Skip to content

আতঙ্ক

  • by

আতঙ্ক
( এক ছিন্ন পাতার মত এলোমেলো কিছুটা বিষাদ)

এখন নারী-পুরুষের প্রেমের কথা শুনলে আতঙ্ক হয়।একদা আমিও চেয়েছিলাম প্রেম করি কোনো এক নারীর সাথে। বিভিন্ন ঘাত প্রতিঘাতে আজ আর চাই না তা।আমার ঘেন্না পায় বিয়ের আগে দেহ প্রেমের বাড়াবাড়ি দেখে। সন্তান গোপনে উঁকি দিলে ছোটো তোমরা কসাইয়ের ঘরে।
মন নিয়ে খেলাতেও সায় নেই আমার।
আমার আতঙ্ক বাড়ে আমার সংসার ভাঙলে।আমার আপনজন দূরে চলে যায়, যেতে বাধ্যও হয়।
আমার শরীরে জমে ক্রোধ।আর কতদিন শরীর সমাজ ও সুরক্ষায় অপরিণত আমার দেশ দেহমন নিয়ে খেলা করে যাবে।
এ বিলাসিতা ধনীদের সাজে।কিংবা যাদের নেই স্নেহ ভালোবাসার বাঁধন তাদের সাজে।সূর্যের টান ছিঁড়ে চলে যেতে বসুন্ধরারও ইচ্ছা হয় কিন্তু সৃষ্টি অটুট রাখতে কখনো কখনো নিজেকেও বাঁধতে হয়।
বেহিসাবী বেপরোয়া জীবন অপরিণত মানসিকতার প্রতিফলন।
আমার ভয় করে।আমার উত্তরপুরুষেরা এ চোরাবালি দেখেও দেখতে পায় না, তাই ছুটে চলে সেই নিষিদ্ধ দিকে, আলোর দিকে দেওয়ালি পোকাদের মতো।কি করে বাঁচানো যায় তোদের!
ওদের চোখে কলুর বলদের মতো ঠুলি। পিছুটান টান মেরে ছিঁড়েখুঁড়ে দিয়ে ছুটে যায় মিথ্যে মরিচীকায়।
আমার শরীর বেয়ে কাঁটা দেয়। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের প্রথম দিনে আসন্ন আত্মীয় নিধনের আশঙ্কায় অর্জুনের যেমন হয়েছিল ।
ভয় হয় এই বুঝি নাড়িতে নাড়িতে যে সংযোগ শিশু ও মায়ের, অনায়াসে কেটে দিয়ে হাসতে হাসতে বেরিয়ে যায় আদমের সাথে ।সব শেষ হলে পর আর জীবন্ত মুখ দেখা হবে না রে ।
আর কত কত অসহায় দুহিতার পিতা মাতা সন্তানের ভুলের মাশুল গুনে যাবে।এ সমাজ আমাকে দেখে মুখ ভেংচায় নাকি আয়নায় নিজেকে দেখি অস্পষ্ট আমার কাছে। সন্তানের ছিন্নভিন্ন শরীর দেখে আমার মন দগ্ধ হয়।কিছু করে উঠতে না পারার অসহায়তায় নিজেকে চাবকাই শুধু।দেহের অন্তঃস্থলে সে দাগ স্পষ্ট হয়। কিন্তু সে আক্রোশ বৃথা।উদাহরণে প্রভাবিত নয় সন্তান।তাই চলে যায় আশঙ্কার সাগরে ভাসিয়ে পিতামাতায়।তারপর রক্ত রক্ত আর রক্তের স্রোত বয়ে যায়।তার দাগ লেগে থাকে কখনো সিলিংয়ের ফ্যানে, কখনো বা রেললাইনে, কখনো বা রাজপথে কখনো ঘরের উঠোনে ,কখনো বা রক্ত পুড়ে অঙ্গার।
যে মুখ আমায় আনন্দ দিত সে মুখ দেখার সাহস হয় না আর।যে দুটো কচি হাত জড়িয়ে ধরতো একদিন আদরভরে গলায় তার খোঁজে গিয়েছে কারা গহন জঙ্গলে।
আমার বৃদ্ধ চোখে অন্ধকার অমাবস্যার।চশমার কাঁচে বাষ্প এত কেন!ওয়াইপার দিয়ে সরানো যায় না বাদলের অঝোর বর্ষণ।
একদিন ঘুম পাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেছি কত কত রাত নিজে জেগে থেকে, এত সহজে তুই ঘুমিয়ে পড়লি সোনামনি।আদরের আকুতি নেই, আধো আধো বুলি নেই,টা টা বাই না বলে সেই যে যাযাবর হয়ে উল্টো দিকে গেলি হাসতে হাসতে, আর ফিরলি না।
আতঙ্কে আতঙ্কে জেগে উঠি।গভীর ঘুম থেকে জেগে উঠি।ঘুম ভেঙে যায়।অনিদ্রা রোগীর মতো ঘুম শেষ হয়ে গেছে।উঠে দেখি এখনো সকাল হতে অনেক বাকি।হয়তো বা সকাল আর আসবে না কখনো। ঝিঁঝিঁ পোকারা তবু ঝিঁঝিঁট সুর তোলে।কুকুরেরা হঠাৎ হঠাৎ হুঙ্কার ছাড়ে।দু একটা পথভোলা কাক কা কা রবে ঘর খুঁজে যায়।আমারই মতো।
আতঙ্কে বুকের ভেতর দমবন্ধ হয় ।কে যেন ভারী পাথর চেপে ধরেছে বুকের ভেতর।ছানার জল বের করে যেমন গোয়ালারা , সেভাবেই সব স্নেহ আদর আবেগ ভালোবাসা ছেঁচে ফেলে দিয়ে শক্তপোক্ত সাদা রক্তহীন মন্ডে পরিণত করবে আমার হৃদয়।
আবার রসে না চোবালে রসকষহীন শুষ্ক আখের ছিবড়ে হয়ে অপেক্ষায় থাকা কখন জ্বালানি হয়ে শেষ হয়ে যাবো।

//////////////সরস্বতী পুজো////২০২১///////

পুনঃ এ পাতার ভাঁজে খুলো না কেউ।না ছেঁড়া খামের মতো অটুট রেখে দিয়ো।যদি ভিতর থেকে রক্ত চুঁয়ে এসে নষ্ট করে দেবে তোমার শরীর।
ঝাঁট দিলে পর আবর্জনার সাথে ডাস্টবিনে চলে যাক।এ খাম খোলার জন্য নয়।গালায় মোড়া গোপন নিষিদ্ধ বিষয়বস্তু যেন।দরকার নেই মুক্ত করে দেবার।
প্রয়োজন নেই আর ছেঁড়াখোঁড়ায়।আরো বেশি রক্তাক্ত হয়ে যাবো।

///////////////////////////////////////////////

মন্তব্য করুন