Skip to content

মুক্তি

একটি ছোট্ট ময়না,
খাঁচার ভিতর বন্দীদশায় থাকতে সে আর চায়না।
তার মন ধরেছে বায়না,
উড়বে কখন নীলাকাশে-তর যে মোটে সয়না।
একটি ছোট্ট ময়না।

রুপোর খাঁচা রুপোর শিকল যত্ন দিবারাতি,
জমিদারের পোষা পাখী কতই মাতামাতি।
কিন্তু হায় ময়না পাখীর মনের যাতন কথা,
শুনে হাসে জমিদার-পায়না মোটে ব্যাথা।
বলে ওরে-শোন রে সবাই বলছে কি আজ ময়না,
সে নাকি আর খাঁচার ভিতর বন্ধ থাকতে চায়না।

এক সাধু সিদ্ধপুরুষ-অনেকই শিষ্য তাঁর,
উপদেশ আর শাস্ত্রকথায় মুগ্ধ সংসার।
শিষ্যের দল প্রশ্ন করে-মুক্তি পাব কিসে !
হরির নাম কর সদা-সাধু কহেন হেসে।

কতিপয় শিষ্য সাধুর মাধুকরীর তরে,
জমিদারের কুঠি আসে কোনো একদিন ভোরে।
ময়না তাদের শুধায়-ওগো মুক্তি মিলবে কিসে!
গুরুদেবের কাছে জেনে বলবে আমায় এসে !
শিষ্যরা সব হেসে কহে- এ আর কি শক্ত !
হরির নাম করো সদা-হও হরির ভক্ত।
রামের নামেই মুক্তি তোমার রামের নামেই মোক্ষ,
কাল থেকে হরি ভজনই একমাত্র লক্ষ্য।

শুনে ময়না খুবই খুশী-এবার হবে মুক্তি,
হরে কৃষ্ণ হরে রামেই মিলবে উড়ান শক্তি।
এদিকে তার হরিনামে জমিদার ত’ মুগ্ধ,
হরেকৃষ্ণ মন্ত্রে বুঝি তাঁরও চিত্ত শুদ্ধ।
“সোনার খাঁচায় থাক ময়না সোনার শিকল পরে,
তোর কণ্ঠে হরিনাম মোর মন নিয়েছে কেড়ে।
কে আছিস রে দিবারাত্র দিস রে পাহারা,
এমন পাখী কোনমতেই যায় না কভু ছাড়া।”

ময়না ভাবে-শিষ্যের দল পাজী হতচ্ছাড়া,
তাদের কথা শুনতে গিয়ে পাহারা আরও কড়া।
মুক্তি হায় অসম্ভব-এই পরিণাম শেষে,
হরি নাম কোরবো না আর কখনো ভালবেসে।

কয়েকদিন পরে আবার সেই শিষ্য দল,
জমিদারের বাড়ী আসে-মাধুকরীর ছল।
আসলে ত’ দেখতে আসে রামনামের শক্তি,
হরিনামেই মিলল কি ময়না পাখীর মুক্তি !

তাদের দেখেই ছোট্ট ময়না ফেটে পড়ল রোষে,
আমার এই বন্দীদশা তোমাদেরই দোষে।
রামনাম করতে গিয়ে সব আশাই শেষ,
জানতে চাই গুরুদেবের অন্য কোন আদেশ।
যাতে এবার সাপ মরলেও অটুট থাকে লাঠি,
খাঁচার ভিতর পাখীর হায় বিফল ছোটাছুটি।

শিষ্যেরা সব আশ্রমেতে একে একে ফিরে
সাধুর কাছে পাখীর কথা বললে ধীরে ধীরে।
শুনেই সাধু হতচেতন-লুটান ভূমির পরে,
মৃতবৎ চেহারা তাঁর-শিষ্যে রোদন করে।
অনেক পরে গুরুদেবের জ্ঞান ফিরল শেষে,
আমার কথা বোলো তারে-সাধু কহেন হেসে।

পরদিন কয় শিষ্য গেল জমিদারের গেহে,
সাধুর আদেশ মান্য করে-চুপিচুপি কহে,
ও ময়না-তোর কথা গুরু শোনামাত্র,
হলেন তিনি মৃতবৎ নির্জীব এক পাত্র।
যেই না শোনা ময়নাটিও কেমন নিষ্প্রাণ,
খাঁচার মাঝে লুটিয়ে পরে-আর গাহে না গান।
খবর পেয়েই জমিদার আসেন ত্বরায় ছুটে,
ময়নার ঐ দশা দেখে বুকটি বুঝি ফাটে।
অনেক পরে বলেন তিনি-কর গো তারে মুক্ত,
বনের মাঝে শয্যা পাতো-ও সত্য হরিভক্ত।
কিন্তু জ্ঞানহীন ঐ ময়নাটি যেই না লভে মুক্তি,
কোথা থেকে এক নিমেষে ফেরে সকল শক্তি।
অবাক করে যায় সে উড়ে সুদূর নীলাকাশে,
জমিদার গর্জে ওঠেন নিষ্ফল এক রোষে।
শিষ্য যতেক সেথায় ছিল সবাই হতবাক,
গুরুদেবের কাছে চল-প্রশ্ন করা যাক।
পাখীর কথা শুনে গুরু কহেন শিষ্যদলে,
আমার আদেশ বুঝেই পাখীর মুক্তি কৌশলে।
তোমরা কেউ না বুঝলেও সে পরম বিজ্ঞ,
তার কাছে তোমরা সবাই একেবারেই অজ্ঞ।
মুক্তি পাবার জন্য আছে ভিন্ন ভিন্ন উপায়,
কারো মুক্তি হরিনামে, কারো বা ছলনায়।
মহাপুরুষ বালানন্দের এই অমর কথা,
তাঁর চরণে সাজিয়ে দিনু-ছন্দমালায় গাঁথা।

মন্তব্য করুন