Skip to content

বাঙালি ঘরে হিন্দি গান – কাজী নজরুল ইসলাম

[A]

সঙ্গীত : ‘গহরী গহরী নদিয়া’ … কও।
ছাত্রী : ‘গহড়ী গহড়ী’
সঙ্গীত শিক্ষক : আরে আরে ! ‘ড়’ না, ‘গহড়ী’ না ‘গহরী’! ‘ব’ এ বিন্দু ‘র’।
ছাত্রী : ও! বুঝতে পেরেছি।
শিক্ষক : হ্যাঁ! কও দেহি।

(গান)

গহরী গহরী নদিয়া

ছাত্রীর ঠাকুরমা : আহা-হা -হা ! কী গানই গাইতেছে বিমলী! নদিয়ায়, নবদ্বীপের গান! বিমলী কি গান গাইতাছে মাস্টার? গৌর নিতাই নদিয়ায় না?
শিক্ষক : আইজ্ঞা হ্যাঁ। এইটা হইল হিন্দি গান। গহরী গহরী নদিয়ায়।
ঠাকুরমা : অর মানেডা কি হইল?
শিক্ষক : আইজ্ঞা, ওই যে গহরজান বাইজি, গহরজান বাইজি নদিয়া যাইতাছেন, গানে তাই কইতাছেন।
ঠাকুরমা : কী কও? নদিয়ায় বাইজি নাচব? গৌর নিতাই যেহানে নাচছে সেহানে কি না বাইজি নাচব? অরে পিঠ্‌ঠার বারি মাইরা খেদাইমু।
ছাত্রী : আঃ কী কর ঠাকুরমা? ও কি সত্য সত্যই নদিয়ায় যাইতাছে নাকি? গানে কইতাছে।
ঠাকুরমা : তুই র! তুই কী বুঝস? ধর্ম নষ্ট হইব না?
শিক্ষক : অ ! আচ্ছা, তবে থাক, তবে থাক। এই গানটা থাক। ধর্ম যদি নষ্ট হয় তবে এই গানটা থাক। আচ্ছা এই গানটা শোনেন দেহি:

(গান)

অ্যাই, সাঁইয়া নাহি বোলুঙ্গী
কও দেহি :
(ছাত্রী ও শিক্ষক উভয়ের গান)
সাঁইয়া নাহি বোলুঙ্গী

ঠাকুরমা : এ আবার কোন ছাতার গান গাইতে আছ? অডার মানে কী?
শিক্ষক : আইজ্ঞা, এইডার মানে হইল গিয়া এই, সাঁইয়ারে কইতাছে যে আমি নামুম, একটা লুঙ্গি লইয়া আসি । সাঁইয়া নাহিব, লুঙ্গি, সাঁইয়ার কাছে লুঙ্গি চাইতাছে।
ঠাকুরমা : কী কও! বামুনের বাড়ি লুঙ্গি কও! এই গান তুমি মিয়াঁ সাহেবদের বাড়ি গিয়া শিখাও গিয়া। আরে কাপড় না চাইয়া চাও কিনা লুঙ্গি! কী ছাতার লুঙ্গির গান…
শিক্ষক : আঃ ! আচ্ছা মুশকিল পড়ছি এই বুড়িটারে লইয়া আচ্ছা, আচ্ছা, এই গানটা শোনেন দেহি – আমার মনে হয় ই গানটা আপনার ভালো লাগবই, এইটা শোনেন দেহি, এই দেখেন:

(গান)

বিছুনানা মোরি বাজে ঝনন
সাসহুঁ জাগে, ননদহুঁ জাগে
আউর জাগে সব কুটুমকে লোগুয়া
মহম্মদ শা সাথ সদারঙ্গ জাগে,
ক্যায়সে মিলুঁ ম্যায় হরিকে চরণ॥

ঠাকুরমা : আহা-হা হা ! এই না কয় গান! হরির চরণ বাতলাইবার চায়। অর মানেডা তাই না মাস্টর? হরির চরণ বাতলাইবার চায় না?
শিক্ষক : আজ্ঞে না, তা ঠিক না, আজ্ঞে হাঁ – আজ্ঞে হ হ – ঠিক তাই-ই তাই-ই, তবে কিনা – আমাদের শ্রীরাধিকা, আমাদের শ্রীরাধিকা কইতাছেন যে বিছুনানা বাজে ঝন ঝন ঝন ঝন অর্থাৎ কিনা বিছানা ঝন ঝন কইরা বাজতাছে।
ঠাকুরমা : আরে হ হ, বাত হইলে ওই রকম বাজে।
শিক্ষক : আজ্ঞে হ, আজ্ঞে হ, বাত হইলে ওই রকম বাজে; আর কইতাছেন কী – কইতাছেন শাশুড়ি জাগে, ননদিনি জাগে, কুটুমে জাগে, হগ্‌গলে জাগে।
ঠাকুরমা : জাগব না? ঘরের বউ হইয়া পরের কাছে যায় : নিশ্চয় জাগব। হাজার বার জাগব।
শিক্ষক : আজ্ঞে হ, এরা তো জাগতেই আছেন; আর জাগতে আছেন কে? জাগতে আছেন মহম্মদ শা, জাগতে আছেন সদারঙ্গ মিয়াঁ; সদারঙ্গ মিয়াঁরে লইয়া মহম্মদ শা জাগতে আছেন। তাই রাধিকা কইতাছেন যে কেমন কইরা হরির কাছে যাইমু?
ঠাকুরমা : কী কও? সদারঙ্গ মিয়াঁ আইল কোন থাইক্যা? মিয়াঁ সাহেবেরে উইঠ্যা যাইবার কও। আমাগো রাধা শ্রীহরির কাছে যাইবার পথ পাইতেছ না।
শিক্ষক : আজ্ঞে, উনি যাইবেন কেমন কইর‍্যা ? গানটা যে ওঁরই লেখা।
ঠাকুরমা : আচ্ছা, আচ্ছা, মিয়াঁ সাহেবের মুরগি কিন্যা খাইবার পয়সা দিমু। ওঁরে এখনই উইঠ্যা যাইবার কও।
শিক্ষক : আমি কি ওনারে উঠাইতে পারি?
ঠাকুরমা : তুমি না পার পুলিশে খবর দাও, চৌকিদারে খবর দাও, থানায় খবর দাও, আমাগো দারোয়ান ডাকতে হইব মাস্টর, আমাগো দারোয়ান ডাকতে হইব।
শিক্ষক : কী কপালই করছি রে বাবা গান শিখাইতে আইসা।

[A]

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Ads Blocker Image Powered by Code Help Pro

অ্যাড ব্লক পাওয়া গেছে!!

সত্যি বলছি, আমরাও বিজ্ঞাপন পছন্দ করিনা! কিন্তু বিজ্ঞাপন এই ওয়েবসাইটকে বিনামূল্যে চালাতে সাহায্য করে! 

দয়া করে অ্যাড ব্লকার বন্ধ করে পুনরায় লোড করুন।