Skip to content

আমার গাঁয়ের ডাক বিকাশ চন্দ্র মণ্ডল

মোর পাহাড় ঘেরা গদীবেড়ো গাঁ,
প্রিয় ” জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরীয়সী ” ।
মা গো, তোমার চরণে নিয়ত প্রণমি ।
সবুজ বৃক্ষে কতশত পাখপাখালিতে ভরা
কতই না শান্তি পাই মোদের ঐ ছোট্ট গাঁয়ে
মনে হয় যেন স্বর্গের চেয়েও হবে যে সেরা।
উত্তর সীমানায় ঢেউ খেলানো পাহাড় গুলি
সকলকে আহ্বান জানায় যেন দুই হাত তুলি।
পূর্ব পাশের বড় ঐ স্বচ্ছ জলের দীঘিটিতে
ভরে থাকে শরতে শাপলা, মৃণাল ফুলেতে।
লাল, হলুদ পলাশের রঙবাহারী ফুলের মেলা
দেখবে চেয়ে পাকদন্ডীর পথে যাওয়ার বেলা।
ময়রার হাতের তৈরি বিখ্যাত ঐ সন্দেশ পেঁড়া
খাবে-খাওয়াবে, উপহার দিতে লয়ে যাবে সাথে।
পশ্চিমেতে দর্শন করো অতিপ্রাচীন ঐতিহ্যবাহী
খেলাই চণ্ডী মাতার নয়নাভিরাম জাগ্রত দেবস্থান
প্রবাদে আছে যে – –
“ বেড়োর বাঁধ, কেশব চাঁদ আর চণ্ডী থান “।
খেজুর রসের নলেন গুড় তৈরির সেই ভাটি
বসে এদিকে সেদিকে প্রখর শীতকালের বেলা
পৌষ সংক্রান্তিতে ফি বৎসর বসে চণ্ডী মেলা।
মঙ্গল কামনায় মানত করলে মন্দির সংলগ্ন
ডেকুড় পুকুরে করতে হয় যেন মাটি ফেলা।
পাহাড় তলির সৌন্দর্য উপভোগ করার মতো
মেলায় আসে পূণ্যার্থী মানুষ,পর্যটক, প্রশিক্ষণে
রক্ ক্লাইমবার্স প্রকৃতি প্রেমী দিগ্বিদিকে অগনিত ।
আষাঢ়ে রথ, ব্রত, রহীন, আরো আছে ষাটষষ্ঠী
চৈত গাজনে গম্ভীরাভরা, লোটন, চড়ক যাত্রাগান।
রাম নবমীর লাঠি খেলা, পৌষে টুসু, গড়গড়্যা
পীঠে খাওয়াতে খেতে সকলের আনন্দিত প্রাণ
ভাদরে ছাতা পরব আর ভাদুর জাগরণেই মান ।
শরতে পাড়ায় পাড়ায় শারদ উৎসবে মহাধুমধাম
আদিবাসী ভাইদের দাঁসাই নাচ আর কাঠি নাচের গান
কার্তিকেতে ইঞ্জরপিঞ্জর পাহাড় শৃঙ্গে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন।
টোল থেকে শুরু শ্রী শ্রী রামচন্দ্র আর্দশ বিদ্যালয়টি
গ্রামের অতি আদরের প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
দেশ বিদেশে কৃতী ছাত্রছাত্রীদের অর্জিত সুনাম।
কাশীপুর রাজ পরিবারের গুরুদেবের অধিষ্ঠান
করে ছিলেন একশত সাড়ে সাতান্ন মৌজা দান।
সেই সব স্মৃতি বিজড়িত কেশব চাঁদ মন্দির প্রাঙ্গণ
বাড়িয়ে চলেছে আজিও কত গাঁয়ের আত্মসম্মান।
এসো বন্ধু সকলে মিলে – – –
আমাদের পাহাড়তলির এই ছোট্ট গাঁয়ে করি আমন্ত্রণ
তোমায় আপন করে নেবে সকলে রাখবে সযতন।
কথাশিল্পী বিভূতি ভূষন বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয়ের
‘ রঙ্কিনী দেবীর খড়গ ’ অতি প্রাকৃত সেই গল্পটির
পটভূমিতে সম্মানিত অতি প্রিয় গ্রামটি যে আমার
বেড়োর বদলে গল্পে ‘ চেরো ‘ নাম রেখেছেন যেন তার।

মন্তব্য করুন