Skip to content

ইসলাম যিন্দা হোতা হ্যায় হার কারবালা কে বাদ! .- তামিম আল আদনানী

.
আজ থেকে চৌদ্দশত বছর পূর্বে, নবী দৌহিত্র হযরত হুসাইন রাযিয়াল্লাহু আনহু কারবালার ময়দানে নিজের জীবন উৎসর্গ করে আমাদেরকে দিয়ে গেছেন বিজয়ের জন্য কুরবানী পেশ করার অনুপম শিক্ষা । সেই কারবালা আজও আমাদেরকে ইসলামের জন্য আত্মোৎসর্গের প্রেরণা জোগায়। সে থেকে যুগে যুগে উম্মাহর বীর যোদ্ধারা এই প্রেরণা ধারণ করে সকল জালিম শাসকের ভিত নাড়িয়ে আসছেন। কারবালার সেই কুরবানী কখনোই বৃথা যায়নি। সুতরাং এখনো যারা কুরবানী দিচ্ছেন, তাদের এই কুরবানীও বৃথা যাবে না। অচিরেই তাঁরা ঘুরে দাঁড়াবে এবং সমগ্র উম্মাহকে বিজয়ের সুসংবাদ শুনাবে। বিজয় অবশ্যই তাদের পদচুম্বন করবে, বি-ইযনিল্লাহ।
.
বর্তমান সময়ের আফগানিস্তান এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। আফগানবাসী আজকে যে বিজয়ের স্বাদ ভাগাভাগি করছেন, এর পূর্বে দীর্ঘ একটা সময় পর্যন্ত তাদেরকে শুধু রক্তের নজরানা পেশ করতে হয়েছে। দীর্ঘ চল্লিশটি বছর তারা দুই-দুইটি বিশ্বপরাশক্তির বিরুদ্ধে রক্তের আদান-প্রদান করেছেন। শত্রুর নাপাক রক্তে খোদার জমিন যেমন পাক করেছেন তেমনি আল্লাহর দীন যিন্দা করার মহান লক্ষ্যে অকাতরে ঢেলে দিয়েছেন নিজেদের পবিত্র রক্তও।
.
৯/১১ এর বরকতময় হামলার পর বোম্বিং করে দুই লক্ষাধিক আফগান মুসলিমকে হত্যা করেছিল সন্ত্রাসী আমেরিকা। যাদের মধ্যে দূর্বল নারী, নিষ্পাপ শিশু আর বেসামরিক নাগরিকের সংখ্যাই ছিল বেশি। কিন্তু তালিবানকে তারা দমাতে পারেনি। কিছুদিনের মধ্যেই তারা ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। যুদ্ধের হুংকার ছেড়ে আফগানের পাহাড়-পর্বত কাঁপিয়ে তুলেছেন। সর্বাধুনিক মারণাস্ত্রে সজ্জিত ও বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বিশ্বের আত্মগর্বিত সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন এবং মহান রবের ইচ্ছায় তাঁরা বিজয়ী হয়েছেন।
.
আজকে আফগান জাতির বিদ্যমান বিজয়ের ইতিহাস যখন ঘাঁটতে শুরু করি তখন নির্বিচার গণহত্যার এক ভয়াবহ চিত্র খুঁজে পাই। যে চিত্র অঙ্কিত হয়েছে নিরীহ আফগানদের তাজা রক্তে। তখন কে ভাবতো যে, গণহত্যার শিকার এই জাতিই একদিন ঘুরে দাঁড়াবে ! গোটা বিশ্বে মোড়লগিরি করে বেড়ানো এই সন্ত্রাসী দাম্ভিক আমেরিকার মেরুদণ্ড ভেঙে দেবে ! আমেরিকার অর্থনীতিতে ধ্বস নামাবে !! আমেরিকার বিরুদ্ধে চলমান এই যুদ্ধে আফগানিস্তান একসময় বিজয় লাভ করবে, একটা সময় পর্যন্ত এটা কেউ কল্পনাও করেনি। কিন্তু আজকের বিশ্ব এই অবিশ্বাস্য বাস্তবতার প্রত্যক্ষ সাক্ষী হয়েছে। আমেরিকা নাকে খত দিয়ে আফগান ছেড়ে পালিয়েছে।
.
তাই আজকের বিশ্ব বর্বর ইসরায়েল কর্তৃক ফিলিস্তিনের গাজায় যে বর্বতার সাক্ষী হচ্ছে, আমাদের মহান রবের কুদরতের উপর ভরসা করে আমরা বিশ্ববাসীকে এই ভবিষ্যৎবাণী শুনাতে চাই যে, অচিরেই এই বিশ্ব বিপরীত চিত্রটিরও সাক্ষী হবে, যেখানে মুসলিমদের রক্তনেশায় উন্মাদ আজকের এই বর্বর ইসরায়েল স্বজাতীর লাশের সারি সামাল দিতে হিমশিম খাবে। আজকের এই দম্ভ আর অহমিকা অচিরেই মাটির সঙ্গে মিশে যাবে। পৃথিবীর মানচিত্রে ইসরায়েল নামক কোনো জারজ রাষ্ট্রের অস্তিত্ব স্থান পাবে না। আগামী প্রজন্ম যে মানচিত্র দিয়ে পৃথিবীর ভৌগোলিক সীমানা তালাশ করবে সেখানে তারা ইসরায়েল নামক কোনো রাষ্ট্র পাবে না ইনশাআল্লাহ।
আমরা এটা সেই মহান রবের শক্তির উপর আস্থা রেখেই বলছি, যিনি ইসরায়েলের প্রভূ আমেরিকাকেও খোরা/সানের মাটিতে পরাজয়ের স্বাদ আস্বাদন করিয়েছেন। যে আমেরিকার সমর্থন আর সহযোগিতা পেয়ে আরব বিশ্বের চোখের সামনে এই জারজ রাষ্ট্রটির জন্ম হয়েছে এবং আজও যার সহযোগিতা পেয়ে সে গাজায় নির্বিচার গণহত্যা চালাচ্ছে, সেই আমেরিকাকেও তার প্রাপ্য পাওনা মুজাহিদ্গণ বুঝিয়ে দেবেন ইনশাআল্লাহ। আজকের এই আঘাত ও বিপদ শীঘ্রই বিজয়ের রূপ লাভ করবে বি ইজনিল্লাহ। মূলত কুরবানী ছাড়া কোনো বিজয় আসে না। সমগ্র উম্মাহর পক্ষ থেকে সেই কুরবানী দিয়ে যাচ্ছেন গাজাবাসী। তাদের এই ত্যাগ আর কুরবানীর কথা আমরা কোনোদিনও ভুলে যাব না।
.
প্রিয় গাজাবাসী! বিজয়ের যে ভিত্তি আপনারা স্থাপন করে যাচ্ছেন, সে বিজয় অসম্পূর্ণ রেখে কিছুতেই আমরা স্বস্তির নিঃশ্বাস নেব না। আমরা ততদিন পর্যন্ত শান্তিতে ঘুমাতে পারব না, যতদিন না আমাদের মাসুম বাচ্চাদের প্রতিশোধ গ্রহণ করি। আপনাদের শরীর থেকে ঝরানো প্রতি ফোঁটা রক্তের কড়ায়-গণ্ডায় হিসাব না চুকিয়ে আমরা ক্ষান্ত হব না। সর্বোপরি আপনাদের এক ফোঁটা রক্তও আমরা বৃথা যেতে দেব না।
“আপনাদের রক্ত; সে তো আমাদেরই রক্ত, আপনাদের সন্তানদের রক্ত; সে তো আমাদের সন্তানদেরই রক্ত! সুতরাং রক্তের বদলা রক্ত আর ধ্বংসের বদলা ধ্বংসের দ্বারাই নেওয়া হবে। আমরা মহান আল্লাহকে সাক্ষী রেখে বলছি, আমরা কখনোই আপনাদের পরিত্যাগ করব না; যতক্ষণ না বিজয় অর্জিত হয় কিংবা শাহাদাতের সেই সুধা পান করে দুনিয়া থেকে বিদায় গ্রহণ করি, যে সুধা পান করেছেন হযরত হামজাহ ইবনে আব্দুল মুত্তালিব”। শাইখ উসামা বিন লাদেনের এই কথাগুলি আমরা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে আজকের এই উদাসীন বিশ্ববাসীকে দেখিয়ে যাব ইনশাআল্লাহ।
.
আরব রাষ্ট্রগুলোর জঘন্য শঠতা আমাদেরকে সবচেয়ে বেশি ব্যথিত করেছে। মূলত ক্ষমতা ছাড়া এরা আর কিছুই বুঝতে চায় না। ফিলিস্তিনের প্রবেশপথগুলিও এসব মুরতাদ শাসকেরা বন্ধ করে রেখেছে। এদের নির্লজ্জ সহযোগিতা না থাকলে ইসরায়েল কোনোদিনও গাজার মুসলমানদের অবরোধ করতে পারত না। ফিলিস্তিনের প্রবেশপথগুলো আজ খোলা থাকলে উম্মাহর মুজাহিদরা পঙ্গলপালের ন্যায় ছুটে যেত ফিলিস্তিন অভিমুখে। ধুলোয় মিশিয়ে দিত ওদের অস্ত্রের বড়াই। গাজায় হামলা করবে তো দূরে থাক; ইসরায়েলের মাটিতেও তারা একমুহূর্তের জন্য নিজেদের নিরাপদ ভাববার সুযোগ পেত না। আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিয়ে আমেরিকা এসে সাহায্য করতে পারছে ইসরায়েলকে, কিন্তু তাদের পার্শ্ববর্তী আরব রাষ্ট্রগুলি সামরিক সাহায্য তো দূরের কথা; সীমান্ত পুরোপুরি খুলে দিয়ে পর্যাপ্ত পরিমাণ ত্রাণ পৌঁছতেও দিচ্ছেনা। পাছে না আবার আমেরিকার রোষাণলে পড়ে ক্ষমতা ছাড়তে হয়! ক্ষমতার জন্য এরা সবকিছু করতে প্রস্তুত।
.
মুসলিম উম্মাহর সঙ্গে এদের এজাতীয় গাদ্দারী একদিন লেখা হবে ইতিহাসের পাতায়। পরবর্তী প্রজন্ম জানবে, আরবের ক্ষমতাসীনরা ক্ষমতার লোভে নিজ ভাইদেরকে ইহুদীদের করুণার উপর ছেড়ে দিয়ে নিজেরা মজে ছিল হারাম বিনোদনে। গাজাবাসীর অভিশাপে আমেরিকা যখন পুড়ে ছারখার হবে তখন সেই উত্তাপে পুড়ে নিঃশেষ হয়ে যাবে এসকল মুনাফিক আরব শাসকেরাও।
.
আমরা বিশ্বের মুসলমানদের কাছে গাজার মুজাহিদ ভাইদের জন্য অবিচলতার দোয়া কামনা করছি। আল্লাহ তাআলা গাজার মুজাহিদ ভাইদের আরো হিম্মত দান করুন। শত্রুকে তাঁর উপযুক্ত পাওনা বুঝিয়ে দেওয়ার শক্তি ও সামর্থ্য দান করুন।
.
প্রিয় মুজাহিদ ভাইয়েরা, আপনারা কখনোই এপথে নিজেদেরকে একা ভাববেন না। বিশ্বের সকল মুজাহিদ আপনাদের চলা এপথে চলার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছেন। শুধুমাত্র সুযোগের অপেক্ষা। যে জিহাদের সূচনা আপনারা করে দিয়েছেন এর শেষ না করে আমরা কখনোই শান্ত হব না ইনশাআল্লাহ। জিহাদের বরকতেই আবারও একদিন আমরা বিশ্ববাসীকে ফিরিয়ে দেব ইসলামী খেলাফতের মহান নেয়ামত। সেদিন মাকড়সার জালের মতোই ধ্বসে পড়বে জালিম শাসকদের শাহী মসনদ, ইনশাআল্লাহ।

মন্তব্য করুন