংকারীর বিনাশ
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

জগৎ স্রষ্টা দিলেন বলে
আল কোরআনের শ্রেষ্ঠ বাণী,
অহংকারই পতনের মূল
সকল মানব আমরা জানি।

উপর দিকে মারলে থুথু
নিজের গায়েই ছিটকে পড়ে,
ও চাটুকার, দালালেরা!
নিপাত যাবি দু’দিন পরে।

যে ফেরাউন অহংকারী
হিংস্র ছিলো মিশর দেশে,
মৃত্যু হলো নীল নদে তার
জগতবাসী জানলো শেষে।

সাজ্জাদ বাদশাহ অহংবোধে
করলো নিজেই জান্নাত তৈরি,
আসলো তারও নিপাত শেষে
হলো প্রভুর নিকট বৈরী।

নমরুদ চাইলো যুদ্ধ করতে
ইব্রাহিমের রবের সাথে,
বিলীন হলো সামান্য এক
ছোট্ট প্রাণী মশার ঘাতে।

যার ভেতরে তিল পরিমাণ
অহং বিরাজ দাপট বলে,
নিঃস্ব হবে বরফের ন্যায়
তিলেতিলে জীবন গলে।

শিক্ষা-দীক্ষা অনেক অর্জন
পুরিশ্ পুরা দিলের মাঝে,
দিল তো রে  ভাই মাকাল ফল ন্যায়
নোংরামি তোর সকল কাজে।

এর খেসারত দিতেই হবে
দু’দিন আগে কিংবা পরে,
নিঃস্ব হবি, বিলীন হবি
ওই বিধাতার লানত ঝরে।

১০৫।
আমার মনের রোষ
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

রোষ যদি হয় মনের ভেতর
তা ক্ষণিকের তর,
পারি না হায় রাখতে পুষে
সারাজীবন ভর।

এই হলো মোর দুর্বলতা
অসহায় এক মন,
পাই না খু্ঁজে ভুবন জুড়ে
একটা প্রিয়’জন।

সাদাসিধা মনের মানুষ
হয় না আপন কেউ,
আপন ভেবে নদীর জলেও
ডুব দিলে হয় ঢেউ।

সান্ত্বনা দেই নিজেকে তাই
করিস না মন ভার,
যার কেহ নাই ত্রিভুবনে
আল্লাহ আছেন তার।

ধৈর্য ধরে যা এগিয়ে
পাবিরে তার ফল,
ফেল মুছে ফেল রুমাল দিয়ে
দুই নয়নের জল।

১০৬।
বিজয়ের দিনের মঞ্চে
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

শত্রুসেনা আঘাত হেনে
মারতে পারে বক্ষে,
ভাঙতে পারে জানালা দোর
ঢুকতে পারে কক্ষে।

চলতি পথে আসতে পারে
কাঁটাতারের বাধা,
ধ্বংস হলে হতেও পারে
জীবন তরীর আধা।

মচকাবে তাও ভাঙবে নাকো
দেহের কোনো অঙ্গ,
ঘাত-প্রতিঘাত যুদ্ধ রণেও
চিত্তে রবে রঙ্গ।

মৃত্যু এসে হানা দিলেও
করবো যে জয় শঙ্কা,
মরণবাজি রাখবো পণে
বাজিয়ে যাবো ডঙ্কা।

আসুক যতই ঝড় ও বাদল
পাড়ি দেবোই লঞ্চে,
হবেই হবে জয়ের দেখা
বিজয় দিনের মঞ্চে।

১০৭।
তুমি অন্তর আয়না
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

নূরমহল ও নূরমহল গো তুমি অন্তর আয়না!
দিয়ো শুধু তোমারই প্রেম কিছুই তো আর চাই না।
ভালোবাসার কাঙ্গাল আমি
ওগো প্রিয়া তোমার স্বামী!!
জীবন মরণ দুইয়ের মাঝে নাই কিছু মোর বায়না,
নূরমহল ও নূরমহল গো তুমি অন্তর আয়না!

ভালোবেসে জড়িয়ে ধরে রাখো বুকে মাথা,
তোমায় নিয়ে এই হৃদয়ে স্বপ্ন কতই গাঁথা!
তুমি যখন পাশে থাকো
প্রেমো ডোরে বেঁধে রাখো,,
ত্রিভুবনে খুঁজে আমি সুখটা এমন পাই না,
নূরমহল ও নূরমহল গো তুমি অন্তর আয়না!

তোমার জন্য জন্ম আমার তুমি আমার বধূ,
নাই কিছু যে ভুবনে আর তোমাতে যা মধু।
শপথ করে ধরো দু’হাত
জনম জনম থাকবে গো সাথ,,
তুমি বিনা সঙ্গ কারো মন তো আমার চায় না,
নূরমহল ও নূরমহল গো তুমি অন্তর আয়না!

উৎসর্গঃ
প্রাণপ্রিয় সহধর্মিণী – মোসাঃ নুরমহল বেগম।
(তারিখঃ ০৯-০৬-২০২২ ইং বৃহস্পতিবার)
———————-সমাপ্ত——————–
______________________________________
উদ্দীপ্ত চেতনা – মোঃ ইব্রাহিম হোসেন, রাজশাহী

মন্তব্য করুন