Skip to content

অভিলাষ এক থেকে বিশ পর্ব ফুল হিস্ট্রি – মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

অভিলাষ পর্বঃ (০১)
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

পৃথিবীতে প্রতিটা মানুষের জীবনে থাকে কিছু স্বপ্ন, কিছু আশা, থাকে কিছু চাওয়া পাওয়া। এই স্বপ্ন আশা, চাওয়া পাওয়াকে ঘিরেই মানুষের জীবন। জীবন বড়োই বৈচিত্র্যময়। বৈচিত্র্যময় জীবনের সাথে লড়াই করেই মানুষকে টিকে থাকতে হয় এ পৃথিবীতে। টিকে থাকতে হয় যুদ্ধ করে  জীবন যুদ্ধের রণক্ষেত্রে। আর এই যুদ্ধ যদি হয় সৎ পথের, তবে ইহকাল পরকাল, উভয় জগতেই মানুষের জন্য কল্যাণ নিহিত আছে। আমরা মহান আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টির সেরা জীব হয়ে এ পৃথিবীতে আগমন করেছি। আমাদের লক্ষ্য থাকতে হবে অটুট ও সৎ। তবেই আল্লাহ ও  রাসুল (সঃ) এর নৈকট্য লাভ করা সম্ভব হবে। আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য লাভের জন্য আমাদের বিবেককে, মনুষ্যত্বকে কাজে লাগাতে হবে। কারণ, মহান আল্লাহ তায়ালা৷ মানুষকে আশরাফুল মাখলুকাত সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে প্রেরণ করেছেন এবং  মানুষের মাঝে হালাল হারাম দুটোই দিয়েছেন। আর এটা নির্বাচন করার জন্য সবচাইতে বড় হাতিয়ার দিয়েছেন মানুষের মধ্যে  বিবেক ও মনুষ্যত্ব। যার মনুষ্যত্ব নাই, সে কখনো  মানবিক হতে পারে না ; সে মনুষ্যত্বহীন। যার বিবেক নাই, সে কখনো বিবেকবান হতে পারে না, সে বিবেকহীন। সে হয় পশুর সমতুল্য বা তার থেকেও অধম চতুষ্পদ জন্তুর ন্যায়।  চতুষ্পদ জন্তু শুধু গরু ছাগল, ভেড়া বকরিই নয়। বরং এর থেকেও বনের নিকৃষ্টতম প্রাণি। যা মহান আল্লাহ তায়ালা মানুষের জন্য হারাম বলে ঘোষণা করেছেন। বিবেকহীন ব্যক্তি এর থেকেও অধম। তেমনি এক রোমান্টিক সামাজিক মিষ্টি প্রেম-ভালোবাসার কাহিনি নিয়ে এই অভিলাষের যাত্রা।

বাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে এক সুবিশাল পদ্মা নদী। কী নয়নাভিরাম অপরূপ প্রাকৃতিক দৃশ্য!  একবার দেখলে তা বারবার দেখতে ইচ্ছে করে। সবার নজর কাড়ে। এ পদ্মা নদীর পাশ দিয়েই গড়ে উঠেছে ইসলামপুর নামের এক সুন্দর পল্লিগ্রাম। এ গ্রামে বাস করতেন আব্দুর রহিম নামের এক সরকারি চাকরিজীবী। তাঁর স্ত্রী রহিমা বেগম।  তাঁর ছিলো চারটি সন্তান। তিনটি মেয়ে ও একটি ছেলে। বড় মেয়ের নাম চম্পা, মেজো মেয়ে জবা, সেজো মেয়ে শাপলা এবং ছোট ছেলে জিয়াদ। এ চার সন্তান নিয়ে আঃ রহিম সাহেব খুব সুখ স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে জীবনযাপন করেন। দিন যায়, মাস যায়, বছর যায় ধীরে ধীরে সন্তনেরা বেড়ে উঠে। বড় মেয়ে চম্পা অনেক বড় হয়ে গেছে। বিয়ের উপযুক্ত হয়েছে। জবা, শাপলা ও জিয়াদ তার থেকে বেশ কয়েক বছরের ছোট বড়। কিন্তু তারা পরস্পর ভাই বোন  সবাই দেখতে অনেক সুন্দর। কিন্তু সবার থেকে সুন্দর শাপলা। কাজেও চটপটে।  সবাই তাকে সবার থেকে বেশি ভালোবাসতো। কারণ,  সে যেমন ছিলো চাঁদের মত সুন্দর, তেমন ছিলো তার কাজও খুব সুন্দর, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন।  সে খুব দ্রুততার সহিত সকল কাজ সম্পন্ন করতে পারে। বাবা মাও শাপলাকে ছাড়া কিছুই বুঝে না। অথচ কোনো সন্তানের প্রতিই দরদ কম নাই। তাদের বড় আপু চম্পার বিয়ের দিনধার্য ঠিক করা হয়েছে। ছেলেও দেখতে সুন্দর ও লম্বা চওড়া। সরকারি চাকরিজীবী। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তাঁর নাম সোলায়মান। চম্পা ও সোলায়মান উভয়ের পরিবারের সম্মতিক্রমেই ইসলামি শরীয়ত মোতাবেক তাঁদের বিবাহের আয়োজন করা হয়েছে আগামীকাল ১ লা সেপ্টেম্বর ১৯৯৫ ইং রোজ শুক্রবার। আনন্দের বন্যা বয়ে চলেছে তাঁদের পরিবারে। শাপলা ছিলো যেমন সুন্দর, তেমন মেধাবী, তেমন সুরেলা কণ্ঠ। সবেমাত্র পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী। তার যাদুমাখা কণ্ঠে সকলেই মুগ্ধ হয়।
শাপলা বলে, বড় আপু!  তোমার কালকে বিয়ে আজ সারারাত আনন্দ ফূর্তি করবো নাচবো গাইবো। তুমি আমাদের সাথে থাকবে। তোমাকে একটুও ঘুমোতে দেবো না।

বড় আপু চম্পাঃ দুষ্টু মেয়ে কোথাকার, তোর এই দুষ্টুমি কবে দূর হবে? 
শাপলাঃ আপু আমার দুষ্টুমি কখনোই দূর হবে না। আজ সারারাত গাইবো,  সারারাত নাচবো, কত্ত মজা করবো! হাহাহাহা,,,,,,,,,

অভিলাষ পর্ব (০২)
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

চম্পাঃ এই শাপলা!  ভালো হবে না কিন্তু। সর আমার কাছ থেকে। দূর হ।  বড় আপুর সাথে কীভাবে কথা বলতে হয়, তাও  জানিস না? 

শাপলাঃ আপু!  তোমার সাথে আমার আড়ি। আর কথা বলবো না। এই কান ধরলাম। এই দিনটা কি জীবনে আর কখনো কোনোদিন পাবো, আর কখনো কোনদিন আসবে ?  একটা দিন একটু আনন্দ করতে চাইলাম, তোমার সহ্য হলো না। আমার বিয়ের সময় আমি একাই নাচবো, গাইবো কত্ত মজা করবো! তখন কিন্তু কেউ বারণ করতে পারবা না। কারণ, বিয়েটা আমার, হাহাহাহা। থাকো, আমি চললাম আমার ঘরে। আমার অনেক পড়া আছে । সামনে ফাইনাল ও বৃত্তি পরীক্ষা আছে। আমাকে উত্তীর্ণ হতেই হবে।  আমি এখন পড়তে বসবো। সারারাত পড়বো। আমাকে কেউ বিরক্ত করবা না, ওকে ?

চম্পাঃ লক্ষ্মী বোন আমার, বড় আপুর উপর রাগ করতে নেই। আমি তোমাকে রসিকতা করে বললাম। এসো আপু এসো, তোমার যা ইচ্ছে তাই করো। তোমাকে আর বারণ করবো না, লক্ষ্মী বোন আমার।

শাপলাঃ ঠিক আছে আপু, তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। সে জবাকে ডাক দেয়।
এই জবা আপু !  তুমি কোথায় ?  তাড়াতাড়ি এসো। সময় বয়ে যাচ্ছে। এসো আমরা খুব দ্রুত বিনোদনের আয়োজন করি।

জবাঃ ঠিক আছে বোন, আমি আসছি। একটু কাজ আছে। হাতের কাজটা সেরে নেই। নইলে আম্মু আবার বকা দেবে। তুই শুরু কর্। আমি একটু পরে আসছি।
শাপলাঃ আম্মু বকা দেবে না। আম্মু জানে,  আজকে আমাদের আনন্দের দিন, বিনোদনের দিন। সবচাইতে সুখের দিন।
শাপলা যেন নাছোড়বান্দা। কোনক্রমেই জবাকে ছাড়তে চায় না। অবশেষে জবার আম্মু জবাকে বলে,
জবা!  যাও তুমি পাগলীটারে সামলাও। জবা খিক করে হেসে বললো,
আম্মু!  তোমার শাপলা শুধু পাগলীই না, বরং সে বিশ্ব পাগলী।

শাপলাঃ জবা আপু!  তুমি এ কী বললে!  আমি বিশ্ব পাগলী!  আর তুমি বিশ্বের মহা পণ্ডিত, তাই না?  তোমাকে সেলুট আপু, তোমাকে সেলুট। এবার তোমার দোহাই লাগে আমার সাথে এসো।
জবাঃ ঠিক আছে লক্ষ্মী বোন আমার, চলো চলো, আর দেরি নয়। আমরা এখনই আমাদের আয়োজন শুরু করবো।

তাদের সাথে তাদের বান্ধবীদেরও কয়েকজন আসলো এবং রঙ মাখামাখি শুরু করে দিলো। সারা বাড়ি আলোক রশ্মিতে ঝলমলে আলোকিত।
শাপলা তার জবা আপুকে বলে,
জবা আপু!  আজ এই আনন্দঘনমুহুর্তে তোমাকেই গাইতে হবে।
আর বড় আপু! তুমি আমাদের মাঝখানে হলুদ শাড়ি পরে বসে থাকবা। আমরা তোমাকে ঘিরে  হলুদের রঙে রাঙিয়ে গাইবো।
জবাঃ লক্ষ্মী বোন আমার  তুই তো জানিস, আমি গাইতে পারি না। তোরা গেয়ে যা,  আমি তোদের সাথে মুখ মিলাবো।

শাপলাঃ আপু তোমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না। আমার বিয়েতে কিন্তু তোমাকেই গাইতে হবে। আর যদি তুমি না গাও, তবে আমি বিয়েই করবো না, বলে দিলাম কিন্তু।

বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে যাবো। কেউ আর হাসি ধরে রাখতে পারলো না। সবাই হাসাহাসি শুরু করে দিলো। পাশে থেকে তাদের বান্ধবীর একজন,  নাম হাসনা বলে উঠলো, তোরা এভাবে হাসাহাসি করবি, না কাজ শুরু করবি? আমি কিন্তু বেশিক্ষণ থাকতে পারবো না, চলে যাবো। কারণ,  আব্বু জানতে পারলে বকা দিতে পারে।

জবাঃ শাপলা শুরু কর্।  তুই পিচ্চি মানুষ, তুই আগে শুরু কর্। আমরা পরে সুর মিলাবো।

শাপলা তার সুরেলা কণ্ঠে মিষ্টি হাসি দিয়ে গাইতে শুরু করলো,,,,

আজকে আপুর গায়ে হলুদ কালকে হবে বিয়ে,
আনন্দতে বর ও কনের নাচবে দু’টি হিয়ে।।

স্বপ্ন হাজার মনের মাঝে
সাজবে আপু বিয়ের সাজে,,
দুলা ভাইয়ে নিয়ে যাবে পাগড়ি মাথায় দিয়ে।

আজকে আপুর গায়ে হলুদ কালকে হবে বিয়ে,
আনন্দতে বর ও কনের নাচবে দু’টি হিয়ে।।

তিন কবুলে করবে আপু
ভিনদেশীকে আপন,
তার কাছেতে পূরণ হবে
আপুর মনের স্বপন।।

দু’টি চোখে স্বপ্ন আঁকে
জীবন সুখের নদীর বাঁকে,,
দুলা ভাইয়ে নিয়ে যাবে লাল শাড়িটা পরিয়ে।

আজকে আপুর গায়ে হলুদ কালকে হবে বিয়ে,
আনন্দতে বর ও কনের নাচবে দু’টি হিয়ে।

মায়ার বাঁধন ছিন্ন করে
যাবে পরের বাড়ি,
অঙ্গে জড়ায় লাল পেড়ে ওই
বেনারসি শাড়ি।।

আপুর মলিন বদনখানি
বাবা মায়ের চোখের পানি,
মাওলা তুমি সুখে রেখো কাঁদি যে বুক ভিজিয়ে।

আজকে আপুর গায়ে হলুদ কালকে হবে বিয়ে,
আনন্দতে বর ও কনের নাচবে দু’টি হিয়ে।

অভিলাষ পর্বঃ (৩)
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

“শাপলার বোন চম্পার বিয়ের দিন”
===========================

আজ পহিলা সেপ্টেম্বর ১৯৯৫ ইং রোজ শুক্রবার।  চম্পার বিয়ের দিন।
আনন্দ বিনোদনের মধ্য দিয়ে বিয়ের আগের রাত, সারারাত কেটে গেলো। আজকে চম্পার বিয়ে। সকাল হয়েছে। খুব ভোর বেলা। আব্দুর রহিম ও তাঁর স্ত্রী রহিমা বেগম ফজরের নামাজ পড়েছে। আব্দুর রহিম ফজরের নামাজ মসজিদে জামায়াতের সাথে আদায় করে বাড়িতে এসে তাঁর স্ত্রী রহিমাকে ডাক দেন,

রহিমা! কই তুমি?  এদিকে এসো।
রহিমাঃ এই তো আমি, কি বলবেন বলেন?
আঃ রহিমঃ ফজরের নামাজ পড়ে এসে দেখি কারও কোনো চালা শব্দ নাই। সব নীরব। কেউ কি ঘুম থেকে উঠেনি? নামাজ পড়ে কোরআন তিলাওয়াত করেনি?

রহিমাঃ জি,আমি নামাজ পড়ে সূরা ইয়াসিন খতম করে তাড়াতাড়ি উঠে পড়েছি কাজের জন্য। আজ পবিত্র জুম’য়ার দিন, আমাদের চম্পা মা-মণির শুভ বিবাহের দিন।
কাল সারারাত আনন্দ বিনোদন করে আজ সকালে ওরা ঘুম থেকে উঠতে পারেনি। সবাই ঘুমে মগ্ন।

আঃ রহিমঃ মহান রব্বুল আলামীন আমাদের সৃষ্টি করেছেন শুধুমাত্র তাঁর ইবাদত করার জন্য। আর আমরা যে সমস্ত কাজকর্ম করি তা শুধু আমাদের এই প্রার্থিব জীবনের আনুষঙ্গিক মাত্র। যেহেতু আমাদের বেঁচে থাকার জন্য নিয়মিত খাওয়া দাওয়া পানাহারের প্রয়োজন।  তাই আমাদের প্রতিনিয়ত কাজকর্মের মাধ্যমে জীবন অতিবাহিত করতে হয়। তার মানে এই নয় যে আল্লাহ ও তাঁর বিধিবিধান ভুলে, তাঁর নামাজ রোজা বাদ দিয়ে জীবনের সুখ স্বাচ্ছন্দ্যের মোহে পড়ে বিলাসিতার সহিত জীবনযাপন করা। তুমি তাদেরকে কেন নামাজের জন্য ডাকো নি?
এ দায়িত্ব কী তোমার ছিলো না?

রহিমাঃ জি, আপনি ঠিক বলেছেন। এ সমস্ত দায়-দায়িত্ব আমাদেরই। আমি ওদের সবাইকে ডেকেছি। কিন্তু চম্পা ছাড়া কারও সাড়া পাইনি। এ কথা বলেই তিনি চম্পাকে ডাক দেন। চম্পা ঘুম থেকে উঠে বলে ,জি আম্মু, কী হয়েছে?
রহিমাঃ তোমাকে নামাজের জন্য ডাকলাম, সবাইকে আহ্বান করতে বললাম। তুমি কি তাদেরকে ডেকেছো, তুমি কি নামাজ পড়েছো?

চম্পাঃ আম্মু!  আমি ওদের সবাইকে নামাজের জন্য ডেকেছি এবং আমি নামাজ পড়ে আবার ঘুমিয়ে গেছি, চোখে ঘুম ঘুম ভাব ছিলো তাই।
রহিমাঃ জবা, শাপলা ও জিয়াদকে ডাক দাও।

চম্পাঃ ঠিক আছে আম্মু, আমি এখনই ডাকছি বলেই শাপলার রুমে চলে যায় এবং ডাক দেয়, শাপলা! ও শাপলা!  ঘুম থেকে ওঠো। শাপলা উঠে না।  সে জবাকে ডাক দেয়। জবা দ্রুত উঠে বলে, কী হয়েছে আপু এত সকাল সকাল ডাকাডাকি করছো কেনো?
চম্পাঃ তোর কি মাথা খারাপ হয়েছে? আজকে কোন দি তুই জানিস না?

জবাঃ হ্যাঁ আপু,  আমি তো জানি। আজকে তোমার বিয়ের দিন। তাতে কী হয়েছে,  তোমার কি চোখে ঘুম নাই? 

চম্পাঃ আরে পাগলী, আমার চোখে ঘুম আছে। আম্মু নামাজের জন্য ডেকেছে। আমি উঠে নামাজ পড়ে আবার ঘুমিয়ে গেছি। আব্বু মসজিদ থেকে নামাজ পড়ে আসার পর বাসায় কিয়ামত শুরু হয়ে গেছে।

জবাঃ কী হয়েছে আপু,  কী হয়েছে!  তাড়াতাড়ি খুলে বলো।
চম্পাঃ আমরাকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখে আব্বুর মাথা নষ্ট, আমরা নামাজ না পড়ে ঘুমাচ্ছি কেন?  তুই কী নামাজ পড়েছিস?

জবাঃ হ্যাঁ আপু, তুমি ডাকার পর নামাজ পড়ে আমিও ঘুমিয়ে পড়েছি। শাপলা মনে হয় নামাজ পড়েনি আর জিয়াদ তো উঠেই নি।
চম্পাঃ আরে জিয়াদের কথা বাদ দে, সে তো অনেক ছোট। তাঁর এখনো নামাজ ফরজ হয়নি। কিন্তু শাপলার বিষয়টা ব্যাতিক্রম।
আমি শাপলাকে ডাকলাম কিন্তু সে উঠলো না।

জবাঃ আপু!  শাপলা কাল সারারাত আনন্দ ফূর্তি করেছে। তার শরীরটা খুব ক্লান্ত। তাই সে ঘুম থেকে উঠেনি। এ কথা আব্বুকে জানতে দিওনা, নইলে খুব বকাবকি করবে।  সে তো প্রতিদিন সবার আগে ঘুম থেকে উঠে এবং আমাদেরকেও ডেকে দেয়। আজ তাকে আব্বুর বকা থেকে বাঁচিয়ে দাও।

চম্পাঃ চল্ তার ঘরে, তাকে ডেকে উঠাই।
জবাঃ চলো আপু।

চম্পা ও জবা তার ঘরে গিয়ে ডাক দেয়,
এই শাপলা!  ওঠ ওঠ। আব্বু ডাকাডাকি করছে। চম্পা জবাকে বলে তুই আব্বুকে বল আমরা নামাজ পড়েছি। জবা তার আব্বুকে গিয়ে বলে, আব্ব,আব্বু!  আমরা নামাজ পড়েছি।
তার আব্বু আঃ রহিম  খুব আনন্দ চিত্তে বললো – আলহামদুলিল্লাহ।

জবা! তুমি শাপলা সবাই মিলে খুব দ্রুত হাতের কাজগুলো গুটিয়ে নাও। কিছুক্ষণ পরেই লোকজন আসা শুরু করবে।

জবাঃ ঠিক আছে আব্বু আপনি কোনো চিন্তা করবেন না। সব আমরা দেখছি বলেই তার চম্পা আপুর কাছে চলে গেলো শাপলার ঘরে। তারা এত ডাকাডাকি করার পরেও শাপলা  ঘুম থেকে ওঠেনা,  শুধু উঁ উঁ করে। তারা দু’জনে দিশেহারা হয়ে জবা চম্পাকে বলে আপু!  ওর গায়ে পানি ঢালো।

চম্পাঃ আমি গায়ে পানি ঢাললে সমস্যা আছে। এক কাজ কর,  তুই ওর গায়ে পানি ঢাল্। আমি ট্যাকেল দেবো। চম্পার কথা শুনে জবা এক বালতি পানি নিয়ে এসে দিলো শাপলার গায়ে ঢেলে। শাপলা চিৎকার দিয়ে ওঠে,  কে, কে, কে?
জবা হাসি চেক দিতে না পেরে খিলখিল করে হাসতে হাসতে বাইরে চলে যায় । জিয়াদ বাচ্চা ছেলে দৌড় দিয়ে শাপলার ঘরে এসে বলে,
আপু, আপু কী হয়েছে তোমার ?  শাপলা জিয়াদকে ধাক্কা দিয়ে বলে,
এই জিয়াদ! এই কাজ কে করলো?  তাড়াতাড়ি বল, নইলে তোকে বালতির পানিতে চুবানি খাওয়াবো। জিয়াদ ভয়ে জানি না বলে দৌড় দিয়ে বাইরে চলে গেলো। আর শাপলা একাই বিড়বিড় করে বলে, এ কাজ কে করলো?  আমি তাকে উঁচিৎ শিক্ষা দেবো। সে জবাকে ডাকে, জবা আপু, জবা আপু!  এ কাজ কে করলো তাড়াতাড়ি বলো। জবা হাসে কিন্তু কিছু বলো না। কারণ,  সে-ই তো তার গায়ে পানি ঢেলেছে, পানি ঢেলেই দৌড় দিয়ে বাইরে চলে এসেছে। জবা তার এই চেঁচামেচি দেখে তাকে ঘরে ডেকে নিয়ে সব খুলে বলে,
শাপলা!  যা হয়েছে একদম চুপে যা। নইলে আব্বু যদি জানতে পারে, তুই ফজরের নামাজ পড়িস নি, তবে কপালে শনি আছে কিন্তু।  তোকে জাগ্রত করার জন্য আমরা এ কাজ করেছি। তোর গায়ে এক বালতি পানি ঢেলে দিয়েছি। শাপলা রেগে একাকার। কিন্তু তার আব্বুর ভয়ে একদম চুপ! ,,,,,,,,,,,,,,,,

অভিলাষ পর্বঃ (৪)
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

আজ পহিলা সেপ্টেম্বর রোজ শুক্রবার।
বর সোলায়মান এর সাথে চম্পার বিয়ে।

সকাল ১০টা। সোলায়মানের বন্ধু রিয়াদ, ফায়াদ, তামিম তিন বন্ধু মিলে তাদের বাড়িতে এসেছে।
রিয়াদঃ দোস্ত আজ কি বার, কোন দিন?  বলতো।
সোলায়মানঃ আমার তো মনে নাই, তুই বল।
ফায়াদঃ মনে থাকবে কি করে?  রাজকন্যার স্বপ্নে বিভোর। চোখে তন্দ্রা তন্দ্রা ভাব। কোন বনে কোথায় যেন হারিয়ে গেছে দোস্ত আমার?  বুঝি এ জগতে আর নাই।

তামিমঃ এই তোরা থাম,  আমার দোস্তকে তোরা এত জ্বালাতন করিস ক্যান?  আমার দোস্ত কি মূর্খ ?  ভুলে গেলে চলবে না। সে কিন্তু প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক।

রিয়াদঃ প্রাইমারির প্রধান শিক্ষক অর্থ কী জানিস? 
তামিমঃ হ্যাঁ, জানি।
রিয়াদঃ কী বলতো?
তামিমঃ আরে বন্ধু। প্রাইমারির প্রধান শিক্ষক মানেই তো একজন গরুর ছাগলের প্রধান রাখাল। গরু ছাগলগুলোকে যেমন এই র র র, রে রে রে, রা রা রা বলতে হয় এবং কখনো কখনো পিছনে পিছনে ছুটতে হয়। যাতে করে পরের ক্ষেতে না লাগে। ঠিক তেমনি বাচ্চা বাচ্চা ছেলেমেয়েদের পেছনে দৌড়াদৌড়ি করতে হয়। কখন এর নালিশ, কখন ওর নালিশ। এ বলে স্যার! আমাকে বসতে দেয় না বেঞ্চে। ও বলে স্যার! আমাকে মেরেছে। সে বলে স্যার! আমার খাতা কলম চুরি করে নিয়েছে, ইত্যাদি। এই হলো প্রাইমারির প্রধান শিক্ষকের কাজ গরু ছাগল চরা। 

রিয়াদঃ বন্ধু তুমি ঠিক বলেছো,  প্রাইমারির শিক্ষকগণ আসলেই রাখালের মতই পরিশ্রম করে। ছোট ছোট বাচ্চারা অবুঝ শিশু। এরা কিছুই বুঝেনা। শুধু হৈচৈ হেচৈ করে, চেঁচামেচি করে, কান ঝালাপালা করে দেয়। এদেরকে মানুষের মত মানুষ করতে হয়। এরা কাঁচা কঞ্চি, নরম তুলতুলে কাদামাটি। এদেরকে স্নেহ মমতা ভালোবাসা দিয়ে অ আ ক খ, এ বি সি ডি, এক দুই  তিন, অন টু থ্রী করে, একটা একটা করে বর্ণ তাদের মাথায় ঢুকিয়ে দিতে হয়। ধীরে ধীরে কচিকচি বাচ্চা গুলো বড় হয়ে ওঠে। কিছু বুঝার ক্ষমতা অর্জন করে। এক দুই তিন করে পাঁচটি বছর অতিক্রম করে ক্লাস ফাইভে ফাইনাল পরীক্ষা দিয়ে হাইস্কুলে পদার্পণ করে। তখন তারা অনেক কিছুই বুঝে যায়। বুঝে যায় লেখাপড়ার প্রতি গুরুত্বের কথা। বুঝে যায়, মাতাপিতা, শিক্ষক গুরুজনের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান করার কথা। একে একে উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ, ভার্সিটি অতিক্রম করে। লেখাপড়ার  ইতি টেনে একটা সুন্দর জীবনের সন্ধান পায়। তাদের জীবন হয় সুখী ও সমৃদ্ধশালী।

প্রাইমারি শিক্ষক মানেই মানুষ গড়ার প্রধান কারিগর, প্রধান হাতিয়ার। এঁদেরকে জানাই অন্তরের অন্তস্তল থেকে শ্রদ্ধা সম্মান ও স্যালুট। আমার দোস্তের মত ভাগ্য ক’জনের আছে?  আমারও একটা স্বপ্ন ছিলো শিক্ষক হওয়ার। কিন্তু আজকে হয়েছি ইঞ্জিনিয়ার। তবুও আল্লাহর কাছে লাখো কোটি শুকরিয়া –  আলহামদুলিল্লাহ।

তামিমঃ এই!  তুই কি তোর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার জন্য এখানে এসেছিস?  তোর স্বপ্ন বাস্তবায়নের আগে দোস্ত সোলায়মান এর স্বপ্ন বাস্তবায়নের কথাটা  ভাব। দোস্ত আমার চম্পার চিন্তায় অধীর হয়ে আছে।

ফায়াদঃ চম্পা আবার কে হলো? 
তামিমঃ সে সোলায়মান এর হবু বৌ।  তার নাম জানিস না?
রিয়াদঃ ও—— চম্পাকে চিনস না?  আরে বেকুব, তোর গার্লফ্রেন্ড চম্পা।

ফায়াদঃ নাউজুবিল্লাহ!  দোস্ত!  তুই জানিস না। আমার জীবনে কোনো গার্লফ্রেন্ড ছিলো না। কোনো মেয়ে কোনো ছেলের গার্লফ্রেন্ড হবে, এটা আমার পছন্দ না। মেয়ে মানুষের কোনো ছেলে বন্ধু থাকতে পারে না। হতে পারে সে ক্লাসমেট, হতে পারে পাড়াপ্রতিবেশি ভাই বোনের সম্পর্ক। কিন্তু গার্লফ্রেন্ড, বয়ফ্রেন্ড না। গার্লফ্রেন্ড, বয়ফ্রেন্ড মানেই দু’জনের মাঝে একটা অনৈতিক সম্পর্ক তৈরী হওয়া।  সেখানে থাকে দু’জনের মাঝে কিছু গোপনীয় চাওয়া পাওয়া।

তাদের মাঝে, (বিশেষ করে ছেলেদের কথা বলি) একটা চাওয়া পাওয়ার আকাঙ্খা, অভিলাষ থেকেই যায়। আর এটা থেকেই হয় তাদের যতসব খারাপ কর্মকাণ্ড। যা সমাজ ও দেশ বহির্ভূত। ইসলাম বিরোধী। ইসলাম কখনোই এমন সম্পর্ক মেনে নেয় না। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে এমন ঘটনা ঘটলে মেয়েদের নানান সমস্যা হয়। সমাজ তাকে অসতী বলে আখ্যায়িত করে।

এই সম্পর্ক মেয়েদেরকে অসতী করে দেয়, করে দেয় কলঙ্কিত। আর এ কলঙ্কের বোঝা সারাজীবন মাথায় বহন করতে হয়। 
তাই আমার কাছে বয়ফ্রেন্ড, গার্লফ্রেন্ড শব্দ দু’টি একেবারেই অপছন্দনীয় এবং ইসলাম বিরোধী সম্পর্ক। এর পরিণামই আমার কাছে মেয়েদের কলঙ্ক ছাড়া আর কিছুই না।আমি তোদের ভাষায় বুঝে নিয়েছি। আমাদের হবু ভাবির নাম চম্পা।

রিয়াদঃ (হাসতে হাসতে) বাহ!  দারুণ নীতি কথা শোনালিরে বন্ধু!
ফায়াদঃ আরে বন্ধু!  এটাই বাস্তবতা ঘাঁটি কথা। এর জন্যই কলঙ্কের বোঝা নিয়ে নারীকে ঘুরতে হয় আজীবন। অনেক মেয়েকে স্বামীর ঘরে স্বামী ও শ্বশুর, শাশুড়ি, দেবর, ননদের কাছে খোঁটা শুনতে হয়, হয় নির্যাতনের শিকার। অনেকের আবার বিয়েও হয় না। মাথায় কলঙ্কের বোঝা নিয়ে সারাজীবন ঘুরতে হয়।

কারণ, সাধারণত বয়ফ্রেন্ডগুলো গার্লফ্রেন্ড নিয়ে ফূর্তি করে, রঙ্গ লীলায় মত্ত থাকে। ছলেবলে কলাকৌশলে নিজের দৈহিক চাহিদা পূরণ করে। নানান বাহানা ও অজুহাত দেখিয়ে কেটে পড়ে। তখন তার গার্লফ্রেন্ডটি জীবনের সর্বস্ব হারিয়ে সমাজে কলঙ্কিত হয়ে বসে থাকে। হয় পরিবারের বোঝা, হয় সমাজের বোঝা।

বয়ফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ড সম্পর্কে বিখ্যাত ব্যক্তিদের কিছু উক্তি  কান পেতে শোন,  তাহলে আশাকরি তোদের বুঝতে  আর অসুবিধা হবে না। ক্লিয়ার বুঝতে পারবি।

১। “কোনো যুবক যুবতী কখনোই কারো প্রকৃত বন্ধু হতে পারে না।
কারণ, তাদের এই বন্ধুত্বের মাঝে কারো না কারো মনের চাওয়া পাওয়ার আকাঙ্খা থাকবেই। যা পরবর্তী সময়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।
কাজেই বয়ফ্রেন্ড ও গার্লফ্রেন্ড বয়কট করাই তাদের জন্য মঙ্গল”।
(মোঃ ইব্রাহিম হোসেন রাজশাহী)

২। শেক্সপিয়র  বলেছিলেন , “একজন ছেলে কখনো একজন মেয়ের বন্ধু হতে পারে না, কারণ এখানে  আবেগ আছে , দৈহিক আকাঙ্খা আছে” ।

৩।  “একই কথা বলেছেন আইরিশ কবি Oscar Wilde.  “নারী এবং পুরুষের মাঝে কেবলই বন্ধুত্বের সম্পর্ক থাকা অসম্ভব । যা থাকতে পারে তা হলো আকাঙ্খা, দুর্বলতা, ঘৃণা কিংবা ভালোবাসা”।
“বন্ধুত্বের সম্পর্ক নিয়ে ঢোকা একটা ভণ্ডামী। শুধুই সুযোগের অপেক্ষা। সবশেষ পরিণতি পরকীয়া”।

৪। হুমায়ূন  আহমেদ বলেছিলেন , “ছেলে আর মেয়ে বন্ধু হতে পারে কিন্ত তারা অবশ্যই প্রেমে  পড়বে । হয়তো খুবই অল্প সময়ের জন্য অথবা ভুল সময়ে । কিংবা খুবই দেরিতে , আর  না হয় সব সময়ের জন্য । তবে প্রেমে তারা পড়বেই । শুধুই সুযোগের অপেক্ষা”।

প্রকৃতপক্ষে,ছেলে এবং মেয়েতে শুধুমাত্র বন্ধুত্বসুলভ আচরণে অবস্থান করা কখনোই সম্ভব নয়, এটা অসম্ভব ও সম্পূর্ণ  ইসলাম পরিপন্থী, সুশীল সমাজ বিরোধী।

কেননা, চুম্বক আর লোহা  কখনো পাশাপাশি থাকতে পারে না। চুম্বক লোহাকে আকৃষ্ট করবেই। এটাই স্বাভাবিক, অস্বাভািক এর কিছুই নয়। যদি কেউ তা মানতে না চায়,  এড়িয়ে যায় ; তবে মনে করে নিতে হবে নিশ্চয়ই তার ভেতরে অসৎ উদ্দেশ্য আছে, আছে ভণ্ডামি ও ধোঁকাবাজের একটা গোপন কৌশল। আগুন ও মোমের সাথে যতই নিবিড় সম্পর্ক থাকুক না কেন, আগুনের তাপে মোম গলবেই এতে কোনো সন্দেহ নাই।

তামিমঃ এই! থাম থাম, অনেক হয়েছে।
তুই তো দেখছি  বিখ্যাত মুফতি হয়ে গেছিস।
যাইহোক, সত্যি বন্ধু আজকে সোলায়মান এর বিয়ের দাওয়াত খেতে এসে আমরা বন্ধুবান্ধব মিলে অনেক অনেক শিক্ষণীয় বিষয় আলোচনা করলাম এবং অনেক কিছু জানতে পারলাম। এ বিষয়টি প্রত্যেক অভিভাবকদের নজরদারি করা প্রয়োজন।

ফায়াদঃ (ঘড়ি দেখে) আরে বন্ধু! গল্পে গল্পে সময় তো অনেক হয়ে গেছে, টেরই পাইনি। তাড়াতাড়ি চল্,  বরযাত্রীর যাত্রার ব্যবস্থা কর। আজ শুক্রবারের দিন নামাজ কালামেরও ব্যাপার আছে।
তামিমঃ হ্যাঁ, ঠিক বলেছিস বন্ধু। তাড়াতাড়ি প্রস্তুতি নে ।  আমরা কন্যা বাড়িতে গিয়ে জুম’য়ার নামাজ পড়বো ; তারপরেই বিবাহের আয়োজন করবো ইনশাআল্লাহ।

সোলায়মানঃ ফায়াদের কথা যুক্তিসঙ্গত। আমি এক্সেপ্ট করলাম। বিয়ের গাড়ি কতদূর?
রিয়াদঃ দোস্ত গাড়ি চলে এসেছে সমস্যা নাই। ঝটপট তৈরি হয়ে নে। আমরা এখনই গাড়িতে উঠবো।

সোলায়মানঃ ঠিক আছে,  চল্ তাহলে। দুই গাড়িতে ডুলিরবিবি আর দুুই গাড়িতে বরযাত্রী।
তামিমঃ হ্যাঁ দোস্ত। চারটা গাড়িই ভাড়া করা হয়েছে। চল্ চল্,  আর দেরি নয়। এখনই চল্।

সোলায়মান বরের সাজে সাজগোজ করে বিসমিল্লাহ বলে যাত্রা শুরু করলো। তার বন্ধুদের মধ্যে রিয়াদ একটু রসিকতা বেশিই করে। যাত্রাকালে পথিমধ্যে রিয়াদ সোলায়মানকে বলে,
দোস্ত! বিয়ে করতে তো যাচ্ছিস। বিয়ে মানে কী জানিস ?

সোলায়মানঃ বিয়ে মানে দু’টি মনের চিরস্থায়ী মিলন বন্ধন। যা কম পক্ষে তিনটি সাক্ষী সাপেক্ষে তিন কবুলে ইসলামি শরিয়াহ ভিত্তিক সম্পূর্ণ করতে হয়। বিয়ে মানে সুখ দুঃখের চিরসাথী, দু’জনের দু’টি আত্মা এক হওয়া। দায়িত্ব বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি।

রিয়াদঃ না দোস্ত না, তোর এ উত্তর হয়নি।
সোলায়মানঃ এর থেকে কি তুই আরো ভালো কিছু জানিস?
রিয়াদঃ কী বলিস!  অবশ্যই জানি।
তামিমঃ তাহলে বলে ফেল ভাই, আমরা শিখি। বিশেষ করে আমার আর সোলায়মান এর এটা জানা খুবই জরুরি।
কারণ,  সোলায়মান আজ বিবাহের সম্মুখীন। আর সামনে আমারও বিয়ের দিন আসছে। আমি জানতে খুবই আগ্রহী। বল্ বন্ধু বল্।
ফায়াদঃ আরে চুপ কর।  রিয়াদ তো একটা ফাজিল ছেলে। কখন কী যে বলে তার কোনো ঠিক নাই।

রিয়াদঃ আরে বন্ধু তুই চুপ কর। বিয়ের প্রকৃত অর্থ জেনে রাখ,  তাতে উপকার আছে।
তামিমঃ বল ভাই বল, তুই বল। ফায়াদের কথা বাদ দে।

রিয়াদঃ বিয়ের প্রকৃত অর্থ হলো, দাম্পত্য জীবনের এক নাম্বার লাইসেন্স। যে লাইসেন্স থাকিলে পথে-প্রান্তরে,  রাস্তা-ঘাটে,  অলিতে-গলিতে, চলিতে-ফিরিতে কোনো সমস্যা হয় না।
এই লাইসেন্স না থাকিলে রাস্তা-পথে একই সাথে  দুইজনে হাত ধরিয়া অলিতে-গলিতে,  চলিতে-ফিরিতে জনতার প্যাদানি খাইতে হয়। অনেক সময় জেল হাজতেও যাইতে হয়। আর কলঙ্কের কথা তো বলিলামই না।
এবার বুঝিলি দোস্ত?  বিয়ে কাহাকে বলে, ইহার অর্থ কী?  এ কথা শুনে গাড়িতে সবাই হাসাহাসি শুরু করে দিলো।

তামিমঃ দোস্ত!  তুই একখান জিনিস।
ফায়াদঃ আরে জিনিস না,  সে একটা ভণ্ড। লুচ্চা প্রেমিক।
রিয়াদঃ দোস্ত ভুলভাল বলিস না ভাই। আমার একটা ক্যারেক্টারের ব্যাপর আছে না ?
আমি প্রেম করে বিয়ে করেছি ঠিকই। কিন্তু লুচ্চামি করিনি। বিয়ের আগে তাকে স্পর্শ পর্যন্ত করিনি। আমরা যা কথাবার্তা বলেছি, শুধুই মুখে, পাশাপাশি দাঁড়িয়ে বসে, কলেজ বারান্দায় বসে।

তামিমঃ দোস্ত!  তাহলে তো তোদের প্রেম ভালোবাসা স্বর্গীয়, পূতপবিত্র,খাঁটি নির্ভেজাল প্রেম। তোদের প্রেম ভালোবাসার প্রতি রইলো আমার স্যালুট। দোয়া করি তোদের ভালোবাসার দাম্পত্য জীবন সুখী ও দীর্ঘজীবী হোক – আমিন।
এভাবে তারা রসিকতার সহিত নানান কথাবার্তা বলতে বলতে বিয়ে বাড়ির সামনে  পৌঁছালো।
বাইরে দূর থেকে শাপলা বিয়ে গাড়ি দেখেই বাড়ির ভেতর ভোঁ দৌড় দিলো,,,,,,,,,,,,,।

অভিলাষ পর্বঃ ৫
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

শাপলা বর এসেছে, বর এসেছে বলে হৈ-হুল্লোড় করে সবাইকে জানিয়ে দিলো।  শাপলা দ্রুত করে ঘর থেকে একটা হাতঘড়ি  জামাই সোলায়মানের হাতে পরিয়ে  দিয়ে বললো,
দুলাভাই!  ভাই বোনের মধ্যে আমি সবার ছোট। আর আমার থেকে ছোট আমার ছোটভাই জিয়াদ। আপনাকে গাড়ি থেকে  কোলে করে নামানোর মত আর কেউ নাই। তাই দয়া আমার হাত ধরে আস্তে আস্তে নেমে আসুন এবং সামনের সিংহাসনে বসুন আপনার বন্ধুসহ। ঐটা আমরাই গতকাল বানিয়েছি আপনাদের আপ্যায়ন করার জন্য।

সোলায়মান তার হাত ধরে গাড়ি থেকে ধীরে ধীরে নেমে আসলো এবং শাপলা তাদের বানানো সিংহাসনে বসতে দিলো।

এবার শরবত খাওয়ার পালা।
সেখানে টেবিলের উপর তিন বন্ধুর জন্য একই কালারের তিনটি শরবতের গ্লাস আছে। একটিতে আছে লবণ মিশ্রিত শরবত, দ্বিতীয়টিতে আছে মরিচ মিশ্রিত শরবত এবং তৃতীয়টিতে আছে চিনির শরবত। কিন্তু শাপলা ছাড়া কেউ জানে না কোন গ্লাসে কীসের শরবত আছে ?

সোলায়মান এর বন্ধু তামিমঃ
শাপলা আপু! আমাদেরকে শরবত তুমি খাইয়ে দাও।
শাপলাঃ না না,  আপনারা দু’টি গ্লাসের শরবত দুইজনে খাবেন। আর আমি দুলাভাইকে খাওয়ায় দেবো।
তবে একটা কথা, শরবত খাওয়ার পর আপনারা কেউ কোনো কথা বলতে পারবেন না৷ চারপাশে অনেক দর্শক তা দর্শন করছে।

তামিম নিজের হাতে একটা গ্লাস তুলে নিলো। মুখে চুমুক দিতেই ঝাল। কঠিন ঝাল। পেটে যতদূর গেলো জ্বলিয়ে দিলো। গ্লাসটি নিয়ে চুপচাপ, আর খায় না।
মনে বলে বাপরে বাপ,  এত ঝাল! না জানি পিচ্চি মেয়েটা কতই ঝাল!

শাপলাঃ কী ব্যাপার ভাই?  খেয়ে ফেলুন।
তামিমঃ আপু!  তুমি এত সুন্দর শরবত বানাইতে পারো? যা একবার খেলে আর কখনো ভোলা যাবে না। সাড়ে তিন হাত মাটির তলে গেলেও না।
শাপলাঃ জি ভাই,  এটা আমি আপুর কাছ থেকে শিখেছি। আপু অনেক সুন্দর করে শরবত বানাইতে পারে।

রিয়াদঃ তাই নাকি?  এত সুন্দর!  তাহলে আমিও একটা খাই বলে দ্বিতীয় শরবতের গ্লাসটি তুলে নিয়ে চুমুক দেওয়া মাত্রই তার মনে হলো এ যেন শরবত না। নির্ভেজাল জহর। যেন তার বুক এঁটে যাচ্ছে। লজ্জায় কিছু বলতেও পারছে না। সেও চুপচাপ খুব প্রশংসা করতে শুরু করলো।

এইবার তৃতীয় চিনির শরবতের গ্লাসটি শাপলা নিজের হাতে তার দুলাভাই সোলায়মানকে খাইয়ে দিলো।
এরপর শাপলা তাদের সবাইকে মিষ্টি খাইয়ে সামনে একটা রুমাল পেতে দিলো।
তামিমঃ আপু আমাদের খুব সুন্দর করে শরবত খাওয়াইলা। এর মূল্য তো কখনো কোনদিন শোধ করতে পারবো না। এখন আবার রুমালের মতলব কী আপু ?

শাপলাঃ আপনি জানেন না?  কিছু নিলে কিছু দিতে হয়। আমরা কত কষ্ট করে আপনাদের আপ্যায়ন করলাম, যা চিরদিন মনে রাখবেন। এখন তো এর প্রতিদান কিছু না হলেও কিছু দিতে হবে, তাই নয় কি?

তামিমঃ রিয়াদ!  তুই যা দেবার দে। তুই  ইঞ্জিনিয়ার মানুষ, তোর কোনো অভাব নাই।
একই সাথে ফায়াদও সুর তুলে বললো, ঠিক বলেছিস। রিয়াদ তো ইঞ্জিনিয়ার। সত্যি তার টাকা পয়সার কোনো অভাব নাই। একটা বিল্ডিং ধরলেই লক্ষ লক্ষ টাকা ইনকাম।
দোস্ত!  তুই দিয়ে দে।

রিয়াদঃ দোস্ত!  আমি জীবনে কখনো হারাম খাইনি। যা ন্যায্য সেটাই নিয়ে থাকি। অতিরিক্ত কিছুই নেই না। আর হ্যাঁ,  তোদের দোয়া ও আল্লাহর অশেষ রহমতে আমার কোনো কিছুর অভাব নাই। আল্লাহর কাছে লাখো কোটি শুকরিয়া – আলহামদুলিল্লাহ।

শাপলাঃ হাসতে হাসতে এই মিয়া ভাই!  আপনারা কী শুরু করলেন?  আমরা কী আপনাদের কাছে  ভিক্ষা করতে এসেছি যে,  আপনারা চাঁদা তুলে দিবেন? 
আরে দুলাভাই!  খাইলে তো আপনার শালিরাই খাইবে, এত কৃপণতা করেন কেন?  চারদিকে কত মানুষ আপনাদের তামাশা দেখছে, দেখেছেন?  আমি ছোট্ট মেয়ে মানুষ। আমাকেই লজ্জা লাগছে। আপনাদের লাজ নাই, লজ্জা লাগছে না?

রিয়াদঃ আচ্ছা শাপলা আপু!  কত দিতে হবে?
শাপলাঃ আমরা ভদ্র ঘরের ভদ্র সন্তান। আপনি বিবেক অনুযায়ী যা দিবেন, তাতেই আমরা সন্তুষ্ট।
রিয়াদ তার পকেট থেকে ৫০০০৳ বের করে দিলো। শাপলা আর কোনো কথা না বলে রুমালটা ভাঁজ করে উঠিয়ে নিলো।
তামিম চল চল করে উঠতে যাবে। কিন্তু সে জানে না যে,  তার পাঞ্জাবি চেয়ারের সাথে বাঁধা আছে। উঠতে যাওয়া মাত্রই পাঞ্জাবি ফড়ফড় করে ছিঁড়ে গেলো।

শাপলাঃ সরি ভাইয়া, রসিকতা করতে গিয়ে  পাঞ্জাবিতে গিঁট দিয়েছিলাম চেয়ারের সাথে। খুলতে যাবো এমন সময় উঠতে গেলেন আর ছিঁড়ে গেলো। এখানে কিন্তু আমাদের কোনো দোষ নাই।
কারণ, আপনারা তো দেখেশুনে উঠবেন তাই নয় কি?
তামিমঃ আচ্ছা ঠিক আছে আপু,  কোনো সমস্যা নাই। আবার নতুন হবে।
শাপলা সেখান থেকে তাদেরকে নিয়ে আলাদা স্থানে বরযাত্রীর ঘরে বসতে দিলো।

পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী ছোট্ট মেয়ে শাপলা খুব উল্লাসিত, উৎফুল্ল। আবার তার মনে একটু ভয়ের উদয় হয়। সে তার বড় আপু চম্পার কাছে যায় এবং ফিসফিস করে বলে,
আপু! আমার একদিকে যেমন আনন্দের সীমা নাই, ঠিক তেমন অপরদিকে মনের মাঝে  ভয়ও লাগছে !
চম্পাঃ কেনো রে আপু, কী হয়েছে তোর ?
শাপলাঃ কী জানি আপু?  জানি না। তোমাকে ভয় লাগছে না?
চম্পাঃ একটু একটু ভয় লাগা স্বাভাবিক।
শাপলাঃ বলো আপু, সেই স্বাভাবিক ভয়টা কীসের ?

চম্পাঃ সবচেয়ে বেশি খারাপ লাগছে এই ভেবে যে, মা বাবা কত কষ্ট করে লালন-পালন করলো! কত কষ্ট করে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষের মত মানুষ করলো। কখনো চোখের আড়াল হতে দেয়নি। কখনো ক্ষুধার জ্বালা বুঝতে দেয়নি। কখনো ধমক দিয়ে কথা বলেনি।

এখন তাদের সেই  স্নেহ, মমতা, ভালোবাসা, মায়াজাল ত্যাগ করে চিরদিনের জন্য পরের ঘরে চলে যেতে হবে। সেখানেই সারাজীবন কাটাতে হবে। জানি না তাদের সাথে নিজেকে ম্যাচ করতে পারবো কিনা?  শ্বশুর, শাশুড়ি, দেবর,ননদ কেমন হবে, কেমন হবে তাদের আচরণ?  কেমন হবে তোর দুলাভাই?  এ-সব চিন্তা মাথায় ঘুরপাক করেছে।

শাপলাঃ আপু এই চিন্তা তো আমারও মনের মাঝে ঘুরপাক করছে। তুমি আমাদেরকে ছেড়ে চলে যাবে। আমি কাকে আপু বলে ডাকবো? কার সাথে থাকবো, কার সাথে রাতে ঘুমাবো।  ওরা তো তোমাকে সবসময় আসতে দেবে না। তুমি পরাধীন হয়ে যাবে। তোমার নিজের কোনো ক্ষমতা বল কোনো কিছুই থাকবে না। পরের ঘরে এতিমের মত পরাধীন হয়ে থাকতে হবে বলেই শাপলা আর কান্না ধরে রাখতে পারলো না। তার চোখ দিয়ে ঝরঝর করে পানি ঝরতে লাগলো।

চম্পাঃ তার চোখের পানি মুছিয়ে,
কাঁদিস না বোন, মেয়েদের জীবনই এমন হয়।
দ্যাখ, আম্মুর কথা ভাব। আম্মুও তো একদিন তার বাবা মা, ভাই বোন পরিবারের সবার মায়া-মমতা, স্নেহ ভালোবাসার বন্ধন ত্যাগ করে আব্বুর বাড়ি এসেছিলো। যার জন্যে আজ আমরা এ পৃথিবীর মুখ দেখতে পেয়েছি।

আর কাঁদিস না বোন, সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি না থাকলে কী হয়েছে?  তোর মেজো আপু জবা তো আছে, তোর ছোট ভাই জিয়াদ আছে। তাছাড়া তোর সাথে আব্বু, আম্মু তো সারাক্ষণই থাকবে। কীসের চিন্তা, আর কীসের ভয়?  সৃষ্টিকর্তার আদিকাল থেকেই এ নিয়ম চলে আসছে। এটাই বাস্তবতা। এই যে আজ আমি চলে যাবো। তারপর যাবে তোর মেজো আপু জবা। আর শেষে তুইও চলে যাবি। আমরা মেয়েরা চিরদিন কেউ বাপের বাড়িতে চিরস্থায়ী থাকতে পারি না। এটাই প্রকৃতির নিয়ম। তারপর জিয়াদও তো পরের মেয়েকে নিজের ঘরে নিয়ে আসবে। সেও তো তার বাবা,মা, ভাই, বোন সকলের মায়া-মমতা ছিন্ন করে চলে আসবে আমার ছোট্ট ভাই জিয়াদের ঘরে। আর আমি তো একেবারেই চলে যাচ্ছি না। প্রতি সপ্তাহে সপ্তাহে আসবো ইনশাআল্লাহ।

শাপলাঃ আপু!  তুমি আমাকে সান্ত্বনা দিচ্ছো। ঐ যে পাশের বাড়ির আব্দুল করিম চাচার ময়না নামের মেয়েটির বিয়ের  কতদিন হয়ে গেলো। বাবা মাকে দেখতেই আসে না। মন চাইলে বছরে দু’একবার আসলো, না চাইলে নাই। তুমিও একদিন ঐ পাশের বাড়ির ময়না আপুর মত হয়ে যাবে। এমন সময় বিয়ে বাড়িতে কাজী সাহেবের উপস্থিতি,,,,,,,

অভিলাষ পর্বঃ ০৬
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

কাজী সাহেব বিয়ে বাড়িতে সালাম দিয়ে উপস্থিত হলেন।  আসসালামু আলাইকুম আঃ রহিম সাহেব।  আপনি কেমন আছেন?
শাপলার বাবা আব্দুর রহিমঃ
ওয়া আলাইকুম সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহর রহমতে আপনাদের দোয়ায় ভালো আছি, আপনি কেমন আছে কাজী সাহেব?

কাজী সহেবঃ জি আলহামদুলিল্লাহ । আমিও আপনাদের দোয়ায় ও আল্লাহর রহমতে ভালো আছি।
এমন সময় জুমআ’র আযান শুরু হলো। আব্দুর রহিম কাজী সাহেবকে বললেন,
কাজী সাহেবঃ জুমআ’র আযান হলো। চলুন সবাই মিলে নামাজ পড়ে আসি। নামাজ পড়ে এসেই বিবাহের কাজ সম্পূর্ণ করবো ইনশাআল্লাহ।
কাজী সাহেবঃ ঠিক আছে জনাব, চলুন আগে নামাজ পড়ে আসি।
আব্দুর রহিমঃ সবাইকে ডাক দিলেন নামাজের জন্য।
তাঁর ডাকে সবাই নামাজে গেলো। জুমআবাদ কাজী সাহেব সোলায়মান ও চম্পার বিবাহ সম্পূর্ণ করে তাদের জন্য মহান আল্লাহ তায়ালার নিকট প্রার্থনা করলেন।

ইয়া আল্লাহ!  তুমি এই নব দম্পতির জীবন সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে ভরে দাও। তাদেরকে তোমার দ্বীনের পথে কবুল করে নাও। স্বামী স্ত্রীর মাঝে ভালোবাসার গভীর বিশ্বাস স্থাপন করে দাও। যাবতীয় বালা-মসিবত ও বিপদ আপদ  থেকে হেফাজতে রেখো। তাদের মনের সমস্ত নেক আশা পূরণ করে দাও।
রব্বানা তাক্বাব্বাল মিন্না ইন্নাকা আন্তাশ্শামি’উল আ’লীম। ওয়াতুবু আলাইনা ইন্নাকা আন্তাততাওয়াবুর রহিম।
সুবহানা রব্বিকা রব্বিল ঈজ্জাতি আ’ম্মা ইয়াসিফুন, ওয়া সালামুন আ’লাল মুরসালিন। ওয়াল হামদুলিল্লাহি রব্বিল আ’লামীন।
আমিন, আমিন, সুম্মা আমিন।
কালিমা ত্বয়্যিবাহ, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ।
সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।

মোনাজাত শেষে খাওয়া দাওয়ার পর চম্মাকে বৌ সাজিয়ে নিয়ে যাবে এমন সময় শাপলা তার দুলা ভাইয়ের হাত ধরে ছন্দে ছন্দে  বলতে লাগলো,,,

ও দুলাভাই বিনয় করি তোমার প্রতি আমি,
আপুকে মোর সুখে রেখো চাই না কিছুই দামি।
আমি তোমার ছোট্ট শালি একটা শুধু দাবি,
বোনকে আমার ভালোবেসো সেই তো সুখের চাবি।

তোমার ঘরের আলোক রশ্মি ওই আকাশের চন্দ্র,
হৃদয় মাঝের মণিকোঠে ঠাঁই দিও ভাই রন্ধ্র।
পিতামাতা ভাই ও বোনের ছিন্ন করে মায়া,
যাচ্ছে চলে তোমার ঘরে দিতে প্রেমের ছায়া।

আপুকে মোর রাখলে সুখে ফুটবে মুখে হাসি,
আদর্শ এক স্বামী হবে জানবে বিশ্ববাসী।
তোমার মতই চাইবে হতে জগতের সব ছেলে,
বধূ তো নয় আসমানের চাঁদ জান্নাতের হুর পেলে।

দোয়া করি ও দুলাভাই তোমরা থেকো সুখে,
সারাজীবন ফুটুক হাসি তোমাদেরই মুখে।
কয় দুলাভাই ছোট্ট শালি হস্তে দিয়ে তালি,
তোমার যখন আসবে সময় দেবো কানের বালি।

আর করো না চিন্তা কভু থাকবে সুখের সাথে,
তোমার আপুই জীবন মরণ আমার দিবস রাতে।
এসো শালি আমার কোলে একটুখানি হাসো,
বিদায় বেলা একটু করে আলতো ভালোবাসো।

দুলাভাই এর এমন জবাব শুনে সবার মনেই খুশির জোয়ার। সবাই আনন্দ চিত্তে হেসে উঠলো। সোলায়মানের বন্ধু রিয়াদ বলে উঠলো,
সোলায়মান!  তোমার জীবন ধন্য, তোমার জীবন পূর্ণ। তুমি তো বৌ পাও নাই, পেয়েছো আকাশের পূর্ণিমার এক চাঁদ। পেয়েছো জান্নাতের হুর। এখন আমরাকে করবা দূর দূর।

এবার সবাই আরও হেসে উঠলো। তামিম হাসতে হাসতে বললো,
ভাইরে!  আমি সত্যি অসহায়! তোরা সবাই জোড়ায় জোড়ায়, মনের কথা ক্যামনে বুঝাই? 
চল চল এবার বাড়ি যাই।
রিয়াদঃ বুঝেছি বুঝেছি। আর চিন্তা করিস না এর পরেই তোর কারাগারের পালা। তোকেও কিছু দিনের মধ্যেই বন্দি করে ফেলবো এক প্রেমের কারাগারে।

সোলায়মান তার শ্বশুর শাশুড়ির কাছে বিদায় নিয়ে, সালামের আদান-প্রদান করে নিজের বাড়ির দিকে নতুন বৌ চম্পাকে নিয়ে রওনা দিলো। সন্ধ্যা লগন ঘনিয়ে এলো। সোলায়মান বৌ নিয়ে বাড়ি পৌঁছলো।

এদিকে শাপলার মন খারাপ, তার বোন চম্মাকে ছাড়া একা একা কীভাবে থাকবে?  তার মেজো বোন জবা তাকে বুঝায়।
শাপলা! তুই মন খারাপ করিস না বোন। বড় আপু নাই তো কী হয়েছে?  আমি তো তোর সাথে সবসময়ই আছি। আম রাতে তোকে সাথে নিয়ে ঘুমাবো,,,,,,,।

অভিলাষ পর্বঃ ০৭
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

চম্পার বিয়ের ৭ বছর পর শাপলার মেজো বোন জবারও বিয়ে হয়ে গেলো। এখন বাবা মা’র সংসারে শাপলা ও তার ছোট ভাই জিয়াদ রইলো। ফুটফুটে সুন্দর চেহারা নিয়ে বোরখা পরে  প্রতিদিন কলেজ যাওয়া আসা করতে থাকে তার নিজ গ্রামের মেঠোপথ বেয়ে। সেই গ্রামেরই এডভোকেট  ইউসুফ নামের একটি ছেলে তাকে মনে মনে দীর্ঘদিন যাবৎ ভালোবাসে সেই ছোট্টবেলা থেকেই। কোনদিন সাহস করে তাকে কোনো কথা বলতে পারেনি। বলার অনেক চেষ্টা করে। কিন্তু বুকে সাহস জোটে না। কারণ, শাপলা সবসময় বোরখা হিজাব পরিহিত অবস্থায় থাকে। কোনো ছেলের সাথে কথা বলে না, কোথাও আড্ডাও দেয় না। শাপলা কিন্তু তার আচরণে কিছুটা টের পায়। কিন্তু সেও তাকে কিছুই বলে না। না জানার ভান করেই চলতে থাকে।

এভাবে দিন মাস বছর পার হতে থাকে।   শাপলা খুব  ব্রেনিয়ান ও মেধাবী ছাত্রী, অতি চালাক। বড় হয়ে এখন সে সমাজ সেবায় তৎপর হয়ে উঠেছে এবং সমাজের লোকজনের কাছে অতি জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। তার একমাত্র অভিযান যৌতুক ও বেপর্দার বিরুদ্ধে। সে নিজেও পর্দা করতো এবং পর্দানশিন নারীদেরকেও খুব ভালোবাসতো।  তার ব্যবহার, আচার-আচরণে সকলেই মুগ্ধ। সকলের মুখে একটাই স্লোগান শোনা যায়। আঃ রহিম সাহেবের মেয়ে শাপলার মত কন্যা যেন বাংলার প্রত্যেক ঘরে ঘরে জন্ম নেয়।
সেই ছোট্টবেলায় তাকে পর্দাবিহীন দেখা গেছে। কিন্তু সাবালিকা হওয়ার পর থেকে তার মুখ কোনদিন কোনো পরপুরুষ দেখার সুযোগ পায়নি।

একদিন তাদের গ্রামের আঃ রহমান চাচার মেয়ে জোরিনার বিবাহের দিন বর পক্ষ থেকে যৌতুকের দাবি আসে ৫ লক্ষ টাকা নগদ দিতে হবে। মেয়ের বাবা কষ্ট করে ৪ লক্ষ টাকা মেনেজ করেছে। বাকি এক লক্ষ টাকা পরে দেবো বলায় বর পক্ষ সরাসরি জানিয়ে দেয়, সম্পূর্ণ যৌতুকের টাকা পরিশোধ না করলে এ বিবাহ বাতিল বলে ঘোষণা করা হবে। মেয়ে পক্ষ খুব অনুনয় বিনয় করে। কিন্তু নিষ্ঠুর, পাষাণ বর পক্ষ তা মানতে কখনোই রাজি নয়। শেষমেশ বর পক্ষ বরকে নিয়ে চলে যাবে বিয়ের আসর থেকে। এমতবস্থায় শাপলার কর্ণপাত হয় যে, যৌতুকের টাকা পুরো দিতে না পারায় বিবাহ বাতিল করে বর পক্ষ বরকে নিয়ে চলে যাচ্ছে। শাপলা এ খবর পেয়ে দ্রুত তাদের বাড়ি পৌঁছলো। সেখানে গিয়ে দেখে শুধু কান্নার রোল। কী হবে অভাগিনী জোরিনার?  মা কাঁদে, বাবা কাঁদে। 
হায়রে আমার পোড়া কপাল!  কত কষ্ট করে, অভাবী সংসারে  মেয়ের বিয়ের জন্য ঘটিবাটি বিক্রি করে  চার লক্ষ টাকা জোগাড় করলাম। আর এক লক্ষ টাকার জন্য আমার মেয়ের কপাল পুড়ে গেলো। কীভাবে সমাজে মুখ দেখবো? সমাজের লোকের মুখে হাত দেওয়া যাবে না। তারা বলবে, কপালপুড়ী, কালনাগিনী বিয়ের আসর থেকে বর পক্ষ চলে যায়।
হায় আল্লাহ!  এ দৃশ্য দেখার আগে আমার মরণ কেনো হলো না ?

এমন সময় শাপলা বলে কী হয়েছে রহমান চাচা?  আপনি কেনো কাঁদেন?  আপনার কিছুই হবে না, কিছুই হবে না আমাদের ছোট বোন জোরিনার।
বর পক্ষ কোথায় ? লোকজন সবাই মিলে তাদেরকে আটকানোর ব্যবস্থা করুন। বর বিয়ে করবে না, বরের বাবার বাবা বিয়ে করবে যৌতুকবিহীন।

শাপলার কথায় এলাকার লোকজনের মনে সাহস গজায় এবং তারা এলাকাবাসী বর পক্ষকে বরসহ ঘেরাও করে আবার বিয়ের আসরে নিয়ে আসে। শাপলা তাদের জিজ্ঞেস করে, আপনাদের সমস্যা কী?  আপনার কেনো এই অসহায় গরিব বাবার একমাত্র কন্যার বিবাহ বাতিল করে মান-সম্মান ধূলিসাৎ করে দিয়ে চলে যাচ্ছেন? 

ছেলের বাবা বলে,
যাবো না তো কী করবো?  মেয়েকে ও মেয়ের বাবাকে কি ধূপ চন্দন দেবো?  বিয়ের আগে তো ঠিকই বলেছিলো, বিয়ের দিনই ৫ লক্ষ টাকা নগদ যৌতুকই পরিশোধ করবে। এখন বলে ৪ লক্ষ টাকা জোগাড় করেছে এক লক্ষ টাকা পরে দেবে। আমরা জানি বাকির নাম ফাঁকি। আমরা পুরো টাকা যৌতুক পরিশোধ না করলে ছেলের বিয়ে দেবো না।

শাপলাঃ বাহ! চমৎকার বাণী শোনালেন। আপনার কি জানা নাই, যৌতুক নেওয়া হারাম এবং দণ্ডনীয় অপরাধ। এর জন্য জেল জরিমানা দুটোই অবধারিত।

ছেলের বাবাঃ এখন এসব নিয়ম কোন দেশে, কোন সমাজে প্রচলন আছে?  রাজা বাদশার ছেলেমেয়ের বিয়েতেও যৌতুক প্রথা লেনদেন হয়। আর আমরা করলে দোষ কোথায় ?

শাপলাঃ মনে করেন রাজা বাদশারা মানুষের ত্যাগকৃত মলমূত্র খায়।  তাহলে কি আপনিও তাই খাবেন?  আপনার কি রুচি বলতে কিছুই নাই?

আপনি তো মুসলিম ঘরের মুসলিম সন্তান।
যৌতুক একটি বিধর্মী প্রথা। আর এ প্রথা অনুসরণ করা মুসলমানদের জন্য সম্পূর্ণ হারাম। আর হারাম অর্থ হলো সেই অর্থ, যে অর্থের বিনিময়ে কোনো খাদ্যদ্রব্য কেনা সেটাও হারাম। আর এই হারাম খাদ্য খেয়ে শরীরে যে রক্ত মাংস হয়, সেটাও হারাম। আর সেই হারাম রক্ত মাংসের দেহ নিয়ে স্বামী স্ত্রীর মিলনের ফলে যে সন্তান ভূমিষ্ট হয়, সেটাও হারাম মানে অবৈধ সন্তান । আর এই হারাম রক্ত মাংসের দেহ কখনোই জান্নাতে প্রবেশ করবে না। তার স্থান হবে জাহান্নাম!  (তবে এখানে এই অবৈধ সন্তান হবে নিষ্পাপ।
কারণ, এই অবৈধ সন্তানের কোনো দোষ নাই।)
আর এর কর্মফল ভোগ করবে তার পিতামাতা ও অভিভাবক। আর সেই পিতামাতার অভিভাবক আপনি নিজেই।
যৌতুক তো তারই একটি অংশ। এখন আপনিই ভাবুন, আপনার ছেলের বিয়েতে যৌতুক নিবেন, কি নিবেন না?

চাচা জান!  একটি কথা সবসময় মনে রাখবেন,
আমাদের জিন্দেগী ষাট – পঁয়ষট্টি বছরের। আর এর থেকে খুব বেশি হলে ১০০ বছরের। এর থেকে আর বেশি নয়। অতীতের দিকে তাকিয়ে দেখুন কত শত বছর চলে গেছে। শত সহস্র বছরের একটি মানুষও বেঁচে নেই। একদিন আমরা কেহই থাকবো না। থাকবে আমাদের আমল ও কৃতকর্মের ফলাফল। আর এই ফলাফল এর উপর ভিত্তি করেই জান্নাত ও জাহান্নাম।

ছেলের বাবাঃ থাক, থাক হয়েছে মা। তুমি আমার কন্যার মত। তুমি আমার চোখ খুলে দিয়েছো। আমার মনের কালিমা দূর করে দিয়েছো। আমি তোমার কাছে কৃতজ্ঞ মা, আমি তোমার কাছে কৃতজ্ঞ। আমিও আজ থেকে যৌতুক প্রথা বাতিল করলাম এবং এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হলাম।

কই আঃ রহমান বিয়াই সাহেব?  আপনি কোথায়?  আমার কাছে আসুন। আমার এই আচরণের জন্য আমি অনুতপ্ত ও আন্তরিকভাবে দুঃখিত। আমাকে মাফ করবেন। আপনার এক টাকাও যৌতুক লাগবে না। আমি যৌতুকবিহীন আপনার মেয়ে মা জোরিনাকে পুত্রবধূর স্বীকৃতি দিয়েই আমার ঘরে নিয়ে যাবো।

এবার জোরিনার বাবা আঃ রহমান এর অশ্রুসিক্ত  মলিন বদনে মিষ্টি মধুর মৃদু হাসি ফুটে উঠলো। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জ্ঞাপন করলো – আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ তোমার কাছে লাখো কোটি শুকরিয়া।

ইয়া আল্লাহ!  আমার মা-মণি  শাপলাকে তুমি দীর্ঘজীবী করো। তার মনের সমস্ত নেক আশা পূরণ করো। তাকে নেক হায়াত দান করো। পৃথিবীর বিপদ-আপদ থেকে তোমার রহমতের দ্বারা রক্ষা করো। তাদের এমন দৃশ্য দেখে শাপলার মুখেও মৃদু হাসি ফুটে উঠলো এবং সবাইকে সালাম দিয়ে উক্ত স্থান প্রস্থান করলো।

অভিলাষ পর্বঃ ০৮
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

বিয়ে বাড়ি থেকে শাপলা চলে আসছে তার সুন্দর গ্রামের মেঠোপথ বেয়ে নিজের বাড়ির দিকে। পথিমধ্যেই শুনতে পায় কোনো এক নারীর কান্না।  সে বিকট শব্দে চিৎকার দিয়ে কাঁদছে, আমাকে আর মেরো না। আমি আর সহ্য করতে পারছি না।
ইয়া আল্লাহ!  তুমি আমাকে রক্ষা করো!
শাপলা মনে মনে ভাবে এ আবার কার কী হলো? 
নিশ্চয়ই আঃ কুদ্দুস ভাই তার বৌয়ের উপর নির্যাতন করছে বলেই তাদের বাড়ির দিকে রওনা দিলো। গিয়ে দেখে সত্যি সে তার স্ত্রী জায়েদাকে শারীরিক নির্যাতন করছে। খুব মারধর করছে। মেয়েটির কোনো কথাই সে শুনছে না। চারপাশে অনেক লোকজনও জমায়েত হয়েছে। কিন্তু তারা কেউ কিছু বলছে না। চুপ করে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তার তামাশা দেখছে।

শাপলা সেখানে গিয়ে লোকজনের উদ্দেশ্যে বলে,
এই যে শুনুন,  আপনারা এতগুলো মানুষ দাঁড়িয়ে আছেন, কিন্তু কেউ কোনো কথা বলছেন না। একটি মেয়েকে নির্মমভাবে আঘাত করছে, আর আপনারা মূর্তির মত দাঁড়িয়ে তামাশা দেখছেন!  আপনাদের মুখে তালা লেগে গেছে। আপনারা যেন বোবা হয়ে গেছেন। কেউ কিছু বলছেন না। আজ যদি  আপনাদের কারো বোনকে তার স্বামী এভাবে প্রহার করতো, তাহলে কি এভাবেই চুপ থাকতেন? মূর্তির মত দাঁড়িয়ে থাকতেন?  জবাব দেন।
শাপলার এমন প্রশ্নের কেউ কোনো উত্তর দেয় না।

শাপলা আঃ কুদ্দুসকে উদ্দেশ্য করে বলে,
এই কুদ্দুস ভাই! দাঁড়ান, ভাবিরে আর মাইরেন না। কী সমস্যা আমার কাছে বলুন ?  কী হয়েছে ভাবির, তাকে এত মারধর করছেন কেন?  সে কী অপরাধ করেছে?  তা আমাকে বলুন। আমি এর সমাধান করে দেবো ইনশাআল্লাহ।

আঃ কুদ্দুসঃ শাপলা!  তোকে আর কী বলবো? আমি আজ কয়েকদিন যাবৎ তাকে বলতেছি, আমার দশ হাজার টাকার খুব প্রয়োজন। তুমি তোমার মা বাবার কাছ থেকে যেভাবেই হোক দশ হাজার টাকা মেনেজ করে নিয়ে এসো। সে এর মধ্যে দুই দুই বার তারা বাবার বাড়িও গিয়েছে। কিন্তু কোনো টাকা পয়সা নিয়ে আসেনি।
কেন নিয়ে আসেনি ?  সে তার কোনো জবাবও দেয় না। তাই তাকে মারতে উদ্যত হয়েছি। আমার টাকা লাগবে টাকা।

শাপলাঃ কুদ্দুস ভাই! হয়তো তার বাবা মা অর্থের সংকটে আছে, তাই দিতে পারে নাই।
আর সে লজ্জায় ভাবি আপনাকে কিছু বলতে পারে নাই। এটা আপনার বুঝে নেওয়া উচিৎ ছিলো। আর সেই জন্যই কি আপনি ভাবিকে এইভাবে জনসম্মুখে আঘাত করবেন?  মেয়েদের গায়ে আঘাত করা মানে নারী নির্যাতন। আর নারী নির্যাতন মানেই গুরুতর অপরাধ। এ অপরাধে সশ্রম কারাদণ্ড এমনকি ফাঁসিও হতে পারে। আপনার কি এ কথা জানা আছে?

তাছাড়া একটা মেয়ের বিয়ের পর তার সমস্ত দায়-দায়িত্ব তার স্বামীর উপর অর্পিত হয়। পিতামাতার উপর যেমন অর্পিত হয় তার সন্তানদের দায়-দায়িত্ব , লালন-পালন করার ভার। তাদের কীভাবে লালন-পালন করবে? চুরি করে করবে, নাকি ডাকাতি করে করবে?  এটা নিতান্তই পিতামাতার দায়িত্ব ও কর্তব্য। তাদের লালন-পালন করার জন্য পিতামাতা যদি বে-হালাল অর্থ উপার্জন করে, তবে সেই হারাম অর্থের জন্য মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে সন্তানদের কোনো জবাবদিহি করতে হবে না। এর জবাব দেবে তার অভিভাবক বা পিতামাতা।

ঠিক তেমনই বিয়ের পর স্বামীর উপর স্ত্রীর সকল দায়-দায়িত্ব, ভরণপোষণের ভার সারাজীবনের জন্য অর্পিত হয়। আপনি স্বামী, কীভাবে করবেন?  তা আপনার স্ত্রীর দেখার বিষয় নয়। আর তাকে তার পিতামাতার বাড়ি থেকে জুলুম করে অর্থ আনার চাপ দেওয়া মানেই যৌতুকের চাপ দেওয়া।
আর এ যৌতুক সামাজিক ব্যাধি,  মারাত্মক অপরাধ!  এতে সশ্রম কারাদণ্ড ও জেল জরিমানা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আপনি একসঙ্গে দুই দু’টি অপরাধ করেছেন। এর জন্য আপনার দ্বিগুণ সাজা হওয়ায় বাঞ্ছনীয়।

আর আপনারা পুরুষেরা এত লোভী কেনো?  মেয়ের বাবা মা’য়ের দিকে এতিমের মত তাকিয়ে থাকেন কেনো? 
আপনাদের কি আল্লাহ তায়ালা মিসকিন বানিয়েছেন মেয়ের বাবা মা’য়ের বাড়ির ঘোলাটে পানি খাওয়ার জন্য? 

আরে ভাই, আপনাদের তো মেয়েদের বাবা মা’য়ের কাছে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা প্রয়োজন। তারা তাদের কলিজা ছেঁড়া ধন, আদরের কন্যাকে সেই ছোটবেলা থেকে, কত কষ্ট সাধন করে, কত টাকা পয়সা খরচ করে জ্ঞান বুদ্ধি দান করে, মানুষের মত মানুষ করে, সকল মায়া-মমতা, ভালোবাসা, স্নেহের বাঁধন বিসর্জন দিয়ে চিরদিনের জন্য আপনাদের হাতে তুলে দেন।

সেই বাবা মা’য়ের এই ঋণ কি কখনো শোধ করার মত?  একটু বিবেক বুদ্ধি দিয়ে চিন্তা করে দেখুন। বুঝতে পারবেন, আপনারা কতটা অকৃতজ্ঞ!
আর অকৃতজ্ঞ নাফরমান ব্যক্তিকে মহান আল্লাহ তায়ালা কখনোই ভালোবাসেন না।
আর আল্লাহ যাকে ভালো না বাসেন, তার উপর রবের লানত বর্ষিত হয়।

স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক মধুর সম্পর্ক। এর চাইতে আপন সম্পর্ক পৃথিবীতে আর কারো সাথে কখনো হতে পারে না, হয় না।

আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুরুষদের নির্দেশ দিয়ে বলেছেন,

‘তুমি যখন খাবে, তাকেও (স্ত্রীকেও) খাওয়াবে, তুমি যখন পরিধান করবে, তাকেও (স্ত্রীকেও) পরাবে। তার (স্ত্রীর) চেহারায় কখনো প্রহার করবে না। তার (স্ত্রীর) সাথে অসদাচরণ করবে না।’ (আবু দাউদ-২১৪২, মুসনাদে আহমাদ-১৮৫০১)

মহান আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনুল কারিমে ঘোষণা করেন-‘তারা (স্ত্রীরা) তোমাদের পোশাকস্বরূপ এবং তোমরাও তাদের পোশাকস্বরূপ।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৭)

আঃ কুদ্দুস ভাই! পবিত্র কোরআনের ভাষ্য অনুযায়ী আপনি তো আপনার নিজের গায়ের পোশাক নিজেই ছিঁড়ে ফেলছেন।
আপনি কি পোশাকহীন অবস্থায় কোথাও যেতে পারবেন?  ঘরের বাইরে গেলেও তো আপনার পোশাকের প্রয়োজন। মহান আল্লাহ তায়ালা পুরুষদের গতর ঢাকাও ফরজ করে দিয়েছেন। আপনি পুরুষ হলেও তো অনাবৃত শরীরে, পোশাকবিহীন অবস্থায় লোক সমাজে চলাফেরা করতে পারবেন না।  পোশাক ছাড়া যারা চলে, তারাকে নগ্ন বলে।
আর নগ্ন অবস্থায় চলাফেরা করে একমাত্র  চতুষ্পদ জন্তু ছাগল, গরু, কুত্তা বিড়াল।

এখন আপনিই বলেন, বিনা অপরাধে এমন নির্মমভাবে প্রহার করা কি আপনার উচিৎ হয়েছে? 

আঃ কুদ্দুসঃ শাপলা বোন আমার। তুই আমাকে ক্ষমা করে দে। আমার ভুল হয়েছে।  আমি মারাত্মক ভুল করেছি। আমি অন্ধকার জগতে ছিলাম। তুই আমাকে অন্ধকার জগত থেকে টেনে এনে আলোর দিশা দিয়েছিস। আমি তোর কাছে কৃতজ্ঞ।

শাপলাঃ ভাইজান!  আমি আপনাকে ক্ষমা করার কেউ না। ক্ষমা যদি চাইতেই হয়। আপনার স্ত্রী জায়েদা,  আমার ভাবির কাছে ক্ষমা চেয়ে নিন। আল্লাহ আপনাকে ক্ষমা করে দিবেন।

শাপলার কথায় আঃ কুদ্দুস তার স্ত্রীকে বলে,
ওগো জায়েদা! আমি অনেক ভুল করেছি। বিনাকারণে পাষাণের মত তোমার গায়ে হাত তুলে অনেক কষ্ট দিয়েছি। বড় অপরাধ করেছি, বড় অন্যায় করেছি। আমি অপরাধী, মহাপাপী! তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। তুমি যদি ক্ষমা না করো। আল্লাহও আমাকে ক্ষমা করবেন না।

জায়েদাঃ তুমি আমাকে ভুল বুঝো না।
তুমি কোনো অপরাধ করোনি। আমিই অপরাধী ছিলাম। গরিব বাবা মা’য়ের কাছে তোমার দাবিকৃত টাকা আনতে পারিনি। ব্যর্থ হয়েছি। তাই তার সাজা পেয়েছি। তুমিই আমাকে ক্ষমা করে দাও।

শাপলাঃ দেখেন কুদ্দুস ভাই দেখেন, নারীর মন। আপনার দেওয়া এত অত্যাচার, আঘাত পেয়েও নিজেকে অপরাধী ভেবে অনুতপ্ত।
একেই বলে নারী।

আঃ কুদ্দুস হাও মাও করে কাঁদতে কাঁদতে স্ত্রী জায়েদাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
জায়েদা! আমাকে তুমি মাফ করো। আমি আর এমন ভুল কখনো কোনোদিন করবো।
সবসময় তোমার সাথে  ভালো ব্যবহার করবো। আমি যা খাবো, তোমাকেও খাওয়াবো। আমি যা পরবো, তোমাকেও পরাবো।
আজ থেকে ওয়াদা করলাম,
একটা যদি বাদামের দানা পাই, একটা যদি বুটের দানা পাই ; সেটাই দুইজনে ভাগাভাগি করে খাবো ইনশাআল্লাহ।

অভিলাষ পর্বঃ ০৯
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

শাপলাঃ আব্দুল কুদ্দুস ভাই!
জীবনে যা ভুল করার করেছেন। আর কখনো কোনোদিন ভুল করেও এমন ভুল করবেন না। আপনার প্রতি এ আমার অনুরোধ রইলো।
জায়েদা ভাবি!  আপনিও ভাইয়া যেটা বলবে, তা মনপ্রাণ দিয়ে শুনবেন। ভাইয়ার মনে কখনো কষ্ট দেবেন না৷ কষ্ট পায় এমন কোনো কথা বলবেন না। স্বামী স্ত্রীর মধুর সম্পর্ককে কখনো কলুষিত করবেন না।

একটা কথা সবসময় মনে রেখো ভাবি।
আমাদের মহানবী হযরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর একটি হাদিসঃ

একদা এক নারী সাহাবি রাসূল (সঃ) এর কাছে এলেন নিজের কোনো প্রয়োজনে। যাওয়ার সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কি স্বামী আছে? তিনি বললেন, জী, আছে। নবীজী বললেন, তার সাথে তোমার আচরণ কেমন? সে বলল, আমি যথাসাধ্য তার সাথে ভালো আচরণ করার চেষ্টা করি। তখন নবীজী বললেন, হ্যাঁ, তার সাথে তোমার আচরণের বিষয়ে সজাগ থেকো।
কারণ, সে তোমার জান্নাত বা তোমার জাহান্নাম। (মুআত্তা মালেক, হাদীস ৯৫২; মুসনাদে আহমাদ, ৪/৩৪১ হাদীস ১৯০০৩; মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস ২৭৬৯; সুনানে কুবরা, বায়হাকী, হাদীস ১৪৭০৬)

আর এ কথার উপর ভিত্তি করেই বলা হয়,
স্বামীর পায়ের নিচে স্ত্রীর জান্নাত বা বেহেশত।

আপনারা সবাই ভালো থাকবেন বলে শাপলা সেখান থেকে বিদায় নিয়ে তার বাড়ির দিকে রওনা দিলো।

দুই পরিবারের মীমাংসা করতে করতে সন্ধা লগন ঘনিয়ে এলো। গোধূলির ক্ষণ। পথে যেতে যেতে পেছন থেকে  হঠাৎ করেই এডভোকেট ইউসুফ এর নজর পড়ে তার দিকে। সে মনে মনে ভাবে উনাকে তো শাপলার মত লাগে। সে একটু জোরে জোরে হেঁটে এসে তার সাথ ধরে বললো, এক্সকিউজ মি ম্যাডাম!

শাপলাঃ জি বলেন,
ইউসুফঃ আপনি শাপলা না?
শাপলাঃ কোন শাপলা?
ইউসুফঃ আঃ রহিম চাচার মেয়ে শাপলা।
শাপলাঃ জি আপনি ঠিকই অনুমান করেছেন।
ইউসুফঃ  আপনি আমাকে চিনতে পেরেছেন?

শাপলা চিনেও না চিনার ভান করে বললো,
না তো জনাব। আমি তো আপনাকে চিনতে পারিনি। আপনার বাসা কোথায়, কী নাম আপনার, পরিচয় দিবেন?
তাড়াতাড়ি বলেন। সন্ধ্যা হয়ে গেলো দুই পরিবারের মীমাংসা করতে করতে।  বাড়িতে বাবা মা আবার চিন্তা করবেন। সারাদিন কোথায় ছিলো,  এত দেরি হচ্ছে কেনো বাড়ি ফিরতে? 

ইউসুফঃ জি ম্যাডাম, বাবা মা অবশ্যই চিন্তা করবেন। জামানা ভালো না। তারপরও আপনি মেয়ে মানুষ। চিন্তা করাটা স্বাভাবিক, অস্বাভাবিক এর কিছুই না।

আপনার সাথে আমার অনেক কথা আছে। আজকে আমার পরিচয়টা দেই, পরে একদিন কথা বলবো ইনশাআল্লাহ।

শাপলাঃ আচ্ছা ঠিক আছে, বলেন আপনার পরিচয়, তাড়াতাড়ি বলেন। এলাকার মানুষ দেখে আবার নানান কথা বলতে পারে।

ইউসুফঃ শাপলা!  আপনি আমাকে চিনতে পারলেন না? আমার বাবার নাম মোঃ ইয়াকুব আলী, আমার নাম মোঃ ইউসুফ আলী। সেই ছোটবেলায় একসাথে কত খেলাধুলা করেছি। কত ফাইজলামি করেছি। কত কানমলামলি করেছি। একদিন আমরা খেলতে খেলতে কানমলা দিয়ে আমার কানকে লাল করে দিয়েছিলেন। সেদিন আমার খুব রাগ হয়েছিলো। কিন্তু রাগটাকে সামাল নিয়ে ছিলাম।

কারণ, আমি আপনার সাথে খেলায় হেরে গিয়েছিলাম। কিছু দিন পরে আমার বাবা আমাকে লেখাপড়া করার জন্য বিদেশে পাঠায় । আর আমি সেখানেই লেখাপড়া শেষ করে উকালতি পাশ করে দেশে ফিরেছি। বিদেশে থাকাকালীন অবস্থায়  আপনার কথা বারবার মনে পড়েছে। কিন্তু যোগাযোগ করার কোনো পথ ছিলো না।
তাই যোগাযোগ করতে পারিনি।

শাপলা তার ছোটবেলার কানমলার গল্প শুনে মনে মনে হেসে বললো,
থাক জনাব থাক, আর বলতে হবে না।
আমি এখন বাসায় যাই, আমার তাড়া আছে।

ইউসুফঃ ঠিক আছে। আপনি বাসায় যান।
পরে অন্য একদিন কথা বলবো ইনশাআল্লাহ।

তাদের এ কথোপকথন পাশের গ্রামের দুষ্টু ছেলে জাবেদ, জালাল ও কামাল দেখে ফেলে।
তারা মনে মনে বদ বুদ্ধি আঁটে। তারা বলাবলি করে।
শাপলা! তুমি অনেক জ্ঞান দাও মানুষকে।
তুমি খুব পরহেজগার মহিলা। তোমার নাগাল কেউ পায় না। দাঁড়াও, এবার দেখাবো মজা।
কত ধানে কত চাল?  এবার বুঝবা।
এবার তোমার মাতব্বরি ছুটাবো।

জাবেদ ও জালাল কামালকে বলে,
দোস্ত এবার কিছু একটা করতে হবে। এবার শাপলার বিরুদ্ধে কিছু একটা করার সুযোগ এসেছে। এ সুযোগ হাত ছাড়া করা যাবে না।

কামালঃ দোস্ত!  তোরা ঠিকই বলেছিস।
এবার তাকে ঘায়েল করার সুবর্ণ সুযোগ এসেছে। শুধু সময়ের অপেক্ষা।
চল্ আজকে ফিরে যায়, আগামী দিন দেখবো।

সন্ধ্যার লগন। শাপলা দ্রুত বাড়ি ফিরলো।
দরজাায় নাড়া দিতেই তার মা রহিমা বেগম দরজা খুললো।
শাপলা ভেতরে প্রবেশ করলে তার বাবা আঃ রহিম বলেন,
মা শাপলা!  আজ সারাদিন কোথায় ছিলে? 
তুমি তো কখনো এত দেরি করে বাড়িতে ফিরো না। আজ এত দেরি হলো কেনো?
দুপুরে কী খেয়েছো?  তোমার জন্য আমরা এখন পর্যন্ত দুপুরের খাবার খাইনি।

শাপলাঃ কী বলেন বাবা! 
আমার জন্য আপনারা এখনো দুপুরের খাবার খাননি!   আমি কি আগের মত এখনো সেই ছোট্ট খুকিই আছি?
আমার একটু কাজে দেরি হয়ে গেছে বাবা।
আমাকে মাফ করবেন।
মা এসো আমরা একসাথে খাবার খেয়ে নিই।

শাপলার আম্মা রহিমা বেগমঃ
শাপলা!  তার আগে বল, এমন কী কাজ করছিলি?  কোন কাজে ব্যস্ত ছিলি যে,
সারাটা দিন শেষ করে আসলি? আর তোর চিন্তায় আমরা খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিয়ে ব্যতি-ব্যস্ত ছিলাম৷

শাপলাঃ মা!  আর বলো না।
আমি কলেজ থেকে বাড়ি ফিরবো ঠিক সেই মুহুর্ত শুনতে পাই যে, ৫ লাখ টাকা যৌতুক পরিশোধ করতে না পারার কারণে  জোরিনার বিয়ে বাতিল করে বরযাত্রীরা বরকে নিয়ে চলে যাচ্ছে। আমি সেখানে গিয়ে আমার যুক্তি তর্কের মাধ্যমে ৫ লাখ টাকা যৌতুক বাতিল করে তাদেরকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করে বাড়ি ফিরছিলাম। পথিমধ্যে জায়েদা ভাবির কান্না শুনতে পাই। আমি সেখানেও ছুটে যাই। গিয়ে দেখি আঃ কুদ্দুস ভাইও ভাবিকে যৌতুক পণের দাবিতে খুব মারধর করছে জনসম্মুখে, সবার সামনে। আমি তাদেরও মীমাংসা করে দিয়ে বাড়ি ফিরতে দেরি হয়ে গেলো। আর এই বিলম্বের কারণে আন্তরিকভাবে দুঃখিত। আমাকে মাফ করো মা। আর কখনো এমন বিলম্ব না করার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।

এ কথা শুনে শাপলার বাবা আঃ রহিম খুব আনন্দ চিত্তে তার স্ত্রী রহিমাকে বলেন,
মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে এক শ্রেষ্ঠ নিয়ামত দান করেছেন। আর সেই নিয়ামত হচ্ছে আমাদের শাপলা মা-মণি।
ইয়া আল্লাহ!  আপনি তাকে দীর্ঘায়ু দান করুন – আমিন।

শাপলার মা রহিমাঃ আল্লাহুম্মা আমিন ইয়া রাব্বুল আলামিন বলে আঃ রহিম তার স্বামীকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
আর এ জন্যই শাপলাকে নিয়ে আমার অনেক ভয় হয়, কেনো জানো? 
কেননা, এ জগতে  ভালো মানুষের শত্রুর অভাব নাই।

শাপলাঃ মা!  তুমি এ সব কী আজেবাজে চিন্তা করো। আল্লাহর রহমতে আর তোমাদের দোয়ায় আমার কিছুই হবে না।
তোমাদের দোয়া আমার সাথে আছে না?
তোমরা এ সব নিয়ে কোনো চিন্তা করো না।
আমি কোনোদিন মানুষের উপকার ছাড়া কারো কোনো অপকার বা ক্ষতি করিনি। আমারও কেউ ক্ষতি করবে না বলেই আমি বিশ্বাসী।

মা!  তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করবো, বলবে আমায়?

রহিমাঃ কী বলবি বল মা ?
শাপলাঃ ওই যে ইয়াকুব চাচার ছেলে ইউসুফ আছিলো না?
রহিমাঃ হ্যাঁ, আছে তো।
কেনো?  তার কী হয়েছে?
শাপলাঃ না, মানে কিছু হয়নি। এমনি জিজ্ঞেস করলাম। আমরা ছোটবেলায় একসাথে কত খেলেছি তো, তাই আর কি?

আঃ রহিমঃ  মা-মণি! তোমাকে একটা কথা বলি মনোযোগ সহকারে শোনো।
আমরা মধ্যবিত্ত পরিবারের লোক।
আর তারা অনেক বড়লোক। তাদের সাথে আমাদের কোনো বন্ধুত্ব হয় না,  ইচ্ছে থাকলেও হয় না। যদিও তার বাবা অনেক ভালো মানুষ, ছেলেটিও অনেক ভালো।

শাপলাঃ না বাবা, মাকে এমনি জিজ্ঞেস করলাম।
আঃরহিমঃ তার সাথে কী তোমার দেখা হয়েছিলো? 
রহিমাঃ এই!  তুমি মেয়েকে কী জিজ্ঞেস করো?  বাদ দাও তো ঐ সব প্রসঙ্গ।

অভিলাষ পর্বঃ ১০
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

এদিকে ইউসুফ রাত্রে বিছানায় শুয়ে শুয়ে খুব চিন্তা করে।
মনে মনে ভাবে, শাপলাকে আমার মনের কথাটা কেমন করে বলবো?  শাপলা কি আমার কথার সারমর্ম বুঝেছে?  কিন্তু সে আমাকে চিনতে পারলো না কেনো, আমার পরিচয় দেওয়ার পরেও! নাকি সে না চিনার ভান করলো?  আমি তো কিছুই বুঝলাম না। তাদের বাড়ি আর আমাদের বাড়িও তো   দূরে নয়, খুব কাছাকাছি। সবাই জানলো আমি বিদেশ থেকে দেশে ফিরে এসেছি। আর সেই জানে না?  এ কেমন কথা!

তাকে নিয়ে যে আমার মনের দীর্ঘদিনের অভিলাষ, এ অভিলাষের কথা আমি তাকে কীভাবে জানাই?  তার চোখে ঘুম নাই।
একবার বিছানায় শুতে যায়, আর একবার বিছানা থেকে উঠে বসে। আবার সে বারান্দায় গিয়ে একাকী তার কথা ভাবে।
আবার কখনো টেবিলে বসে খাতা কলম নিয়ে তার কথা ভাবে। ভাবতে ভাবতে সে খাতা কলম নিয়ে রাত্রি জেগে লিখতে শুরু করলো, ❤️❤️

“অভিলাষী মন”

শাপলা তোমায় ভালোবাসি বলবো কেমন করে?
দীর্ঘদিনের এই অভিলাষ রইছি মনে ধরে।
ঘর বাঁধিবো তোমার সনে স্বপ্ন আকাশ ছোঁয়া,
দিবানিশি প্রার্থনাতে রব সমীপে দোয়া।

আল্লাহ তুমি দাও মিলিয়ে শাপলা নামের প্রিয়া,
ষোলো বছর অপেক্ষাতে আমার অবুঝ হিয়া।
সব জীবনের চাওয়া পাওয়ার স্বপ্ন থাকে মনে,
মাওলা তুমি দাও বেঁধে মন জোড়া প্রিয়ার সনে।

এই ভেবে আজ দিন গেলো মোর, মাস বছরও গেলো,
অবশেষে হঠাৎ এ মন তোমার দেখা পেলো।
ডাকলাম আমি শুনলে কথা চিনলে না হায় মোরে!
একলা জেগে নিশি কাটে মাথা আমার ঘোরে।

দেশ বিদেশে ঘুরছি কত পাইনি কারো দেখা,
স্বপ্ন দেখে বুঝে নিও তুমি বিনে একা।
তুমি বিনা ভাল্লাগে না প্রেম কি বলে একে?
ডাকলে প্রিয়া সাড়া দিও যেও নাকো বেঁকে।

রানির হালে সাজিয়ে রেখে রাখবো ধরে বুকে,
অভিলাষের প্রেমের জ্বরে মরছি ধুঁকে ধুঁকে।
আর থেকো না অভিমানী, আর থেকো না দূরে,
কোমল ঠোঁটের হাসি দিয়ে ডাকো সুরে সুরে।

চাই না আমি এই জীবনে তোমায় ছাড়া কিছু,
দোষ দিও না ঘুরি যদি তোমার পিছু পিছু।
তুমি আমার দুই নয়নে আঁধার ঘরের আলো,
জীবন থেকেও প্রিয়া আমি বাসি অনেক ভালো।

এইভাবে শাপলাকে নিয়ে কবিতা রচনা করতে করতে ফজরের আযান দিলো। ইউসুফ আর দেরি না করে ওজু করে নামাজের জন্য মসজিদ চলে গেলো।

অপরদিকে শাপলারও ইউসুফকে স্বপ্ন দেখে
দেখে হঠাৎ জেগে উঠলো। শাপলার কানেও ভেসে আসলো ফজরের আযানের সুর।
বিছানা থেকে উঠে শাপলা ভাবতে লাগলো। আমি এ কী স্বপ্ন দেখলাম!  ইউসুফ আমার জন্য পাগল। তারা অনেক বড়লোক, আর আমরা অনেক গরিব। এটা কখনো সম্ভব নয়।

ইয়া রাব্বুল আলামিন!  তুমি এমন কোনো কাজ আমার দ্বারা সম্পাদন করো না, যাতে আমার, আমাদের মান-সম্মানের কোনো হানি হয়। মনে মনে এই প্রার্থনা করতে করতে শাপলাও ফজরের নামাজের প্রস্তুতি নিলো এবং ফজরের নামাজ আদায় করলো।

সকাল হলো।
ইউসুফ ফজরের নামাজ পড়ে শাপলাদের বাড়ির দিকে আস্তে আস্তে রওনা দিলো এবং তাদের বাড়ির নিকটে পৌঁছালো।
ইউসুফ তাদের বাড়ির দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে। জানালা দিয়ে শাপলা তাকে দেখে বলে,
হায় আল্লাহ!  ইউসুফ তো দেখি আমাদের বাড়ি বরাবর চলে এসেছে।
ইয়া আল্লাহ! সে যেন আমাদের বাড়িতে না আসে। নইলে বাবা আমাকে সন্দেহ করবে।
ভাববে হয়তো তার সাথে আমার  কোনো সম্পর্ক আছে। উল্টাপাল্টা প্রশ্ন করে বসলে আমি উত্তর দিতে পারবো না। আল্লাহ তুমি মান-সম্মানের মালিক। মান-সম্মান বাঁচাও।

ইউসুফও তাকে জানালার ফাঁক দিয়ে দেখে ফেলেছে। তার চেহেরা সেই ছোট্টবেলায় দেখেছে। আজ তাকে দেখে আরও অবাক!
যেন চাঁদ পরীরাও তার কাছে হার মেনে যাবে। এ যে আল্লাহ নিজের হাতে অতি যত্নসহকারে সৃষ্টি করেছেন।

ছন্দে ছন্দে বলতে থাকে ইউসুফ,
কী অপরূপ সৃষ্টি!
পড়ে না হায় দৃষ্টি,
সুরত ভারি মিষ্টি
মনেরই প্রেম কৃষ্টি।
সুবহানাল্লাহ, সুবহানাল্লাহ
জপ করে মন শাপলা শাপলা।

এমন সময় শাপলার বাবা দরজার সামনে দাঁড়ানো ইউসুফকে পেছন থেকে বললো,
বাবা তুমি কে?  এখানে এভাবে সকাল বেলায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অপলক দৃষ্টিতে কী দেখছো বাবা ?
ইউসুফ শাপলার বাবাকে দেখে সালাম দেয়,
আসসালামু আলাইকুম আঙ্কেল!

শাপলার বাবা আঃ রহিমঃ
ওয়া আলাইকুম সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু জাযাকাল্লাহ খাইরান হে প্রিয় বৎস!

বাবা তুমি কেমন আছো?  তোমাকে তো চেনা চেনা লাগছে। কোথায় তোমার বাড়ি, কোথায় তোমার ঘর ?

ইউসুফঃ জি আঙ্কেল, আমি ইউসুফ।
ইয়াকুব আলীর ছেলে ইউসুফ। দীর্ঘদিন আমেরিকায় থেকে উকালতি পাস করে কিছুদিন হলো দেশে ফিরে এসেছি আঙ্কেল।
ফজরের নামাজ পড়ে ভাবলাম একটু এলাকাটা ঘুরে দেখি। তাই ঘুরতে ঘুরতে আপনাদের বাড়ির সামনে চলে এসেছি।

শাপলা ইউসুফ ও তার বাবার কথোপকথনের দৃশ্য দেখে বলে,
খাইছেরে খাইছে, আজ বাবার মাথা খাইছে।
কাল মায়ের মাথা খাবে। পরশু আমার মাথা,,, তারপর বিয়ের কথা !

কি বলতে কি যে বলবে?  আল্লাহই জানেন।
ইস! জঞ্জালটা যাচ্ছে না কেনো?  কখন যাবে?  কখন যাবে বলে সে দোয়া পাঠ করে শয়তান তাড়ানোর।
লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিয়্যিউল আজীম।
যাহ্ যাহ্ শয়তান দূর হ।

এ কথা বলার পর শাপলা নিশ্চুপ।
হায় আল্লাহ!  এ কী বললাম!
মানুষকে তো কখনো শয়তান বলা যায় না। যদিও তার সামনে নয়, তথাপি আমি ভুল করে ফেলেছি।
আল্লাহ!  তুমি আমাকে মাফ করো।

শাপলার বাবাঃ না বাবা, কোনো সমস্যা নাই। ঘুরতে ঘুরতে যখন চলেই এসেছো, ভালোই করেছো। আর এখানে নয়, চলো বাড়ির ভেতরে যাই। আজ তুমি, আমি, শাপলা ও তোমার আন্টি মিলে একসাথে সবাই মজা করে নাস্তা করবো। সেই ছোটবেলায় তোমাকে দেখেছি।
এর মাঝে কতদিন দেখা সাক্ষাৎ নাই।
চলো বাবা, চলো, ভেতরে চলো।

ইউসুফ মনে মনে বলে, সুযোগ যখন পেয়েছি, তখন যাই। শাপলার সাথে খুব কাছাকাছি দেখা হবে।

ইউসুফ আমতা আমতা করে, না আঙ্কেল আজ থাক, আরেকদিন একসাথে সবাই নাস্তা করবো ইনশাআল্লাহ। আজ আসি।

শাপলার বাবাঃ না বাবা আজকেই চলো। তোমার আন্টি তোমাকে দেখে খুব খুশি হবে।

ইউসুফঃ ঠিক আছে আঙ্কেল, চলুন।
তারা বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করতেই শাপলা দাঁত কামড়িয়ে ফিসফিস করে বলে,
জঞ্জালটা শেষ পর্যন্ত বাড়িই এসে পড়লো!

শাপলার বাবা আঃ রহিমঃ
মা শাপলা!  কই তুমি কোথায়? 
দেখো,দেখো, কে এসেছে আমাদের বাড়ি?

তোমার ইয়াকুব চাচার ছেলে ইউসুফ।
তাড়াতাড়ি নাস্তা নিয়ে এসো। আজ আমরা নতুন মেহমান সহ সবাই মিলে একসাথে নাস্তা করবো।

শাপলাঃ ঠিক আছে বাবা, আপনারা টেবিলে বসুন। আমি এখনই নাস্তা নিয়ে আসছি।

শাপলার মা রহিমাঃ সুবহানাল্লাহ, ইউসুফ কত বড় হয়ে গেছে!  তোমার বাবা মা কেমন আছে বাবা?

ইউসুফঃ জি আন্টি, আলহামদুলিল্লাহ।
আপনাদের দোয়া ও আল্লাহর রহমতে
মা ও বাবা সবাই ভালো আছেন।

শাপলাঃ মনে মনে,  আজ এমন নাস্তা খাওয়াবো, যা সে দাদারকালেও খায়নি।
চিরদিন মনে রাখবে।

শাপলা নাস্তা প্রস্তুত করে নিয়ে আসলো।
আপেল, কমলা,বেদানা ও লুচি পরোটা হালুয়া। সে ইউসুফের হালুয়ার মাঝে প্রচুর পরিমাণ লবণ এবং পানির গ্লাসে মরিচ গুলে দিয়েছে।

সবাই তার একসাথে নাস্তা খাচ্ছে। ইউসুফ আপেল কমলা খেয়ে লুচি পরোটা একবার মুখে দিয়েই নাড়াচাড়া করছে।

শাপলাঃ কি ব্যাপার জনাব, আপনি খাচ্ছেন না কেন?
ইউসুফঃ না মানে, আমি লুচি পরোটা খুব কম খাই।

শাপলাঃ বুঝেছি, আমরা গরিব মানুষ তো, তাই আমাদের খাবার আপনার পছন্দ হয়নি। নতুন মেহমান আসলেন, না খেলে হয়, কেমন দেখায় বলেন তো?  কষ্ট হলেও খেয়ে নিন প্লিজ।

ইউসুফঃ না শাপলা। এমনটি কখনো ভাববেন না। অনেক সুন্দর হয়েছে। আমি জীবনেও এমন সুস্বাদু খাবার খাইনি।
চিরদিন মনে থাকবে।

শাপলাঃ তাহলে পানি পান করুন।
পানিতে আরও টেস্ট পাবেন। আমাদের গ্রামের টিউবওয়েলের পরিষ্কার, স্বচ্ছ ঠাণ্ডা পানি। খুব সুস্বাদু ও মিষ্টি। খেলে আত্মা ভরে যাবে। নতুন সতেজতা ফিরে পাবেন।

ইউসুফ পানি পান করতে গেলে এক ঢোক পানি পান করার পর ঝালের চোটে কাশি শুরু হয়ে যায়।

শাপলার আম্মু বলে, কী হলো ছেলেটার? 
এমন করছে কেন?

শাপলাঃ না মা, তেমন কিছু না।  নতুন পানি তো, গলায় বেধে গেছে। সব ঠিক হয়ে যাবে।
তাই না জনাব?

এবার ইউসুফের বুঝতে আর বাকি রইলো না। এটা নিশ্চয়ই শাপলার দুষ্টুমি ছাড়া আর কিছুই নয়।

অভিলাষ পর্বঃ ১১
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

শাপলা হঠাৎ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললো,
বাবা! সকাল ৭টা বেজে গেছে কখন আমি টেরই পাইনি। আমার আবার টিউশনি আছে, আমি চললাম, আপনারা গল্প করেন।

ইউসুফঃ আঙ্কেল!  আমারও একটা জরুরি কাজে তাড়া আছে। আমিও তো সময়ের দিকে খেয়াল করিনি। আপনাদের ভালোবাসায় বিভোর ছিলাম।
আঙ্কেল!  আমিও আসি। আবার কথা হবে ইনশাআল্লাহ। আমার জন্য দোয়া করবেন।
এই বলে ইউসুফও ভোঁদৌড় দিলো শাপলার পিছু পিছু।

শাপলা রিকশা করে কোন দিক যে গেলো আর দেখতে পেলো না। ততক্ষণে শাপলা অনেক দূর চলে গেছে। পথিমধ্যে সেই বখাটে তিন ছেলে জাবেদ,কামাল, জালাল শাপলাকে দেখতে পায়। তারাও যেন কোথায় যাচ্ছিলো রিকশা করে ?
শাপলাকে দেখে তারা সবাই সমস্বরে বলতে থাকে,,

বোরখা পরে কন্যা তুমি
যাও গো কোথায় চলে?
প্রেম বিরহ জ্বালায় মোদের
যায় যে এ প্রাণ জ্বলে।

আইসো নাগো একসাথে আজ
খেলবো প্রেমের পাশা,
দেশের ছেলে আমরা তব
মেটায় দেবো আশা।

আমি কামাল, আমি জাবেদ
আমি জালাল ছেলে,
শুনলে কথা ভাগ্য ভালো
না শুনিলেই জেলে। 

শাপলা বলে শয়তানের দল
নাই কি মা বোন ঘরে ?
ইভটিজিং এর মামলা হবে
বেয়াদবির এই তরে।

থাকতে সময় দিচ্ছি দোহাই
সৎ পথে আয় চলে,
সতী নারীর অভিশাপে
জীবন যাবে গলে।

শাপলার মুখে এমন কথা শুনে জাবেদ যেন তার প্রতি দুর্বল হয়ে গেলো। তার সাথীদের বললো, সত্য কথা। একদম খাঁটি কথা।
আমাদের সবারই মা-বোন, স্ত্রী, কন্যা আছে।

জালালঃ অট্টহাসি দিয়ে, আরে জাবেদ!
তুই কি শাপলার প্রেমে পড়ে গেলি?
আরে শালা!  আমাদের তো বিয়েই হয়নি।
স্ত্রী সন্তান পেলাম কোথায়?  আর সবাই যদি মা-বোন,স্ত্রী কন্যা হবে, তবে নিজের বৌ হবে কে? যত্তসব পাগলের আড্ডা!

জাবেদঃ শোন বন্ধু!  আমাদের বিয়ে না হলেও যারা অবিবাহিত, তাদের ঘরে নিশ্চয়ই মা- বোন আছে। এতে কোনো সন্দেহ নাই। যেমন দেখ, আমার একটি বড় বোন আছে। যে বোন মায়ের মত স্নেহ মমতা ভালোবাসা দিয়ে ছোট ভাইকে আগলে রাখে। নিজে না খেয়েও আমার মুখে খাবার তুলে দেয়। তোর ও কামালের দু-জনেরই ছোট বোন আছে। তাদেরকে তোরা কত ভালোবাসিস! কেউ কিছু বললে হিংস্র বাঘের মত হুংকার দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়িস।
আর স্ত্রী কন্যার কথা বলছিস? 
বিয়ে করলেই তো স্ত্রী কন্যা হবে। যেমন তোর মা, আমার মা, আমাদের সবার মা আমাদের বাবাদের স্ত্রী এবং নানা নানি,দাদা দাদির কন্যা সন্তান।
মনে কর আমরা শাপলাকে যেভাবে উত্ত্যক্ত করছি, ঠিক সেভাবে অন্য কেউ যদি আমাদের মা-বোন, স্ত্রী কন্যাকে উত্ত্যক্ত করে, তাহলে তোর আমার কেমন মনে হবে, একটু চিন্তা করে দেখেছিস? 
একটু বিবেককে জাগ্রত করে চিন্তা করে দেখ তো। শাপলা যদি আমার অথবা তোর মায়ের পেটের বোন হত, তাহলে তুই বা আমরা কী করতাম? কিল ঘুষি দিয়ে তার চাপাকে থ্যাবলা করে দিতাম।

এছাড়াও এটা ইভটিজিং এর পর্যায়ে পড়ে।
যা বাংলাদেশের আইনে দণ্ডনীয় অপরাধ। জেল জরিমানাও হতে পারে।

তাছাড়াও ইসলাম নারীকে যথেষ্ট পরিমাণ সম্মান দিয়েছেন।
মা হিসেবে নারীদের সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যাদা দিয়েছে ইসলাম।
মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘মায়ের পদতলে সন্তানের বেহেশত’।

আরও একটি হাদিসে হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, একবার এক লোক মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর দরবারে এসে জিজ্ঞেস করলেন, আমার সদ্ব্যবহার পাওয়ার বেশি অধিকারী কে? নবীজি (সাঃ) বললেন, ‘তোমার মা’।
ওই লোক জিজ্ঞেস করলেন, তারপর কে? তিনি উত্তর দিলেন ‘তোমার মা’।
ওই লোক আবারও জিজ্ঞেস করলেন, তারপর কে?
এবারও তিনি উত্তর দিলেন ‘তোমার মা’। (বুখারি)।

কন্যা হিসেবে নারীর সম্মানঃ
মহানবী (সাঃ) বলেছেন, ‘মেয়েশিশু বরকত (প্রাচুর্য) ও কল্যাণের প্রতীক।’
আরও হাদিসে রয়েছে,
‘যার তিনটি, দুটি বা একটি কন্যাসন্তান থাকবে; আর সে ব্যক্তি যদি তার কন্যাসন্তানকে সুশিক্ষিতা ও সুপাত্রস্থ করে, তার জান্নাত নিশ্চিত হয়ে যায়।’ – সুবহানাল্লাহ।

বোন হিসেবে নারীর সম্মানঃ
মহানবী (সাঃ) বলেছেন,
‘কারও যদি কন্যা সন্তান ও পুত্র সন্তান থাকে আর তিনি যদি সন্তানদের জন্য কোনো কিছু নিয়ে আসেন, তবে প্রথমে তা মেয়ের হাতে দেবেন এবং মেয়ে বেছে নিয়ে তারপর তার ভাইকে দেবে।’
হাদিস শরিফে আছে, বোনকে সেবাযত্ন করলে আল্লাহ প্রাচুর্য দান করেন।

স্ত্রী হিসেবে নারীর সম্মানঃ
ইসলামের দৃষ্টিতে নারী-পুরুষ একে অন্যের পরিপূরক। এ প্রসঙ্গে কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তারা তোমাদের আবরণ স্বরূপ আর তোমরা তাদের আবরণ।’
(সূরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৮৭)।

কোরআনে আরও বলা হয়েছে, ‘তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের সঙ্গে সদাচরণ করো।’
(সূরা-৪ নিসা, আয়াত: ১৯)।

স্ত্রীর গুরুত্ব সম্পর্কে মহানবী (সাঃ) বলেছেন, ‘উত্তম স্ত্রী সৌভাগ্যের পরিচায়ক।’
(মুসলিম শরিফ)।
তিনি আরও বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে সে–ই উত্তম, যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম।’ (তিরমিজি)

রাসুলের (সঃ) এর অন্য একটি হাদিসে এসেছে, নারীকে সম্মান করার পরিমাপের ওপর ব্যক্তির সম্মান ও মর্যাদার বিষয়টি নির্ভর করে। তিনটি বিষয় নবী করিম (সাঃ)-এর জীবনে বিশেষভাবে লক্ষণীয় ছিল। অর্থাৎ তিনি তিনটি জিনিসকে খুবই ভালোবাসতেন।
যথাঃ-
১. নামাজের প্রতি অনুরাগ, তিনি নামাজকে খুব ভালোবাসতেন।

২. ফুলের প্রতি ভালোবাসা, তাঁর কাছে ফুল ছিলো খুব প্রিয় ।

৩. নারীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন।
(বুখারি ও মুসলিম)

শাপলা আপু ঠিকই বলেছেন,
সতী নারীর পতী মরে না,
জগত জুড়ে হয় না তাঁর তুলনা।
কাউকে কষ্ট দিলে, কারো মনে আঘাত দিলে,  তার কষ্টের নিঃশ্বাসে জীবন ধ্বংস হয়ে যায়। নেমে আসে জীবনের অধপতন।

এবার কামাল বললো,
দোস্ত জাবেদ! তুই এত কিছু জানিস!
এত কিছু জানার পরেও আগে আমাদেরকে অবগত করিসনি কেন?

জাবেদঃ বিশ্বাস কর বন্ধু, আমি হাদিস কোরআন সম্পর্কে অবগত ছিলাম ঠিকই।
কিন্তু এসব বয়সের দোষ।

এ সময় খুব কঠিন খারাপ সময়। এ সময়, যৌবনের সময় যে নিজেকে শয়তানের প্ররোচনা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারবে, সেই জীবনে সফলকাম হবে।
আর যে শয়তানের কাছে নিজেকে বিলীন করে দেবে, তার জীবনেই ধ্বস নেমে আসবে।

তাই এই কঠিন সময়ে বয়সের কারণে ছেলেমেয়ে  অনেকেই শয়তানের প্ররোচনায়  একটু বিভ্রান্তিতে পড়ে যায়। হয়তো আমিও সেই রকমই পড়েছিলাম।

কিন্তু শাপলা আপুর শিক্ষণীয় ছন্দময় কথায় আমার সব ভুল ভেঙে গেছে। আমার চোখ খুলে দিয়েছে। এই ছন্দময় কথাগুলো সত্যি মারাত্মক এবং বাস্তব।

‘শাপলা আপুর মুখের বাণী
নাই কি মা বোন ঘরে ?
ইভটিজিং এর মামলা হবে
বেয়াদবির এই তরে।

থাকতে সময় দিচ্ছি দোহাই
সৎ পথে আয় চলে,
সতী নারীর অভিশাপে
জীবন যাবে গলে।’

জাবেদের মুখে এমন সুন্দর সুন্দর কোরআন ও হাদিসের উক্তি শোনায় জালালও অনুতপ্ত হয়ে বললো,
জালালঃ সত্যি জাবেদ! তুই একদম সত্যি, খাঁটি কথা বলেছিস।

আর এ জন্যই লোকমুখে শোনা যায়,
‘কুসঙ্গে উঠিবসি কাটাই দু’টি কান,
সুসঙ্গে উঠিবসি অকালে যায় প্রাণ।’
অর্থাৎ,  ‘সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস
অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ। ‘

বন্ধুঃ তুই সত্যি আমাদের কঠিন বিপদের হাত থেকে বাঁচালি। নইলে আমরা আরও কতই পাপের মধ্যে নিমজ্জিত হতাম শয়তানের গোলাম হয়ে।

জাবেদঃ সবই আল্লাহ পাকের ইচ্ছা।
আল্লাহ যাকে হেদায়েত দান করেন, সেই হেদায়েত প্রাপ্ত হয়।

কামালঃ তাহলে তো শাপলা আপুর কাছে আমাদের এমন আচরণের জন্য সরি বলা উচিৎ। তার কাছে ক্ষমা চাওয়া প্রয়োজন।

জালালঃ ঠিক বলেছিস। উনি তো এখন টিউশনি করতে গেছেন। আমরা এই পথেই তার আশার অপেক্ষায় থাকবো। যতক্ষণ পর্যন্ত না আসে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা এখানেই তার  অপেক্ষা করবো।,,,

সেই সকাল থেকে তারা তিন বন্ধু মিলে শাপলা আসার পথপানে চেয়ে রইছে এই পথ দিয়ে আসবে বলে। কিন্তু শাপলা তার দৈনন্দিন কাজকর্ম শেষ করে এই পথ দিয়ে না এসে অন্য পথ দিয়ে চলে গেছে।
কিন্তু শাপলা জানে না যে সেই তিনটি ছেলে তাদের ভুল বুঝতে পেরে অনুতপ্ত হয়ে তার কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য অধীর অপেক্ষায় পথের ধারে বসে আছে।

অভিলাষ পর্বঃ ১২
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

জাবেদ, কামাল ও জালাল সারাদিন সেই পথের ধারে বসে বসে প্রহর গুনছে। কিন্তু শাপলা তো আসে না।
আর আসবেই বা কীভাবে?  সে তো আর বাইরে নাই অন্য রাস্তা দিয়ে নিজের বাড়ি চলে গেছে।

সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো, মাগরিবের আযান দিলো। শাপলার কোনো খবর নাই।
পথিমধ্যে এডভোকেট ইউসুফ তাদেরকে দেখে বললো,

এই ভাই!  আপনাদের তো চেনা চেনা লাগছে। আপবাদের বাড়ি কোথায়?
জাবেদঃ ভাই!  আমাদের বাড়ি দূরে নয়, খুব কাছেই। ঐ পাড়ায় আমাদের বাড়ি।

ইউসুফঃ ঐ পাড়ায় আপনাদের বাড়ি, তো এই পাড়ায় কী করছেন ভাই?
আপনাদের আব-ভাব তো ভালো লাগছে না। আপনারা কোনো খারাপ উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্য সম্ভবত এখানে এসেছেন।

জাবেদঃ ভাইজান!  আপনি আমাদের ভুল বুঝছেন। আমাদের কোনো খারাপ উদ্দেশ্য নাই। আমরা একটা মহাপাপ করেছি। আর সেই পাপের প্রায়শ্চিত্ত করার জন্য আমরা সারাদিন এখানে তপস্যা করছি।

ইউসুফঃ তাহলে যখন পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতেই এসেছেন, তবে চলুন আগে মাগরিবের নামাজ পড়ে আসি। তারপর আমরা পাপের প্রায়শ্চিত্তের কথা বলবো।

তারা চারজন মিলে মাগরিবের নামাজ পড়ে আসলো এবং ইউসুফ আবার তাদের জিজ্ঞেস করলো।
ভাইজান! পাপের প্রায়শ্চিত্ত করার জন্য আপনারা এখানে সারাদিন রৌদ্র তাপে কষ্ট করে তপস্যা করতে করতে সারাদিন পার করে দিলেন। তার ঘটনা আমাকে বিস্তারিত বলেন।

জাবেদঃ তার আগে আপনি আপনার পরিচয় দিন। আপনি কি ইয়াকুব চাচার ছেলে না?  সম্ভবত বেশ কিছুদিন বিদেশে ছিলেন।

ইউসুফঃ আপনি ঠিকই বলেছেন। দীর্ঘ দশ বছর বিদেশে ছিলাম সেখান থেকে লেখাপড়া করে, উকালতি পাস করে কিছুদিন হলো বাড়ি ফিরেছি।

জাবেদঃ আনন্দ চিত্তে,  বন্ধু!  তুই কি আমাকে চিনতে পারছিস না। আমি তো সেই জাবেদ। আমরা উচ্চ বিদ্যালয়ে একসাথে লেখাপড়া করে ছিলাম। তুই, আমি, কামাল ও জালাল।

ইউসুফঃ হ্যাঁ বন্ধু, মনে পড়েছে। আমরা একসাথে কত খেলাধুলা করেছি, করেছি কত দুষ্টুমি।
যাইহোক, তোর কী সমস্যা বল? 
আমি যথাসাধ্য তোর সমস্যা দূর করার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।

জাবেদঃ দোস্ত!  আর বলিস না। রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে তোদের এই পাড়ার শাপলা নামের একটি মেয়েকে শয়তানের প্ররোচনায়   উত্ত্যক্ত করেছিলাম। মেয়েটি খুব সুন্দর। আমাদের উত্ত্যক্ততায় খুব ক্ষিপ্ত হয়ে এমন একটি কথা বলেছে, যা আমাদের জীনটাকে পাল্টে দিয়েছে। তাই তার কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য আমরা তিন বন্ধু এই রাস্তার ধারে, সারাদিন ধরে তার অপেক্ষায় অপেক্ষমান ।

ইউসুফ মুচকি হেসে বললো,
পাপের প্রায়শ্চিত্ত করা তো ভালো কথা।
কিন্তু আবার অন্য কিছু তো হয়নি?

জাবেদঃ কী বলিস দোস্ত!
তোর কথা তো কিছুই বুঝলাম না। একটু ক্লিয়ার করে বল।

কামাল ও জালাল সমস্বরে বললো,
বন্ধু!  তুই বুঝতে পারিসনি? 
ইউসুফ ভাই তোকে বলছে, তুই তার প্রেমে পড়েছিস?

জাবেদঃ চুপ কর বেয়াদব! সবসময় এমন কথা বলা ঠিক নয়। আমরা যার জন্য এসেছি, আগে সেটার সমাধান হোক। প্রেমপ্রীতি তো পরের কথা।

ইউসুফঃ আজকে তোরা চলে যা। আজ সে এ পথ দিয়ে আর আসবে না।
কেননা,  সে অনেক আগেই বাড়ি চলে গেছে।

জাবেদ ইউসুফকে বললো,
দোস্ত! তাদের বাড়ি কি তুই চিনিস? 
আমাকে একটু দেখাবি? 

ইউসুফঃ হ্যাঁ চিনি,  দেখবি? চল যাই সামনের দিকে।

জাবেদঃ কিন্তু সন্ধ্যা লেগে গেলো। আজকে তবে যাই।। আরেকদিন সময় করে দেখে নিবো। আর তুই যদি পারিস আমার পক্ষ থেকে তার কাছ ক্ষমা চেয়ে নিস। সে যেন আমাদেরকে মাফ করে দেয়।

ইউসুফঃ ঠিক আছে দোস্ত, দেখা হলে বলবো। এখন আসি – আল্লাহ হাফিজ।

জাবেদঃ আল্লাহ হাফিজ। আমার জন্য দোয়া করিস বন্ধু। আল্লাহ যেন আমার মনের স্বপ্ন, আশা, আকাঙ্খা পূরণ করেন।

ইউসুফঃ ওয়াফ্ফাকাকাল্লাহ। আল্লাহ যেন তোর মনের নেক আশা পূরণ করেন।
বন্ধু!  তোরাও আমার জন্য দোয়া করিস। আল্লাহ যেন আমারও মনের আশা, স্বপ্ন পূর্ণ করেন।

জাবেদঃ অবশ্যই দোস্ত। আল্লাহ যেন তোর সব স্বপ্ন ও মনের আশা পূরণ করেন এবং নেক হায়াত দান করেন।

ইউসুফঃ আমিন ইয়া রাব্বুল আলামিন জাযাকাল্লাহ খাইরান হে প্রিয় বন্ধু আমার! 

সেখান থেকে জাবেদ ও তার বন্ধুরা সেই স্থান ত্যাগ করে নিজ নিজ বাড়ি চলে গেলো।
সন্ধ্যা শেষে গভীর নিশি আসলো। আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ ঝলমল করে উঠলো। জাবেদ যেন সত্যি সত্যি শাপলার প্রেমে পড়ে গেলো।
তাকে নিয়ে তার নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন মনে জাগলো; সে যেন তার মাঝে জীবনে বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা খুঁজে পেলো।

চাঁদনি রাতে জাবেদ একাকী স্বপ্নে বিভোর। কত কল্পনা, কত জল্পনা মনের ভেতর!
এই ভাবতে ভাবতে চোখে তন্দ্রা চলে আসে। এক সময় গভীর ভাবনায় দু’চোখ জুড়ে ঘুম চলে আসে। স্বপ্নে দেখে শাপলা তার কাছে হাজির হয়ে গেছে ফুলের তোড়া হাতে নিয়ে।
জাবেদ তাকে দেখে বিস্মিত হয় এবং বলে,

শাপলা!  সেই দিনের আচরণে সত্যি আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত ও অনুতপ্ত।
শাপলা! প্লিজ আপনি আমাকে ক্ষমা করবেন। আপনি আমার চোখ খুলে দিয়েছেন। আমাকে সত্যের পথে ধাবিত করেছেন। আপনার মত মহীয়সী নারী আমি আমার জীবনে এটাও দেখিনি।

শাপলাঃ এত প্রশংসা করতে হবে না।  আমি তাতে কিছুই মনে করিনি। আমি সবাইকে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখেছি।
কারণ, আমি জানি, এ শয়তানি আপনাদের ইচ্ছায় হয়নি, হয়েছে ইবলিশ শয়তান আযাযীলের প্ররোচনায়।

জাবেদঃ শাপলা! সত্যি আমাকে মন থেকে ক্ষমা করতে পেরেছেন তো?

শাপলাঃ মুচকি হেসে, জি, সত্যি আমি ক্ষমা করে দিয়েছি। আমি এই ফুলের তোড়া আপনার জন্য নিয়ে এসেছি। আপনি তা গ্রহণ করুন।

জাবেদ মুচকি হাসতে হাসতে ফুলের তোড়া নিয়ে বললো,
আপনাকে অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আসুন প্লিজ, আমরা কিছুক্ষণ গল্প করি।

জি না, এখন গল্পের সময় না। অন্য এক সময় গল্প করবো। ভালো থাকবেন। এখন আসি। আল্লাহ হাফিজ।

জাবেদ কিছু না বলে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো তার চলে যাওয়ার পথপানে। সে স্বপ্নের মাঝে রাত জেগে জেগে তাকে নিয়ে গান  লিখতে লিখতে শুরু করলো,

অন্তরে অন্তরে
যাদু করে মন্তরে
হৃদয়ের মণিকোঠে দিয়েছি যে ঠাঁই,
আজ এই সংগীতে
দু’জনার সন্ধিতে
ভালোবাসা, প্রেম-প্রীতি খুঁজে খুঁজে পাই।।

ও প্রিয়া! ও প্রিয়া!
দেখো চোখ মেলিয়া,
তুমি ছাড়া এ জীবন আঁধারে হারায়!
দূর দূর দূর দূর দূর নীলিমায়।

তুমি সুখ আর দুখ
সবচেয়ে প্রিয় মুখ
কাছে এসে ভালোবেসে নাও বুকে নাও,
যত প্রেম পৃথিবীর
দানে ওই নিয়তির
উজাড় করে ঢেলে সবই মোরে দাও।

ও প্রিয়া! ও প্রিয়া!
শোনো মনো দিয়া,
ইহ-পরকালে আমি তোমাকেই চাই।
তুমি ছাড়া এ জীবন আঁধারে হারায়!
দূর দূর দূর দূর দূর নীলিমায়।

বসন্ত শরতে
পরতে পরতে
স্নিগ্ধ প্রেমে তব ব্যাকুল এই দিল,
জীবনে মরণে
তোমারই কারণে
সঁপিলাম নিজেকেই মেরে প্রেম সিল।

ও প্রিয়া! ও প্রিয়া!
শোনো মনো দিয়া,
চাওয়া পাওয়ার শেষ আর কিছু নাই।
তুমি ছাড়া এ জীবন আঁধারে হারায়!
দূর দূর দূর দূর দূর নীলিমায়।

লিখতে লিখতে জাবেদের হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায়। সকালও হয়ে যায়।  দৌড় দিয়ে সে দরজার বাইরে যায়। পাগলের মত তাকে খুঁজতে থাকে। কিন্তু তার দেখা না পেয়ে সেই খুব সকালে ছুটলো তার পাশের গ্রামে শাপলাদের ঠিকানায়।

কিন্তু জাবেদ তো আর শাপলাদের বাড়ি চিনে না।

এদিকে এডভোকেট  ইউসুফ নামাজ পড়ে সকাল বেলায় হাঁটতে বের হয়েছে। পথিমধ্যে৷ হঠাৎ করেই তার সাথে দেখা হয়ে যায় জাবেদের।
ইউসুফ তাকে জিজ্ঞেস করে,
কী হয়েছে জাবেদ?  এত সকাল বেলায় আনন্দ চিত্তে দৌড়তে দৌড়তে আমাদের গ্রামে তোর দেখা। আমি তো অবাক!

জাবেদঃ আজ রাতে আমি একটা স্বপ্ন দেখেছি বন্ধু। সেই স্বপ্ন দেখে আমার ঘুম ভেঙে যায় এবং ঘুম থেকে উঠেই দৌড়তে দৌড়তে তোদের গ্রামে চলে আসি।

দোস্ত!  এই পৃথিবীতে আমার আপন বলতে কেউ নাই। আমি এতিম, অসহায়। আমার মা বাবাও নাই। আমি ছোটবেলাতেই তাঁরা পরলোক গমন করেছেন। আমার মনের কথা বলার মত বিশ্বাসী বন্ধু তুই ছাড়া আর কেউ নাই।  আজ তোকে এমন একটা কথা বলবো, তুই চমকে উঠবি। কিন্তু আমি ভয় পাচ্ছি।

👉অভিলাষ পর্বঃ ১৩ 👈
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

ইউসুফ: জাবেদ!  তোর কোনো ভয় নাই। তুই নির্ভয়ে আমাকে তোর মনের কথা খুলে বল বন্ধু।
আমি আপ্রাণ চেষ্টা করবো তোর সমস্ত সমস্যার সমাধান করতে।

জাবেদ: দোস্ত!  তার আগে তোর কাছে একটা জিজ্ঞাসা, তুই যদি উত্তর দিস, তবেই আমি আমার মনের কথাগুলো তোর সামনে প্রকাশ করার সুযোগ পাবো নির্ভয়ে ও নির্লজ্জায়।

ইউসুফঃ আরে বন্ধু এ কী বলিস!
ভয় না হয় বুঝলাম কিন্তু লজ্জা আবার কীসের?
এটাই তো বুঝলাম না।

জাবেদঃ না দোস্ত আগে তোকে উত্তর দিতে হবে, নইলে আমি তা বলার কখনোই সাহস পাবো না।

ইউসুফঃ আচ্ছা ঠিক আছে বল তোর প্রশ্ন কী?

জাবেদঃ সত্যি করে বলতো বন্ধু, তুই কি কখনো কাউকে ভালোবেসেছিস ; কখনো কি কারও প্রেমে পড়েছিস?

ইউসুফঃ এ কেমন কথা বন্ধু?  তোর এ কথার অর্থ কিছুই বুঝলাম না। আমার প্রেম ভালোবাসার সঙ্গে তোর প্রশ্নের কী সম্পর্ক?

জাবেদঃ দোস্ত! অনেক সম্পর্কই  আছে বন্ধু।
প্লিজ তুই আমাকে বল।

ইউসুফঃ তাহলে শোন বন্ধু আমার প্রেম ভালোবাসার কাহিনিঃ
আমি যখন সপ্তম শ্রেণিতে পড়ি, তখন পঞ্চম শ্রেণির একটি মেয়েকে আমার খুব ভালো লেগে যায়।  আমি তাকে চুপি চুপি একা নিরালায় চোরের মত করে ফুল বাগানের আড়াল থেকে হামাগুড়ি দিয়ে অপলক দৃষ্টিতে দেখতাম রাস্তায় তার পথচলা।
সে যে কী মিষ্টি মেয়ে, আর কী দারুণ দেখতে তার মুখের হাসি! হাসলেই যেন মুক্তা ঝরে। দীঘল কালো চোখদুটো,  যত দেখি আরও যেন ততই দেখতে ইচ্ছে করে। এভাবে কাটে আমার দিনকাল ক্ষণ। যখন আমি এস এস সি পাশ করলাম, তখন আমার বাবা মা আমাকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্য বিদেশে পাঠিয়ে দেন। যেদিন আমি বিদেশের পানে পাড়ি দেই, সেদিন এ গ্রাম ছেড়ে আমার যেতে ইচ্ছেই করছিলো না। তবুও যেতে হয়েছে মা বাবার ইচ্ছা পূরণের জন্য। আমি পাড়ি দিলাম বিদেশের মাটিতে। সেখানে লেখাপড়া করতে থাকি আর তার কথায় মনে মনে ভাবি, আঁকি দু-চোখে হাজরও স্বপ্ন। এভাবেই বছরের পর বছর আমার দিন কাটে শুধু তার ভাবনায় একা নিরালায়। একটা পলক দেখার জন্য কতই না ছটফট করেছি, কতই না ব্যাকুল চিত্তে মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে মোনাজাত প্রার্থনায় মগ্ন ছিলাম, ছিলাম তার প্রেমে বিভোর। কিন্তু বিদেশে থাকাকালীন সময় তকে একটি নজরও দেখতে পাইনি।

জাবেদ: আরে দোস্ত!  এ কী বলিস?  এখন তো মোবাইল ইন্টারনেটের যুগ।  যে কোনো সময়, যে কোনো মুহূর্তে, চোখের পলকে এক দেশের সাথে আর এক দেশে যোগাযোগ করা সম্ভব। যোগাযোগের ব্যবস্থা আছে ফেসবুক, মেসেঞ্জার, ইমু, হোয়াটসঅ্যাপ ও আরও বিভিন্ন মাধ্যম।
আচ্ছা যাইহোক, তারপর এ পর্যন্ত কী অবস্থা বল?

ইউসুফ: দোস্ত! তারপর বেশ কিছুদিন বিদেশে থেকে উকালতি পাশ করে মা মাটির প্রেম ও নাড়ীর টানে নিজের দেশে ফিরে আসলাম।
এসেই খোঁজ নিলাম মা বারা কাছে, সেই মেয়েটি কোথায় আছে, কেমন আছে? 
মা বললো, আজব ব্যাপার তো!  আজও সেই মেয়েটিকে মনে রেখেছিস?  আজও তার কথা ভুলতে পারিস নি? 

আমি মনে মনে মাথা নিচু করে বললাম, 
না মা,  আজও ভুলতে পারিনি সেই ছোট্ট বেলার অবুঝ মেয়েটিকে।
কারন, তার মাঝেই যে আমাী স্বপ্নবিলাসী হারিয়ে গেছে। আমার নীরবতা দেখে মা আবারও বললো,  কিরে খোকা?  এখনো জবাব দিলি না যে!

আমি বললাম,  না মা, একসাথে লেখাপড়া করেছি, একসাথে খেলাধুলা করেছি তো, তাই এখানে এসেই তার কথা মনে পড়ে গেলো।
মা বললো,  সে খুব ভালো আছে,  তার বাবা মাও অনেক ভালো মানুষ, তারাও ভালোই আছেন। মেয়েটি এখন অনেক বড় হয়ে গেছে। তুই দেখলে চিনতেই পারবি না। 
আমি বললাম, তাই নাকি মা?
মা বললো,  হ্যাঁ বাবা, সত্যি তাই।

তারপর আমি কলাকৌশল করে মা বাবাকে না জানিয়ে  তাদের বাড়ি গিয়ে নিজের চোখে একটি নজর দেখে আসলাম।
মায়ের কথা সত্যি সে অনেক সুন্দর হয়েছে, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে। প্রতিদিন ফজরের নামাজ পড়ে কোরআন শরীফ  তিলাওয়াত করে মধুর সুরে। তার বাবা মায়ের সাথেও অনেক কথা হলো। উনারাও আমাকে দেখে অনেক খুশি হলো, আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া করলো, সুখে থেকো বাবা , সুখে থেকো। আল্লাহ তোমার মনের সকল নেক আশা পূরণ করুন – আমিন।

জাবেদঃ দোস্ত!  দারুণ তো তোর সেই বাল্যপ্রেমের কাহিনি!
তো দোস্ত,  যার কথা এতক্ষণ বর্ণনা করলি, যার প্রেমে তোর এতো বিভোর মন। তার নামটা তো এখনো বললি না।
দোস্ত! তার নাম কী বল শুনি?

ইউসুফঃ নামটা না হয় পরেই বলবো, এখন থাক।  এবার বল তোর মনের কাহিনি।
তোর মনে জমে থাকা সেই না বলা ভাষা। 

জাবেদঃ না দোস্ত, আগে বলতে হবে, তোর সেই প্রেয়সীর নাম কী? কোথা থাকে, তার বাড়িঘরই বা কোথায়?

ইউসুফঃ মাথা নাড়া দিয়ে বললো,
না বন্ধু,  এখন তার নাম বলা যাবে না
আগে বল তোর মনে জমে থাকা, ব্যাকুলতার অপরিস্ফুট, অস্কুট বাক।

জাবেদঃ দোস্ত!  বলতে ভয় লাগে, আবার লজ্জাও লাগে।  কীভাবে তো বলি?  আমি কোনো শুরুটাই খুঁজে পাচ্ছি না।

ইউসুফঃ তাহলে থাক, পরে অন্য কোনদিন বলিস।
এখন যাই।

জাবেদঃ না দোস্ত!  যাসনে একটু দাঁড়া।
আমার মনের জমানো লালিতপালিত না বলা কথাগুলো না বলা পর্যন্ত আমি শান্তি পাচ্ছি না।
আবার কাউকে সাহস করে বলতেও পারছি না। এটা যে মনের গহীন বনের লুকায়িত গোপনীয় কথা।
কাকে বলবো?  তেমন বিশ্বাসী কোনো বন্ধুও আমার নাই।
আর আমি না বললেও মনে স্বস্তি পাচ্ছি  না।

ইউসুফঃ তাহলে লজ্জা না করে, মনের ভেতরে শঙ্কা না পুষে বীর পুরুষের মত বলে ফেল।

জাবেদঃ হ্যাঁ দোস্ত,  অবশ্যই বলবো এবং তোকোই বলবো।
কারণ,  তুই ছাড়া আমার বিশ্বাসী বন্ধু আর কেউ নাই। আমি জানি, তুই আমাকে অনেক ভালোবাসিস। আমার জন্য তুই তোর জীবন পর্যন্ত বিসর্জন দিতেও প্রস্তুত এ আমি বিশ্বাসী।

ইউসুফ: আর এতো আদিখ্যেতা করা লাগবে  না বন্ধু। যা বলার দ্রুত নির্ভয়ে, নির্লজ্জায় বলে ফেলো।

জাবেদঃ দোস্ত!  তার আগে আরেকটি কথা,,,,,
ইউসুফঃ কী কথা দোস্ত, বল।
জাবেদঃ দোস্ত!  তুই আমাকে কতটুকু ভালোবাসিস?

ইউসুফঃ দোস্ত!  তোকে আমি অনেক অনেক অনেক বেশি ভালোবাসি। তুই যে আমার সেই ছোট্টবেলার একমাত্র সবথেকে প্রিয় খেলার সাথী ছিলি।

জাবেদঃ তাহলে কি আমি তোর সেই প্রেয়সীর চলয়েও অনেক বেশি প্রিয় বন্ধু?

ইউসুফঃ প্রেয়সী, প্রেমিক- প্রেমিকা এক জিনিস,
আর বন্ধু এক জিনিস।
প্রেমিক প্রেমিকার সাথে বন্ধুর তুলনা হয়।
প্রেমিকার স্থানে প্রেমিকা, বন্ধুর স্থানে বন্ধু, মা-বাবার স্থানে মা-বাবা,  আর ভাই বোনের স্থানে ভাই-বোন।
সবার প্রেম ভালোবাসা এক রকম নয়।
কাল, স্থান ও সম্পর্ক ভেদে একেক জনের প্রেম ভালোবাসা একেক রকমের হয়।

তবে মানে রাখিস, আমি তোকে অনেক  ভালোবাসি। আমার অন্যান্য বন্ধুবান্ধবদের থেকেও বেশি ভালোবাসি তোকে। তোর সুখ মানে আমার সুখ, তোর কান্না-হাসি মানে আমার কান্না-হাসি।
বন্ধু!  বল বল নির্ভয়ে ও নির্দ্বিধায়,
তোর সুখ ও হাসিমুখ দেখতে চাই।

জাবেদঃ তাহলে শোন বন্ধু তোকো বলি  মনানন্দে ছন্দে ছন্দেঃ

বন্ধু তোদের বাড়ির পাশে একটা মেয়ের বাস,
প্রথম তারে দেখার পরেই খাইছে মনে ক্রাশ!!
কাঁপে যে মন দুরুদুরু
বল কীভাবে করবো শুরু ??
না পেলে তার ভালোবাসা জীবন সর্বনাশ!

চলার পথে হঠাৎ দেখে হারায় অবুঝ মন,
ঘুম আসে না চোখের পাতায় ভাবনা সারাক্ষণ।।
দে দে আমায় দে না বলে
দ্যাখ না ভাসি নয়ন জলে,,
সঙ্গতে তার বাঁধবো যে ঘর এ মনেরই আশ।

কোথায় গেলে কেমন করে পাবো তারে বল ?
বন্ধুরে তোর বিনয় করি সঙ্গে আমার চল্ ।।
প্রেমের জ্বালা জ্বলছে মনে
কেউ দেখে না সঙ্গোপনে,,
সেই মেয়েটাই রন্ধ্রে রন্ধ্রে আমার দেহের শ্বাস।

👉অভিলাষ পর্বঃ ১৪ 👈
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

জাবেদ  তার মনের গহীনে জমানো না বলা কথাগুলো ছন্দ সুরে বলেই খুব লজ্জা পেয়ে  ভোঁদৌড় দিলো।
ইউসুফ চিৎকার করে বলতে লাগলো,
এই জাবেদ!  দাঁড়া দাঁড়া,  আমার কথা শুনে যা। তুই এতক্ষণ ছন্দ তালেতালে যার কথা বললি, তার নামটা বলে যা।
জাবেদ দূর থেকে দৌড়াতে দৌড়াতে বললো,
না বন্ধু, বলা যাবে না এখন। মনে কর এটা একটা প্রতিশোধ। তুইও তো আমাকে তোর মনের মানুষের কথা বলে তার নাম বলিসনি, হাহাহাহাহাহ।

ইউসুফ এ কথা শুনে মনে মনে হাসতে থাকে।
কী পাগল!  পাগলটা বুঝি খু লজ্জা পেয়েছে?
সেও মনে মনে হাসতে হাসতে তার বাড়ির দিক রওনা দিলো। যেতে যেতেই পথিমধ্যে দেখে শাপলাদের বাড়ির সামনে অনেক লোকজনের ভীর। চারিদিকে হৈ-হুল্লোড় শুরু হয়ে গেছে। আসছে কান্নার আওয়াজ।
ইউসুফ খুব চিন্তিত!  কী হলো ওখানে?  এতো লোকজন কেন?  কনোই বা এতো আর্তনাদে কান্নার আওয়াজ?  সে দ্রুতগতিতে শাপলাদের বাড়ির এগুতে থাকে। রাস্তায় একজনের সাক্ষাৎ পেয়ে জিজ্ঞেস করে,
ভাইয়া!  ওখানে কী হয়েছে, এতো লোকজনের ভীড় ও বিকট কান্নার আওয়াজ কেনো?
লোকটি বললো, 
ভাইরে!  খুবই করুণ অবস্থা!  এমন দূর্ঘটনা যেন কারোই কখনো না হয়।
ইউসুফঃ ভাইয়া!  কী হয়েছে আমাকে খুলে বলুন প্লিজ।
লোকটিঃ ভাই!  সন্ত্রাসীদের হামলায় শাপলার বাবা মা কেউ জীবিত নাই। বাড়িঘর রক্তে রক্তাক্ত! শাপলা বাড়িতে না থাকায় কোনো রকমে বেঁচে গেছে। এখন মা বাবাহীন এতিম মেয়েটির কী হবে?  তা আল্লাহই ভালো জানেন।
মহান আল্লাহ তা’য়ালা যেন মেয়েটির উপর খাস রহমত নাজিল করেন – আমিন।

এ কথা শুনে ইউসুফের মাতায় যেন সাত আসমান ভেঙে পড়লো!  সে সেখানে গিয়ে দেখে সত্যি বাড়িঘর রক্তে রক্তাক্ত!  শাপলার মুখের দিকে তাকানো যায় না। বিষণ্ণতার ছাপ, চোখ দিয়ে অনবরত পানি ঝরছে আর ছিলবিল কান্নায় গড়াগড়ি যাচ্ছে। তার মা ও বাবার রক্তাক্ত দেহ বুকে জড়িয়ে কান্না করায় তার সর্বাঙ্গেও রক্তে রঞ্জিত হয়ে গেছে।
ইউসুফ যেন একেবারে নীরব হয়ে গেছে। তারও চোখ দিয়ে ঝরছে ঝরঝর করে পানি। সে শাপলাকে কী বলে সান্ত্বনা দেবে, তার ভাষাও হারিয়ে ফেলেছে।

এদিকে খবর পেয়ে তার বড় বোন চম্পা, মেজো বোন জবা ও বড় দুলাভাই সোলায়মানও ছুটে আসলো তাদের বাড়িতে। সবার চোখ দিয়েই ঝরছে অঝোর ধারায় লোনাজলের বৃষ্টিপাত। 
শাপলা তার বড় বোন চম্পাকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়লো এই বলে,

আপু! এমন কেন হলো,  কেনো আমার উপর এমন অবিচার হলো?  মা বাবা একসঙ্গে চলে গেলো আমাকে এতিম করে দিয়ে।
আপু! আমি এ পৃথিবীতে আর কী নিয়ে বাঁচবো? 
পৃথিবীতে যে আমার আর কেউ রইলো না।

চম্পাঃ সান্ত্বনা দিয়ে বলে, 
শাপলা!  তুই আর কাঁদিস না,  তোর কান্না আমি আর সইতে পারি না রে বোন, আর সইতে পারি না।
আজ থেকে মনে কর আমি চম্পা-ই তোর আম্মু, আমি চম্পা-ই তোর আব্বু।

শাপলার দুলাভাই সোলায়মান ও ছোট ভাই জিয়াদ মা ও বাবার দাফন কাফনের ব্যবস্থা করলো। মা ও বাবাকে একসাথে পাশাপাশি সমাধিস্থ করলো। 
পরিবারে শোকের ঢল নেমে নামলো। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসলো। তার বোন ও দুলাভাই তাদের বাড়ি চলে যেতে চাইলে শাপলা বলে,
আপু! তুমি আমাকে তোমার সাথে নিয়ে চলো। আমি এই শূন্য মরুভূমির গহীন একা নিভৃতে কীভাবে রাত্রিযাপন করবো,  কীভাবে একা থাকবো?

তার দুলাভাই সোলায়মান তার স্ত্রী চম্পাকে উদ্দেশ্য করে,
চম্পা!  শাপলা তো ঠিকই বলেছে।  কীভাবে এখানে এই নির্জনে শূন্য বাড়িতে সে একা থাকবে? আর জিয়াদ তো সবার ছোট। সেও তো উপযুক্ত হয়ে উঠেনি। এমন বিপর্যয়ে তাদেরকে এখানে কীভাবে একা রেখে যাবো?
তারপরও শাপলা মেয়ে মানুষ, যুবতী নারী। আর মেয়ে মানুষের শত্রুর অভাব নাই।  চোর না শুনে ধর্মের কাহিনি।  তার পক্ষে তো একা থাকা কোনক্রমেই সম্ভব নয়। বরং চলো তাকে আমরা আমাদের সাথেই নিয়ে যাই।

হাঠাৎ করে ছোট ভাই জিয়াদ বলে উঠলো,
দুলাভাই!  আমিও আপনাদের সাথে যাবো। আমি যে শাপলা আপুকে ছাড়া এক মূহুর্তের জন্যেও একা থাকতে পারবো না। শাপলা আপু আমাী জান, আমার প্রাণ। বড় আপু ও মেজো আপু পরের ঘরে চলে যাওয়ার পর শাপলা আপুই আমাকো কোলে পিঠে করে মানুষ করেছে। আমিও তাকে ছাড়া, তোমাদেরকে ছাড়া একা থাকতে পারবো না।
আমিও তোমাদের সাথে যাবো।

চাম্পাঃ ঠিক আছে ভাই, তোরও কোনো ভয় না।
চল্,  তোরা সবাই আমাদের সাথে চল্। আমরা একই শহরে এক পরিবারে একই সাথে থাকবো এবং তোকে শহরের কোনো একটা ভালো কলেজে ভর্তি করে দেবো।

কথা যা-ই কাজ তা-ই। তার দুলাভাই চম্পার কথা মত শাপলাকে ও জিয়াদকে তাদের বাড়ি নিয়ে যেতে লাগলো। ইউসুফ যেন কিছুই বলতে পারলো না। তার বুকটাও যেন ফেটে যাচ্ছে। নাই মুখে কথা, অপলক দৃষ্টিতে থাকে তাদের চলে যাওয়ার পথপানে।
হঠাৎ শাপলার দৃষ্টি তার দিকে পতিত হয়। তার চোখদ্বয় অশ্রুতে সিক্ত। চোখ দিয়ে অঝোরে ঝরছে নোনাজল।
শাপলা রাস্তায় থমকে দাঁড়িয়ে  করুণ স্বরে ইউসুফকে বললো,
আপনি কাঁদছেন কেন?  চোখের পানি মুছে ফেলুন আর শুনুন। এই নভস্থল ও নভোমণ্ডল আমার জন্য গাছপালা ও পশু-পাখিহীন  শূন্য মরুভূমি। আর কখনো হবে না বৃষ্টিপাত, হবে না ফসল উৎপন্ন।
কথায় না বলে, অভাগিনী যেদিকে চায়, সাগর সেদিকেই শুকায়। আমার বেলাতেও তাই। আমার জন্য আপনি কখনো মন খারাপ করবেন না।
আর হ্যাঁ,  আপনার সাথে একটু খামখেয়ালি হয়েছে আমার। আশা করি বুঝতল পেরেছেন। আমার এ দুষ্টুমির জন্য আমি আপনার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। আমাকে ক্ষমা করে দিবেন। আর আমার আব্বা আম্মার জন্য দোয়া করবেন, আল্লাহ যেন তাদেরকে জান্নাতুল ফেরদাউস নসীব করেন – আমিন।

ইউসুফঃ শাপলা!  আমার একটা কথা ছিলো, যদি শুনতে,,,
শাপলাঃ জি বলেন আপনার কথা, আমি শুনবো।
ইউসুফঃ শাপলা! এ বিষাদের মুহূর্তে তোমাকে সান্ত্বনা দেওয়ার মত ভাষা আমার জানা নাই।
তবে কিছুদিনের মধ্যে আমি তোমার কাছে যাবো আমার আব্বু ও আম্মুকে সাথে নিয়ে। তাই আপুদের বাসার ঠিকানাটা দাও প্লিজ।

শাপলা কাঁদতে কাঁদতে,,,,,,,,,,
চম্পা আপু!  তোমাদের ঠিকানটা লিখে দাও।
চম্পা তাদের ঠিকানা লিখে দিয়ে ইউসুফকে বললো,
এই নাও ঠিকানা ভাই! 
ভালো থেকো আর আমাদের জন্য দোয়া করিও।

ইউসুফঃ ঠিক আছে আপু।
আপনারাও আমাদের জন্য দোয়া করবেন।
আর একটা কথা আপু,  শাপলার মনের অবস্থা খুবই খারাপ। তার দুনিয়াতে আপনারা ছাড়া আর কেউ নাই। তাকে চোখে চোখে রাখবেন। তার প্রতি খেয়াল রাখবেন। বাইরে কোথাও একা যেতে দিবেন না। এটা কোনো উপদেশ নয় আপু, ছোট ভাই হিসেবে আমার বিনয় অনুরোধ।  আমি খুব শীঘ্রই আপনাদের বাড়ি আসবো ইনশাআল্লাহ।

শাপলার বড় আপু চম্পাঃ ঠিক আছে ভাই। তুমিও ভালো থেকো। আল্লাহ হাফিজ।

ইউসুফঃ ফী আমানিল্লাহ। আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।

শাপলাঃ ওয়া আলাইকুম সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু – আল্লাহ হাফিজ।

তারা বিদায় নিয়ে সেখান থেকে প্রস্থান করলো তাদের গন্তব্য স্থলে। ইউসুফও তাদের বাড়ি চলে গেলো নীরবে অশ্রু ঝরাতে ঝরাতে,,,

কিছুক্ষণ পর খবর পেয়ে জাবেদও ছুটে আসলো শাপলাদের বাড়ি। এসে দেখে এখানে কেউ নাই। বাড়ির দরজায় তালাবদ্ধ। চারিদিক অন্ধকার। এশার নামাজের সময় হয়ে গেছে। সে মসজিদে ছুটে গেলো নামাজের জন্য। এশার নামাজন্তে মসজিদের ঈমাম সাহেবকে সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
ঈমাম সাহেব! আপনাদের এলাকায় কী ঘটনা ঘটেছে, দয়া করে আমাকে একটু বলবেন?

ঈমাম সাহেবঃ জি অবশ্যই বলবো। তবে এ কাহিনি জানলে আপনি তা সহ্য করতে পারবে না ?

জাবেদঃ না ঈমাম সাহেব, আপনি বলুন, কী এমন ঘটনা ঘটেছে ?  যা আমি সহ্য করতে পারবো না।
এর মাঝে এমন কী কাহিনি লুকায়িত আছে? প্লিজ আমাকে বলুন।

ঈমাম সাহেবঃ এর মাঝে অনেক গোপন কাহিনি লুকায়িত আছে জনাব!
যা আমি ছাড়া আর দ্বিতীয় ব্যক্তি কেউ অবগত নাই। আমি এ কথা আজ পর্যন্ত কাউকেই বলতে পারিনি। কারণ, বারণ ছিলো তাই।
কেননা,  শাপলা মেয়েটি দেখতে খুব সুন্দর ও সুদর্শন!  সততার সাথে সমাজের ন্যায় অন্যায় বিভেদে বিশেষ ভূমিকা আছে সে মেয়েটির।
তার বাবা মসজিদে নামাজ পড়তে এসে মাঝে মাঝেই আমাকে বলতেন।

জাবেদঃ (খুব আগ্রহের) ঈমাম সাহেব!
বলুন ঈমাম সাহেব বলুন, তার বাবা আপনাকে কী বলতেন ?

👉অভিলাষ পর্বঃ ১৫👈
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

ঈমাম সাহেবঃ শুনুন তাহলে,
নিষ্ঠুর পৃথিবীতে বাবাকে বলা হয় সংসারের বটবৃক্ষ। জীবন যুদ্ধে অক্লান্ত পরিশ্রম,  সংসারে দুঃখ- কষ্ট,  বিরহ-বেদনার সাথে লড়াই করে সংসারের ঘানি টানার নির্ভীক সাহসী লড়াকু যোদ্ধা, বিদ্রোহী বীর সৈনিক একমাত্র বাবা।
জীবনে যত কষ্ট, জ্বালা-যন্ত্রণাই আসুক না কেন, সবার অগোচরে সেই কষ্ট, জ্বালা-যন্ত্রণাকে মুখ বুজে সহ্য করে জীবন নামের তরীর হাল ধরে অকুল দরিয়ার মাঝে পাড়ি দেয় একমাত্র সংসারে সুখ-সাচ্ছন্দ্য ফিরিয়ে আনার জন্য। পরিবারের মানুষগুলোকে সুখী রাখার জন্য। নিজের জীবনের উপর দিয়ে কালবৈশাখী ঝড় বয়ে গেলেও তা পরিবারের সদস্যদের কাউকে একটুও বুঝতে দেয় না। যাতে করে পরিবারের সদস্যদের আগামীর  অগ্রযাত্রায় কোনো ব্যঘাত ঘটে।

শাপলার বাবা আঃ রহিম সাহেবও তাদের মধ্যে ছিলেন একজন অন্যতম সৎ সাহসী নির্ভীক ব্যক্তি। তিনি আল্লাহ ছাড়া কাউকেই ভয় পেতেন না।
তার পরিবারে হাজারও ঝড়-ঝঞ্ঝা এসেছে, এসেছে জীবন নাশের মহাপ্লাবন! তিনি ঢালের মত তার নিজের পরিবারকে রক্ষা করেছেন। কিন্তু কাউকে বুঝতেই দেননি যে, তার পরিবারে ঝড় এসেছিলো, এসেছিলো মহাপ্লাবন!  তিনি একা একা ডুকরে ডুকরে কাঁদতেন। কিন্তু পরিবারে কেউ তা জানতো না, কাউকে বলতেন না।  তার মনের ভেতরে কী জ্বালা-যন্ত্রণা! তিনি সব যন্ত্রণাগুলোকে হাসিমুখে সহ্য করে নিতেন, পরিবারের সুখ-সাচ্ছন্দ্যের জন্য সবসময়ই হাসিমুখে থাকতেন।

তিনি এসব কাউকে বলতেন না। কারণ, তিনি তার মনের মত বিশ্বস্ত লোক খুঁজে পেতেন না। তিনি আমাকে খুব ভালোবাসতেন এবং খুব বিশ্বাস করতেন। আর আমিও তার ভালোবাসার সম্মান দিতাম, করতাম না বিশ্বাসের অমর্যাদা।

তিনি আমাকে প্রায়ই সময়ই বলতেন তার কষ্টের কথাগুলো,তার বিপদের কথাগুলো।
এই তো গত পরশুদিনও সকালেও ফজরের নামাজ পড়ে আমাকে কাঁদতে কাঁদতে বলে গেলেন,

ঈমাম সাহেব!  আমার মনে হয় আর বেশিদিন পৃথিবীতে আয়ু নাই। খুব শীঘ্রই হয়তোবা এ পৃথিবীর মায়া-মমতার বন্ধন ছিন্ন করে, আপন স্বজনদের ছেড়ে চলে যেতে হবে চিরতরে পরপারে। 
আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম,
আ: রহিম সাহেব!  কী হয়েছে আপনার?  আমাকে খুলে বলুন। এমন কথা বলছেন কেনো ?

তিনি অশ্রুসিক্ত নয়নে বললেন,
ঈমাম সাহেব!  আপনাকে তো মাঝে মাঝেই বলতাম, আমার পেছনে শত্রু আছে, আছে মহাবিপদ! 

আমি বললাম আঃ রহিম চাচা!  আজকে আবার নতুন করে কী বিপদের সংকেত পেলেন?

ঈমাম সাহেব! আপনাকে তো আগেই বলেছিলাম, পাড়ার কিছু ধনাঢ্য বখাটে ছেলের দল এসে আমাকে অনেক সময় হুমকিধামকি দেয় শাপলার বিষয়ে। তাদের মধ্যে শীর্ষ নেতা ছিলো এমপি এরফান সাহেবের কুখ্যাত সন্ত্রাসী ছেলে কালু মাস্তান।
সে আমার মেয়ে শাপলাকে খুব পছন্দ করে। সে আমাকে প্রস্তাব দিয়েছিলো তার সাথে আমার মেয়ে শাপলার বিয়ে দিতে।
কিন্তু আপনি বলেন তো ঈমাম সাহেব!
যতই ধনাঢ্য ও অর্থশালী৷ লোক হোক না কেনো, পৃথিবীর কোন্ বাবা এমন কুখ্যাত সন্ত্রাসী ছেলের সাথে তার মেয়ের বিয়ে দেবে?  কোন্ বাবা তার মেয়েকে জেনেশুনে কুখ্যাত সন্ত্রাসীর হাতে তুলে দেবে?
এমন কোনো নজির কি কখনো শুনেছেন বা দেখেছেন?

আমি বললাম, জি না চাচা,  এটা কখনোই হতে পারে না। পৃথিবীর কোনো বাবাই এমনটি চায় না।

তিনি বললেন,  সেই কালু মাস্তান আজকেও আমাকে হুমকি দিয়েছে ২৪ ঘন্টার মধ্যে শাপলার সাথে বিয়ের ব্যবস্থা না করলে আমার পরিবারের সবাইকে হত্যা করবে। কিন্তু আমি এখন কি করতে পারি বলেন?

আমি বললাম,  চাচা!  আপনি থানায় গিয়ে প্রশাসনের আশ্রয় নিন।
তিনি বললেন,  এর আগেও কয়েকবার থানায় গিয়েছিলাম, কিন্তু কোনো ফলাফল পাইনি। বরং উনারা বলেছেন, চাচা তার সাথে আপনার মেয়েটার বিয়ে দিয়ে দিন। সে খুব খারাপ ছেলে।
অর্থশালী, দলীয় ক্ষমতাসীন এমপি এরফান  সাহেবের দুশ্চরিত্র সন্তান কালু মাস্তান। আমাদের ধরাছোঁয়ার বাইরে। আপনি তার সাথে আপনার মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিলেই আপনি /আপনারা নিরাপদে থাকবেন। এটাই সব থেকে ভালো হবে।
আমি বলেছিলাম, আমার জীবনে একবিন্দু রক্ত থাকা পর্যন্ত আমি তার সাথে কখনোই আমার মেয়ের বিয়ে দেবো না।
যাইহোক ঈমাম সাহেব!  আমি এখন গেলাম। আমাদের জন্য দোয়া করবেন মহান আল্লাহ তা’য়ালার সমীপে। আল্লাহ যেন আমাকে সমস্ত বিপদাপদ থেকে তার কুদরতি রহমতের দ্বারা রক্ষা করেন – আমিন।
হয় তো আপনাদের সাথে আর দেখা নাও হতে পারে। আল্লাহ হাফিজ।

জাবেদ চমকে উঠে বললো,
কী বলেন ঈমাম সাহেব! 
তাহলে কি এই মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের সাথে এমপি এরফান সাহেবের ছেলে কালু মাস্তানের হাত রয়েছে ? 

ঈমাম সাহেবঃ জনাব!  যেহেতু আমি নিজের চোখে তা দেখিনি, সেহেতু আমি নিশ্চয়তা দিতে পারছি না। তবে হলে হতেও পারে। আর একটা কথা, আমি যে আপনাকে এসব কথা বললাম, তা কখনোই অন্য কারো কাছে জাহির করবেন না। এটা আপনার নিকট আমার অনুরোধ রইলো। তবে আমি যা বলেছি তা সত্য বলেছি, এতে এক তিল পরিমাণও মিথ্যা নাই।

জাবেদঃ ঈমাম সাহেব!  আপনি কি কোর্টে সাক্ষী দিতে পারবেন যে, শাপলার বাবা আ: রহিম সাহেব আপনাকে এমন ঘটনা ঘটে যাওয়ার ভবিষ্যৎ বাণী বলে গেছেন ?

ঈমাম সাহেবঃ দেখুন জনাব,  আমাকে এসবের মধ্যে না জড়ানোই সর্বাপেক্ষা উত্তম বলে মনে করছি।

জাবেদঃ তাহলে কি আপনি চান না?  সত্যিকারের অপরাধীর সাজা হোক,  হোক অপরাধ নির্মূল সমাজ থেকে।

ঈমান সাহেবঃ জি অবশ্যই আমরা চাই দেশ থেকে সমস্ত  অপরাধ, অপকর্ম, দুর্নীতি বিনাশ হোক, হোক প্রতিষ্ঠিত সত্য ও ন্যায়-নীতি। ফিরে পাক সমাজ ও দেশ তার সৎ স্বাধীনতা।

জাবেদঃ তাহলে আপনি ভয় করছেন কেন ঈমাম সাহেব?  আপনার মত পরহেজগার, সত্যবাদী, ঈমানী বলের নির্ভীক, সৎ সাহসী, লড়াকু সৈনিকের একটা সক্ষীই পারে এমন কুখ্যাত সন্ত্রাসীদের মাথায় পরাজয়ের মুকুট পরাতে। আপনি শুধু একটা সাক্ষী দেবেন, যা করার তা আমি / আমরা করবো ইনশাআল্লাহ।

আপনি জানেন না,  এ এলাকায় আমার এক এডভোকেট বন্ধু আছে। সে আমেরিকা থেকে উকালতি পাশ করে কিছুদিন হলো দেশে ফিরে এসেছে। আপনি শুধু  এ সত্যটা কোর্টে বলবেন। আর আপনি যদি এ বিষয়টা গোপন রেখে সাক্ষী না দেন, তাহলে তো আপনি দেশ, সমাজের সবচেয়ে ঘৃণিত ব্যক্তি হিসেবে পরিগনিত হবেন।  মহান আল্লাহর কাছেও অপরাধী হয়ে যাবেন।
আপনার কি জানা নাই, কখনো পড়েন নাই?

আমরা সেই ছোটবেলা থেকে জেনে আসছি,
“যে অন্যায় করে আর অন্যায় যে সহে
তব ঘৃণা যেন তারে তৃণ সম দহে”

অন্যায়কারী আর অন্যায় সহ্যকারী, দু’জনেই  সমান অপরাধী। আর আপনি তো ভীতু না, কাপুরুষও না। আপনি একজন বীর পুরুষ। রাসুলের সৎ সাহসী বীর সৈনিক।
আমি উদ্যোগ নিয়েছি এর প্রতিশোধ নেবোই নেবো ইনশাআল্লাহ। তবে এখানে আপনার সহযোগিতা বাঞ্ছনীয়, আবশ্যক।
কারণ,  এ হত্যা ষড়যন্ত্রের পেছনের মূল রহস্য উদঘাটনে একমাত্র আপনিই সহায়ক। যে তথ্য আপনি ছাড়া পৃথিবীর আর কোনো দ্বিতীয় ব্যক্তি জানে না।

প্লিজ ঈমাম সাহেব প্লিজ!   আপনি আমাকে / আমাদেরকে এ সত্য উদঘাটনে এবং দেশ ও সমাজ থেকে দুর্নীতি ও অন্যান্য অপকর্ম নির্মূলে সহযোগিতা করুন। এদের এহেন দুষ্কর্ম্মের সাজা না হলে অপরাধীরা আরও বেড়ে যাবে, আরও খুন, হত্যা, ধর্ষণ,  অন্যায় ও অপকর্ম করার সাহস পাবে। এরা মানুষ না। এরা মানুষ নামের অমানুষ, চতুষ্পদ জন্তু। এদের মনটা খুব লোভাতুর। এদের হৃদয়ে অন্যের জন্য তিল পরিমাণ স্নেহ মায়া-মমতা, ভালোবাসা নাই। এরা বড়ই নিষ্ঠুর, নরপিশাচ!  নিজের স্বার্থের জন্য এরা সব কিছু করতে পারে।  এরা দেশ ও সমাজের কীট !  এদেরকে কীটনাশক ঔষধ প্রয়োগ করে বিনাশ করা আবশ্যক।

ঈমাম সাহেবঃ আপনার সব কথাই ঠিক আছে এবং আমি তা এক বাক্যে মেনে নিলাম। কিন্ত একটা কথা জানেন জনাব? 
এদের বিরুদ্ধে সাক্ষী দিলে আমার কী হবে?
ঠিক আ: রহিম সাহেবের মত আমাদেরকেও খুন হতে হবে, হতে হবে নরপিশাচদের হাতে বলিদান!

জাবেদঃ ঈমান সাহেব!  জীবনটা কয়দিনের বলতে পারেন?  এক সেকেন্ডের নাই ভরসা। এই যে আমি আপনার সাথে কথা বলছি, এ কথা বলার পর আমি আমার নিজের বাড়িতে ফিরে যেতে পারবো কিনা তার কোনো নিশ্চিতা আছে?

👉অভিলাষ পর্বঃ ১৬ 👈
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

ঈমাম সাহেবঃ জি, কোনো নিশ্চয়তা নাই।
এখান থেকে বাড়ি যাওয়া তো দূরের কথা,
আপনার আমার সাথে যে কথোপকথন হচ্ছে এ কথোপকথন শেষ করতে পারবো কিনা তারই তো কোনো নিশ্চয়তা নাই।

জাবেদঃ তাহলে মানুষকে ভয় না করে আল্লাহকে ভয় করুন এবং সত্যটা তুলে ধরুন। আমি ইয়াকুব চাচার ছেলে আমার বন্ধু এডভোকেট মোঃ ইউসুফকে এ সমস্ত কথা খুলে বলবো এবং অপরাধীর সর্বোচ্চ সাজা দেওয়ার ব্যবস্থা করবো ইনশাআল্লাহ। যাতে করে আর কোনো অপরাধীই দেশ- সমাজে এমন জঘন্য কাজ করার কখনো কোনদিন সাহস না পায়।

ঈমাম সাহেবঃ একদম ঠিক বলেছেন।  আমি অন্যায়ের বিপক্ষে লড়াই করবো এবং সমাজে সবার সামনে তাদের মুখোশ খুলে দেবো  ইনশাআল্লাহ।

আমি এতদিন চুপ ছিলাম কারণ,
এর বিরুদ্ধে লড়াই করার মত আমার কোনো সহযোগী বন্ধু ছিলো না। তাই সব নীরবে সয়েছি। আজ আমি আপনার  মত সৎ সাহসী লোক পেয়েছি খুঁজে।
আমি কথা দিলাম আসল ষড়যন্ত্রকারীসহ তাদের সহযোগীদের সকলকে সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়ার জন্য যতটা সাহায্য করার প্রয়োজন, আমি যতটুকু জানি সবই কোর্টে পেশ করবো ইনশাআল্লাহ। আপনারা দ্রুত মামলা দায়ের করেন। আমিই এর সাক্ষী দেবো। অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করার জন্য। কথা দিলাম।

জাবেদঃ আলহামদুলিল্লাহ।  ঠিক ঈমাম সাহেব। সবই হবে ইনশাআল্লাহ। শুধু সময়ের অপেক্ষা। তাহলে আমি এখন আসি, আবার দেখা হবে। আল্লাহ হাফিজ।

ঈমাম সাহেবঃ আল্লাহ হাফিজ। আল্লাহ আপনাদের সৎ উদ্দেশ্য পূরণ করুন – আমিন।

জাবেদ ঈমাম সাহেবের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দিলো। রাত তখন ১২টা বেজে গেছে।  ঐদিকে তার বড় আপু শাবানা জাবেদের জন্য অপেক্ষা করছে। এত রাত হয়ে গেলো, জাবেদ কেন এতক্ষণও বাড়ি আসছে না?  কোথায় গেলো? কী হয়েছে তার।  চিন্তায় বিভোর। সে কখনো কোনদিন  তার ছোট ভাই জাবেদকে ছাড়া খাওয়া দাওয়া করে না। যেখানেই যাক, যখন আসে তখন দুই ভাই বোন মিলে একই টেবিলে বসে একসাথে খাওয়া দাওয়া করে। এ ভাবতে ভাবতে আরও কিছু সময় কেটে গেলো। রাত বেজে  গেলো১ টা।
জাবেদ দরজায় টোকা দিলে শাবানা বলে কে?  এত রাতে দরজায় টোকা দিচ্ছে।

জাবেদ বললো আপু আমি জাবেদ দরজা খোলো।
শাবানা দ্রুত দরজা খুলে প্রাণের ছোট ভাই জাবেদকে বললো,
ভাই তুই এতক্ষণ কোথায় ছিলি ?  তোর মুখটা মলিন কেনো?  কী হয়েছে ভাই তোর,  এতো রাত হলো কেনো বাড়ি ফিরতে? 

জাবেদঃ আপু!  মন ভালো নাই। কিছুই যেন ভালো লাগছে না।
শাবানাঃ কেনো, কী হয়েছে ভাই?  আমাকে খুলে বল।
জাবেদঃ আপু!  তুমি হয় তো চিনবে। আমাদের পাশের গ্রাম ইসলামপুরের শাপলা নামের একটা মেয়েকে। সে সমাজ সেবামূলক কার্যক্রমে লিপ্ত ছিলো। সবসময় গরিব দুখীদের বিপদাপদে ছুটে আসতো।

শাবানাঃ হ্যাঁ ভাই, ঠিক বলেছিস। সে তো কয়েকদিন আগেও আমাদের গ্রামে এসেছিলো। তার ব্যবহার,  আচার-আচরণ খুবই ভালো। মেয়েটা দেখতেও অনেক সুন্দর। 

জাবেদঃ আজকে তার বাবা ও মা দু’জনেই সন্ত্রাসীদের হামলায় শহিদ হয়ে গেছেন। আল্লাহর অশেষ রহমতে শাপলা ও জিয়াদ কোনরকমে বেঁচে গেছে – আলহামদুলিল্লাহ।   আমিও জানতাম না। একজনের মুখে শুনলাম, তারপর ছুটে গেলাম ততক্ষণে তার বাবা মাকে দাফন করে সন্ধ্যার দিকে শাপলা ও তার ছোট ভাই জিয়াদ তার বড় আপুর সাথে শহরে চলে গেছে। আমি সেখানে গিয়ে কাউলে দেখতে পাইনি। তাদের বাড়ি ছিলো তালাবদ্ধ।
শাবানাঃ ইন্না-লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রজিউন।
তারপর,,,,, 
জাবেদঃ তারপর ভাবলাম আমার ছোটবেলার বন্ধু ইউসুফ এর সাথে দেখা করবো। তাদের বাড়ির দিকে যেতে যেতে এশার আযান হয়ে গেলো। তাই তার সাথে দেখা করা হয়নি রাত হয়েছে বলে। তার বাবা মা যদি কিছু বলে এ বিষয়ে। তাই তাদের বাড়ি না গিয়ে চলে গেলাম মসজিদে। সেখানে এশার নামাজ আদায় করে ঈমাম সাহেবকে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি এ হত্যা সম্পর্কে কিছু জানেন কিনা?
এসব বিষয়ে কথা বলতে বলতে রাত হয়ে গেছে  আপু। এ জন্য আমি দুঃখিত। আমাকে মাফ করো। নিশ্চয়ই তুমি খাওয়া দাওয়া করোনি। এসো আমরা আগে খেয়ে নিই, তারপর কথা বলবো।

শাবানাঃ ঠিক আছে ভাই,  চল্ আগে খেয়ে নিই।
টেবিলে দু’ভাইবোন খেতে বসলে জাবেদের আর খাওয়া হয় না। তার চোখ দিয়ে ঝরঝর করে পানি ঝরে।
শাবান জিজ্ঞেস করলো, কি ভাই, তুই খাচ্ছিস কেন?  কাঁদছিস কেন ভাই?  কী হয়েছে তোর?  তারা তো আমাদের কোনো আত্মীয় না।

জাবেদ খাওয়ার টেবিল থেকে উঠে তার ঘরে বিছানায় গিয়ে ডুকরে ডুকরে কাঁদছে। শাবান তার পিছু পিছু গিয়ে আবার জিজ্ঞেস করলো,
কী হয়েছে ভাই?  আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না। একটু খুলে বল ভাই প্লিজ।

জাবেদ তার বোনের গলা ধরে জোরে জোরে কাঁদতে লাগলো।

জাবেদঃ আপুরে আপু! আমার কান্নার কারণ তুই বুঝবি না। শাপলার মনে কি যে ঝড় বয়ে যাচ্ছে, তা শাপলা ছাড়া আর কেউ জানে না !

শাবানাঃ পৃথিবীতে কেউ চিরদিন বাঁচে না। আর আল্লাহ নিজের দোষ দিয়েও তাঁর কোনো বান্দাকে নেন না। যে কোনো অজুহাতে তার বান্দাদেরকে নেন। শাপলার মনের অবস্থা তো খারাপ হবেই। এটাই স্বাভাবিক।  আমাদের মনেও তো কষ্ট লাগছে। কিন্তু তোর ব্যাপারটা সম্পূর্ণ ভিন্ন।

জাবেদঃ আপু!  তুমি জানো না। আমিও জানি না। কেন শাপলার জন্য আমার মন কাঁদছে। তার বাবা মায়ের হত্যার বদলা নিতে প্রতিশোধের স্পৃহা মনে জাগছে। বাজছে রণাঙ্গনের দামামা।

শাবানাঃ মাথা থেকে এসব আজেবাজে বুদ্ধি মুছে ফেল ভাই।  পৃথিবীতে তোর আর আমার আর কি কেউ আছে?  তোর কিছু হয়ে গেলে আমি কি নিয়ে বাঁচবো বলতে পারিস? 

জাবেদঃ আপু! শাপলার কিছু হলেও যে আমি বাঁচবো না।
শাবানাঃ এমন কথা বলিস না ভাই, আমার মনে কষ্ট লাগে। তুই কি শাপলাকে পছন্দ করিস? 
আমাকে বল কিছুদিন পর আমি নিজেই  তোর সম্বন্ধ নিয়ে শহরে তার দুলাভাই এর বাড়ি যাবো।

জাবেদঃ আপু!  সত্যি আমি তাকে পছন্দ করি। আমি তাকে এই অল্পদিনের মধ্যে দুষ্টুমি করতে করতে তার কথাবার্তা শুনে অনেক ভালোবেসে ফেলেছি। সে আমাকে খারাপ পথ থেকে ভালো পথে নিয়ে এসেছে। আমার মাঝে যেন আমি নাই, আমি তার মাঝেই হারিয়ে গেছি।
আপু! তুমি আমার জন্য দোয়া করো, আমি যেন তাকে এ বাড়িতে চিরদিনের জন্য লাল বেনারসি পরিয়ে আনতে পারি। 

শাবানাঃ ঠিক আছে ভাই, এখন খেয়ে নে। আমি এক সময় নিজেই তাদের বাড়ি যাবো শুধু তোর জন্য।

জাবেদঃ আপু! এখন না। আগে তার বাবা মায়ের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিয়ে নিই। আমি তার বাবা মায়ের হত্যাকারীর সন্ধান পেয়েছি। আমার প্রথম কাজ হবে তার বাবা মা’র হত্যাকারীকে সর্বোচ্চ সাজা দিয়ে সমাজ তথা এ পৃথিবী থেকে অপসারণ করা।
চিরতরে নির্মূল করা। যাতে আর কেউ কখনো এমন জঘন্যতম কাজ করার সাহস না পায়।

শাবানাঃ কী সন্ধান পেয়েছিস ভাই ? 
তার বাবা মা’র হত্যাকারী কে বা কারা ?

জাবেদঃ ঈমাম সাহেবের মুখে করুণ বর্ণনা শুনেই বুঝতে পারলাম তার বাবা মায়ের হত্যাকরী দলীয় ক্ষমতাসীন এমপি এরফান সাহেবের কুখ্যাত সন্ত্রাসী ছেলে কালু মাস্তান।

শাবানাঃ না ভাই, এ কাজে তুই যেতে পারবি না। আমি তোকো কিছুতেই যেতে দেবো না। ওরা খুবই ভয়ংকর, অর্থশালী, ধনাঢ্য ও শক্তিশালী ব্যক্তি। ওদের সাথে লড়াই করার মত তোর আমার সাহস নাই। এর পরিণাম খুবই ভয়াবহ!

জাবেদঃ না আপু,  তুমি আমাকে বাধা দিও না। সকাল হলেই আমি আমার বন্ধু এডভোকেট ইউসুফ এর কাছে গিয়ে সব ঘটনা খুলে বলবো এবং এর রহস্য উদঘাটন করে অপরাধীদের ফাঁসির মঞ্চে ঝুলাবো। এ আমার বদ্ধপরিকর। তুমি শুধু আমার জন্য দোয়া করবে আপু, শুধু দোয়া করবে।  নিশ্চয়ই আমিই জয়ী হবো। পরাজিত হবে শত্রুসেনার দল।

👉অভিলাষ পর্বঃ ১৭👈
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

শাবানাঃ ঠিক আছে ভাই, আমি তোর জন্য সবসময়ই দোয়া করি, তুই যেন তোর এহেন চমক উদ্যোগী কর্মে সফলতা লাভ করিস এই দোয়াই মহান রাব্বুল আলামিনের নিকট রইলো।
ভাই!  তুই এখন ঘুমিয়ে যা। অনেক রাত হলো
কখনো দুশ্চিন্তা করবি না। মনে রাখিস আল্লাহ যা করেন, তা মঙ্গলের জন্যই করেন। এতে তোর মঙ্গল না হলেও তোর কাজের দ্বারা যার মঙ্গল হবে চিরদিন অম্লান রয়ে যাবি তার কাছে। আর এটাই হবে তোর জীবনের সেই মঙ্গলজনক কাজের ফলাফল, অবিস্মরণীয়, চিরস্থায়ী। 

জাবেদঃ ঠিক আছে আপু, যাও, তুমিও ঘুমিয়ে পড়ো। এরপর তার আপু শাবানা তার ঘরে চলে গেলো। জাবেদও ঘুমিয়ে পড়লো।

জাবেদ ঘুমের ঘোরে স্বপ্নে দেখে,
শাপলা তার কাছে ফুলের তোড়া নিয়ে উপস্থিত।
শাপলা বলে জাবেদ! তোমার জন্য একটা একটা উপঢৌকন নিয়ে এসেছি।

জাবেদ (মনে মনে খুব আপ্লূত ও অভিভূত!
হে আল্লাহ! এ কী দেখছি আমি,  সত্যি, না স্বপ্ন?)
সে অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে রয়েছে শাপলার দিকে।
শাপলা বলে জাবেদ!  তোমার জন্য কি উপঢৌকন নিয়ে এসেছে জানো? 

জাবেদঃ জি না,  আমি তো তা জানি না। কী নিয়ে এসেছেন আমার জন্য?
শাপলাঃ পাগল নাকি?  দেখতে পাচ্ছো না, কী নিয়ে এসেছি?

জাবেদঃ জি,  দেখতে পাচ্ছি যে, আপনি আপনার হাতে একটা ফুলের তোড়া নিয়ে এসেছেন।
শাপলাঃ এ দিয়ে কী হয় জানো জাবেদ?
জাবেদঃ জি না,  তা তো জানি না।

শাপলাঃ আমি তোমাকে এ ফুলের দ্বারা শুভেচ্ছা জানাতে এসেছি। তোমার সে দিনের দুষ্টুমিতে আমি সত্যি সত্যি তোমার প্রেমে পড়ে গেছি। আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি জাবেদ, আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি।
আই লাভ ইউ মাই জান কলিজা
ছুমন্তর ছু জাবেদের মনটা গলে যা।
এই নাও একগুচ্ছ লাল গোলাপের শুভেচ্ছা,
জনম জনম রয়ে যাক তোমার আমার প্রেমের কেচ্ছা।

জাবেদ ফুলের তোড়া হাতে নিয়ে বলে,
আপনি কি সত্যি আমাকে ভালোবাসেন?
শাপলাঃ ধুর বোকা ছেলে, ভালো না বাসলে কি আর এমনি এমনি তুমি করে সম্বোধন করছি?
জাবেদঃ এ কী বলছেন!  আমি বোকা! আমি কি সত্যি বোকা?

শাপলাঃ (মিষ্টি হাসি দিয়ে )ইয়েস,  হ্যাঁ,  তুমি সত্যি একটা বোকা ছেলে, উম্মাদ ছেলে। যে কিছুই বুঝে না। সে পাগলের থেকেও পাগল।
তা না হলে সেই কখন থেকে আমি তোমাকে তুমি বলে ডাকছি।  আর তুমি আমাকে আপনি আপনি আপনি আপনি করেই যাচ্ছেন। এটা কি পাগলের প্রলাপ নয়?

জাবেদঃ জি,  মানে ঠিকই বলেছেন। আমি আসলে মেয়েদেরকে দেখলে খুব লজ্জা পায়। আমি যেন মাথা উঁচু করতে পারি না তাদের সামনে।
শাপলাঃ (মনে মনে হেসে জোর গলায়)
চুপ বেআক্কেল, একদম চুপ। আবার বলে আপনি?

জাবেদঃ ধিড়কে উঠে, মানে চমকে উঠে আমতা আমতা করে বলে,
জি, মানে হ্যা্, মানে আপনি, মানে আপনি।
শাপলাঃ জি, মানে হ্যা্, মানে আপনি।
আপনি কী? ননসেন্স কোথাকার! 
বলো তুমি, তুমি শুধু তুমি।
জাবেদঃ জি আচ্ছা। তুমি, শুধু তুমি।

জানো শাপলা? আমি প্রথম দিন দেখেই তোমার প্রেমে পড়ে গেছি। হৃদয়ের মণিকোঠে ঠাঁই দিয়েছি। কিন্তু কখনো প্রকাশ করতে পারিনি। তুমি যে আমার কাছে আসবে, আমায় ভালোবাসবে; আমি স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারিনি। আমার কাছে মনে হচ্ছে পূর্বের সূর্য পশ্চিমে গেছে। নদীর জল উজানে বইছে। সত্যি আমি পাগল হয়ে গেছি তোমাকে দেখে। হারিয়ে ফেলেছি আমার মুখের ভাষা, লুকিয়ে গেছে না বলা কথা। আমি আর আমার মাঝে নাই,  তোমাতে হয়ে গেছি বিভোর।

শাপলাঃ সত্যি তাই?  এসো আমার বুকে এসো। আমাকে জড়িয়ে ধরো। হারিয়ে যাও আমার মাঝে, আকাশের নীলিমায় সাগরের মোহনায়।

জাবেদ আর নিজে ধরে রাখতে পারলো না। শাপলার প্রেমে বিভোর হয়ে আহ্লাদিত চিত্তে গেয়ে উঠলোঃ-

জাবেদঃ
এ জগতে চাওয়া পাওয়ার আর কিছু নাই
শাপলা তোমাকে পেয়ে দিলাম হৃদে ঠাঁই।।
এসো এসো কাছে প্রিয়া ধরো দু’টি হাত
এভাবেই কেটে যাক আজ সারারাত।।
তুমি আশা ভালোবাসা হৃদ মোহনায়
শাপলা তোমাকে পেয়ে দিলাম হৃদে ঠাঁই।

শাপলাঃ 
ভাবিনি তোমাকে পাবো আঁকিনি ছবি!
আঁধারের আলো তুমি সোনালী রবি,
আমার জীবন নদে সুখের ভেলা
রাত জেগে কবিতার রচিত কবি।
এ ভুবনে চাওয়া পাওয়ার আর কিছু নাই,
বারেবারে মন শুধু তোমাকেই চায়।  ঐ

জাবেদঃ
কত আশা সাধ জাগে আমার এ হিয়ে
রাঙা বধূ সেজে তুমি আসবে প্রিয়ে,
আজ সেই সাধ আশা হলো যে পূরণ
কবুল কবুল বলে করবো বিয়ে।।
অতৃপ্ত মন সুখ পেলো দুনিয়ায়
শাপলা তোমাকে পেয়ে দিলাম হৃদে ঠাঁই। ঐ

শাপলাঃ 
সুখে-দুখে থেকো পাশে যুগ যুগ ধরে
ভালোবেসে প্রেমাদরে রেখো বাহুডোরে,
পৃথিবীর কোলাহল যাবে সব থেমে
তোমার আমার এই পাগলামি ঘোরে।।
বর কনে একসাথে রবো দু’জনায়য়
নিশি রাতে রাত জাগা চাঁদের ছোয়ায়।
হে প্রিয় তোমাকে পেয়ে দিলাম হৃদে ঠাঁই।  ঐ

তাদের কথোপকথন শেষের মূহুর্তে কারা একদল গুণ্ডা এসে তাদেরকে আক্রমণ করলো। জাবেদের সাথে যুদ্ধ শুরু হয়ে গেলো। শাপলাকে তারা জোর করে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। শাপলা চিৎকার দিয়ে বলছে,
বাঁচাও জাবেদ বাঁচাও। আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না। তুমি আমার জীবন, তুমি আমার মরণ। তুমি আমার শত জনমের সাধনা।

জাবেদ আবার তাদের পিছু পিছু ধাওয়া করলো। দৌড়ে তাদের ধরতে পারলো না। তারা শাপলাকে নিয়ে এক হলরুমে ঢুকে পড়লো। জাবেদ হাঁপাতে হাঁপাতে দৌড়ে গিয়ে লাথি মেরে হলরুমের দরজা ভেঙে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে দেখে হলরুমের ভেতরে  শাপলা তাদেরকে কাকুতি মিনতি করে বলছে আমাকে ছেড়ে দিন, আমাকে যেতে দিন জাবেদের কাছে। দোয়াই লাগে আপনাদের। আমাকে সর্বনাশ করবেন না। আমার ইচ্ছাকে ধর্ষণ  করবেন না। আপনাদেরও তো মা বোন আছে। মনে করেন আমিও আপনাদের মায়ের উদরে জন্মানো এক বোন।

তাদের মধ্যে দলনেতা অট্টহাসি দিয়ে বলে,
হাহাহাহা —— হাহাহাহ। সবাই যদি মা বোন হবে, তবে ঘরের বৌ হবে কে লক্ষ্মী সোনা পাখি।

শাপলাঃ ভাইয়া!  ঘরের বৌকেও তো কেউ সবার সামনে এভাবে বে-ইজ্জত করে না।
প্লিজ আপনি আমাকে ছেড়ে দিন। আমাকে যেতে দিন।

গুণ্ডাদের দলনেতাঃ হাহাহাহা,  তোমাকে তো ছেড়ে দেবোই কিন্তু তার আগে আমাদের মনস্কামনা পূরণ করেই ছাড়বো সুন্দরী।  হাহাহাহাহাহা।

এবার জাবেদঃ  (দরজার সামনে থেকে চিৎকার দিয়ে) ঐ শয়তানের বাচ্চা শয়তান!  জীবনে যদি বাঁচতে চাস, তবে শাপলাকে এক্ষুনি ছেড়ে দে। নইলে তোদের সবাইকে একে একে জ্যান্ত এখানেই মাটিতে পিষে মাটিতেই গেঁড়ে দেবো। এমন সময় গুণ্ডারা শাপলার দিকে একটু বেখেয়াল ছিলো। শাপলা দৌড় দিয়ে জাবেদের বুকে এসে তাকে জড়িয়ে ধরে। ঠিক তখনই গুণ্ডাদের দলনেতা জাবেদকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়ে এবং সে গুলি শাপলার গায়ে লাগে। শাপলা ও জাবেদ উল্টে হলরুমের বাইরে রাস্তায় পড়ে যায়। শাপলা রক্তাক্ত হয়ে জাবেদের কোলে ঢলে পড়ে। জাবেদের দেহও রক্তাক্ত হয়ে যায়। এমন সময় রাস্তার ধারে পুলিশের গাড়ির শব্দ ও বাঁশির আওয়াজ শুনা যায়। গুণ্ডারা ভাবলো পুলিশ টের পেয়ে তাদেরকে ধরতে আসছে। তাই তারা পুলিশের ভয় পেয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যায়।

জাবেদ শাপলাকে নিয়ে লুটিয়ে পড়ে মাটিতে। শাপলা, শাপলা বলে চিৎকার করে বলে,
শাপলা!  কথা বলো, কথা বলছো না কেন?  তোমার কিছুই হয়নি। শাপলা!  একবার চোখ খোলো।
জাবেদ তাকে কোলে করে মেডিকেল নিয়ে যেতে যেতেই রাস্তার মাঝেই শাপলা শেষ! 
জাবেদ খুব জোরে চিৎকার দিয়ে বলে শাপলা!
ঠিক এমন সময় জাবেদের ঘুম ভেঙে যায়।
তার ঘুমের ঘোরে বিকট চিৎকারে তার বড় আপু শাবানারও ঘুম ভেঙে যায়।

শাবানা তার ঘর থেকে দৌড়ে বের হয়ে এসে জাবেদকে বলে,
কী হয়েছে ভাই, বল তোর কী হয়েছে?  তুই এতো রাতে শাপলা বলে চিৎকার দিলি কেনো ভাই?

👉অভিলাষ পর্বঃ ১৮👈
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

জাবেদঃ আপু! আজ স্বপ্নে দেখলাম শাপলা আর নাই। আমার সামনে গুণ্ডাদের সর্দারের বুলেটের আঘাতে আমারই কোলে ঢলে পড়ে শাপলার তরতাজা দেহটা নিথর অবশ হয়ে পড়ে রইলো!
আপু! শাপলার জীবনেও অনেক শত্রু আছে। ওরা ওকে বাঁচতে দেবে না।

শাবানাঃ দুশ্চিন্তা করিস না ভাই। স্বপ্নের কথা সব সত্য হয়,  কে বলেছে তোকে?

জাবেদঃ আদিকাল সেই থেকেই মা দাদির মুখে শুনে আসছি আপু, ভোর বেলার স্বপ্ন নাকি সত্যি হয়?
শোনো ঐ মিনারে মুয়াজ্জিনে ফজরের আযান দিচ্ছে।
আপু!  আমি আজ শাপলার সাথে দেখা করতে যাবো।

শাবানাঃ সে নাকি এখানে নাই, তার দুলাভাই এর বাড়িতে আছে তার ছোট ভাই জিয়াদসহ?
তুই কি তার দুলাভাই ঠিকানা চিনিস ?

জাবেদঃ না আপু, আমি চিনি না। তবে আমার বন্ধু এডভোকেট ইউসুফকে সাথে করে যাবো।
ফজরের আযান হলো।  এখন যাই মসজিদে নামাজ পড়ে তার বাবার কবর জিয়ারত করে আসি।
শাবানাঃ ঠিক আছে ভাই, যা নামাজ পড়ে আয়।

ফজরের নামাজ পড়ে সকাল বেলা জাবেদ শাপলার বাবার কবর জিয়ারত করে ইউসুফ এর সাথে দেখা করার জন্য তাদের বাড়ির দিকে রওনা দিলো।
পথিমধ্যে এমপি এরফান সাহেবের ছেলে কালু মাস্তান তার দলবল নিয়ে জাবেদকে রাস্তায় ঘেরাও করে বললো,
এই!  দাঁড়া। কোথায় যাস?  গত রাতে তুই নাকি ঈমাম সাহবের সাথে রাত ১২টা পর্যন্ত আলাপ করছিলি,  কী আলাপ করছিলি বল?

জাবেদঃ এমনি হাদিস কোরআন সম্পর্কে আলোচনা করছিলাম ঈমাম সাহেবের সাথে।
কালু মাস্তানের এক সহযোগী রাসেল বললো,
না ওস্তাদ,  আমি তাদের কথোপকথন শুনছিলাম মসজিদের জানালার পাশে দাঁড়িয়ে, তারা শাপলার মা বাবা হত্যাককারী সনাক্ত করার বিষয়ে কথাবার্তা বলছিলো।

কালু মাস্তানঃ এই জাবেদ শোন!  জীবনের যদি মায়া থাকে, যদি পৃথিবীর আলো বাতাসে মুক্তভাবে ঘুরতে চাস, তবে এখানেই ফুলস্টপ দিয়ে দে। সামনের দিকে আর এগুস না। নইলে শাপলার বাবা মা’র মতই তোর পরিবারেরও অবস্থা একই রকম হবে। আর ঈমাম সাহেবকে দেখছি, সে কত বাড় বেড়েছে?
শুনেছি বাড়িতে তো ততোর মা বাবা কেউ নাই, আছে শুধু একটা বড় বোন। আর তার কাছেই তুই লালি-পালিত হয়েছিস। তোর বড় বোন নাকি খুব সুন্দরী?  বুঝতে পারছিস কী অবস্থা হতে পারে?
যা শুনেছিস এক্কেবারে মুখে টেপ মেরে দে। নইলে তো বুঝতেই পারছিস। বাকিটা আর বললাম না। যা, কোথায় যাবি যা ?
ঐ! তোরা ওকে ছেড়ে দে।

জাবেদ নীরব হয়ে সব সহ্য করে ইউসুফ এর বাড়ির দিকে রওনা দিলো।  বাড়ির দরজার টোকা দিতে যাবে ঠিক এমন সময় বাড়ির ভেতর থেকে কথার শব্দ শুনতে পেয়ে জাবেদ সেখানেই থমকে দাঁড়ায়।

ইউসুফ তার মাকে বলছে,
মা আজকে তোমাদের কাজ না থাকলে চলো শাপলার দুলাভাই এর বাড়ি যাই।

ইউসুফ এর বাবা ইয়াকুব বললো,
এতো সকাল সকাল!  কেন বাবা?

ইউসুফঃ (মাথা নিচু করে) বাবা! তোমাদেরকে আমার একটা কথা বলা-ই হয়নি।
ইয়াকুবঃ কী কথা বাবা?
ইউসুফ চুপ, কিছু বলে না। তার আম্মা বললো,
জানো না?  আমাদের ইউসুফ তো অনেক বড় হয়ে গেছে। তার একটা শুভ কাজ বাকি আছে না?
ইউসুফ ছোট বেলা থেকেই তাকে (শাপলাকে) অনেক পছন্দ করে। এখন তার বাবা মাও নাই। মেয়েটা একেবারেই এতিম হয়ে গেছে। আর আমিও চাই ছেলের পছন্দকে প্রাধান্য দিতে।

ইউসুফঃ জি বাবা,  মা ঠিকই বলেছে। আমরা সবাই মিলে এখন সেখানেই যাবো। তাকে দেখে আসাও হবে, আমাদের কথাবার্তাও বলা হবে।

এমন সময় জাবেদ সালাম দিয়ে বললো,
কেউ আছেন বাড়িতে? 
ইউসুফ দরজা খুলে জাবেদকে দেখে বললো,
আরে দোস্ত!  এত সকাল সকাল আমাদের বাড়িতে?  কেনো, কোনো সমস্যা হয়েছে নাকি?
জাবেদ সেখানে শাপলার বিষয়ে কোনো কথা না বলে বললো,
দোস্ত!  তোর সাথে অনেক কথা আছে।

ইউসুফঃ বল দোস্ত, কী কথা আছে?  আমরা একটু শহরে যাবো মা বাবাসহ।
জাবেদের মন খুব খারাপ।  মুখটা মলিন হয়ে আছে। ওদিকে শাপলার বাবা মায়ের খুনীদের আতঙ্কের ভয়, আবার এদিকেও শাপলাকে না পাওয়ার ভয়। সে কী বলবে কিছু ভেবে পাচ্ছে না।
শেষমেশ বললো, দোস্ত!  এখানে বলা যাবে না। চল ঘরের ভেতরে। তারা দুজনেই ইউসুফের ঘরে চলে গেলো এবং জাবেদ শাপলার মা বাবা হত্যাকারীর বিশদভাবে ব্যাখ্যা দিলো। তাকে রাস্তায় আক্রমণ করেছিলো কালু মাস্তান, সেটাও বললো।
ইউসুফের মন খুব খারাপ। সে নিজেকে আর স্থীর রাখতল পারছে না। সে মনস্থির করলো এখনই শহরে যাবে এবং শাপলাকে বাদী করে শাপলার বাবা মা হত্যাকারীর বিরুদ্ধে সরাসরি কোর্টে মামলা দায়ের করবে।
জাবেদ বললো দোস্ত!  আমাকে তোর সাথে নিয়ে যাবি? 
ইউসুফঃ হ্যাঁ,  তুই গেলে অবশ্যই নিয়ে যাবো।

ইউসুফও তার বাবা মাকে এসব খুলে বললো এবং তারা চারজন মিলে শহরের দিকে রওনা দিলো শাপলার সাথে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে।

এদিকে কালু মাস্তানের সহযোগী রাসেল তা দেখলো এবং দৌড়তে দৌড়তে কালু মাস্তানের কাছে হাজির হয়ে বললো।
ওস্তাদ!  জাবেদ, এডভোকেট ইউসুফ ও তার বাবা মা সহ কোথায় যেন গেলো?

কালু মাস্তানঃ কোথায় গেলো জানিস?
আর একজন বললো,
ওস্তাদ!  মনে বিষয়টা জানাজানি হয়ে গেছে।
আমাদের বুঝি আর নিস্তার নাই। আমরা মনে হয় ধরা পড়ে যাবো।

কালু মাস্তানঃ আরে রাখ,  আমার উপর দিয়ে এ এলাকায় কেউ আর আছে?  এমন তেমন হলে শাপলার বাবা মা’র মতই ক্রস ফয়ারে কেল্লা খতম করে দেবো।
ওরা জানে না, আমার হাত কতটা লম্বা?  থানা পুলিশ আমার কিছুই করতে পারবে না৷
তার বাবা মা আমার কথায় রাজি না হওয়ায় এমন করুণদশা হয়েছে!  কত বললাম, মেয়েটাকে আমার হাতে তুলে দেন, শালা শুনলোই না।

সহযোগী রাসেলঃ আরে ওস্তাদ!  আপনার না হবু শ্বশুর?  হবু শ্বশুরকে কেউ শালা বলে?
কালু মাস্তানঃ (ধমক দিয়ে)  চুপ কর বেয়াদ! 
ওস্তাদের মুখের উপর কেউ এমন কথা বলে?
তলর সাহস তো কম না !

সহযোগী রাসেলঃ ওস্তাদ!  এভাবে কাজ হবে না। চলুন শাপলাকে উঠিয়ে নিয়ে আসি।
কালু মাস্তানঃ কিন্তু সে তো এখানে নাই।
রাসেলঃ চলুন, শহর থেকেই উঠিয়ে নিয়ে আসবো।

কালু মাস্তানঃ না, এতো ধৈর্যহারা হলে চলবে ন। ধীরে ধীরে কাজ করতে হবে।

রাসেলঃ ওস্তাদ!  তার আগে যদি শহরে অন্য কারো সাথে  বিয়ে হয়ে যায়।
কালু মাস্তানঃ চুপ রাস্কেল!  ওর দিকে যে হাত বাড়াবে, তার হাতকে গুঁড়ো করে ফেলবো।
সে শুধু আমার।
আর ক’দিন পরেই তো তার বাবার চল্লিশা হবে। সে সময় তারা সবাই এখানে আসবে। তখন ফাইনাল ব্যবস্থা করবো। আর ক’টাদিন ধৈর্য ধর। তারপর খেলা দেখিস।

রাসেলঃ ওস্তাদ!  আমার মনে হয় তার বাবা মাকে হত্যা করা আমাদের ঠিক হয়নি।
কালু মাস্তানঃ এই!  পিস্তল দেখছোস, পিস্তল। পিস্তলের গুলি একদম মুখের ভেতরে ঢুকিয়ে দেবো। খুব বেশিই বুঝোস না?
রাসেলঃ সরি ওস্তাদ, সরি। আর কোনো কথাই বলবো না। এই মুখে টেপ মেরে দিলাম।

অন্যদিকে এডভোকেট ইউসুফ শাপলাদের শহরের বাসায় পৌঁছে গেছে। ইউসুফ শাপলাকে ডেকে বললো,
শাপলা! তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করার ছিলো শাপলা!

শাপলাঃ জি বলুন, কী বলতে চান?
ইউসুফঃ তোমার বাবা মায়ের হত্যার পেছনে কে বা কারা জড়িত বলতে পারো?
শাপলাঃ আসলে আমি এ সবের কিছুই জানি না। কখনো মা বাবাও বলে নাই, আমাদের কোনো শত্রু আছে কিনা?  তবে বাবা সবচেয়ে বেশি কথা বলতেন আমাদের মসজিদের ঈমাম সাহেবের সাথে। তিনি বলতেন, তার বিশ্বস্ত লোক নাই বললেই চলে। তবে ঈমাম সাহেবকে তিনি খুব বিশ্বাস করতেন এবং সমস্ত সুখ-দুঃখের কথা তার সাথেই আলোচনা করতেন, তাকেই বলতেন।

ইউসুফঃ আচ্ছা, তোমাকে কি কেউ উত্যক্ত করতো রাস্তা ঘাটে বা কেউ কি কখনো কোনো কুপ্রস্তাব দিয়েছিলো ?

শাপলাঃ   (একটু মুচকি হেসে) এ সব কি বলছেন? আমাকে কয়েটা ছেলে উত্যক্ত করতো, তার মধ্যে আপনার সামনেই একজন দাঁড়িয়ে আছে।

ইউসুফঃ আমার সামনে মানে, কই কে আমার সামনে?  আমি তো এখানে জাবেদ ছাড়া কাউকে দেখছি না।

শাপলাঃ উনারা কয়েকজন বন্ধু মিলেই আমাকে একদিন রাস্তার মাঝে বিরক্ত করেছিলো। আমি তাদেরকে উচিৎ জবাব দিয়েছিলাম।

ইউসুফঃ আমি কিন্তু উনার কথা বলছি না। আমি এ রহস্যটা খুঁজছি তোমার বাবা মা’র হত্যাকারীকে সনাক্ত করার জন্য।

শাপলাঃ জি না, আমাকে কেউ কখনো সেভাবে জ্বালতন করেনি। জি, মনে পড়েছে।

ইউসুফঃ কী মনে পড়েছে শাপলা!
তাড়াতাড়ি বলো, কী মনে পড়েছে তোমার?

শাপলাঃ আমাদের এমপি সাহেবের ছেলে কালু মাস্তান আমাকে বলেছিলো সে আমাকে বিয়ে করতে চায়।

ইউসুফঃ তারপর,,,,
শাপলাঃ আমি বলেছিলাম, আমি কখনোই আপনার মত একটা গুণ্ডাকে বিয়ে করতে পারবো না। সে বলেছিলো, যদি তোমার বাবা মা আমার সাথে তোমার বিয়ে দেয়?
আমি উত্তরে বলেছিলাম,
আমার বাবা মা ছাড়া পৃথিবীতে আর কেউ আমার শুভাকাঙ্ক্ষী নাই। তাই আমার বাবা মা যা করবে, তা আমার ভালোর জন্যই করবে। আর আমি বাবা মা’র ইচ্ছাকে সাচ্ছন্দ্যে স্বাগত জানাবো।

👉অভিলাষ পর্বঃ ১৯ 👈
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

ইউসুফঃ বুঝতে পেরেছি।
আর সে জন্যই সম্ভবত তোমার বাবা মা তার প্রস্তাবে অসম্মতি জানালে তাদের মনে অসৎ বিদ্রোহী ক্ষোভ ওঠে এবং তাদের হত্যার ষড়যন্ত্র করে। আর তা করেও ফেলে, যা কেউ জানে না।

আচ্ছা ঠিক আছে শাপলা। এখন চলো কোর্টে গিয়ে মামলা করে আসি।

শাপলাঃ কিসের মামলা, কার নামে মামলা?  আমি তো কিছুই বুঝলাম না।

জাবেদঃ এমপি এরফান সাহেবের ছেলে কালু মাস্তানের নামে। তারাই তোমার বাবা মাকে হত্যা করেছে।
ওহ সরি শাপলা!  আপনাকে মনের আবেগে তুমি বলে ফেললাম।

শাপলাঃ না, না কোনো সমস্যা নাই। তাছাড়া তো আমরা প্রায় একই সমবয়সী।

এমন সময় ইউসুফের বাবা মা এবং  শাপলার দুলাভাই ও আপু অন্য রুম থেকে তাদের কাছে আসলো।
ইউসুফের আম্মু বললো,
ইউসুফ!  তোমাদের কথাবার্তা শেষ হয়েছে?  আমাদের কথাবার্তা ফাইনাল।

ইউসুফঃ ফাইনাল মানে ?
তার বাবা আব্দুর রহিমঃ ফাইনাল মানে আমরা ইতিমধ্যেই শাপলা মা-মণি ও তোমার শুভ কাজের কথাবার্তা পাকা করে ফেললাম। তার বাবা মায়ের চল্লিশার পরেই তোমাদের শুভ কাজটা সম্পূর্ণ করবো ইনশাআল্লাহ।

এ কথা শুনে জাবেদর মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো। আর ইউসুফ বললো,
বাবা! আগে চলো শাপলার মা বাবার হত্যাকারীকে ফাঁসির মঞ্চে ঝুলাই, তারপর কোনো কথা।

তারা শাপলাকে সাথে নিয়ে গিয়ে কোর্টে কালু মাস্তানের বিরুদ্ধে শাপলার বাবা মা’র হত্যা মামলা করে বাড়ির দিকে রওনা দিবে ঠিক এমন সময় জাবেদ ইউসুফকে বললো,
ইউসুফ! আমি শাপলার সাথে কিছু কথা বলবো।
ইউসুফঃ ঠিক আছে বল, কী কথা বলবি ?
জাবেদঃ (মলিন বদনে, কান্নাভিজা কণ্ঠে) 
শাপলা!  একটু ঐ দিকে চলো না প্লিজ। আমি তোমাকে কিছু কথা বলবো।

শাপলা: ঠিক আছে, চলুন।
জাবেদঃ (চোখের পানি ফেলতে পেলতে)
শাপলা! আমি সেদিনের আচরণে সত্যি অত্যন্ত দুঃখিত ও অনুতপ্ত। আমাকে মাফ করে দাও।

শাপলাঃ এ জন্য আপনি কাঁদছেন কেন?
আমি তো সেদিনই আপনাদের সবাইকে মাফ করে দিয়েছি এই জন্য যে, আপনারা আপনাদের ভুল বুঝতে পেরেছেন।

জাবেদঃ ঠিক আছে  শাপলা,  আমি স্বস্তি পেলাম যে, তুমি আমার উপর রাগ করোনি।
শাপলা! আর একটা কথা বলবো?  তুমি অভয় দিলে বলতে পারি।

শাপলাঃ ঠিক আছে বলেন।
জাবেদঃ তুমি কি ইউসুফকে ভালোবাসো, মানে পছন্দ করো। না অন্য কাউকে পছন্দ করো ?
শাপলাঃ ইউসুফ আমাকে ছোটবেলা থেকেই পছন্দ করে। তবে আমাকে আজ পর্যন্ত কিছুই বলেনি।

জাবেদঃ তুমি কি তাকে পছন্দ করো?
শাপলাঃ জি, আমিও তাকে পছন্দ করি। তারপরও আমাদের পরিবারেরও সম্মতি ছিলো।

জাবেদঃ আচ্ছা শাপলা! এখন যদি তুমি জানতে পারো যে তোমাকে অন্য একজন ইউসুফের চেয়েও বেশি ভালোবাসে, তখন তুমি কী করবা?

শাপলাঃ  আসলে দেখুন, এ বিষয়ে আমি আর কথা বলতে চাই না৷ তবে যেখানে আমার বাব মা’র সম্মতি ছিলো, তাদেরও সম্মতি আছে। আর আমিও তাকে পছন্দ করি, সে-ও আমাকে খুব পছন্দ করে। আমি এর বাইরে কোনো কাজ করতে দৃঢ় প্রত্যয়ী নই।
যাইহোক, আপনি কাঁদছেন কেন?

জাবেদঃ তোমাকে কথাটা না বলতে পারলে আমি মরেও শান্তি পাবো না শাপলা!
আমি মরেও শান্তি পাবো না।

শাপলাঃ কী কথা বলেন ?
জাবেদঃ শাপলা!  যেদিন তুমি আমাকে ভুল পথ থেকে সঠিক পথের দিশা দিয়েছো। আমাকে ভালো পথে ফিরিয়ে এনেছো,
বিশ্বাস করো, সেদিনই আমি তোমার প্রেমে পড়ে গেছি। তোমাকে আমার জীবনের থেকেও বেশি ভালোবেসে ফেলেছি।
আমি যে তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না শাপলা! 
আমি এখন কী করবো?
তুমিই বলে দাও।

শাপলাঃ আমার এখন কী করার আছে বলেন?
আমার দুঃখের কপাল। যখন যেদিকে যাই, তখন সেদিকেই দুঃখের ঢেউ বয়। আসে সর্বনাশা সাইক্লোন, ঝড়, তুফান। এসে আমার জীবনকে তছনছ করে দেয়।

আসে বিপদের উপর বিপদ!
অনুগ্রহ করে আমাকে মাফ করবেন, আমাকে মাফ করবেন। আমি আপনার জন্য দোয়া করি, আপনি জীবনে সুখী হন।
চলুন ঐদিকে উনারা অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য।

জাবেদঃ এটাই কী তোমার ফাইনাল কথা?
শাপলাঃ জি, এটাই আমার ফাইনাল কথা। আমাকে নিয়েও তার অনেক স্বপ্ন, অনেক আশা।
আমি তার মনের মাঝে লালন করা স্বপ্ন আশাগুলো কীভাবে ভাঙি বলেন?

আপনি যদি আমাকে সত্যি ভালোবাসেন, তবে অন্য একটা মেয়েকে বিয়ে করে সুখে সংসার বাঁধেন। তার মাঝেই আমাকে খুঁজে পাবেন। এটা আমার আকুল অনুরোধ রইলো আপনার প্রতি।

এমন সময় ইউসুফ জাবেদ বলে ডাক দেয়,
জাবেদ! তোদের কথা বলা হলো। চল যাই, দেরি হয়ে যাচ্ছে।

জাবেদঃ আসছি একটু দাঁড়া বলে দুজনই তাদের কাছে উপস্থিত হলো এবং বললো,
চল,  আমরা এখন রওনা দেই।

ইউসুফঃ তোদের কথা শেষ হলো?
জাবেদঃ হ্যাঁ শেষ হয়েছে বন্ধু, চল যাই।

ইউসুফ, তার মা বাবা ও জাবেদ তাদের কাছে, (শাপলাদের কাছে) বিদায় নিয়ে গ্রামের দিকে রওনা দিলো। শাপলারা তাদের বাসায় ফিরে গেলো।

জাবেদঃ বাড়িতে এসেছেই তার আপু শাবানাকে বললো,
আপু! গেছিলাম শাপলাদের বাসায় ইউসুফ ও তার বাবা মা সহ। সেখানে শাপলাকে সাথে নিয়ে শয়তানটার বিরুদ্ধে মামলা করে আসলাম।
কিন্তু আপু,  আমার জন্য একটা খুব কষ্টের খবর আছে। আমি মনে হয় পৃথিবীতে আর বেশিদিন বাঁচবো না।

শাবানাঃ কেন, কী হয়েছে ভাই?  এমন কুলক্ষণে কথা বলতে নাই। তোর কিছু হলে আমি কী নিয়ে বাঁচবো বল। তুই ছাড়া যে আমার পৃথিবীতে আর কেউ নাই ভাই !

জাবেদঃ আমি জানতে পারলাম শাপলার সাথে ইউসুফের বিয়ের কথাবার্তা ফাইনাল।
আমি শাপলার সাথে কথা বলেছি। তারা দু’জন দু’জনকে ভালোবাসে। তাদের দুই পরিবারের সম্মতিও আছে।
আমি শাপলার সাথে কথা বলেছি। কিন্তু সে আমার ভালোবাসায় সাড়া দেয়নি আপু।
আমার অভিলাষী জীবনের সব স্বপ্ন আশা ভেঙে চুরমার হয়ে গেলো আপু, সব চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেলো!
আমি কী নিয়ে বাঁচবো? 
জাবেদ তার আপুকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়লো।

শাবানাঃ এমন পাগলামি করিস না ভাই। আমি শাপলার থেকে সুন্দর মেয়ে দেখে তোর বিয়ে দিয়ে দেবো। দেখবি তুই সব ভুলে যাবি। তোর মনে আর কোনো কষ্ট থাকবে না। দুনিয়াতে শাপলার থেকেও আরও অনেক সুন্দর সুন্দর মেয়ে আছে ভাই।

জাবেদঃ না আপু,  আমি এ পৃথিবীতে আর বাঁচতে চাই না। যাকে নিয়ে সুন্দর সুখের ঘর বাঁধার রঙিন স্বপ্ন দেখলাম। জীবনকে সাজিয়ে তুলার অনুপ্রেরণা পেলাম। আর সেই না কি লাল বেনারসি অঙ্গে জড়িয়ে যাবে অন্যের ঘরে, এ আমি সহ্য করতে পারবো না আপু।
আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আত্মহত্যা করবো!

শাবানাঃ (চট করে গালে একটা থাপ্পড় মেরে কেঁদে কেঁদে )
কী বললি!  তুই আত্মহত্যা করবি! 
আমি যে তোকে সারাজীবন বাবা মায়ের স্নেহ মমতায় ঘিরে, বুকে আগলে রেখে, নিজের সুখ-শান্তি,  আরাম-আয়েশ বিসর্জন দিয়ে কোলে পিঠে করে লালন-পালন করে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করলাম ; তার প্রতিদান এই দৃশ্য দেখার জন্য? এই দিনটির জন্য ?

তুই কী করে পারলি এ সিদ্ধান্ত নিতে ? কী করে পারলি আমার মুখের সামনে এমন মহাপাপের কথা উচ্চারণ করতে ?

এই!  তুই কি জানিস না ?  আত্মহত্যা করা মহাপাপ!
তুই কি জানিস না ?  এর পরিণাম জাহান্নাম!

আত্মহত্যা প্রসঙ্গে কোরআন ও হাদিসে কী বলেছে জানিস? শোন,

কোরআনের বাণীঃ
(এক)  আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরানে এরশাদ করেছেন, ‘আর তোমরা আত্মহত্যা কর না, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়াশীল। (সুরা নিসাঃ ২৯)

(দুই)  আল্লাহ আল কোরআনে বলেছেন- ‘তোমরা তোমাদের নিজেদের ধ্বংসের মধ্যে নিক্ষেপ কর না।’ (সূরা বাকারাঃ ১৯৫ আয়াত)।

(তিন)  আল্লাহ বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো ব্যক্তিকে হত্যা করে জগতে বিপর্যয় সৃষ্টি বা হত্যার শাস্তি ব্যতিরেকে সে যেন সব মানুষকেই হত্যা করে। আর যে ব্যক্তি কোনো ব্যক্তিকে জীবন্ত রাখে সে যেন সব মানুষকেই জীবন্ত রাখে। (সূরা মায়িদাঃ ৩২ আয়াত)।

হাদিসের আলোকে আত্মহত্যা প্রসংগে হাদিসের বাণী হলো –

 হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত নবিজি (সাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি পাহাড় থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামে অনুরূপভাবে আত্মহত্যা করতেই থাকবে এবং এটিই হবে তার স্থায়ী বাসস্থান। যে ব্যক্তি বিষ পান করে আত্মহত্যা করবে, তার বিষ তার হাতে থাকবে, জাহান্নামে সে সর্বক্ষণ বিষ পান করে আত্মহত্যা করতে থাকবে। আর এটা হবে তার স্থায়ী বাসস্থান। আর যে ব্যক্তি লৌহাস্ত্র দিয়ে আত্মহত্যা করবে, সে লৌহাস্ত্রই তার হাতে থাকবে। জাহান্নামে সে তা নিজ পেটে ঢুকাতে থাকবে, আর সেখানে সে চিরস্থায়ীভাবে থাকবে।’ (বোখারি ও মুসলিম)

এখন বল, এর পরেও তুই আত্মহত্যা করবি?
আমাকে এতিম করে কান্নার সাগরে ডুবিয়ে দিয়ে চলে যাবি?
তুই চলে গেলে আমার কী হবে,  একবার ভেবে দেখেছিস?

👉অভিলাষ – শেষ পর্বঃ 👈
মোঃ ইব্রাহিম হোসেন

জাবেদঃ  (তার আপু শাবানার পা জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ে)
আপু!  তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমি ভুল সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি। আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি।  তুমি ছাড়া পৃথিবীতে আমার আর কেউ ভালো শুভাকাঙ্ক্ষী হতে পারে না। তুমি আমার চোখ খুলে দিয়েছো আপু, তুমি আমার চোখ খুলে দিয়েছো। আল্লাহর কাছে দোয়া করো, আল্লাহ যেন আমাকে ধৈর্য দেন, আমাকে ধৈর্যধারণ করার তৌফিক দান করেন।

শাবানা: (জাবেদকে বুকে টেনে জড়িয়ে ধরে কেঁদে কেঁদে)
ওঠ ভাই!  আর কাঁদিস না। তোর কান্না আমি সইতে পারছি না । সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসলো। এখন মাগরিবের আযান হবে। অজু করে আয়, নামাজ পড়ে নে। দেখবি শরীরটা অনেক হালকা হবে, মনটা পাতলা হবে। সব ঠিক হয়ে যাবে।

সন্ধ্যার পর রাত হলো ওদিকে ইউসুফ খুব চিন্তিত।
মামলা হলো, পুলিশ আসবে কালু মাস্তানকে গ্রেফতার করতে। আবার কোনো অঘটন ঘটে কিনা? 
খুব চিন্তায় বিভোর, মনস্তাপ।

শাপলাও খুব চিন্তা করছে বিছানায় শুয়ে শুয়ে।
হে আল্লাহ!  আমি কী করবো?  আমার চারিদিকে বিপদ!  আজ আমার জন্য আমার বাবা খুন!
আমার প্রেমে জাবেদ উন্মাদ। ইউসুফ আমাকে ছোটবেলা থেকেই পছন্দ করে, খুব ভালোবাসে। আমি কোনদিকে যাবো?  এ কথা ভাবতে ভাবতেই চোখ জুড়ে ঘুম চলে আসে শাপলার।

শাপলা রাতে স্বপ্নে দেখে ইউসুফ ও শাপলা একটা বাগানে গল্প করছে খুব আনন্দের সহিত। তারা দু’জন দু’জনার প্রেমে বিভোর। কোনোদিকে খেয়াল নাই। হঠাৎ পেছন দিক থেকে জাবেদ তার দলবল নিয়ে তাদেরকে হামলা করে। তাদের আঘাতে ইউসুফ অচেতন হয়ে মাটিতে লুকিয়ে পড়ে যায় এবং জাবেদ তাকে জোর করে তুলে নিয়ে গিয়ে বিয়ের পিঁড়িত বসায়। বিয়েতে রাজি না হলে তাকে খুব মারধর করে জাবেদ।
শাপলা একটা ধারালো অস্ত্র দিয়ে জাবেদকে হত্যা করে পালিয়ে আসে। ঠিক এমন সময় শাপলার ঘুম ভেঙে যায়। সকাল হলে শাপলা তার আপুকে জানিয়ে ভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে তার নিজের গ্রামে ইউসুফের বাড়ি চলে আসে এবং দরজায় নক করে বলে,
ইউসুফ!  তাড়াতাড়ি দরজা খুলুন। আমাকে খুব ভয় লাগছে। আমাকে বাঁচাও।
ইউসুফ শাপলাকে কণ্ঠস্বর বুঝতে পারে। তাড়াতাড়ি দরজা খুলে দেখে শাপলা ভয়ে কাঁপছে।
তার এ অবস্থা দেখে ইউসুফঃ
শাপলা!  তাড়াতাড়ি ভেতরে এসো। মা বাবা বাড়িতে নাই । একটু বাইরে গেছে। কিছুক্ষণ পরেই চলে আসবে। এক কাজ করো। তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও। আমি তোমার জন্য নাস্তা নিয়ে আসি।

শাপলা! না, শুনুন,  নাস্তা আনতে হবে না। আমার একা ভয় লাগবে। এক কাজ করো না প্লিজ।
সরি ইউসুফ, তুমি বলে ফেললাম। আমাকে মাফ করে দিন।

ইউসুফঃ আরে,  কী বলো?  কোনো সমস্যা নাই । কিছুদিন পরেই তো তুমি বলেই ডাকতে হবে, তাই না?  আজ থেকে তুমি আমাকে তুমি বলেই ডাকবে। তাতেই আমি খুশি হবো। ঠিক আছে ?

শাপলাঃ জি, মানে হ্যাঁ, হ্যাঁ মানে ঠিক আছে।
ইউসুফঃ তাহলে তুমি বলো। তোমার মুখ থেকে তুমি ডাক শুনতে চাই শাপলা!

শাপলা: (কাঁদতে কাঁদতে ইউসুফের বুকে মাথা রেখে তাকে জড়িয়ে ধরে)
ইউসুফ!  তুমি আমাকে বাঁচাও ইউসুফ। আমি সারাজীবন তোমার বুকে এভাবে মাথা রেখে তুমি তুমি বলে পার করে দিতে চাই।
আমার জন্য আমার মা বাবা খুন হয়েছে। আমার জন্য আবার নতুন করে কেউ খুন হোক এ আমি চাই না ইউসুফ, এ আমি চাই না।
চলো আমার এখনই বিয়ে করে ফেলি। তাহলে আমাকে নিয়ে আর কারও কোনো সমস্যা থাকবে না।

ইউসুফঃ এ কী বলো শাপলা?
তোমার জন্য আবার কে খুন হবে?
তুমি এ কী আবোল তাবোল বলছো ? তোমার মাথা কি ঠিক আছে?

শাপলাঃ আমি আজ স্বপ্নে দেখেছি, তুমি খুন হয়েছো জাবেদর হাতে। সে আমাকে জোর করে বিয়ে করতে চাইলে আমিও তাকে হত্যা করি।
এ দুঃস্বপ্ন দেখে আপুকে অনেক কষ্ট করে মেনেজ করে তোমার কাছে চলে এসেছি ইউসুফ। চলো আমরা আজই বিয়ে করে ফেলি।

ইউসুফঃ আজ পুলিশ আসবে তোমার বাবা মা হত্যাকারীকে গ্রেফতার করতে। সমস্ত সাক্ষ্য প্রমাণ প্রস্তুত করে ফেলেছি।

শাপলাঃ ইউসুফ!  দেখো। আমি মা বাবার হত্যার বদলা চাই না। আমি চাই না আবার রক্তের ঝর্ণাধারা দেখতে। তা ছাড়া আমরা সঠিকভাবে জানিও না, কে বা কারা হত্যা করেছে।
এ সব বাদ দাও, আমার খুব ভয় হয়। বাবা মাকে হারালাম, আবার যদি তোমার কিছু হয়, আমি কী নিয়ে বাঁচবো?  কোথায় যাবো বলো? তুমি ছাড়া যে আমার পৃথিবীটাই অন্ধকার!

এমন সময় বাইরে গোলমালের শব্দ। কালু মাস্তান তার দলবল নিয়ে আসছে ইউসুফের বাড়ি ঘেরাও করতে।
কারণ, যখন শাপলা ইউসুফের বাড়ি আসে, তখনই কালু মাস্তানের সহযোগী রাসেল দেখতে পায় এবং কালু মাস্তানকে অবগত করে।  এ সংবাদ শুনেই সে তার তার দলবল নিয়ে এদিকে ছুটে আসছে শাপলাকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
জাবেদও ইউসুফ এর বাড়ির দিকে যাচ্ছে।

ইউসুফ শাপলাকে বললো,
দেখো তুমি কোনো টেনশন করো না। আমাদের আল্লাহ আছেন। সত্যের জয় হবে, আমাদের জয় হবে। তোমার বাবা মায়ের হত্যাকারী গ্রেফতার হবে, ফাঁসির মঞ্চে ঝুলবে। ওদেরকে পৃথিবীর কেউ রক্ষা করতে পারবে না। খুব শীঘ্রই ওদের ফাঁসি হবে। সমাজ ও দেশ থেকে দূর হবে অপরাধী, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাস। আজকেই পুলিশ আসবে তাদেরকে গ্রেফতার করতে।

তুমি ঘরে চুপ করে বসে থাকো। আমি বাইরে থেকে আসছি। ইউসুফ বাড়ির দরজা খুলে দেখে বাইরে কালু মাস্তান দলবদ্ধভাবে তাদের বাড়ি ঘেরাও করে আছে।

এডভোকেট ইউসুফ কালু মাস্তানকে উদ্দেশ্য করে বলে,
আপনারা আমাদের বাড়ি এভাবে ঘেরাও করে রেখেছেন কেন?

কালু মাস্তানঃ  (অট্ট হাসি দিয়ে) 
হাহাহাহা হাহাহোহো। বুঝো নাই সোনা বন্ধু!
একেই বলে ভাগ্য। মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি! ওয়াও, কী দারুণ!  হাহাহা।
এই! শোন, তোর ঘরে কে আছে?  তাকে বের করে আমাদের হাতে তুলে দে। 
তোর তো সাহস কম নয়। আমার এলাকায় যুবতী নারী নিয়ে ফষ্টিনষ্টি করো ?

ইউসুফঃ এই কালু মাস্তান!  তোকে আমি এতক্ষণ খুব সম্মানের সহিত  কথা বলেছি আপনি আপনি করে। একটা ধৈর্যের সীমা আছে। তোরা তা অতিক্রম করেছিস। ভালোই ভালো এখান থেকে চলে যা। নইলে তোদের ভাগ্যে আজ শনি আছে।

কালু মাস্তানঃ ঐ দু’টাকার এডভোকেট ইউসুফ!  না গেলে কী করবি?  চিনোস আমাকে,  আমি কে?
(এদের কথা শুনে শাপলা বাড়ির ভেতর থেকে দরজার ছিদ্র দিয়ে ক্যামেরা অন করে রেখেছে। বাইরে যা হচ্ছে সবই ভিডিও হচ্ছে।)

ইউসুফঃ তোকে কে না চিনে?  তুই একটা মানুষ রূপি শয়তান। আর তোর মত শয়তানদেরকে শায়েস্তা করার জন্যই আমার মত এডভোকেট ইউসুফ এর জন্ম হয়েছে।

কালু মাস্তানঃ আরে বন্ধু রাগছো কেন?  তুমি তো আমার এলাকারই ভাই। সুন্দরভাবে বিড়ালের মত চলে যাবো। তোমার ঘরে আশ্রিত ঐ সুন্দরী রূপসীকে আমার হাতে তুলে দাও ভাই।
তাকে বিয়ে করে আমার মনের জ্বালা নিবারণ করি। অনেক দিন থেকে এ দিনটার অপেক্ষায় আছি। আজ সেই দিন এসেছে। হাহাহাহা।

ইউসুফঃ এই! তোর ঘরে কি মা বোন নাই?  এতই যখন মনের খায়েস, যা সেখানে গিয়ে তোর লোলুপ মনের জ্বালা নিবারণ কর।

কালু মাস্তানঃ এই ফকিন্নির পূত! আজকে তোরও সেই অবস্থা করবো, আমার কথায় রাজি না হওয়ায় যে অবস্থা হয়েছিলো শাপলার বাবা মা’র।
কত করে বুঝালাম, শ্বশুর মশাই আপনার মেয়েটারে আমার হাতে তুলে দিন। রাজরানির হালে থাকবে। সারাজীবন সুখ-শান্তি ও আরাম-আয়েশে থাকবে। সে শুনলোই না। তাদেরকে কুত্তার মত গুলি করে হত্যা করেছে এই কালু মাস্তান।
যার কোনো সাক্ষী নাই ।

চারিদিকে তাকিয়ে দেখ তো কেউ আছে কিনা?
কেউ নাই। এখানে তোকে গেঁড়ে দিলেও কেউ সাক্ষী থাকবে না।
এ কথা বলেই কালু মাস্তান ইউসুফের সাথে লড়াই শুরু করলো।

জাবেদ দূর থেকে দেখে ইউসুফের বাড়ির চারিদিক ঘেরা কালু মাস্তানের পোষা গুণ্ডাদের দ্বারা।
দৌড়ে এসে সেও ঝাঁপিয়ে পড়লো ইউসুফ এর পক্ষে। লড়াই করতে করতে দুজনেই ক্লান্ত। শত্রুপক্ষেরও কেউ কেউ আহত হয়েছে। মাটির সাথে লটপট করছে।

ঠিক সেই মুহুর্তেই পুলিশের গাড়ির এসে উপস্থিত।
পুলিশের গাড়ি দেখে কালু মাস্তান তার পকেট থেকে গুলিভরা পিস্তল বের করে ইউসুফকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়ে। ভাগ্যক্রমে সে পিস্তলের গুলি জাবেদের বক্ষ ভেদ করে। জাবেদ মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। কালু মাস্তান পালানোর চেষ্টা করলে পুলিশ সদস্যরা তাদের সবাইকে ঘেরাও করে ফেলে। তাদের সবার হাতে হাতকড়া পরিয়ে গাড়িতে উঠায়।
ইউসুফের বাবা মা-ও চলে সে সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়।

জাবেদ রক্তক্ত দেহ নিয়ে মাটিতে ছটফট করে। ইউসুফ তাকে হাঁটু গেঁড়ে বুকের সাথে জড়িত ধরে হাও মাও করে কান্নায় ভেঙে পড়ে।
বন্ধু!  তুই কথা বল, চোখ  খোল বন্ধু। আমার জন্য তোর এ অবস্থা। আমিই হতভাগা, কপালপোড়া !
শাপলাও তার কাছে ছুটে এসে ইউসুফের পাশে হাঁটু গেঁড়ে বসলো। খবর পেয়ে জাবেদের বোনও ছুটে আসলো।
জাবেদের বোন শাবানা চিৎকার দিয়ে কেঁদে উঠলো,

ভাইরে  তোকে আমি নিষেধ করলাম বাইরে আসতে। তবুও তুই চলে আসলি। আমার কথা শুনলি না।  আমি জানতাম, তোকে কালু মাস্তানেরা বাঁচতে দেবে না।  আমাকে দুঃখের সাগরে ভাসিয়ে দিলি।  এতিম করে দিলি। আমার যে আর পৃথিবীতে আপন কেউ রইলো না।
ইউসুফ!  ভাই আমার , চলো তাড়াতাড়ি মেডিকেল নিয়ে যাই। জাবেদকে বাঁচাই।

জাবেদ কথা বলতে পারছে না। মৃত্যুর যন্ত্রণায় ছটফট করছে। খুব কষ্ট করে বললো,
আপু! আমাকে মেডিকেল নিয়ে যাওয়া লাগবে না। আমার চলে যাওয়ার সময় ঘনিয়ে এসেছে। আমার সময় খুব কম। আমি দেখতে পাচ্ছি, আজরাইল আমার অপেক্ষায় অপেক্ষমাণ।

তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি আপু, তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। নইলে আমি মরে গিয়েও শান্তি পাবো না। সারাজীবন জ্বলতে হবে জাহান্নামে।

ইউসুফঃ তোকে একটা শেষ কথা বলবো বন্ধু,
শাপলা! তুমি কই? তুমিও আমাকে ক্ষমা করে দিও। দেখি তোমার হাতটা।
জাবেদ শাপলা ও ইউসুফের হাত একসাথে করে দিয়ে বললো,
বন্ধু!  আমি তোকে অনেক ভালোবাসি। আমার একটা কথা রাখিস বন্ধু!
শাপলাকে সারাজীবন তোর বাহুডোরে অটুট বন্ধনে বেঁধে রাখিস। তার মনে কখনো ভুলে করেও কষ্ট দিসনা বন্ধু, ভুল করেও না। সে তোর কাছে সুখে থাকলে আমি ওপারে গিয়েও সুখে থাকবো,  পাবো অনন্তকাল সুখের স্থান জান্নাত।
আর একটা কথা বন্ধু!  আপুর তো কেউ রইলো না আর। আপু তো এতিম হয়ে গেলো।
আপুকে তুই দেখে রাখিস বন্ধু, আপুকে তুই দেখে রাখিস।
কথা দে বন্ধু!  আমাকে কথা দে। এ কথা শুনে আমি মরতে চাই।

ইউসুফ চোখের পানি ফেলতে ফেলতে,
বন্ধু!  আমি তোকে কথা দিলাম, আমার জীবনে ঝড় বয়ে গেলেও আমি তার মনে একটা ফুলের আঁচড়ও লাগতে দেবো না ইনশাআল্লাহ।
আর তোর আপু মানে আমারও আপু। আমি তলর আপুকে নিজের বড় বোনের থেকেও সম্মানে সহিত  রাখবো। আমি তোকে তোকে কথা দিলাম বন্ধু, কথা দিলাম।

জাবেদঃ শাপলা!  তুমি আমাকে কালিমা পড়াও।
তুমি সঠিক পথের দিশা দিয়েছো। ভুল পথ থেকে ফিরিয়ে এনেছো। আমাকে আমার জীবনের শেষ সময়ে পবিত্র কালিমাটা পড়িয়ে দাও।

শাপলাঃ পড়ুন – লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ।  সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।

জাবেদঃ লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ। সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।

জাবেদ কলিমা পড়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলো।
ইন্না-লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রজিউন।

———————সমাপ্ত——————–

মন্তব্য করুন