Skip to content

মাকে ভাসায়ে ভাটির স্রোতে – কাজী নজরুল ইসলাম

জনৈক দেবতা : আমরা দেবতা হলে কী হবে, কথায় ও কান্নায় ধরণির মানুষকে জিততে পারব না।
মানুষ : মা গো! জানি আমরা দুর্বল। রোগ, শোক, দুঃখ, জরা, মৃত্যু অভাব, ঋণে নিত্য-জর্জরিত। আমাদের আয়ু শেফালি ফুলের মতো ; সন্ধ্যায় ফোটে, সকালে যায় ঝরে। তবু তারই মাঝে ডাকি তোকে, এই মায়া, এত অবিদ্যার ঊর্ধ্বে তুলে নিতে। ফুল ঝরে, তার আশা থাকে, পূজারি তাকে কুড়িয়ে স্থান দেবে দেবতার পায়ে। কিন্তু মানুষের জীবনে আজ সে-আশাও গেছে ফুরিয়ে।
দেবতা : দেখেছিস, বলছিলাম না, ওরা কান্না আর চাটুবাদের জোরেই জিতে গেল।
মানুষ : আমরা অসহায়, তাই ছেলে-ভুলানো খেলনা দিয়ে রাখিস ভুলিয়ে, ঘুম পাড়িয়ে। মাতৃহীন শিশু-সন্তানকে ফেলে দিস দাসীর কোলে, কান্না ভুলাতে দিস হাতে চুষি-কাঠি!
দেবতা : এই রে, সেরেছে! ওরা যা কান্না জুড়ে দিয়েছে, তাতে মা দয়াময়ী এতক্ষণ গলে গঙ্গাজল হয়ে গেছেন বুঝি! দে, ওদের শিগগির রাগিয়ে দে। ওরা একবার রেগেও যদি মাকে চলে যেতে বলে, অমনি মা ছলনাময়ী পালিয়ে আসবেন।
মানুষ : ওই শোন, আমাদেরই মতো হতভাগ্য একদল সন্তান মাকে ভাসিয়ে দিয়ে গান গাইতে আসছে।

গান
মাকে ভাসায়ে ভাটির স্রোতে
কেমনে রহিব ঘরে।
শূন্য ভবন শূন্য ভুবন
কাঁদে হাহাকার করে॥
মা যে নদীর জল-তরঙ্গ প্রায়
ভরা কূলে কূলে, তবু ধরা নাহি যায় ;
রাখিতে নারিনু পাষাণীরে মোরা
পাষাণ দেউল ধরে॥

মানুষ : সত্যই যদি মা পাষাণী হয়, তবে তার সন্তানও হোক পাষাণ। তারাও হোক অনুভুতিহীন, নির্মম। হাঁ, এই আমাদের সাধনা। নিষ্ঠুর হস্তে এই পাষাণের বুক চিরে বহাব স্নেহের নির্ঝরিণী-ধারা।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।