Skip to content

বিসিএস পাত্র চাই -বিচিত্র কুমার

গ্রামের মোড়ের মাথায় একটি নতুন ব্যানার টাঙানো হয়েছে। লাল-হলুদ কাপড়ে মোটা অক্ষরে লেখা—
“পাত্র চাই – বিসিএস ক্যাডার হলে বিশেষ সুবিধা! পদায়ন থাকলে দেখানো যাবে কনে!
প্রেমিক, কবি, ইউটিউব ব্যবসায়ী ও অনলাইন উদ্যোক্তা – দয়া করে বিরত থাকুন!”

ব্যানারটি পড়ে গ্রামের লোকজন হা করে তাকিয়ে থাকে। কেউ কেউ সেলফি তোলে। কেউ আবার ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়— “এইবার বোঝো, বিয়ে মানেই বিসিএস!”

ব্যানারটি দিয়েছেন অনিন্দিতা রায়ের বাবা, রমেশ চক্রবর্তী। তিনি পেশায় অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। সারা জীবন ছাত্র পড়িয়ে কাটালেও নিজের মেয়ের বিয়ে নিয়ে যেন এক কঠিন গাণিতিক সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন। এখনকার দিনে ভালো ছেলে পাওয়া মানে লটারির টিকিট কাটার মতো। প্রেম করে পাত্র আনলে প্রেমিকের চাকরি থাকে না, আর চাকরির পাত্র প্রেম করতে জানে না। তাই তিনি স্থির করলেন— পাত্র হতে হবে বিসিএস ক্যাডার। না হলে পাত্রী দেখা যাবে না।

প্রথম পাত্র এল, নাম সজীব। বেশ স্মার্ট, গালে হালকা দাড়ি, কানে হেডফোন। বলে, “আমি স্টার্টআপ করছি, একটি মোবাইল অ্যাপ বানিয়েছি। আগামী দুই বছরে অনেক কিছু হবে।”
রমেশ বাবু চায়ের কাপ রেখে বললেন, “তুমি আগামী দুই বছরে কী করো করো, আপাতত তুমি ঘরে যাও। আমাদের মেয়ের বিয়ে আগামী মাসে, ভবিষ্যৎ নয়, বর্তমান দরকার।”

পরের পাত্র এল রায়হান। নিজেকে বলে ‘সৃজনশীল পেশাজীবী’। জিজ্ঞেস করলে বলে, “ইউটিউবে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বানাই। সদস্য সংখ্যা আড়াই হাজার!”
রমেশ বাবু গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন, “ভাই, এই গ্রামে ডিশ লাইন নেই, সদস্য দিয়ে বউয়ের ভাত হবে না।”

আরেক পাত্র এল নিজের জীবনবৃত্তান্ত নিয়ে। আট পৃষ্ঠার সিভি। চাকরি কিছুই নেই, কিন্তু নিজেকে বলে “বহুমুখী প্রতিভাসম্পন্ন ফ্রিল্যান্সার”।
রমেশ বাবু হেসে বললেন, “তুমি এত পৃষ্ঠা লিখেছো, অথচ একটি পদেও তোমার পা নেই। আগে একটা চাকরি ধরো, পরে পাত্রী ধরবে।”

এরপর যেদিন এলেন সুমন সাহেব, সেদিন বুঝি রমেশ বাবুর ভাগ্য খুলে গেল। বিসিএস ক্যাডার, প্রশাসনে নিয়োগপ্রাপ্ত, পদায়ন বরিশালে। হাফ শার্ট পরা, গাম্ভীর্যভরা মুখ, হাতে ফাইলপত্র। সালাম দিলেন গম্ভীর ভঙ্গিতে।
রমেশ বাবু তো খুশিতে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন। মুগ্ধ হয়ে বললেন, “এইবার বুঝি মেয়েকে রাষ্ট্রীয় হস্তান্তর করা যাবে!”

সুমন হেসে বললেন, “আমি এখনো প্রশিক্ষণে আছি, তবে গেজেট প্রকাশ হয়েছে।”
কথাটা শুনেই মেয়ের মা চিৎকার করে উঠলেন, “ও মা! জামাই গেজেটেড! এখনই বিয়ের দিন ঠিক করি!”

বিয়ের কার্ড ছাপাতে গিয়ে মেয়ের মা ছাপাখানার কর্মীকে বললেন— “দেখো, বর-কনের নাম বড় করে লেখো, তবে বরের নামের নিচে অবশ্যই লিখবে: বিসিএস (প্রশাসন), পদায়ন – বরিশাল, গ্রেড – ৯।”
ছাপাখানার লোক চোখ বড় করে বলল, “কার্ডে কি এসব লেখা হয়?” মা বললেন, “এইটাই এখনকার যুগের নিশ্চয়তা লাইন!”

বিয়ের দিন এলো। মণ্ডপে লোকজন খাচ্ছে, হাসছে, গল্প করছে। কেউ কেউ বলছে, “এই বিয়েতে শুধু বর নয়, সঙ্গে পুরো সরকার এসেছে!”
আরেকজন বলছে, “বিসিএস পাস মানেই এখন সোনার জামাই। জামাই নয়, যেন জ্যাকপট!”

সবশেষে রমেশ বাবু মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে বললেন,
“বন্ধুগণ, এই যুগে প্রেমিক দিয়ে সংসার চলে না। ভালোবাসা দিয়ে ভাত রাঁধা যায় না। তাই মেয়ের জন্য আমরা খুঁজেছি সরকারি চাকরি, গেজেটেড মর্যাদা ও পেনশনভোগী বর। কারণ প্রেমে ইনক্রিমেন্ট হয় না, বিসিএসে হয়!”

দুপচাঁচিয়া,বগুড়া।

মন্তব্য করুন