Skip to content

অপেক্ষার অপেক্ষা–৯ — রমেন মজুমদার

অপেক্ষার অপেক্ষা–৯
———–(ছোট গল্পের আঙ্গিকে বাস্তব )
রাস্তায় লম্বা মিছিল।
বার-চৌদ্দ ফুটের রাস্তা গিয়েছে এঁকেবেঁকে শহরের মধ্যে দিয়ে।
মিছিলের অগ্রভাগে লম্বা ব্যানার ধরে চারজন হাঁটছে। তার পিছনে চারজন তরুণ তুর্কি আমরা স্লোগানদিয়ে পায়ে পা মিলিয়ে হাঁটছি।
তার পিছনের সারিতে প্রথম শ্রেণীর নেতারা।
পিছনে ছাত্র-শ্রমিক জনতার ভরাট মিছিল।
না হলেও প্রতিদিন তিন চারশ লোকের সমাগম হয় ।
প্রতিদিন মিছিল শুরু হতো মিলন সিনেমাহল থেকে শুরু করে নতুন টাউন,জেলখানা,লেক, বাসস্টান্ড হয়ে বাদামতলী সিনেমা হল ঘুরে পুরাতন টাউন হয়ে প্রোজকোয়ার্টার ডানে রেখে সেই মিলন সিনেমাহল সন্মুখে এসে মিছিল শেষ করতাম। সেটা ছিল নিত্য, হররোজের ঘটনা।

রাস্তার মোড়ে মোড়ে লম্বা মোছওয়ালা পাক মিলিটারি বন্দুক ঘাড়ে নিয়ে পাহারা দিত।
তখন উত্থাল জনস্রোত বঙ্গবন্ধুকে মিথ্যামামলার আসামি থেকে খারিজ করে আনাই ছিল আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য।
এক এক দিন স্লোগান দিতে দিতে গলা ব্যথা হয়ে যেত।
কখনো নিজের পয়সায় চা খেয়ে গলা ঠিক করে নিতাম,আবার নেতারা বেশির ভাগ সময় আমাদের চা পানে উৎসাহ দিয়ে চাঙ্গা রাখতেন।

মিছিল শেষ করে সপ্তাহে এক আধদিন ফণীদার
আমন্ত্রণে তার বাড়িতেও চা-মুড়ির আয়োজনে আমরা মিলিত হতাম।
সুবক্তা, সুঠাম বলিষ্ঠ দেহের অধিকারী ছিলাম বলেই আমাকে সক্কলে একটু বেশি পছন্দ করতেন। তখন আঠারো অতিক্রম করছি।
এমনি করেই একদিন ফণীভূষণ মজুমদারের সান্নিধ্যে তার নিকট আত্মীয়ের মতোই হয়ে ওঠলাম।
তিনি একদিন জোর গলায় বঙ্গবন্ধুকে বলেছিলেন ও’আমার আত্মীয়ও বটে।অবশ্য বঙ্গবন্ধু জিজ্ঞাসা করেছিলেন দাদা,ছেলেটি কি আপনার আত্মীয় ? ওকে দেখি আপানি অনেক স্নেহ করেন ?

আটষট্টি পেরিয়ে উনসত্তরে এসে আন্দোলন আরো জোরালো হয়ে ওঠলো। এটা গণঅভ্যুত্থান আন্দোলন সমগ্র দেশব্যাপী চলছে।
ছয়দফা ও এগারো দফার জোরালো দাবির আন্দোলন।
তখন বঙ্গবন্ধু আগরতলার মামলায় জেল খাটছেন ঢাকার কারাগারে।
জেলা কমিটির কেন্দ্রীয় স্তরের নেতা সভাপতি ফণীভূষণ মজুমদার,আর সেক্রেটারি হলেন আব্দুর রাজ্জাক ভাই। আমরা রাজ্জাক ভাই বলেই সকলে তখন সাম্ভোধন করতাম,আর ফণীদাদু। এটা ছিল মাদারীপুর-শরীয়তপুর মিলে আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক জেলার নেতা।
কেন্দ্রীয়স্তরে ওনারা আরো উপরে।

দিন কীভাবে পেরিয়ে যায় সে কথাই এখন বসে বসে ভাবি। বঙ্গবন্ধুর মুক্তির কয়দিন আগে তিনি উপর থেকে ইঙ্গিত পেয়ে গা’ঢাকা দিলেন তার গ্রামের বাড়ি সিনদিয়ায়।সেই সময় মাত্র দিন সাতেকের জন্য শহর প্রায় ফাঁকা হয়ে গেল।
তখন হঠাৎ ফণীদাদা অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি চলে যান বাড়িতে।
আমরা সবাই মিলে ফণীদাদার বাড়িতে গেলাম তাঁকে দেখতে।তখন তিনি সুস্থ।
অবশ্য আমার গ্রামের বাড়িও তাঁর কাছাকাছি ছিল বলেই আমিও বাড়িতে ছুটে এলাম মাকে দেখার জন্য।
ফণীদাদা বলে দিলেন,তুই দুদিনের বেশি থাকবিনা বাড়িতে। শীঘ্রকরে ফিরে আসবি শহরে।
আমার কাছে খবর আছে, আমাদের আর বেশিদিন আন্দোলন করতে হবেনা। ওরা শীঘ্রই মুজিবকে মুক্তি দিয়ে দিবে। মুক্তি পেলে মুজিব আমার এখানেই আসবে,তখন তাকে সম্বর্ধনা দেয়ার আয়োজন আমাদের করতে হবে।।

চলবে–

মন্তব্য করুন