Skip to content

অসহায় রমুকাকা – সনথ রায়

সেদিন রামু কাকাকে রাস্তায় পেয়ে জিজ্ঞাসা করলাম কেনো উনি নিজের বাড়ী ছেড়ে পাগলের মতো রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ান । উনি আশ্চর্যজনকভাবে উত্তর দিয়ে বললেন “হাতে চুরি লাগুক বা চুরিতে হাত, সবসময় হাত ই কাঠবে, পরিবারের কেউই আমাকে সহ্য করতে পারে না । পরিবারের যেকেউ দুষ করুক না কেনো সবসময় আমার উপরেই দুষ এসে পরে কিন্তু আমার পরিবার ছেড়ে আসা ঠিক হয়নি কিন্তু কি করবো পরিস্থিতিটাই এরকম আমাকে বিমুর করেছে । এখন হয়তো আর কোনোদিন বাড়ী ফেরা হবে না । সারাজীবন হয়তো রাস্তায় রাস্তায় কাঠাতে হবে” ।
পরের প্রশ্ন রূপে ওনাকে জিজ্ঞাসা করলাম ”পরিবারের লোকেরা কি কোনোদিন আপনার খুঁজখবর নেয়নি নাকি ” ? ওনি উত্তরে কেঁদে কেঁদে বললেন ” *না*” । আরও বললেন ” এই দিনটা দেখার জন্যই হয়তো খেটে খুঁটে মাতার ঘাম পায়ে ফেলে পরিবারটি টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করেছি । আর ওরা দেখতে আসবে দূরের কথা হয়তো ওরা জানেও না আমি বেচেঁ আছি নাকি মরে গেছি” ।
আর জানো বাবা ছেলে মেয়েদের কোনোদিন খালি পায়ে স্কুলে যেতে দেইনি । নিজে ছেড়া কাপড় পরে সারাদিন পরিশ্রম করে যতটুকু সম্ভব আমি করেছি, ওদের শিক্ষিত করে তুলেছি । এখন ছেলেটি সরকারি চাকরি করে শুনলাম । মেয়েটির লেখাপড়ার শেষ বর্ষ । জানো বাবা ওদের দেখার জন্য কয়েকবার গিয়েছিলাম বাড়িতে কিন্তু ওরা অচেনার মত অভিনয় করে দরজা বন্ধ করে দেয় ।
কথাগুলো বলতে বলতে চিৎকার করে কাদতে লাগলেন । ওনার কান্না কোনো সাধারণ কান্না নয়, স্নেহ মায়া-মমতায় জড়ানো সেই মায়াময়ী কষ্টেই কান্না এটা । তারপর ওনি আমাকে অনুরোধ করে বললেন “বাবা কয়েকটা পয়সা দেবে অনেক খিদে পেয়েছে কিছু খাবো” । রামু কাকার কথাগুলো শুনার পর আর কোনো প্রশ্ন করতে পারি না । ওনার কান্না দেখে আমার চোখে ও জল এসে গেছিলো । মনে মনে ভাবলাম এটাই হয়তো কারণ যে রাস্তায় এতো পাগল দেখা যায় এবং দেশে এতো বৃদ্ধাশ্রম ।
ভগবানের কৃপায় পৃথিবীর কোনো বাবা যেনো এই পরিস্থিতির স্বীকার না হন । রামু কাকাকে সান্তনা দেওয়ার প্রয়াস করে বললাম ” চিন্তা করোনা কাকা দেখবে একদিন সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে । দেখবে তারাও একদিন নিজের ভুলের শাস্তি পাবে, আর নিজের ভুল বুঝতে পারবে । এই বলে কাকার হাতে 200 টাকা ধরিয়ে দিয়ে সেখান থেকে চলে এলাম আর কোনো প্রশ্ন করার সাহস পেলাম না ।

মন্তব্য করুন